#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৯
🍁
ভার্সিটি থেকে একটু সামনে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে আরোহী, কিন্তু আজ মনে হয় সব রিকশার মালিকেরা পন করেছে কিছুতেই আরোহীর সামনে আসবে না। এরইমধ্যে একটা গাড়ি আরোহীর থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে যায়।আরোহী এক পলক দেখে আবার এদিক ওদিক রিকশা খোঁজায় মন দেয়।গাড়ি থেকে একটি ভদ্রলোক আরোহীর সামনে এসে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বলে,,,
–‘মামনী, রিকশা পাচ্ছো না বুঝি?’
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চোখ তুলে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় আরোহী৷ তার সামনে স্বয়ং তারেক চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।
–‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল, আপনি এখানে এভাবে?’
অবাক হলেও ভদ্রতা বজায় রেখে কথাগুলো বলে উঠে আরোহী।
–‘এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তোমায় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলাম গাড়ি আসেনি হয়তো, তাই নিতে আসলাম মা!’
ভদ্রলোকের কথাশুনে সামান্য হাসলো আরোহী, কে বলবে এই লোকটা তার শশুর হয়। হেঁসেই বলে উঠে আরোহী,,
–‘আসলে আজকে একটু তাড়াতাড়ি ভার্সিটি থেকে বের হয়েছি তো তাই, আপনাকে এই রোদের মধ্যে কে আসতে বললো আঙ্কেল?’ শরীর খারাপ করবে তো!
–‘আমি একটু দাঁড়িয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে আর তুমি থাকলে করবে না! ‘
বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠেন ভদ্রলোক। আরোহী শুধু তাকিয়ে দেখে, লোকটাকে দেখে কে বলবে যে এইলোকটার এমন ধামড়া দুটো ছেলে আছে।
–‘তা মামনী, এই বাবাটার গাড়িতে যেতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো আবার?’ দেখো রোদের মধ্যে তোমার চোখ মুখ অনেকটা শুকিয়ে গেছে।
ভদ্রলোকের কথা শুনে আরোহীর ফিক করে হেসে মাথা নাড়ায়, যার অর্থ না আমার কোনো সমস্যা নেই।
–‘তাহলে যাওয়া যাক,,’
বলেই ভদ্রলোক আরোহীর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে গল্প জুড়ে দেন। আরোহী ও হেসে হেসে কথা বলে, গাড়ির সামনে এসে তারেক চৌধুরী নিজেই দরজাটি খুলে দেন।আরোহী ও মুচকি হেসে উঠে বসে, তার পাশেই তারেক চৌধুরী ও উঠে বসে। মূহুর্তেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।
দূর থেকে সবটা লক্ষ করছিলো আঁধার, আরোহী ও তার বাবার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি সে কিছুতেই মিস করতে চায় নি।
তাই তো যখনই তার বাবার গাড়িটি থেমে যায় তখন থেকেই সে সবটা লক্ষ করা শুরু করে, সে ও আরোহীর পেছন পেছন এসেছিলো ঠিকই কিন্তু আরোহী যেনো দেখতে না পায় তাই দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
আঁধারের ঠোঁটের কোণে ও আজকে তৃপ্তির হাসি, সে ভেবেছিলো হয়তো আরোহী এতো সহজে সবটা মেনে নিতে পারবে না সবার সাথে আলিশার মতোই খারাপ ব্যাবহার করবে কিন্তু তার বাবার সাথে এতো আন্তরিকতার সাথে কথা বলতে দেখে অনেকটা হালকা মনে হয় আজকে আঁধারের।
সেদিন আরোহীকে বিয়ে করার কথাটা তার বাবা নিজেই তাকে বলেছিলেন। আঁধারের রাজি হওয়ার পেছনে অবশ্য অন্য কারণ ও আছে যেটা আঁধার নিজের মধ্যেই রেখেছে। কিন্তু এর পরিনতি যে কি হতে চলেছে সেটা আঁধারের ও অজানা।
আসলেই কি আঁধার আরোহীর সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চায়, স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতো হতে চায়। কথাটা ভেবেই আঁধার রহস্যময় একটা হাসি দেয়।
আর কিছু না ভেবে আঁধার ও তার বাসার দিকে রওনা হয়।
গাড়িতে তারেক চৌধুরী ও আরোহী গল্প জুড়ে দিয়েছে। তারেক চৌধুরী আরোহীকে তার ব্যাবসা, অফিস এসব নিয়ে বলছে আরোহী নিজেও আগ্রহের সাথে সবটা কথাই চুপচাপ শুনছে। মাঝে মাঝে আবার প্রশ্ন করছে,আবার মাঝে মাঝে হেসে উঠছে দুজনে একত্রে। ড্রাইভার সবুজ আর চোখে তাদের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে৷ তার মনে হচ্ছে তারা হয়তো বাবা মেয়ে।সে নতুন তাই কাউকেই তেমন চেনে না।
–‘মামনী, আমি কি তোমার খুব পর বলো তো?’
তারেক চৌধুরীর কথা শুনে আরোহী ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
–‘আরে না- না আঙ্কেল তা কেনো হবে!’
আমতা আমতা করে বলে আরোহী।
–‘তাহলে আমায় এখন ও আঙ্কেল বলে ডাকছো কেনো বলো তো?’
–‘তাহলে কি বলে ডাকবো আঙ্কেল?’
আরোহীর অবুঝ প্রশ্নে তারেক চৌধুরী মুচকি হাসে, তার মতে মেয়েটা এখন ও বাচ্চা। তার বাচ্চামি এখন ও কাঁটেনি।
আরোহীর এই বাচ্চামি গুলোর জন্যই আরোহীকে তার ভিষণ ভালো লাগে, তাই তো আঁধারের জন্য আরোহীকে পছন্দ করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু আদরের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের মত বদলে ফেলেছিলেন, তবে কে জানতো তাদের বিয়েটা ভাগ্যের লিখন হয়ে যাবে।
তিনি হাজার বার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, যে শেষ অব্দি আল্লাহ না চাইলে কখন ও আঁধার আর আরোহীর বিয়েটা হতো না।এই একটি মাত্র মেয়ে যাকে তার খুব আপন আপন লাগে, কেনো লাগে তিনি সেটা আজও বুঝতে পারেননি৷
এরইমধ্যে আরোহীর বাড়ির বিপরীত দিকে গাড়ি যেতেই আরোহী চেঁচিয়ে উঠে,,,
–‘আঙ্কেল, এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা নয়, এটা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন উনি?’
–‘আবার আঙ্কেল?’
তারেক চৌধুরীর মলিন কন্ঠ শুনে আরোহী বুঝতে পারে আবার সে ভূল করে ফেলেছে।
–‘ছরি বাবা!’
আরোহীর কথা শুনেই হেসে জবাব দেন তারেক চৌধুরী,,,
–‘আজকে তোর এই বাবার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি মা, তুই কি খুব রাগ করবি যদি নিয়ে যাই তো?’
–‘আরে না না বাবা কি বলছেন তবে আমার বাবাকে বলা হয়নি তো?’
–‘তোর বাবাকে আমি বলে দিবো মা, তুই আমায় আব্বু বলে ডাকিস আঁধারের মতোই৷’
–‘আচ্ছা আব্বু।’
আরোহীর কথা শুনে সুন্দর করে হাসেন ভদ্রলোক। আরোহী আর কি বলবে ভেবে না পেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পরেই তারা চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে৷ কলিং বেল বাজিয়ে তারেক চৌধুরী দাঁড়িয়ে থাকে আর পাশেই আরোহী মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।
এরইমধ্যে আঁকলিমা চৌধুরী মুচকি হেসে দরজা খুলে দেন। তিনি পিছু ফিরে আবার চলে যেতে ধরলেই কিছু একটা মনে হতেই আবার পিছনে ফিরে আরোহীকে দেখেই অবাক হয়ে যান।
–‘কি হলো আঁকলি এমটা হয়তো কল্পনাতেও আশা করোনি বুঝি?’
স্বামীর ঠাট্টার স্বর শুনে হেসে বলে উঠেন তিনি,,
–‘আশা তো করিনি তবে আপনি কাজটা ঠিক করেন নি,আগে বললে আমি আমার মায়ের জন্য কতো কি রান্না করতাম।’
বলেই আরোহীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন তিনি।আরোহী তার শাশুড়ীর ব্যাবহারে মুগ্ধ হয়ে যায়।
–‘চলো মা, তোমার এই ছোট রাজ্যে তোমায় স্বাগতম।’
বলেই আরোহীকে ভেতরে নিয়ে যান।আরোহী লাজুক হেসে চুপচাপ থাকে।
–‘তা মামনী ভালো আছো তুমি?’ এতোদিন পরে বুঝি এই মায়ের কথা মনে পড়লো?
–‘আরে ও তো ভূলেই গেছে আমাদের, দেখো না একে বারে তুলে নিয়ে এসেছি।’ এবার ওর বাবা কয়েকঘন্টা খুঁজে হয়রান হোক।
আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় হেসে বলেন তারেক চৌধুরী।
–‘হ্যা তুমি ঠিক কাজ করেছ একদম, ভাইজানের বুঝা উচিত মেয়েটা একা তার নয় আমাদের ও, উনি এটা মোটেও ঠিক করেননি আমাদের সাথে!’
–‘হয়েছে বাকি কথা পড়ে হবে, তুমি আগে মেয়েটাকে ফ্রেস হতে দাও!’ তারপর বাকি কথা হবে।
–‘হ্যা তাই তো আমি তো ভূলেই গেছিলাম, নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে তোমার তাই না মা?’
–‘আরে না না মা ব্যস্ত হবেন না আমার খিদে পায় নি।’
–‘বাহ্, আমি আব্বু ডাক শুনার জন্য কতোবার বললাম তার পর বললে আর এসেই ওকে মা বলে ডাকলে? ‘
আরোহীর কথায় মন খারাপ করে বলে উঠলো তারেক চৌধুরী।
আঁকলিমা চৌধুরী ও আরোহী একত্রে হেসে ফেললো, তারেক চৌধুরী ও হেসে হেসে বললেন,,
–‘দেখলে আঁকলি, বউমা কিন্তু আমি খাঁটি পছন্দ করেছি।’
আরোহী অবাক হয়ে তারেক চৌধুরীর দিকে তাকায় আর ভাবে,কি বলছেন উনি? উনি তো আমায় পছন্দ করেনি, আমায় তো আদরের পছন্দে বউ করতে চেয়েছিলেন। এরইমধ্যে আঁকলিমা চৌধুরীর গলার আওয়াজ পায় আরোহী।
–‘হুম ঠিক বলেছেন তবে আরোহী মা আমার বউ মা না মেয়ে।’ চল মা তোকে ফ্রেস হতে নিয়ে যাই। আমি যদি তোকে তুই করে বলি তুই কি মন খারাপ করবি মা?
–‘আরে না না মা, মায়েরা সন্তানদের যেভাবে ইচ্ছে ডাকতে পারে,তবে আমি আপনাকে আম্মু বলে ডাকি?’
আরোহীর কথায় মুগ্ধ হন আঁকলিমা চৌধুরী। হেসে বলেন,,
–‘ঠিক আছে, তবে তুমি করে ডাকতে হবে বুঝলি।’
আরোহী আঁকলিমা চৌধুরীর কথা শুনে সামান্য হাসে। একটা বড় ঘরের কাছে নিয়ে এসে উঁচু গলায় বলেন,,,
–‘আঁধার, এই আঁধার?’
এরইমধ্যে আঁধার বের হয়ে বলে,,
–‘আম্মু কি হয়েছে?’
বলেই তার মায়ের পাশে আরোহীকে দেখে অবাক হয়ে যায়। পরক্ষনেই মনে পড়ে হয়তো তার বাবা নিয়ে এসেছে।
–‘আরোহী মাকে রুমে নিয়ে যা, ফ্রেস হবে ও।’
আঁধার দরজা থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে আরোহীকে যাওয়ার জায়গা করে দেয়।
–‘যা মা, ফ্রেস হয়ে আঁধারকে নিয়ে নিচে আয় আমি খাবার বাড়ছি কেমন!’
আরোহীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁকলিমা চৌধুরী বলেন।
আরোহী মাথা নাড়ায়, যার অর্থ ঠিক আছে। মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী হেসে নিচে চলে যান।
আঁধার আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে আর আরোহী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে হেসে ফেলে আঁধার, কিন্তু আরোহী তার দিকে তাকায় না।
–‘চলুন মিসেস চৌধুরী আপনার ঘরের প্রতিটি ইট, পাথর ও এতো দিন আপনাকে মিস করেছিলো,আজকে তাদের আপনার দর্ষণ দিয়ে ধন্য করুন!’
আঁধারের কথার মানে বুঝতে পেরে আরোহী লজ্জায় লাল হয়ে যায়,কিন্তু মাথা উঁচু করে আঁধারের দিকে তাকায় না।
–‘বাহ রে এতো লজ্জা আপনার ইসস ভাবছি যেই মেয়ে ভার্সিটির ভরা মাঠে আমায় চুমু খেতে পারে সে কি না সামান্য ঘরে ঢুকতেই এতো লজ্জা পাচ্ছে! ‘
আঁধারের কথায় আরোহী লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।আঁধার শুরু থেকেই সবটা লক্ষ করছিলো, এবার আর হাসি থামাতে পারে না উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আরোহী বেচারি পারে না তো মাটি ফাঁক করে নিচে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকে।
আঁধারের হাসির আওয়াজ এতোটাই জোড়ে ছিলো যে নিচ থেকে তার বাবা মা ও শুনতে পায়।
আঁকলিমা চৌধুরীর কলিজাটা মনে হয় ঠান্ডা হয়ে যায়, ঠিক কতোদিন পড়ে তার ছেলেটার প্রাণ খোলা হাসির আওয়াজ শুনছে ভাবতেই ভালো লাগায় তার মনটা ভরে যায়।
তারেক চৌধুরী এতোক্ষণ স্ত্রীর মুখের দিকে এই হাসিটাই দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি এবার বললেন,,
–‘দেখলে তো আঁকলি, মেয়েটা এসেই আমাদের ছেলেটাকে আবার আগের মতো করে দিলো। ‘
আঁকলিমা চৌধুরী মুখে কিছু না বললেও চোখ দিয়ে স্বামীকে ধন্যবাদ জানান।
আদর ও আলিশা আঁধারের হাসি শুনে এগিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আরোহীকে তারা আশা করেনি।
ততোক্ষণে আঁধার হাসি থামিয়ে আরোহীর অনেকটা কাছে চলে গেছে। আরোহী লজ্জায় আরও খানিকটা মাথা নিচু করে নিয়েছে। আঁধার আর কোন কিছু না ভেবেই ঝট করে আরোহীকে কোলে তুলে নেয়।
ঘটনাটা এতোই দ্রুত ঘটে যে আরোহী ভেবাচেকা খেয়ে যায়। আর আলিশা ও আদর হা করে তাকায়,মূহুর্তেই আলিশার চোখ মুখ রাগে লাল হয় যায়।আর আদরের চোখ দিয়ে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি বের হয়,বার বার মনে হয় আজকে আঁধারের জায়গায় সে হতে পারতো কিন্তু কিছু ভুলের কারণে আরোহীকে হারাতে হলো তার। আলিশা রাগে গজগজ করতে করতে নিজের ঘরে চলে যায়। আর আদর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে চলে যায়।
–‘আপনি আমায় কোলে নিলেন কেনো?’ আমি একা যেতে পারবো তো!’
আরোহীর কথা শুনে আঁধার গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,
–‘অনেকদিন থেকেই ভাবছি বুঝলে অনেক তো হলো এবার অন্তত্য বাসরটা সেরে ফেলা উচিত কিন্তু বউ ছিলো না তাই কথাটা ভুলেই গেছিলাম, আজকে বউ যেহেতু চলে এসেছে নো ছাড়াছাড়ি।’
বলেই চোখ টিপ দেয় আরোহীকে।
–‘অসভ্য! ‘
আরোহী চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,
–‘কিছুই করলাম না এখনো তাতেই অসভ্য বলছো?’ দিস ইজ নট ডান বউ,তাহলে অসভ্যতা করতেই হয় কি বলো?’
আরোহীর কথা শুনে হাসি হাসি ভাব করে বলে আঁধার।
এতে যেনো আরোহী চোখ মুখ আরও খানিকটা কুঁচকে নেয়।
আঁধার অনেক কষ্ট হাসি কন্ট্রোল করে বলে,,
–‘আদর চাই বললেই তো হয় বউ এভাবে মুখ বাকিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছো বলো তো?’
বলেই আরোহীকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় আঁধার।
আরোহীকে আঁধারকে পাত্তা না দিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে ভেংচি কেঁটে ধারাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আঁধার বেচারা হাবলার মতো তাকিয়ে থাকলেও ফিঁক করে হেসে দেয়।
–‘যতটা বোকা ভাবতাম ততোটা বোকা নয় তাহলে মেয়েটি, আমার ফাজলামোটা খুব সহজে ধরে নিয়েছে।’
নিজেই নিজেকে কথাটা বলে আঁধার। কি আর করার বেচারার বউ তো ওয়াশরুমে তাই বেলকনিতে চলে যায় সে।
–‘তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো আমার?’
আদর নিচে যেতেই তারেক চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে উক্ত কথাটি বলে উঠেন।
আদর একপলক তার বাবার দিকে তাকায়, সে ভালো করেই বুঝতে পারছে কি বলতে চায় তার বাবা।
–‘আরোহী যেহেতু এখন তোমার বড় ভাইয়ের বউ আর তুমি যেহেতু নিজেও বিবাহিত, তাই আগের সবকিছু ভুলে যাও।’ আরোহীকে নিজের বড় ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে সন্মান করবে।
নিজের বউকে মেনে নেও সবকিছু স্বাভাবিক করো।বাবা হিসেবে এইটা আমার অনুরোধ তোমার কাছে।
তারেক চৌধুরীর কথাগুলো আদরের কাছে বিষাক্ত লাগছিল,কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার কিন্তু কিছু করার নেই তার নিজের কারণেই আজকে তাকে এতো কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। আরোহীকে অন্য কারো সাথে দেখতো হচ্ছে। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করেই বলে উঠে,,
–‘আমি তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো আব্বু, কিন্তু আমায় সময় দিতে হবে। ‘
তারেক চৌধুরী আর কিছু বললেন না।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরোহীর অবস্থা দেখে আঁধার ভ্রুকুঁচকে বলে,,
–‘ফ্রেস হতে গেছিলে নাকি গোসল করতে?’ এভাবে জামা কাপড় ভিজিয়ে রেখেছো কেনো?
–‘আসলে ভুলে সাওয়ার অন হয়ে গেছিলো।’
আমতা আমতা করো বলে আরোহী।
আঁধার আর কিছু না বলে আলমারির কাছে চলে যায়,আলমারি খুলেই একটা জামা বের করে আরোহীর হাতে দেয়। দিয়ে বলে,,
–‘চেঞ্জ করে আস যাও?’
জামাটা হাতে নিয়ে আরোহী ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে থাকে আঁধারের দিকে। আঁধার নিজেও ভ্রুকুঁচকে তাকায় আরোহীর দিকে,ইশারায় জানতে চায় কি?
–‘আপনার আলমারি তে মেয়ে মানুষের এতোগুলো জামাকাপড় কেনো?’
আরোহীর প্রশ্ন শুনে আঁধার বিরক্ত হয়ে বলে,,
–‘আগে আর একটা বউ ছিল যে আমার তাই!’
–‘জামাগুলো কি আলিশা আপুর জন্য কিনেছিলেন? ‘
আরোহীর প্রশ্নে আঁধারের চোঁয়াল শক্ত হয়ে যায়।এক টানে আরোহীর হাত থেকে জামাটা কেড়ে নিয়ে বলে,,
–‘তোকে জামা দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে, তোর জামা পরতে হবে না তুই এভাবেই দাঁড়িয়ে থাক।’
বলেই জামাটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে হনহন করে বেলকনিতে চলে যায়। আরোহী বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
–‘আরে ভাই তোর কথায় কথায় এতো রাগ আসে কোথা থেকে বুঝি না, আমি তো জাস্ট মনের মধ্যে থাকা প্রশ্নটাই কারলাম। ‘
নিজেই নিজেকে বলে বিছানা থেকে জামাটা নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায় আরোহী।
#চলবে?
(ভুলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।)