না চেয়েও তোমায় পেলাম পর্ব-১+২

0
3340

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
লেখক:#Ritu_Jahan
সূচনা পর্ব

রেস্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করছি আমার হবু স্বামীর জন্য। অনেক ভয় লাগছে কেন হঠাৎ আমাকে ডেকেছে।

এগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ গেল সামনেরা দিকে।ওনি একটা পিঙ্ক কালারের শার্ট পরে চুল গুলে স্পাক করে আসছেন।

আমার সামনের চেয়ার টেনে বসলেন ওনি।ভয়ে আমার শরীর কাঁপতেছে।অনেকক্ষণ নিরবতা ভেঙে ওনি বললেন,,

আদিঃ কেমন আছো?

ঋতুঃ ভালো।( কথা যেন ভেতর থেকে আসছেও না)

আদিঃ কিছু ওর্ডার করো

ঋতুঃ না আমার প্রাইভেট আছে কি বলবেন তারাতাড়ি বলেন। ( অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললাম)

আদিঃ তা বললে হবে না হালকা কিছু খেয়ে হবে।

ওনি ওয়েটার কে ডেকে কপি আর স্যান্ডউইচ ওর্ডার করলো,,

আদিঃ তুমি কি বিয়েতে হ্যাপি না?

হঠাৎ এমন প্রশ্নে অনেকটা আঁতকে ওঠলাম।যেটা নিয়ে ভয় পেয়েছি ওটাই হলো এখন কি বলবো।আল্লাহ গো দড়ি পালাও আমি ওঠি যাই।আমার মুখ দিয়ে কথা আসছে না গো,,,

আসুন পরিচয় দেয়া যাক,,,,,

আমি ঋতু নাজনীন। অনার্স ২য় সেমিস্টারে পড়ি।দুই বোন।বাবা একটা জব করে।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বললে চলে।দেখতে আহামরি সুন্দর না হলে ও সবাই বলে আমার চেহারা নাকি মায়াবি,,, দুই বছর হলো রিলেশনশিপ এ আছি।বাকিটা পরে জানবেন,,,,

( আর যিনি আমার সামনে বসে আছে ওনি হলো আদিব মাহমুদ আদি।সিএনএফ কোম্পানি ওনার। দেখতে ফর্সা, চোখ গুলো বড় বড় চোখের মনি গুলো বাদামি,নকের উপর একটা তিল থাকায় চেহারার সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। বাবা মার একটাই ছেলে। মেয়ে আছে একটা।সব মিলিয়ে ওনাদের টাকার অভাব নেই।আবার এনারা আমার বাবার দুঃসম্পর্কের কাজিন হয়।ওই দিক থেকে ছোট থেকে ওনাদের চিনি।কিন্তু এনারা শহরে থাকে)

গল্পে আসি,,,,,,,, 🌿

আদিঃ কি হলো বলছো না কেন।তোমার ভয় নেই আমাকে ফ্রী হয়ে বলতে পারো।তুমি কি বিয়েতে হ্যাপি না,,,
ঋতুঃ হঠাৎ এটা কেন জিজ্ঞেস করছেন?

আদিঃ তোমাকে যখন দেখতে গেছিলাম সবাই।তোমাকে দেখে মনে হলো তুমি খুশি না আর যখন আংটি পারাচ্ছি তখন তোমার চোখে পানি জমে ছিল।তাই শিউর হতে তোমায় দেখা করতে বললাম।আমি চাই না তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা হোক।তুৃমি কি বিয়েতে খুশি না?

ঋতুঃ না,,( মাথা নিচু করে বলল)

আদি ঋতুর দিকে তাকালো,,,

আদিঃ কারণটা জানতে পারি???

ঋতুঃ,,,,,,,,,,, (কিছুই বলছে না)

আদিঃ তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?

ঋতুঃ হ্যা।

আদিঃ তো তোমার ফ্যামিলিকে বলো

ঋতুঃ বলে লাভ হবে না।ও কোন জব করে না।আর ও আমার সমবয়সী তাই পরিবার কখনো মেনে নিবে না।

আদিঃ এটা রিলেশন করার আগে মনে ছিলো না

ঋতুঃ এগুলো ভাবলে তো কেউ কখনও কাউকে ভালোবাসতো না।ভালোবাসা তো আর এগুলো দেখে হয় না( কিছুটা রেগে)

(বেটার সাহস কি করে হয় আমাকে এগুলো বলার।মনে তো হয় না কখনও কাউকে ভালোবেসেছে কিনা।)

ঋতুর দমকে আদি কিছুটা চমকে গেল।এ মেয়ে আবার রাগ দেখাতেও জানে।দেখেতো মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতেও জানে না,,,

আদিঃ তো আমি কি করবো? বিয়ে টা ভেঙ্গে দিবো?

ঋতুঃ ওইটা আপনার বেপার। আমার যা সত্যি আমি বলছি।আর আপনি ভেঙ্গে দিলে ও আমি কখনও আমার ভালোবাসার মানুষটা কে পাবো না।( কান্না গলায়)

আদিঃ কেন?

ঋতুঃ আপনি বিয়ে না করলে ও বাবা বসে থাকবে।ওনার হাতে আরো পাত্র আছে।আমি বুজি না কেন আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে।

আদিঃ ও আচ্ছা।তুমি তো কিছু খেলে না।

ঋতুঃ খাওয়ার ইচ্ছে নেই।আমি আসি আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,,,

আদিঃ ওকে।বায়,,

ওখান থেকে চলে এসে নদীর ধারে বসলাম।যখন মন খারাপ থাকে এখানে আসি।অনেক কান্না আসছে। কেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ভালোবাসা অপরাধ। কেন পরিবারের দিকে তাকিয়ে সব ইচ্ছে বিসর্জন দিতে হয়।কেউ এগুলোর উত্তর দিতে পারবে না।

কিছুক্ষণ বসে চলে আসলাম।বাড়িতে গিয়ে শুনবো হয়তো বিয়েটা ভেঙে গেছে।ভালোই হবে আমি ওনাকে ভালোবাসতে পারবো না শুধু শুধু আমাকে বিয়ে করে ওনার ক্ষতি হবে।ওনি আরো ভালো মেয়ে পাবে,,

এগুলো ভাবতে ভাবতে বড়ি গেলাম,,,,,

চলবে?

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#part_2

ভাবতে ভাবতে বাড়িতে আসলাম,,,,,,,,

বাড়িতে এসে দেখলাম সব ঠিকঠাক আছে।তাহলে কি ওনি বিয়েটা ভাঙ্গেনি।

আম্মুর কাছে শুনলাম,ওনার দাদু অসুস্থ তাই বিয়েটা নাকি আরো এগিয়ে দিয়েছে।

আমার কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে ওনি কেন বিয়ে করছে আমাকে,আমার রিলেশন আছে ওইটা শুনেও আমাকে মেনে নিচ্ছে।কিন্তু আমি মানতে পারবো না।

এগুলো ভাবতে ভাবতে আরিয়ানের কথা মনে আসলো।ও কি আমাকে ভুল বুজবে?আমি কি করবো আমারতো কিছু করার নেই।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি আরিয়ানের কথা।খুবতো ভালোই যাচ্ছিলো দিন গুলো। কিন্তু এগুলো কি স্বপ্ন ছিলো,,,।আমি তো স্বপ্নের মতো ওকে ভালোবাসি নাই,ওকেতো আমি মন থেকে ভালোবেসেছি,,,।লোকে বলে মন থেকে যা চায় তাই নাকি পায়।কিন্তু মধ্যবিত্তের জন্য কথাটা আলাদা।মধ্যবিত্তরা যা চায় সেটা বিসর্জন দিতে হয় এটাই পৃথিবী।

এগুলো ভাবতে ভাবতে অনলাইনে গেলাম।দেখলাম আরিয়ানের অনেক মেসেজ,দেখা করতে বলতেছে।ওটাই ঠিক হবে ওকে সামনে গিয়ে বুজাবো।

অনলাইন থেকে বেরিয়ে আবার ভাবতে লাগলাম।ওর সাথে প্রথম দেখা ছিলো কোচিং সেন্টারে,,,।ও আমাদের সাথে প্রাইভেট পরতো।সব সময় মাথা নিচু করে থাকতো কোন মেয়ের দিকে তাকাতো না।সবাই ওকে নিয়ে হাসতো।আমার কেমন যেন ভালো লাগতো।সারাদিন পড়া নিয়ে থাকতো।ও প্রাইভেটে আমাদের পরে আসায় অনেক নোট বাকি ছিলো তাই স্যার আমার থেকে নোট নিয়ে ওকে দিয়েছে,, পরেরদিন থেকে আমি জ্বরে ভুগছি,,, আমার এতো নোট টোটের কথা মনেই নেয়।আমি জ্বরের মধ্যে শুয়ে মোবাইল গুতাচ্ছি।হঠাৎ মেসেনজার এ মেসেজ আসলো,,,হায় কেমন আছেন,,

আমি দেখলাম আইডিটা আরিয়ানের,,,ও আমাকে আপনি আপনি ডাকছে কেন আজিব। আমি,,

আমিঃ মোটামুটি। তুমি?

আরিয়ানঃ জ্বি ভালো।আসলে আপনি অনেক দিন আসেন নাই তো আর আপনার নোট আমার কাছে তাই আপনার বান্ধবীর থেকে আপনার আইডির নামটা জেনে নিলাম।

আমিঃ ও আচ্ছা। আসলে জ্বর ছিল তাই যাওয়া হয়নি। নোট নিয়ে সমস্যা নেই যখন ইচ্ছা তখন দিতে পারবেন।

আরিয়ানঃওকে।তো এখন কেমন আছেন।

আমিঃ সেই কখন থেকে দেখছি আপনি আপনি বলছো।আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে তোমার বড় লাগে।তুমি আমার সমবয়সী সো তুমি করে বলবা।( রেগে)

আরিয়ানঃ তুমি রেগে যাচ্ছো কেন।তোমার সাথে প্রথম কথা হলো তাই আপনি দিয়ে শুরু করলাম।মাইন্ড করো না প্লিজ।

(ওমা ও কতো ভীতু। আমি একটু রেগে বললাম ওমনি ভয়ে চুপসে গেলো।হা হা সো ফানি,,)

এ ভাবে আমাদের টুকিটাকি কথা হতো।আমাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যতোটা হাবলা ভাবছি ততটা নয় অনেক কথা বলতে জানে,হাসাতে পারে,,,। এগুলো ভাবতে ভাবতে নিজে নিজে হাসছি,,,

প্রিতু( আমার বোন)ঃ কিরে নিজে নিজে হাসছিস যে দুলাভাইয়ের কথা মনে আসলো নাকি।

দুলাভাইয়ের নাম নিতে মাথায় খারাপ হয়ে গেল। রেগে,,

আমিঃ ছোট ছোটদের মতো থাক।বেশি কথা বলবি থাপ্পড় খাবি।

প্রিতুঃ যা বাবা আমি কি করলাম।আম্মু তোকে ভাত খেতে ডাকছে, সেটা বলতে আসছি দিখি তুই হাসতেছিস নিজে নিজে।

আমিঃ যা এখান থেকে আমি খাব না আমি।

ও রাগ করে চলে গেছে।আমি এইরকমই রাগ উঠলে কি বলি নিজেও জানি না।

শুতেই ঘুম চলে আসলো,,

সকাল বেলা রেডি হচ্ছি আরিয়ানের সাথে দেখা করতে,,,কোন মুখে ওর সামনে যাব বুজতেছি না,,

রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি ও বসে আছে।মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে। দেখেই ভিতরটা মুচড়ে ওঠলো।

তবুও নিজে শক্ত করে বসলাম।

আরিয়ানঃ congratulations.

আমিঃপ্লিজ আরিয়ান তুমি অন্তত আমাকে একটু বুজার চেষ্টা করো,,,,,

আরিয়ানঃবুজি বলেই আজো ঠিক হয়ে তোমার সামনে বসে আছি। তোমার কি মনে হয় আমি মানুষ না আমার কষ্ট হয় না,,

আমিঃ আরিয়ান কষ্ট তোমার থেকে আমি বেশি পাচ্ছি।না পারছি কাউকে বলতে না পারছি মেনে নিতে।

আরিয়ানঃ তাহলে এতো কষ্টের মানেই হয়না।চলো আমার বিয়ে করে ফেলি।একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছুই করতে পারবে না কেউ।

আমিঃ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো । আমার বিয়ে দিন ঠিক হয়ে গেছে,আমার আব্বুর কাজিন হয় ওরা।আজ তোমার সাথে আমি চলে গেলে আমার আব্বুর উপর সবাই আঙ্গুল তুলে কথা বলবে, ওনাদের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে।তার থেকে বড় কথা আব্বু এমনিতে অনেক অসুস্থ ওনার হার্ট এ প্রবলেম আছে।আমি কিছু করে পেললে আব্বুকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।আমার ভাই নে যে আমাদের পরিবারকে দেখবে।আমি পরিবারের বড় মেয়ে আমি যদি তাদের সম্মান নষ্ট করি তাহলে তারা শেষ হয়ে যাবে। আমি পারবো না আরিয়ান,আমি পারবো না,, আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আরিয়ানঃ ঠিক আছে আমি ও তোমার বিরুদ্ধে যাবো না।জীবনে সুখী হও দোয়া রইলো।কিন্তু শুনে রাখো তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুখানি ও কমবে না।( কান্না গলায়)

আমিঃআরিয়ান,,,, আমি ও তোমাকে ভুলতে পারবো না।কিছু ভালোবাসা কখনও পূর্ণতা পায় না,ধরে নাও আমাদের টাও। পারলো আবার নতুন করে জীবন শুরু করো।আসছি,,

আরিয়ানঃ তোমার বিয়ের দাওয়াত দিবে না।আমারা তো ভালোবাসার আগে ভালো বন্ধু ছিলাম।সেটা না হয় আজীবন থাকবে।

আমিঃ যদি বন্ধুর বিয়েতে আসতে ইচ্ছে হয় এসো।।

আরিয়ানঃ তোমাকে না বধূর সাজে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো।নিজের বউয়ের অধিকারেতো দেখতে পারবো না।বন্ধুর চোখেই বধূ সাজ টা দেখে না হয় নিজের মনটা কে শান্ত করবো,,

আমি আর থাকতে পারলাম ওঠে দৌড়ে চলে আসলাম।আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো নিজেকে আর শক্ত সাজার অভিনয় টা আর করতে পারতাম না,,

রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম।কেন এমন হয় আমার সাথে।,,যাকে নিয়ে হাজার স্বপ্ন দেখেছি তার জায়গায় আজ অন্য কেউ কেন।হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হলো,,
চোখের পানি মুছে মুখে মিথ্যা হাসি টেনে দরজা খুললাম।বোন দাড়িয়ে আছে,,,

প্রিতুঃ আপু আদি ভাইয়া কল দিয়েছে।তোর সাথে কথা বলবে।

ইচ্ছে করছে মোবাইলটা আছাড় দিয়।কিন্তু তাও পারবো না। ইচ্ছা না থাকার স্বত্তেও মোবাইলটা হাতে নিলাম,,,,,,

ওনার কথা শুনে গা জ্বলে উঠলো,,,,,,,

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে