নীরবে_ভালোবাসি
পার্ট: ১৭
চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি ডক্টর হাতে ব্যান্ডেজ করছে, সবাই পাশে দাঁড়ানো মেঘ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অজ্ঞান হবার আগে দেখেছিলাম মেঘ ডক্টরকে ফোন করে কতোটা অনুরোধ করেছে, হাতে কি একটা যেন বেঁধে দিয়ে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সবাইকে পাগলের মতো ডাকছিল। চোখ বুজার আগে মেঘের কান্না শুনেছিলাম। আর এখন মেঘ শান্ত হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই শুধু ডক্টর যাওয়ার অপেক্ষা করছে। জানি সবাই কিছুক্ষণ পর নানা প্রশ্ন করবে জানিনা কি উত্তর দিবো।
ডক্টর: একটু সাবধানে থাকবেন হাতে যেন কোনো ছুট না লাগে।
আমি: ঠিক আছে।
ডক্টর: আর ওষুধ গুলো ঠিকমতো খাবেন।
আমি: হুম।
বাবা: রুহান ডক্টরকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।
ডক্টর: লাগবে না আমি যেতে পারবো।
বাবা: এতো রাতে।
ডক্টর: সমস্যা নেই পারবো। (ডক্টর চলে গেল, দাদী এসে আমার পাশে বসলেন)
দাদী: কি করে হলো এসব?
আমি: (নিশ্চুপ)
মা: কথা বলছ না কেন বৌমা?
বাবা: মা বলো এসব কি করে হলো।
আমি: বলবো তার আগে আমি মেঘের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। (আমার কথা শুনে একজন আরেকজনের দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে)
রুহান: তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছিলে তাই না? ভাইয়ার অবহেলা তোমাকে এই কাজ করতে বাধ্য করেছে ভাইয়াকে তো…
আমি: রুহান আমিতো বলেছি আমি আগে মেঘের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।
রুহান: ঠিক আছে।
সবাই একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, মেঘ আস্তে আস্তে এসে আমার পাশে বসলো।
মেঘ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না, ইচ্ছে করেই ও তাকাচ্ছে না।
আমি: সবসময় তো বলো আমি তোমাকে বলার বা আমাকে বুঝানোর মতো সুযোগ সময় কোনোটাই তোমাকে দেই না আজ দিচ্ছি শুধু একবার বলো এমনটা কেন করেছ?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: আমার দিকে তাকাও মেঘ প্লিজ বলো এমনটা কেন করেছ তুমি তো আমাকে ভালোবাস।
মেঘ: আসছি আমি।
আমি: তুমি এই রুমের বাইরে গেলে আমি হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলবো আর আমি ভালো করেই জানি তুমি এইটা চাও না।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: মেঘ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি আমাকে খুন করতে চেয়েছিলে, আমার শুধু মনে হচ্ছে কোথাও কোনো একটা ভুল আছে। প্লিজ তুমি একবার বলো তুমি এই কাজ কর…
মেঘ: আমিই করেছি কণা। তুমি তো আমার হাতে চাকু দেখেছ তাহলে বিশ্বাস করতে পারছ না কেন? তাছাড়া আমিতো এতোটা ভালো নই যে আমার দ্বারা খারাপ কাজ করা সম্ভব না।
আমি: মেঘ তুমি কি লোকানোর চেষ্টা করছ?
মেঘ: কি লুকাবো?
আমি: কিছু একটা তো লোকানোর চেষ্টা করছ তুমি, মেঘ প্লিজ বলো…
মেঘ: কতোবার বলবো আমিই করেছি।
আমি: কিন্তু কেন?
মেঘ: শায়লার কথামতো করেছি।
আমি: তাহলে একেবারে মেরে ফেললে না কেন? পাগলের মতো আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলে কেন? দিশেহারা হয়ে ডক্টরকে ফোন করে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলে কেন?
মেঘ: জানিনা।
আমি: মেঘ শুনো… (মেঘ আমার কথা না শুনে চলে গেল, কি লুকাচ্ছে মেঘ আমার থেকে)
জোহা: আপু ভাইয়া তো চলে গেল কি হয়েছে বলো আমাকে।
আমি: কিছু হয়নি চল বাসায় চলে যাবো।
জোহা: মানে এতো রাতে বাসায়…
আমি: এখানে আমি এক মুহূর্তও থাকতে চাই না।
বাবা: কেন মা কি হয়েছে?
আমি: আজ আমাকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে ভবিষ্যৎ এ আবারো হয়তো হবে। আমি এখানে থাকবো না।
বাবা: খুন? কে করবে এই কাজ?
আমি: শায়লা করিয়েছে।
দাদী: তুই ওই বাসায় গেলে যে খুনি চেষ্টা করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
আমি: করলে করেছে আমি এই বাসায় থাকবো না।
পপি: তোমরা কেন বুঝতে চাইছ না ভাবি ভাইয়ার উপর অভিমান করে চলে যেতে চাইছে।
আমি: (নিশ্চুপ)
পপি: ভাইয়াকে বলো ভাবিকে আটকাতে তাহ…
মেঘ: না পপি ও চলে গেলেই আমি খুশি হবো। (মেঘ দরজার বাইরে থেকে কথাটা বলতেই বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো, যার জন্য এতো কিছু করলাম সে কিনা আজ..)
মা: মেঘ কি বলছিস এসব?
মেঘ: ওকে চলে যেতে বলো আম্মু।
আমি: চলেই তো যাবো এক্ষণি চলে যাবো।
জোহা: আপু কি করছ হাতে ছুট লাগবে। সকাল হতে দাও আমরা সকালে চলে যাবো।
বাবা: কি হয়েছে খুলে বলো একটু আমাকে।
আমি: শায়লার কথা মতো মেঘ আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। (চিৎকার করে বললাম, এই কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল)
রুহান: এতো বড় সাহস ওর। (রুহান দরজার বাইরে থেকে মেঘকে টেনে নিয়ে আসলো, সবাই ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
রুহান: কণা যা বলছে তা কি সত্যি ভাইয়া? (মেঘ আমার দিকে তাকালো কোনো কথা বলছে না, আমি সবাইকে বলতে চাইনি সবার রাগারাগিতে মেঘ যদি সত্যিটা বলে দেয় এই আশায় বলেছি। আমি জানিতো মেঘ এমন কাজ করতেই পারেনা কোথাও কোনো একটা ভুল আছে)
বাবা: মেঘ কথা বলছিস না কেন? বৌমা যা বলছে তা কি সত্যি?
দাদী: তুই কণাকে খুন করতে চেয়েছিলি তাও শায়লার কথামতো?
মেঘ: হ্যাঁ আমিই করেছি এসব। (মেঘ চিৎকার করে উঠতেই মা গিয়ে মেঘকে অনেক গুলো থাপ্পড় দিলেন)
বাবা: এক্ষণি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবি নাহলে…
মেঘ: চলে যাচ্ছি।
পপি: ভাইয়া শুনো এতো রাতে কোথায় যাবে? (মেঘ চলে যাচ্ছে আমিতো জানি মেঘ এমন কোনো কাজ করতেই পারেনা, মেঘ এতো রাতে বাইরে গেলে যদি শায়লা মেঘের কোনো ক্ষতি করে)
আমি: মেঘ এখন বেরিয়ে গেলে আমিও এতো রাতে বেরিয়ে যাবো।
রুহান: মানে কি? যে তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলো তার জন্য তু…
আমি: বললাম তো ও চলে গেলে আমিও চলে যাবো।
জোহা: আমরা সকালে চলে যাবো আপু আর শুধু এই বাসা থেকে নয় এই দেশ থেকে চলে যাবো, আমি আব্বুকে ফোন করে সবটা বলছি। কোনো খুনির সাথে তোমার সংসার করতে হবে না।
আমি: চাচ্চুকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই জোহা, আম্মু টেনশন করবেন।
জোহা: তুমি এই খুনিদের মধ্যে থাকবে নাকি? ওরা তো যেকোনো সময় তোমাকে খুন করতে পারে। আমার তো এখন মনে হচ্ছে চাচ্চুকে মেঘ’ই খুন করেছে।
আমি: জোহা না জেনে কাউকে দোষ দেওয়া ঠিক না।
জোহা: না জেনে কোথায় দোষ দিলাম? যে রাতের অন্ধকারে নিজের স্ত্রীকে খুন করার চেষ্টা করতে পারে সে তো খুনিই। আপু আমি তোমাকে বলছি ওকে পুলিশে দাও নাহলে ও আবারো তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে।
মা: আমার ছেলেটাকে জেলে দিওনা অন্য যা শাস্তি দিতে হয় দাও।
আমি: ভয় নেই মা আমি এমন কিছু করবো না। (মা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন, একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মেঘ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে)
জোহা: আপু আমি এখানে আছি তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো, সকাল হলেই আমরা আমাদের বাসায় চলে যাবো।
আমি: হুম।
ঘুম ভাঙ্গতেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। জোহা আমার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে দেখে ওকে ডেকে তুললাম। আমাকে এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে তাহলে হয়তো মেঘ সত্যিটা বলবে। আর সত্যিই যদি মেঘ এমনটা করে থাকে তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কানাডা চলে যাবো।
জোহা: আপু চলো। (ঘুমন্ত তোহার দিকে তাকিয়ে আছি, মেয়েটাকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে)
জোহা: আপু যদি সম্ভব হতো তোহাকে নিয়ে যেতাম, সম্ভব নাতো ওরা দিবে না তাছাড়া কোন অধিকারে নিয়ে যাবো।
আমি: একবার মেঘকে বলে দেখনা।
মেঘ: বলতে হবে না আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে। (তোহার কপালে একটা চুমু দিয়ে মেঘের কাছে আসলাম, কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে আসলাম)
বাবা: আমাদের ক্ষমা করে দিস মা এমন হবে কখনো ভাবিনি। আমরা তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
মা: মেঘ এমন হয়ে যাবে আমরা কেউ তা ভাবিনি আমাদের কারণেই তো তুমি বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলে।
জোহা: হ্যাঁ আর এটাই ছিল আপুর সবচেয়ে বড় ভুল। নিজেদের ছেলেকে একটু বুঝান, ভবিষ্যৎ এ আর কখনো এমন কিছু করার চেষ্টা করলে আমি কিন্তু আপুর কথা শুনবো না ওকে…
আমি: জোহা চুপ কর।
জোহা: কেন চুপ করবো? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো ফিরে পেতাম তোমাকে?
আমি: আমার তোহাকে দেখে রেখো সবাই। (চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলাম)
জোহা: আপু কিছু খেয়ে ওষুধ গুলো খেয়ে নাও। (বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘের কথা ভাবছিলাম, জোহা খাবার নিয়ে আসলো)
আমি: খাবার…
জোহা: দারোয়ানকে দিয়ে আনিয়েছি রান্না তো পারিনা।
আমি: আমাদের আগের কাজের খালাকে ফোন করে আসতে বলেছি টেনশন করিস না উনি চলে আসবেন।
জোহা: ঠিক আছে তুমি খাবারটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও।
আমি: হু। (জোহা খাবার রুমে রেখে চলে গেল, পিছু পিছু আমিও আসলাম)
খাবার মুখে দিতেই তোহার কথা মনে পরে গেল, রোজ তো আমিই তোহাকে খাইয়ে দেই আমি ছাড়া অন্যকারো হাতে মেয়েটা খেতে চায় না। ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখতে না পেয়ে মেয়েটা অনেক কেঁদেছে হয়তো, খাবার খেয়েছে কিনা কে জানে। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, মেঘ ফোন করেছে দেখে বেশ অবাক হলাম। বার বার ফোন বেজেই চলেছে বিরক্ত হয়ে কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললাম। মেঘ সত্যিটা না বলা পর্যন্ত কথা বলবো না ওর সাথে।
ছাদের এক কোণে বসে বসে ভাবছি শায়লা ছোট তোহাকে ছেড়ে কিভাবে থেকেছে আমার তো এই কয়েক ঘন্টায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। তোহার দুষ্টুমি গুলো খুব মনে পড়ছে, মন চাইছে একটাবার তোহার মুখে নতুন আম্মু ডাকটা শুনতে। হয়তো আবার কখনো তোহা আমাকে নতুন আম্মু বলে ডাকবে, হয়তোবা আর কখনো তোহা আর আমার দেখা হবে না নতুন আম্মু ডাকটাও শুনা হবে না।
বুয়া: মা কে জানি আসছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য। (বুয়ার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: কে এসেছে খালা?
বুয়া: একজন ছেলে।
আমি: ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।
কে এসেছে ভাবতে ভাবতে নিচে আসলাম, ড্রয়িংরুমে সোফায় একটি ছেলে বসে আছে। আমাকে দেখেই ছেলেটি উঠে দাঁড়ালো।
আমি: আপনি…
–আমার নাম আসিফ আপনাদের ম্যানেজার।
আমি: আপনাকে তো সেদিন দেখিনি আমি তো সেদিন অফিসে গিয়েছিলাম।
আসিফ: আমি অসুস্থ ছিলাম আসলে অসুস্থ ছিলাম বললে ভুল হবে, আমাকে কারা যেন মেরেছিল। আমি ছিনিনি তাদের তবে এখন বুঝতে পারছি কেন আমাকে আহত করে হসপিটালে পাঠানো হয়েছিল।
আমি: কেন?
আসিফ: আমি আপনার সাথে অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু হসপিটাল থেকে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি কারণ আপনার ফোন নাম্বার ছিল না আমার কাছে। এই বাসায় অনেক বার ফোন করেছিলাম কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি এতোদিন অফিসে আসিনি কিন্তু কেউ কোনো খুঁজ নেয়নি। আজ আপনাকে খুঁজে এই বাসায় এসেছি আর পেয়েও গেলাম।
আমি: আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
আসিফ: গতকাল অফিসে এসে দেখি আমার চাকরি নাকি নেই আমার জায়গায় একটি মেয়ে বসে আছে। আমি জোর করে সবকিছুর হিসেব মিলাতে যাই আর গিয়ে দেখি সব গড়মিল তখন বুঝতে পারি আমাকে সরানো হয়েছিল এজন্যই।
আমি: এখন বুঝলাম আপনাকে সরিয়ে মেয়েটিকে আনা হয়েছিল টাকা…
আসিফ: দশ কোটি টাকা লস হয়েছে মেম আর সব টাকা একটা একাউন্টেই ট্রান্সফার করা হয়েছে।
আমি: নাম কি?
আসিফ: ইকবাল…
আমি: ইকবাল?
আসিফ: চমকে উঠলেন যে?
আমি: নামটা বেশ চেনাচেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না।
আসিফ: আমি একটা কথা ভেবে পাচ্ছি না, মেঘ স্যার তো আমাকে চিনেন তাহলে মেয়েটিকে কেন চাকরি দিলেন আর আমার কোনো খুঁজ নিলেন না কেন? এতোগুলো টাকা অন্য একটা একাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে অথচ মেঘ স্যার কিছুই বুঝতে পারেননি? ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত না মেডাম? (আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না মেঘ এতো গুলো টাকার গড়মিল দেখেও আমাকে কিছু জানালো না কেন)
আমি: আগামীকাল থেকে আমি অফিসে যাবো সবকিছু আমিই এখন থেকে দেখাশোনা করবো। আর হ্যাঁ কাল থেকে আপনিও আসবেন।
আসিফ: ঠিক আছে মেডাম।
আসিফ চলে গেল, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না মেঘ আমাকে কিছু জানায়নি কেন নাকি টাকার ব্যাপারটা মেঘ নিজেই জানতো না? মেঘকে তো এখন কিছু জিজ্ঞেসও করা যাবে না কথাই তো হয়না আমাদের।
আসিফ: মেডাম এই মেয়েটিই আমার পরিবর্তে আছে আর হ্যাঁ গতকাল রাতে আরো পাঁচলক্ষ টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে আগের একাউন্টেই। (অফিসে এসে এইসব দেখতে হবে ভাবিনি, আর মেয়েটি তো সেই মেয়ে যে আমাকে শায়লা আর মেঘের কথা বলেছিল)
আমি: কে তুমি?
–আআমি…
আমি: কে পাঠিয়েছে তোমাকে?
–শাশায়লা মেমেডাম।
আমি: তোতলাচ্ছ কেন ভালো ভাবে বলো তোমাকে এখানে কে এনেছে আর এইসব কেন করেছ কার কথায় করেছ?
–শায়লা মেডাম এনেছে আর এইসব উনার কথাতেই করেছি।
আমি: যার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয় সে কে?
–শায়লা মেডাম জানে আমি কিছুই জানিনা।
আমি: মেঘ জানতো?
–হ্যাঁ তবে স্যার আপনাকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু ওই লোকটা স্যারকে ফোন করে কাকে যেন মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তাই স্যার আপনাকে কিছু বলেনি।
আমি: সেদিন তুমি শায়লার কথা মতো আমাকে মেঘের বিরুদ্ধে এসব বলেছিলে তাই না?
–হ্যাঁ।
আমি: আসিফ পুলিশ এনে ওকে দিয়ে দাও।
–আমি কিছু করিনি মেডাম।
মেয়েটির কথায় পাত্তা না দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। মেঘকে আজ ফোন করে সব জিজ্ঞেস করবো কেন ও এমন করছে কিসের ভয়ে এমন করছে।
বাসায় এসে মেঘকে অনেক বার ফোন করলাম কিন্তু ও ফোন রিসিভ করছে না হয়তো আমি গতকাল রিসিভ করিনি এই রাগে। ফোনটা আবার অফ করে রেখে দিলাম যা জিজ্ঞেস করার মেঘকে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করবো, যদি কখনো ওর সাথে দেখা হয়। জানিনা আর কখনো ওর সাথে আমার দেখা হবে কিনা।
আজ ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল, তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। জোহা আমার পিছন পিছন খাবার নিয়ে হাটছে, দুদিন পেরিয়ে গেল এই বাসায় এসেছি এই জোহাটাই আমাকে দেখে রাখছে। জোহা আছে বলেই হয়তো আমি এখনো ভেঙে পড়িনি।
জোহা: তুমি কি খাবে নাকি আমি আব্বুকে ফোন করে সব বলে দিবো?
আমি: সবসময় চাচ্চুর ভয় দেখাস কেন?
জোহা: কারণ তুমি ভালো করেই জানো আব্বু এসব জানলে তোমাকে কানাডা নিয়ে যাবে।
আমি: হু।
জোহা: খেয়ে নাও কলিংবেল বাজছে আমি দেখি কে এসেছে।
আমি: ঠিক আছে।
জোহা: কেন এসেছ এখানে আমার বোনকে খুন করতে? আজ কি নিয়ে এসেছ চাকু নাকি অন্যকিছু? (জোহার চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি নিচে আসলাম। ড্রয়িংরুমে মেঘকে দেখে বেশ অবাক হলাম)
জোহা: আপু একদম ওর কাছে যাবে না বলে দিলাম।
আমি: তুমি এখানে? আর তোমার এই অবস্থা কেন? (মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দুদিনে কেমন যেন রোগা হয়ে গেছে ও, চুলগুলো সব উসকোখুসকো)
জোহা: বেরিয়ে যাও বলছি। (আচমকা মেঘ দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি)
মেঘ: কণা আমাদের তোহা…
আমি: কি হয়েছে তোহার?
মেঘ: তোহা তোহা হসপিটালে।
মেঘ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, দফ করে মেঘের মাথার কাছে বসে পড়লাম। কি হয়েছে আমার তোহার মেঘ এমনভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়লো কেন? তাহলে কি তোহা…
চলবে?
Very nice