#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ১৬
🍁
রাতে ডিনারের পর পরই আরোহী আগে আগেই রুমে চলে আসে, আঁধার অবাক হয় বটেই কিন্তু কিছু বলে না! আরোহীর অদ্ভুত ব্যাবহারের মানে সে বুঝতে পারছে, কিন্তু নিজে থেকে আর কিছু বলবে না বলে ঠিক করে।
আরোহী চুপচাপ গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে! আঁধার নিজেও চুপচাপ ডিভানে গিয়ে বসে কিছু কাগজ পত্র নিয়ে কাজ করা শুরু করে, আরোহী উঁকি দিয়ে একপলক আঁধারকে দেখে নেয়। আঁধার তাকে একা একা আসা দেখেও কিছু বললো না সেটা ভেবেই একটু অবাক হয়ে যায়।
বেলকনি থেকেই আরোহী আঁধারকে দেখতে থাকে আর আঁধার নিজের কাজ করতেই থাকে! দেখতে দেখতে ১ ঘন্টা পার হয়ে যায় কিন্তু আঁধারের উঠার কোন নাম নেই।আরোহী বিরক্ত হয়ে যায়, তার পা ব্যাথা করছে তবুও আঁধারের উঠার কোন নামই নেই।
আঁধার আড় চোখে আরোহীর দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে থাকে, আরোহীর রাগ হয় খুব। তার মতে আঁধার ইচ্ছে করেই তাকে অপেক্ষা করাচ্ছে! আঁধারের বোঝা উচিত আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু সে বুঝেও যেনো বুঝছে না।
আরোহী বিরক্ত চোখে কিছুক্ষণ আঁধারের দিকে তাকিয়ে সোজা গিয়ে আঁধারের সামনে দাঁড়ায়। আঁধার আরোহীর অগোচরে বাঁকা হাসি দেয়! কিন্তু আরোহীর দিকে চোখ তুলে তাকায় না। আরোহী আঁধারের সামনের কাগজগুলো টেনে নিজের কাছে নিয়ে নেয়, আঁধার কিছু বলে না চুপচাপ বসে দেখতে থাকে আরোহী কি করে!
আরোহী টেবিলের উপর কাগজগুলো রেখে, লাইট বন্ধ করে দেয়! পুরো ঘরে অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়,আঁধার এবার খানিকটা অবাক হয় ঠিকই তবে প্রকাশ করে না। আরোহী নিজের কাজ করেই উল্টো দিক ঘুরে সুয়ে পড়ে। আঁধারের অনেক হাসি পায়, উপায় থাকলে হয়তো সে উচ্চস্বরে হেঁসে ও উঠতো কিন্তু এখন হাসা যাবে না, তাই পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয়।
আঁধার নিজেও চুপচাপ গিয়ে আরোহীর দিকে ঘুরে সুয়ে পড়ে, অনেকক্ষণ হয়ে যায় কিন্তু আরোহীর কোন সাড়া না পেয়ে আঁধার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে। আরোহী আঁধারের হাত সরিয়ে দেওয়ার জন্য আঁধারের হাতে হাত রাখতেই তার হাত ও আঁধারের শক্ত পোক্ত হাতের নিচে পড়ে যায়।হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট শুরু করে দিতেই আঁধার আরও খানিকটা আরোহীর কাছে চলে আসে।
–‘কি হলো এভাবে নড়াচড়া করছো কেনো?’
আঁধারের ফিসফিস করে বলার ধরন দেখে আরোহীর গাঁ শিউরে ওঠে।
–‘অসস্তি হচ্ছে আমার!’
কোন রকম বলে উঠে আরোহী। আরোহীর কথা শুনে আঁধার শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরেই বলে,,
–‘ তো?’
আরোহী ভেবাচেকা খেয়ে যায় আঁধারের তো বলাতে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আরোহীকে আমতা আমতা করতে দেখে আঁধার হুট করেই আরোহীর ঘাঁড়ে মুখ গুঁজে নেয়। আরোহী চোখ মুখ শক্ত করে চেপে ধরে থাকে।কিন্তু আঁধার তাকে আরও খানিকটা অবাক করে দিয়ে আলতো করেই চুমু দেয় তার ঘাঁড়ে,আরোহী কেঁপে উঠে।
কাঁপা কাঁপা স্বরে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না সে। আঁধার আরোহীর থেকে নিষেধ বার্তা না পেয়ে পর পর আরও কয়েকটা চুমু খেয়ে নেয় সেখানে। আরোহী নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না কেঁপে উঠছে বার বার। আঁধারকে থামতে না দেখে অনেক কষ্টে কিছু শব্দ বের করে মুখ দিয়ে বের করে,,,
–‘প্লি-জ আঁধা-র, আ-মি..’
আর কিছু বলতে পারে না সে, তার আগেই আঁধার আরোহীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,
–‘হুসসস,! ‘
আরোহীর বাকি কথাগুলো আর বলা হয় না সব কিছু গুলিয়ে যায়, আঁধার এবার আরোহীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,,
–‘ তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো বার বার আরুপাখি?’
আরোহী কিছু না বললেও মাথা নাড়িয়ে না বলে,,
–‘তাহলে তখন ওভাবে চলে আসলে কেনো?’
আঁধারের কথা শুনে আরোহী এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আঁধারের দিকে আর বলে,,
–‘ খারাপ লাগছিলো,আমি আপনাদের একসাথে সহ্য করতে পারি না আঁধার।’ সন্দেহ করতে চাই না কিন্তু বার বার করে ফেলি, আমি মনে হয় ভালো না তাই না আঁধার? তাই তো আপনার সাথে এমন ব্যাবহার করি, আমি ভালো বউ, ভালো বোন হতে পারি না আঁধার! আমি..
আর কিছু বলতে পারে না আরোহী তার আগেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। আঁধারের খারাপ লাগে,আরোহীর কষ্টটা সে বুঝতে পারে। কিন্তু আরোহী ও যে পরিস্থিতির শিকার , হয়তো সহজেই সম্পর্কটাকে মেনে নিতে পেরেছে কিন্তু তবুও সে যে মেনে নিয়েছে সেটাই অনেক। আঁধার আরোহীর চোখের পানি মুছে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,
–‘ কে বলেছে শুনি, তুমি একজন অনেক ভালো স্ত্রী বুঝলে আর বোন হিসেবে ও বেস্ট বোন!’ তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো তোমার বোনের সাথে আর সম্পর্কই রাখতো না, কিন্তু তুমি একই বাড়িতে তাকে সহ্য করছো। এসব ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ করবে না বুঝলে! আর তুমি মনে হয় আমায় নিয়ে জেলা’স তাই তো আলিশাকে আমার আসে পাশে সহ্য করতে পারো না। এতো হ্যান্ডসাম একজন বর থাকলে যে কেউ জেলা’স হবেই তাই না।
বলেই চোখ টিপ দেয়।
আঁধারের কান্ডে আরোহী হেসে ফেলে। শক্ত করে সে নিজেও আঁধারকে এবার জড়িয়ে ধরে।
আরোহীকে জড়িয়ে ধরতে দেখে আঁধার টুপ করে একটা চুমু খায় আরোহীর কপালে, আরোহীর এবার লজ্জা লাগা শুরু হয়। আঁধার আরোহীর লজ্জা পাওয়া দেখে এবার আরোহীর দুই গালে পর পর টুপ টুপ করে কয়েকটা চুমু খায়। আরোহী আঁধারের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে, আঁধার ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে আরোহীকে আরও শক্ত করে ধরে বলে,,
–‘ঘুমাও!’
আরোহী হুম বলে চোখ বন্ধ করে,,,
আলিশা আদরের ঘরে বসে আছে আদরের অপেক্ষায়, আদর ছাদে আছে এখন ও আসে নি। আলিশা মনে মনে ভাবে,, ধুর এতো এক্টিং করতে পারবো না আসলে আসুক না আসলে নাই। বিছানায় শুয়ে পরে সে,কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে ও যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই আদর রুমে আসে দেখে আলিশা ঘুমিয়ে গেছে। সে আর বিছানায় বসে ও না, আলিশার দিকে তাকিয়ে ভাবে,,,
কতো নিষ্পাপ দেখাচ্ছে এই মেয়েটিকে কিন্তু মেয়েটি যে কতোবড় একটা ফালতু মেয়ে সে ভালো করেই বুঝে গেছে। আদর ভালো করেই আলিশার অভিনয় বুঝতে পারছে, সে যে কিছু একটা করবে আদর সে ব্যাপারে একেবারে সিয়র। আলিশার নিষ্পাপ চেহারা দেখে সবাই গলে গেলেও আদর গলে যায় নি তার আগে থেকেই সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কিছু করতে পারবে না সে তাই চুপ করে আছে৷
আলিশার সাথে আদর সংসার করতে পারবে না সেটাও আদর ভালো করেই জানে, তাই সে ঠিক করেছে বাচ্চাটা হওয়া অব্দি অপেক্ষা করবে সে।
এতোদিন বাচ্চাটাকে না চাইলেও এখন মনে প্রাণে চায় বাচ্চাটা যেনো পৃথিবীতে আসে তাকে বাবা বলে ডাকে,ছোট ছোট হাত দিয়ে তার আঙ্গুল ধরে হাঁটে, আধো আধো গলায় আবদার করে। সে মনে মনে ঠিক করে নেয়, আর আরোহীর কথা ভাববে না এখন থেকে শুধু তার বাচ্চাটার কথায় ভাববে। আর আলিশা কি করে সেটা দেখার পালা এখন তার!
আর কিছু না ভেবে সোফায় শুয়ে পরে সে।
সকালে,,,
আরোহীর ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের পাশে চোখ যায় তার আঁধার নেই, এমনকি ওয়াশরুমের দরজা ও খোলা তাই ঝটপট উঠে পরে সে। ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখে ৭ টা বাজে কেবল, অবাক হয়ে যায় আরোহী এতো সকালে আঁধার গেলটা কোথায়! বেলকনিতে ও দেখে আসে কিন্তু কোথাও দেখতে পায় না আঁধারকে, তাই ফ্রেস হতে চলে যায় সে।
আলিশা ঘুম থেকে উঠেই দেখে আদর সোফায় শুয়ে আছে, আলিশা অবাক হলে ও খুশি হয়ে যায় আদরের সাথে বেড সেয়ার করতে হবে না! আদরকে এক পলক দেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আলিশা ওয়াশরুমে যেতেই আদর চোখ খুলে উঠে বসে, তার ঘুম অনেকক্ষণেই ভেঙে গেছিলো কিন্তু জীবনের কিছু হিসাব শুয়ে শুয়ে মিলচ্ছিল। আলিশাকে চোখ খুলতে দেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে ছিলো সে। আদর অবাক হলো না আলিশাকে খুশি হওয়া দেখে, কারণ সে জানতো আলিশা অভিনয়ই করছে!
আদরের আপসোস হচ্ছে, তার কিছু ভুলের জন্য হয়তো সারাজীবন তাকে আপসোসই করতে হবে। আলিশা মেয়েটিকে সে অনেকটা ভালো ও ভদ্র ভাবতো তাই তো আলিশা যেদিন সবার সামনে প্রপোজ করেছিলো হাসি মুখে মেনে নিয়েছিলো।
কিন্তু দু’দিন যেতেই যখন আলিশাকে অন্য একটা ছেলের সাথে পার্কে দেখেছিলো তখনই ভেবেছিলো আলিশা যেভাবে ওকে ব্যাবহার করছে সে ও করবে কিন্তু আলিশার এতোটা কাছাকাছি যেতে চায়নি! বন্ধুর জন্মদিনের দিন অতিরিক্ত ড্রিংক করার ফল এটা যদি ও কিন্তু আলিশা তো হুসে ছিলো সে কেনো আটকায়নি!
এসব ভাবনার মধ্যেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পায়, তাই আর কোন দিকে না তাকিয়ে নিজেও ওয়াশরুমে চলে যায়। আলিশার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আড় চোখে আলিশার দিকে একবার তাকিয়েই চলে যায় আদর।
ভার্সিটিতে,, ক্লাসে বসে আছে রাহি ও আরোহী। আরোহীকে আসার পর থেকেই অন্য রকম ভাবনায় বিভোর দেখে রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞেস করবে করবে করেও করতে পারছে না, একটার পর একটা স্যার আসতেই আছে ক্লাসে। টানা ৩ টা ক্লাসের পর রাহি সস্থির নিশ্বাস ফেলে, আরোহীকে টেনে একপ্রকার বাহিরে নিয়ে আসে।
–‘আরো এয়ার কি হয়েছে তোর বল তো?’
রাহির কথায় আরোহী ভ্রুকুঁচকে বলে,,
–‘আমার আবার কি হবে, কিছুই হয়নি তো!’
–‘দেখ মিথ্যা বলার চেষ্টা ও করবি না, তোকে আসার পর থেকেই আমি অন্য রকম দেখছি।’ কি হয়েছে বল?
–‘কিছু হয়নি রে,,,’
আর কিছু বলতে পারে না আরোহী তার আগেই গাছ তলায় নীলিমার আঁধারকে জড়িয়ে ধরে থাকা দেখেই থেমে যায়। আরোহীর দেখা দেখি রাহি নিজেও তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।আর বিরবির করে বলে,,একটাকেই এখন ও কিছু করতে পারলাম না এখন আর একটা এসে হাজির।
#চলবে?