নেশা তুই আমার Part:11

0
3769

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:11

পাঁচ কালেমা তিনবার কবুল আর একশো এক টাকা দেনমোহরে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।এই মূহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে বড় স্বার্থ পর বলে মনে হচ্ছে যে নিজের সুখের জন্য বাবা মাকে এভাবে ঠোকালো।বাড়িতে গিয়ে কিভাবে সবার সামনে দাঁড়াবো আমি?কিভাবে তাঁদের জানাবো আরমান ভাইকে পাওয়ার লোভে আমি তাঁদের শখ আহ্লাদকে জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছি।তারা কি সহ্য করতে পারবে এটা।বাবা মা কে কি করে বলব যে তাঁদের মেয়ে এতটা স্বার্থপর হয়ে গেছে।খুব কান্না পাচ্ছে আমার খুব।আমার সাথেই কেন এমন হয় আমি বঝিনা।যেখানে আরমান ভাইকে দিয়ে করার খুশিতে আমার লাফানো উচিত সেখানে আমি কি না বাবা মাকে কি জবাব দেব সেই ভাবনায় বিভোর।আমার ভাবনার মাঝেই আরমান ভাই আমায় কোলে তুলে নিলেন।বুঝতে পেরেছি।এই লোক আজ আমায় আর হাঁটতেই দেবে না।সেই কখন থেকে শুধু কোলেই চড়ে বেড়াচ্ছি ছোট বাচ্চাদের মতো।আমি কি হাঁটতে পারিনা নাকি?আমি অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
“”ভাইয়া প্লিজ নিচে নামাও আমায় বাড়ির লোক এইভাবে দেখলে আমায় অসস্থিতে পরতে হলে প্লিজ।””
আমার মিনতির সুর ও বুঝি তার কান অবধি গেল না।সে নিজের মতোই হেটে চলেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতে ঢুকতেই দেখলাম সকলে এখনো বসার ঘরেই বসে আছে।সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।নিশ্চয়ই আমাদের জন্যই চিন্তা করছিলেন।কিন্তু মূহুর্তেই আরমান ভাইয়ের কোলে আমায় দেখে এই চিন্তার ছাপ টা বদলে গিয়ে সবাই অবাক চোখে আমাদের দিকে তাকালো।আরমান ভাই সবার সামনে এসে আমায় কোল থেকে নামিয়ে দিল।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বড় আব্বু বলে উঠল
“”এটা কি রকম আচরণ আরমান।এত রাতে কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?””
“”বিয়ে করতে।””
আরমান ভাইয়ের এমন সোজাসাপটা কথায় আমার হার্ট ফেল হওয়ার জোগাড়।এই লোকের কি একটুও ভয় করছে না।
“”কি বলছিস কি আরমান?””
“”যা বলছি সত্যি বলছি।””
“”এসবের মানে কি?পাগল হয়ে গেছিস তুই?এখানে তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তুই কি না মিতু বিয়ে করে নিয়ে ঘরে ঢুকলি?আমাদের এক বারো জানানোর প্রয়োজন ও বোধ করলি না?””
“”বাবা বিয়ে টা ঠিক সময় যখন তোমরা আমার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করনি তখন আমিও বিয়ে করার সময় তোমাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না।””
আরমান ভাইয়ের এই কথাটার মাঝেই মা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো
“”এসব কি শুনছি কি মিতু?তুই এতোটা নিচে নেমে গেলি।এরকম টা করতে লজ্জা হলো না।নিজের ভাই সমতুল্য কাজিন কে তুই বিয়ে করে নিলি।তোকে আমি…
বলেই আমাকে মারার জন্য হাত তুলতেই আরমান ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।মায়ের দেওয়া চড় টা তার বাহুতে গিয়ে লাগল।
“”আরমান সরে দাঁড়া তুই।আজ আমি এই মেয়েকে মেরেই ফেলবো।””
“”কাকিমা ভুলে যেও না তুমি তার গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছো সে এখন আমার বিয়ে করা স্ত্রী।আর আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।””
“”আমি ওর মা।আমার অস্বীকার আছে ওর ওপর।””
“”কিন্তু ওর স্বামী।আর স্ত্রীর ওপর সর্ব প্রথম অধিকার তার স্বামির থাকে…””
কথাটা শেষ হতে না হতেই আরমান ভাইয়ের গালে খুব জোড়ে একটা চড় বসল।চড়টা আর কেউ নয় বড় মা মেরেছে।
“”নাটক করছিস এখানে?সার্কাস চলছে?আরে তুই যদি একটা রাস্তার পাগল কে বিয়ে করে নিয়ে আসতি তাঁকেও আমি সসম্মানে বরন করে ঘরে তুলতাম।কিন্তু এই অপয়া মেয়েকে কক্ষনো আমি এই বাড়ির বউ হিসেবে মানবো না।এই মেয়ে তোর জীবন ধ্বংস করে দেবে।সর্বনাশী এই মেয়ে।যার জীবনেই যাক না কেন তার জীবন ই ধ্বংস করে দেয়।””
“”মা ভুলে যেও না তুমি যার সম্পর্কে কথাগুলো বলছো সে এখন আমার স্ত্রী?””
“”নিকুচি করেছে তোর স্ত্রী।মানিনা এই অপয়া কে তোর স্ত্রী হিসেবে।তোকে আমি বারবার বলেছিলাম এই মেয়ের থেকে দূরে থাক দূরে থাক।এই মেয়ে তোর জীবন ধ্বংস করে দেবে।জন্মের পর থেকে শুধু ধ্বংসই করে এসেছে।জন্মের পরপরেই নিজের বাপের ব্যবসাটা খেল।সাথে দুই বছরের জেল ও হলো।তারপরেই নিজের মা কে বান্দি বানালো।সেদিন ওই পীর বাবাও এই মেয়ের হাত গণনা করে বলেছিলেন এর জীবনের সাথে যেই জড়াবে তার জীবনে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই হবে না।আর সেই কথা সত্যিই প্রমাণ হলো যখন এই গ্রামে তার নানাথ বাড়ি পা রাখতে না রাখতেই বন্যায় তাঁদের তাঁদের ঘর বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেল।আর কিছুদিন আগেও দু দু বার বিয়ে ভাঙলো এই মেয়ের।আর কি প্রমাণ চাই এই মেয়ের অপয়া হবার।কতবার আয়শা কে বললাম এই মেয়েকে দূরে কোথাও রেখে আসতে কিন্তু ওতো কোনো কথাই শুনল না আমার।বরঞ্চ এখন আমার ছেলের ঘাড়ে এই মেয়ে কে চাপাতে চাইছে।কিন্তু মা হয়ে নিজের ছেলের এতো বড় ক্ষতি আমি কিছুতেই হতে দেব না।এই সর্বনাশী কে আমি কিছুতে আমৃর ছেলের জীবনে আসতে দেব না….””
বড় মা একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই যাচ্ছে।কিন্তু আমার আর শোনার ক্ষমতা নেই।সব কিছু কেমন যেন আবছা আবছা লাগছে।চোখের জল টাও অবাধ্য হয়ে এসেছে।আমি অপয়া!সর্বনাশী।আজ বাবা মার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।শুনেছিলাম আমি ছোট থাকতেই মায়ের একটা এক্সিডেন্টে মা দ্বিতীয় বারের মতো মা হওয়ার ক্ষমতা হারায় কিন্তু সেটা যে আমি দায়ী সেটা কখনোই বুঝতে পারিনি।শুনেছিলাম
বাবা খূব শখ করে আমার নামে একটা কোম্পানি খুলেছিলেন কিন্তু কারো দেওয়া ধোকার কারনে বাবার কোম্পানি ডুবে যায়।য
সাথে দুই বছরের জেল ও হয়।এরপর আর বাবা না নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পেরেছিল আর নাই কোথাও জব পেয়েছিল।তখন থেকেই বড় আব্বুর দয়ায় আমরা বেঁচে আছি।সব কিছু আমার জন্য হয়েছে।আমার পোড়া কপালের জন্য।হতে পারে দেখার দৃষ্টি ভঙ্গি আলাদা কিন্তু যা বলেছে তা তো সব সত্যিই বলেছে।আমি নানু বাড়ি যাওয়ার পরের দিন ই তাদের ঘর বাড়ি বন্যায় ভেসে যায় তার মানে বড় মা ভুল কিছু বলেনি।আমি অপয়া সর্বনাশী।আমার জীবনের সাথে যেই জড়াবে তার জীবনই ধ্বংস হয়ে যাবে।নিজের অজান্তেই যে কখনো কখন এক পা দুই পা করে ছাদে চলে এসেছি বুঝতেই পারেনি।হাত পা অবশ হয়ে আসছে।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি টুকুও নেই।ছাদের মাঝখানেই হাঁটু গেড়ে বসে পরলাম।কাঁদতে ইচ্ছে করছে।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে আমার হচ্ছে।এতদিন আমার জন্য সবার জীবন নষ্ট হয়ে এসেছে।আর এখন আরমান ভাইয়ের জীবন ও আমার সাথে গেছে।তার কিছু ক্ষতি হয়ে যায় তখন।না না তার কিছু হয়ে গেলে যে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আমি কি করে তার ক্ষতির কারন হতে পারি।ভালোবাসি তাকে।নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।তার জন্য সব কিছু করতে পারি সবকিছু।
হঠাৎ ই মনে হলো কেউ আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসল।আমার কাঁধে হাত রাখতেই আমি ঘুরে আরমান ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।নিজের মনটাকে হালকা করা খুব জরুরি এখন আমার।ভাইয়া আমায় জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।হয়তো কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম
“”আজ আমায় নিজের করে নেবে আরমান ভাই?””
আমার কথায় আমার মাথায় বুলানো তার হাত থমকে গেল।আমি এমন কিছু বলবো হয়তো আশা করেনি।কিন্তু আমি চাই আজ তাঁকে নিজের করে পেতে।নিজের সব কষ্ট কে ধুয়ে মুছে নিঙরে ফেলতে।আরমান ভাই প্রায় অনেক্ষন ধরেই নিরবতা পালন করছে।আর আমি তার বুকে মাথা রেখে তার বুকের ধুকপুক শব্দ টা শুনছি।আজ বুকে শুধু হতাশাই ধরা দিচ্ছে।আজ আরমান ভাইয়ের এই হতাশার কারণটাও আমি।সবকিছুর জন্য শুধু আমি দায়ী শুধুই আমি।আমার এই ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আরমান ভাই হঠাৎ করেই আমায় কোলে তুলে নিচের দিকে যাওয়া শুরু করলো।আর আমি চুপচাপ তার বুকে মাথা রেখে বুকের হতাশা গুলো গুনছি।কারণ আমি জানি আজ এই মূহুর্তটা শুধু তার আর আমার।এরপর কি হবে তা কালকের ওপরেই নির্ভর করছে…
চলবে❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে