নারীর সতীত্ব পর্ব-১৮

0
1733

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_১৮
Wohad Mahmud

কিন্তু তোর যদি ভালো মনে হয় রাকিবের সাথে বিয়ে করলে ভালো হবে, তাহলে আমি তাই করব। আমি কোনোদিন তোর কথা ফেলতে পারব না।

সাবনাজ বলে তুমি পাগল হয়ে গেছো মাহমুদা। আমি বেঁচে থাকতে কোনোদিন এই বিয়ে হতে দিব না।

ঠিক তখনি রাকিব বাইরে থেকে বলে আসতে পারি?

আমি কিছুটা হতভম্ব হলাম। এটা তো রাকিবের কন্ঠ। হঠাৎ এখানে কী চায়। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কী আমাদের সব কথা শুনছিল? যদি শুনে থাকে তাহলে তো চলে যেত আসতো না এখানে। আর আসলেও অনুমতি নিয়ে না সরাসরি চলে আসতো। আবার কোনো খারাপ মতলব থাকতে পারে শুনেও না শোনার ভান করছে।

তার মনে যায় থাকুন না কেন, খারাপ, ভালো। সেটা পরে দেখা যাবে। আজ তো অত্যন্ত সত্যি কথা বলেছে‌। আর নিজের বোনের মুখুশ খুলে দিয়েছে। তাই আমি আর কিছু না ভেবে বললাম আসো রাকিব ভিতরে আসো।

কেমন আছেন মাহমুদ ভাইয়া?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো? বসো তুমি, বসে কথা বলি।

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

মাহমুদা কে বললাম চা নিয়ে আসতে। মাহমুদা গিয়ে চা নিয়ে আসলো।

রাকিবকে চা দেওয়ার আগেই রাকিব কিছুটা ভয় নিয়ে বলল না থাক লাগবে না।

আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি গায়ে চা ফেলে দেওয়ার কথা এখনো মনে আছে তাহলে।

মাহমুদা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ভয় নেই রাকিব সাহেব প্রতিবার আর ভুল করে গায়ে চা পড়বে না। তখন তো ভুল করে গায়ে চা পড়েছিল আপনাকে স্যরি বলতেও ভুলে গেছি। আপনিও হয়তো আপনার বোনের মতো মনে করছেন আমি ইচ্ছে করেই এমন করেছি। যায় হোক এসব কথা আর মনে রাখবেন না প্লিজ।

রাকিব বলল, আরে না না কী যে বলেন মাহমুদা আপনি। ইচ্ছে করে কেন এমন করবেন। আমিও বুঝতে পারছি ভুল করেই পড়েছে।

আমি তখন বললাম তো হঠাৎ এখানে রাকিব? কিছু বলবে কী আমাকে?

আমতা আমতা করে বলল, না ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি। আর তেমন কিছু বলব না। এমনিতেই আপনাদের সাথে একটা কথা বলতে আসলাম। আর আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত সবকিছুর জন্য। এর আগে মাহমুদার জন্য আপনাদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। কোনোদিন সরিও বলি নাই। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি।

আমি বললাম না না, ঠিক আছে সব। আমি সেই কথা আমি অনেক আগেই ভুলে গিয়েছি। আমি বুঝেছিলাম ভালোবাসার জন্য এমন করেছ। কিন্তু সেটা তোমার ভালোলাগা ছিল, ভালোবাসা না। ভালোবাসা কখনো বাহুর জোরে আদায় করা যায় না। ভালোবাসা সব সময় মন দিয়ে আদায় করে নিতে হয়। আর মাহমুদার প্রতি তখন তোমার ভালোবাসা না ভালোলাগা ছিল।

জ্বী ভাইয়া আমি বুঝতে পারছি। আর আজকের জন্য স্যরি। সাইমা আপু আমাকে সব করতে বলেছে। কিন্তু আমি মাহমুদার জন্য আজ সত্যি কথা বলে দিয়েছি।

আমি তখন বললাম শুধু মাহমুদার জন্য না ন্যায়ের জন্য সত্যি বলতে হবে। মাহমুদা যদি ভুল করে সেটাই ধরিয়ে দিতে হবে। যদি এসব কিছু মানতে পারো তবেই তোমার সাথে মাহমুদার বিয়ে হবে।

জ্বী ভাইয়া আমি সব পারব।

সাবনাজকে দেখছি রাকিবের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাকিবকে মোটেও সহ্য করতে পারছে না সাবনাজ। কিন্তু সাবনাজ তো এমন না। যত বড় শত্রু হোক না‌ কেন কারোর উপর এমন রাগ করে থাকে না। সব সময় হাসি মুখে কথা বলে।যেমন বিয়ের তৃতীয় দিনের কথা চিন্তা করি। সাইমা ভাবি সাবনাজকে থাপ্পড় মেরেছিল। কিন্তু সেখানে সাবনাজ সঠিক ছিল আর ভাবি ভুল ছিল তবুও সাবনাজ প্রতিবাদ করে নাই। আর আমাকেও বলে নাই যে, ভাবি তাকে থাপ্পড় মেরেছে কারণ সাবনাজ চায় না এটা নিয়ে বাসায় বড় কিছু হয়ে যাক। সম্পর্ক নষ্ট হোক।

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, এই রাগটা সাবনাজের নিজের জন্য না অন্য কারোর জন্য। কিন্তু কেন এমন করছে খুঁজে বাহির করতে হবে।

আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি সাবনাজ রাকিব কে বলল,

রাকাবি ভাইয়া আপনার বোন তো অনেক অসুস্থ। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে ‌। আপনার বোনের এই খারাপ সময়ে তার পাশে থাকার দরকার। তাকে সেবাযত্ন করা দরকার। আপনার মা মুরুব্বি মানুষ আর কত করবে একা একা। তাদেরকে সাহায্য করা দরকার।

রাকিব তখন বলল, জ্বী আপনি ঠিক বলেছেন। তাহলে আপনারা থাকেন আপনি যাই। গিয়ে দেখি সাইমা আপু কেমন আছে।

রাকিব চলে যাওয়ার পরে বললাম। ভালোই তো গল্প করছিলাম আমরা, রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ের বিষয়ে। আর সাইমা ভাবি তো নাটক করছে এটা তুমিও ভালো করে জানো, তাহলে রাকিবকে কেন চলে যেতে বললে বোনের কাছে?

সাবনাজ তখন বললো, আমরা ভাবছি যে, সাইমা ভাবি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এমন নাটক করছে। তবে এমনও হতে পারে সত্যি সত্যি সমস্যা হয়েছে। তুমি কী ভুলে গিয়েছ, বাঘ আর রাখালের গল্প?

এটা বলে রুম থেকে চলে যায় সাবনাজ। আমি মাহমুদা কে বললাম তোমার ভাবির কি হয়েছে।‌ কোনোদিন এমন করে না‌। আজ হঠাৎ এমন করছে না। সাবনাজকে অনেক অদ্ভুত লাগছে।

মাহমুদা বলল , আমি কিছু জানি না ভাইয়া। তুই থাক আমি গিয়ে ঘুমাই। আর তুই ও ঘুমিয়ে পড়। রাত দেখছিস কত হয়েছে। আজকের এসব বিচারে জন্য রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে। আমার আবার সকালে উঠে টিউশনিতে যেতে হবে ভাইয়া।

মাহমুদা চলে যাওয়ার পরে আমি সাবনাজকে খুঁজতে গেলাম। প্রথমে বারান্দায় গেলাম কিন্তু বারান্দায় নেই। বারান্দায় যখন নেই তাহলে নিশ্চয়ই ছাদে আছে। কিন্তু ছাদেও নেই। বাবা মায়ের রুমেও নেই। পরে আবার আমার রুমেও এসে পেলাম না। কোনো জায়গায় যখন নেই তাহলে কোথায় থাকতে পারে। বাড়ির বাইরে তো যাবে না। এখানেই কোথাও নেই। শুধু ভাবিদের রুম টা দেখতে বাকি আছে। ভাবির রুমে গিয়ে দেখি ভাবি ঘুমিয়ে আছে আর ভাইয়া, রাকিব, ভাবির মা আর সাবনাজ গল্প করছে। আমাকে দেখে রাকিব বলল, বসেন ভাইয়া।

আমি বললাম না বসব না এখন আর। সাবনাজ কে বললাম চলো অনেক রাত হয়েছে আর কিছু কথা আছে তোমার সাথে আমার।

আর কোনো কথা না বলে, সাবনাজ ওখান থেকে উঠে আমার সাথে রুমে আসে। রুমে আসার পরে আমি বললাম তখন তো রাকিব কে বললে চলে যেতে, ওর সাথে মাহমুদার বিয়ে ঠিক করছি বলে খুব তো রাগ করলে। এখন আবার গিয়ে তাদের সাথে হেসে কথা কেন বলো?

কেন মাহমুদ, তুমিই তো বলেছিলে আমি যেন তাদের মতো না হয়। তাদের মতো খারাপ না হয়। তাহলে এখন যখন ভালো করে কথা বলছি তাহলে তোমার কেন সমস্যা হচ্ছে? ওক তাহলে আমি ও আজ খারাপ হয়ে যাব। সাইমা ভাবির মতো খারাপ হয়ে যাব।

আমি রাগ নিয়ে বললাম এটা কেমন কথা সাবনাজ। এমনটা তো বলি নাই আমি। উল্টা কেন বুঝছো। আর রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ের কথা শুনে রেগে কেন গেলে তুমি রাকিবের উপরে।

আমার কথা ইগনোর করে সাবনাজ বলে আমার খুব ঘুম পাইছে। অনেক রাত হয়েছে। সকালে উঠে রান্না করতে হবে। “শুভ রাত্রি”

তারপর ঘুমিয়ে যায়।

কেউ আমার কথা ইগনোর করুক এটা আমার অনেক আত্মসম্মানবোধে লাগে। আমি এটা একদম সহ্য করতে পারি না‌, ছোট থেকেই। আগে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিলে যদি কেউ সিন করে রিপ্লাই না দেয় তাহলে মেসেজ রিমুভ করে দিতাম। বিছানা থেকে বালিশ আর কাঁথা নিয়ে সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আরেক কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে। তখন সকাল ১০ টা বাজে। ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকালে ডেকে দেয় কিন্তু আজ শুক্রবার বলে কেউ ডেকে দেয়নি। নিচে গিয়ে দেখি ভাবির চাচাতো ভাই একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে আমাদের বাসায় উঠেছে। কালকে বিকালে বিয়ে করেছে । রাতে দুজন দুজনের বন্ধু/বান্ধবীর বাসায় ছিল। আর সকালে এখানে চলে এসেছে। বিপদের মধ্যে আরেক বিপদ।

আমি সব শোনার পরে বললাম, এভাবে কেউ কী বিয়ে করে? বাসায় বলে বিয়ে করতে পারতে।

তখন সোহেল ( ভাবির চাচাতো ভাই) বলে, বাসা থেকে মেনে নিবে না আর কালকে সুমির বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল, এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমাদের কাছে।‌ আর কোনো উপায় না পেয়ে এখানে এসেছি । প্লিজ আমাদের জন্য কিছু একটা করেন ভাইয়া।

আমি তখন বললাম এটা এতো সহজ না। তোমার নামে নারী অপহরণের মামলা দিয়ে পারে মেয়ের পরিবার।

সুমি তখন বলে না এমনটা হতে দিব না। আমি সাক্ষী দিব নিজ ইচ্ছায় সোহেলের সাথে এসেছি আমি।

আমার খুব রাগ হচ্ছিল। বিয়ে করে যেদিকে যাবি যা, আমাদের মাথার উপরে আসার কী দরকার। সোহেলের কাছে থেকে ওর বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে এখানে আসতে বললাম। তারপর ওর বাবা এসে এসব কান্ড দেখে রাকিবকে কে কিছু না বলে থাপ্পড়াতে শুরু করে দেয়। সেই সাথে নিজের ছেলেকেও।

আমি বুঝতে পারলাম না। এখানে রাকিবের কী দোষ? রাকিবকে কেন থাপ্পড় দিল,,,,,,,

চলবে,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে