#নাপুরুষ
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘তোমার হাসব্যান্ড আসলে কোন ছেলেই না মা।ওর মেয়েদের প্রতি কোন এট্রাকশান নাই।আই মিন ও কোনদিন তোমার ঘনিষ্ঠ হবে না।হতেও পারবে না কোনদিন।ওর সেই ক্ষমতা নাই। আল্লাহ তারে সেই ক্ষমতা দেন নাই। তোমার শশুর -শাশুড়ি অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখাইছে কাজ হয় নাই। অবশেষে এক কামেল কবিরাজে বলছে,ছেলেরে বিয়ে করান। বিয়ে করালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এই জন্যই তোমারে ছেলের জন্য বিয়ে করে আনছে মা।’
কথাটা বললো রুপার ছোট চাচী শাশুড়ি ইয়াসমিন বেগম। চুপিচুপি এসে বললো কথাটা তার কাছে।কথাটা বলে আবার তাকে শেষে এও বলে দিলো,’ সাবধান! আমি যে তোমায় এসব বলেছি তা যেন কেউ টের না পায় মা!’
এর ঠিক চার পাঁচদিন পর এসে রুপার এক মামী শাশুড়ি তার কাছে চুপিচুপি বললো,’মা পৃথুল কী তোমার সাথে থাকে?’
রুপা অবাক হলো।উনি এমন কিছু জিজ্ঞেস করছেন কেন? রুপা মিথ্যে করেই বললো,হ্যা থাকে।
মামী উত্তেজিত গলায় বললেন,থাকে মানে কী বুচ্ছতো? শুধু এক ঘরে থাকার কথা বলছি না কিন্তু!
রুপা চুপ করে রইলো। এই মহিলা অত অসভ্য কেন সে বুঝতে পারছে না। এইসব বিষয়ে ভাবীরা জিজ্ঞেস করে স্বভাবত। কিন্তু উনি মামী হয়ে কীভাবে জিজ্ঞেস করে বসলেন বেশরমের মতো।বয়সও তো কম হয়নি।চুলে কিছু পাক ধরেছে!
ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর মামী শাশুড়ি বললো,’হয়ছে বুচ্ছি।থাকে না।আসল কথা হলো কী মা জানো তোমার জীবনটা নষ্ট করে ফেলছে এরা।পৃথুলের অনেক সমস্যা মা।ওর মেজো বোন সুফলা ওরে একবার দাওয়াত করে ওদের বাসায় নিলো। এরপর ওরে যে রুমে থাকতে দিলো ওই রুমে ওর বোন জামাইয়ের মাধ্যমে খারাপ মেয়ে এনে রাখছিলো ওর সাথে থাকার জন্য। সেই মেয়ে নাকি সারা রাত অনেক জোর জবরদস্তি করছে ছেলেরে।কাজ হয়নি।ছেলে মেয়ের গালে চড় থাপ্পড় দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে!’
তার মামী শাশুড়িও তাকে কথাগুলো বলে আবার সাবধানতার গলায় বললো,’সাবধান। তোমার শাশুড়ি যেন না জানে এই কথা। এই বেটি বিরাট বদ কিসিমের মানুষ।আমি তোমার কাছে বলছি এই কথা জানলে তার ভাইয়ের কাছে নালিশ দিয়ে আমায় মাইর খাওয়াইবো!ওর ভাইও এক চরিত্রের। এদের রক্তটাই এমন।আমি তোমার জন্য দোয়া করবো মা।আল্লাহ অবশ্যই একটা পথ বের করে দিবো তোমারে!’
এই মহিলার কথার জবাবে
রুপার বলা উচিৎ ছিল কেউ জানবে না মামী। কিন্তু সে কিছুই বলেনি। চুপচাপ মাথায় আলতোভাবে দু হাত চেপে ধরে বিছানার উপর বসে গেছে ঝট করে।
রুপার খুব মাথা ধরেছে। এবং কান্না পাচ্ছে।তার চাচী শাশুড়ি এবং মামী শাশুড়ি দুজনের কারোর কথাই মিথ্যে না।পৃথুলের সাথে ওর বিয়ের তিন মাস এগারো দিন পূর্ণ হলো আজ। তবুও পৃথুল তার কাছে আসেনি। একদিন সে জোর করে কাছে যেতে চাইলো।ওর গায়ে সুরসুরি দিলো। পায়ের উপর পা তুললো। নাকের কাছে বুক রাখলো।গা ঘষলো।এতেও কিছু হলো না।পৃথুল বরং বিরক্ত হলো। বিরক্ত হয়ে রুম ছেড়েই চলে গেল।আর সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো সেদিনের পর থেকে পৃথুল তার মায়ের সাথে থাকতে শুরু করলো।তার মাও কী ধরনের মানুষ যে তিনি রুপাকে বলে দিলেন, ছেলের মন খারাপ যাচ্ছে।এই কদিন সে আমার সাথে থাকুক। তুমি আবার এ কথা তোমার মাকে বলে দিও না!
এর আগেও কিছু ঘটনা লক্ষ্য করেছে রুপা।পৃথুলকে ওর মা নিজেই বাজে রকমের কুরুচিপূর্ণ গল্পের বই কিনে দিতো। সেই সব বইয়ের পাতায় পাতায় নগ্ন মেয়েদের ছবি।
পৃথুল এইসব বই পড়তো না। টেবিলের উপর পড়ে থাকতো বই।আর রুপা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এইসব বই ছিঁড়ে খুঁড়ে নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলতো।
একদিন হলো কী,ওর মেজো বোন সুফলা এসে রুপাকে বললো,’রুপা তোমার ফোনটা দেও তো দেখি!লক খুলে দিও।’
রুপা ওর হাতে লক খুলে ফোন দিলো। সুফলা শেয়ার ভেইসে ওকে কী যেন দিলো। সম্ভবত কোন ভিডিও হবে। এইগুলো দিয়ে সে আবার রুপাকে বললো, হাসব্যান্ড ওয়াইফ মিলে এইগুলো দেখলে মুহব্বত বাড়ে। বিয়ের পর এইগুলো সবাই দেখে। আমরাও দেখি। তুমিও দেখবা পৃথুলরে নিয়া।
সুফলা যখন এখান থেকে চলে গেলো তখন ভিডিও ফাইলে গিয়ে অবাক হলো রুপা।এতো নোংরাও হতে পারে একটা মেয়ে মানুষ!সে তার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে নোংরা ভিডিও দিয়ে বলছে, এইগুলো দেখলে স্বামী স্ত্রীর মহব্বত বাড়ে।সে নিজেও নাকি দেখে এইগুলো। এবং বিয়ের পর সব ছেলে মেয়েরাই নাকি এসব দেখে।কী ভয়ংকর মিথ্যে কথা।কী ভয়ংকর নোংরামি।
ছিঃ!
রুপা সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও গুলো ডিলিট করে দিলো তার ফোন থেকে।
কিন্তু তখনও সে বুঝতে পারেনি এসব কেন করছিলো পৃথুলের মা আর বোনেরা।
এরপর আবার একদিন রুপা চুপিচুপি শুনে ফেললো তার শাশুড়ি কার সাথে যেন কথা বলছে ফোনে।
বলছে,’অষুধে তো কোন কাজ হচ্ছে না।’
ও পাশ থেকে কী বললো কে জানে!
তারপর আবার শাশুড়ি নিজেই বললো,’একবার যদি শুধু ওটা করে ফেলতে পারতো,বংশের একটা গতি হতো তবেই বাঁচতাম। কিন্তু সমস্যা হলো ছেলে কোন ভাবেই মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে না।’
এইগুলো দেখার পর আর শোনার পর
আগে অতকিছু বুঝতে পারেনি রুপা। শুধু কিছুটা ধারণা হয়েছিল পৃথুল সম্পর্কে।ও ভেবেছিল পৃথুলের কোন একটা সমস্যা আছে। কিন্তু এখন ওর চাচী শাশুড়ি আর মামী শাশুড়ি তার কাছে গোপন কথাটা বলার পর তার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল! সে বুঝে গেলো আসল বিষয়টা কী!
***
রুপার বিয়ে-
‘
ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে এডমিট হওয়ার কথা ছিল রুপার। কিন্তু ভাগ্যের লিখন তার আর পড়াশোনা হবে না।অন্য সব দিনের মতোই
কলেজ যেতে বইপত্র গোছাচ্ছিলো রুপা। এরমধ্যে তার মা এসে বললো,’আজ কলেজ যেতে হবে না।’
রুপা অবাক হয়ে বললো,’কেন?’
মা বললো,’তোর বিয়ে।আজ ছেলের মা আংটি পরাতে আসবে।’
রুপার মাথায় যেন হঠাৎ আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কী অদ্ভুত কান্ড!কথা নাই বার্তা নাই ছেলেকে চিনে না দেখেনি কোনদিন আর তার মা এসে হুট করে বললো তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আজ ছেলের মা এসে আংটি পরিয়ে দিয়ে যাবে!
রুপার খুব রাগ পাচ্ছে মার প্রতি।তার মায়ের নাম নাসরিন জাহান। নাসরিন জাহানকে সে চাপা রাগ দেখিয়ে বললো,’আমি কলেজ যাচ্ছি মা।আর এখন আমি বিয়ে করতে পারবো না। পড়াশোনা শেষ করে তারপর বিয়ে।’
কথাটা বেশ সাহস নিয়েই বলতে হলো তাকে। কিন্তু রুপার মাও এক কথার মানুষ। তিনি যা বলবেন তাই সই। নাসরিন জাহান মেয়ের হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে বললেন,’এখন শুয়ে থেকে রেস্ট নেও। তারপর হাতমুখ ধুয়ে সেজেগুজে থাকো। দুপুর তিনটায় ওদের আসার কথা।’
রুপা কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারলো না।তার খুব কান্না পাচ্ছে।সে ঝটপট বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠলো।
বিকেল বেলা এলো তার হবু শাশুড়ি। ছোট খাঁটো ধরণের মহিলা। তবে স্বাস্থ্য চেহারা ভালো।কথা বলে অতিরিক্ত । এবং চতুর প্রকৃতির। নাসরিন বেগম মহিলার কথায় চিনির মতো গলে শরবত হয়ে গেল।
মহিলা বললো,’ছেলে আমার মাশাআল্লাহ।আট বছর বয়স থেকে আমেরিকা থেকেছে ওর বাবার সাথে।ওখানেই পড়াশোনা। এবার দেশে ফিরেছে বিয়ের জন্য। ছেলের চেহারা দুধে আলতা।লম্বাই পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি।একটু বেশিও হতে পারে।ওর জন্য তো আর বউয়ের অভাব ছিল না। মডার্ণ ফ্যামিলির মডার্ণ বউ আমি আনতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই ঠান্ডা মেজাজের নম্র ভদ্র লক্ষ্মী একটা মেয়ে।আমি অনেক খবরাখবর নিয়ে জেনেছি আমি যেমন বউ খুঁজছি আপনার মেয়ে ঠিক তেমন!’
নাসরিন বেগম সীমাহীন আনন্দ মুখর হাসি হাসলেন। তারপর বললেন,’আপা ছেলের ছবি এনেছেন?’
মহিলা শুকনো হাসার চেষ্টা করে বললো,’এনেছি ।’
বলে নিজের ব্যানেটি ব্যাগ থেকে একটা রঙিন ছবি বের করলো। তারপর সেই ছবি নাসরিন জাহানের হাতে তুলে দিল। নাসরিন জাহান ছেলের ছবি দেখেই বললেন,’মাশাআল্লাহ। আমার পছন্দ হয়েছে।’
তিনি সেই ছবি নিয়ে দৌড়ে গেলেন মেয়ের কাছে।
রুপা ছবি দেখবে না। কিছুতেই দেখবে না। তবুও জোর করে রুপার হাতে ছবি তুলে দিলেন তিনি। অবশেষে রুপা জলভরা চোখে ছবিটার দিকে তাকালো। এবং মুহূর্তে চমকে উঠলো।তার এই অতটুকু বয়সে এমন সুন্দর এবং স্মার্ট ছেলে সে কখনো দেখেনি!
একটু আগের কান্না হঠাৎ যেন কীভাবে বিলীন হয়ে গেল।আর সে খাট থেকে নেমে নিজে নিজেই প্রস্তুতি নিলো হবু শাশুড়ির সামনে যাওয়ার জন্য।
সরাসরি ছেলে মেয়েকে দেখলো না এবং মেয়েও ছেলেকে দেখলো না।আগে ভাগে তাদের কোন কথা হলো না। যদিও রুপা চাইছিলো আংটি পরানোর আগে ছেলের সাথে একবার দেখা করতে।কথা বলতে। ছবিতে দেখা আর বাস্তবে দেখা তো এক জিনিস হলো না। আজকালকার যুগে ছবিতে ইডিট করে কালোকে ধলা আর ধলাকে কালো, লম্বাকে বেঁটে আর বেঁটেকে লম্বা এসব অনায়াসেই করা যায়। তাছাড়া একটা ছেলের সাথে সে সারাটা জীবন কাটাবে একসাথে।তার সাথে বিয়ের আগে একটু কথাবার্তা বলা প্রয়োজন। দুজনের একটা মত অমতের ব্যাপার আছে।একটা বোঝাপড়া আছে।আর এটা বিয়ের আগেই ভালো। কিন্তু এটা সম্ভব হলো না। শাশুড়ি আজই আংটি পরাবে।তার মাও একমত। ভালো কাজে দেরি করলে নাকি শয়তান ঘাপলা বাঁধায়।ঘিট বেঁধে আটকে দেয় সেই কাজ। রুপা তবুও অনুরোধ করলো তার মাকে।অনুযোগের গলায় বললো,মা কোন একটা রেস্টুরেন্টে তো দেখা করা যায়। এই যুগে কী না দেখে বিয়ে হয়!
ওর মা তাকে রাগ দেখিয়ে বললো,তুই এমন করছিস কেন বলতো?নাকি তোর কেউ আছে?
রুপা মার কথাটা শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেল।আর কোন কথা বললো না। এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের অনামিকা বাড়িয়ে ধরলো হবু শাশুড়ির সামনে।
শাশুড়ি সেই অনামিকায় জ্বলজ্বলে স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দিলো। রুপার আর কিছুই করার থাকলো না। বাঙালি আর দশটা মেয়ের মতোই বাবা মায়ের ইচ্ছের বলি হতে হলো তাকে।
রুপার বাবা অবশ্য বাড়িতে থাকেন না। তিনি থাকেন সিঙ্গাপুরে।আর সাধারণত তিনি সাদামাটা ধরণের মানুষ।প্যাচগোছ বুঝেন না। নাসরিন বেগম যা বলেন তাই করেন। এই বিয়েতেও তিনি নাসরিন বেগমের সম্মতিকেই প্রাধান্য দিলেন। তাছাড়া ইমুতে তিনি ছেলের ছবি দেখেছেন।ছবি দেখে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তার দুঃখ একটাই। বড় মেয়েটার বিয়েতে তিনি থাকতে পারবেন না।
‘
রুপাকে আংটি পরানো হয় রমজানের ছয় তারিখ।আর তার বিয়ে হয়ে যায় রমজানের বারো তারিখ। সবচেয়ে আশ্চর্য জনক বিষয় হলো বিয়ে হয় ঘরোয়া পরিবেশে। কোন আত্মীয় স্বজন নাই। ছেলের বাবা নিজেদের প্রাইভেট কার নিয়ে আসেন আর রুপাকে নিয়ে যান। ছেলে আসেনি। ওখানে নিয়েই বিয়ে পড়ানো হবে।রুপা কিছু বুঝতে পারে না। বিয়ের আনন্দ পায় না।মাঝ থেকে তার কেমন সন্দেহ জাগে।মনে মনে ভাবে, এখানে কোন একটা ঘাপলা আছে। বড়ো সড়ো ধরণের ঘাপলা। কিন্তু সেটা কী?
‘
বিয়ে হয়ে গেল।ওখানেও সাদামাটা পরিবেশ। শুধুমাত্র ছেলের তিন বোন এসেছে।আর বোনদের বর, সন্তান সন্ততি। এছাড়া বাইরের কেউ নেই। এমনকি ছেলের চাচা চাচীও নাই।
সারা দিন চলে গেছে। সন্ধ্যা হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্য জনক বিষয় হলো ছেলেকে এখনও দেখেনি রুপা। বিয়ে পড়ানোর সময় শুধু সে ছেলেকে দেখলো। ওকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। কিন্তু চিন্তিত দেখালেও অসাধারণ লাগছিলো দেখতে। মনে হচ্ছিলো এটা কোন ছবির আঁকা দৃশ্য।বাস্তব নয়। বাস্তবে একটা ছেলে অত সুন্দর হতে পারে না কিছুতেই। বিয়ে পড়ানো হলে ছেলেকে তার মা টেনে নিয়ে গেলেন কোথায় যেন। তারপর আবার নিরুদ্দেশ ছেলে!আর দেখতে পায়নি রুপা তাকে।
‘
রুপা খাটের উপর বসে ছিল একা একা।আজ তার ফুলশয্যা।এখন রাত একটা বাজে।বর কাছে আসার নাম গন্ধও নাই!
রুপার কেমন কান্না পাচ্ছে।ভয় ভয় করছে কেমন।এরই মধ্যে তার শাশুড়ি এলো। এসে বললো,’মাগো,পৃথুলের আজ শরীর খারাপ।ও আমার সাথে থাকবে আজ। তুমি লাইট অফ করে শুয়ে পড়ো!একটু পর তো আবার উঠতে হবে। সেহেরির টাইম হয়ে যাবে।’
রুপার গা রাগে কাঁপছে। ইচ্ছে করছে অনেক কিছু বলতে। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারলো না।চুপ করে রইলো।
শাশুড়ি চলে যাওয়ার পর সে দরজা বন্ধ করে এলো।কী যে খারাপ লাগছে তার। তার রাগ হয় খুব । কিন্তু কার প্রতি রাগ দেখাবে সে?এ বাড়িতে তো তার আপন বলতে কেউ নাই। একবার মনে হয় তার মার কথাও। নিজের মাকেই কেমন তার পর মনে হতে থাকে।মাই তো তার ইচ্ছে টা বুঝলো না।সে বলেছিল এখন বিয়ে করতে চায় না।জোর করে বিয়ে দিলো। তারপর ছেলের সাথে কথা বলতে চায়লো।এটাও হলো না।
তারপর সাজসজ্জা নিয়েই শুয়ে পড়লো বিছানার উপর সে। সারাদিনের ক্লান্তি এসে জেঁকে বসেছে তার চোখে। এখন ঘুমাবার প্রয়োজন।ঘুম থেকে উঠে সব ভাবা যাবে! এবং শুয়ার কয়েক মিনিটের ভেতর সে ঘুমে তলিয়ে গেল।
‘
রুপা ঘুমোতে পারলো এক ঘন্টার মতো।এর পরই ডাক পড়লো তার। শাশুড়ি মা ডাকছে।
রুপা রাগ ভরা গা নিয়ে দরজার কাছে গেল।খুলে দিলো দরজা। শাশুড়ি লায়লা বেগম আধ হাসি মুখে বললো,’মাগো,আজ কাজের বুয়া আসেনি। মেয়েটার পেট খারাপ।ডায়েরিয়া হয়ে গেছে সম্ভবত। তুমি আসো তো একটু মা। কিচেনে গিয়ে সেহেরির খাবারটা একটু গরম করে নেও। তোমাকে অবশ্য বলতাম না মা। কিন্তু আমারও শরীরটা খারাপ ।প্রেশার টা লো হয়ে গেছে।’
রুপার এই মহিলাকে আর সহ্য হচ্ছে না।এটা কোন ধরনের আচরণ। বিয়ের প্রথম দিনেই তাকে কামলা খাটানো শুরু করে দিয়েছে একেবারে।যেন মগের মুলুক পেয়েছে!কাজের বুয়া নাই, তার প্রেশার লো, কিন্তু বেড়াতে আসা তিন তিনটা মেয়ে তো আছে।ওরা কী করছে?ওরা তো পারে খাবার দাবার গরম করে নিতে!
তার ইচ্ছে করছে গলা চেপে ধরতে শাশুড়ি নামের এই দুরন্ধর মহিলাটার। কিন্তু এটা এখন করা যাবে না।সে ভয়ানক রাগটা চেপে গিয়ে মনে মনে এই মহিলাকে একটা গালি দিলো।বললো,বাটকু শয়তানি।
‘
#চলবে।