নেশা তুই আমার Part:8

0
3689

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:8

সুমনকে মারার জন্য খাতাটা উপরে তুলতেই ভাইয়া ক্লাসে এসে হাজির।ভাইয়াকে দেখেই আমি থমকে গেলাম।এটা কি হলো?কোথায় আমি ভেবেছিলাম,আজ ভাইয়াকে বোঝাবো আমি পড়ালেখায় কতটা মনোযোগী হয়েছি।তাই লিখতে লিখতে হাত ক্ষয় হলেও লেখা বন্ধ করছি না।কিন্তু হলো তো তার উল্টো টা।এখন কি করব?তাড়াতাড়ি হাতের খাতাটা ভালো করে নিয়ে নিজের বেঞ্চে এসে দাড়ালাম।ভাইয়াকে দেখে সবাই অলরেডী দাঁড়িয়ে গেছে।কিন্তু ভাইয়া দরজার কাছে এসেই আমাকে ওইভাবে দেখে কিছুক্ষণ থমকে রইল।তারপর কোনো কথা ছাড়াই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।ভাইয়ার এমন কাজে সবাই হতবাক।আমি বেঞ্চ থেকে সরে জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম ভাইয়া বাইরে কি করছে।গ্রীল ওয়ালা জানালা ভেদ করে দেখলাম ভাইয়া দুই হাত কোমরে রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।বুঝলাম ভাইয়া নিজের রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে।তার মানে আজ ও আর আমার নিস্তার নেই।আজ ও কি তাহলে আমায় মার খেতে।আজ যদি সেদিনের মতো মারে তো এবার আর জীবিত থাকব না।মরেই যাবো আমি।কথাটা ভাবতেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে।তখনই আমার মনে হলো,আচ্ছা ভাইয়া কি কোনোরকম জেলাস ফিল করছে?আমায় নিয়ে?সুমনের ওপর?কথাটা ভাবতেই আমার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।পেয়ে গেছি রাস্তা।কিভাবে ভাইয়ার মুখে ভালোবাসি কথাটা বের করতে হয় তা খুব ভাবেই বুঝে গেছি আমি।আব দেখো আগে হোতা হে কেয়া?
কিছুক্ষণ পরেই ভাইয়া আবার ক্লাস রুমে ঢুকল।কিন্তু এবার আর আমার দিকে তাকালো না।না তাকাক তাতে কি?তবে এবার ভাইয়া দেখবে আমি কি কি করতে পারি।
ভাইয়া তার ক্লাস শুরু করে দিল।আর এদিকে আমি আমার কাজ।ক্লাসের মধ্যেই অনেক বাহানায় সুমনের সাথে কথা বলতে লাগলাম।মুখ টিপে হাসতে লাগলাম।পরা দেখানো নাম গল্প করা শুরু করলাম।লেখার সময় খাতা থেকে ওর হাত সরিয়ে দেওয়ার নাম করে ওর হাত ধরতেই সামনে থেকে ভাইয়া গর্জনরত আওয়াজ কানে এলো।
-এনাফ ইজ এনাফ ড্যাম ইট!
ভাইয়ার এমন গর্জনে ক্লাসে থাকা প্রায় সকলেই চমকে উঠল।হঠাৎ ভাইয়ার এমন ব্যবহারের কারন কারোরই মাথায় ঢুকলো না।ভাইয়া টেবিলের ওপর দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাগে চোখ মুখ লাল রক্ত বর্ন ধারন করেছে।ভাইয়ার এই রুপ দেখে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম।এবার এসে আবার আমাকে পিটানো শুরু করবে না তো?মনে মনে হাজারো ভয় কে জয় করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে ক্লাস থেকেই বেরিয়ে গেল।যাওয়ার আগে ভারী কন্ঠে বলে গেল
“”Class is dismisse.””
আমি ভয়ে ছোটখাটো একটা ঢোক গিললাম।ডোজ টা কি বেশি হয়ে গেছে।
এরপর থেকে আর ভাইয়ার সাথে দেখা হয়নি।কলেজ থেকে আসার সময়ও ভাইয়া একাই চলে এসে ছিল।আমাদের নিয়েই আসেনি।তাই আমি ছায়া রিকশায় করে চলে আসি।বাড়ি এসে ব্যাগ নিজের ঘরে রেখেই ভাইয়ার ঘরের দিকে এগোলাম।তার ঘরের কাছে আসতেই খুব জোরে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ কানে আসতেই চমকে উঠলাম।তাড়াতাড়ি দরজা হালকা খুলে ঘরে উঁকি মারতেই দেখি ভাইয়া দুই হাত কোমরে রেখে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারি করছে।
“”ইডিয়ট!একবার নাম্বারের স্টুপিট মেয়ে একটা।এতবার এত শাস্তি দেওয়ার পরেও আবার সেই ছেলেদের কাছেই গিয়ে ঢলে পরে ইডিয়ট টা।সহ্য হয় না আমার ওকে কোনো ছেলের সাথে।এই বিষয়টা কি বোঝে না ওই স্টুপিটটা।””
নিজে নিজেই কথা গুলো বিড়বিড় করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।চোখ ছোট ছোট করে আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলল
“”ভার্সিটির প্রফেসর আমি।আর একজন প্রফেসর হয়ে কি না নিজের ছাত্রের ওপরেই জেলাস হচ্ছি।তাও ওই ইডিয়টটার জন্য।ইউ ফুল!””
কথাটা বলেই খুব জোরে সামনে থাকা টুলে লাথি মেরে ওয়াশরুমে ভেতর ঢুকে গেল।ভাইয়ার এহেন কাজে এতক্ষণ আমি মুখ চেপে হাসছিলাম।ভাইয়া ওয়াশরুমে ঢুকতেই আমি রুমের ভেতরে ঢুকে গেলাম।কেন জানি না এই মূহুর্তে আমার ভাঙড়া নাচার ইচ্ছে হচ্ছে।ইসস ভাইয়া আমায় নিয়ে জেলাস! ভাবা যায়!ভাইয়া??খুবই আনন্দের সহিত ফ্লোরের উপর পরে থাকা টুল টা ঠিক জায়গায় রেখে দিলাম।তারপরে নাচতে নাচতে চলে আসব তখনই আমার নজর গেল ভাইয়া টেবিলের ওপর।টেবিলের লাল কার্পেটের ওপর নীল ডাইরী টা যেন খুব বেশিই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে আমার।একটু কৌতুহল নিয়েই আমি টেবিলের কাছে গিয়ে ডাইরী টা হাতে নিলাম।এটা কি ভাইয়ার ডাইরী?কি আছে এই ডাইরী মধ্যে?ভাইয়ার মনের কথা?এবার কৌতুহল টা যেন আরো বেশি বেড়ে গেল।আমি জানতে চাই ভাইয়ার মনে কথা।তাই অন্যের ডাইরী তার বিনা অনুমতিতে পরা অন্যায় জেনেও ডাইরীটা খুললাম।প্রথম পেজ ফাকা পরে আছে।কিছুই নেই।তাই আমি আবার একটা পেজ ওল্টাতেই যা দেখাল তাতে আমার চোখ কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল সেই পৃষ্ঠায়।এটা কে?আমি?
ডাইরীর সাদা পাতায় পেন্সিলের কালিতে হাতে আঁকা আমার প্রতিচ্ছবি।ছবিটা থেকে যেন চোখ সরানো মুশকিল।হ্যা এটাই আমি।চোখ কান নাক মুখ সবটাই প্রমান করে এটা আমি কিন্তু তারপরেও কিছু একটা তফাৎ আছে।এই ছবির সাথে আমার চেহারার কিছু তো একটা পার্থক্য আছে কিন্তু সেটা কি?খুব নিখুঁত ভাবে দেখতে লাগলাম ছবি টাকে।এই ছবি আর আমার চেহারায় কি অমিল আছে। হ্যা পেয়েছি?অমিল আছে।অনেক অমিল আছে।আর সেই অমিল টা হলো ভালোবাসার।ছবিটা খুব ভালোবাসার সাথে অঙ্কন করা হয়েছে।এই চোখ শুধু চোখ নয় এই চোখে যে হাজারো মায়ার ভীর।আচ্ছা আমার চোখে কি আদৌ এতটা মায়া আছে।আমার তো মনে হয়না আছে।আর এই ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মৃদু হাসিটা।এ যেন কোনো সাগরের ঢেউ।আমার হাসি কি সত্যিই এতটা সুন্দর?আচ্ছা এই আমিই কি আরমান ভাইয়ে মনের “”আমি””।ভাইয়ার মনে আমার এতটা সৌন্দর্য বিরাজ করে।চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পরল।কতটা ভালোবাসলে মানুষ এত টা নিখুঁত ভাবে কারো প্রতিচ্ছবি আঁকতে পারে।আমার কৌতুহল আরো বেড়ে গেল।ভাইয়ার বুকে আমার জন্য ভালোবাসার পরিমান জানার আগ্রহ আরো বেশি বেড়ে গেল।তাই আমি আবার একটা পেজ ওল্টালাম।আর ওই পেজে যা দেখলাম তা দেখার পর আমার হার্টবীট কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না শব্দ করে কেঁদেই দিলাম।ড াইরীর সাদা কাগজে বড় বড় অক্ষরে লেখা “”ভালোবাসি মিতু””।
এই লেখাটা দেখে মনে হচ্ছে ভাইয়া যেন
আমার সামনে চিৎকার করে বলছে
“”ভালোবাসি মিতু।খুব খুব খুব বেশিই ভালোবাসি তোকে।””
চলবে❤