গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা ❤️🖤
লেখিকাঃ-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৬
সেদিন আধারদের পৌছুতে পৌছুতে রাত হয়ে যায়। কারণ মাঝে বৃষ্টি হওয়াতে বাস অনেক ধীর গতিতে চলছিল। অপর দিকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ব্রজপাত সাথে ফ্রি বাসের মেয়েরা তো চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছিল, শুধু তিনজন ছাড়া,আধার মিম আর মারিয়ম। মারিয়া তো নিজের ফোন বের করে তার ব্রজপাতের সাউন্ড রেকর্ড করতে ব্যাস্ত তার ফোনের নতুন রিংটান দিবে। কিন্তু চিল্লাপাল্লার জন্য সে বারবার ব্যার্থ। দিহান বলে
—-কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা তুমি!!!আমি তো ভাবছিলাম নাইকাদের মতো ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবা আর তুমি কি করছ!!! মারিয়া বলে
—-শুনেন নাপিত ভাইয়া। এইটা রিয়েল লাইফ বাংলা সিনেমা না বুঝছেন। দিহান বলে
—-তোমাকে আপনার কোনদিক দিয়ে নাপিত লাগে, একটু বলবেন রানি এলিজাবেথ। মারিয়া বলে
—-কুইনরা প্রজাদের কাছে রাজ্যের ব্যাপার ছাড়া পর্সোনাল কিছু বলে না, আর আপনি নাপিত ছিলেন নাপিত আছেন আর নাপিতই থাকবেন। দিহান বলে
—-অওওও হ্যালো মিস মারু, ফারু ফুলঝাড়ু আরেকটা কথা বললে। তখনই চোখ পাকিয়ে বলে
—-কি হুমমম?কি করবেন? আরকেট কথা যদি আপনি বলছেন সাজেক গিয়ে পাহাড় থেকে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব তারপর চল্লিশায় বিরিয়ানি খাবো। দিহান বলে
—-আগ্গে না আন্নে বিরিয়ানি না জেলের ডাল ভাত খাবেন। মারিয়া বলে
—-ঐ মিয়া চুপ করেন। আবার ব্রজপাত হয় আর মেয়েরা আবার চিৎকার দিয়ে উঠে, মৌতো পারে রাতুলকে আম ভরতা করে দেয় Without নুন, ঝাল। মিম এবার বিরক্ত হচ্ছে কারণ তার স্বাদের ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে সবাই চেচিয়ে চেচিয়ে। তাই সে এবার রেগে দাড়িয়ে বলে
—–সম্মানিত বড় আপুরা দয়া করে চুপ করুন, আপনাদের চিল্লা চিল্লাতে বাস বেচারা না নিজে খাদে ঝাপ দেয়, সাথে আপনারাও মরবেন আর আমার ভবিষ্যৎ হাসবেন্ডকে বিধবা বানাবেন সাথে আপনাদের হাসবেন্ড দেরও। যত্তসব কথাটা আস্তে বলেই নিজের সিটে বসে পরে। আর সবাইতো মিমের কথায় হাসছে। বেচারা আশিক আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে
—-দোস্ত এইডা মাইয়া নাকি অন্য কিছু কি কথা বলে, আর আধার তো দিব্যি প্রকৃতি নিয়ে ব্যাস্ত আছে। আদ্রিয়ান বলে
—-হুমমম, সে নিজের জগৎ নিয়ে ব্যাস্ত,আর এইদিকে যে আমি তাকে আমার পৃথিবী, মঙ্গল থেকে শুরু করে বূধ, শুক্র,শনি বৃহস্পতি,নেপচুন সব বানাই বসে আছে সেটা তার অজানা। আশিক বলে
—-আমি ভাবি নাই তোর মতো ছেলে প্রথম দেখাতেই আধারের মতো মেয়ে উপর ফিদা হয়ে যাবে। আদ্রিয়ান বলে
—-ওকে যেদিন প্রথম দেখি বিশ্বাস কর আমার মনে হচ্ছিল একটা বাচ্চা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে, ওর টলমল চোখের চাহনি ঐদিন আমার জন্য মাদকতার নেশার মতো লেগেছে। আর ঐ ছেলেটাকে কি করেছিস। আশিক বলে
—-তুই যে মার মারছিস, আমি তো বাবা ভাবছিলাম মেরেই ফেলবি এখন সে এই শহর ছেড়ে পালিয়েছে। ভার্সিটির সব ছেলেরাই এখন আধারেরর থেকে দূরেই থাকবে। আদ্রিয়ান বলে
—-হ্যা। এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথা, আর একসময় তার সাজেক পৌছে যায় তারা একটা রিসোর্টে উঠে। আধার মিম আর মারিয়া এক রুম নেয়। আশিক, আদ্রিয়ান নেয় তাদের পাশের রুমটা। তারপরের দুই রুমে রাতুল আর দিহান। সবাই যার যার মতো চলে যায় রুমে আজ তারা বেস টাইয়ার্ড। কিছু সময় পরই তারা রেস্ট নিয়ে রাতে বসে একসাথে গল্প করবে বলে কম বেশি সবাই আছে, আর যারা খুব ক্লান্ত ছিলি তার নিজেদের রুমে গিয়ে রেস্ট নিচ্ছে। চারদিকে গুল করে বসে আছে সবাই আর মাজখানে আগুন। আর রাতুল ব্যার্থ টংটং সুর তুলার চেষ্টা করছে গিটা কিন্তু তা আরকি হয়? আশিক গিটার টা নিয়ে আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে বলে
—-নে শুরু কর অনেকদিন তোর গান শুনিনা। আধার বলে
—-ওমাই কপাল আলু ভাইয়া আপনি গিটার বাজাতে +গাইতেও পারেন। আদ্রিয়ানকে আলু বলাতে সবাই হেসে দেয় আদ্রিয়ান আলু বলাতে না জতটা রাগ হয়েছে তার চেয়ে বেশি রাগ হয়েছে ভাইয়া বলাতে। আদ্রিয়ান বলে
—-হ্যা পারি তুমি তো তাও পারোনা মিস.চিংগুপিংগু। আধার বলে
—-চিংগুপিংগু নোট বেড। তখনই মারিয়া বলে
—-কে যে বলেন ভাইয়া গিটার বাজানো আর গানে আধার বরাবরই ভালো। আশিক বলে
—-বললেই হলো আদ্রিয়ান বেস্ট,আর মেয়েরা পারবে না । তখনই একটা মেয়ে বলে
—-আধার আমাদের মান সম্মান এখন তোমার হাতে প্লিজ। আদ্রিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের হাতের গিটারটা এগিয়ে দেয় আধারের দিকে আধারও সেটা নিয়ে নেয়। গিটারটা অনেক সুন্দর ডার্ক ব্লাক কালারের। আধার বললো
—- আমি গিটার বাজাবো আপনি গাইবেন রাজি? আদ্রিয়ান বলে
—-ওকে। আধার বলে
—-গান? আদ্রিয়ান আধারের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে বলে
—-কি করে বোঝাবো তোকে কত আমি চাই। আধার কিছু সময় ভেবে মুচকি হেসে বললো
—ওকে, বলেই গিটারে টুন তুলতে লাগলো আর আদ্রিয়ান গান ধরলো।
★★বোঝাবো কি করে তোকে কতো আমি চাই?
তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই
বোঝাবো কি করে তোকে কতো আমি চাই?
তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই
তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই আমি
তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই
আজ চুরি চুরি মন উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন
আজ চুরি চুরি মন উড়ি উড়ি মনঘুড়ি ঘুড়ি মন
তিলে তিলে হলো কি যে?গেল ভিজে মন।
আগে তো এ শ্রাবণের ছিল না কারণ
তোর সাথে দেখা হলে কোনও নিরালায় নিজেকে উজার করে রেখে দেওয়া যায়। আজ চুরি চুরি মন
উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন।জেগে আছে দিন আর সেজে আছে ঘর। শুনাতে আমায় তোর আসার খবর
উঠে যাবে চাঁদ আর ফুটে যাবে ফুল।মেলে দিলে চোখ তুই খুলে দিলে চুল।আজ চুরি চুরি মন উড়ি উড়ি মন।
ঘুড়ি ঘুড়ি মন বোঝাবো কি করে তোকে কতো আমি চাই?তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই।
তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই। আমি তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই।আজ চুরি চুরি মন।উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন,আজ চুরি চুরি মন।উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন। আদ্রিয়ান সম্পূর্ণ গানটা আধারকে দেখে গায়। গান শেষে সবার হাত তালিতে আদ্রিয়ানের ঘোর কাটে।কিন্তু মিম বলে
—-গানটা সেই ছিল কিন্তু, আধার এর চেয়ে বেশি ভালো গায়। আশিক বলে
—–মিম পঁচা ডিম, চুপ করে বস, আর কাথার রানি মিস আধার একটা গান হয়ে যাক? আধার বলে
—-না অন্য কোনোদিন, আর আলু ভাইয়া আপনার গলটা অনেক মিষ্টি। আদ্রিয়ান এবার রেগে যায় আর বলে
—-হ্যা, চিনির মতো মিষ্টি। আধার বলে
—-তাহলে আজ থেকে আপনার নেক নেম মিষ্টি আলু।আদ্রিয়ান বলে
—-এ্যা!!! আধার
—এ্যা না হ্যা। দিহান বলে
—-তো মিষ্টি আলু ঘুমাবি না? আর আবার সবাই হেসে দেয়, আদ্রিয়ান মনে মনে বলে
—-এতো কথা কিভাবে জানে,এই মেয়েটা আশিক ঠিকই বলে কথার রানি।। তখনই আশিক বলে
—-কি ভাবছিস মিষ্টি আলু? মিম বলে
—-আশাকি নামক বাশি ভাইয়া আপনি কিছু পারেন, পারেন তো শুধু বাচ্চাদের চিপস খেতে? রাতুল বলে
—আশিক নামক বাশি ওয়াও নাইছ নেম। হাহাহা। দিহান বলে
—-আলহামদুলিল্লাহ্ এখন যদি আমাকে নাপিত বলিস তাহলে আমি তোদের সুন্দর সুন্দর নাম গুলো দিয়ে ডাকবো। মারিয়া বলে
—-নাপিতকে নাপিত বলবে না তো কি বলবে। দিহান বলে
—-এই ফুলঝাড়ু। মারিয়া বলে
—-নাপিত। এভাবেঅনেকটা সময় কাটানোর পর তারা যে যার মতো ঘুমাতে চলে যায়। কারণ কালকে তারা যাবে সাজেক ঘুড়তে।
পরিবেশ টা অনেক সুন্দর চারপাশে মেঘপর মেলা এইদিক ঐদিক উড়ে বেড়াচ্ছে আর সবাই নিজের মতো। আদ্রিয়ান ব্যাস্ত আধারকে দেখতে একসময় আধার এদম পাহাড়ের কিনারায় চলে যায় আর ওমনি খেয়াল না করারা কারণে পা পিছলে পড়ে যায়। আর আদ্রিয়ান আধার বলে চিৎকার দিয়ে।।।
চলবে