নীলাম্বরে জোছনা পর্ব-১৫

0
660

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-১৫

“বহমান সময়ের শ্রোতে কেটে গেছে বছর খানিক সময়।
মিফতাজ আর আরহাম বসে আছে মুখোমুখি। আরহাম অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মিফতাজের মুখ থেকে সবটা শোনার।
মিফতাজ তাচ্ছিল্য হেসে বলে,এখন আমি কিছুই বলবো না। যার জন্য বলবো। সে যখন নেই তখন এসব কথা বলে আর কি লাভ!

‘তবুও আমি সবটা জানতে চাই।
‘আমি তো বলবো না একটা শব্দ ও না বললে কি শুনবে তুমি!
‘এভাবে হেয়ালি করার মানে হয় না তাজ!
‘আচ্ছা সত্যটা জানার পর তোমার জীবনে কি পরিবর্তন আসবে! সেটা শুনি! যদি আয়াতের সাথে খারাপ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে ওকে ছেড়ে দেবে?

‘এতো কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা বলো। আমি কি করবো সেটা আমি বুঝে নেবো।
‘সেম ব্রো আমি যা করবো সেটা আমি বুঝে নেবো। আমাকে জোড় করতে পারবে না।
‘তুমি কি চাও এতোদিন পরে কেসটা আমি রি ওপেন করি!
‘সেটা একান্তই তোমার ইচ্ছে আমি কি বলবো!

‘মিফতাজ আমি শুধু সত্যিটা জানতে চাই!

‘যে সত্যি আর কিছু পাল্টাতে পারবে না সে সত্যি জেনে আর কি হবে? আচ্ছা আমি যাচ্ছি আজ নাটোর যাবো।

‘তোর কি মনে হয়, এভাবে জেলায় জেলায় ঘুরে তুই মানহাকে খুঁজে পাবি!

‘জানিনা পাবো কি না! তবে খুঁজবো যাতে বিষন্ন বেলায় নিজেকে নিজে স্বান্তনা দিতে পারি, আমি আমার৷ প্রিয় মানুষটাকে পাগলের মত খুঁজে ছিলাম।

‘মামা, মামির কথা তো একবার চিন্তা করবি!
‘আমি কি মরে গেছি?বেঁচে আছি তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি।সমস্যা কোথায়?
‘কেন করছিস এমন হেয়ালি? তুই বাংলাদেশে পাবিনা খুঁজে!

‘মানে আমাকে বল তাহলে কোথায় পাবো?

‘আমি বলতে পারবো না।

মিফতাজ তর্ক না করে বের হয়ে গেলো। জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে, যখন তর্ক করতে ভালো লাগেনা। জোড় করতে ইচ্ছে হয় না। সবাইকে সবার মত ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে।

✨কানাডার ভ্যাঙ্কুউভার শহরের এক এপার্টমেন্টের দ্বিতীয় তলায় বিলাসবহুল রুমের খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মানহা। ‘ভ্যাঙ্কুউভার শহর টাকে রেইনকুভারও বলে,এখানে বৃষ্টি আর শীতের সমষ্টিগত ওয়েদার। রোদের দেখা মিলে না বললেই চলে।
বাসাগুলো সারিবদ্ধ করা। সামনে একটু ওয়ালক স্পেস তারপর রাস্তা।রাস্তার দুধারে ডেইজি ফুলগাছ+দেবদারু গাছ। যা শহরটাকে আরো মুগ্ধতা দিয়েছে।
বাসা থেকে ২০মিনিটের দূরত্বে গ্যারি পয়েন্ট পার্ক নামে একটা পার্ক আছে। বিকেলের সময়টা মাঝে মাঝে সেখানেই কাটায়,মানহা।
ডিপ কোভ নামে একটা লেক আছে বাসার পিছন দিকে।বলতে গেলে জায়গাটা মানহার ভিষণ পছন্দ হয়েছে৷ কিন্তু যে মানুষের জীবনের ছন্দ হারিয়ে গেছে। তার কাছে সব কেমন সাদা মাটা! সব সময় মনে হয়!
‘কি যেনো নেই কি যেনো শুন্যতা। সারাদিন ঘিরে থাকে কব দারুণ বিষন্নতা!
দূর আকাশের পানে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে, দু’চোখের কোণ বেয়ে টুপটুপ অশ্রু গড়িয়ে পরছে। কখনে কখনো হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিচ্ছে তো কখনো গাল বেয়ে পরছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,আচ্ছা মানুষতো কিছু না কিছু পায়! তাহলে আমি কি পেলাম?
হাঠাৎ কেউ মানহার কাঁদে হাত রাখলো। মানহা যানে মানুষটা কে। হারলি কানাডিয়ান ভাষায় বললো,কেঁদো না। সময় সময় তুমি কেন কাঁদো?

মানহা হারলিকে ইংরেজিতে বললো,আমার কাছে নিজের বলতে কিছু নেই হারলি। আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমি ছেড়ে চলে এসেছি! জানিনা সে কেমন আছে? সে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো।

‘তাহলে কেনো ছেড়ে আসলে?

‘মানহা হারলি কে বললো সকালের নাস্তা করেছো?

‘আসো একসাথে করি।তুমি বসো আমি পাস্তা আর কফি করে আনি।
মানহা নিজের মোবাইলে ডাটা অন করলো। নিজের আজ তিনমাস পরে নিজের আইডি লগইন করলো। মিফতাজকে আগেই ব্লক করে দিয়েছে আইডি থেকে।

নিজের একটা আধো ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন দিলো।

‘তোমার শহরে রাত্রি গভীর, আমার শহরে কেবল ফুটলো দিনের আলো! তুবও মনের আকাশ তোমার শহরের মতই হয়ে আছে আঁধার কালো!
পোস্ট করেই বের হয়ে আসলো। এই আইডির সব পোস্টে মিফতাজের রিয়েক্ট কমেন্ট থাকতো।
মোবাইল রেখে চুলায় পানি বসালো।পানি বসিয়ে রেখে রেডিও অন করলো। হেই আমি রাজ রাজ আমি আছি আপনাদের সাথে। আর এ সপ্তাহের জীবনের গল্পের জন্য রেডি তো সবাই। এ সপ্তাহে আমাদের সাথে থাকছে এডভোকেট মিফতাজ আয়মান। তো তার জীবনের কহিনী শুনতে কান রাখুন আমাদের রেডিও স্টেশনে। সো রেডি তো আগামীকাল রাত বারোটায়। মিফতাজ আয়মান নামটা শুনেই মানহার বুকের ভেতর কেমন তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলো। সাথে সাথে বসে পড়লো ফ্লোরে। কিছু সময় চোখ বন্ধ করে বসে থাকলো।
হারলি এসে বলো,আর ইউ ওকে?

‘মানহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, হ্যা আমি ঠিক আছি। তুমি বসো পাঁচ মিনিট লাগবে আমার।

✨আয়াত এখন সুস্থ। সে মহা আনন্দে আছে তবে মানহা কেন চলে গেলো কানাডা সেটা বুঝতে পারলো না। আয়াত রয়েল ব্লু কালারের শাড়ী পরেছে। সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্টস। চোখে টানা টানা করে কাজল দিলে। চুলগুলে ছেড়ে দিলো। পার্স নিয়ে বের হয়ে গেলো প্রিয়তমর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। রিকশায় করে যাচ্ছে আয়াত। তারমনে কতশত রঙিন প্রজাপতি উড়ছে। রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ পরলে রাস্তার পাশে বসে থাকা এক যুবকের উপর। আয়াত মনে মনে ভাবলো একবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসি। কিন্তু এর মধ্যেই আয়াতের ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই আরহামের কন্ঠ কানে বেজে উঠলো।

‘প্রাণপাখি আর কত অপেক্ষাক করবো?

আয়াতের হাসির শব্দ শুনলো আরহাম।
আরহাম বলে,তুমি হাসছো আমার ভিনদেশী!
‘উঁহু আমি কাঁদছি। তবে এ কান্নায় শব্দ হলো হৃদয় কাঁড়া আর বর্ণ হলো আফিম!

‘ মিস হৃদয় হরিণী আপনি একবার দৃষ্টির সীমানায় আসুন, আপনার বর্ণময় আফিম পান করবো!

আয়াত কল কেটে দিলো। সামনে তাকিয়ে দেখে রিকশা অনেক দূর চলে এসেছে।আয়াত মনে মনে বলে, আপনি না থাকলে দুনিয়ায় আয়াত আর মানহার অস্তিত্ব থাকতো না। আপনাকে খুঁজে বের করবোই!


অহনা বসে আছে আদরের রুমে, আদর বললো, আপু আদিলের কথা ছাড়া অন্য সব কথা আমি শুনবো। কিন্তু আদিলের কোন কথা আমাকে বলবেননা, আপনার কাছে অনুরোধ রইলো।

‘দেখো আমি যা বলতে চাই সেই কথাগুলো একবার শুনো। আমি কারো হয়ে সাফাই গাইবো না। আমার মনে হলো কথাগুলো তোমার জানা দরকার, তাই বলতে চলে আসলাম৷

‘আচ্ছা আমি শুনবো, কিন্তু আপনি কোন অন আবদার আকামে করবেননা। ওয়াদা করেন!
‘আমি শুধু কথাগুলো বলবো, তোমাকে কোন আবদার করবো না।
দেখো আদিল আমার বড় ভাই আমাদের পরিবারের বড় ছেলে। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবার পরে সব দ্বায়িত্ব আদিলের। আমরা চার ভাই বোন। আদিলের যখন বাহিরের দেশে চাকরির অফার আসলো। ও তখন তোমাকে বলেছে। কিন্তু তুমি কি বলেছিলে,ডাল ভাত খাবো তবুও তুমি দেশের বাহিরে যেও না। তোমাকে কোন ভাবেই বোঝাতে পারেনি।
শেষে বাধ্য হয়ে আমার কাজিন শিফার সাথে ওর প্রেম আছে এটা বলে, তোমার সাথে ব্রেকআপ করেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের কাছে, নিজের ভালোবাসা, স্বপ্ন এসবের উর্ধ্বে পরিবারের দ্বায়িত্ব। নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছে। আমি এসব বলতে আসতাম না। দেখলাম দু’জনেই কষ্ট পাচ্ছো। আদি তো কখনো বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে। আর তুমিও বিয়ে করার কথা এখনো ভাবছো না! তাই বললাম কথাগুলো। আমার ভাইটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে