নিশ্চুপ ভালোচবাসা পর্ব-০১

0
2080

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা 🖤❤️
writer:- ||আইদা ইসলাম কনিকা ||
পর্বঃ-০১

ভার্সিটির মাঠ ভর্তি ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে, মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আধার আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার দুই বন্ধবী মিম আর মারিয়া , আর তার সামনেই বাইকে বসে আছে আর সেন্টার ফ্রেশ চিবুচ্ছে আদ্রিয়ান আর আদ্রিয়ানের কিছু ফ্রেন্ড। এইতো কিছু সময় আগের কথা, আধার তার নিজের নতুন ভার্সিটিতে আসে, আসলে আধার ঢাকার মেয়ে না তার বাবার বাড়ি চট্টগ্রাম, সে সেখান কারই মেয়ে। তার বাবা একজন বিদেশি প্রবাসী( বিজনেস ম্যান হেনতেন লিখতে লিখতে এক ঘেয়ামি লাগছিল তাই এটাই দিলাম)সে তার মা,আর তার ছোট বোন আয়রা থাকে বাংলাদেশে। তারা ঢাকা এসেছে আধারের জন্য। আধারের স্বপ্ন পূর্ণ করতে তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার আর ভাগ্য ভালো থাকায় সে সহ তার বান্ধবী মিম ও মারিয়া সেটা পেয়ে যায়। তো মারিয়া, মিম আর আধার একসাথেই থাকে । [বাকিটা পরে জানতে পারবা]।

ভার্সিতে এসে বেশ ভালোই লাগছিলো আধারের কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল সে তার নিজের ক্লাস খুঁজে পাচ্ছিল না, তারপর জানতে পারে তারা যেই বিল্ডিংএ ক্লাস খুঁজে পাগল হচ্ছে সেটা অন্য ডিপার্টমেন্টর। আর তাদের ডিপার্টমেন্ট হলো মাঠের অপর পাশের দিকে। তাই আধার আর মিম কিছু না ভেবেই তৈড়িৎ গতিতে ছুট লাগায় । আর তখনই সে কারো সাথে ধাক্কা লেগে ঠুস করে নিচে পরে যায় সাথে সেই মানুষটাও , (কি ভাবছ নায়কের সাথে ধাক্কা লাগছে, আমাকে এত দিনে এই চিনলা তোমরা 😪😪 Sent এক বালতি বড় সমবেদনা তাদের জন্য যারা হিরোর সাথে ধাক্কা লাগছে ভাবছে।) আধার তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ের সাথে তার ধাক্কা লেগেছে,মেয়েটা বেশ কিউট লম্বা চুল গুলো বিগ ক্রাল করা পরণে ডার্ক ব্লু কালারের শার্ট আর হুয়াট কালারের জিন্স আর মুখে মেকাপ । মেয়েটা বেশ রেগে আছে আধার উঠে দাড়ায় সাথে সেই মেয়েটাও আর সাথে সাথে একটা চড় লাগিয়ে দেয় আধারের গালে, আর বলতে লাগে

—-ইউ ব্লাডিফুল। চোখে দেখো না নাকি, ওহ হ্যা দেখবে কি করে এর জন্যই তো চোখে চশমা পরেছ। মেয়েটার এমন কথা শুনে আশেপাশের সবাই হুহু করে হেসে দেয় আর আধার মাথা নিচু করে আগের নেয় দাড়িয়ে আছে। মেয়েটার একটা বান্ধবী বলে

—-আরে বাদদে তো মৌ, যত্তসব থার্ড ক্লাস মেয়ে। আধারের কথাটা বেশ গায়ে লাগে কিন্তু সে এখনো কিছু বলে না চুপচাপ সব কথা হজম করছে। মৌ বলে

—-ঠিক বলেছিস, যত্তসব থার্ড ক্লাস মেয়ে। তখনই বাইক নিয়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করে গ্যাং AD, মানে আদ্রিয়ান আর তার বেস্ট ফ্রেন্ড আশিক, দিহানের এর গ্যাং। আদ্রিয়ান হলো ভার্সিটির হেড এর ছেলে আর ভিপি তো নাম ক্ষ্যাতি দুনটাই বেশ। আর পড়া-লেখায় ও ভালো তাই সব টিচারের পছন্দের সে। আর তাছাড়া আদ্রিয়ান ভার্সিটির অর্ধেক মেয়ের ক্রাশ আর বাকি অর্ধেক মেয়ে আশিকের আর দিহানের জন্য ফিদা তিন বন্ধুই কোনো ফিল্মের হিরোর চেয়ে কোনো অংশে কম না।কিন্তু দিহান কোনো এক কারণে আসতে লেট করে। আদ্রিয়ানের গ্যাং দেখে ভার্সিটির মাঠে ছোট খাটো একটা ভির জমে গেছে তাই তারা ঠিক করে তারা সেখানে গিয়ে দেখবে কি হয়েছে, কারণ এটা তার দায়িত্ব, আদ্রিয়ান সেখানে যায় সাথে আশিকও আদ্রিয়ানকে দেখে সবাই সাইড হয়ে যায়, আর মৌতো সেই খুশি কারণ সে আদ্রিয়ান বলতে অন্ধ যদিও আদ্রিয়ান মৌকে ফ্রেন্ডের বেশি কখনো ভাবে না। মৌ ভাবে সে আদ্রিয়ানকে দিয়ে আরো বকা শুনাবে আধারকে। আদ্রিয়ান আর আশিক বাইক থামিয়ে বলে
—কি হয়েছে এখানে? মৌ বলে

— এই থার্ড ক্লাস মেয়েটা আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আধারকে ইশারা করে। আদ্রিয়ান বাইকে হেলান দিয়ে আধারকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চেক করতে থাকে। মেয়েটা অনেক সুন্দর। চুলগুলো সামনে দিয়ে ববকার্ট করা নিজ দিয়ে হালকা কুকড়ানো, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, পরনে একটা কালো কালারের টপস কালো জিন্স আর স্কার্প ঝুলানো গলায়, মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,কাধেঁ লেডিস ব্যাগ । আদ্রিয়ান সেন্টার ফ্রেশ চিবুতে চিবুতে মৌকে বলে

—-তোর কোন দিক দিয়ে ওকে থার্ড ক্লাস মনে হচ্ছে? মৌ আদ্রিয়ানের কথায় অবাক হয়ে যায় কারণ সে তাকে এভাবে বললো তাই। মৌ কিছু বলে না। আদ্রিয়ান আধারকে উদ্দেশ্য করে বলে

—-এই মেয়ে নামকি তোমার? আধার মাথাটা উঁচু করে তাকায় ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে চোখে লাল বর্ণ ধারণ করে পানিতে টলমল করছে। আধার ভাবে আবার হয়তো তাকে হেনস্তা করা হবে তাও সে বলে

—-আধার । আদ্রিয়ান বলে

—-কোন ইয়ার? আধার মাথা নিচু করেই বলে

—-ফার্স্ট ইয়ার। আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি কি ওকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো? আধার তখন সেই আগের মতো আদ্রিয়ানের দিকে তাকায় যার মানে না। তখনই মিম বলে

—না ভাইয়া আমরা তো আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছিলাম। মাঝে এই মৌমাছি এসে ভেজাল লাগিয়ে দেয়। আশিকের অনেক হাসি পায় মিমের কথা শুনে কিন্তু সে হাসে না। তখনই দিহান আসে আদ্রিয়ানকে বলে

—-সরিরে দোস্ত আসতে লেট হলো একটু, তো এখানে কি হয়েছে। তারপর সব বলে আদ্রিয়ান দিহানকে দিহান আধারকে দেখে নেয় আর বলে

—এখানে তোর ওর কোন দোষ নেই। আদ্রিয়ান বলে

—হুমম, মৌ সরি বল ওকে। মৌ আদ্রিয়ানকে বলে

—আমি কেনো বলবো আমি কি দোষ করেছি ও আমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দিয়েছে আর সরিও বলেনি। তখন মারিয়া বলে

—আপনি বলতে দিলেতো। মৌ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় কিন্তু তাতে মারিয়া আর মিমের কিছু যায় আসে না। মৌকে আদ্রিয়ান ধমকের সুরে বলে

—-মৌ আমি কিছু বলতে বলেছি।৷ মৌ রাগে গজগজ করতে করতে বললো

—সরি। আর সে দাঁড়ায়নি সেখানে, তার সেই বজ্জাত বান্ধবী গুলোকে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। আদ্রিয়ান আধারকে বলে

—-দেখো মৌএর তরফ থেকে আমি সরি আসলে ও এমনই। যাই হোক ক্লাসে যাও, উপরে দোতালায় বাম পাশের প্রথম ক্লাসটা তোমাদের। আধার মাথা নিচু করেই বলে

—-আচ্ছা।

আর মারিয়া আর মিমকে নিয়ে চলে যায় তাদের ডিপার্টমেন্ট। আদ্রিয়ান কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আধারের চলে যাওয়ার পানে।তারা তাদের মতো চলে যায়। মৌ এর সরি বলার পরও আধারের খারাপ লাগছে, লাগাটা কি স্বাভাবিক না, আজ তার প্রথম ক্লাস আর আজই এইসব,আধার চুপচাপ বসে আছে। তার আর এখন কিছু ভালো লাগছে না, ইচ্ছে করছে যেয়ে মৌ এর মাথার সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। কি মনে করে নিজেকে। যাই হোক এখন আর সে এইসব ভাবতে চায় না। ক্লাসে কোনো রকম মনযোগ দিলো, কিন্তু আজ ক্লাসও তেমন একটা হলো না, মারিয়া বলে

—চল আমাদের ডিপার্টমেন্টটা ঘুরে দেখি। কিন্তু আধার বলে

—আজ না কালকে দেখবো, চল বাসায় ফিরা যাক।

মারিয়া আর মিমও কিছু বললো না। যাওয়ার সময় দেখে, গেটের কাছে একটা বড় গাছ আছে সেখানে আদ্রিয়ান আশিক দিহান সহ আরো অনেকেই বসে আছে। আধারের জন্য আদ্রিয়ান যা করেছে তার জন্য তো একটা ধন্যবাদ সে পায়ই। তাই আধার মারিয়া আর মিমকে বলে

—-তোরা একটু দাঁড়া আমি আসছি। মিম আর মারিয়া বলে

—-কোথায় যাস? আধার বলে

—দাঁড়া তো আসছি। বলেই আদ্রিয়ানের কাছে যায়। আদ্রিয়ান আধারকে দেখে এক ভ্রু উঁচু করে বলে

—কি হয়েছে? আধার বলে

—আসলে ভাইয়া সকালের জন্য ধন্যবাদ। আদ্রিয়ান বলে

—দেখে এটা আমার দায়িত্ব ছিল তো ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই। আধার মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—তাও ধন্যবাদ। আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে

—হুম এখন যেতে পারো। আদ্রিয়ানের কথাটা আধারের গায়ে লাগে, সে কি মনে করছে তার সাথে সে গল্প করতে এসেছে, হেল্প করছে তাই সে ধন্যবাদ দিতে এসেছে। আধার আদ্রিয়ানকে বলে

—হ্যা চলেই যাবো।এখানে বসে থাকবো না। আর ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার দিয়ে গেলাম। বলেই সামনের দিকে হাটা দিলো, আদ্রিয়ানের সব বন্ধুরা তো হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের সাথে রাগ দেখিয়ে গেলো, আর সে কিছুই বললো না। আশিক বলে

—আদ্রিয়ান এটা কি হলো? আদ্রিয়ান এখনো তাকিয়ে আছে আধারের যাওয়ার পানে। আশিক আবার বলে

—এই আদ্রিয়ান? আদ্রিয়ান বলে

—-কি কি হয়েছে? আশিক বলে

—এইটুকো একটা মেয়ে তোকে আদ্রিয়ান খানকে রাগ দেখিয়ে গেলো আর তুই কিছুই বললি না। আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলে

—ওর সব ইনফরমেশন আমার চাই, দেখাচ্ছি মজা তোমাকে, আধার।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে