পথ হারা প্রজাপতিগল্পের পর্ব-০১

0
240

পথ_হারা_প্রজাপতি
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

চিকেনের লেগ পিস আর নান রুটি দিয়ে খুব মজা করে খাচ্ছিলো সাফিরা। হঠাৎ রাযীন এসে সাফিরার প্লেট দুটো কেড়ে নিয়ে বললো,
–” লজ্জা করে না তোর? একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও চান্স পেলি না, অথচ এখানে বসে বসে কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছিস!

তারপর আফরোজা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
–” আম্মা আজকে ওর খাবার খাওয়া বন্ধ! আমি যদি শুনেছি ওরে তোমরা কেউ খাবার খেতে দিয়েছো তাহলে আমি কি করবো ভেবে দেখো!গল্পের জ্ঞ

এই বলে গটগট পায়ে প্রস্থান করলো এখান থেকে। এদিকে রাগে দুঃখে চোখের পানি টলমল করছে সাফিরার। তাই সবার থেকে চোখের পানি আড়াল করতে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই দেখলে কি ভাববে? বলবে খাবারের জন্য কাঁদছে! বিশেষ করে তামান্না যদি দেখে তাহলে উল্লাসে মেতে উঠবে তা তো সে হতে দিতে পারে না, কখনোই না।

কিছুক্ষণ পর আফরোজা বেগম দরজায় কড়াঘাত করে বলল,
–” সাফিরা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি তাড়াতাড়ি খেয়ে নে মা!
খালামনির এই কান্ড দেখে খুব হাসি পাচ্ছে সাফিরার। একমাত্র ছেলেকে এতো ভয় পায় যে শাসন ও করতে পারে না। যদি ছেলে রাগ করে বাসা থেকে চলে যায় সে জন্য। অথচ আফরোজা বেগম কিনা স্বপ্ন দেখে সাফিরাকে তার….! সো ফানি হা হা হা!

সাফিরা দরজা খুলে তার খালামনি কে বলল,
–” একদিন না খেয়ে থাকলে আমার কিছুই হবে না খালামনি তুমি বরং এগুলো নিয়ে যাও। তুমি তো জানো আমি না খেয়ে খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন আর কোন কষ্ট হয় না।
তখন তামান্না এসে বলল,
–” মামি তুমি ভাইয়ার অবাধ্য হয়ে সাফিরাকে খাবার দিচ্ছ? ভাইয়া জানলে কি হবে ভেবে দেখেছো?

আফরোজা বেগম রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
–” সাফিরার খাবার খাওয়া বন্ধ হলে তো তোর‌ও খাবার খাওয়া ও বন্ধ তামান্না! তুই কি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিস? পাস নাই তো, তাহলে তোর মুখ দিয়ে কিভাবে কথা বের হয় লজ্জা করে না তোর?

আফরোজা বেগম এর কথায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তামান্না চলে গেল। সাফিরা ড্যাম শিউর এ কথা এক সময় না এক সময় রাযীনের কানে তুলবে তামান্না! তখন সাফিরার নাজেহাল অবস্থা করবে রাযীন! তাই আফরোজা বেগম কে সাফিরা বলল,
–” এসবের মধ্যে তুমি এসো না, তবুও কথা শুনো না আমার ভাল্লাগে না।
এই বলে দরজা লাগিয়ে বেডে গিয়ে বসে নিজে নিজে রাযীনের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে শুরু করলো। তারমধ্যে একটা হাস্যকর কথা বলল,
যেমন তার নাম তেমন তার ব্যবহার আর দেখতেও। “রাযীন” অর্থ- গম্ভীর্যশীল।
. কেন যে খালামনিরা উনার নাম “রাযীন” রাখতে গেল? আল্লাহ তাআলা জানেন।
এ জীবনে বোধহয় এই লোকটার থেকে আমি ছাড়া পাবো না
.
বিকাল বেলা,
সাফিরা ঘুমিয়ে ছিলো দরজার ঠাসঠুস শব্দে ঘুম ছুটে দৌড়ে পালাতে বাধ্য হলো। আড়মোড়া ভেঙে দরজা খুলে দেখে রাযীন কতো গুলো মোটা মোটা ব‌ই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভিশন বিরক্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সাফিরা। কিন্তু রাযীন এক ধমক দিয়ে বলল,
–” তোর চেহারা দেখতে এখানে এসেছি আমি? ব‌ই গুলো ধর?
সাফিরা হাতে নিতে,
রাযীন বলল,
–” ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বস, আমি আসছি পড়াতে!

সাফিরা কিছু না বলে চুপচাপ ব‌ইগুলো টেবিলে ধিরাম করে রাখে। পিছন থেকে রাযীন বলে উঠে,
–” ব‌ই’কে যত্ন করিস না বলেই আজকে তোর এই দশা। আজকে যদি পড়া না পারিস তাহলে দেখবি তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে!

অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসে সাফিরা রাযীন এখনো আসেনি। সাফিরা ব‌ই গুলো উল্টে পাল্টে দেখে বড় করে ঢোক গিলে। কারণ সব কেমন কঠিন লাগছে তার কাছে। বিশেষ করে হিসাববিজ্ঞান বিষয়টি, এতো দিন বাংলায় অঙ্ক করে এসেছে আর এখন কিনা সব ইংরেজিতে করতে হবে! সে মনে করে এই একটা বিষয় তার জীবনকে তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বে তা আর বুঝতে বাকি নেই।

রাযীন শুকনো কাশি দিয়ে রুমে এসে সাফিরার মুখোমুখি চেয়ারে বসে বলল,
–” এখন একাউন্টিং সাবজেক্ট টা বের কর। প্রথমে জাবেদা গুলো ইংরেজিতে শিখবি। তারপর অঙ্কে যাবো।

এদিকে সাফিরার মাথা ঘুরছে যেই ইংরেজিকে সে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে সেই ইংরেজি এখন তার প্রাণপ্রিয় হিসাববিজ্ঞানে ঢুকে গেলো! এটা মেনে নিতে পারছে না সে, এমনিতেই সারাদিন ধরে না খেয়ে আছে। তার উপর এই নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অচিরেই সে চেয়ার থেকে ধপাস করে নিচে পরে গেল!
.
বেশ কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রাযীন রাগি মুখশ্রী করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাফিরা কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বলল,
–” ভাইয়া আমি আর পড়বো না। খালামনি কে বলো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে!
বলতে না বলতেই রাযীন তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলল,
–” একটা থাপ্পড় দিয়ে বিয়ের ভুত মাথা থেকে ছাড়িয়ে দিব। কতোবার বিয়ে করার শখ তোর?বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। লজ্জা করলো না নিজের মুখে বিয়ের কথা বলতে?

এতো বড় ধমক খেয়ে হুশ ফিরল সাফিরার, মনে মনে বলে,
–” আমি কার কাছে কি বলে ফেললাম হায় আল্লাহ! এখন এগুলো বলে আমায় কথা শুনাতে ছাড়বেন না ভাইয়া।

সাফিরার ভাবনার মাঝে রাযীন বলে,
–” হাঁ কর!

সাফিরা চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। স্বপ্ন দেখছে কিনা সেটাই ভাবছে। না হয় কি এই দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে? এর মধ্যে রাযীন ধারাজ গলায় বলল,
–” চোখ দুটো দিয়ে কি ভষ্ম করে দিবি নাকি! এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি খেয়ে নে, এরপর পড়তে বসবি।
সাফিরা কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে চুপচাপ খাবার খেয়ে নিল।
.
.
ঘরির কাঁটায় রাত দুইটা বেজে দুই মিনিট। ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে সাফিরার চোখ দুটো। কিন্তু রাযীনের জন্য ঘুমাতে পারছে না। অসহায় মুখে একবার ঘড়ির দিকে তো আরেকবার বিছানার দিকে তাকায় সাফিরা। সাফিরা পড়া শুনতে না পেয়ে রাযীন মোবাইল ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সাফিরাকে বলল,
–” কিরে তোর পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি না কেন?

সাফিরা আর থাকতে না পেরে অসহায় ভাবে বলল,
–” ভাইয়া আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, সকাল সকাল উঠে আবার বাকি পড়াটা কমপ্লিট করব।

রাযীন সময় দেখে বলল,
–” আর ত্রিশ মিনিট পড়। ততোক্ষণে আমার অফিসের কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
–” আমার রুমেই কাজ কমপ্লিট করতে হবে? তোমার রুমে গিয়ে করলে কি সমস্যা? আমার এখন বোর্ড পরীক্ষা চলছে না যে রাত জেগে এভাবে পড়াশোনা করতে হবে। আর মানতে পারছি না তোমার এই অত্যাচার! আমাকে একটু শান্তি দাও।

এতটুকু বলে মুখ চেপে ধরে সাফিরা। ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে মাথা আউলা ঝাউলা হয়ে গেছে তার, তা না হলে বাঘের মুখে দাঁড়িয়ে এমন সাহসীকতা দেখায় সে?
এদিকে ফোন বন্ধ করে কটমট করে এগিয়ে আসে রাযীন!…..

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে