পতিতা মেয়ে part_15

0
1559

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_15

আস্তে আস্তে আনিকার অবস্থা প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷প্রায় ৫টা মাস কেটে গেছে৷আনিকার চোখ গুলো একদমই গর্তে ঢুকে গেছে৷চেহারাটা অনেক কালো হয়ে গেছে৷পুরো শরীর টা কেমন কঙ্কালের মত হয়ে গেছে৷কথাগুলো বাচ্ছাদের মত মুখে লেগে গেছে,ভাল করে কিছুই বুঝা যেত না৷
ওকে যতই দেখছিলাম ততই কান্না করছিলাম৷
আর এইদিকে আনিকাও সব কিছু অনেক আগেই জেনে গিয়েছিল৷আর জানার পর থেকে সব সময় আমাকে বুকের মধ্যে নিজেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখত৷
হঠাৎই একদিন আনিকার প্রচন্ড কাশি হতে লাগল৷আর কাশির সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করতে লাগল৷কাশির সাথে প্রচুর পরিমানে ব্লাড আসতে লাগল৷ওর রক্ত দেখে আমি নিজেও তখন পাগলের মত হয়ে যাচ্ছিলাম৷
আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলছিলাম,
আল্লাহ,তুমি আমার পাগলিটাকে আর কষ্ট দিও না ,ও আর সহ্য করতে পরছেনা৷আল্লাহ গো,ওর বদলে না হয় তুমি আমাকে নিয়ে যাও,তারপরও ওকে ভালো করে দাও
কথাটা বলতেই আনিকা আমার মুখের মধ্যে হাত দিল আর রক্তমাখা মুখে বলতে লাগল
–এই আবিদ,প্লীজ এগুলো বলো না,তোমার কিছু হলে আমি কার মাধ্যমে পৃথিবিতে বেঁচে থাকব?জানো আবিদ,তুমি ছাড়া কেউ আমাকে মনে রাখবে না৷আর আমি তোমার মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব(মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল)
–আনিকা!
–হুম আবিদ,আর একটা কথা রাখবে আমার?
–হুম বলো
–আবিদ,আমার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে,আমি তারপরও তোমার বুকের মধ্যেই নিজেকে আড়াল করে রাখি,তোমার শার্টসহ তোমার বুকটা লাল রক্তে ভরে ফেলি,প্লীজ তুমী না রাগ করো না,তুমিই বলো আমি কি করব?আমি যে আমার স্বর্গ সুখ খুজে পাই৷ তোমার বুকটাতে আমি অনেক শান্তি খুজে পাই
ওর কথাগূলো শুনছিলাম৷আর টপটপ করে চোখের পানি ঝড়াচ্ছিলাম৷
–কি আবিদ?আমি তোমার বুকে রক্তে লাল করে দেই বলে,তোমার অনেক রাগ হয় তাই না?
প্লীজ রাগ করো না৷আর তো মাত্র কয়টাদিন বাকি,তারপরই তো চলে যাবো
–আনিকা প্লীজ তুমি এগূলো বলো না,প্লিজ আনিকা প্লিজ,,আমি আর সহ্য করতে পারছিনা৷তোমার এত কষ্ট আর আমি সেই জায়গায় কিছুই করতে পারছিনা
বলেই চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলাম৷
আনিকা ওই অবস্থাতেই আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে,আর আমি আনিকার মুখের রক্ত মুছে দিচ্ছি৷আমার ভাগ্যটা কত করুন৷এমন একজন মানুষ পেয়েও আমি ধরে রাখতে পারলাম না৷
আর আমি কিভাবেই পারব?আমি কি স্রষ্টার লিখন খন্ডাতে পারব?পারব না৷কারন সেই ক্ষমতা তো আমার নেই৷
আস্তে আস্তে রমজান মাস চলে আসল৷
আনিকার শরীর এখন এতটাই দুর্বল যে,সে এখন দাড়াতেই পারেনা৷সারাদিন শুয়ে থাকে৷
সন্ধে বেলায় আনিকা হঠাৎই বলে উঠল
–আবিদ,রমজান তো চলে এসেছে,রোজা রাখবে না?নামাজ পড়বা না?
–না,কিছুই পড়ব না,রোজাও রাখব না
–কেন আবিদ?(কথাগুলো তেমন বুঝা যায় না)
–আনিকা তুমি নিজেই বলো,যে আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিচ্ছে,আমার সামনে আমার প্রিয় মানুষটাকে এভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে নিয়ে যাবে,তার ইবাদত আমি কেন করব,আমি কিছুই করব না
–ছিঃ আবিদ,এসব বলতে নেই,আল্লাহ যা করে সব ভালোর জন্যই করে
–চাই না সে ভালোর,যে ভালো আমার পাগলিটাকে এত কষ্ট দিচ্ছি
–আরে বোকা,সেটা কিছুই না,আর তুমি কি চাও না মরার পর ওপারে আমি একটু শান্তিতে থাকি,(হাসিমুখে)
ওর হাসিমাখা মুখটা দেখে বুকটা কেমন ধুক করে কেদে উঠল৷একটা সময় যে হাসিমুখটার জন্য আমি সব করতাম৷আর আজ সেই হাসিমুখে তেমন সজীবতা নেই৷আছে শুধু কষ্টে ছাপ,
–কি হলো উত্তর দাও,তুমি কি চাও না,আমি মরার পরে সুখে থাকি
–হুম চাই তো(কান্না করে দিলাম)
–তাহলে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করবা,আর দুজনকেই যেন মরার পর আল্লাহ এক করে দেয়,এই দুনিয়াতে আমরা একসাথে থাকতে না পারলেও যেন,ওই দুনিয়াতে দুজনে একসাথে থাকতে পারি
–হুম(মাথা নিচু করে কান্না করছিলাম)
–এবার বলো,আমার জন্য দোয়া করবা তো?
–হুম,তোমার জন্য দোয়া না করলে কার জন্য করব?বলো
–হুম৷তাহলে একটূ পরই এশারের আযান দিবে,তখন তারাবির নামাজসহ পূরো নামাজ পরবা৷একদমই ফাকিবাজি করবা না৷

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুম
কিছুক্ষন পরই আযান দিয়ে দিল৷আমি অযু করে তখন আনিকার কপালে একটা চূমু দিয়ে মসজিদে চলে গেলাম৷চেয়েছিলাম বাড়িতেই নামাজ পরতে কিন্তু আনিকা বার বার বলছে,মসজিদে গিয়ে!জামাআতের সহিত নামাজ পড়তে৷ইচ্ছা না সত্বেও গেলাম৷
বিশ রাকাত তারাবিসহ এশারের নামাজ পড়ে বাসায় আসতে আসতে প্রায় রাত সাড়ে ৯টা৷
বাসায় ডুকতেই আনিকাকে ডাক দিলাম৷
তারপর দরজা খুললাম৷কিন্তু দরজা খোলার পর যা দেখলাম সেটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷
কারন আনিকা তখণ রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের নিচে পড়ে গড়াগড়ি করছিল৷ওকে দেখেই চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিলাম৷ওর সামনে গিয়ে ওকে ধরলাম৷
ওকে ধরতেই ওর অস্পষ্ট কন্ঠে আমার কানটার সামনে মুখটা নিয়ে বলে উঠল
–দেখছো আবিদ?আল্লাহ কত দয়াবান৷এই মুহুর্তে তোমাকে অনেক মিস করছিলাম৷আর আল্লাহ তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিছে৷
আমি শুধু আনিকাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কেদেই চলেছি
–আবিদ,আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে,দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার
–আনিকা তোমার কিছু হবে না,আমি এক্ষনি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো
–না আবিদ৷ওপর ওয়ালা যে আমাকে এখণ তার কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছে৷
–না,আনিকা এভাবে বলো না,খূব কষ্ট হয়(কান্না করতে করতে)
–আবিদ,তোমার বুকে আমাকে একটু মাথা রাখতে দিবে?আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে?প্লিজ আবিদ,আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো,আমি যেতে চাইনা৷আমি তোমাকে হারাতে পারব না
তখনই আনিকাকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আর চিৎকার করছিলাম৷
আনিকা তোমার কিছু হতে পারে না৷তোমার কিছু হবে না
আনিকার শ্বাস নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল৷আর ও তখন একটা কথা বলছিল,
ভালোবাসি আবিদ৷খুব বেশিই ভালোবাসি,নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি,আর তোমার বুকে আমি স্বর্গসুখ খুজে পাই৷আর আমার কত সৌভাগ্য,আজ তোমার কোলেই মাথা রেখে মরতে পরছি৷
বলেই আমাকে ও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷আর বলতে লাগল
আবিদ আমাকে ধরো,শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আবিদ
আমি তখন খূব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম৷আনিকা তখনও বলছে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে৷
হঠাৎই আনিকা দু-তিনবার কেমন করে একটু কেপে উঠল৷তারপর আস্তে আস্তে একদম নিথর হয়ে গেল৷
আমি তখনও আনিকাকে জড়িয়েই ধরে রাখলাম৷
অনেকক্ষন পর আনিকাকে ডাক দিচ্ছিলাম
আনিকা?এই আনিকা?আনিকা কথা বলো
কিন্তু কোনো কথা আসছে না৷
বুক থেকে মাথা টা সরাতেই দেখলাম৷আনিকা একদমই নিথর হয়ে গেছে৷
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম
নাআআআআআআআআ,আনিকা তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না৷
এই আনিকা তুমি চলে গেলে কে আমাকে ভালোবাসবে?কে আমার বুকের মধ্যে নিজেকে আড়াল করে রাখবে৷
ভাবতেই কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিলো৷এত কষ্ট লাগছিল মনে হচ্ছে আমিও এখণই চলে যাবো৷
তখন চিৎকার দিয়ে আনিকাকে ডাক দিয়ে বলছিলাম
আনিকাআআআআআ?????
কথা বলো?আনিকা কথা বলো
ভালোবাসি আনিকা ,ভালোবাসি
তখণ এমন জোড়েই চিৎকার মারলাম৷
আর লাফ মেরে উঠে পরলাম৷
লাফ মারতেই দেখলাম৷আমি খাটের ওপর,পুরো রুমটি কেমন অন্ধকার৷আমার শরীর থরথর করে কাপছে,প্রতিটা লোমকূপ থেকে ঝরঝর করে ঘাম ঝরছে৷
ঠিক তখনই কেউ লাইট অন করে দিল৷
লাইট অন করতেই দেখলাম আনিকা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে৷আর বার বার বলছে
–এই আবিদ,কি হইছে তোমার?এই আবিদ?তুমি কি ভয় পাইছো?
আবিদ কথা বলো?তুমি কি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছো?
আনিকাকে দেখে আমি তখণ অনেক ভয়ে পেতে লাগলাম৷
ও তখন আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিল,এক গ্লাস পানি এক টানেই শেষ করে ফেললাম,শরিরটা তখনও থরথর করেই কাপতে লাগল
আনিকা তখণ আবারও বলতে লাগল
–এই আবিদ,বলো তোমার কি হইছে?আমাকে দেখে এমন অবাক হচ্ছো কেন?তূমি কী খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখছো?বলো বলছি কি হইছে তোমার?
বুঝতে পারলাম,তাহলে এত বিশাল কাহিনী পুরোটাই একটা দুঃস্বপ্ন ছিল৷তারমানে আমার আনিকার কিছুই হয়নি?তখন আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করেই আনিকাকে পাগলের মত জড়িয়ে ধরলাম৷অনেক শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে রাখলাম আর কান্না করে দিলাম৷৷আর একবার আনিকার কপালে আরেকবার মুখে আরেকবার হাতে পাগলের মত চুমু দিতে লাগলাম৷
আনিকা শুধু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷
.
.
.
.
চলবে……..
বিঃদ্রঃভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷
আর আপনাদের আগের পার্টগুলোতে,sad পোষ্ট করে এত কষ্ট দেবার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত৷
তবে হ্যা,গল্পটা এমনই হবার কথা ছিল৷
আর এমন হবার কারন ২টা৷
আর ২টা কারনই আপনাদের জন্য অনেক শিক্ষনীয়৷
শিক্ষনীয়: ১৷ ভালোবাসার মানুষগুলোকে যদি আমরা কখনও হারিয়ে ফেলি,তাহলে তার কষ্ট যে কতটা তীব্র থেকে তীব্রতর সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷আর তাই কখনই নিজের ভুল বা কোনো কারনেই ভালবাসার মানুষটিকে আলাদা করে দিবেন না৷হয়ত বা গল্পে আনিকাকে ক্যান্সার দিয়ে হারানোর বিষয়টা উল্লেখ করছি,কিন্তু হতে পারে,আপনার ভুলের কারনেও অন্যভাবেও,আপনার প্রিয় মানূষটা হারাতে পারে৷so be careful ৷
শিক্ষনীয়:২৷আমরা সবাই জানি,ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়েই আমাদের যত ভাবনা৷তবে হ্যা যাকে নিয়ে যত ভাবনা বেশি,তাকে হারানোর ভয়টাও অনেক বেশি৷আর মনের ভিতর সেই ভয়টা থাকার কারনেই আমাদের ভিতর এমন উল্টা পাল্টা অনেক ভাবনা বা স্বপ্ন গুলো চলে আসে৷তবে সেই সময়টাতে বিচলিত না হয়ে!সাথে সাথে আপনার ভালোবাসার মানুষটার সাথে তখনই মন খুলে কথা বলুন,হোক সেটা গভীর রাত,যখনই এমন প্রবলেম হবে তখনই ওর সাথে বেশি না পারলেও,কম করে হলেও একটূ কথা বলুন(যদি সম্ভব হয়)৷৷এতে করে আপনার মনের চাপা কষ্টটাও যেমন দুর হবে,তেমনি আপনার প্রতি আপনার সঙ্গীর ভালোবাসাটাও ততটাই গভীর হবে৷আর মনের ভিতর শান্তিও আসবে৷

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে