না চেয়েও তোমায় পেলাম পর্ব-১০

0
1788

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#Part_10 (party special)

আদির জন্য ওয়েট করতেছি,,হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ আসলো,,,

আদি মেসেজ দিয়েছে নিচে নামার জন্য,,, ও নাকি নিচে আছে,,,

আমি ঠিকঠাক হয়ে নিচে গেলাম,,,,আমার চোখ কিছুক্ষণের জন্য আটকে গেছে সামনে থাকা ব্যাক্তিটির উপর,,

আদি একটা কালো শার্ট পড়েছে,,,, হাতে একটা কালো ঘড়ি , চুল গুলে একপাশ করে উপরের দিকে স্পাক করেছে,,,কয়েকটা চুল সামনে দিকে পড়ে আছে,,,আদি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছে,,,

আমি ওর সামনে গিয়ে,,,

আমিঃ চলুন,,

আদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,

আদিঃ ( ঋতুর দিক থেকে চোখ ফিরানো যাচ্ছে,,,মনে হচ্ছে কালো শাড়ী ওর জন্যই বানানো হয়েছে।তেমন সাজে নাই তবুও কি মায়াবী লাগছে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বললাম) চলো,,,

(গাড়ীতে ওঠে,, আমি ড্রাইভ করছি ঋতু আমার পাশেই,,,না চাইতেও ওর দিকে চোখ চলে যাচ্ছে)

আদি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে কিছুটা অস্বস্তি লাগছে এভাবে তাকানোও,,

আমিঃ সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করেন না হয়ে এক্সিডেন্টে হতে পারে।

(ঋতুর কথা লজ্জা লাগলো তাই ড্রাইভ এ মন দিলাম,,,)

আজকে কেন জানি আদির খুব খুশী লাগছে,,হয়তো তার প্রেয়সীকে এতো কাছে পাওয়ায়।স্বামীর অধিকার নাই বা পেলাম এভাবে পাশে পেলেই যথেষ্ট।

ঋতু বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,,, আজ দিনটা অন্যরকম হলেও পারতো তার মনের মানুষের সাথে। আমিকি কখনও আরিয়ানকে ভুলতে পারবো,,,হয়তো পারবো না আবার হয়তো পারবো,,,,জানি না ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে যায়,,

ভাবতে ভাবতে গাড়ি এসে থামলো একটা ক্লাবে,,,দেখে অনেক হাই সোসাইটির মনে হচ্ছে।
গাড়ি থেকে নেমেই আদি বলল,,,

আদিঃ ঋতু এখানে একটু হাসবেন্ড ওয়াইফ এর মতো অভিনয় করে থাকতে হবে আর আমার ফ্রেন্ড হয়তো দুষ্টামি করবে আমাদের নিয়ে প্লিজ কিছু মনে করো না,,,

আমিঃ এটা কোন ব্যাপার না আমার তো সারাজীবনই অভিনয় করে কাটাতে হবে,,,,

ঋতুর কথায় আদির খারাপ লাগলো,,,কিন্তু তা প্রকাশ না করে ভিতরে গেল,,,

ভেতরে যেতেই উপর থেকে গোলাপ ফুলের পাপড়ি পড়ছে আমাদের উপর,, সব লাইট আমাদের উপর,,,, আদি আমার হাত ধরেই নিয়ে যাচ্ছে,,,,,এটা আমার খারাপ লাগার কথা কিন্তু খারাপ লাগছে না এক অন্যরকম লাগছে,,,

( সবার নজর আমাদের দিকে,,অনেকে বলছে দুজনকে মানিয়েছে,,,,খুব নার্ভাস লাগছে)

আদি সবার সাথে আমাকে পরিচয় করাচ্ছে,,,,সামনে যেতেই বর্ষাকে দেখলাম।ওকে দেখেই মুখে বিরক্তিকর ভাব চলে আসলো,,,আদি আমার পাশেই ছিল,,,,

আমিঃ আপনি তো বলছেন এখানে আপনার ফ্রেন্ড আর অফিসের কলিগরা আসবে তাহলে বর্ষা আসলো কেন?

আদিঃ বর্ষাতো আমার অফিসে জব করে,,

আমিঃ ও তো এখনো পড়তেছে জব কেন করে,,

আদিঃ তা জানি না আমার আব্বুকে পাগল করে ফেলছিলো আমাদের অফিসে জব করার জন্য,, তাই আব্বু না করতে পারে নাই।

(ও জব করতে পাগল হয় নাই অফিসে আপনাকে দেখবে বলে জবের নাম বলেছ হুহ😏।কিন্তু আমি কেন চিন্তা করছি এ ব্যাপারে,,, আদিকে একটা না সব মেয়ে দেখুক আমার কি, আমার তো এসব কিছুতে যায় আসে না,,, তাহলে চিন্তা কেন করছি,,,)মনে মনে।

বর্ষাঃ চলো ভাবি তোমাকে আমার ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।

এই মেয়ের ভালো কথা আমার ঠিক হজম হচ্ছে না।তবুও গেলাম ওর সাথে,,,

বর্ষা তার বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,,,
বর্ষাঃ গাইজ এনি হচ্ছেন আমাদের কিউটি বয় আদির ওয়াইফ ঋতু, গ্রাম থেকে থাকে,,( টিটকারি করে)

এবার বুজলাম তার আসল রুপ,,, আসলে এই মেয়ে ভালোর যোগ্য ও না। আমাকে ছোট করার জন্য মেয়েটি এসব বলছে,,,,

বর্ষার ফ্রেন্ড একটা বলল,,
মেয়েটিঃ ভাবি কি মেকাপ করতে জানেন না।এতো নরমাল হয়ে কেউ পার্টিতে আসে নাকি।

বর্ষাঃআরে গ্রামের মেয়ে তো তাই এতো আমার মতো ফ্যাশন জানে নাকি হাহ।( ভাব নিয়ে)

আমিঃ আসলে আপু আমি সাজতে ভালো লাগে না।আল্লাহ যা দিয়েছে ওইটাতে হ্যাপি,,, এতো মেকআপ করে বিশ্বসুন্দরী হওয়ার ইচ্ছা নেই।এই নরমালই সবার থেকে বেটার লাগছে,,,

বলে চলে এলাম,,,,এদিকে বর্ষা ফুঁসছে কিভাবে ঋতুকে ছোট করবে,,,,

আদি আমাকে নিয়ে এসে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় করাচ্ছে,,,

আদিঃ ঋতু ও হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,,আরিশা,,,ছোট বেলা থেকে এক সঙ্গে বড় হয়েছি।
আরিশা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল,,,

আরিশাঃ হাই,আমি আরিশা মাহমুদা ,,

আমি ও হেন্ডশেক করে,,

আমিঃ আমি ঋতু নাজনীন,,

আদিঃ তোরা কথা বল আমি একটু আসছি,,,,

আদি চলে গেল,,,
আরিশাঃতো বিবাহিত জীবন দুজনের কেমন কাটছে😜

আমিঃ এইতো ভালো( মিথ্যা হাসি দিয়ে)

আরিশাঃঋতু জানো আমি আর আদি ছোট বেলার ফ্রেন্ড। ওর লাইফের সব আমাকে শেয়ার করে,,,এমনকি ছোট ছোট বিষয়ে ও আমাকে বলে৷,, ওর যখন কোন কারণে মন খারাপ বা খারাপ সময় থাকে তখন আমি ওর পাশে থাকি ,,,, সো ওর লাইফে সবচেয়ে বড় কথা আমাকে বলবে না? হ্যা আমি জানি তোমার আর আদির মধ্যে কিছুই নেয়,সব ফরমালিটি দেখানো হচ্ছে,, আমি যেহেতু সব জানি আমার সাথে ফরমালিটি দেখানো লাগবে না,,।

আমি কিছু বলছি না মাথা নিচু করে আছি।

আরিশাঃ তবে আদি ঠিকই বলেছে তুমি পরীর থেকে সুন্দর,,, খুব মিষ্টি লাগছে,,আচ্ছা চলো সবাই ওখানে গল্প করছে ওখানে যাই।

সবাই এক সাথে গল্প করছে,আমাকে আর আদিকে নিয়ে মজা করছে, হাসিব ও এসেছে যেহেতু আদির ফ্রেন্ড।

হঠাৎ হাসিব বলে ওঠলো,,,

হাসিবঃ ভাবি জানো ,,,আদি অনেক ভালো গান গায়।তো তুমি বলো না তোমার জন্য একটা গান করতে😜।

আমি কিছু বলছি না শুধু মুচকি হাসি দিলাম,,,

এবার সবাই ওকে জোর করছে গান গাইতে কিন্তু ও গাচ্ছে না।অনেক জোরে সে রাজি হলো। একজনে একটা গিটার দিলো আদি গিটারটা নিয়ে সবার সামনে গিয়ে একটা চেয়ারে বসলো,,,,,,

আদি এক নজর ঋতুর দিকে তাকিয়ে গিটার বাজানো শুরু করলো,,,

🎸🎸🎸🎸🎸
🎵🎵🎵

Yun na parda kar…🎶
ab to Aja mere samne…🎶
Tere hun mai…🎶
Meri har saansien…🎶
Tera naam Lein…🎶

Behki behki nigahien….🎶
Dhundhe tera raste…🎶
Ati hai to le jati….🎶
Meri har shikayetien….🎶

Lehron si behti hai vo…🎶
Chalti shaan se hai hatke….🎶
Kaatil ye rukh tera…🎶
Hai kattil har ada….🎶

ঋতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে..🎵🎵🎵

Dewane hum nahi hote….🎶
Dewane raat ati hai…🎶
Mohabbat ki nahi jati..🎶
Mohabbat aazmati hai…🎶

Kisiki aakhon se..🎶
Kisiki baton se…🎶
Kisiki chahat se…🎶
Kisiki aadat se….🎶

Haye re dil ko satati hai…(2)🎶
Bohot zyada tadpati ha….(2)🎶

( বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন,,,🙄)

গান শেষে সবাই হাত তালি দিলো,,
হাসিবঃ ব্রো অনেক দারুণ হইছে,,তোর গানের গলার জবাব নেই,,,

সবাই আদিকে বাহবা দিচ্ছে,,,
আমি তো এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে গান শুনছি আসলেই ওনার গানের গলার জবাব নেই,খুব সুন্দর করে গান গায়,,,

আদি দেখছে ঋতু তাকে কোন কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছে না ও মন খারাপ করে বাইরে চলে গেল,,,,

সবাই গল্প করছে,,,,হটাৎ বর্ষা বলে উঠলো,,,

বর্ষাঃ তো এবার ভাবির মুখ থেকে গান শুনি।( এবার বুজো মজা তোমার মতো গাইয়া মেয়ে নাকি আবার গান পারে হাহা জব্দ করার সুযোগ পাইছি এবার কই যাবা আদি বউ হওয়ার খুব শখ এবার শখ বের করছি সবার সামনে যদি অপমান করে না করি আমার নাম ও বর্ষা না)

হাসিবঃ হুম আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ না,,, ভাবি তোমার মুখে একটা গান শুনা যাক।,,,

আমিঃ ভাইয়া আমি গান গাইতে পারি না( আমি বুজতে পারছি সবার সামনে অপমান করার জন্য বর্ষা ইচ্ছা করে বলছে গান গাইতে।এ মেয়ে আমার পিছে কেন পড়ে আছে বুজি না)

রিফাতঃ কি বলো ভাবি আমাদের আদির ওয়াইফ সব কিছ পারে না ব্যাপারটা কেমন দেখায় না।

(তোদের আদি কি সেলিব্রিটি নাকি যে ওর বউকে সব পারতে হবে ডং দেখে বাঁচি না- মনেমনে)

বর্ষাঃ আরে রিফাত ভাই বুজেনই তো গ্রামের মেয়ে তো।গ্রামের মেয়েরা তো চুলা গুঁতানো ছাড়া কি বা পারে সে নাকও আবার গান গাইবে,,,হা হা এর থেকে ভালো আমরা রানু মন্ডলের গান শুনাই হা হা।আদির যোগ্যেই না।

উপস্থিতির সবাই হেসে উঠলো হাসিব আর আরিশা ছাড়া।

আরিশাঃ বর্ষা,,,, মানুষকে অপমান করার অভ্যাসটা এখনো তোমার যায় নি।একদিন তুমি নিজেই হাসির পাত্র হয়ে যাবে তখন কেমন লাগে দেখবে।

বর্ষাঃ অপমানের কি আছে যেটা সত্যি সেটা বলছি।😏

হাসিবঃ ( এতোক্ষণ আদিএখানে থাকলে বের হয়ে যেত তোর অপমান করা ভাবিকে।এই আদিটা ওনা কোথায় উধাও হয়ে গেছে)

বর্ষা আর আরিশার তর্কের মধ্যে হঠাৎ গিটারের সুর বেজে ওঠলো।

হাসিবঃ জানতাম গানের মধ্যে গিটার বাজে এখন দেখছি তর্কের মধ্যে ও গিটা বাজচ্ছে,,, বলে সামনে তাকালো,,,

সবাই সামনে তাকাতেই অবাক হয়,,,,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে