নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে পর্ব-২৮+২৯

0
482

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৮

“তুই না-কি অয়নকে দুধ খেতে দিবি না বলে দুধের গ্লাস ভেঙে ফেলেছিস?” বলতে বলতেই হাঁটু গেড়ে আরুর পাশে বসে অপূর্ব। একতরফা অপূর্বর প্রতি তীব্র অভিমানের ভেলা ঘিরে ধরল চারপাশ থেকে। আরু মুখ ফিরিয়ে নিল পূর্ব দিকে। সেদিকে শেয়াল ডেকে চলেছে। ততক্ষণে গা ঘেঁষে অপূর্ব বসে নিজের মাথা আরুর কাঁধে ঠেকিয়ে দিয়েছে। চাপা অভিমান নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে, “অপূর্ব ভাই, আপনিও আমাকে বুঝলেন না? আপনিও ভেবে নিলেন, আমি অয়নের জন্য গ্লাস ভেঙেছি?”

“নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। তুই যদি মুখ ফুটে সত্যিটা না বলিস, আমি সত্যিটা জানতে পারব না। আবার অন্যের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তোকেও অবিশ্বাস করতে পারব না। আরুপাখি, বল কী হয়েছে?”

দিঘিতে মাছে বুটবুট করে তার সাথে আরুও নিজের বাক্য তোলে, “শেফালী কীটনাশক জাতীয় কিছু একটা দুধে মিশিয়ে সুমি ভাবীকে খাওয়াতে চেয়েছিল। আমি বাধা দিয়েছি বলে নিজে খেতে চাইল। সেই মুহুর্তে আমি দুধের গ্লাস নিয়ে বাইরে আসতেই অয়ন উঠে পড়ে লাগে দুধ খাবে। বোন হয়ে ভাইয়ের মুখে জেনে শুনে কীভাবে বি/ষ তুলে দেই। জোর করাতে ইচ্ছে করেই আমি গ্লাসটা ভেঙে ফেলেছি।”‌

আরুর এমন প্রত্যুক্তিতে অপূর্বর খোয়া গেছে বুলি। চোখজোড়া রসগোল্লার মতো হয়েছে। ঠোঁটের পল্লব জোড়া বিচ্ছিন্ন হয়েছে ঈষৎ। রাগে কাঁপছে অঙ্গ। ত্রস্তব্যস্ত হয়ে অপূর্ব বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। এর ফলাফল অনুমান করে পথ আটকে দাঁড়াল আরু। বিহ্বল হয়ে বলে, “বাড়ির দিকে আপনি যাবেন না।”

রোষের গোঙানি তুলে আরুকে সরাতে সরাতে বলে, “আমার সামনে থেকে সরে যা আরু, ‘এই কাজটা করার আগে ওর কলিজা একবারও কাঁপেনি কেন?’ – আমি ওকে সেটা জিজ্ঞেস করব। সামলে থেকে সর।”

“আজকে তিয়াস ভাই সুমি ভাবী সবাই অনেক খুশি। এমন সময় যদি শেফালীর কথা জানাজানি হয় সবাই অনেক কষ্ট পাবে। দয়া করে, আপনি আজকে কিছু বলেন না। ছোটো মামা শুনলে কষ্ট পাবে।” অপূর্ব হাত ধরে আশা নিয়ে বলে আরু। আরুকে আশাহত না করে দৃঢ় করে ধরে হাতটা। অসময়ে ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। অতঃপর বৃষ্টি হতে ত্রাণ পেতে আশ্রয় নেয় নারিকেল গাছের নিচে। জড়সড়ো হয়ে বসে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছোটো একটা পলিথিন বের করে। প্রেমের বান ভেঙে বলে, “শুনেছি বিয়ের মিষ্টি খেলে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়। এই মিষ্টিটা তুই খেয়ে ফেল। দেখি কবে আমাদের বিয়ে হয়।”

বলে অপূর্ব মিষ্টিটা মুখে নিয়ে এগিয়ে ধরল আরুর দিকে। আরু ভেঙে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই অপূর্ব থামলো হাতের গতি। আরু বুঝে গেল তার করণীয় কাজ কী! দূরত্ব ঘুচিয়ে অপূর্ব থেকে আংশিক মুখে নিয়ে নতজানু হলো লজ্জায়। প্রিয় মানুষের দেওয়া লজ্জায় প্রিয় মানুষের বুকে মুখে গুজে দিল।
__
আরু দ্রুতহাতে ফুলের মালা গাঁথছে। বাসর ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে বিছানার উপর সুমিকে রাখল। তাজা দুধ গরম করে নিজের হাতে এনে টেবিলের উপর রেখেছে আরু। ততক্ষণে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে তিয়াস। ঘরে পা রাখার আগে অবরোধ জারি করে আরু বলে, “ঘর সাজাতে আমাদের অনেক খাটতে হয়েছে। এক হাজার টাকা দিলে বউ আর ঘর দুটোই আপনার। নাহলে আমরা আজ বাসর করব ভাবীর সাথে।”

“কী?” এক হাজার! তোরা কী ডাকাত? এত টাকা চাইছিস কেন? কম নে বোন।” তিয়াসের করুন অনুরোধ। পেছন থেকে অপূর্ব হেলান দিয়ে বলে, “এগারো শো।”

“মাত্র তো বলল, এক হাজার।”

“যত কথা বলবি, তত বাড়বে। তাড়াতাড়ি দে, নাহলে আরও বাড়বে। বারোশো।” অপূর্ব থামার আগেই তিয়াস ঘরের ভেতরে ঢুকল। টেবিল ক্লথের নিচ থেকে বারোশো টাকা বের করে আরুর দিকে এগিয়ে দিল। তুর তা ছিনিয়ে নিল। অপূর্ব আশেপাশে চেয়ে দেখে শেফালী নেই উপস্থিত। তুর টাকা গুনতে গুনতে বলে, “ভাইয়া, আপনি নতুন বউ পেয়েছেন। আমরাও ভাবী পেয়েছি। আমাদেরও তো একটা হক আছে ভাবীর সাথে বাসর করার।”

“তবে রে.. বলে এগোতেই তুর ছুটে গেল বাইরে। অপূর্বর সাথে বেরিয়ে যেতে যেতে আরু বলে, “টেবিলের উপর গ্লাস আছে। বড়ো মামি দিয়েছে।”

তিয়াস ছিটকিনি তুলে ধীর পায়ে এগিয়ে সুমির পাশে বসে। ঘোমটার কারণে মুখের কোনো অংশ দেখা যাচ্ছে না। তিয়াস ঘোমটা তুলে সুমিকে দেখে নিজের তৃষ্ণা মেটায়। দুহাত মেলে দিয়ে দেয় বুকে আসায় ইঙ্গিত। শরীরের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে হুরহুর করে। সুমিকে এক হাতে জড়িয়ে জানালা খুলে দিল তিয়াস। বাইরে থেকে আসা বৃষ্টির ঝাপটায় উপশম হলো সেই রোগ। সুমির ওষ্ঠদ্বয় ঢাকা পড়ল প্রেমিকের ওষ্ঠের ভাঁজে। আকাশের ফালি চাঁদটা বহু আগে লজ্জায় লুকিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে।
__
অপূর্বর বিছানা ঝেরে বালিশ‌ ঠিক করে দিল আরু। অপূর্ব হাত দুটো বুকে গুজে হেলান দিয়েছে দেয়ালে। আরুর কাজ শেষ করে পা গতিশীল করার পূর্বে টেনে ধরল অপূর্ব। আলমারিতে গুছিয়ে রাখা বিয়ের বেনারসিটা হাতে তুলে দেয়, দিল আরও একটি প্যাকেট। যা ভর্তি চুড়ি দিয়ে। আরু চমকে উঠে বাক্য সাজায়, “এগুলো আপনি আমাকে দিচ্ছেন কেন?”

“সেম ডিজাইনের চুড়ি খুঁজে পাইনি। তাই এগুলো সব নিয়ে এসেছি। আর বেনারসিটা আমার আরুপাখি পছন্দ করেছে। তাই আগাম নিয়ে এলাম।”

“বিয়ের সময় এমন সাদামাটা বেনারসি পরলে চেয়ারম্যান বাড়ির মান থাকবে?”

“রাতে এটা পরবি। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখব কেবল।”

“এটা আপনার কাছে রেখে দিন। মা শাড়ি দেখলে প্রশ্ন করে আমার পাগল করে ফেলবে।” আরুর কথায় সায় দিয়ে অপূর্ব শাড়িখানা তুলে রাখে আলমারিতে। তবে এখন মুঠো চুড়ি আরুর হাতে পরিয়ে দিতে ভুলে না। আরু চুড়ির জোড়া ছুঁয়ে বলে, “শুভ রাত্রি।”

অতঃপর আরু তুরদের ঘরে গেল। তুর বসে বসে টাকা থুতু দিয়ে গুনতে ব্যস্ত। আরু দেখল সেখানে নেই শেফালী। মেয়েটা রাগে আজও আসেনি ঘুমাতে। আরু সেই ফাঁকা ঘরটাতে গেল। দরজাটা ফাঁক করতেই স্তম্ভিত হলো সে। দুধের গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে টেবিলের উপর রেখেছে শেফালী। ছিটকিনির শব্দে শেফালী জানে আরু এসেছে। একটা ব্যঙ্গাতক হাসি দিয়ে বলে, “আরু তুই এবার আর আমাকে বাঁচাতে পারলি না। পারলি না, পারলি না। আমি ঠিক দুধ খেয়ে ফেললাম। জানিস আরু, আমার ভেতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যায় ওদের একসাথে দেখলে। তিয়াস ভাইয়ের পাশে আমার থাকার কথা ছিল, কিন্তু আজ ঐ সুমি। আমি তিয়াস ভাইকে আপন করতে না পারি মৃত্যুকে ঠিকই আপন করতে পারব।”

শেফালী গলা চেপে ধরে ছটফট করেছে মাটিতে। ওর শরীরে মাটি লাগছে। আরুর শরীর কম্পনের জন্য অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আরু ছুটে গেল তুরের কাছে। কিন্তু তুর ওকে পাত্তা দিল না। ছোটো মামার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতেই মণি বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। হাই তুলে বলে, “কী হয়েছে আরু মা? এতরাতে দরজা ধাক্কা দিলি কেন?

“শেফালী ঐ ঘরে একা শুয়েছে। ও কেমন করছে..

“ও গতকালও ঐ ঘরে ঘুমিয়েছে। দুইদিন থাকতে দে, নিজেই তোদের ঘরে চলে যাবে।” আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে খিল দিল মণি। আরু অসহায় হয়ে পড়ে শেফালীর চিন্তায়। শেষ ভরসা হিসেবে ছুটে যায় অপূর্বর কাছে। দুহাতে একের পর এক ধাক্কা দেয় দরজায়। ঘুম ভেঙে যায় অপূর্বর। বিরক্ত হয়ে দরজা খুললে অপূর্বকে কথা বলার কোনো সুযোগ দিল না আরু। নিজে থেকে সাহস নিয়ে বলে, “অপূর্ব ভাই, আমাদের শেফালী বি/ষ খেয়েছে। মাটিতে পড়ে কেমন‌ কাতরাচ্ছে। কেউ আমার কথা শুনছে না।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
#পর্ব: ২৮ (বর্ধিতাংশ)

“অপূর্ব ভাই, আমাদের শেফালী বি/ষ খেয়েছে। মাটিতে পড়ে কেমন‌ কাঁতরাচ্ছে। কেউ আমার কথা শুনছে না।”
আরুর ব্যাকুল কণ্ঠে অপূর্বর ঘুম ঘুম ভাবটা অনায়াসেই দূর হয়ে গেল। তিন সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ছুটে গেল শেফালীর ঘরে। শেফালীর কাতরানোর দৃশ্যটা সহ্য করতে পারে না অপূর্ব। পার্লস রেট চেক করতে করতে আদেশ দেয়, “রান্নাঘরে ডিম দেখেছি। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে ডিম নিয়ে আয়।”

পরক্ষণেই উল্কার বেগে রান্নাঘরের দিকে ধাবিত হলো আরু। খাঁচি আর বাটি দুটোই তুলে নিয়ে এলো। তারপরে বাটিতে ভেঙে খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য করল চামচ নেই। অপূর্ব রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, “চামচটা কি আমি গিয়ে নিয়ে আসব?”

আরু ছুটে চামচ নিয়ে ফেরত এলো। এই সাধারণ দূরত্ব এতো জলদি আসা-যাওয়া করল যে, ওর পা যাতনায় টনটন করে উঠে। অপূর্ব শেফালীর মুখে কাঁচা ডিম তুলে দেয়। কাঁচা ডিমের গন্ধে শেফালীর পেট মোচড় এলো বমি। ভাসিয়ে দিল ঘর। অপূর্ব অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো, অতঃপর বাজখাঁই গলায় বলে, “কে কোথায় আছো? তাড়াতাড়ি এখানে এসো। আমাদের শহরে যেতে হবে। শেফালী বি/ষ খেয়েছে।”

অপূর্বর চিৎকারে কিলোমিটার দূরে থাকা কাকটাও ডাল ছেড়ে উড়ে গেল। কিছুক্ষণের ভেতরে সবাই হাজির হলো ঘরে। ততক্ষণে অপূর্ব পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়েছে শেফালীকে। শেফালীর জ্ঞান নেই। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে মণি অস্থির হয়ে বলে, “আমার মেয়ের কী হয়েছে আরু? ওকে অপু কোথায় নিয়ে গেছে?”

“শেফালী কীটনাশক খেয়েছে মামি। অপূর্ব ভাই অনেকটা বের করে এনেছে, বাকিটা বের করার জন্য হাসপাতালে ছুটছে।” বলেই আরু ছুটে গেল। সবাই বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এখন করণীয় কাজটি করতে তারা ভুলে গেছে। ততক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে তিয়াস ও সুমি। ড্রয়িং রুমে মা চাচির হাহাকার শুনে ধারণা হলো অনেকটা। বাবা চাচারা ইতোমধ্যে ছুটেছে। পুরুষ মানুষদের মধ্যে তিয়াস একা গেল না। প্রাণহীন জড় পদার্থের ন্যায় ঘরে ফিরত এলো। পতির এমন অবনতি দেখে সুমি এলো ঘরে। ঈষৎ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, “সেদিন নাহয় শেফালী আমাকে নিয়ে একটা খা/রা/প কথা বলেছে। এতে খা/রা/প লাগলেও সত্যি। তাই বলে মেয়েটার এমন বিপদে ভাই হয়ে কা/পুরুষের মতো দরজায় খিল দিয়ে বসে থাকবে? আমার হাতের চুড়িগুলো নাও, হাতে দিয়ে বসে থাকো।”

বলতে বলতে আংশিক খুলে ফেলে সুমি। সুমিকে বাধা দিয়ে নিজের দুঃখ ভাগাভাগি করে তিয়াস, “তুমি তোমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারবে সুমি?”

বিস্ময়ে আঁতকে উঠে তিয়াসের দিকে তাকায় সুমি। পরবর্তী বাক্য তুলতে বাধা দিতে হাত ঠেকিয়ে দিল তিয়াসের ওষ্ঠদ্বয়ে। ব্যথিত গলায় বলে, “কোনো নারী তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না। আমিও একজন নারী। তোমাকে ভাগ করে নেওয়ার আগে আমি নিজেকে ভাগ করে ফেলবো।”

“শেফালী সেই ভাগটা চায়। শেফালী আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে চায়। ও আমাকে ছোটো থেকে ভালোবাসে।” হাতটা সরিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে তিয়াস। সুমি কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে সে ঠাওর করতে পারছে, শেফালীর এমন আচরণের মানে। বিয়ের এক সেকেন্ড আগেও যদি ব্যাপারটা আঁচ করতে পারব, ফিরে যেতে বাড়ি। সুমি আচমকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। তিয়াস নিজেই হতভম্ব। অল্পতেই হেঁচকি তুলে বলে, “তুমি আমাকে দোষী করে দিলে। ঐ বাচ্চা মেয়েটার কাছে আমাকে ঋণী করে দিলে‌। ওর যদি কিছু হয়ে যায়, আমাকে সারাজীবন চাচির একমাত্র সন্তান হারানোর অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে।”

“শান্ত হও, ওর কিছু হবেনা। আমি সব ঠিক করে দিবো।”

“তুমি আমার জীবন গুছিয়ে ওর জীবন কেড়ে নিবে?” দুহাতে পাঞ্জাবিটা মুষ্টিবদ্ধ করে কুঞ্চিত করে ফেলেছে অনেকটা। তিয়াস সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে কেবল ওকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে। বুক ছিঁড়ে প্রকাশ পেল একটা বিষাক্ত নিঃশ্বাস।
__
গা ছমছমে পরিবেশ। শেফালীকে কোলে তুলে ছুটে চলেছে অপূর্ব। তার পেছনে পেছনে লম্বা কদম ফেলে বাবা-চাচারা আসছে। তার পেছনে আসছে আরু। আরুর অনেকটা পেছনে আসছে অপূর্বর তিন চাচি ও মা।
ব্রিজ পর্যন্ত আসতেই বিপরীত দিক থেকে দুইটা বেবিট্যাক্সি এসে থামল সামনে। মোতাহার আহসান ফোন করে আসতে বলেছে বাড়ির কাছে। অপূর্ব শেফালীকে যত্ন করে বেবিট্যাক্সিতে তুলে দেয়। সেই বেবিট্যাক্সিটা শাঁ শাঁ করে গন্তব্যের জন্য রওনা হতেই অপূর্ব এলো অন্য বেবিট্যাক্সির দিকে। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ছুটে আসা পদ্মাবতীর দিকে। আরুর দিকে কয়েকপা এগিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলে, “স্যরি, তখন রাগের কারণে ওভাবে বলে ফেলেছি। আশা করি, তুমি আমাকে বুঝতে পারছ। এদিকে আর এসো না। বাড়িতে ফিরে যাও। চাচিকে সামলাও।”

“আমি রাগ করিনি। দেরি হয়ে যাচ্ছে, আপনি যান।”

“আসি।” বলেই অপূর্ব বেবিট্যাক্সিতে পা রাখতেই চালক দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। অপূর্বর সেজো চাচা প্রশ্ন করে, “কার সাথে কথা বললি?”

“আরু। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এসেছে। আশেপাশে কাউকে দেখতে পারছি না। তাই বাড়িতে যেতে বলেছি। (বিরতি টেনে) আরু যদি সঠিক সময়ে আমাকে খবর না দিতো। তবে যে.. বাক্য শেষ করার আগেই বেবিট্যাক্সিতে থাকা তিনজন পুরুষের দেহে অতি মাত্রায় কেঁপে উঠে। অনেকটা পথ পেরিয়ে যেতেই দুশ্চিন্তা নিয়ে মুখ খোলে মেজো চাচা, “তুই নিজেই তো একজন ডাক্তার। তাহলে শেফালীকে হাসপাতালে না নিয়ে তুই নিজেই ওর চিকিৎসা করতে পারতি।”

“আমি মনোচিকিৎসক চাচা। এইসব ধরণে আমার মোটামুটি অভিজ্ঞতা থাকলেও, যন্ত্রপাতি নেই।”
__

গমন পথের দিকে তাকিয়ে দুফোঁটা পানি ফেলে ফিরতি পথে পা বাড়ায় আরু। আনমনে সে অঢেল কামনা করে শেফালীকে ফেরত পাওয়ার। ব্রিজের দিক থেকে কয়েকটা ছেলে এগিয়ে আসছে আরুর পেছনে পেছনে। পেছনের শব্দ কোনো দুষ্টু তাদের ভেবে আরু পায়ে ঘর্ষণ করে হেঁটে চলে। কিন্তু তাদের পায়ের শব্দে আরু পেছনে ফিরলে ছেলেদের দল দেখে ব্যাকুল হয়ে উঠে। কীভাবে পরিত্রাণ পাবে? আরু দ্রুত কদম ফেলতেই যুবকের দলও গতি বাড়িয়ে দেয়। এর মাঝে আরুর দেহ ঘেঁষে হাঁটে কালাচাঁন। কিঞ্চিৎ ভরকে পাশে তাকিয়ে বিরাগী পোষণ করে বলে, “সরে হাঁটুন। রাস্তা যথেষ্ট বড়ো।”

সরে হাঁটতে হাঁটতে প্রতুক্তি করে, “এতরাতে এদিকে কোথায় গিয়েছিল গোলাপী?”

“শেফালী বি/ষ খেয়েছে। এজন্য বাড়ির সমস্ত পুরুষেরা ওকে হাসপাতালে গেছে।” বলতে বলতে আরু হাঁটে। বাড়ির কাছাকাছি এসে ডান দিকে বাঁক নেওয়ার পূর্বে আরুর হাত ধরে ফেলে কালাচাঁন। আরু ব্যতিব্যস্ত হয়ে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে, “কালাচাঁনের বাচ্চা হাত ধরেছিস কেন তুই? আমার হাত ছাড়।”

“তোর সাথে আমার একটু কথা আছে। ওদিকে আয়।” দৃঢ় গলায়।

“আমার কোনো কথা নেই। তোর কোনো কথা থাকলে কালকে দিনে বলিস।” রাগান্বিত কণ্ঠে বলে আরু হাত ছাড়াতে থাকে। কিন্তু তার চেষ্টাকে বৃথা করে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে আরুকে। নদীর ধারে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে। পুরুষালি শক্তির কাছে আরুর শক্তি তুচ্ছ। এর ফলাফল জেনে আরুর শরীর কেঁপে উঠছে। কাঁতরাতে কাঁতরাতে অশ্রুপাত করে বলে, “আমাকে ছেড়ে দিন। আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।”

“তোমার কোনো ক্ষতি করব না, তবে তোমাকে আমার করব।” পেছন থেকে অন্য একজন আরুর মাথায় আ/ঘা/ত করে। আরুর শক্তি লোপ পেয়ে চেতনা হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে কালাচাঁনের বুকে। কালাচাঁন আরুকে আপন করে নিয়ে বলে, “ওকে কেন মারলি? ওকে একটা ফুলের টোকাও দিবি না।”

“আরে আ/ঘা/ত না করলে সহজে আসত না ভাই।” বন্ধুর কথায় তবুও দ্বিমত করে আরুকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। ততক্ষণে কালাচাঁনের বন্ধুরা নৌকা এনে ভিড়িয়েছে পাড়ে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৯

ভোরের আলো অস্ফুট থেকে স্ফুট হতে আরম্ভ করেছে। একটি রাত নির্ঘুম অতিবাহিত হয়েছে আহসান বাড়ির প্রতিটি সদস্যদের। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা শেফালীর চেতনা এখনো আসেনি, তবে বি/ষ সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা হয়েছে। অপূর্ব এই হাসপাতালের ডাক্তার বলে নিজেই শেফালীর চিকিৎসা করেছে। এখন সে বিপদ সীমার বাইরে অবস্থান করছে।

কিছুক্ষণ পর সূর্য উঁকি দিতেই মহিলারা হাজির হলো হাসপাতালে। পুরুষরা তখন বারান্দায় অপেক্ষারত। মণি হন্তদন্ত হয়ে সবার আগে এসে শাহিনুজ্জামানের জামা ধরে‌ টেনে বিচলিত কণ্ঠে বলে, “আমার মেয়ে কোথায়? কেমন আছে ও? সত্যিই কী ও বিষ খেয়েছে? বেঁচে আছে তো?”

একের পর এক প্রশ্ন অস্বাভাবিক নয় মায়ের। শাহিনুজ্জামান পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “শান্ত হও, আমাদের শেফালী ভালো আছে এখন।”

মণি কাঁচ দিয়ে অচেতন শেফালীকে দেখল ভেতরে। ছ্যাত করে দরজা খুলে ধাবিত হলো শেফালীর কাছে। অচেতন শেফালীকে সপাং করে লাগাল চড়। সবাই তখন মণিকে ক্ষান্ত করতে নিযুক্ত হয়। ঘুমের কড়া ওষুধের ডোজ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় শেফালী। মণিকে এমন রূপ ধারণ করতে দেখে নত হয়। ক্রোধের গোঙানি তুলে মণি বলে, “যখন তুই বি/ষ খেয়েছিলি, তখন একেবারের জন্যও আমাদের কথা তোর মনে পড়ে নি? তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। আদর ভালোবাসায় কখনো কমতি রাখিনি। মেয়ে হয়ে কিভাবে পারতি আমাদের নিঃসন্তান করার কথা ভাবতে।”

“মা..

শেফালী শব্দ স্ফুটিত করার প্রয়াস করলে মণি হুংকার দেয়, “আমি তোর মা না, তুই আমার মেয়ে না। একদম আমাকে মা বলে ডাকবি না।” বলে কাঁদতে থাকে মণি। তখন অপূর্ব সেখানে উপস্থিত হয়। আশেপাশে আরু নামক যুবতিকে না পেয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। অপূর্ব দৃষ্টির অর্থ আন্দাজ করে অনিতা বলে, “আরু কোথায়, ওকে দেখছি না যে?”

“আরু আমাদের সাথে আসেনি। ওকে আমি বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছি।”

“কী বলিস? ও বাড়িতে ফিরে যায়নি। আমরা সবাই জানি, ও তোদের সাথে আছে।” অনিতার প্রতুক্তিরে অপূর্বর অন্তঃকরণে হানা দিল আতঙ্ক। নদীর অন্যপাশ দিয়ে যখন তারা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল, তখন শুনেছে এক উগ্র কণ্ঠ। পারুল পাশ থেকে বলে, “ও মেয়ের অনেক জেদ। তুই নিয়ে আসিস নি এজন্য বোধহয় সোজা বাড়িতে চলে গেছে। আমরা সবাই ব্রিজ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেখানে ও ছিল না।”

“ফুফু আরু এটুকুতে এমন জেদ ধরবে না।” তুরের বিরক্তিকর গলা। অপূর্ব সেকেন্ড খানেক সময় নষ্ট না করে ছুটে গেল বাড়ির দিকে। তুরকে নিয়ে ফিরল বাড়িতে। সমস্ত বাড়িতে আরুর কোনো সন্ধান পেল না। উদাসীন হয়ে আরুদের বাড়ির দিকে পা ফেলল। রাস্তায় দেখতে পেল কয়েকটা চুড়ি ভাঙা। অপূর্ব পাত্তা না দিয়ে মৃধা বাড়িতে গেল। সেখানেও আরুর সন্ধান নেই। অপূর্ব দেখল ময়নাপাখি বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করছে। তুর ছুটে গিয়ে ময়না পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “এই ময়না, আরু এসেছিল?”

“আরু! আরু! নেই! আরুপাখি নেই! আরুপাখি নেই!” ময়নার বাক্য শুনে অপূর্ব ছুটে গেল রাস্তায়। এতটা পথ সে হেঁটে ব্রিজ দিয়ে যেতে পারবে না বিধায় নদী পার হয়ে গেল। তখন নদীতে ভাটার টান পড়েছে। তাই টাকনু সমান পানি। ভেজা মাটির উপর কাউকে টেনে নিয়ে যাওয়ার একটা চিহ্ন নজরে এলো অপূর্বর। সেখানেও আরুর ভাঙা চুড়ি। অপূর্ব চুড়ি জোড়া গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে বুঝে, গতকাল রাতে এই চুড়ি জোড়া অপূর্ব নিজের হাতে আরুকে পরিয়ে দিয়েছিল। অপূর্ব নিশ্চিত হয়ে বলে, “আমার মনে হয় আরুকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে।”

“আমারও তাই মনে হয় ভাইয়া, কিন্তু কে আরুকে তুলে নিয়ে যাবো? শেফালীর ঘটনাটা‌ হঠাৎ ঘটেছিল। কেউ জানত না, আরু এখানে আসবে। আপনি আরুকে ফিরিয়ে এনে দিন ভাই।”

বোনের কান্নায় অপূর্ব ধৈর্যধারণ করতে পারে না। তুরকে আগলে নিয়ে জানায়, সে খুঁজে আনবে আরুকে।
__
শেফালীকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। এক মেয়ের দুঃশ্চিন্তার পর অন্য মেয়ের জন্য চিন্তিত আহসান পরিবার। পুলিশ তদন্ত করতে নেমে পড়েছে। কিন্তু আরুর সঠিক তথ্য জোগাড় করতে পারেনি। বাড়ির এই পরিবেশের মধ্যে তিস্তাকে নায়র আনার কথা মনেও নেই কারো। আহসান বাড়ির প্রাঙ্গণে বসে আরুর খোঁজ নিয়ে গবেষণা হচ্ছিল, তখন একটা রিকশা এসে থামে বাড়ির রাস্তায়। উপস্থিত সবাই তিস্তাকে দেখে হতবাক হয়। কীভাবে ভুলে গেল মেয়ের কথা?
তিস্তা রোষের সাথে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে ট্রাভেলিং ব্যাগসহ প্রবেশ করে। সবার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভেতরে চলে গেল। তবে বউয়ের পথ অনুসরণ না করে সবাইকে সালাম দিয়ে খোঁজখবর নেয় সুজন। পর মুহুর্তে বাজখাঁই গলা শুনতে পায় তিস্তার, “ও, এজন্য আমার কথা সবাই ভুলে গেছে। বাড়িতে নতুন বউ এসেছে, মেয়ে তো পর হয়ে যাবেই।
তিস্তার ভুবন কাঁপানো চিৎকারে সকলে ছুটে যায় ঘরে। কেউ তাকে ক্ষান্ত চাইলে বিনিময়ে সে রেগে কেঁদে ফেলে। অশ্রু মিশ্রিত কণ্ঠে বলে, ”কীভাবে পারলে একদিনেই আমাকে ভুলে যেতে। সারাদিন তোমাদের জন্য ছটফট করেছি, এই বুঝি এসে পড়বে। কিন্তু কেউ আসোনি। দুইটা দিন ভিন্ন একটা পরিবেশে কেমন ছিলাম, আমিই জানি।”

তিয়াস সান্ত্বনা দিতে পারে না। আপন ভাই তিয়াসের প্রতিও তার অঢেল রাগ। সবাই যখন হার মেনে নিল তখন এগিয়ে গেল অপূর্ব। তিস্তার চোখের পানি দেখে আলতো হাতে মুছে দিয়ে বলে, “তোকে যে চিঠিটা দিয়েছিলাম বোনু, সেটা দেখেছিস?”

“না। কোথায় রেখেছি, আর খুঁজে পাইনি। মনে হয় বাচ্চারা নিয়ে গেছে।” একটু নতজানু হয়ে জবাব দেয় তিস্তা। অপূর্ব এটাই সন্দেহ করেছিল এতক্ষণ। অতঃপর আবার বাক্য তোলে, “সেই কাগজে সুমির কথা লিখে দিয়েছিল তিয়াস। আমি তোকে বলেছিলাম, একা পড়বি। বলেছিলাম তো?”

“হ্যাঁ! সেটা নাহয় বুঝলাম, কিন্তু আমাকে কেউ কেন নিয়ে আসতে যায়নি?” ততক্ষণে রোষ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সম্পূর্ণ রোষ দমাতে তিস্তাকে পানি এগিয়ে দেয় অপূর্ব। তিস্তা পাত্র গ্ৰহণ করে পানি পান করা শেষ হলে অপূর্ব বলে, “শেফালী গতকাল বি/ষ খেয়েছে। রাতে ওকে নিয়ে ছুটেছি। সকালে বাড়িতে এসে দেখি আরু নেই। রাস্তায় ওর চুড়ি ভাঙা আর নদী দিয়ে টেনে নৌকায় করে কেউ নিয়ে গেছে ওকে। এত চিন্তার মাঝে তোর কথা মনে থাকে?”

তিস্তা চমকালো ভীষণ, প্রথম বাক্যের শেষে শেফালীর কথা ভেবে শান্ত হয়, পরবর্তী বাক্য আরুর জন্য অস্থির হয়ে বলে, “ভাইয়া কী বলছেন আপনি? শেফালী বি/ষ খেয়েছে মানে কী? আমি তোমাদের পর হয়ে গেছি যে, এই গুরুত্বপূর্ণ একটা সংবাদ আমাকে জানানো হয়নি?
আরু নিখোঁজ। আর তোমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে আছো কেন?”

“শেফালী এখন বিপদ মুক্ত, দুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে আর পুলিশ আরুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।” অপূর্ব থামতেই তিস্তা ছুটে গেল ঘরে। শেফালীর সাথে দেখা করে ব/কে দিল কয়েক দফা। ফিরে এসে অপূর্বকে বলে, “কালাচাঁন নামের একটা ছেলে আছে যে, আরুকে প্রচুর ডিস্টার্ব করে। আমার মনে হয় ও কিছু করেছে‌।”

“আমার মনে হয় না, কালাচাঁন। কারণ ওকে আমি শিক্ষা দিয়েছি।” অপূর্ব ভেবে বলে।

তবুও তিস্তার মন সায় দেয় না। “সাবধানের মা/র নেই। চলুন আমরা একবার কালাচাঁনের বাড়িতে খুঁজে আসি। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার চেষ্টা নিশ্চিত হয় ভালো।”

অতঃপর কয়েকজন যুবক যুবতি মিলে সংঘবদ্ধ হয়ে ছুটে যায় কালাচাঁনের বাড়ির দিকে। সাথে নিয়ে যায় আরুকে পাওয়ার এক আশা।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে