পিয়ানোর সুর
#১মপর্ব
লিখাঃ মাহমুদা সুলতানা মবিন একা
আষাঢ়ে অঝোর বর্ষণ আজ হৃদয়ের সুখ কেড়ে নিয়েছে সেই সাত সকাল থেকে। এখন সন্ধ্যা। মাগরিবের আযান হচ্ছে চারদিকে। সারাটা বিকেল সন্ধ্যা কেটে গেল নানুবাড়ির এই শত বৎসর পুরানো ব্যালকনিতে। শহরের সবচাইতে পুরানো লোকালয়, বনেদিআনা আভিজাত্যের শীর্ষে। সোনার দাম বেড়ে কেনার ইচ্ছে ফিকে হয়ে গেছে তবু নতুন টাকার কচকচে আওয়াজ বন্ধ হবার নাম নেই। আমায় গ্রামের দাদাবাড়ী থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নানুবাড়িতে বিয়ের জন্য। বয়স ২২। দেখতে দীদার ভাষ্যনুযায়ী অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী হলেও গ্রামে এই বয়সী মেয়েরা আইবুড়ো। ১৪ থেকে ১৬ তন্বী তনুলতা বয়সটা বিয়ের বাজারে অসুন্দরীদের জন্যেও দারুণ রমরমা। টেনেটুনে ১৮ পর্যন্ত ভালো একটি বিয়ে ডিম্যান্ড করে রূপ লাবণ্যে বিশ্ব সুন্দরী গোছের কোনো মেয়েকে। যেই বয়স ঊনিশ ছোঁয়, মেয়ের বাবা মায়ের ঘুম হারাম। পাড়াপ্রতিবেশির গসিপিং শুরু “হায় হায় এই কইন্যার বদ নজর লাগছে। কেউ তাবিজ কবচ করছে।” কালেভদ্রে কোনো ছেলের সাথে রাস্তায় কথা বলতে দেখলেই হলো, “মেয়ে নষ্টা, চরিত্রের দোষ আছে।” এমন নানান কথার হাজারো প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে এসেছি শুধুই একটু পড়াশোনার আগ্রহের কারণে। আব্বু আম্মুর একমাত্র সন্তান। আদরের সীমা পরিসীমা নেই। দাদাভাইয়ের প্রাণের বান্ধবী হতে পারলেও দীদার চক্ষের শূল। তাঁর ছেলের ঘরে নাতি পেলেন না তিনি। বংশের বাত্তি কেমনে জ্বলবে। তারওপর বিয়ে করার নামগন্ধ নেই শুধু বই নিয়ে পড়ে থাকা এই মেয়ে ঘরের কাজকর্ম কিচ্ছু শিখছে না। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বাবার বাড়ীর নাম ডোবাবে ইত্যাদি ফিত্যাদি হাজারো দুশ্চিন্তা আমার দীদাবুড়ির। ইন্টারের পর শহরে আসতে দিল না বলে গ্রামেরই এক কলেজে অনার্সে ভর্তি হলাম। চোখের সামনে সমবয়সী সবার বিয়ে বাচ্চাকাচ্চা হওয়া শেষ। বিনদাস সংসার ধর্ম পালন করছে সহপাঠী বান্ধবীরা। তেরো, চৌদ্দের কৈশোর থেকে শুরু প্রচুর পরিমাণে আসা প্রেমের প্রস্তাব আঠারোতে এসে কমতে কমতে শূন্যের কোঠায়। ভাগ্যিস দাদাভাই নিজেই ওনার মান্ধাতার আমলের মোটর বাইকের পেছনে বসিয়ে আমায় কলেজ আনা নেয়ার কাজটি করতেন বলে ছেলেদের কাছথেকে কুপ্রস্তাব পাইনি। অনেকে পায় দেখেছি, শুনেছি। আমার ভাগ্য ভালো বলে পাইনি। বয়স যখন বিশ ছুঁলো। এবার দাদাভাই নড়েচড়ে বসলেন। আমার পড়ার জেদে ভাটা পড়তে শুরু করলো মায়ের লুকানো কান্নার আওয়াজে আর বাবার দীর্ঘশ্বাসে। লোকের নিন্দায় নাজেহাল দীদাবুড়ি মরণের দোহাই দিয়ে কলেজ যাতায়াত বন্ধ করে দিলেন। ফলাফল, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের মুখ দেখিনি তার আগেই অলিখিত গৃহবন্দী জীবন শুরু। বাড়ী জুড়ে আহাজারি। আমার জন্য আমার বয়সে ছোট কাজিন সিস্টারদের বিয়ে হচ্ছে না। শুরু হলো যাকে পাবে তার হাতেই আমাকে গছিয়ে দেয়ার পায়তারা। রাজি হয়ে গেলাম। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেদ করে পাঁচওয়াক্তের প্রেমময় ইবাদত দিলাম ছেড়ে। সারাক্ষণ কেমন এক বাস্তব অবাস্তবের ঘোরের মধ্যে থাকি। কখনো জেদে ফেটে পড়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠি কখনো ছোট ছোট বোন যারা এখনো স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি তাদের বিয়েতে বাঁধা হয়ে থাকা এ মন অসহায় গুমরে মরি। কী করবো আমি? অপরিচিত পৃথিবীটা যে দেখা হয়নি আদৌ। জন্মের পর থেকে দাদার চৌহদ্দির বাইরে পা রাখিনি। শহরে নানুবাড়ী এলেও দীদাবুড়ি পাহারাদার হয়ে সঙ্গে আসতো। ফলে দুইয়ের জায়গায় তিনদিনের বেশি আম্মুর থাকা হলেও আমার কখনো হয়নি এরবেশি নানুবাড়ী থাকা। কারণ দাদাভাই দীদাকে ছাড়া দুইদিনের বেশি থাকতে পারতেন না। এই দুই বুড়োবুড়ির প্রেম দেখলে সত্যিই হিংসে হয়। ভাবি, আইবুড়ো আমিটার সত্যিকারের বৃদ্ধ বয়সে কেউ কী থাকবে! মনে হয় না। বিয়ের প্রস্তাব যা আসছে সব চল্লিশ পেরিয়ে পঞ্চাশের কোঠা ছুঁইছুঁই পাত্রদের। কারো বউ মরে গেছে, কেউ ডিভোর্সি, কারো একাধিক বউ রাখার খায়েশ আবার কেউ পিতা হবার ক্ষমতায় অক্ষম বলে বিয়ে করেনি এমন সব বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে ঘটক চাচা রমিজ উদ্দিন। এসব দেখে দাদা, দীদা, আম্মু সহ বাড়ীর সবাই কমবেশি নিমরাজি হলেও আমার আব্বু বেঁকে বসে আছেন। উনি ত্রিশের বেশি বয়সের পাত্রের সাথে কিছুতেই নিজের একমাত্র আত্মজার বিয়ে দেবেন না। দরকার পড়লে সারাজীবন ঘরে বসিয়েই খাওয়াবেন। আব্বুর জেদের কারণে দীদা আমাকে জীবনের প্রথমবারের মত নানুবাড়ী একলাই পাঠিয়ে দিলেন। মানে তিনি ছাড়াই এলাম আর কী। আব্বু এসে দিয়ে গেলেন। নানাভাইয়ের সাথে কথা বললেন আমার বিয়ে নিয়ে। দায়িত্ব নিলেন মামা খালারা। আজ একসপ্তাহ হয় নানুবাড়ী এসেছি। এরমধ্যে দুজন পাত্রের সামনে বসতে হয়েছে। দুজনেরই বয়স ত্রিশের নীচে। কন্যা পছন্দ হলেও বয়স বাইশের অজুহাতে দুই তরফই না করে দিল। তারা বিশের নীচে পাত্রী খুঁজছে। আমার বয়স লুকানোর জো নেই। সার্টিফিকেট আছে। সুতরাং এবাড়ীতেও টেনশনের ঘনঘটা শুরু। যদিও আমার পর্যন্ত আসেনি। চারদিকে ফিসফাস গুঞ্জন উঠেছে মাত্র। দুপুরে আব্বু বাড়ী থেকে ফোন করে জানালো বড়চাচার ছোট মেয়ে যে কিনা সবে ক্লাস নাইনে উঠেছে তার নাকি দেখতে এসেই আকদ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই শ্রাবণেই বিয়ের দিন ধার্য হলো। হাতে একমাসও সময় নেই। আব্বুর ভয়েস টোনে খুশীর উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ভাতিজীর বিয়ে বলে কথা। ভাবছি, আমার বিয়ের কথা পাকা হলে আব্বু কী তখন এমনি খুশী হবেন? নাকি আইবুড়ো মেয়ের বাবা হবার লজ্জায় কোনোমতে কন্যাদান করে দেবেন।
পুরানো বাড়ীগুলো কেমন অদ্ভুত ভৌতিক হয়ে ওঠে সন্ধ্যা নামলেই। বারান্দাগুলোর কথাই ধরা যাক, এক একটা প্রায় মাস্টার বেডের সমান। নানুবাড়ীর চারদিকে চারটা বারান্দা। আমার জন্য এবাড়ীতে আলাদা করে কোন রুম দেয়া সম্ভব হয়নি। নানা নানুর ঘরের মেঝেতে ম্যাট্রেস পেতে বিছানা করা হয় আমার জন্য। কোনোমতে রাতটুকু পার হয়ে যায়। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে ছোট মামার লাইব্রেরিতে। উনি শৌখিন মানুষ। বই পড়তে ভালোবাসেন খুব। বিয়ে-থা করেননি এখনও। করবে বলে মনে হয় না। বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই। পছন্দের পাত্রীর সাথে নানাভাই বিয়ে দেননি বলে ছোটমামা বিয়ে করবেন না বলে পণ করেছেন। সেই পণ এখনো বহালতবিয়তে।
বৃষ্টির বেগ দ্বিগুন হয়েছে। আযান থেমে গেছে কখন। নানুবাড়ীটা তিনতলার। মামারা সবাই এখানে একসাথে থাকেন। খালাদের বিয়ে হয়ে যার যার সংসারে। মামাদের সংসার আলাদা হলেও ডাইনিং এক। সবাইকে তিনতলায় বড়মামার ঘরে এসে তিনবেলা খেতে হয়। নানা নানু বড়মামার দায়িত্বে। এখন আমিও। বড়মামার ছেলেমেয়েরা সবাই আমার অনেক বড়। সবারই বিয়ে হয়ে গিয়েছে বেশ আগে। ছোটমামা ছাদে চিলেকোঠায় থাকেন। লাইব্রেরিটা ওখানেই। এমুহূর্তে লাইব্রেরিতে যেতে পারলে ভালো হত। পারছি না। এই বাসার পাশেই লাগোয়া বিল্ডিংটা থেকে পিয়ানোর করুণ সুর ভেসে আসছে। কে বাজাচ্ছে কে জানে। তবে সুর শুনেই বোঝা যাচ্ছে যেই বাজাক তার মন ভালো নেই। কারো মন খারাপের সময় তাকে একলা ফেলে চলে যেতে না পারা আমার একটি গোপন মানসিক রোগ। যে কেউ মন খারাপ করে আমার কাছে এলে আমি তার উপকারে আসি বা না আসি তাকে একলা ছাড়ি না। পাশে থাকি। মন দিয়ে তার কথা শুনি। এখন যিনি পিয়ানো বাজাচ্ছেন ইচ্ছে করছে তার কাছে যাই। পাশে বসে শুনি তার পিয়ানোর সুর।
মেঘের বজ্রপাত হলো। থেমে গেল পিয়ানোর সুর। প্রতিদিনই এসময়ে পিয়ানো নিয়ে বসেন। সুর শুনে বুঝতে পারি ভালোমন্দ অনুভূতিগুলো। আজকেরটা ভীষণ করুণ ছিল তাই সুর থেমে গেলেও তার রেশ রয়ে গেল মনে। বারান্দায় পাতা বেতের সোফা ছেড়ে গ্রিলের সামনে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখবো বলে গ্রিলের ফাঁক গলিয়ে হাত বাড়ালাম বাইরে। বৃষ্টির ছাঁটে অল্প অল্প ভিজে যাচ্ছি।
— এই কে দাঁড়িয়ে ওখানে? এভাবে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো! সরুন!
সম্পূর্ণ অপরিচিত ভরাট পুরুষালী ভয়েসে শাসনের সুর সুস্পষ্ট। কোত্থেকে এল, কে কাকে বললো দেখার জন্য এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি অমনি শুনি,
— এই যে আপনার ডানদিকের বাসার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। এই দিকে তাকান তার আগে জায়গা ছেড়ে সরুন ভিজে গেলেন তো!
না নড়েই তাকালাম। আর অমনি ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। আবছায়া অবয়বের মানুষটিকে ঠিক করে চেনার উপায় নেই এই অন্ধকারে। রুমের ভেতর থেকে ডাক এল নানুমণির,
— মিথি এই মিথি ভেতরে আয় তো। একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে যা।
হালকা উঁচু কন্ঠে বললাম,
— আসছি নানুমণি..
বলেই বারান্দা ছেড়ে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে সেই মায়াবী ভরাট কন্ঠ মস্তিষ্কের নিউরনে শব্দের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে বলল,
— ও মিথি নাম বুঝি! ভারি মিষ্টি নাম তো!
এবার এড়িয়ে যেতে পারলাম না। অভদ্রতা হয়ে যায়। কাছে গেলাম। দুটো বারান্দার মাঝখানে এতই ছোট্ট দূরত্ব গ্রিল না থাকলে আমি অনায়াসে টপকে যেতে পারতাম। অবশ্য যে কেউ পারবে। কিছু বলবো তার আগেই মিষ্টি অথচ কড়া একটা সুবাস নাক ছুঁয়ে দিল। মন দিক হারাচ্ছে বুঝে মনকে শাসালাম। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে আঁধারে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে বললাম,
— হ্যাঁ আমি মিথি। এটা আমার নানাবাড়ী। বেড়াতে এসেছি। আপনি?
উনি বেশ সময় নিয়ে ধীরে বললেন,
— আমি সৌরভ। উত্তরাধিকার সূত্রে এটা আমার বাড়ী। জন্মসূত্রে ইংল্যান্ডের সিটিজেন। ওখানেই বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, জব। অসুস্থ বাবাকে দেখতে এসে আর ফেরা হয়নি। দুইবছর হলো এদেশেই স্থায়ী।
— মা?
— মা ব্রিটিশ। বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়েছে আমার জন্মের দুই বৎসর পর। ত্রিশ বছর হয়ে গেল ডিভোর্সের। মায়ের কাছেই ছিলাম। মৃত্যু শয্যায় বাবা শেষবারের মত দেখতে চাইলো। এলাম।
— বাবা কবে মারা গিয়েছেন?
— গুড গড! মরবে কেন?
— এই না বললেন মৃত্যু শয্যায়.. উপস সরি! ভুল বুঝেছি। উনি এখন কেমন আছেন?
— একদম সুস্থ। একমাত্র পুত্র সন্তানকে পেয়ে মনের জোর আরোগ্য হিসেবে দারুণ কাজ করেছে। মিরাকল বলতে পারেন।
— আপনি ব্রিটিশ হয়ে দারুণ বাংলা বলেন!
— সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার বাবার। আমার মাকে ধরে ধরে বাংলা শিখিয়েছিলেন। বিচ্ছেদের পর বাবার স্মৃতিতে তাড়িত হয়ে মা আমাকে বাবার অনুকরণ করে বাংলা শেখান। শেখায় বেশ খামিয়া (কমতি) যা ছিল তা এই দুইবছরে বাবার হাতে পড়ে পুরোদস্তুর বাঙালী হয়ে উঠেছি।
— বাঃ উর্দুও রপ্ত করে ফেলেছেন!
— আদি ঢাকাইয়া বলে কথা। না চাইলেও শুনতে শুনতে এক আধটু এসে যায় বৈকি! আপনি কোথাকার?
— আমি মিক্সড! দাদাবাড়ী ঢাকার পাশেই এক অজপাড়াগাঁ গ্রামের মেয়ে আমি। নানুবাড়ী এইতো এখানেই। আপনার প্রতিবেশী।
— ও ওয়াও! ইন্টারেস্টিং! ঢাকাই তো গ্রাম!
— লন্ডনের তুলনায় বস্তি আর কী।
— আরে নাহ এভাবে বলবেন না। আমাদের ওখানকার মত এখানকার মানুষ যান্ত্রিক নয়। বিট্রিশ লাইফ রোবোটিক। ঢাকা প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা।
— সেইজন্যই বুঝি ফিরছেন না?
— না তা না। আসলে বাবাটার মায়ায় পড়ে গেছি। বাবা কী তা এখানে না এলে জানা হতো না। মা তাঁর নিজেস্ব লাইফ নিয়ে বিজি। কখনো তেমন কাছে পাইনি। এই দুই বছরে বাবা আমায় একমুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করেননি।
— ছেলেরা বাবার জীবনে টনিক।
— আর মেয়েরা বুঝি টনিক না? মেয়েরা বাবার অমূল্য সম্পদ জানেন তো?
— হুম জানি। আচ্ছা আমি এখন যাই দেরি হয়ে গেল।
— মোমবাতি জ্বালাতে?
— হ্যাঁ..
— আপনি হয়তো খেয়াল করেননি ইলেক্ট্রিসিটি বেশ আগেই চলে এসেছে।
চমকে ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই তো কারেন্ট চলে এসেছে! ইশশ কথার খেয়ালে কী অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম নাকি.. কী লজ্জা! কিন্তু সৌরভকে দেখা যাচ্ছে না কেন? উনি তো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। বললাম,
— ওহ সরি খেয়াল করিনি! আপনি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ফোকাস সেই দিকে ছিল তাই বুঝিনি ইলেক্ট্রিসিটি কখন এসেছে।
— হুম এদিকটায় আলো নিভিয়ে রাখি। আমার আঁধার ভালো লাগে। আপনার?
— আমার বৃষ্টি।
— ও সেজন্যই বুঝি ভিজছিলেন!
— না।
— তবে?
— কে জানি পিয়ানো বাজাচ্ছিলো। প্রতিদিন শুনি। কিন্তু আজকেরটা অনেক করুণ ছিল। কে বাজায় জানি না। যেই বাজিয়ে থাকুক ওনার মন খারাপ ছিল।
— কীভাবে বুঝলেন মন খারাপ?
— সাতদিন ধরে শুনছি। আজকেই প্রথম ছন্দের পতন ঘটলো। বেশ করুণ সেই সুরের পতন। মনে হল মন ভালো নেই তার।
— ইনটুইশন্স (Intuitions) রাইট?
— ইয়াপ! আপনি শুনেছেন কখনো প্রতিদিন সন্ধ্যায় পিয়ানো বাজানো..
হুট করেই উনি প্রসঙ্গ চেঞ্জ করে বেশ যান্ত্রিক টোনে বললেন,
— ওকে মিথি অনেক কথা হলো। ক্ষিধে পেয়েছে। ডিনারে যাই কেমন? আপনিও ডিনার করে নিন। বাই।
— শিওর! বাই সৌর..
— সৌর!!
— সরি! বাই সৌরভ… বলেই আর দাঁড়াইনি একপ্রকার দৌড়ে রুমের ভেতর চলে এলাম। এতক্ষণের আন্তরিকতা হটাত যান্ত্রিকে রূপ নেয়া মেনে নিতে পারিনি। একধরণের অপমানবোধ গ্রাস করে নিয়েছিল। ভালোই হলো চেহারা চিনিনি। কখনো সামনে পড়লে চিনবো না। যাকে চিনি না তার করা অবজ্ঞার সুর গায়ে লাগার কথা না। কন্ঠ চিনলেও আর কথা বলবো না বলে মনেমনে পণ করলাম। আর নয়, এই প্রথম এই শেষ।
…
চলবে…..