#নীড় #দশম_পর্ব
#সুহা
আবিররর আসলে তাহলে আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আজ আসবেই না। (মৌমিতা)
এসেছি এবার? নাচবি নাকি যত্তসব ফালতু নেকামি!(আবির)
এটা কোন ধরণের কথা আবির? তোমায় আমি এত সুন্দর করে একটা কথা জিজ্ঞাসা করলাম আর তুমি কিনা……। কিছু হয়েছে কি? (মৌমিতা)
কি আর হবে ওই অনিমা আজকে আমার ঘাড়ের দাগগুলো দেখে ফেলেছে, আর আমায় সন্দেহ করছে।(আবির)
তো কি হইসে যেই কিছু একটা বলে চালিয়ে দাও যেমন: পোকা কামড় দিসে বা অন্য কিছু ব্লাহ ব্লাহ। (মৌমিতা)
আর অনিমাও এগুলো মেনে নিবে তাইতো। ও প্রচুর সেয়ানা প্রকৃতির মেয়ে।এত সহজে ওকে মানানো যাবে না। চিনি ওকে আমি একবার যেহেতু এই বিষয়টা ওর নজরে এসেছে এটার মূল ও যেভাবেই হোক বের করেই ছাড়বে। আর ও কিছু করার আগেই আমাকে একটা বিহিত করতেই হবে।নয়তো ডিভোর্স এর সময় আরও বেশি ঝামেলা। (আবির)
উফফ এত্ত টেনশন নিয়ো না তো আমি আছি না। একটা না একটা উপায় বের করেই ছাড়বো।(মৌমিতা)
আবির মৌমিতাকে কাছে –
টেনে নিয়ে বললো তুমিই তো আছো। অতঃপর ……………
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বলিস কি ইয়ার! আবির এগুলো করছে? তুই সিওর তো নাকি এমনি হাওয়াবাজি করছিস?(নাতাশা)
আমি ১০০% সিওর। ওকে যখন আমি ওর ঘাড়ের দাগের কথা জিজ্ঞাসা করি ও থতমত খেয়ে যায়। যেন ওর চুরি ধরে ফেলেছি আমি তার উপর উত্তরেও তুতলিয়ে কোনোরকম বাহানা করে এড়িয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা আবির যখন হঠাৎ এর উপর মিথ্যা বলে তখন ও দরদর করে ঘামে আর বারবার কপালে আঙ্গুল স্লাইড করে। আজকেও ঠিক তাই করেছে।আর আজকাল ওর আমার প্রতি তেমন আকর্ষণ ও নাই সেটা ওর আচার-আচরণেই প্রকাশ পায়।(অনিমা)
হুম আবিরের নতুন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হওয়া মানে তোর সেটেল ফিউচার এর স্বপ্নের বারোটা। কিন্তু এখানে আবিরকেই বা কি দোষ দিবো বল তোর ৭ মাসের প্রেগন্যান্সি তে তুই এখন ইউসলেস। দেখতে ড্রাম ফিগার নাই সৌন্দর্য নাই আর নাই তোর সাথে এই মুহূর্তে ** করাটা পসিবল বেচারাও কি করবো বল। (নাতাশা)
** ** আমি জানি আমার বর্তমান অবস্থা কি তাই তোরে সেগুলা নিয়া গবেষণা করা লাগবো না। তোরে আমি আমার সাহায্য করার জন্য কল দিসি নাকি ওই আবিরের চামচাগিরি করতে? (অনিমা)
আবে ইয়ার খেপিস কে? শুন আবিরের নজর যদিও সত্যিই অন্য মেয়ের উপর পরে থাকে তাইলে ও তোকে নিশ্চিত ডিভোর্স দিবেই হয়তো দিয়েই দিতো কিন্তু প্র্যাগনেন্সির কারণে হোল্ড আসে। তাই আমি বলি কি আবিরের তোরে ডিভোর্স দেয়ার আগে তুই আবিরের বিপক্ষে কোনো পাকাপোক্ত প্রমান বের করে ডিভোর্স ফাইল করে দে। এতে করে এলিমনির এমাউন্ট তো পাবিই সাথে বেশ বড় একটা এমাউন্ট ও পাবি। আর ডিভোর্স কেসটাও তোর পক্ষেই যাবে।(নাতাশা)
কিন্ত ডিভোর্স…………(অনিমা)
আরে কিছুই হবে না! আমাকে দেখ রবিনকে কিভাবে ফাঁসিয়ে ডিভোর্স নিয়ে নিলাম। মোটা অঙ্কের অর্থ সম্পত্তি পেলাম তার উপর এই সংসার নামক ঝামেলা থেকে মুক্তি। সমাজের মানুষ আমায় নারীজাগরণের পথিক ভাবে।ডিভোর্স এর পর আর বিয়ে না করে সমাজের লোকেদের জন্য ডাক্তারি করছি কত সাধু আমি! কিন্তু ভিতরের কথা কেউ জানে না। তাই আমি বলিকি তুইও ডিভোর্স নিয়েই নে লাভই হবে লোকসান হবে না।(নাতাশা)
অনিমা হুম বলে কল কেটে দিয়ে গভীর ভাবনায় ডুব দিলো আসলেই নাতাশার কথাটা ফেলনা নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ থেকে তোমার বউরে আবার মাথায় করে রাখবা। বউরে আদরের উপর রাখবা। নিজেরে এক্কেবারে বৌয়ের সেবায় উৎসর্গ করে দিবা বুঝলা? (মৌমিতা)
কিসব আজেবাজে বকতেসো তুমি? মাথা ঠিক আসে তো তোমার? (আবির)
আমি যাই বলসি ভেবেই বলসি। বৌয়ের থেকে মুক্তি চাও তো যা বলতেসি তাই করো নয়তো কত পেচ খাইবা তা তুমি বুঝে নাও। আমি আর নেই। (মৌমিতা)
না না কিসব বলো তুমি? ঠিকাছে তুমি যেহেতু বল্লা তাই তোমার কথাই মানলাম। (আবির)
গুড বয় এবার আমি যাই আজকে বাসায় কাজ আসে বাই। (মৌমিতা)
মৌমিতা বেরিয়ে গেলে আবির ভাবতে থাকে কি করবে! অনিমাকে তো তার বিন্দু মাত্রও সহ্য হয় না তো তার সাথে কথাই বা কি বলবে আর তার সেবাই করবে কি!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কেমন আছেন আনিক সাহেব?(অঙ্কিতা)
আরে অঙ্কিতা যে আইজ হঠাৎ এহানে কি মনে কইরা? (আনিক)
কেন আমার আসতে মানা বুঝি? চলে যাবো? (অঙ্কিতা)
আরে না না কি যে কন না । আপনার লাইগা আমগো দুয়ার সর্বদাই খোলা।(আনিক)
হুম তাই ঠিক। কিন্তু আমি আজকে কয়টা গুরুত্বপূর্ণ কাজে এখানে এসেছি। প্রথমে চলুন আপনার দোকানটার কি অবস্থা তা দেখি।(অঙ্কিতা)
আনিক অঙ্কিতার কথামতো তাকে দোকানে নিয়ে গেলো অতঃপর দোকানের পিছনের ছোটো কারখানা যা কিছুদিন পূর্বেই খোলা হয়েছে তাতে নিয়ে গেলো।এনজিও হতে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে আনিক সব ধারদেনা পরিশোধ করে আরও কয়েকটা সেলাই মেশিন কিনে এবং কয়েকজন কর্মী নিয়োগ দেয়। পরে ঢাকার বেশ কয়েকটা বড় শো-রুম এ তাদের বানানো পোশাক, কাঁথা বিক্রির প্রচেষ্টা শুরু করে। দোকানিরাও আনিকের ব্যবহার আর ন্যায্যমূল্যতে জিনিস পেয়ে তাকেই অর্ডার দিতে লাগলো। এতে ধীরে ধীরে ব্যবসায়ের প্রসার ঘটলে আনিক দোকানের পিছনেই কারখানা করে নিয়েছে। ওখানেই যাবতীয় সব কাজ করা হয় আর দোকানটাতে শুধু বিকি-কিনি চলে। বলা বাহুল্য যে আনিক সবার মত রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য শুদ্ধ ভাষার প্রয়োগ করে এবং নাইমাও আনিকের থেকে কিছুটা শুদ্ধ ভাষা রপ্ত করেছে যেন ব্যবসায়িক কাজে সে পিছিয়ে না যায়। কিন্তু ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাদে তাদের শুদ্ধ ভাষার প্রয়োগ করতে দেখা যায় না। কোনো না কোনোভাবে তারা এই অশুদ্ধ ভাষাতেই অভ্যাস্থ তাই সেটা বদলাতে চায় না। আর তারা যদি হঠাৎ করেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে শুরু করে তো চাচা-চাচি আর কর্মীরাও তাদের সাথে কথা কিছুটা সংকোচবোধ করবে। তাই সকল দিক বিবেচনায় তারা প্রয়োজন অনুযায়ী দুই ভাষারই প্রয়োগ করে থাকে। ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখা শেষে অঙ্কিতা আর আনিক বাড়ির দিকে গেলো। বাড়িটাও এখন আর একতলা নেই এটাকে দুতলা করে ফেলা হয়েছে। নিচতলায় আপাতত ভাড়াটিয়া থাকে আর দ্বিতীয় তলায় আনিকরা চাচা-চাচী সহ থাকে। অঙ্কিতা সবকিছুই বেশ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে আর ভাবছে মানুষ কতোটা কঠোর পরিশ্রম করলে মাত্র ৭টা মাসে নিজেদের জীবনকে এতটা উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
অঙ্কিতাকে দেখা মাত্রই সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। অঙ্কিতাও তাদের সাথে এমনভাবে মিশে যায় যেন এটাই তার পরিবার। ক্ষণকাল অতিবাহিত হতেই অঙ্কিতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে-
আজ আমি আপনাদের সাথে যাওয়ার শেষবারের মতো দেখা করতে এসেছি জানিনা আবার কবে দেশে ফেরত আসবো কিংবা আসবোও নাকি, তাই যাওয়ার আগে আপনাদের সাথে দেখা করতে আসলাম।
অঙ্কিতার এহেন কথায় সবার হাসি হাসি মুখটা নিমিশেই ফ্যাকাসে হয়ে পরে।
কেন গো দিদি শেষ দেহা মানে? কই যাইবা তুমি?(নাইমা)
আসলে আমি লন্ডন যাচ্ছি , ওখানের একজনকে আমি পছন্দ করি তাকেই বিয়ে করবো। তাই হয়তো আর এদেশে আশা হবে না।(অঙ্কিতা)
অঙ্কিতার বিয়ের খবর শুনে সবাই খুশি হলেও তার দেশ থেকে চলে যাওয়ার কথা শুনে তারা মোটেও খুশি হতে পারলো না। সবার মুখের এই অবস্থা দেখে অঙ্কিতাই বলে উঠলো-
আরে আপনারা সবাই মুখটাকে এরকম করে রেখেছেন কেন? বিদায় বেলায় বুঝি কেউ এভাবে বিদায় দেয়? হাসিমুখে বিদায় দিন নয়তো আমার কষ্ট লাগবে কিন্তু।
অঙ্কিতা আরও নানান কথায় সবাইকে মাতিয়ে রাখে। সবাই মনে মনে বেজার থাকলেও অঙ্কিতাকে তা বুঝতে দেয় না। আর অঙ্কিতাও সব বুঝলেও না বুঝার ভান করেই থাকলো। বিদায়ের পূর্বে অঙ্কিতা আবদার করলো কালকে যেন তারা তাকে এয়ারপোর্ট এ শেষ বিদায় জানাতে আসে, সবাই অঙ্কিতার কথায় সায় জানায়।
অঙ্কিতা সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে ভাবতে থাকে সেই গোধূলি বিকেলের কথা।
সেদিন বিকেলে হুট্ করেই তার বাবা আর মা একত্রে বাড়িতে উপস্থিত হয় আর তাকে কিছু বলতে না দিয়েই তাকে পাত্রপক্ষের সামনের হাজির করে। ঘটনার আকস্মিকতায় সে হতবিহ্বল হয়ে পড়লেও বুঝতে পারে যে এখন সে চুপ থাকলে জল গড়িয়ে বহুদূর পৌঁছে যাবে। তাই সে দ্রুততার সাথে এই বিয়ের প্রতিবাদ করে পাত্রপক্ষকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।অতঃপর বাবা-মার জেরার মুখে পড়লে সে রবির প্রতি নিজের অনুভূতি স্বীকার করে। সবাইকে সব খুলে বললে বাবা-মা মুহূর্তেই রাজি হয়ে যান। এতে অবশ্য অঙ্কিতা অবাক হয়না তার বাবা-মার মতে সর্বদাই সুখের মানে অর্থ। তাইতো সারাটাজীবন অর্থের পিছনেই ব্যায় করলো। সবাই রাজি থাকায় অঙ্কিতা এই সপ্তাহেই লন্ডন যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলে আর যাওয়ার পূর্বে শেষবার আজ আনিক-নাইমার সাথে দেখা করে। কাল বিকেলেই সে পারি দিবে লন্ডনের উদ্দেশ্য। অবশ্য এখনো রবিকে এসবের কিছুই জানানো হয়নি। তাকে সারপ্রাইজ দিবে অঙ্কিতা। সে চোখ বন্ধ করে একবার রবির সারপ্রাইজড চেহারাটা কল্পনা করে নিজে নিজেই হাসলো। অতঃপর বাইরের পানে নজর ফেললো আর কোনোদিন হয়তো এই যানজটযুক্ত কোলাহল পূর্ণ রাস্তা দেখা হবে না কিন্তু এই রাস্তাটায় যেই মজা তা আর অন্যকোথাও পাওয়া যাবে না।
চলবে………………