#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০২
🍁
আমার বুকে,,,
কথাটি শুনে কয়েক সেকেন্ড হাবলার মতো তাকিয়ে থাকলাম আঁধারের দিকে। কিন্তু পরক্ষণেই রাগটা তরতর করে বেড়ে উঠলো, সাথে মেজাজটা ও চরম ভাবে খারাপ হয়ে গেলো৷ অসভ্য বলে কয়েকটা গালি দিলাম মনে মনে।
–‘মনে মনে গালি দেওয়া শেষ হলে চুপচাপ বিছানার অন্যপাশে শুয়ে পড়ো।’ আর যদি আমার পাশে শুতে ইচ্ছে না হয় তো, সোফায় অথবা মেঝেতে শুতে পারো।
ওনার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে ওনার দিকে তাকাতেই বলে উঠলেন,,
–‘আর যদি সেটাও ইচ্ছে না হয় তো যেখানে ইচ্ছে গিয়ে ঘুমাও।’ “আই ডন্ট কেয়ার ” আমার ও তোমার পাশে শোয়ার এক বিন্দু পরিমানও ইচ্ছে নেই। আম্মুর কথা মতো বিয়েটা করছি সো বিয়েটা নাম মাত্রই বিয়ে থাকবে, আমার কাছে কখনও কিছু আশা করো না৷
ওনার কথাশুনে অবাক হয়ে ধপ করে মাটিতে পরলাম। কি বললেন উনি আন্টির কথা শুনে বিয়ে করেছেন? কখন আন্টির কথা শুনলেন। আর উনি নিজেই তো এসে আমায় বিয়ের জন্য জোড় করলেন! আর ভাবতে পারছি না আমি। আমার সবকিছু মনে হচ্ছে গুলে যাচ্ছে।
–‘কি হলো এখনও দাড়িয়ে আছো কেনো?’ আলোতে আমার ঘুমাতে অসুবিধা হয় লাইট অফ করে যা ভাবার ভাবতে পারো!
হঠাৎ ওনার বাজখাঁই গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলাম। মনে মনে ভাবছি,, এই লোকটার মুখে হয়তো কেউ জন্মের সময় মধু দিতেই ভুলে গিয়েছে, ব্যাটা করলামুখো। আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই ওনার ধমকে কেঁপে উঠলাম। তাই লাইট অফ করে চুপচাপ গিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে থাকলাম আর ভাবতে থাকলাম আদরের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো।
ছোট বেলা থেকেই আদরকে দেখলে আমার ভালো লাগতো না। সবসময় মেয়েদের আশে পাশে থাকায় ছিলো তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন অন্যরকম ভাবে তার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়।। বৃষ্টির দিনে কোচিং থেকে ফেরার পথে ছাতা উল্টে যাওয়াতে খানিকটা ভিজে যাই। ঠান্ডায় আমার এলার্জি তাইতো যেনো ঠান্ডা না লাগে দৌড়ে একটা ছাউনির নিচে চলে যাই। যদিও ছাউনিতে আশ্রয় নেওয়ার সময় কে আছে নাই দেখার সময় পাইনি। কিন্তু একটু পরই মনে হলো কেউ হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাজে ছেলে ভেবে পাশে ঘুরতেই কাউকে মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা দেখতেই কেমন যেন অসস্তি লাগতে শুরু করে। আমি ছাউনির অন্যদিকে চলে যাই কিন্তু ছেলেটার দৃষ্টি বরাবরের মতোই আমার মুখের দিকেই। পাশ থেকে কেউ একজন কোমড়ে স্পর্শ করতেই অসস্তি এবার রাগে পরিনত হয়। ঘুরে কোনো কিছু না ভেবেই একটা চড় মেরে দেই। কিন্তু একদল বখাটে ছেলেকে দেখেই ভয়ে ছিটিয়ে যাই। ততক্ষণে ওই ছেলেটা ও আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। আমি তখন আরও খানিকটা ভয় পেয়ে যাই। বারবার মনে হচ্ছিল আমি হয়তো আজকে শেষ আর এই ছেলেটাও হয়তো ওদের দলেরই। কিন্তু ছেলেটা আমায় অবাক করে দিয়ে পালটা একটা থা’পড় লাগায় বখাটে ছেলেটার একটাকে। আমি তখন আরও একটু ভয়ে ছিটিয়ে যাই আর ভাবি যদি ছেলেটাকে মেরে আমার কোনো ক্ষতি করে দেয়। তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই বৃষ্টির মধ্যে দৌড়াতে থাকি। অনেকটা দৌড়ানোর ফলে যখন হাঁপিয়ে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ি তখনই পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করি৷ চোখ তুলে পাশে তাকাতেই ওই ছেলেটাকে দেখে আবার ভয় পেয়ে যাই।
–‘রিলাক্স, আমি তোমার ক্ষতি করবো না।’
হাত ধরে বলে উঠে ছেলেটি।
আমি তখনও ভয়ে কাঁপছি।
–‘ এই বার্বিডল! তোমার নামটা কি বলো তো?’ তোমায় আমার ভালো লেগেছে! একদম বার্বিডলের মতো দেখতে তুমি।
আমি খানিকটা সাহস করে ওনার হাতে কামড়ে দিয়ে দৌড়ে পালাই৷ তারপর থেকেই ওনাকে দেখলে আমি ভয় পেতাম।কিন্তু ওনাকে কোথায় যেনো দেখেছি ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে যায়,, উনি তো তারেক আঙ্কেলের ছেলে। কিন্তু তারপর ও দূরে দূরই থাকতাম তারও অবশ্য একটা কারণ আছে,,
ওনাকে বেশিরভাগ সময়ই আপুর সাথে দেখা যেতো। আর ওনার সাথে কথা বললে যদি আপু রাগ করে তাই দূরে দূর থাকতাম। একদিন তো জড়িয়ে ধরেছিলো আপু ওনাকে আমি দেখেছিলাম কিন্তু আমি আপুর ফ্রেন্ড মনে করে কিছু বলিনি। আর আমি জানতাম আপুকে প্রশ্ন করলেও সেম কথাই বলতো৷ কিন্তু এখন বুঝছি আমি কতোটা বোকা। তার কয়েকদিন পরেই বাবা আদরের সাথে আমার বিয়ের কথা বলে। তখন বারণ করলেও আদরের ভালোবাসা আর পাগলামি দেখেই মনে হয়েছিলো লোকটা আমায় সত্যি অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আজকে বুঝতে পারলাম। আদর আর আপুর সম্পর্কে সবকিছু হঠাৎ করেই জানতে ইচ্ছে করছে। ওদের কতোদিনের সম্পর্ক কেনো আমার সাথে এমনটা করলো যদি জানতে পারতাম তাহলে হয়তো নিজেকে একটু শান্ত করতে পারতাম৷ কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের মুখোমুখি হতেও কষ্ট লাগছে।
আর কিছু ভাবতে পারছি না মনে হচ্ছে মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বারবার সবকিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে,, আচ্ছা আঁধারের সাথে কি আমার সংসার জীবন সুখের হবে? আঁধার কি আমায় মেনে নিবে? নাকি সে ও আদরের মতো বিশ্বাসঘাতকতা করবে? করতেও পারে ভাই ভাইয়ের মতো হবে এটাই তো স্বাভাবিক! আঁধারকে দেখে মনে হচ্ছে সেও হয়তো বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি৷ কিন্তু সে তো নিজেই আমায় জোড় করে বিয়েটা করলো। আপুর প্রতি প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেনি তো আঁধার? এইসব ভাবতে ভাবতেই মাথাটা চেপে ধরে বসে পড়লাম কিছুক্ষণ। আর কোন কিছু না ভেবেই বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম৷
আলিশা মেঝেতে বসে আছে,,
–‘আজও আমার পছন্দের মানুষটাকে কেড়ে নিলো আরো?’ কেনো আরো? কেনো? তুই ছোট থেকেই আমার সবকিছু কেনো কেড়ে নিস? আমি তো তোর বোন হই তবুও বার বার কেনো সবকিছু তুই আমার থেকে কেড়ে নিস?
চিৎকার করে বলে উঠলো আলিশা।
–‘আর এই বাচ্চাটা, এই আজাইরা বাচ্চাটার জন্য আজকে আমি আঁধারকে পেলাম না!’ একে সেদিনই কেনো মেরে ফেললাম না? কেনো?
পাগলের মতো সবকিছু ভাঙ্গচুর করছে আলিশা।
আবার বিরবির করে বলছে,,
–‘আমি তো তোকে মারতে চাইনি, বিয়ের পর আঁধারের বাচ্চা বলে তোকে পৃথিবীতে আনতে চেয়েছিলাম! কিন্তু তুই কি করলি আমার সবকিছু শেষ করে দিলি?
নিজের পেটে নিজেই খাঁমচি দিচ্ছে আলিশা।
–‘আঁধার শুধু আমার কেনো আধার আরো কে বিয়ে করলো কেনো করলো?’ আমি হেরে গেলাম আবার আরোর কাছে, না না আমি হেরে যেতে পারি না৷ আঁধার আমার!
বলতে বলতেই চুপ হয়ে গেলো।
–‘কি করবো এখন আমি?’ উফফ কিছুই ভাবতে পারছি না। কে করলো এমনটা আমার সাথে? ছাড়বো না আমি তাকে।
আবার বলে উঠলো,,
–‘উফ আলিশা ডোন্ট ফরগেট হু আর ইউ, আমি তো আঁধারকে আমার করবোই যেভাবেই হোক। আগে এই বাচ্চাটার ব্যবস্থা করতে হবে।
–‘আদর ফোন ধরছে না কেনো?’ কালই বাচ্চাটার কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।থাক এখন একটু ঘুমিয়ে নেই।
আর অন্যদিকে,,,,
–‘তুমি এইখানে এখনও কি করছো আকলিমা?’ যার জন্য অপেক্ষা করছো সে যেনো আমার বাড়িতে আর পা ও না দেয়। ওর জন্য আমার মানসম্মান সব শেষ হয়ে গেছে৷
তারেক চৌধুরীর গম্ভীর কন্ঠে আকলিমা চৌধুরী খানিকটা কেঁপে উঠেন। কারণ তিনি ও জানেন তার ছেলে কতো বড় ভুল করেছে৷ কিন্তু তিনি তো মা তাই সন্তানরা হাজারটা ভুল করলেও মায়ের চিন্তা হয়।
–‘আপনি…’
আকলিমা চৌধুরীকে আর কিছু বলতে না দিয়েই তারেক চৌধুরী বলেন,,,
–‘ছেলের হয়ে সাফাই গাইবে না,আমি ওর নামও শুনতে চাই না আর…’
বাকি কথা শেষ করার আগেই বাজখাঁই আওয়াজে তার ফোন বেজে উঠে।
–‘আকলিমা তোমার ছেলে,, তোমার ছেলে… ‘ বলেই ধপ করে বসে পড়েন আর আকলিমা চৌধুরী অস্থির হয়ে প্রশ্ন করতেই থাকেন।
সকালে,,,
আরোহী ঘুম থেকে উঠে ঝিমমেরে বসে থাকে কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই কালরাতের কথা মনে পড়তেই আঁধারের কথা ও মনে পড়ে যায়। পাশে তাকিয়ে আঁধারকে দেখতে না পেয়ে আশে পাশে চোখ বুলায়। কিন্তু পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে ও আঁধারকে কোথাও দেখতে পায় না। আর কিছু না ভেবেই ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যায়, কিন্তু বের হয় গোসল করেই। আঁধার হয়তো নিচে আছে ভেবেই নিচে যায় আরোহী। কিন্তু নিচেও দেখতে পায় না। ধপ করে তার বাবার পাশে বসে পড়ে আরোহী৷
আমজাদ শেখের গম্ভীর মুখে হাসি ফুটে উঠে আরোহীকে দেখে।
–‘ঘুম কেমন হলো মামনি?’
–‘ভালোই হয়েছে বাবা।’
মিষ্টি হেসে বলে আরোহী।
–‘ও হ্যা!আঁধার হাসপাতালে গিয়েছে, তুমি ঘুমে ছিলে তাই আমায় বলে গেছে।’
কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলেন আমজাদ শেখ।
–‘ ওহ, কিন্তু হাসপাতালে কেনো গেলো হঠাৎ বাবা?’
–‘আদরের এক্সিডেন্ট হয়েছে রাতেই তাই। ‘ আমিও ছিলাম হাসপাতালেই কিন্তু ভোরের দিকে আঁধার বাসায় রেখে গেছে আমায়।
আমি চমকে গেলাম আদরের কথা শুনে কিন্তু নিজেকে স্বভাবিক করেই বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।
এরই মধ্যে আম্মু ৩ কাপ কফি নিয়ে এসে আমাদের পাশে বসলো ঠিকই তবে হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু বলতে পারছে না।
আম্মু বাবাকে উসখুস করতে দেখে আরোহী নিজেই প্রশ্ন করলো,,,
–‘তোমরা কি আমায় কিছু বলতে চাও,কিন্তু বলতে পারছো না!’
–‘আসলে আরো আমরা তোকে আঁধারের ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।’
আম্মুর কথায় খানিকটা অবাক হলাম। আঁধারের ব্যাপারে আবার কি বলতে চায়,আঁধার কি আপুকে ভালোবাসে নাকি? নিজের করা প্রশ্নে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলাম৷
তখনই বাবার গলার আওয়াজে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলাম।
–‘মামনি বাবা যদি তোমায় কিছু কথা বলে সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে বলে তুমি কি বাবার কথাটা রাখবে?’
–‘কেনো নয় বাবা, আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো। ‘ তুমি তোমার মেয়েকে এতোটাও দূর্বল ভেবো না। আর বেইমানদের কথা আমি কাল রাতেই ভুলে গেছি৷ আমি নতুন জীবন শুরু করতে চাই আধারকে নিয়ে কিন্তু আঁধার সে কি?
আর কিছু না বলেই বাবার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আরোহী।
আরোহীর বাবা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তাই তিনি বললেন,,,
–‘আঁধারকে নিয়ে তুমি ভেবো না সবটা সামলে নিবো আমি।’ তবে তোমাকেই আগে আঁধারের সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে হবে। ছেলেটা অনেক ভালো আর আমি জানি সে তোমায় অনেক ভালো রাখবে৷ দ্বিতীয়বারের মতো বাবাকে বিশ্বাস করতে পারো মামনি এইবার তোমার বাবা তোমার জন্য বেস্টটাই সিলেক্ট করেছেন।
–‘আমি জানি বাবা, তুমি আমার জন্য যেটাই সিলেক্ট করবে ভালোর জন্যই করবে।’ আমি চেষ্টা করবো। তবে আমি যদি আদরকে দেখতে যাই তোমার কি কোনো আপত্তি আছে বাবা?
বাবার হাসিমুখটা খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেলো,,,
–‘ কি দরকার আরো, তুই ওকে দেখতে না যাওয়াই ভালো মা। ‘ ভুলে যাস না তোর সাথে কি করেছে ওরা।
–‘ উফফ আম্মু, চিন্তা করো না তোমার মেয়ে ওইখানে গিয়ে ইমোশনাল হবে না। ‘ আর আমি কিছু ভুলিনি কিন্তু তুমিই তো বলো শত্রুদের ও বিপদের সময় পাশে থাকতে হয়।
–‘আঁধারের সাথে কথা বলে নে, ও যদি বলে তাহলে যা।’
আম্মুর কথায় বাবা ও সায় জানালো। আমিও ঠিক আছে বলে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু আবার ফিরে এসে বললাম,,,
–‘আপু কোথায়, ওর বর হাসপাতালে ও যাবে না?’
আম্মু ও বাবার মুখ কালো হ’য়ে গেলো৷ আমি ও আর কিছু না বলেই উপরে যাচ্ছিলাম কিন্তু বাবার কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলাম।
–‘ওকে বলে দে ওর এই বাড়িতে জায়গা হবে না, তারেক ওকে ও বাড়িতে নিয়ে যাবে আজ এসে! মহারানী যেনো রেডি হয়ে থাকেন।’
আমি সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে যাই, আমিও তো সুযোগই খুজচ্ছিলাম আপুর সাথে কথা বলার৷ কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না, এখন যেহেতু পেলাম তাই কাজে লাগানো উচিত।
–‘তুই আমার ঘরে কি করছিস?’
আপুর চিৎকারের ঘাড় ঘুড়িয়ে বেলকনির দরজার সামনে তাকে দেখতে পাই।
–‘কথা বলতে এসেছিলাম।’
শক্ত কন্ঠে বলে উঠলাম।
–‘তোর সাথে আমার কোনে কথা নেই, বের হ আমার ঘর থেকে? বের হ!
চিৎকার করে বলে উঠলো আলিশা।
–‘চিৎকার করবে না এটা ভদ্রলোকের বাসা, আর তোমার কাছে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার আছে।’
–‘বললাম না তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।’
এইবার আরোহী খানিকটা নরম হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
–‘আমার সাথে কেনো করলে আপু তোমরা এমনটা বলো তো? ‘ নিজের ছোট বোনের সাথে এইরকম করতে তোমার বিবেকে বাঁধল না?
আপু হয়তো কিছুটা নরম হলো,,
–‘আরো আরো আমি তোর সাথে এমনটা করতে চাইনি কিন্তু পরিস্থিতি আমায় বাধ্য করেছে৷ তুই আমায় ক্ষমা করে দে রে… ‘
আর কিছু বলার আগেই আলিশার চোখ যায় আরোহীর ভেজা চুলের উপর মুহুর্তেই আলিশার চোখ মুখ রক্তিম হয়ে উঠে,,,,
–‘ওহ তার মানে তোর আসল উদ্দেশ্য হলো তোর বাসর রাতের গল্প বলতে এসেছিস?’ বরের সাথে রোমান্স করে ভেজা চুল দেখাতে এসেছিস? তুই, তুই একটা বেইমান! ফালতু মেয়ে তুই!এক রাতেই সবকিছু শেষ করে এসেছিস, লজ্জা করে না বেহায়া মেয়ে অন্যের হবু বরের সাথে রাত কাটা…
আর কিছু বলার আগেই আলিশার গালে কষে একটা থা’পড় পড়ে। আরোহী নিজেও হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে একবার আলিশা তো একবার অপর পাশে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে।
–‘তোর ওই মুখ দিয়ে যদি আর একটা বাজে ওয়াড বের করেছিস আমার বউয়ের সম্পর্কে তাহলে তোর জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে।’ মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না কখনই আমি কিন্তু তোর ওই নোংরা মুখের কথা শুনে নিজেকে সামলাতেও কষ্ট হয়।
আঁধারের চিৎকারে কেঁপে উঠি আমি সাথে আপু ও৷ কিন্তু আঁধারের রাগ কমে না। ততোক্ষণে বাড়ির বাকি সবাইও চলে আসে,,,
–‘ও অন্যকারো হবু বর না নিজের বিয়ে করা বরের সাথে রাত কাটিয়েছে কথাটা ভালো ভাবে মাথায় রাখবি?’
আপুকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে আরোহীর হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে রুমে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সাথে রাগে খুব জোড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আমি ভয়ে কাঁপতে ধরি,, একটা মানুষের এতো রাগ কিভাবে হতে পারে ভাই। আর আমার বোন যা বলার আমায় বলেছে আপনার কি? ভাবতে ভাবতেই কথাটা মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। কি বলেছি মনে পড়তেই নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁপা-কাঁপি শুরু করি।
আড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখি রক্তচোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হয় যখন তখন টুপ করে গিলে ফেলবে। আঁধারকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করি কিন্তু হাসিটা ও আমার সাথে বেইমানী করছে। কিন্তু আমায় পাশ কেটে ওয়াশরুমে চলে যায় মিষ্টার তাশরিফ আধার চৌধুরী, মনে হয় নিশ্বাসটা হয়তো আটকে গেছিলো এতোক্ষণ। ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি।
আর মনে মনে ভাবি আজরাইলের হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছি।
এই লোকটাকে দেখে যতোটা ভালো মনে হয় লোকটা আসলে আস্ত একটা রাগের ড্রাম। সুন্দর ছেলেদের বুঝি রাগটা একটু বেশিই থাকে। দেখে তো ভালোই মনে হয়। উচ্চতায় ৬ ফিট হবে হয়তো। সাদা ফর্সা দেখতে, চুলগুলো জেল দিয়ে মনে হয় সবসময় সেট করে রাখে৷ ডার্ক রেড ঠোঁট, আমার তো মনে হয় লিপস্টিক দেয় হয়তো। আবার ছোট ছোট চোখ। ভাবনার মাঝেই সামনে ওনার মতো কাউকে কল্পনায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে ধিরে ধিরে এগিয়ে গিয়ে দূরত্ব কমিয়ে দাড়িয়ে গেলাম……..
#চলবে?