#নীরা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#১ম_পর্ব
রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ফুটফুটে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে কই থেকে এসে যেন মা মা করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরে।মেয়েটার বয়স চার কি পাঁচ হবে।
আমি অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।মেয়েটার চোখে কি মায়া।
এমন চোখ আমি আজীবন চেয়ে এসেছি আমার মেয়ের হোক।অথচ…
আমি কল্পনায় হারাতে চাইলেও মেয়েটা আমাকে আর হারাতে দেয়না।
আবারো সে আমাকে ডাকছে,
মা মা মা,ও মা।
মেয়েটা এখনো আমার কোমর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি একটু নিচু হয়ে বসে মেয়েটাকে বললাম,
_কিছু বলবে আমাকে?
মেয়েটা আবারো বলছে,
মা মা ও মা।
_তোমার মা কই?
আর তোমার বাবা কই?
কার সাথে এসেছো তুমি?
_নেই।কিচ্ছু নেই।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই কোথাও।
কি অদ্ভুত!
মেয়েটার বাবা মা এত কেয়ারলেস কিভাবে হলো,
এই ছোট্ট বাচ্চাটাকে কিভাবে ছেড়ে দিলো একা পথে।
_আচ্ছা মা সত্যি করে বলো,তোমার আম্মু কই?আব্বু কই?
কোথায় থাকেন উনারা?
নাম কি তাদের?
_কেউ নেই,কিচ্ছু নেই।
_কেউ নেই তোমার?সত্যি বলছো?
_হুম নেই, কেউ নেই,কিচ্ছু নেই।
আবার মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
মা,ও মা।
কি করবো এখন বুঝতেছিনা।
এইভাবে এইটুকু বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে যাবো?
তাও তো ঠিক হবেনা।যদি খারাপ কোন লোক নিয়ে যায়?
বা কুকুর বিড়াল কামড় দেয়,খাঁমচি দেয়।
বুঝতেছিনা কি করবো।
আর বাসায় যে নিয়ে যাবো,এই সময় যদি ওকে কেউ খুঁজতে আসে,তাহলে তো ওকে আর পাবেনা।
কি যে করি,
প্রায় দুই ঘন্টা মেয়েটার হাত ধরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কেউ আসে কিনা দেখতে।
মেয়েটা আমার ওড়না টা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কি অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছে মেয়েটার জন্য।
এই অবুঝ বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কেউ আসলোনা বলে আমি মেয়েটাকে আমার সাথে করে আমার বাসায় নিয়ে এলাম।
_মা মা, ও মা।
_মামণি,আমি তোমার মা নাতো।
তুমি আমাকে খালামণি বলে ডেকো হুম?
_না,
মা মা ও মা।
_মা ডাকবে আমাকে?
মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বল্লো মেয়েটা।
_তোমার মা রাগ করবেনা আমাকে মা ডাকলে?
_মা,ও মা।
_আচ্ছা হয়েছে কিছু বলতে হবেনা।
বাসায় নিয়ে আসতেই আমার আম্মু মেয়েটাকে দেখে বলে,
_কে রে মেয়েটা?
_জানিনা আম্মু।
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম,মা মা বলতে বলতে জড়িয়ে ধরলো।
ওর কোন গার্ডিয়ানকে পেলাম না বলে সাথে করে নিয়ে আসলাম।
_ভালো করেছিস।
কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।
_হুম আম্মু।
ওই ন্রিতা,খেয়াল করেছিস ওর কিন্তু তোর মত একটা তিল ও আছে।
কি মায়ারে মুখ টাতে।
_আসলেইতো।
আমি তো আগে খেয়ালই করিনি।
আর নাক টাও কিন্তু আমারই মত বোঁচা বলো।
আমারই মেয়ে নাতো আবার আম্মু?
কিছুটা হাসি দিয়ে বললাম আম্মুকে।
_হতেও পারে।
এই যে মা মা যে করছে।
আম্মুও হাসতে হাসতে উত্তর দিলো।
_কাল এই সময় আবার ওখানে গিয়ে দেখিস।
যদি কেউ আসে খুঁজতে।না জানি কোন বাবা মায়ের সন্তান।না জানি কেমন লাগছে তাদের।
_আচ্ছা ঠিকাছে।
আমি মেয়েটাকে নিয়ে হাত মুখ ধুইয়ে আমার রুমে গেলাম।
খাবার এনে মুখে তুলে খাইয়ে দিলাম।
_আচ্ছা মা,তোমার নাম কি বলোতো?
তোমার নাম টাই তো জানা হলোনা।
তোমার নাম কি,তোমার আব্বুর নাম কি?
_নেই,কিচ্ছু নেই।
_বলবেনা মাকে?
_না।
_আচ্ছা না বললে।
আম্মু আসলো।
মেয়েটার গাল ধরে বল্লো,
এটা যদি তোমার মা হয়,তাহলে তো আমি তোমার নানু হই।
আমাকে নানু বলে ডাকো তো।
_নানু।
আম্মু মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো।
_তোমার নাম কি নানু?
_নেই,কিচ্ছু নেই।
_ন্রিতা,
_হুম আম্মু,
_ওর নাম কিরে?
_জানিনা আম্মু।নাম বলেনি।
_ওকে তাহলে কি নামে ডাকবো?
একটা নাম তো দেয়া দরকার।
আমার মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো,
নীরা বলে ডেকো।
_নীরা?
সুন্দর নাম তো।
‘
‘
‘
‘
_রাজ,এই রাজ।
_হুম শুনছিতো।
_আমাদের না একটা মেয়ে হবে বুঝছো?
_হুম বুঝলাম তো।
_মেয়েটার নাম কি হবে বলোতো?
_তুমিই বলো।
_না তুমি বলোনা।
_কি হবে?
_ধুর তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা।
আচ্ছা শোনো,
আমাদের মেয়ের নাম হবে হচ্ছে নীরা।
_নীরা?
_হুম।
আমার নামের প্রথম অক্ষর আর তোমার নামের প্রথম অক্ষর মিলে।
ন্রিতা থেকে নী আর রাজ থেকে রা।
নীরা।
সুন্দর না?
_হুম সুন্দর।
_তাহলে কিন্তু এটাই কনফার্ম।
মেয়ে হলেই নাম হবে নীরা।
_আচ্ছা ডান।
‘
‘
‘
ন্রিতা এই ন্রিতা,কি হলো তোর?
কি ভাবছিস তুই?
_কই নাতো,কিছুনা।
_দেখ দেখ ন্রিতা নীরার চুল গুলো কত সুন্দর।
_হুম একদম রাজের মত। (আমি আস্তে করে বললাম)
_কি বললি?
_ধুর কিছুনা।
_তুই না কি যেন বললি,
_কিছু বলিনি।বাদ দাও তো।
রাত হয়ে গেছে।
নীরাকে জড়িয়ে ধরে আমি শুয়ে আছি।
ওর গায়ের ঘ্রাণ টা আমার এত চেনা চেনা লাগছে কেন।
‘
‘
‘
রাজ এই রাজ,
_হুম কলিজা বলো,
_তুমি শুধু আমার বুঝলা?
আমার মানে আমার,শুধুই আমার।
তোমার চুল,চোখ,ঠোঁট,এমন কি তোমার গায়ে যেই বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো হয় না,সেই ঘাম গুলাও আমার।
তুমি জানো প্রতিটা মানুষের শরীরের একটা ঘ্রাণ আছে।
_না জানি নাতো।
_তুমি আমার গায়ে কোন ঘ্রাণ পাওনা?
_পাই তো,পারফিউম এর ঘ্রাণ।হা হা হা
_আচ্ছা তুই কি কোন দিন আমাকে বুঝবিনা?পারফিউম এর ঘ্রাণ তাইনা?
এই জন্যই আমাদের বনে না।
আমার পুরো উলটো হচ্ছিস তুই।
যা ব্রেকাপ।
_আচ্ছা ঠিকাছে।
_উফ উফ উফ কবে বুঝবি আমায়?
‘
‘
‘
_মা,ও মা।
_তুমি ঘুমাও নি মা?
_না।তুমি আমায় ঘুম পাড়িয়ে দাওনা মা।
‘
‘
‘
‘
_ন্রিতা,
_হুম শুনছি,
আমার না ঘুম আসছেনা।
একটু ঘুম পাড়িয়ে দাওনা।
একটু চুল গুলো টেনে দিলে ঘুমাতাম আমি।
_এখন তো আমি দূরে কলিজা,নইলে ঠিকই দিতাম।(মন খারাপ করে)
_আচ্ছা তাহলে ফোন কেটোনা।
লাইনে থাকো,আমি ঘুমিয়ে গেলে লাইন কেটে দিও।
_আচ্ছা।
‘
‘
‘
‘
_মা ও মা,একটু ঘুম পাড়িয়ে দাওনা।
_আয়রে ঘুম আমার রাজের চোখে আয়,
ধুর আয়রে ঘুম আয় আমার নীরার চোখে আয়।
ধুর আমি কেন বার বার ভাবনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছি।আজ এত গুলো দিন পর আমার কেন সেই মানুষটার কথা বার বার মনে হচ্ছে,
যেই মানুষটা আমাকে…
চলবে।