নিয়তি পর্ব-০৯

0
1227

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট৯

(হিরোর নাম চেইঞ্জ করা হইছে । হিরোর নাম বদলে দিলাম বিভোর)

-বিভোর মেয়েটা যেন কোন হাসপাতালে আছে?

বিভোরের আলমারি গুছাতে গুছাতে প্রশ্নটা করেন মিসেস ছায়া।বিভোরও তখন থানায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে,,

-সদরেই ভর্তি করাইছি।ওপর মহল থেকে অর্ডার আসছিলো।আল্লাহর রহমতে মেয়েটা সুস্থ হইছে।কিন্তু ঐ মামাবাড়িতে যাবে না।তাই হাসপাতালে পড়ে আছে।বাচ্চা পেশেন্টদের সাথে দুষ্টুমি করে দিন ভালোই কাটছে মেয়েটার।
-কিছু টাকা দিয়ে যাস তো থানায় যাওয়ার আগে।

বিভোর ওয়ালেট বের করে মিসেস ছায়ার হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দেয়।চাকরি হওয়ার পর থেকে বিভোর মায়ের কাছেই স্যালারি রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু মিসেস ছায়া তাতে সায় দেন না।ছেলে বড় হয়েছে।মার কাছে কেন স্যালারি রাখবে!তার চেয়ে ভালো হয় নিজে রাখবে আর মিসেস ছায়া দরকারের সময় চেয়ে নেবেন। হৃদির মতো বিভোরও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।বাবা ছিলেন সৎ পুলিশ অফিসার।স্ট্রোক করে দুনিয়ার মায়া ছেড়েছেন বহুদিন হলো।ছোটবেলা থেকে বিভোরেরও স্বপ্ন ছিলো বাবার মতো সৎ পুলিশ অফিসার হবে।দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আজ সে তা করে দেখিয়েছে।বিউটি আম্মা কতবার বিভোরকে টাকা দিয়ে হাত করতে চেয়েছে তার হিসাব নেই।কিন্তু পারেনি।অন্যান্য পুলিশ অফিসারকে টাকা দিয়ে হাত করতে পারলেও বিভোরকে টাকা দিয়ে হাত করতে সে ব্যর্থ। তাই তো বিভোর এখন বিউটি আম্মার দুই চোখের বিষ।

ছেলেকে থানায় পাঠিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রেডি হোন মিসেস ছায়া।পারলে আজই হৃদিকে নিয়ে আসবেন। একা থাকতে মোটেও ভাল্লাগছে না।সাথে কিছু টাকা নিলেন।যদি হৃদিকে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে আসার সময় ওর জন্য কেনাকাটা করবেন।

বিল্ডিং থেকে বেরুতেই এলাকার কুকুর বিড়ালগুলো মিসেস ছায়াকে ঘিরে ধরে।একা মানুষ মিসেস ছায়া।বিভোর কাজে ব্যস্ত থাকায় এলাকার কুকুর বিড়ালগুলোকে খাওয়াতেন মাঝে মাঝে তিনি।কখন যে তারা মিসেস ছায়াকে আপন করে নিয়েছে!মিসেস ছায়ায় তাদের সন্তানের মতো দেখে।মানুষ আর কুকুর বিড়ালের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। মানুষকে আপনি নয় দিন খাওয়ান।একদিন খাওয়াননি। সেই এক দিনটার কথাই মনে রাখবে সে।আর কুকুর বিড়ালকে একদিন খাওয়ান। তারা সেই দিনটার কথা সারাজীবন মনে রাখবে।নিজের জীবন দিয়ে হলেও সেই ঋণ শোধ করবে। মানুষকে ভালোবেসে ঠকতে হয় কিন্তু কুকুর বিড়ালকে নয়।সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিস্রুতি দিয়েও মানুষের বিচ্ছেদ হয়।অন্যদিকে সঙ্গী হারালে পাখি উপোসে মরে।সত্যি বলতে অবলা প্রানীগুলোর ভালোবাসাই খাঁটি হয়।

কুকুর বিড়ালগুলোকে খাইয়ে মিসেস ছায়া হাসপাতালের দিকে রওনা দেন।হাসপাতালে গিয়ে বিভোরকে ফোন দেয়।তাড়াহুড়োর মাথায় হৃদির কেবিন নাম্বার জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছিলেন মিসেস ছায়া।বিভোরের বলা কেবিনে যান মিসেস ছায়া।কিন্তু গিয়ে দেখেন কেউ নেই।ওয়ার্ডবয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন এই কেবিনের পেশেন্ট বাচ্চাদের ওয়ার্ডেই সারাদিন থাকে।ওয়ার্ডে গিয়ে মিসেস ছায়া দেখেন হৃদি একটা বাচ্চাকে খাইয়ে দিচ্ছে।বিভোর তাকে হৃদির ছবি দেখিয়েছিলো।তাই তিনি হৃদিকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেন।

-হৃদি?

মিসেস ছায়ার ডাকে হৃদি ঘুরে তাকায়।মিসেস ছায়াকে হৃদি চিনে না।কিন্তু একটা অচেনা অজানা মহিলা হৃদির নাম জানলো কিভাবে?হৃদি অবাক হয়।আর অবাক হওয়াটাই তো স্বাভাবিক নয় কী!হৃদি উঠে দাঁড়ায়।মিসেস ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

-সরি আপনাকে তো চিনলাম না!
-আমি বিভোরের মা।
-পুলিশ অফিসার বিভোর?
-হ্যা।
-ওহ আচ্ছা আচ্ছা।আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।

হৃদি বাচ্চাটাকে টুলে বসে খাওয়াচ্ছিলো।মিসেস ছায়ার জন্য সে টুলটা ছেড়ে দেয়।বিছানায় বসে বাচ্চাটাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,,

-বসুন আন্টি।

হৃদির কথা মতো মিসেস ছায়া টুলে বসে।হৃদি বাচ্চাটাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,,

-আমার কাছে তো ঠিকই খাচ্ছো?মার কাছে খেলে কি হতো?
-মা তো তোমার মতো গল্প শুনিয়ে খাইয়ে দেয় না
-এরপর থেকে মাও গল্প শুনিয়ে খাইয়ে দেবে।মার একটু মন খারাপ তো।তাই গল্প বলেন না। তুমি কিন্তু দুষ্টুমি করবে না।ডক্টর আঙ্কেল তোমায় রেস্টে থাকতে বলছে।খাওয়া শেষ হলেই ঘুম দিবা।
-আচ্ছা আন্টি।

বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিয়ে হৃদি মিসেস ছায়াকে নিয়ে নিজের কেবিনে যায়।হৃদি ইলেকট্রিক কেটলিতে চা বানানোর জন্য পানি গরম দেয় হৃদি।মিসেস ছায়া হৃদির দিকে তাকিয়ে বলে,,

-বিভোরের কাছে শুনলাম তোমার মামা বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
-জ্বী ভুল শুনেন নি।মানুষের ঘাড়ে বসে আর খেতে চাই না।
-তো যাবে কোথায়?
-যেখানে দু চোখ যায়।
-আমার সাথে যাবে?
-কোথায়?
-আমার বাসায়।

হৃদি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।মিসেস ছায়ার হাতে কাপ দিয়ে বলেন,,

-বুজতেছি না আপনি আর আপনার ছেলে বাসায় নেওয়ার জন্য এমন উঠে পরে লাগছেন কেন?
-ভুল করলে একটু মা।আমার ছেলে না শুধু আমিই।ওকেই আমি বলেছিলাম তোমায় আমাদের বাসায় নেওয়ার প্রস্তাব দিতে।
-কেন?
-একা মানুষ। তারমধ্যে ছেলে আইনী পেশার সাথে জড়িত।কখন বেরিয়ে যাবে কখন আসবে!কোনো কিছুরই ঠিক নেই।

হৃদি খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।এভাবে উনাকে কি খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া আদৌ ঠিক হবে?আর কত দিনই বা এভাবে হাসপাতালে পড়ে থাকবে।তার চেয়ে বরং উনার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাই।

-আমি রাজি আন্টি।আমি আপনাদের বাসায় যাবো।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে