পরিত্যাক্ত প্রাসাদ পর্ব-০৩

1
520

গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ ৩য় পর্ব
লেখক: #হাসান

রাকিব তার মাকে জিজ্ঞেস করলো: তাকে পরিত্যাক্ত প্রাসাদ থেকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে কে??

জানেন হাসান ভাই?? এরপর রাকিবের মা রাকিব কে যা বললো। তা শুনে রাকিব মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।

রাকিবের মা কি বলেছিলো নাহিদ ভাই ??

রাকিবের মা রাকিব কে যেভাবে বলেছিলো। আমিও আপনাকে ঠিক সেভাবেই শুনাচ্ছি:

“তুই এসব কি বলসিস?? কীসের পরিত্যাক্ত প্রাসাদ?? আমি তো রাতে তোর রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তোর জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি তুই রুমের মধ্যে ঘুরাঘুরি করছিস। আর একা একা বীর বীর করে কি যেন বলছিস?? হঠাতই তুই অদ্ভুদ আচরন শুরু করলি। রুমের মধ্যে দৌড়া দৌড়ি শুরু করলি। আর তোর শরীর থরথর করে কাপছিলো। আমি তোকে কতবার ডাকলাম তুই সারা দিলি না। আর এক পর্যায়ে তোর রুমে থাকা দা দিয়ে তুই নিজের পায়ে কোপ মারলি। আমি চিৎকার দিয়ে তোর বাবাকে ডেকে আনলাম। তোর বাবা দরজা ভাঙলো। আর আমরা ভেতরে ঢুকতেই তুই দৌড়ে আমাদের কাছে এসে বললি, আমাকে বাঁচান। আমাকে বাঁচান। বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললি। তারপর আমরা তোকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।”

রাকিব তার মায়ের কথা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো:
আমি কি বাড়িতেই ছিলাম??

রাকিবের মা বললো: হ্যা! তুই তো বাড়িতেই ছিলি।

তাহলে ঐ পরিত্যাক্ত প্রাসাদ, ঐ বাচ্চাটা! বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো রাকিব।

★★
নাহিদ ভাই, তারমানে রাকিব যা দেখেছিলো সব স্বপ্ন ছিলো??

ডাক্তাররা রাকিবের মা বাবাকে সেরকমই বলেছিলো। ডাক্তাররা রাকিবের মা বাবাকে বলছিলো:
“কোনো একটা কারনে রাকিব খুবই চিন্তিত। আর এই অতিরিক্ত চিন্তার কারনে রাকিব ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছে। আর নিজের পায়ে নিজেই কোপ মেরেছে। তবে এতে চিন্তার কোন কারন নেই। খুব শ্রীঘ্রই রাকিব সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে রাকিব কি নিয়ে চিন্তিত সেটা আগে জানতে হবে।”

সত্যিই কি অতিরিক্ত চিন্তার কারনে রাকিবের এই অবস্থা হয়েছিলো??

না। অতিরিক্ত চিন্তার কারনে রাকিবের এই অবস্থা হয়নি।

তাহলে??

সেটা খুব শ্রীঘ্রই জানতে পারবেন হাসান ভাই।

★★
রাকিব অসুস্থ হয়েছে শুনার পর, দুদিন পর আমরা ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই মিলে রাকিব কে দেখতে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি এই দুদিনেই রাকিব অনেক শুকিয়ে গেছে। জ্বরে রাকিবের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বার বার শুধুই বমি করছে। শুধু বমি বললে ভুল হবে, রাকিব রক্ত বমি করছে। ডাক্তাররাও রাকিবের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেছে।
কারন রাকিবের সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট বলছে রাকিব সুস্থ।

জানেন হাসান ভাই, রাকিবের এই অবস্থা দেখে আমিও প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারন একটা মানুষ কখনো দু’দিনে এতোটা শুকিয়ে যায় না। আর কারো জ্বর আসলে সে এইভাবে র*ক্তবমি করে না। আমরা জানি জ্বর মানুষের জন্য খুবই সাধারণ একটা রোগ‌। অথচ এই সামান্য একটা রোগে রাকিবের যে অবস্থা হয়েছিলো, তাতে মনে হচ্ছিলো রাকিব বেশিদিন বাঁচবে না।

★★
আন্টি আর আংকেল রাকিবের এই অবস্থা কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না। কারন রাকিব তাদের একমাত্র ছেলে। যদি রাকিবের কিছু হয়ে যায় তাহলে তাদের এতো জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা দিয়ে কি হবে??

ডাক্তাররা রাকিবের মা বাবাকে বললো: রাকিব কোনোকিছু নিয়ে খুবই চিন্তিত। আর ভীত। তাই আগে জানতে হবে রাকিব কি নিয়ে চিন্তিত বা ভয় পাচ্ছে। যদি এই জিনিসটা জানা যায়। তাহলে রাকিব কে তারাতাড়ি সুস্থ করা যাবে।

আন্টি অনেক জানার চেষ্টা করেছে। তবুও রাকিব আন্টিকে কিছুই বলেনি। মূলত তখন রাকিবের জীবন সংকট দেখা দিলেও, রাকিব তার মান-সম্মান নিয়ে আরো বেশি ভয় পাচ্ছিলো। কারন এলাকার সবাই জানে রাকিব খুবই ভদ্র আর ভালো ছেলে। কিন্তু রাকিব যে প্লেবয় সেটা শুধু আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব জানতাম। তবে রাকিব খুন করেছে, সেটা আমরাও জানতাম না। আর রাকিব যে একজন খুনি সেই খবর এলাকায় ছড়িয়ে গেলে, রাকিব এমনিতেই লজ্জায় মরে যাবে। তাই রাকিব কাউকেই কিছু বলছে না।

শেষ পর্যন্ত আন্টি আমাকে রাকিবের কাছে একা কথা বলতে পাঠালো। আমি রাকিবের কাছে গিয়ে দেখি রাকিব শুধুই কাঁপছে। রাকিবের চোখ মুখে আতংকের ছাপ স্পষ্ট। রাকিব কে দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে, রাকিব খুবই ভীত। আমি রাকিব কে কী জিজ্ঞেস করবো??বুঝতে পারছি না। কারন রাকিবের এই রকম বাজে অবস্থা দেখে আমি নিজেই ভয় পাচ্ছি। যে ছেলেটাকে দেখে সব মেয়েরা ক্রাশ খেতো। এখন সেই ছেলেটিকে দেখে আমার বমি আসছে। রাকিবের চোখগুলো ভিতরে ঢুকে গেছে। মুখটা শুকিয়ে ৮০ বছরের বৃদ্ধাদের মতো হয়ে গেছে। আর ঘন ঘন র*ক্ত বমি করার কারনে রাকিবের জামাটা র*ক্তে লাল হয়ে গেছে। তবুও রাকিব কে জিজ্ঞেস করলাম: কী হয়েছে তোর??

রাকিব বললো: কে আপনি??

বিশ্বাস করেন হাসান ভাই: আমি রাকিবের কথা শুনে চমকে উঠেছিলাম। কারন রাকিব হচ্ছে আমার সেই বন্ধু। যাকে আমি যদি গলা ভাঙ্গা অবস্থায়ও ফোনে শুধু “হ্যালো” বলি। তবুও রাকিব আমায় চিনতে পারে। আর সেদিন আমি রাকিবের সামনে বসেছিলাম অথচ রাকিব আমায় চিনতে পারেনি। কি বলবো আমি?? আমার শুধুই কান্না পাচ্ছিলো।
তবুও নিজেকে সংযত রেখে, রাকিব কে পরিচয় দিয়ে, জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তোর?? তুই ভয় পাচ্ছিস কেন??

আমি ভেবেছিলাম রাকিব আমায় সবটা খুলে বলবে। কিন্তু রাকিবের সাথে ঘটে যাওয়া এইসব ঘটনার কিছুই আমায় বলেনি। শুধু বলেছে: সে স্বপ্ন দেখেছে, নয়ানগর গ্ৰামের শেষের ঐ পরিত্যাক্ত প্রাসাদের একটা বাচ্চা তাকে মারতে চায়। আর সেজন্যই রাকিব এতো ভয় পাচ্ছে।

কিন্তু তখন আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো। এখানে অন্য কোনো রহস্য আছে। কারন তখনো আমি জানতাম না রাকিব নীলাকে খুন করেছে।
আমি ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ডাক্তারদের কাছে সব খুলে বললাম। যা যা রাকিব আমায় বলেছিলো। তারপর আমি হাসপাতাল থেকে চলে আসি। আর ডাক্তাররা রাকিবের চিকিৎসা শুরু করে।

★★
এক সপ্তাহ পর রাকিব মোটামুটি সুস্থ হয়। ডাক্তাররা রাকিব কে ছেড়ে দেয়। রাকিব বাড়িতে চলে আসে। আর রাকিব ভেবে নেয় হয়তো সেদিন যা দেখেছিলো, তার পুরোটাই স্বপ্ন ছিলো। আর ভুলবশত ঘুমের ঘোরে নিজের পায়ে নিজেই কোপ মেরেছে।

সেদিন রাকিব সব চিন্তা বাদ দিয়ে, রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু হটাৎ…
মাঝরাতে রাকিবের কানে ভেসে আসে সেই পরিচিত ডাক।
বাবা, বাবা ও বাবা!

রাকিব ঘুম থেকে চমকে উঠে। ভয়ে রাকিবের হৃদস্পন্দন প্রায় থেমে যায়। রাকিব ভাবতে থাকে সেদিন তো সে স্বপ্ন দেখেছিলো। তাহলে আজকে কে ডাকছে?? এসব ভাবতে ভাবতেই রাকিব তাকিয়ে দেখে:
সে পড়ে আছে সেই পরিত্যাক্ত প্রাসাদে। আর সামনের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পায় একটা ছায়া তার দিকে হেঁটে আসছে।
চলবে……??

1 মন্তব্য

  1. লেখক ভাইদের লেখা গল্পগুলিতে তেমন interesting ব্যাপার থাকে না,,,,,, যেইটা লেখিকা আপুদের গল্পে পাওয়া যায়,,,,,, লেখক ভাইদের গল্পে সবসময়ই কেমন একটা অগোছালো ভাব থাকে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে