#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন (কন্ঠ)
#পার্ট৫
বাসার আশে পাশে তন্ন তন্ন করে সিঁথিকে খোঁজা হয়।সব বান্ধবীর বাসায় খোঁজ নেওয়া হয় যে সিঁথি কারও বাসায় গিয়েছে কি না।কিন্তু সবারই একই উত্তর সিঁথি তাদের কারও বাসায় যায় নি।তাহলে গেলো কোথায়?থানায় কী জিডি করা উচিৎ?কিন্তু পুলিশ কী আদোও মামলা নেবে?যেহতু এখনো বারো ঘন্টা পেরোয় নি সিঁথি নিখোঁজ।বাইরে থেকে এসে একরাশ হতাশা নিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে সাম্য।দুপুরের দিকে সিঁথির আচরণ এখনো হৃদির মনে নাড়া দিচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে,সিঁথির নিখোঁজ হওয়ার সাথে দুপুরের কলের কোনো কানেকশন আছে।মনে জমে থাকা কিছু প্রশ্ন নিয়ে সে সাম্যের কাছে যায়।হৃদি কাছে যেতেই সাম্য মাথা উঁচু করে হৃদির দিকে তাকায়।আর বলে,,
-আমি এখন খাবো না।তুই যা।
-না খেলে তো শরীর খারাপ করবে।
-এক্টা মানুষ নিখোঁজ আর তুই ভাবলি কিভাবে এই পরিস্থিতিতে আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে।
ঝাঝালো কন্ঠে ধমকের সুরে হৃদিকে কথা গুলো শুনিয়ে দেয় সাম্য।সাম্যের এমন আচরণে হৃদি কেঁপে উঠে।সাম্য খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে।সহজে রাগ করে না। তবে যখন রাগ করে তখন পুরো আগ্নিওগিরির মতো ফেটে যায়।আগ্নেয়গিরির আশে পাশে থাকা ভুমি,জিনিস গুলোর মতো হৃদি কেঁপে ওঠে।
-তোমায় কিছু বলতাম আমি সাম্যদা।
-কী?
-সিঁথি দি না আজকে দুপুরে কার সাথে যেন কথা বলো।আমি ঘরে ঢুকতেই সিঁথি দি রেগে যায়।আমার মনে হয় সিঁথি দির মিসিং হওয়া আর দুপুরের বিহেভিয়ার এবং কলের কোনো না কোনো কানেকশন আছে।
-কার সাথে কথা বলেছে জানিস?
-জানলে তোমায় বলতাম নাকি?ভাবলাম তোমার কাজে লাগবে তাই বললাম আর কী!?
কথাটা বলেই হৃদি সাম্যের ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।ওদিকে নির্জন রাস্তায় ব্যাগে গয়নাগাটি আর জামা কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিঁথি।সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু নীরবের খবর নেই।নির্জন রাস্তায় একা এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সিঁথির একটুও ভাল্লাগছে না।প্রচন্ড ভয় করছে।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।আল্লাহ না করুক কোনো যদিও অঘটন ঘটে যায়।প্রায় মিনিট পনেরো পরে কোনোরকমে হাঁটতে হাঁটতে নীরব আসে।নীরবের অবস্থা দেখে সিঁথির বুঝতে বাকী রইলো না যে নীরব নেশা করেছে।
-তুমি আবার নেশা করেছো?
-কী মনে হয়?তুমি তোমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে করে নেবে আর আমি আঙুল চুষবো?
টলতে টলতে সিঁথির কথার জবাব দেয় নীরব।সাথে পালটা উত্তরও করে।সিঁথিও সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে দেয়।
-আমি তো ইচ্ছে করে বিয়ে করেছি!বাবা মা আমায় জোর করে সাম্যের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
-কি জানি কার মনে কী থাকে সেই ভালো জানে।যাক গে বাদ দাও।যা যা বলেছিলাম এনেছো?
-হু।
-কই?
সিঁথি নীরবের সামনে ব্যাগ এগিয়ে দেয়।চিলের মতো ছো মেরে নীরব সিঁথির হাত থেকে নিয়ে যায়।ব্যাগ খুলে সব কিছু ঠিক আছে কি না দেখতে লাগে।ব্যাগে সিঁথি নিজের জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে রেখছিলো।নীরব সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাগ থেকে বের করে ছুড়ে ফেলে মাটিতে।নীরবের এই রকম আচরণে সিঁথি কিছুটা ঘাবড়ে যায়।কাঁপা কন্ঠে সে বলে,,
-কী করছো এই সব নীরব?
নীরব সিঁথির কথার জবাব দেয় না।গয়না ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতে নেয়।সিঁথি বাধা দেয় তাকে।
-কই যাও আমায় রেখে?
-হাত ছাড়
-নাহ ছাড়বো না।তোমার জন্য আমি স্বামী সংসার ফেলে আসলাম আর তুমি আমায় ফেলে রেখে যাচ্ছো?
নীরব কী করবে ভেবে পায় না।পাশে থাকা ইটের টুকরো দিয়ে আঘাত করে সিঁথির মাথায়।সিঁথি অজ্ঞান হয়ে যায়।আশে পাশে তখন কোনো মানুষ ছিলো না।নীরব গয়নার ব্যাগটা নিয়ে পালিয়ে যায়।সবুজ ঘাসের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে সিঁথি।
শুনশান নীরব রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট নেই।চাঁদের জোসনা,টর্চ আর ফোনের ফ্লাস লাইটের আলোই ভরসা।মানুষ জনের সমাগমও কম এখানে।এক ব্যক্তি সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।চাঁদের জোসনায় তিনি আবছা আবছা দেখতে পায় যে রাস্তার ধারে ঘাসের ওপর কেউ পরে আছে।লোকটা সেখানে যায়।গিয়ে দেখে একটা মেয়ে ঘাসের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।লোকটা ফোনের রিঙটোন শুনতে পায়।খুঁজে দেখে কাপড়ের নিচে পড়ে ছিলো ফোনটা।সম্ভবত মেয়েটারই হবে।লোকটা কল রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে হৃদি,,,
-হ্যালো সিঁথি দি, তুমি কই?বান্ধবীর বাসায় যাবা বলে বের হইছিলাম।কোথাও তো পেলাম না।আর ফোন ধরতেছিলা না কেন?
-জ্বী হ্যালো!আপনি যাকে চাইছেন সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
-আপনি কে?
-জ্বী আমি আকাশ।রাস্তার ধার দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখি।কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটার ফোন বাজছে।রিসিভ করতেই আপনি…
-কোথায়?জায়গায় নাম বলেন।যলদি বলেন
আকাশ জায়গাটার ঠিকানা দেয় হৃদিকে।হৃদি আকাশকে সেখানে কিছুক্ষণ থাকতে অনুরোধ জানায়।দিন কাল ভালো না।জানোয়ারে ভরে গেছে দেশটা।খবরের কাগজ খুললেই শুধু ধর্ষণ ধর্ষণ আর ধর্ষণ।সবাইকে বিশ্বাস করা যায় না।আকাশ যেহেতু ফোন রিসিভ করে সব জানিয়েছে তাই ওকে বিশ্বাস করাই যায়।হৃদি আর সাম্য আকাশের বলা ঠিকানায় রওনা দেয়।রাত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া খুব একটা নেই।তাই হৃদি সাম্যের সিঁথির কাছে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগে নি।হৃদি আর সাম্য গিয়ে দেখে সিঁথি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।চারপাশটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিঁথির আনা জামা কাপড়।হৃদি গিয়ে সিঁথিকে ধরে।আকাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাম্য তাকে বিদায় করে দেয়।চারপাশটা ভালো করে দেখে সাম্য।
-গয়না গাটি নিয়েই তো বাসা ছাড়ছে।তো ঐগ্লা কই?
-উফফ সাম্যদা এখন এইসব নিয়ে ভাবার সময়?দেখো না সিঁথি দি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।প্লিজ কিছু একটা করো।আশে পাশে দেখো পানি পাও কি না।
-থাকুক অজ্ঞান হয়ে।ওর মতো চরিত্রহীন মেয়ের বেঁচে থাকারই অধিকার নাই।
ঝাঝালো কন্ঠে কথাটা হৃদিকে বলে সাম্য।সরল মনে মেয়েটা ভুল করে ফেলেছে।তাই বলে সাম্য এমন করবে?মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়।সাম্যের সিঁথির প্রতি এমন আচরণে হৃদির খুব রাগ হচ্ছে।সেও সাম্যকে পালটা ধমকের সুরে বলে,,
-তোমায় বলছি আমি পানি আনতে।না আনলে বলো আমি আনতেছি।এতই যদি রাগ সিঁথি দির ওপর তো আসলে কেন আমার সাথে?আমি একাই আসতাম।
সাম্য আর হৃদিকে কিছু বলে না।কথায় কথা বাড়ে।বাইকের কাছে গিয়ে দেখে বোতল আছে কিন্তু পানি নেই।আশে পাশে খুঁজে একটা পুকুর পায়।সেখান থেকেই পানি এনে হৃদির হাতে দেয়,,
-নে পানি নিয়ে আমায় উদ্ধার কর।
হৃদি মুখ ভেঙচি কেটে সাম্যের হাত থেকে পানি নেয়।সিঁথির মুখে পানির ছিটা দেয়।পর পর তিনবার পানির ছিটা দেওয়ার পর সিঁথির জ্ঞান ফিরে।এই মুহুর্তে সাম্যের ইচ্ছা করছে সিঁথির গালে কষিয়ে চড় মারতে।বেহায়া মেয়ে কোথাকার।গয়নাগাটি নিয়ে পালিয়েছে।এতই যদি সমস্যা তো সাম্যকে বলতেই পারতো।মুক্তি দিয়ে দিতো সাম্য তাকে।তারপর হৃদিকে নিজের করে নিতো সে।হৃদি ধরে সিঁথিকে দাঁড় করায়।সাম্য তেড়ে যায় সিঁথির দিকে।কিন্তু হৃদির চোখ রাঙানির কাছে হার মানতে হয় তাকে।
চলবে,,,