#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৭
রেবেকা বেগম নিজের স্বামীর কথা কিছুই বুঝতে পারলেননা। তাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,আমি তোমাকে কত করে বললাম আরেকটা বিয়ে করে নাও। দেখবে তুমি বাবা হবে। কিন্তু আমার কথা শুনলে না!
‘বিয়ে কেন করতে হবে রেবেকা! আমার একটা মেয়ে আছে, জানো মেয়েটা হয়তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে!
‘কি বলছো তোমার মেয়ে আসবে কোথা থেকে!
‘আছে রেবেকা। আমার মেয়ে আছে আমার রাজকন্যা মানহা।
রাহাত সাহেবের কথা শুনে রেবেকা বেগম বলেন, তুমি আমাকে কনফিউজড কেন করছো! আজ ত্রিশ বছরের সংসার আমাদের।
‘আজকে তোমাকে যা বলবো, সেটা শোনার পর, হয়তো আমার প্রতি ঘৃণা আসবে, তবে সত্যি এটাই যে তোমার আগে আমার আরো একটা বউ ছিলো! আজ তেইশ বছর হবে সে পৃথিবীতে নেই। তবে তার রেখে যাওয়া আমার আর তার সন্তান এই পৃথিবীতে আছে। যাকে অস্বীকার করে চলে এসেছিলাম।
‘তার মানে তোমার একটা বউ থাকতে আমাকে বিয়ে করেছিলে!
‘হুম। আমি চট্রগ্রাম থাকতাম চাকরির সুবাদে। তোমাকে আমার পরিবার মানবে না সেটা বলে, কখনো আমার বাড়িতে নিয়ে যাইনি। মাহনুর ছিলো আমার প্রথম প্রেম। তাকে বিয়ে করে সুখেই ছিলাম। কিন্তু চট্রগ্রাম এসে তোমাকে দেখে তোমার রুপের মোহে আটকে যেয়ে, মাহনুর কে ধোঁকা দিতে থাকলাম। মাহনুর ছিলো শ্যাম বর্ণের মায়াবি মেয়ে। আমি তার মায়া ছেড়ে তোমার মোহে আটকা পরলাম। তুমি নিজেই আমাকে প্রপোজ করেছিলে। ভাবলাম এখানে বিয়ে করলে ঢাকাতে কেউ কিছু জানতে পারবে না। তাই সবটা গোপন রাখলাম। মাহনুর যখন প্রেগন্যান্ট তখন ওর অবস্থা ভালো ছিলো না৷ ডাক্তার বলে ছিলেন,প্রেগন্যান্সিতে ওর মৃত্যু ঝুঁকি আছে, তবুও ও মা হবেই। আমি তখন তোমার নেশায় বুদ তাই অতো ঘাটিনি। মাহনুর মা’রা গেলো মেয়েটাকে চার বছরের রেখে। ওই মেয়েকে জন্ম দেয়ার পর থেকেই নানা রোগ বাসা বেঁধেছিলো মাহনুরের শরীরে।
আমি নিষ্ঠুরের মত মাহনুর কে কবর দিয়ে মেয়েটাকে অস্বীকার করে চলে আসলাম। আজ এতো বছরে আমাকে বাবা ডাকার কেউ আসলো না। কেউ বাবা বলে বুকে ঝাপিয়ে পরলো না। কোন আবদার করলো না। কি করে করবে, এসব যে আমার প্রাপ্য আমার শাস্তি। না হলে সন্তান থাকতেও বাবা ডাক শোনার জন্য কেমন বুকটা খা খা করে। আজ তোমাকে কথাগুলো বলে, খুব হালকা লাগছে।আমাকে ক্ষমা করতে বলবো না। কারণ ক্ষমার যোগ্য কোন কাজ আমি করিনি।
রেবেকা বেগম নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,মেয়েটাকে খুঁজে বের করো, এই পৃথিবীতে বাবা,মা’ ছাড়া বড় হওয়া সন্তানরাই জানে এই সমাজ কত কঠিন! মেয়েটা না জানি এতোদিন কত কি সহ্য করেছে! আমার কাছে ক্ষমা না চেয়ে তার কাছে ক্ষমা চাও।
✨আপনি ছিলেন আমার সুখ পাখি, জীবনের প্রথম প্রেম,প্রথম অনূভুতি, প্রথম ভালোবাসা।
কিন্তু দিনশেষে আপনি হলেন আমার বিষাদসিন্ধু।
সব পরিনয় সুখের হয়না। আমি ফিরবো না। ফেরার সব পথ বন্ধ।
‘যদি আপনি ভুল এটা জানার পরে আপনার কাছে ফিরি, তবে সেটা হবে নিজের বোনের সাথে অন্যায়!
যদি আপনি সঠিক এতোদিন পরে এটা জানার পরে আবার ফিরে যাই,তাহলে আমার ভালোবাসা মাটি হয়ে যাবে।সেখানে নাম লেখাবে স্বার্থ!
আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবেননা প্রিয়, আমি আর ফিরবো না। আপনি কখনো আমার কাছে অপ্রিয় হবেননা। আপনার নাম যত বার স্বরণে আসবে, ততবার শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসা ফুটে উঠবে। আপনি আমার না হওয়া আমার একান্ত নিজের মানুষ।
বিশাল এক টেক্সট লিখে সাথে সাথে ব্লক করে দিলো মিফতাজকে।
মানহার পাঠানো টেক্সটের দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি সবার চেয়ে আলাদা আমার প্রিয়তমা। তাই হয়তো তোমাকে উন্মাদের মত ভালোবাসি।
‘ফিরতে চাইলে কত পথ খুলে যায়! সব নিয়ম ভেঙে দিয়ে ভালোবাসি বলা যায়।
তবে তোমাকে আমি বাধ্য করবো না। আমার মন সায়রের পারে তোমার বসবাস রবে আজীবন ধরে।
✨রাতের সব আঁধার কেটে নতুন দিনের আলো ছড়িয়ে পরছে। পাখির কিচিরমিচির ডাক জানান দিচ্ছে এক নতুন দিনের এক নতুন সম্ভাবনার।
আদুরী আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো, নিজের অজান্তেই ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অজু করে বের হলো। জায়নামাজ পেতে ফজরের সালাত আদায় করলো। নামাজ শেষ কিচেনে যেয়ে নিজের জন্য কফি করে আনলো, বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর যেনো দুঃখ গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। কফি শেষ করে আলমারির সামনে এসে দাঁড়ালো একে একে প্রায় সব ড্রেস নামানো শেষ, কিন্তু কোনটাই মন মত হচ্ছে না। কি মুশকিল। হতাশ হয়ে বেডে বসে পরলো, হুট করে মনে পরলো। আদির দেয়া একটা তাঁতের গোলাপি শাড়ীর কথা৷ চট করে সেটাই পড়ে নিলো। হাতে মেচিং চুড়ি কানে ঝুমকো। আর চুলে খোপা করে নিলো। আজ যদি সব ঠিক হয়ে যায় তবে এই শুন্য খোঁপায় বেলীফুলের গাজরা শোভা পাবে।
ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চোখে গাড়ো কাজল। নিজেকে কয়েকবার আয়নায় দেখে নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
সকাল সাতটা বাজে, গন্তব্য বেশি দূরে নয়। বুড়িগঙ্গা নদির ওপার দক্ষিণ পাঁনগাও। ওইদিকে এখন বেশ মনোরোম পরিবেশে।
আদিলের বাসা পাঁনগাও। আদিল আগে থেকেই এসে অপেক্ষা করছে। রিকশায় আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারছে না। এ যেনো তার সেই চার বছর আগের পুরোনো প্রেমিকা। নিজেকে আদিলের একটু বুড়ো বুড়ো লাগছে।
রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ধীর পায়ে আদিলের পাশে এসে দাঁড়ালো।
আদিল শান্ত স্বরে বললো,তোমার কাজল কালো চোখ দু’টো আজ ঠিক আগের মতই আমাকে আকর্ষিত করে, তোমার ঠোঁটের কোনের ওই সামান্য হাসি আমার হৃদয়ে সুনামি বয়ে আনছে।
আদুরী নিজের জড়তা কাটিয়ে নরম স্বরে বলে,এভাবে প্রশংসা করলে আবার টিনেজার হয়ে যেতে ইচ্ছে করবে! আমরা এখন এডাল্ট সো এডাল্ট প্রেম করতে পারি। বাচ্চাদের মত প্রেম কি আমাদের মানায়!
‘আদি শব্দ করে হেসে বলে,শুনেছিলাম সুন্দরী মেয়েরা বোকা থাকে! আজ চোখে দেখে নিলাম। মিস এডাল্ট, আপনি কি জানেন এডাল্ট প্রেম কাকে বলে!
‘কেনো জানবো আমি তো জেনেই বলেছি।
‘ওহহ আচ্ছ,তা তোমার এতো উন্নতি কবে হলো?
‘কি আশ্চর্য এতোদিন পরে এসেছো। তাও বিরক্ত করবে!
‘উঁহু একদম না।এখন মিস আদুরী আমার সাথে এডাল্ট প্রেম করবে। আমি তা উপভোগ করবো।
‘তাহলে চলো ঘাসের উপর বসি।
‘বসলাম এবার শুরু করো!
‘তুমি চোখ বন্ধ করো,নয়তো আমার লজ্জা লাগবে।
‘এই তুমি করবেটা কি শুনি! আবার চোখ ও বন্ধ করতে বলছো!
‘আহা এতো কথা না বলে, যা বলছি তাই করোতো!
‘আচ্ছা এই করলাম চোখ বন্ধ।
‘ এবার শুনো, দেখো আমি কতদিন তোমাকে ভুল বুঝলাম তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
‘আর হ্যা শুনো আগামীকাল বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসো। কতদিন ধরে বউ সাজার সখ!
‘আদিল ফট করে চোখ খুলে বলে, এই তোমার এডাল্ট প্রেম!
‘তা নয়তো কি! এটা হলো ন্যাকামি বিহীন প্রেম। আর এটাকেই এডাল্ট প্রেম বলে।
‘এটা তোমাকে কে বলেছে!
‘কে বলবেে,আমি নিজেই গল্প পড়ে শিখেছি।
‘এই এদিকে আসো তো।
‘আবার কোনদিকে যাবো কাছেই তো আছি কি বলবে বলো!
‘আদিল টুপ করে আদুরী কপালে চুমু খেয়ে বলে, তুমি একদম আমার আগের আদুরানী আছো। একটুও পাল্টাওনি! সারাজীবন এমন থাকবে তো!
আদুরী এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।আদিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। চোখের পানি নিরবে কত কথা বলে দিচ্ছে!
#চলবে