#নীড় #সপ্তম_পর্ব
#সুহা
এসব কি অনিমা? তোমার প্রেগন্যান্সি রেজাল্ট পসিটিভ কিভাবে আসলো?(আবির)
বিয়ের ২ বছর পর আমার প্রেগনেন্সি রেজাল্ট পসিটিভ কিভাবে আসে সেটা কি তুমি বুঝো না? বাচ্চা তুমি? (অনিমা)
অনিমার কথায় আবিরের মেজাজ যায় চোটে কিন্তু আপাতত সে ঝগড়া করার মেজাজ নেই তাই নরম সুরেই বললো –
আমি সেটা বলি নি, আমি বলতে চাইছি আমারা তো এমন কিছুই প্ল্যান করিনি।তার উপর আমরা অলওয়েজ এ ব্যাপারে সতর্ক থাকি তো এটা কিভাবে হলো। আর আমাদের এখনো নিজেদের নিয়ে এনজয় করার সময় এর মধ্যে এই বাচ্চার ঝামেলা………
ওহ প্লিজ! এটা বলো না যে তুমি মাতাল হয়ে আমার কাছে এসেছো আবার এসব বিষয়ের খেয়াল রেখেছো। আর যেভাবেই হয়েছে ভালোই হয়েছে।বিয়ের ২টা বছর পার হয়ে গেছে এখন বেবি প্ল্যান করতাম না তো কবে করতাম ? আর বাচ্চা হলেই কি হবে তাকে আয়া পালবে এতে আমার এনজয়মেন্ট কেন নষ্ট হতে যাবে? (অনিমা)
আবিরের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে। এমনিতেই আজকাল অনিমাকে তার বিরক্ত লাগে আগের মতো কোনো ভাবেই লাগে না তাই চাইছিলো অনিমার সাথে সম্পর্ক রাখবেই না।কিন্তু এখন কিনা এসব বাচ্চার উটকো ঝামেলা! শুধু অনিমাকে ডিভোর্স দিতে গেলেই তার কাবিনের টাকা দিতে হতো তার সাথে কেস চলাকালীন এলিমনির খরচ আরও কত্ত ঝামেলা হতো! আর এখন! এখন তো বাচ্চাও যুক্ত হয়ে গেলো মানে জ্বালা আরও কয়েকগুন বাড়লো ! এসব ভেবেই আবিরের সর্বাঙ্গ রাগে জ্বলছে। অতঃপর রাগ মাথায় নিয়েই বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্য।
আবিরের গাড়ি সদর দরজা পেরোলেই অনিমা দ্রুত দরজা বন্ধ করে বান্ধবী নাতাশাকে কল করে। ওপর পাশ হতে নাতাশা কল রিসিভ করেই অনিমাকে প্রশ্ন করে –
সব ঠিকঠাক ভাবে করেছিস নাকি কোনো গন্ডগোল লাগিয়েছিস? আবির তোর উপর সন্দেহ করেনি তো?
আরে নাহ আমি সন্দেহ করার কোনো চান্স এ দেই নাই। আর ও সন্দেহ করবেই কেমনে মাতাল ছিলো, ওর নিজেরই কিছু মনে নাই কি করসে না করসে এখন আমার কথা মানতে বাধ্য ও।(অনিমা)
যাক তাহলে এই যাত্রায় বাঁচা গেলো! কিন্ত একটা কথা না বললেই নয় তুই পিওর একটা বি*, কি সুন্দর অন্যের বাচ্চাকে নিজের বরের বাচ্চা বলে চালিয়ে দিচ্ছিস। আর তার থেকেও বড় তুই নিজেই জানিস না বাচ্চাটা এক্সাক্টলি কার! (নাতাশা)
যার হওয়ার হোক তাতে আমার কি?আমার ফিজিক্যাল রিলাক্সশন দরকার ছিলো সেটা পেয়েছি কার থেকে পেয়েছি আর কিভাবে পেয়েছি তা কোনো ব্যাপার না। আর বাচ্চা? এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট। ফালতুই ১০টা মাস আমাকে উটকো একটা ঝামেলা টানতে হবে এর কারণে তো আমি………ধ্যাৎ!(অনিমা)
কিছুই করার নাই রে, তোর প্রেগন্যান্সির তিন মাস হয়ে গিয়েছে, নয়তো এবোরশন করিয়ে ফেলা যেত। (নাতাশা)
অসহ্যকর!(অনিমা)
আচ্ছা শুন আমি এখন রাখি রে একটু দরকারে বাইরে জাবো। (নাতাশা)
কোন দরকারে জাবি আর কই জাবি সেটা আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে। (অনিমা)
জানিস যেহেতু ফোন রাখিস না কেন?(নাতাশা)
আমিও ফ্রি নাই রোহানের সাথে আজকে রোহানের সাথে আমার অনলাইন ডেটিং আছে। (অনিমা)
রোহান তো টোটাল ৯টা তুই কয় নাম্বার রোহানের কথা বলছিস?(নাতাশা)
উহুম এটা নতুন একটা। (অনিমা)
ওওও আচ্ছা, করো করো আমি এখন রাখি বাই (নাতাশা)
নাতাশা কল কাটলে অনিমা আরামে বিছানায় হেলান দিয়ে মোবাইলে নিজের অনলাইন ডেটিং নামক পরকীয়াতে মনোযোগ দেয়। আর মনে মনে নিজেকে চতুর উপাধি দেয়।
বেশ ধনী পরিবারেই অনিমার জন্ম।অনিমার বাবা-মা দুইজনই সফল ব্যবসায়ী। কিন্ত তাদের সফলতার পিছনে কঠোর পরিশ্রম কম অশ্লীলতাই বেশি যা ছিলো লোক চক্ষুর আড়ালে।ছোট থেকেই বাবা-মায়ের অন্য মানুষের সাথে অগাধ মেলামেশা দেখে সে অভ্যাস্থ। একেবারেই ছোটো ছিলো সময় না বুঝলেও পরে সময়ের সাথে ঠিকই বুঝতে লাগলো কিন্তু এতে কেন জানি তার খারাপ লাগতো না বরং বেশ উপভোগ করতো সে এসব। ধীরে ধীরে সেও এসব অশ্লীলতায় নিজেকে জড়িয়ে ফেললো কিন্তু আড়ালে । এক পর্যায়ে বাবা-মায়ের হাতে ধরা পড়লে যেন সে আরও ছুট পেয়ে বসে নিজের অশ্লীল কর্ম গুলো আরও দ্বিগুন উৎসাহের সাথে করতেই থাকে সে।তার বাবা-মা বাধা দিলে তাদের উল্টো তর্কে ফেলে সে। তাই তার বাবা-মা নিজের সম্মান রক্ষার্থেই তাকে হোস্টেল এ পাঠিয়ে দেয়। এতে অবশ্য তার লাভই হয় বটে। হোস্টেলে এসে তার পরিচয় হয় নাতাশার সাথে, ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে হওয়ায় নাতাশার চলাফেরাও অনিমার মতোই ছিলো। পরিচিত হওয়ার পর থেকেই দুইজন মিলে একত্রেই নিজেদের অশ্লীলতার পর্যায় বৃদ্ধি করতে থাকে। এভাবেই অশ্লীলতা, মাদক, অসামাজিক এক জীবন কাটতে থাকে অনিমার।
আবিরের সাথেও পরিচয় তার এক নৈশ ক্লাবেই ঘটে, যদিও আবিরকে সে জানায়নি তার ক্লাবে আসার মূল উদ্দেশ্য কি। আবির শুধু জানতো যে অনিমা ক্লাবে পার্টি করতে আসে আর আবিরের কাছে এটা স্বাভাবিক কেননা এটা তার কাছে আধুনিকতার প্রতীকীর মতো।আবিরকে দেখেই অনিমা বুঝতে পারে আবির একজন লোভী আর উচ্চবিলাসী মানুষ যাকে লোভের বশীভূত করে যা খুশি করা সম্ভব। আর এমন একজনকেই অনিমার দরকার ছিলো কেননা আজ নয় কাল সমাজে তার নিজেকে বিবাহিত হিসেবে উপস্থাপন করতে হবেই কিন্তু তার এই অসামাজিক জীবনও সে ছাড়তে রাজি নয়। তাই আবিরকেই তার চোখে পারফেক্ট লাগলো। পরিকল্পনা মোতাবেক সে আবিরকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে আবিরও অনিমার ফামিলি স্ট্যাটাস দেখে রাজি হয়ে যায়।
অতঃপর বিয়েও হয় অনিমার পরিকল্পনা মোতাবেকই। আনিক আর নাইমা আবিরের পছন্দকেই প্রাধান্য দেয় আর অনিমার বাবা-মা এমনিতেও এসবে মাথা ঘামায় না তাই বিয়েটা নির্বিঘ্নে হয়ে যায়। সব ঠিক থাকলেও সম্যসা হয়ে দাড়ায় আনিক আর নাইমা। কেননা নাইমা সর্বদা অনিমার সাথে কথা বলতো কোথাও গেলে বা আসলেও জিজ্ঞাসা করতো এমনকি কেউ আসলেও তার কথা জিজ্ঞাসা করতো। যদিও নাইমা এগুলো করতো নিজের চিন্তা এবং উদ্বেগ হতে কিন্ত অনিমার কাছে এটা বাধা আর বিরক্তি বৈকি কিছুই না। এই কারণেই অনিমার ভিতর ধরা খাওয়ার ভয় কাজ করতো। যার কারণে সে নাই প্রতিদিন বাইরে যেতে পারতো আর নাই কাউকে বাসায় নিয়ে আসতে পারতো।
প্রথমে অনিমা অনেক কষ্টে সহ্য করে নিলেও ধীরে ধীরে নিজের অশ্লীল আকাঙ্খার তাড়নায় অনিমা পাগল হয়ে যেতে লাগে। সে মনে মনে আনিক আর নাইমাকে তাড়ানোর ছক একে ফেলে কেননা সে বুঝে গিয়েছে এই দুই ব্যাক্তি থাকতে তার জঘন্য পরিকল্পনা কোনোদিন সফলতার মুখ দেখবে না। আর ঠিক তার পরিকল্পনা অনুযায়ী আবিরকে সে আনিক আর নাইমার ব্যাপারে ভুল বুঝিয়ে তাদের বিপক্ষে নিতে লাগলো। অবশ্য আবিরে নিজেও আনিক আর নাইমাকে দেখতে পারতো না, তার স্যাটাস অনুযায়ী যে আনিক আর নাইমা না! অতঃপর পরিকল্পনা অনুযায়ী আনিক আর নাইমাকে বিতাড়িত করা হলো। এর পর থেকে বেশ আরামেই নিজের অশ্লীলতা চালাতে থাকলো অনিমা। এভাবেই কোনো এক অজানা ব্যক্তির সাথে নেশার ঘোরেই মিলিত হয় সে। যার পরিনামস্বরূপ এই বাচ্চা যদিও প্রথমে ভয়ে ছিলো আবিরকে কি বলবে কিন্ত আবিরের মাতলামোর সুযোগে সে নিজেকে রক্ষা করে ফেলে। অবশ্য নাতাশাও কম সাহায্য করেনি গাইনি ডক্টর হওয়ায় রিপোর্ট গুলোতে যতটুকু সাজানো লেগেছে পুরোটাই সে সাজিয়েছে।
~~~~~~~~~~~~
অফিসে আসার পর থেকেই সবাইকে মেজাজ দেখাচ্ছে আবির।এক কথায় অনিমার রাগ অন্যের উপর ঝাড়ছে। এইতো কিছুক্ষন আগেই কফি ঠান্ডা থাকায় পিয়নকে মন ইচ্ছা মতো ঝাড়লো সে। বস্তুত দোষ তারই ছিলো পিয়ন তাকে গরম কফিই দিয়েছিলো সে দেরিতে খাওয়ায় তা ঠান্ডা পেয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদ করার কেউ নেই ক্ষমতার ভয় সবারই আছে। সবাই ভয়ে আজ আবিরের কেবিনের ত্রি-সীমানায়ও ঘেসছে না।এমন সময় আবিরের কেবিনে প্রবেশের অনুমতি চায় তার সদ্য নিযুক্ত হওয়া পি.এ. মৌমিতা। সবার সাথে মেজাজ দেখালেও মৌমিতাকে সুন্দর ভাবেই ভিতরে আসার অনুমতি দেয় সে। অনুমতি পেতেই ভিতরে ঢুকে পরে মৌমিতা।
স্যার আপনার কিছু হয়েছে কি?সকাল থেকেই আপনি একটু রেগে আছেন, আপনি চাইলেই আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন স্যার। (মৌমিতা)
কথাটুকু বলতে বলতে মৌমিতা আবিরের বেশ কাছেই চলে আসে। আর আবির? সে তো কামনার চোখে মৌমিতাকে পর্যবেক্ষণ এ ব্যস্ত।
কিছুদিন পূর্বেই আবিরের পি.এ. হিসেবে অফিসে জয়েন দিয়েছে মৌমিতা। রূপে সে যেমন সুন্দরী তেমনি চালচলন তার লাস্যময়ী, যে কোনো পুরুষকে ঘায়েল করার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে তার। আর যদি পুরুষ হয় আবিরের মতো তাহলে তো নিশ্চিত কামনার নেশা জাগবেই। মৌমিতাও কম যায় না! সেও নিজেকে আবিরের সামনে ঠিক এমন ভাবেই উপস্থাপন করে যেন আবির তার উপর কামনার দৃষ্টি ফেলে। ব্যাপারটাকে আবিরও বেশ উপভোগ করে থাকে যেমনটা এই মুহূর্তে করছে। মৌমিতা আবিরের আরও কাছে গিয়ে পূর্ণরায় প্রশ্ন করে –
কি হলো স্যার? কথা বলছেন না কেন?আপনার মেজাজ এতো খারাপ কেন আজ?
কি করবো বলুন আমার জীবনে যে সুখ দাতার বড়ই অভাব! কেউ এমন নেই যে আমার দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে একটু শান্তি দিবে।(আবির)
মৌমিতা এবার আবিরের কোলে বসে বলে –
কে বললো নেই? আপনি সঠিক মানুষের কাছে যান তাহলে সবই আছে। টাকার বিনিময়ে যাদের কাছে যান তারা তো শুধুই শারীরিক তৃপ্তি দিবে, ভালোবেসে কারো কাছে আসুন সে সবই দিবে।
আবির মৌমিতাকে আরও চেপে ধরে বললো –
তুমি দেবে নাকি?
দেখুন দেই নাকি – বলেই মৌমিতা আবিরকে নিয়ে যায় কেবিন সংলগ্ন রুমে, যেটা অফিস কর্তৃক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে কিন্তু বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে কোনো অশ্লীল ইচ্ছা সম্পাদনে।
চলবে………….
#নীড় #বোনাস_পার্ট
#সুহা
শুনসো কয়জন ভাবিরা বলতেসে আমাগো কাঁথা বানানোর কাজে ওনারা যোগ দিবো, ওনারা বেশি টাকাও দাবি করতেসে না। যদি ওনাগো নেই তাইলে আর তাড়াতাড়ি কাঁথা হইয়া যাইবো এতে আমরা আরও বেশি কাঁথা বানাইতে পারমু। (নাইমা)
নাইমার কথা শুনে আনিক বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বললো –
নিলে তো ভালোই হইবো কিন্তু বেশি মজুরি তো দিতে পারমু না এহনো আমাগো লোন ফেরত দিতে হইবো আবার নতুন মেশিন কিনসি ওইটার লাইগাও ধার নিলাম। মেলা খরচ এর ব্যাপার।
ওনারা প্রতিদিনের মজুরি ৫০ কইরা হইলেও রাজি। ওনাগো কথা অবসর সময়টুকু খালি না বইসা থাইকা যদি একটু কয়টা টাকা আয় হয় তাও ভালা। আর আমিও হিসাব কইরাই কইতাসি দেহো আমি আর চাচী মিল্লা ১ সপ্তাহে কমপক্ষে ২টা কাঁথা সিলাই করতেসি তাও আবার হালকা নকশার ভিতরেই।কিন্তু যদি আমরা ১০/১২ জন মিল্লা কাজ করি তো ১সপ্তাহ আরও অনেক কাঁথা বানাইতে পারমু চাইলে একটু ভারী নকশাও করতে পারমু। আর আমরা নকশি কাঁথার পাশাপাশি নকশি জামাকাপড় ও বিক্রি করতেই পারি। যত নতুন নতুন জিনিস আমরা কাস্টমারগো দিতে পারমু আমাগো মুনাফা ততো বারবো। (নাইমা)
আনিক নাইমার কথাগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনে আর গভীর ভাবে চিন্তা করতে লাগে। ঐদিন অঙ্কিতার সাথে দেখা করতে গেলে সেই তাদের দোকানে কাপড়ের পাশাপাশি পারলে টেইলারিং করার আর যেহেতু নাইমার হস্তশিল্পের নিপুনতা আছে তাই সুবিধা অনুযায়ী নকশী কাঁথা সেলাই করে বিক্রিরও পরামর্শ দেয়। আনিক আর নাইমারও পরামর্শটা যুক্তিযুক্ত লাগে। আর কাকতালীয় ভাবে আনিকের মা পাড়া-প্রতিবেশীদের কাপড় সেলাই করে কিছু অর্থ উপার্জন করতো তাই মায়ের থেকে আনিক টুকটাক সেলাই কাজ শিখেছিলো আর নাইমাও সেলাই কাজে পারদর্শী। তাই কষ্ট করে হলেও আরও কিছু অর্থ ধার একটা সেলাই মেশিন কিনে নেয়। এর পর থেকেই দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করে দুজন নেমে পরে উপার্জনের পথে আর তাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে চাচা-চাচি।
আর তাদের কঠোর পরিশ্রম আর সততার ফল তারা পেয়েছেও। এলাকার ভিতরেই কাপড়ের দোকান তার উপর দামটাও তুলনামূলক কম হওয়ায় বেশিরভাগ লোকই তাদের দোকান হতে ক্রয় করে। এতে দেখা যায় মুনাফাও ভালো হচ্ছে। এসব কিছু বিবেচনা করে আনিক আর মানা করলো না। যেহেতু কাঁথা সেলাই এর কাজটা নাইমা আর চাচী করে থাকে তাই তাদের সুবিদার্থেই লোক নিয়োগ করা উচিৎ। এই ভেবে সে লোক বাছাই করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নাইমা আর চাচিকে দিলো। চাচি আর নাইমাও বেশ আটসাট বেঁধেই লোক বাছাই করবার কাজে লেগেছে।
বিকেলের দিকে আনিক দরকারি কাজ আছে বলে বের হয়ে যায় আর প্রায় রাত্রি করে ফেরত আসে হাতে তার কয়েকটা ব্যাগ। ঘরে এসেই সবাইকে ডাকতে থাকলে সবাই একসাথে জড়ো হয়। অতঃপর আনিক সবাইকে আরামসে বসিয়ে সবার হাতে একটা করে ব্যাগ দেয়। সবাই কৌতূহল নিয়ে ব্যাগ গুলো খুলতেই অবাক নয়নে আনিকের দিকে তাকায়। তা দেখে আনিক বলে –
আরে অবাক হও কেন আমগোর ব্যবসায় গত ১ মাসেই আল্লাহর রহমতে অনেক মুনাফা হইসে তাই আমি সবার প্রথমে তোমাগো গয়না গুলা নিয়া বন্ধকি ছাড়ায় লইয়া আইলাম। আর চাচা তোমার তো গয়না নাই তাই তোমার লাইগা এই পাঞ্জাবী ডা আনসি পইড়া দেখো তো কেমন হইসে।
আগে তুই ক দেহি তুই না এই গয়না গুলা বেইচা দিসিলি? তাইলে আবার বন্ধকি কেমনে? আর টাকা গুলা দিয়া আগে ধার দেন শোধ না কইরা এগুলা কে? (চাচী)
হরে বাবা এগুলা কি জন্যে করতে গেলি আগে ধার দেন শোধ করবি তারপর নাহয় এইসব খরচ করতি।(চাচা)
আরে বলতেসি সব বলতেসি বসো তোমরা। শুনো তাইলে আমি গয়না গুলা বেচি নাই বন্ধকি রাখসিলাম, তোমাগো এত সাধের গয়না বেচার সাহস করতে পারি নাই। আর রইলো ধার পরিশোধ ঐটায় আমি ৬ মাসের সময় নিসি ইন শা আল্লাহ পরিশোধ হইবোই। আর চাচা তোমার জন্য পাঞ্জাবী আনসি ওটায় খরচ কিসের? বাপ-মায়ের লাইগা সন্তান যা করে ঐডা ওগো দায়িত্ব খরছ না। আর তোমরাই তো আমার বাপ-মা নাকি? (আনিক)
আনিকের কথা শুনে সবার চোখে জল চলে আসে কিন্তু সেই জলে ছিলো না কোনো কষ্ট অভিমান শুধুই ছিলো অগস্র খুশি আর আনন্দের সাগর। চাচা আনিক কে জড়িয়ে ধরলো আর নাইমা আর চাচি এই আনন্দের মুহূর্তটাকে দেখে নিজেদের চোখ জুড়ালো।অতঃপর সবাই মিলে গল্প আর হাসি তামাশার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
তুমি সবার লাইগাই কিসু না কিসু আনলা কিন্তু নিজের লাইগা কিসু আনো নাই কেন? (নাইমা)
আরে আনসি তো কে বললো আনি নাই? তোমাগো মুখের হাসি আনসি না! (আনিক)
ও তাই নি, কিন্তু আমিও তোমার লাইগা কিসু আনসি দেখবা না?(নাইমা)
কি আনলা?(আনিক)
নাইমা তার হাত আনিকের সামনে বাড়িয়ে দিলে আনিক দেখলো একটা সাদা রঙের রুমাল। হাতে নিয়ে পুরোটা খুলে দেখলো তাতে নিখুঁত নকশা দিয়ে আনিক নামটি লেখা। আনিকের মুখের হাসি ফুটে উঠলো। তা দেখে নাইমা বললো –
একটা জামা বানানোর পর এই কাপড় টুকু রইয়া গেসিলো তাই সময় বের কইরা তোমার লাইগা এইডা বানাইসি।
আনিক নাইমার কপোলে স্নিগ্ধা পরশ দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো –
এর থিক্কা বড় উপহার আর কি কিসু হইতে পারে নাকি? (আনিক)
নাইমাও আনিক কে জড়িয়ে ধরে বলে অঙ্কিতা দিদি কবে আইবো? অহনো দেশে আহে নাই? দুই সপ্তাহ হইয়া গেলো।
বলসে তো দেশে আইলেই ফোন করবো আর দেহা করতে অইবো। আমাগো সারপ্রাইস টা দিবো। হয়তো ২ কি ৩ দিন পর আইয়া পড়বো। চলো আইজ আমরা জোস্না দেহি যাইবা?(আনিক)
নাইমা মাথা নেড়ে সায় জানালে আনিক তাকে নিয়ে উঠানে বসে পরে। ভালোবাসার খোশগল্পে মেতে উঠেছে এক জোড়া চড়ুই জোস্নার আলোতে তা দেখে যে চাঁদটাও মিটমিট করে হাসে।
চলবে ………….