#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১১
হৃদির মুখে সাম্যের কথা শুনে সালাম সাহেবের মন চাইছে ছেলেকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে।কিন্তু সে হৃদির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে সে সাম্যকে কিছুই বলবে না।মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়েছে।সারাজীবন শুধু অন্যের দোষটা আড়াল করে গেলো।অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে বারবার নিজে বিপদে পড়ে।তাও অন্যকে নির্দোষ প্রমাণ করতে,অন্যকে রক্ষা করতে পিছপা হয় না।অনেক হয়েছে।এবার মেয়েটাকে বুঝতে হবে স্বার্থপর দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে নিজেকেও স্বার্থপর হতে হবে।
মিসেস ছায়ার মাতৃস্নেহে হৃদি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।ঠিক সেই পুরোনো হৃদি।প্রয়োজন ছাড়া যে মেয়ে কোনো কথা বলতো না আজ সেই মেয়েই সারাদিন বকবক করে সবাইকে জ্বালাচ্ছে।হৃদির এমন আচরণ আর কেউ উপভোগ করুক বা না করুক মিসেস ছায়া ঠিকই উপভোগ করছেন।বিভোর তো প্রায় সময়ই বাহিরে থাকে। আগে একা একা লাগলেও এখন মিসেস ছায়ার একাকিত্ব করার কোনো সুযোগই নেই।পর পর দুইটা বড় বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে হৃদি।মিসেস ছায়ার মমতায় আজ হৃদি সম্পুর্ন সুস্থ স্বাভাবিক।
মিসেস ছায়া সেদিন গিয়েছিলেন বোনের বাড়ি।হৃদির ভার্সিটিও সেদিন তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছিল।আলভীর সাথে কাটানো লোমহর্ষক মুহুর্ত গুলো হৃদি মন থেকে সরাতে পারছেনা।সাম্যের ধাক্কাটা হৃদি ভাগ্যের লিখন হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু আলভী….
ঘটনাটা এখনো হৃদিকে আঘাত করে চলেছে।সব ছেলের মাঝে হৃদি আলভীর আর সাম্যের ছায়ার সম্মিলিত রূপ দেখতে পায়।শুধু বিভোর বাদে।ছেলেটাকে সম্পুর্ন আলাদা লাগে হৃদির।কেমন একটা যেন ভিন গ্রহের প্রানী।
মিসেস ছায়া কোথাও যাওয়ার হলে বিভোর আর হৃদিকে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে যান।ক্যাম্পাস থেকে এসেই হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।হৃদির আগে হয়তো বিভোর এসেছিলো।পুরো ফ্ল্যাটটা কেমন অগোছালো যেন!কি খুঁজছিলো কে জানে!আন্টিকে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়?আজ হৃদি যদি পুরো ফ্ল্যাটটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে মা ছেলেকে সারপ্রাইজ দেয়!বিষয়টা নিশ্চয়ই খারাপ হবে না!
হৃদির আবার শ্বাসকষ্টের প্রবলেম আছে।তো মাস্ক পড়ে কাপড় দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে লেগে পড়ে সে।বিভোরের ঘর বাদে বাকী সব ঘর একটু ঝাড় মোছাতেই হয়ে যায়।বিভোরের ঘরে ঢুকতেই হৃদির যেন কেমন ইরিটেড লাগতে শুরু করে।লাইক সিরিয়াসলি? এই ঘরে মানুষ থাকে?জানালা না খোলায় ঘরের মধ্যে কেমন যেন একটা গ্যাস জমে আছে।হৃদি গিয়ে জানালা খুলে দিতেই গ্যাস গুলো বেরিয়ে যায়।তারপর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা কাপড় গুলো বাথরুমে নিয়ে যায়।সেগুলো কেচে রোদে দিয়ে ঘর ঝাড়ুর কাজে লেগে পড়ে।
এ কেমন ছেলেরে বাবা!কতদিন ধরে ঘর পরিষ্কার করে না আল্লাহই জানেন।যেখানেই হাত দেয় সেখানেই চিপস চকলেটের প্যাকেট পায় হৃদি।বিশেষ করে চিপা চাপায়।সাম্যেরও এই রকম বদভ্যাস ছিলো।কত যে এ নিয়ে মামীর কাছে বকা খেয়েছে!যাক গে অতীত টেনে এনে লাভ নেই।বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে হৃদিকে ভাবতে হবে।নিজের কথা ভাবতে হবে।অনেক হয়েছে অন্যের কথা ভাবা।
স্টাডি টেবিল গুছাতে গিয়ে হৃদির হাত লেগে একটা ডায়েরি পড়ে যায়।ডায়েরীটা তুলতে গিয়ে হৃদি যেন পুরো আকাশ থেকে পড়ে।সিঁথির ছবি বিভোরের কাছে এলো কিভাবে?ডায়েরিটার ভেতর হয়তো ছিলো।মানুষের ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়া কখনো ভদ্রতার মধ্যে কাতারে যায় না।আপাতত ছবিটা রেখে দিক তারপর কোনো একসময় বিভোরকে জিজ্ঞাস করা যাবে নি।
মিসেস ছায়া ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আজকে আসতে পারছেন না।রান্না করে তিনি রেখে গিয়েছেন সময় মতো গরম করে হৃদি আর বিভোরকে খেতে বলেছেন।রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা।কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে হৃদি।বিভোর ঘরে প্রবেশ করে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরে যায় বিভোর।বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দেয়।হঠাৎ করেই চারপাশটা সে খেয়াল করে!আরে!এটা তো বিভোরের ঘর নয়।হৃদি বা মার ঘরে চলে এলো না তো বিভোর!নাহ এটা তো বিভোরেরই ঘর।কিন্তু এমন কেন?
-অবাক হওয়ার বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই।আপনার ঘর আমি আজ পরিষ্কার করেছি।
রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলে হৃদি।বিভোর ক্লান্ত গলায় হৃদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে বিভোর।ঢগঢগ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় বিভোর।তারপর হৃদিকে কাজে সাহায্য করতে গেলে হৃদি বলে,,
-এমা আপনি আসছেন কেন?সব প্রায় শেষের দিকে।আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি।সারাদিন ডিউটি করে আসছেন।আমায় হেল্প না করলেও চলবে।
বিভোর বরাবরই শান্ত প্রকৃতির ছেলে।তাই আর কথা বাড়ায় না।টেবিলে গিয়ে বসে।হৃদি খাবার গরম করে এনে বিভোরের সামনে পরিবেশন করে।খাবার খেতে খেতে অনেকটা অসস্থি মাখা কন্ঠে হৃদি বলে,,
-আপনার কাছে সিঁথি দির ছবি আসলো কিভাবে?
সিঁথির কথা শুনে বিভোর যেন খাবার খেতে গিয়েও থেমে যায়।রুটির টুকরোটা বিভোরের অজান্তেই হাত থেকে পড়ে যায়।সিঁথি!এই মেয়ে সিঁথির কথা জানলো কিভাবে?আর ও কী সিঁথিকে চেনে?কৈশোরের প্রথম প্রেম সিঁথি।সিঁথি আর বিভোর একই স্কুলে পড়তো।প্রেম নিবেদনটা সিঁথিই করেছিলো বিভোরও সিঁথির প্রতি দুর্বল থাকায় ওকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।কিন্তু এসএসসির পর আর বিভোর সিঁথির দেখা হয় নি।
-আপনি ওকে চিনেন?
-চিনবো না কেন?ও তো আমার ভাবি আগে।কিন্তু আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না!
হুহ!উত্তর!যাকে নিজের করার কোনো সুযোগ নেই তখন আর কী বলার।বিভোর মুচকী হেসে বলে,,
-আমার ক্লাস মেট।এম্নেই ছবিটা রেখে দিয়েছিলাম।
-কিন্তু আপনার কথায় তো অন্যকিছু মনে হলো।If you feel comfortable you can share with me…
বিভোর দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সেই শ্বাসের মধ্যে হাতাশার উপস্থিতি হৃদির চোখ এড়ায় নি।বেশি জোর করা ঠিক হবে না।এম্নেতেই উনি একটু অন্যরকম ধাচের মানুষ। হৃদি আবার বলে,,
-যখন আপনার মনে হবে যে আমার সাথে আপনি সিঁথিদির ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারেন তখন করিয়েন।
চলবে,,,