নিয়তি পর্ব-০৬

0
1250

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৬

ঘরের এক কোণায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিঁথি।পাশে হৃদি।সামনে বসে আছে সিঁথির মা বাবা আর সাম্যের মা বাবা। ঠিক ঘরের আরেক কণায় ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে সিঁথির দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে সাম্য।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে জ্যান্ত কবর দিতে।তাতেও সিঁথির প্রতি সাম্যের রাগ মিটবে কি না সন্দেহ।

-তোর কী আদো লজ্জা বলতে কিছু আছে?শেষে ঐ নেশাখোর…

গলা আটকে আসছে সিঁথির বাবা শফিক সাহেবের।মেয়ের এইরকম কাজের জন্য তিনি চোখ তুলে তাকাতে পারছেন না।বিয়ের সময় সাড়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণ দিয়ে সাজিয়ে আনা হয়েছিলো সিঁথিকে।সব ঐ নেশাখোর ছেলে নীরবে নিয়ে গেছে।সোফা থেকে উঠে কষিয়ে চড় বসিয়ে দেন মেয়ের গালে শফিক সাহেব।এম্নেতেই পুরো পরিবেশ থমথমে।তার ওপর এমন ঘটনা ঘটায় পুরো ড্রয়িংরুমে আরও নীরবতা ছেয়ে যায়।গালে হাত দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সিঁথি।হৃদি যে কিছু বলবে সে সাহস হৃদির হচ্ছে না।পাকনামির জন্য ইতিমধ্যে সে সাম্য আর মামার কাছ থেকে বকা খেয়েছে।তাই চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয়।

-ভাইজান তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে যাও।লাগবে না আমার এমন দুশ্চরিত্রা মেয়ে।এর চেয়ে ঢের গুনে ভালো মেয়ে আমি সাম্যের জন্য পাবো।

মুখে ভেংচি কেটে সোজাসুজি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় বিলকিস বেগম।বোনের কথা শুনে শফিক সাহেবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েন।তিনি আদোও কী তার মেয়ের সংসার টেকাতে পারবেন?পরে ত আর বিয়েও দিতে পারবেন না।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে দিক।কিন্তু না।বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।তাই এই মুহুর্তে শফিক সাহেবেরও উচিৎ মাথা ঠান্ডা করে ব্যাপারটা সামাল দেওয়া।করুণ কন্ঠে বোনের কাছে আর্জি জানায় সে যাতে তার মেয়েকে মাফ করেন।কিন্তু বিলকিস বেগম নিজের সিদ্ধান্তে অটল।সে আর সিঁথিকে ঘরে রাখবেন না।শফিক সাহেব অসহায়ের মতো সালাম সাহেবের পায়ে পরেন।মেয়ের সংসার বাঁচাতে।সালাম সাহেবের করুণা হয়। আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। শান্ত গলায় তিনি বলেন,,

-আচ্ছা।তবে এটাই শেষ।

শফিক সাহেব হাফ ছেড়ে বাঁচেন।সিঁথি কেঁদে দেয়।ইনশাআল্লাহ ও এবার নিজেকে শুধরে নেবে।আর ভুল করবে না সে।

কিছুদিনের মধ্যেই সাম্য আর সিঁথির সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়।সেই সাথে বাসার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে যায়।একে একে হৃদির জন্য ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধও আসে।রূপে গুণে সব দিক দিয়েই হৃদি পরিপূর্ণ। তবে বেশির ভাগ সম্বন্ধ গুলোতেই ছেলে বয়স্ক হয়ে যায়।আর বাবা মা ছাড়া। হৃদি মা নেই।তাই সে শ্বশুর শ্বাশুড়ি ছাড়া বিয়ে করবে না।বিয়ের আগে মা বাবার আদর পাইনি বিয়ের পরে অবশ্যই মা বাবার আদর পেতে হবে।হৃদির এমন কথা শুনে বিলকিস বেগম বলেন,,

-শ্বশুর শ্বাশুড়ি ছাড়া বিয়ে করবি ঝামেলা নেই।

হৃদি মুচকী হেসে তখন একটাই উত্তর দেয়,,

-শ্বশুড় শ্বাশুড়ি চাই আমায় তোমায় কে বললো মামী?আমার মা বাবা চাই।

★★
-জ্বী।৪টা মেয়ে আছে।প্রতি মেয়ে ৭০হাজার।রাজী?
-হুম,রাজি।কিন্তু ৫টা হলে ভালো হয়।
-আচ্ছা আমায় কিছুদিন সময় দিন।ব্যবস্থা করছি।

কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয় আলভী।মেয়েদের গোঙানির শব্দে ঘরের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে এসেছে।সবার একই আর্জি তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক।কিন্তু আলভীর তাতে মন ভরে না।তার টাকা চাই।প্রচুর টাকা চাই।মেয়ে গুলো কে দেখে যে কারও জিভেই জল চলে আসবে।আলভীরও লালসা জাগছে মেয়ে গুলোকে দেখে।কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।কাস্টমার বলে দিয়েছে একেবারে খাটি ভার্জিন মেয়ে চাই।তাই ব্যবসার লাভের জন্য হলেও আলভীর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।হ্যাঁ আলভী নারী পাচার কারী দলের লোক।ওর টার্গেটে থাকে এতিম মেয়েরা।চারটা মেয়েকে আজই এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু একটা মেয়ে কম পড়ায় আজ আর আলভীর মেয়েগুলোকে সরানো হয়ে ওঠে না।হাতের কাছে আর কোনো মেয়ে না পাওয়ায় আলভীর হৃদির ওপর চোখ পড়ে।রূপে জান্নাতী হুর।মা মারা গেছে।বাবা তাই পর হয়ে গেছে।মামী আর মামাতো ভাইয়ের বউয়ের চোখের বালি।এই মেয়ে নিখোঁজ হলে কেউ খোঁজ খবর নেবে না।তবে আজ না।লাস্ট বারের মতো মামাকে দেখে আসুক হৃদি।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটা পৈশাচিক হাসি দেয় আলভী।ঘরে থাকা মেয়েগুলো কেঁপে উঠে।এরই মধ্যে হৃদির ডাক আসে,,

-আলভী।
-যাই।

কথাটা বলেই আলভী ঘর থেকে বেরোয়।ভালো করে দরজা আটকিয়ে হৃদির কাছে যায়।হৃদি ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে,,

-তোমার ভাই কিন্তু পড়াশোনায় ঢিল দিছে।হোমওয়ার্ক দুই দিন ধরে পাই না।কাল যেন পাই।
-এই বলদ।এত ভালো একটা টিউটর আনলাম তাও তুই… আজকে তোর হচ্ছে।

হৃদিকে বিদায় করে দিয়ে প্ল্যান সাজায় আলভী।সেই প্ল্যানে সাহায্য করে আলভীর মা।নারী ও শিশু পাচার কারী লোকের কাছে তিনি বিউটিআম্মা নামে পরিচিত।নারী ও শিশু পাচার করা ছাড়াও তিনি মাদক ব্যবসায়ী। জেলে গিয়েছেন বহুবার।কিন্তু কুকুরের লেজ তো আর সোজা হয় না।

যথারীতি আর পাঁচটা দিনের মতো হৃদি বিকালে অভিকে পড়াতে আসে।আলভীর মা তাকে চা খেতে দেন।সেই চায়ের মধ্যেই মিশানো ছিলো নেশাদ্রব্য। চা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই হৃদির মাথা ঘুরাতে শুরু করে আর ঘুম ঘুম পায়।বিউটি আম্মা ওকে নিজের ঘরে শুয়ে রেস্ট নেওয়ার জন্য বলেন।শরীর খারাপ লাগায় হৃদিও তার কথা ফেলতে পারে না।হৃদি বিউটি আম্মার ঘরে প্রবেস করতেই আলভী ওর মুখ চেপে ধরে। বিউটি আম্মার ঘরটা একটু ভেতরের দিকে।ঘরের শব্দ বাইরে খুব একটা যায় না।হৃদি চিৎকার করে।কিন্তু ঐ!বাইরে শব্দ যায় না।তাই হৃদি কোনো সাহায্য পায় না।বিউটি আম্মা এসে হৃদির হাত পা বাঁধেন।আলভী পরে হৃদির মুখ বাঁধে।পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেই ঘরে।যেখানে মেয়েগুলো আছে।

হৃদির নেশারঘোর কাটে প্রায় ঘন্টা তিনেক পর।নিজেকে আবিষ্কার করে তখন অন্ধকার ঘরে।আশেপাশে শুধু মেয়েদের গোঙানির শব্দ।হাত পা মুখ বাধা থাকায় কেউ কিছু করতে পারছেনা।এই মুহুর্তে হৃদি কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।মাথা করছে না তার।অন্ধকারে আবছা আলোয় যা জিনিস দেখা যাচ্ছিলো এখন হৃদি তাও দেখতে পারছে না।ঝাপসা হয়ে আসছে চারপাশটা।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে