#নীল আকাশের চাঁদনি🌸❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#অন্তিম পর্ব
নীল ওখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে এলো। এদিকে আকাশ আর চাঁদনি অনেকক্ষণ ক্যাফেতে থেকে বাড়ি গেলো। আকাশ বাড়ি এসে ওর বাবা, মাকে চাঁদনির কথা বললো। ওনারা বললো ওনারা চাঁদনির বাড়ি যাবে। উপর থেকে নীল সবটা দেখে মলিন হাসলো। ২দিন পর আকাশের বাবা, মা চাঁদনিদের বাড়ি গেলো। ওনারা আগে থেকেই বিজনেসের জন্য পরিচিত। তাই কেউ আর আপত্তি করলো না। ১৫দিন পর ওদের বিয়ের তারিখ দিলো। যেহেতু ১৫দিন পর বিয়ে তাই সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৭দিন আগে থেকে বিয়ের শপিং করছে। সব রিলেটিভরাও আসতে শুরু করেছে। দেখতে, দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলে এলো। কিন্তুু নীল খেয়াল করছে আকাশকে কেমন আপসেট লাগছে। বেশ কদিন ধরেই নীল এটা খেয়াল করছে। এতদিন কিছু বলেনি কিন্তুু আজ গায়ে হলুদ। আজকেও মুখ ভার করে আছে। তাই নীল গিয়ে আকাশের পাশে বসে বললো।”
—-” আকাশ তুই ঠিক আছিস?”
আকাশ চমকে উঠে বললো,
—-” হ্যা আমি একদম ঠিক আছি।”
নীল ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” তাহলে তোকে এমন লাগছে কেন?”
আকাশ হালকা হেসে বললো।”
—-” আরে তেমন কিছু না,
বলে আকাশ উঠে চলে গেলো। হলুদের টাইমে চাঁদনিকে সাজিয়ে স্টেজে নিয়ে এলো। পাশে আকাশ বসা মুখ ভার করে বসে আছে। চাঁদনি তেমন কিছু বললো না। সবাই এসে দুজনকে হলুদ লাগালো। হলুদ শেষে সবাই রুমে চলে গেলো। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হওয়ায় সবাই এক জায়গায় আছে।”
আজকে আকাশ আর চাঁদনির বিয়ে। চাঁদনিকে সাজানো শেষ লাল লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। গা ভর্তি গয়না, চোখে কাজল, ঠোটে লিপস্টিক। পুরো পুতুলের মতো লাগছে চাঁদনিকে। চাঁদনিকে স্টেজে নিয়ে যাবে এমন সময় শুনলো আকাশকে পাওয়া যাচ্ছে না। চাঁদনি থমকে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো। সবাই মিলে অনেক খুজেও আকাশকে পেলো না। পুরো কমিউনিটি সেন্টারের মানুষ স্তব্ধ হয়ে আছে। বাইরের লোক তো ইতিমধ্যে কানাঘুষাও শুরু করে দিয়েছে। চাঁদনির বাবা রবিন চৌধুরীকে গিয়ে বললো,
—-” এসব কি হচ্ছে? আকাশ কোথায়?”
রবিন চৌধুরী কি বলবে বুঝতে পারছে না। নীলও বুঝতে পারছে না আকাশ কোথায় যেতে পারে? সবাই বলছে আকাশ চাঁদনিকে বিয়ে করতে চায় না তাই কোথাও চলে গিয়েছে। চাঁদনির বাবার প্রেশার বেড়ে গিয়েছে। রবিন চৌধুরী হঠাৎ বলে উঠলো।”
—-” নীলের সাথে চাঁদনির বিয়ে দিতে চাই আমি,
নীল অবাক হয়ে বললো।”
—-” ড্যাড কি বলছো?”
রবিন চৌধুরী নীলের হাত ধরে বললো,
—-” তুই চাঁদনিকে বিয়ে কর নীল। নাহলে সবাই আমাকে আর চাঁদনির বাবাকে কথা শোনাবে। আর একটা মেয়ের বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙে যাওয়া মানে সমাজের সবাই তাকে কথা শোনায়।”
নীলের বাবা চাঁদনির বাবার হাত ধরে বললো,
—-” আমি জানি আকাশ ঠিক করেনি। কিন্তুু আপনার মেয়ে আমার মেয়ের মতো। আকাশের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই ওকে মেয়ের স্থান দিয়েছি। আমি চাইনা কেউ ওকে কথা শোনাক। বা আমার মেয়েটা কষ্ট পাক। তাই বলছি ওকে নীলের সাথে বিয়ে দিন। আমরা ওকে আমাদের বাড়ি মেয়ের মতো রাখবো কথা দিচ্ছি।”
চাঁদনির বাবা অনেক ভেবে বললো,
—-” কিন্তুু চাঁদনি কি রাজী হবে?”
চাঁদনির মা এগিয়ে এসে বললো।”
—-” আমি ওকে রাজী করাবো,
চাঁদনির মা চাঁদনির কাছে গেলো। চাঁদনি বিয়ের সাজে স্থির হয়ে বসে আছে। চাঁদনির মা গিয়ে চাঁদনির হাত নিজের মাথায় ধরে বললো।”
—-” তুই আকাশকে বিয়ে করতে চেয়েছিলি আমরা রাজী হয়েছিলাম। কিন্তুু আজকে বিয়ের দিন এসে ও কোথায় চলে গিয়েছে। সবাই বলছে ও তোকে বিয়ে করতে চায় না তাই চলে গিয়েছে। আর তোর বাবা এসব শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন তোকে নীলের সাথে বিয়ে দিতে চায়। তোর এখন আমাদের কথা রাখতে হবে। তুই নীলকে বিয়ে কর চাঁদনি তোর বাবাকে বাঁচা,
চাঁদনি শুধু একটা কথা বললো।”
—-” তোমরা যা বলবে আমি তাই করবো,
চাঁদনির মা গিয়ে সবাইকে বললো। নীল এখনো এসব মানতে পারছে না। যদিও বা নীল চাঁদনিকে ভালবাসে। কিন্তুু আকাশ কোথায় এটা নীলকে ভাবাচ্ছে। একটুপর এই স্টেজেই চাঁদনির বিয়ে হলো তবে নীলের সাথে। চাঁদনি পাথরের মতো শুধু যে যা বলছে সেটাই করছে। নীলদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ও চাঁদনি কাঁদেনি। নীল বুঝতে পারছে চাঁদনি অনেক আঘাত পেয়েছে। চাঁদনিকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসিয়েছে। এমন সময় নীলের কাজিনের ছোট ছেলে টিভি অন করলো। আর তাতে যা দেখলো সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। হাইওয়েতে একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। গাড়িটা হাইওয়ে থেকে ছিটকে খাদে পড়ে ব্লাস্ট হয়ে গিয়েছে। আর গাড়িটা বিজনেস টাইকুন রবিন চৌধুরীর ছেলে আকাশ চৌধুরীর। রাহেলা চৌধুরী এটা শুনেই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। নীল ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। চাঁদনিও শুধু আকাশ বলে একটা চিৎকার করলো। মুহূর্তেই বিয়ে বাড়ি কান্নায় পরিনত হলো।”
______________
_____বর্তমান_____
চাঁদনি চোখ মুছে বললো,
—-” এই ২বছরে নীল কখনো আমাকে স্পর্শ করেনি। কখনো আমার কাছে স্বামীর অধিকার চায়নি। সবসময় সব বিপদ থেকে আমাকে আগলে রেখেছে। কখনো আমার চোখে পানি আসতে দেয়নি। তাই আমি নীলকে ঠকাতে পারবো না। কিন্তুু তোমাকে কি বলবো?”
এরমাঝে আকাশের ভয়েস শুনলো। আকাশ চাঁদনিকে ডাকছে। চাঁদনি সাহস করে বেরিয়ে এলো। আকাশ আর নীল একসাথে দাড়ানো। নীলের মুখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। আকাশ চাঁদনির হাত ধরে নিচে নিয়ে গেলো। নীলও আকাশের পিছনে গেলো। ড্রয়িংরুমে এসে আকাশ বললো।”
—-” আমি সবাইকে একটা কথা বলতে চাই। আর এটা চাঁদনির জানাটা বেশী দরকার। চাঁদনি হয়তো এখনো আমার জন্য বিয়ে করেনি। তাই এই বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে। কিন্তুু চাঁদনির রাইট আছে নতুন করে সব শুরু করার। তার কারণ, তার কারণ আমি বিয়ে করেছি,
সবাই অবাক হয়ে বললো।”
—-” কি?”
আকাশ চুপ না করেই বললো,
—-” হ্যা আর সেটাও ২বছর আগে। যেদিন চাঁদনির সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। চাঁদনি আমার জীবনে আসার আগে আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসতাম। ভুল বুঝে আমি ওকে দুরে সরিয়ে দেই। তার ১বছর পর আমি চাঁদনিকে দেখি। আমার ওকে ভাল লাগে আর আমি ভাল লাগাকে ভালবাসা ভেবে ভুল করি। ভেবেছিলাম আমি চাঁদনিকে ভালবাসি। কিন্তুু আমি কখনোই জিয়াকে ভুলিনি। চাঁদনির সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেই আমি জানতে পারি জিয়া শুধু আমাকে ভালবাসে। আমি দোটানায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি কি করবো ভেবে। কিন্তুু তারপর জানতে পারি নীলও চাঁদনিকে ভালবাসে। আর শুধুমাএ আমার জন্য ও চাঁদনিকে ভুলে যেতে চাইছে। আমি বুঝে গিয়েছিলাম নীল পারবে চাঁদনিকে ভাল রাখতে। তাই বিয়ের দিন আমি চলে যাই। জিয়াকে বিয়ে করি কাজী অফিসে। কিন্তুু আমি আরো বড় একটা ভুল করেছি। সেদিন গাড়িটা আমি ইচ্ছে করে খাদে ফেলেছিলাম। জিয়াকে নিয়ে আমি আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম। যাতে তোমরা ভাবো আমি মৃত। আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”
হঠাৎ করে চাঁদনি হেসে দিলো। আকাশ সহ সবাই চাঁদনির দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনি হাসতে, হাসতে বললো,
—-” তুমি কি করে ভাবলে আকাশ? তোমার জন্য আমার জীবন থেমে থাকবে। ওই দিন সবাই আমাকে বলেছিলো। তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না বলেই চলে গিয়েছো। আর তোমাকে কে বললো আমি বিয়ে করিনি? এই যে তোমার ভাই নীল আমি ওর ওয়াইফ। ইয়েস তোমার সাথে বিয়ে না হয়েও আমি মিসেস চৌধুরী। আর ঠিকই বলেছো নীল পারে আমাকে ভাল রাখতে। এই ২বছর আমি নিজেকে অপরাধী ভেবেছি। যে তুমি এক্সিডেন্ট করেছো আর আমি নীলকে বিয়ে করে নিলাম। ওকে স্বামীর অধিকারও দেইনি। এমনকি ও কখনো স্বামীর অধিকার চায়নি। আরে একবার সামনে এসে বলে দিতে। এত বড় মিথ্যে নাটক সাজানোর কি দরকার ছিলো? আর না তোমাকে ভেবে নীলকে আমি আর কষ্ট দেবো না। এবার থেকে আমি ওর সাথেই ভাল থাকবো।”
নীল আকাশের সামনে দাড়িয়ে বললো,
—-” ২দিন আগে তোকে দেখেছিলাম রোডে। ভেবেছিলাম হয়তো চোখের ভুল। তাই সেদিকে পাত্তা দেইনি। কিন্তুু আজ যখন তুই এলি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। যে তুই চাঁদনিকে কেড়ে নিবি না তো? কিন্তুু তুইতো চাঁদনিকে ঠকিয়েছিস। ইনফ্যাক্ট আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছিস।”
রাহেলা চৌধুরী কাঁদতে, কাঁদতে বললো,
—-” এটা ঠিক করিসনি আকাশ ঠিক করিসনি।”
সবাই নিজের রুমে চলে গেলো। আকাশ ধপ করে বসে পড়ে বললো,
—-” আমি জানি আমি ঠিক করিনি? আমি কি কোনদিন ক্ষমা পাবো না?”
_______________
১০বছর পর।”
পুরো চৌধুরী বাড়ি সাজানো হয়েছে। একটুপর দুই কাপল নেমে এলো। আর তাদের সাথে তাদের ছেলে-মেয়ে। নীল আর চাঁদনি, আকাশ আর জিয়া। আজকে ওদের দুই ভাইয়ের বিবাহ বার্ষিকি। নীলের এক ছেলে এক মেয়ে। আকাশেরও এক ছেলে এক মেয়ে। নীলের ছেলের নাম নীলাদ্র আর মেয়ের নীলাদ্রি। আকাশের ছেলের নাম জায়ান মেয়ের নাম বৃষ্টি। চারজন একসাথেই কেক কাটলো। আকাশকে সবাই ক্ষমা করে দিয়েছে। আকাশ যখন অপরাধ বোধে ভুগতে, ভুগতে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো প্রায়। তখন আর কেউ পারেনি ওর থেকে দুরে থাকতে। কিন্তুু চাঁদনি প্রায় ৩বছর ওর সাথে কথা বলেনি। ৩বছর পর আকাশের প্রথম ছেলে হয়। আর সেখান থেকেই কথা বলে। আকাশের ছেলেকে কোলে নিতে আকাশের রুমে যেতো। জিয়ার সাথে কথা বলতো। একদিন আকাশের সাথেও কথা বলে। এখন আর সে সব মনে নেই কারো। তবে আকাশকে ভেবে চাঁদনি আজও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কারণ প্রথম ভালবাসা আকাশই ছিলো। নীলও চাঁদনিকে কিছু বলে না। বরং নীল চাঁদনিকে সম্মান করে। কারণ চাঁদনি যদি নিজের প্রথম ভালবাসা আকাশকে ভুলে যেতো। তাহলে নীলের মনে প্রশ্ন জাগতো। যদি চাঁদনি প্রথম ভালবাসা ভুলতে পারে তাহলে তো ওকেও ভুলতে পারে তাই নয় কি? চাঁদনি মনের এক কোনে আকাশকে রাখলেও এখন চাঁদনির পুরো মন জুড়ে নীলের বসবাস,
রাতে চাঁদনি ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে। এমন সময় নীল এসে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। চাঁদনি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইলো। নীল মুচকি হেসে বললো।”
—-” অনেক সাধনার পরে তোমাকে পেয়েছি। এখন আর বলতে বাধা নেই। তুমি শুধু #নীলের_চাঁদনি,
চাঁদনি হেসে ঘুরে নীলকে জড়িয়ে ধরলো। নীলের বুকে চুপটি করে ঘাপটি মেরে আছে চাঁদনি। সারাজীবন এভাবে সুখে থাকুক ওরা।”
#সমাপ্ত…
“জানিনা কেমন হলো। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর সবাই ভাল থাকবেন।