গল্প:#নীরবে_ভালোবাসা
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০১
আজ আমি আমার চাচাদের বাসায় যাব। আমাদের বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বে।কি যে খুশি লাগছে!তার কারন হচ্ছে আমার চাচাতো বোন মানহা আপু।তার এক মাস হলো বিয়ে হয়েছে।আর আজ সে দ্বিতীয় বারের মতো বাসায় আসছে। প্রথমবার যখন সে এসেছিল তখন আমার জ্বর হয়েছিল আর আমি বিছানা থেকে উঠতেও পারছিলাম না তাই যাওয়া হয়নি।সে নাকি আমাকে দেখতে এসেছিল কিন্তু আমি নাকি ঘুমাচ্ছিলাম তাই আর ডাকেনি।
প্রথমে আমার পরিচয় দিয়ে দেই। আমার নাম হচ্ছে ফারিহা তাসনিম লাবণ্য।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ভার্সিটি তে উঠলাম এক বছরও হয়নি এরই মধ্যে বিয়ের প্রোপোজাল আসা শুরু হয়ে গেছে।যেই ঘুরতে আসে সেই আমাকে তার ছেলের বৌ করতে চায় যদি তার ছেলে থাকে আর কি। এজন্যে মেহমান আসলে আমি ঘর থেকেই বের হই না নাহয় বাসায়ই থাকি না। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি ইদানিং। যাইহোক, আমার নিজের কোন ভাই বোন না থাকায় মানহা আপুকে অনেক ভালোবাসি।সে আমার থেকে দুই বছরের বড়।তাকে একদম নিজের বোনের মত আর মানহা আপুর ভাই মানে আমার চাচাতো ভাই সাকিরকেও অনেক ভালোবাসি।সে মানহা আপুর এক বছরের ছোট আর আমার এক বছরের বড়।
এমনিতেই সে আমার সাথে বেজির মত লেগে থাকে সবসময়।এত বিরক্ত করে! কিন্তু যখন অন্য ছেলে আমাকে বিরক্ত করে তখন তার খবর করে ছাড়ে। আমার চাচাতো ভাইয়েরা এলাকার সিনিয়র তাই তাদের বোনকে কেউ বিরক্ত করুক এটা তারা মেনে নিবে না।
আব্বু আমাকে মানহা আপুদের বাসার সামনে নামিয়ে অফিস যাবে।মাত্র একদিন থাকব বলেছি তাও আম্মু একগাদা টিপস আর কাপড় দিয়ে দিয়েছে।যদিও কিছু লাগলে বা ভুলে গেলে আমি ১০ মিনিট হেঁটে গিয়ে নিয়ে আসতে পারব।
মানহা আপুদের বাসার সামনে ফাঁকা জায়গা আছে কিন্তু বাগান করে না কেউ। আমাদের বাসার সামনে থাকলে আমি নিশ্চিত করতাম।
বাড়ির সামনে দুইটা গাড়ি আছে।জানি,আপুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনেক ধনী কিন্তু তাই বলে কি আপু আর দুলাভাই দুই গাড়িতে এসেছে নাকি?
না না,অন্যকেও ওতো আসতে পারে!
হাঁটতে হাঁটতে একটা গাড়ির সামনে আসতেই গাড়ির দরজা হঠাৎ খুলে গেল আর আমার সাথে এক ধাক্কা লাগল।আর সেই সুবাদে একটা সুন্দর আছাড় খেলাম। হাতে তো সেই ব্যাথা পেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটা সুদর্শন ছেলে নামল। চেহারা অনেকটা দুলাভাইয়ের মত। তাকে দেখে তো সেই ক্রাশ খেয়েছি আর হাতের ব্যাথাও ভুলে গেছি।
“এই! মিস?ব্যাথা পেয়েছেন?”
হঠাৎ তার ডাকে হুঁশ ফিরল।আমি যেন তার মধ্যেই ডুবে গেছিলাম।আমি বললাম”হ্যাঁ!একটু পেয়েছি ব্যাপার না”
সে বলল”I am extremely sorry,আমি আসলে খেয়াল করি নাই”
“It’s ok.By the way আপনি কে?”
“আমি? সৈকত আর আপনি?”
আমি..
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মানহা আপু ঐ ছেলেটা মানে সৈকতের নাম ধরে ডাক দিল আর সে আমাকে”Excuse me”বলে চলে গেল।আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার জামা ঝাড়তে লাগলাম।
আমার কারো সাথেই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করার অভ্যাস নেই। সেখানে সৈকতের তো কোন দোষই ছিল না।আমি গাড়ির পিছন দিয়ে আসছিলাম। সেখানে লুকিং গ্লাস ছাড়া তো আমায় দেখায় যাবে না।
দেখলাম মানহা আপু সামনে এগিয়ে আসছে। আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল”ধুলো কিভাবে লাগল?আর আসলিই বা কখন?”
আমি বললাম স্লিপ খেয়ে পড়ে গেছিলাম।
মিথ্যা বললাম কারন এতবড় ইতিহাস বলতে বলতেই আমি শেষ হয়ে যাব।
মানহা আপু আমাকে ভিতরে আসতে বলল।আমি বললাম”তোমরা একাই এসেছ?”
“না!আমি আর তোর দুলাভাই এক গাড়িতে আর আমার শ্বশুর শাশুড়ি আর সৈকত এক গাড়িতে”
এবার গাড়ির বিষয়টা বুঝলাম।মানহা আপু আর দুলাভাইকে প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য ওরা অন্য গাড়িতে এসেছে।
বাড়ির মধ্যে যেতেই চাচী আপুকে রান্নাঘরের দিকে ডাক দিল তাই সে চলে গেল। আমার এখন ফ্রেশ হওয়া লাগবে কিন্তু ফ্রেশ হব কার রুমে?যেই রুমে আমি আসলে থাকতাম সেটা মনে হয় আপুর শ্বশুর শাশুড়িকে দেওয়া হয়েছে। আপুর রুমে যাওয়া যাবেনা কারণ সেখানে দুলাভাই আছে আর সবাই জার্নি করে এসেছে তাই সবার গোসল করতে হবে।আমারও করতে হবে কারণ আমার জামা কাপড় সুন্দর ভাবে নোংরা হয়ে গেছে।এসবই ভাবছিলাম তখনই চাচী ডাক দিয়ে নাস্তা করতে বলল। কিন্তু আমি বললাম আমার প্রথমে গোসল করা লাগবে।
চাচী বললো করে নিতে কিন্তু করব টা কোন রুমে?
চাচী তো জানে আমার এত মেহমান পছন্দ না আর আমার অসুবিধা বুঝতে পেরে চাচী বললো সাকির ভাইয়ার রুমে ফ্রেশ হতে। ভাইয়া নাকি ক্রিকেট খেলতে গেছে।তার ম্যাচ আছে যা একদম দুপুরের পর শেষ হবে।আমি এই কথা শুনে চাচীকে আলতো করে জড়িয়ে ধরেই আবার ছেড়ে দিয়ে দিলাম দৌড় কারণ অলরেডি আমার গা চুলকানি শুরু হয়ে গেছে।
ঘরে এসেই দরজা লাগাই ফেললাম।ফ্যান অন করে হিজাব পিনগুলো খুলতে লাগলাম। হিজাব খুলা শেষে গায়ে যে এক্সট্রা ওড়না ছিল সেটাও নামায় ফেললাম।কাছেই এসেছি তাই শুধু হিজাব নিয়েছি বোরখা না। গায়ে একদম ঘাম হয়েগেছে।যদি গোসল করতে হয় তাহলে এগুলোকে প্রথমে শুকাতে হবে নাহলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে। গায়ের লং ড্রেস টাও খুলে দিলাম এখন গায়ে শুধু একটা হাতকাটা কামিজ।জামা আর ওড়না গুলো আলনায় মেলে দিয়ে বিছানায় আয়েশ করে চোখ বন্ধ করে বসলাম।তখনই মনে হলো দরজা খুলার শব্দ হলো চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম সৈকত বাথরুম থেকে বের হলো। আমার চোখ কপালে উঠে গেল। কারণ দুইটা,প্রথমত ওকে দেখে আমার পা আপনা আপনি ফ্রিজ হয়ে গেছে আর দ্বিতীয়ত তার বডি থেকে যে পানি ঝরছে তাতে ওকে আরো কিলার লাগছে ওকে।
ও আমাকে এখনো খেয়াল করে নি কারণ ও মাথা মুছতে ব্যাস্ত।আমি দ্রুত উল্টা ঘুরে গেলাম।ড্রেস নিয়ে যে শুধু গায়ের সামনে ধরব তারও উপায় নেই কারণ আলনাটাও সৈকতের ঐদিকে।
হঠাৎ সৈকত আমার দিকে তাকালো মানে আমার পিঠের দিকে। যেহেতু আমি উল্টা ঘুরে ছিলাম তাই।
আমি শুধু মাথাটা হালকা ঘুরিয়ে বললাম”চিল্লাবেন না প্লিজ!”
সৈকত বললো”এই আপনি এই অবস্থায় এখানে কেন?রেপ এর মামলা দিতে চাচ্ছেন নাকি?”
“না আসলে আমি গোসল করতে এসেছিলাম কিন্তু…”
“যদি গোসল করতেই আসেন তাহলে এভাবে বাথরুমের সামনে জামা কাপড় ছাড়া দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বাথরুমে টোকা পর্যন্ত দেন নি!দিলে তো বুঝতে পারতেন ভিতরে কেউ আছে কিনা? যখন প্রথম বার দেখলাম তখনতো বেশ ভদ্র মনে হলো কিন্তু আপনি তো একটা চরিত্রহীন আর আপনার মত চরিত্রহীন মেয়ের জন্যই যারা আসল ভুক্তভোগী তারা ন্যয় পায় না যত্তসব!”
এই বলেই সৈকত বিছানার উপর থেকে তার শার্ট টা নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমাকে আমার মুখের কথাটুকুও বলতে দিল না আবার আমাকে চরিত্রহীনও বললো।তার দিক দিয়ে হয়ত সে ঠিক বলেছে কিন্তু সত্য না জেনে আমাকে চরিত্রহীন বললো?এটা কি ঠিক?
ঘরের দরজাটা লাগিয়েই আমি চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। চরিত্রই মানুষের সব আর আজ এই চরিত্র নিয়েই একটা অপরিচিত ছেলের কাছে এতকিছু শুনতে হলো?
নাহ! ভেবেছিলাম একদিন থাকব কিন্তু যতবার ওর দিকে আমার চোখ পড়বে ততবারই নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাব।আমারই উচিৎ ছিল কেউ রুমে আছে কিনা চেক করা।
চলবে……
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)