#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam
সুপ্ত ঘরে গিয়ে দরজা দিয়ে বসে আছে। সুপ্তর মা,বাবা,বোন সকলে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে কিন্তু সে দরজা খুলছেও না আর না কোনো রেসপন্স করছে।শিফা আর সুপ্তর মা ভয়ে কাঁদতে থাকে। সুপ্ত দরজা খুলছে না দেখে সকলেরই অবস্থা বেগতিক। সুপ্তর মা কিছু একটা ভেবে দৌড়ে চলে যায় রুমের সামনে থেকে। শিফা আর তার বাবা শিফার মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ডাকতে থাকে সুপ্ত কে।
আহিয়ার মাথা মনে হচ্ছে ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়।কেন জানি শতো চেষ্টা করেও চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি বের করতে পারছে না সে। মনে হচ্ছে আগেই কান্না করে চোখের পানি সব শেষ করে ফেলেছে।বিছানায় বসে হাঁটুর উপর মাথা দিয়ে বসে আছে। আহিয়ার মা পাশেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে হুট করে সুপ্তর মা আহিয়ার শ্বাশুড়ি রুমে ঢুকে। আওয়াজ পেয়ে আহিয়ার মা তাকালেও আহিয়া একই ভাবে বসে আছে।
সুপ্তর মা এসে চহিয়ার হাত ধরে টেনে বসা থেকে উঠায়।আহিয়া পরতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়।
–আম্মা?
— কোনো কথা নয় চলো আমার সাথে, বলেই হাঁটা দেয় আহিয়া কে নিয়ে তিনি।
পিছন থেকে আহিয়ার মা বলে,,বিয়াইন কি হয়েছে? এমন করছেন কেন? ওরে একটু সময় দেন।
সুপ্তর মা আহিয়ার মায়ের কথায় পাত্তা দেয় না। এদিকে রিপ্ত আসতে গিয়ে দেখে মা আহিয়া কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রিপ্ত ও মা কে ডেকে জিগ্যেস করে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। একটু সময় দিতে সবাই কে। কিন্তু তিনি কারো কথায়ই পাত্তা দেয় না।
আহিয়া এসব কিছুতে অসুস্থ হয়ে পরে। আর পারছে না সে এসব কিছু নিতে। সবকিছুরই একটা লিমিট আছে। আর কতো সহ্য করা যায়। এই ফ্যামিলিতে বিয়ে হয়ে মনে হচ্ছে জীবনটাই তার ধ্বংস হয়ে গেছে।
আহিয়ার শ্বাশুড়ি আহিয়াকে দরজার সামনে এনে দাঁড় করায়। সকলেই সেখানে উপস্থিত হয়। তিনি আহিয়া কে বলে সুপ্ত কে ডাক দেওয়ার জন্য।
আহিয়া সকলের দিকে একবার ভালো করে তাকায়। কেউই কিছু বলছে না। আহিয়ার এখন ইচ্ছে করছে এই বাড়ি ছেড়ে ছুটে পালিয়ে যেতে।
ভিতরে সুপ্ত মাথায় এক হাত আরেক হাত বুকে দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। কি অসহ্য যন্ত্রণা।কাউকে বোঝাতে পারছে না নিজের কষ্ট টা।পরিবার মানুষ কেন এই কাজ করলো? তাকে কেন বুঝলোনা সেটার উত্তর খুঁজে পায় না সুপ্ত। আচ্ছা এরা কি আসলেই তার পরিবার? মাঝে মাঝে এদের এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে। নিজের পরিবার কি এমন জঘন্যতম কাজ কখনো করতে পারতো? পরোক্ষনে নিজের মনই প্রশ্নের উত্তর দেয় উহুু কখনো না।নিজের আপনজন হলে কখনো এইরকম নিম্নমানের কাজ করতে পারতো না।
অনেক ভেবে চিন্তে সুপ্ত একটা নয় দুইটা ডিসিশন নেয়।হয় সুইসাইড নয়তো তার আহিয়াকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে।থাকবেনা সে এসব লোকের কাছে যাদের কাছে তার কোনো রকম মূল্য নেই।
সুপ্ত পকেটে হাত দিয়ে তার ফোন খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু একি ফোন খুঁজে পায় না।
মাথায় সুপ্তর আকাশ ভেঙে পরে।এদিক ওদিক ফোন খুঁজতে থাকে। কোথাও না পেয়ে রুমের জিনিসপত্র ভাঙতে থাকে।সবকিছু অগোছালো করতে থাকে। এখন সুপ্ত কে দেখলে মনে হবে সে বদ্ধউন্মাদ হয়ে গেছে।
এসবকিছুর মাঝে একেবারে ক্লান্ত হয়ে যায় সুপ্ত। এমনিতেই তার শরীরে কোনো শক্তি নেই। তার উপর এতোটা হয়রান হয়েছে। নিজেকে সামলে মেঝেতে বসে হাত পা ছড়িয়ে মাথাটা মেঝেতেই হেলিয়ে দেয়।
সুপ্তর মায়ের কথায় আহিয়া কোনো রেসপন্স করে না। একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সুপ্তর মা এতে রেগে যায়।চিল্লিয়ে বলে,,, যা বলছি তাই করো নয়তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না বউমা।
আমি অনেক করেছি মা এবার আর পারবো না। আহিয়া সাফ সাফ উত্তর দেয়। এতে সুপ্তর মা রেগে যায়। বউমা বলেই হাত উঁচিয়ে চড় লাগাতে যায়। সুপ্তর মায়ের আচরণে সকলেই হতভম্ব হয়ে যায়। সুপ্তর বাবা সুপ্তর মা বলে ধমক লাগায়।
” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো সুপ্তর মা? তুমি বউমার গায়ে হাত উঠাতে চাচ্ছো? ও কি আসলেই এসব কিছু ডিজার্ভ করে? ” সুপ্তর বাবা বলে।
আমি আমার ছেলের ভালোর জন্য সব করতে পারি সুপ্তর বাবা সব।আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আমার ছেলের অবস্থা? আপনি বাবা হয়ে কি করে চুপ করে আছেন? আপনার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
ঐটা আমার বড় ছেলে সুপ্তর মা।আমার কি কম কষ্ট হচ্ছে? সবই পরিস্থিতির স্বীকার। তোমাকে বুঝতে হবে। আমরা অন্যায় করতে পারি না।
আপনি চুপ করে বসে থাকেন কোনো অন্যায় আমরা করছি না।যতো অন্যায় হওয়ার আমার সুপ্তর সাথে হয়ে গেছে। বলেই তিনি ছলছল চোখে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,, বউমা কিছু করো।আমার ছেলেকে তুমি বাঁচাও দোহাই লাগে তোমার। এই মায়ের আকুতি তুমি ফেলো না বউ মা। তুমিও তো কয়দিন পরে মা হবে। আমার ছেলেটার কষ্ট টা একটু লাঘব করো।ওরে একটু ভালো থাকতে দাও বউ মা।
আহিয়া শ্বাশুড়ির দিকে ছলছল চোখে তাকায়।খুবই ইমোশনাল সে।নিজেকে সামলে রাজি হয়ে যায় সুপ্ত কে ডাক দিতে। শুকনো ঢুক গিলে গলাটা ভেজানোর চেষ্টা করে যেই না দরজায় টোকা দিয়ে সুপ্ত কে ডাকতে যাবে ওমনি আহিয়ার হাতটা ধরে ফেলে কেউ একজন।
আহিয়া তাকিয়ে দেখে রিপ্ত।
রিপ্ত কি করছিস? ছেড়ে দে বউমার হাত।ডাকতে দে আমার সুপ্ত কে নয়তো অঘটন ঘটে যাবে। সুপ্তর মা।
কিছুই হবে না মা।অনেক হয়েছে তামশা আর না। তোমার ঐ পাগল ছেলের জন্য আমি আর আমার বউ আর কতো সাফার করবো? আর পারছি না বিশ্বাস করো আর পারছি না মা। দরকার পরলে আহিয়া কে নিয়ে আমি দূরে কোথাও চলে যাবো। ওর কথাটা ও ভাবতে হবে এখন। আহিয়া আর এখন একা নেই। সবসময় তোমার বড় ছেলের কথা ভাবো তুমি। তোমার ছোট ছেলে আর তার বউয়ের কথা একটু ভেবে দেখেছো? তুমি আসলে খুব স্বার্থপর মা। তুমি থাকো তোমার ঐ পাগল ছেলেকে নিয়ে।
রিপ্তর বলতে দেড়ি তার গালে হাত তুলতে দেড়ি না।
রিপ্ত গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে যেনো সে জানতো চড় টা সে খাবে।
সেইতো মা সবসময় এইকাজ টা করে তুমি আমাকে থামাতে চাও। ভালো খুব ভালো। আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,, আহিয়া যাও লাগেজ গোছাও।তোমার এই নামের জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছো আর করতে হবে না। একজন পাগলের পাল্লা থেকে আজ তোমাকে আমি মুক্ত করবো।এবার তুমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবে।
আহিয়া রিপ্তর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চায় তাতে রিপ্ত বাঁধা দিয়ে বলে,,আর কিছু বলতে হবে না আমাকে।অনেক করেছো এবার নিজের কথাটা একটু ভাবো।বলে নিজেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে আহিয়া কে।
সুপ্তর মা থমকে যায় যেনো। রিপ্ত চলে যাওয়ার পর হুঁশ আসে। সুপ্তর বাবা কে বলে,,আপনি কিছু বলেন কি হচ্ছে এসব? আমার ছেলেটা অসুস্থ বলে,,আপনারা এমন করবেন?
এবার আমরা সকলেই পাগল হয়ে যাবো। এইদিন দেখার আগে আমার মরন হলো না কেন? আল্লাহ আমার ভালো শান্ত বুঝদার ছেলেটার একি হাল হলো? কিছু কিছু মেয়েরা যেমন পাগল কে সুস্থ করতে পারে,,আবার সুস্থ মানুষকে ও পাগল করতে পারে। মেয়েটা মরে গিয়ে উনার ছেলেকে বাচিয়ে ও মেরে গেছেন।বলতে বলতে তিনি নিজের রুমে চলে যায়।
শিফা আর সুপ্তর মা সুপ্তর দরজার সামনে বসে পরে। আহিয়া নামক মেয়েটা কেন তার ছেলের জীবনে এসেছিলো? আর কেনই বা তাকে মিশনে গিয়ে জীবন দিয়ে উনার ছেলের এই পরিণতি করে যেতে হলো?
#চলবে,,,,,?