#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১
মানহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, মিফতাজ মানহার আরো কাছে আসলো মানহার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, তুমি অসুস্থ তাজ।
‘জান একবার আমার দিকে দেখো একবার তোমার হাতটা আমার হৃদয়ে রাখো। একবার আমার ভালোবাসাকে অনুভব করো।
‘মানহার দু’চোখ ভিজে উঠলো সেও তো ভালোবাসে। ভালোবাসা বেছে নিলে নিজের বোনের প্রতি অন্যায় করা হবে। আর ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিলে নিজের প্রতি অন্যায় করা হবে।
তাজ আর একটু কাছে এসে মানহাকে জড়িয়ে ধরলো।
তাজের স্পর্শ পেয়ে মানহা ঘাবড়ে যেয়ে বলে, তোমার শরীরের তো জ্বর!
‘জান আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।আমি তোমাকে সবটা বলছি সেদিন রাতে কি হয়েছিল।
‘মানহা তাজের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে, হুস একদম চুপ এখন চুপচাপ বেডে শুয়ে রেস্ট নাও কথা শোনার অনেক সময় আছে।
তাজ নিজের হাতটা মানহার হাতের উপর রেখে বলে,প্লিজ আমাকে হারাতে দিও না।একবার হারিয়ে গেলে আমাকে আর ফেরাতে পারবে না। আমি এই পৃথিবী থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো।
‘বললাম না একদম কথা নেই আসো আমার সাথে মানহা তাজের হাত ধরে বেডে নিয়ে আসলো। তুমি এখানে শুয়ে পরো আমি তোমার জন্য খাবার আর মেডিসিনের ব্যবস্তা করছি।
মানহা রুমের বাহিরে এসে সার্ভেন্টকে বলল খাবার আর মেডিসিন এনে নিতে। তারপর একটা বাটিতে পানি আর একটা পাতলা কাপড় নিয়ে আসলো। মিফতাজ তখন জ্বরে বুদ। মানহা তাজের পাশে বসলো। মায়াভরা দৃষ্টিতে তাজের দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা পৃথিবীতে এতো সুদর্শন ছেলে থাকতে এই একটা ছেলের চেহারায় মানহার দৃষ্টি কেন আটকে যায়? কেন বারবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কেন ইচ্ছে করে হুটহাট জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে।
কিছু সময় তাকিয়ে থেকে নিজের চোখের কোনের জলটুকু হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে তাজের কপালে জল পট্টি দিতে থাকে।
তাজ চোখ খুলে মানহার হাত ধরে নিজের বুকের বা পাশে রেখে বলে,জান আমার জ্বর এখানে তুমি সেবা করলে এখানে কর, এই জায়গাটা সুস্থ করে দাও জান।
‘মানহার চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে মিফতাজের বুকের উপর পরলো। মিফতাজ নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানহার দিকে। কে যানে কি আছে ওই চোখে! বারবার কেন হারিয়ে যায় তাজ!
মানহা হুট করে তাজের বুকের বা পাশে নিজের মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।কাঁদতে কাঁতদে অস্ফুট স্বরে বলে,কেন এতো মানুষ থাকতে তোমাকে সেই অপরাধের অপরাধী হতে হলো! আমি কি করবো বলো, নিজের বোনের অপরাধীকে শাস্তি দেবো,নাকি নিজের ভালোবাসার মানুষকে আঁকড়ে ধরবো।
তাজ আর কিছু বলবে তার আগেই জ্ঞান হারায়। মানহা তাজের কোন রেসপন্স না পেয়ে দ্রুত সরে এসে তাজ তাজ বলে ডাকতে লাগে। তাজের কোন সাড়া না পেয়ে বাহিরে এসে সার্ভেন্টদের ডেকে আনে। মিফতাজের অবস্থা দেখে সবাই মিলে মিফতাজকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
মিফতাজকে দেখে ডাক্টাররা রাগারাগি শুরু করে দেয়। মানহা চুপ করে সব সহ্য করে নিচ্ছে। মানহার মাথাও ঘুরছে, চোখে কেমন ঝাপসা দেখছে। দু’দিন ধরে না খাওয়া আর টেনশনে শরীর দূর্বল হয়ে পরেছে। কোনমতে একটা চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে রাখলোর।চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে।
✨
আদুরী হসপিটালে থেকে গেছে। রুনা বেগম আর রতন সাহেবকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
আয়াতের একপাশে একটা টুলে বসে আছে আদুরী।
আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে, তাড়াতাড়ি সুস্থ হ বোন তোকে এভাবে দেখতে ভিষণ কষ্ট হয়। কিছুক্ষণ পর বাহিরে আসে। চতুর্থ তলায় একপাশে মিফতাজ একপাশে আয়াত।
আদুরী হাঁটতে হাঁটতে একটু এপাশটায় আসতে চোখ পরলো মানহার দিকে। একজন মহিলা মানহাকে কড়া কন্ঠে কিছু বলছে। কিছুটা এগিয়ে আসতে দেখে মহিলাটি আর কেউ না মিফতাজের মা দিশা বেগম। আদুরী সামনে এসে মানহাকে জড়িয়ে ধরে বলে বোন তুই ঠিক আছিস!
দিশা বেগম রেগে বলেন, সয়তানের কখনো কিছু হয় না। তাদের জন্য বাকিদের জীবন নষ্ট হয়।
আদুরী কিছু না বলে, মানহাকে বলে,চল বনু আমার সাথে চল।
মানহা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো এক পা ও নড়লো না।
আদুরী রেগে বলে, এখনো এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি?
‘তাজকে এই অবস্থায় একা রেখে যাবো না।
‘এটাই তোর শেষ কথা?
‘আপাই আজকে আমাকে জোড় করো না। আমি শেষ বারের মত তোমার কাছে অনুরোধ করছি আমাকে তাজের কাছে থাকতে দাও। ডাক্টারের মুখ থেকে একবার শুনবো তাজ ঠিক আছে। এরপর আমি চলে যাবো৷
‘তোর যা ইচ্ছে কর। আয়াতও এই হসপিটালে ভর্তি আছে চাইলে চলে আসিস। চারশো দুই নাম্বার কেবিনে।
‘মানহা মাথায় এক হাত দিয়ে ধরে অপর হাত দিয়ে আদুরীকে ধরলো। কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কথা আসছে না ভেতর থেকে।
এতোক্ষণে আরহামও চলে এসেছে। আরহামের কল্পনাতীত ছিলো এই মূহুর্ত হয়তো নিয়তি বড্ড নিষ্ঠুর এই মূহুর্তে আরহামের জন্য। আরহাম পা এক জায়গা স্থীর হয়ে পরলো। এতো অপেক্ষার অবসান কি তবে এভাবেই সমাপ্তি হবে। নাকি আরহামের জন্য অপেক্ষা করছে কোন নতুন আলো। যেভাবে ধরনী আঁধারে তলিয়ে গেলে!#নীলাম্বরে_জোছনা দেখা যায়। ঠিক সেভাবেই আলো ছড়িয়ে পরবে৷ আরহামের জীবনে? আরহাম আরো কয়েক কদম এগিয়ে আসলো।
আরহামকে দেখেই দিশা বেগম বলে, এই সেই অলুক্ষনে মেয়ে। যার ছায়া আমার ছেলের জীবনটা শেষ করে দিচ্ছে। এর চেহারা দর্শন করিস না বাবা। বলা তো যায় না এর নিশ্বাস তোর উপর পরে তোর জীবন ধ্বংস হয়ে যায় নাকি!
আদুরী এবার কড়া কন্ঠে বলে,অনেক সময় ধরে আপনার বাজে কথা সহ্য করছি। ভদ্রতা দেখাচ্ছি তাই বলে অভদ্র আচরণ সহ্য করে যাচ্ছি। যদি আমাদের অভদ্র আচরন করতে বাধ্য করেন তবে তার জন্য নিশ্চয়ই আপনি নিজেয় দায়ী থাকবেন।
মাহমুদ সাহেব বললে,মা তোমরা দিশার কথায় কিছু মনে করো না। ছেলের চিন্তায় ওর মাথা ঠিক নেই।
আরহামের মুখে কোন কথা নেই এতো কথা জমা থাকার পরেও আজ বাকশূন্য আরহাম।
আদুরী মানহাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে, তোর একটা কথাও শুনবো না তুই এখন আমার সাথে আসবি মানে অসতেই হবে। নিজে বেঁচে থাকলে মিফতাজের খোঁজ নিতে পারবি।এখন তোর এখানে কোন কাজ নেই।
আরহাম দাঁড়িয়ে দেখছে মানহা চলে যাচ্ছে সে যে কিছু বলবে সেই কথাটুকু শব্দ হয়ে বেড় হচ্ছে না ভেতর থেকে।
✨
আদি বারান্দায় বসে আছে,নিঃসঙ্গ রাতে দূর হতে চাঁদের আলো। আর গুটিকয়েক তারা মিটিমিটি জ্বলছে। রাত খুব ভয়ংকর! কারন দিনের ব্যস্ততা আমাদের প্রিয় মানুষ অথবা নিজস্ব দুঃখ ভুলিয়ে রাখলেও রাত কখনো তা হতে দেয়না। বরং রাতের গভীরতা সাথে সাথে সে সব বাড়তে থাকে। বারবার স্মৃতি কে তাজা করে দেয়। মনে করিয়ে দেয় আমাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত। দীর্ঘশ্বাস আর এই একাকী রাত বলে দিচ্ছে আদির শূন্য জীবনে আদুরী কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে। এজীবনে আর আদুরীকে নিজের করে পাওয়া হলো না। যেই বাচ্চার বাবা আমার হওয়ার কথা সে বাচ্চার বাবা আজ অন্য কেউ! সুখে দুঃখে যে বক্ষে আদুরীর মুখ লুকানোর কথা সে বক্ষ আজ শুন্য।জীবন বড্ড কঠিন। তারচেয়ে বড় কঠিন প্রকৃতির শাস্তি। যাকে হাসতে হাসতে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। আজ শতরাত তার বিরহে কাটিয়ে দিচ্ছে। যেখানে তার সঙ্গী হওয়ার কথা ছিলো প্রিয়তামার, সেখানে তার সঙ্গী আজ নিকোটিন। যাকে হেলায় ছেড়ে দিলো সে অবেলায় ক্ষত তৈরি করছে হৃদয়ের গহীনে। কি দারুণ ক্ষত। তবে এই ক্ষত চিহ্ন কেবল অনুভব করা যায়। কাউকে দেখানো যায় না। কথায় আছে ছোট একটা ভুল সারা জীবনের কান্না। ঠিক এ সময় সেই কথাটাই বারংবার মনে পরছে। সব হারিয় আমি আজ নীড়হারা পাখি। আকাশের পাণে দৃষ্টি রেখে আনমনে তোমার কথা ভাবি। তুমি আসো খুব কাছে, একবার ছুঁয়ে দাও এ হৃদয়! আমি আর হারাতে দেবো না তোমায়। তোমাকে হারিয়ে আমি আজ সর্বহারা।
#চলবে