#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#পর্বঃ৭(অন্তিম পর্ব)
#Jhorna_Islam
দিনে দিনে সুস্থ হয়ে উঠছে সুপ্ত।তার সব ক্রেডিটই তাহিয়ার।তার অক্লান্ত পরিশ্রমে সুপ্ত ধীরে ধীরে তার মধ্যে ফিরে আসছে। বাড়ির সকলেই এতে অনেক খুশি। বাড়ির একজন সদস্য আগের মতো হয়ে যাচ্ছে খুশি হওয়ারই কথা।এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি খুশি সুপ্তর মা। উনিতো এখন তাহিয়া বলতে অজ্ঞান। তাহিয়া কে ছাড়া এক বেলা ও খান না। নিজের হাতে খাইয়ে দিবে মাথায় তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিবে। মাঝে মাঝে শিফা বলে,,হ্যা ওটাই তোমার মেয়ে আমরা কেউ না। সব যত্ন তাহিয়া আপুর জন্য আমি আর আহিয়া আপু তো বানের জলে ভেসে এসেছি তাই না।
এরকম কথা শুনে তাহিয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। আহিয়া পরে যায় লজ্জায়। মেয়েটা তার মাকে বলবে ঠিক আছে কিন্তু এরমধ্যে ওকে কেন জড়ায়?
বাড়িতে এখন সবাই ই খুনশুটি,হাসি,আনন্দ করে কাঁটায়। মাঝে মাঝে এসে সুপ্ত ও ওদের সাথে এসে জয়েন হয় তবে গম্ভীর মুখে বসে থাকে। কিন্তু শিফা এমন এমন কথা বলে সুপ্ত না হেসে পারে না শেষ পর্যন্ত হেসে দেয়।
প্রথমে সুপ্ত কে সামলানো টা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল তাহিয়ার জন্য। কারণ সুপ্ত ভাবতো তাহিয়া ই সুপ্তর আহিয়া। তখন কি পাগলামি করতো হুটহাট জড়িয়ে ধরা,তাহিয়ার হাতে খেতে চাওয়া তাহিয়ার কোলে ঘুমাতে চাওয়া। তাহিয়া প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরে ধীরে ধীরে ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। সুপ্তর পাগলামোতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বিষয়ে গুলো উপভোগ করতে থাকে। কিন্তু দিন যতো যায় সুপ্ত যেনো বুঝে যায় এটা তার আহিয়া না এটা আহিয়ার বোন তাহিয়া। কারণ সুপ্ত তাহিয়া সম্পর্কে সবকিছুই জানে আহিয়া সব বলেছে।মাঝে মাঝে তো দুষ্টুমি করে বলতো তোমার কোনো টেনশন নেই সুপ্ত।একটা গেলে আরেকটা পাবা।আমি যখন থাকবো না আমাকে মিস ও করতে হবে না কারণ আমার কার্বণকপি আছে। ওরে নিয়ে জীবন শুরু করবা বলে খিলখিলিয়ে হাসতো আর এসব কথা শুনে সুপ্ত খুব রেগে যেতো।
কিন্তু হায় সেই মেয়েটাই নেই। সুপ্ত আজ মাসখানেক হলো সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়েই গম্ভীর হয়ে গেছে। মেনে নিয়েছে তার আহিয়া আর নেই। দীর্ঘ ছয় মাস তাহিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজ সুপ্ত একদম সুস্থ। সুপ্ত এখন তার কাজে জয়েন হতে চায় আবার। মেডিকেল থেকে সুপ্তর সুস্থতার রিপোর্ট ও দিয়েছে। কয়েকদিন হলো তাহিয়া সুপ্তদের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে চলে গেছে।
সুপ্তর চিকিৎসা করতে করতে কখন জানি সুপ্তর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। না চাইতেও লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাহিয়া। কিন্তু সুপ্তর হাভ ভাব দেখে তাহিয়ার মনে হয় তার খুব অস্বস্তি হয় তাহিয়ার সামনে। আর হয়তো আহিয়া কেও মনে পরে যায়।
তাহিয়া একদিন এরমধ্যে শুনেছে ও সুপ্তর মা যখন আলাদা করে সুপ্ত কে ডেকে নিয়ে তাহিয়া কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহন করার জন্য। সুপ্ত ঐদিন সুস্থ হওয়ার পর মায়ের সাথে প্রথম রুড বিহেভ করে। সে কখনোই আহিয়ার বোন তাহিয়া কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না। তাহিয়া কে কেনো কাউকেই আর তার সাথে জড়াতে চায় না। বাকিটা জীবন আহিয়ার স্মৃতি নিয়েই পাড় করে দিতে চায়।
সুপ্ত এটাও বলে তাহিয়া কে যেনো যতো দ্রুত সম্ভব এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তাহিয়া কে দেখলে সুপ্তর খুব অস্বস্তি হয়।
সুপ্তর আর সুপ্তর মায়ের কথা সব তাহিয়া শুনে ফেলে।না চাইতেও ঐদিন তাহিয়া খুব করে কাঁদে। পরেরদিন নিজেই কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে সুপ্তদের বাড়ি থেকে চলে আসে। কেউ আটকাতে পারেনি তাহিয়া কে। সুপ্তর মা কান্না করতে করতে সুপ্ত কে বলে তাহিয়া কে আটকানোর জন্য। সুপ্তর কথা তাহিয়া শুনবে কিন্তু সুপ্ত একদম চুপ ছিলো।এমন ভাব ধরে ছিলো যেনো তাহিয়া থাকায় আর না থাকায় সুপ্তর কিছুই যায় আসে না । তাহিয়া ও সুপ্তর দিকে তাকিয়ে মনে মনে চাচ্ছিলো যেনো তাকে আটকায় সুপ্ত কারণ সুপ্তর সাথে সাথে এই পরিবারের সকলকেই তাহিয়া নিজের আপন করে নিয়েছিলো।
তাহিয়া চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে বাড়িটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে। কেউ ভালো মতো কথা বলে না এখন আর হাসি তামশা ও হয় না। সুপ্তর সাথে ও কেউ ভালো করে কথা বলে না। সুপ্তর মা তো ঘর বন্দি করে রেখেছে নিজেকে।
এরমধ্যে সুপ্ত একটা কাজে বের হয়। সুপ্তর ফোনে কল আসে। কল দিয়েছে শিফা কল ধরতেই কান্না করতে করতে শিফা জানায় মা হাসপাতালে আছে তারাতাড়ি যেনো সেখানে যায় সুপ্ত।
সুপ্ত তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে পৌঁছায় সুপ্ত। রিপ্ত দৌড়াদৌড়ি করছে মায়ের রিপোর্ট নিয়ে। সব চেক করে ডাক্তার জানায় নিজের উপর অতিরিক্ত প্রেশার দিয়ে ফেলেছে। সারাক্ষণ টেনশন করে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো কিছুই করে না এরকম করে চলতে থাকলে উনার উপর মারাত্মক প্রভাব পরবে। উনাকে যেনো চিন্তা মুক্ত রাখা হয়। সুপ্ত মায়ের কাছে গিয়ে মাকে ডাকে কিন্তু তার মা কোনো সাড়া ও দেয় না। ঘুরে একবার সুপ্তর দিকে তাকায় ও না।
সুপ্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে।
তাহিয়া মন ভালো করার জন্য তার বান্ধবীর সাথে একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসেছে।এরমধ্যে হুট করে কেউ একজন তাহিয়ার হাত ধরে বলে,,অনেক চিল করেছো এবার চলো আমার সাথে।
তাহিয়া তাকিয়ে দেখে সুপ্ত।
সুপ্ত আপনি?
— হ্যা আমি।
— এখানে যে কিছু বলবেন?
— বলবো না সাথে অনেক কিছু করবোও। তোমার সিংগেল লাইফের দুঃখ ঘোচাতে এসেছি। চলো।
মা-মানে? তাহিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে সুপ্ত তাহিয়া কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
সুপ্ত হাসপাতালে তাহিয়া কে নিয়ে এসে মায়ের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,,মা এই নাও তোমার বড় বউমা। যা করার সিম্পল ভাবে তারাতাড়ি করো। এসব আর ভালো লাগছে না আমার।
সুপ্তর কথা শুনে সুপ্তর মায়ের চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। সকলেই বেশ খুশি হয়। তাহিয়া বড় বড় চোখ করে সুপ্তর দিকে তাকায়।
সুপ্ত অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,, এভাবে তাকানোর কিছু নেই তোমার বোনের শখ ছিলো তার বোনকে যেনো বিয়ে করি।আর তুমিও যে মনে মনে এটাই চাও আই নো।
সুপ্তর কথায় তাহিয়া লজ্জা পেয়ে যায়। আহিয়া এসে তাহিয়ার কাঁধে হাত রাখতেই তাহিয়া মুচকি হাসে। সকলেই আনন্দ করে তাদের বিয়ের আয়োজন করতে থাকে।
সমাপ্ত।