ননদ পর্ব-১২+১৩+১৪+১৫ এবং শেষ পর্ব

0
3100

পার্ট 12+13+14+15Last

#ননদ
পর্ব-১২
আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিলো এই ভেবে যে আমি কেনো ওর প্রতি আরেকটু ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখিনি। আমার মাথায় কেনো আসেনি যে মেয়েটার বয়স টাই খারাপ, ও যেকোন মূহূর্তে যেকোন ভুল পথে পা বাড়াতে পারে। বাসায় এসে ইচ্ছা মতো কতক্ষন চিৎকার করে কাঁদলাম। বড় আপাকে ফোন দিয়ে সব বললাম। আপা বললো-
” যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করিস না। কান্না কাটি থামা। নিজে আগে স্বাভাবিক হ। এখন মূল চিন্তার বিষয় হচ্ছে নাদিয়াকে কিভাবে ঐ রাস্তা থেকে ফিরাবি। তুই যা বলছিস, ও তো মনে হচ্ছে ঐ ছেলের প্রতি অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ওকে ফিরানো একটু কষ্ট হবে। একদম মাথা গরম করবি না। একদম মাথা ঠান্ডা করে কাজ কর যাতে নাদিয়া ভেঙে না পড়ে। বুঝিস তো ও এখন খুব ইমোশনাল। তুই রাগের মাথায় তুই কোন কথা বলবি পরে যদি মেয়েটা suicide attempt নেয় তাহলে কিন্তু হীতে বিপরীত হবে। নাহিদকে ছেলের character সম্পর্কে জানিয়েছিস?”
-” না এখনও জানাইনি”
-” নাহিদ বাসায় আসলেই ওকে এসব খুলে বলবি। কারন বিষয়টা সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। আর তোকে আমি আবারও বলছি স্বাভাবিক হ। নাদিয়াকে কিভাবে ঠিক পথে আনবি সেদিকে খেয়াল দে। আর শোন নাদিয়া তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে। ঐ ছেলের জন্য ও তোকে কখনোই ছেড়ে যাবে না। তোর ভালোবাসাটাই ওর কাছে অনেক বড়।”
বড় আপার কথা শুনে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিলাম। নিজেকে মনে মনে শক্ত করলাম যে আমার ভেঙে পড়লে চলবে না। আমার মেয়েকে অন্ধকার পথ থেকে বের আমাকেই করতে হবে। রাতে নাহিদকে সব বললাম। ও বলেছিলো মেয়েকে দূরে পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু আমি না করে দিলাম। বললাম-
” আমি ওকে অন্য কারো ভরসায় দিবো না। আমার নাদিয়া এখানেই থাকবে, আমার চোখের সামনে। আমিই ওকে দেখে রাখবো। আর ওকে আমি সব বুঝিয়ে বললে ও নিশ্চয়ই আমার কথা রাখবে। চলো নাদিয়ার সাথে কথা বলবো”।
আমরা দুজনই নাদিয়ার রুমে গেলাম। আমিই কথা শুরু করলাম-
” নাদিয়া, আসাদ তোকে যা বলেছে তা কতটুকু সত্যি তা কি তুই কখনো যাচাই করেছিস যে কথাগুলো কতটুকুসত্য?”
-” না ভাবী, যাচাই কেনো করবো? ও আমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। ও আমাকে মিথ্যা বলার প্রশ্নই আসে না”।
-” নাদিয়া, আসাদ তোকে কখনোই ভালোবাসেনি। ও একটা মিথ্যুক, নেশা করে, এস.এস .সি ফেইল, কোন জব করে না, রাস্তায় মেয়েদের অশালীন মন্তব্য করে, বিভিন্ন মেয়ের সাথে ওর শারিরীক সম্পর্ক, কিছুদিন পর ও তোর সাথেও এসব করবে”
নাদিয়া আমার হাত চেপে ধরে বললো-” ভাবি এসব তুমি ভুল শুনেছো, ও কখনোই এসব করতে পারে না। ও আমাকে খুব ভালো বাসে। তুমি জানো আমি প্রথমে সম্পর্কে জড়াতে রাজি হইনি। তখন ও খুব কান্নাকাটি করতো ফোনে। এরপর একদিন ও হাতের রগ কেটে ফেলে। সেদিন আমার কাছে মনে হলো আমি ওকে এই কাজ করতে বাধ্য করেছি। আমি যদি ওকে ফিরিয়ে দেই তাহলে আমি ওর মত ভালো বাসা আর কোনদিন খুঁজেই পাবো না। ওর মত কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। তুমিই বলো ভাবি ও যদি আমাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালো নাই বাসতো তাহলে তো আর রগ কাটতে পারতো না”
-” ও রগ কেটেছে এটা তোকে কে বলেছে?”
-” তৌহিদ ভাইয়া বলেছে”।
-” তুই ওর হাতে কি কোন দাগ দেখেছিস?”
-” না ভাবি ও নাকি কাটা জায়গায় কি একটা ক্রিম লাগিয়েছে তাই দাগটা মুছে গিয়েছে”
-” নাদিয়া তুই কেনো বুঝতে পারছিস না ওএটাও মিথ্যা কথাই বলেছে। ও রগ টগ কিছুই কাটেনি”।
– ” ভাবি ওর কান্না তো আমি শুনেছি দেখেছি। চোখের পানি কিভাবে মিথ্যা হয় ? ও যদি ভালো না বাসতো তাহলে তো আর কান্না করতে পারতো না”
আমি আর নাহিদ ওর কথা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। নাদিয়ার মত এত বিচক্ষন একটা মেয়ে এত বোকা হলো কবে থেকে? দেয়ালে নিজের মাথা নিজেরই ঠুকতে ইচ্ছা হচ্ছিলো। তবু মাথা ঠান্ডা রেখে ওকে অনেকক্ষন বুঝালাম। কিন্তু ও কিছুই বুঝলোনা। তবুও আমরা দুজনই ওকে প্রতিদিনই ভালোভাবে বুঝাতাম আর ও বসে বসে কাঁদতো। এভাবে মাস পাঁচেক চলে গেলো। নাদিয়ার মাঝে কোন পরিবর্তনই আসলো না। তবুও আমি হাল ছাড়িনি। আমার দৃড় বিশ্বাস ছিলো ও একদিন ফিরে আসবেই।
একদিন ওর কলেজের হেডমিসট্রেস ফোন দিয়ে বললো আমাকে উনার সাথে এখনই দেখা করতে। আমিও সাথে সাথেই বের হয়ে গেলাম। যাওয়ার পর উনি বললেন, ” নাদিয়া ইদানিং কলেজে রেগুলার আসেনা। প্রতি সপ্তাহেই এক দুদিন মিস করছে। কোন সমস্যা হচ্ছে বাসায়?
ওনার এ কথা শুনে আমি বুঝে ফেললাম নাদিয়া কলেজের কথা বলে আসাদের সাথে দেখা করতে যায়। আমি উনাকে মিথ্যা কথা বললাম-
” ম্যাম আসলে ও একটু অসুস্থ তো তাই ওকে আমিই কলেজে আসতে দেই না”
-” দেখুন ওর ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট। কোনমতে টেনেটুনে পাশ করেছে। এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে হবে?”
ওর রেজাল্ট দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো সেদিন আমার ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে গেলো…….

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

#ননদ
পর্ব-১৩
রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো। ওকে আমি এত ঠান্ডা মাথায় বুঝাচ্ছি তবুও নাদিয়া আমার কথার দামই দিচ্ছে না। ওর সাহস কত বড় ও ঐ ছেলের সাথে প্রতি সপ্তাহেই ঘুরতে যায়!!! তাও আবার কলেজ ফাঁকি দিয়ে। তার মানে আজও ও আসাদের সাথেই বের হয়েছে। ওর বাসায় ফেরার অপেক্ষা করছিলাম। কলেজ ছুটি হওয়ার পর যে সময় ও বাসায় প্রতিদিন পৌছায় ঠিক সে সময়ই বাসায় আসলো। আমি ওকে বললাম-
“বাহ্ মেয়ে তো ভালোই নাটক শিখেছে। একদম সময় মতো বাসায় চলে আসলো যাতে আমি সন্দেহই না করতে পারি।”
-” কিসের নাটক ভাবি”?
-” তুই কলেজ ফাঁকি দিয়ে প্রতি সপ্তাহেই আসাদের সাথে ঘুরতে বের হোস”।
-” কখনোই না ভাবি। এসব মিথ্যা কথা।”
-” খবরদার নাদিয়া আর একটা মিথ্যা কথা বলবি না। তোর হেডমিসট্রেস আমাকে সব বলেছে। একটা রাস্তার বাজে ছেলের জন্য অামাকে মিথ্যা বলছিস। ঐ ছেলের মিথ্যা নাটক আমার ভালোবাসার চেয়ে তোর কাছে বড় হয়ে গেলো তাই না?? এতদিন তোকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়েছি। কিন্তু আর না। তোর প্রতি শক্ত না হলে তুই ঠিক হবি না।”
আমি ওর মোবাইল ওর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিলাম, ওর সাথে কলেজে আমি যাওয়া-আসা করছিলাম,আমাদের ফোনে আসা যেকোন কল রিসিভ করা ও ওর নিষেধ ছিলো। আসাদের সাথে যোগাযোগের সব রাস্তাই আমি বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু ওর মন থেকে আসাদ কে বের করতে পারলাম না। ও বলতে গেলে ২৪ ঘন্টাই কাঁদতো ঐ ছেলের জন্য, ঘুমাতো না, একঘরে সারাদিন বসে থাকতো, খাওয়া-দাওয়া ও সব বন্ধ করে দিলো। এভাবে এক সপ্তাহ যাওয়ার পর ও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলো। ওর কলেজ কোচিং সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আমরা সবাই ওকে বুঝালাম। কিন্তু ওর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা,” আমি আসাদকে ছাড়া বাঁচবো না”।
১৫-১৬ দিন হয়ে গেলো নাদিয়ারমাঝে কোন চেন্জ দেখতে পেলাম না। বরং ও আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলো। মনে মনে ভাবলাম, “নাহ্ এভাবে আর হচ্ছে না। আমি আমার মেয়েকে তো আর চোখের সামনে মরতে দেখতে পারি না। কিছু একটা করতেই হবে।”
আরও ১৫ দিন যাওয়ার পর আমার ফোনে একটা মেসেজ আসলো, ” done Apu”. মেসেজটা পাওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিলাম। তবে এতদিনে নাদিয়ার পাগল হওয়ার মত অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। ওকে দেখলেই আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করতো। কিন্তু আমি তা করিনি। কারন আমি চাচ্ছিলাম না যে ও বুঝুক আমি কষ্ট পাচ্ছি, দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। মেসেজটা যেদিন আসলো সেদিন দুপুরেই আমি ওর হাতে ওর মোবাইল টা তুলে দিলাম আর বললাম, দেখ নাদিয়া তুই আমার চোখের সামনে একটু একটু করে মারা যাবি তাআমি সহ্য করতে পারবো না। এই নে তোর ফোন। তুই যাকে পছন্দ করেছিস তার হাতেই তোকে তুলে দিবো। তবুও তুই স্বাভাবিক হ। তুই যেভাবে চাচ্ছিস সেভাবেই হবে। তুই ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকবো”।
নাদিয়া আমাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরেছিলো। ঐ এক মাসে ও আমাকে একবারের জন্যও জড়িয়ে ধরেনি। অথচ সেদিন আসাদের ব্যাপারটা সায় দিয়েছি তাই ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।
আম্মাকে ফোনে সব বললাম। আম্মা বললো-
” আচ্ছা আমি বুঝতে পারছিনা ঐ ছেলে এমন কি করেছে যে তোর ভালোবাসাটা নাদিয়ার চোখে পড়ছে না?”
-” আম্মা ও নাটক করছে আর আমি সত্যিকারে ভালোবেসেছি। নাটক চোখে দেখা যায় কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসার পরিমানটুকু কখনোই চোখে দেখা যায়না। এজন্য নাদিয়া ওরটা দেখতে পাচ্ছে আমারটা না।”
-” যাই হোক মা বুঝে-শুনে কাজ করিস। মেয়েটা এখনও ছোট। ওর যেনো কোন ক্ষতি নাহয়”
আম্মার সাথে কথা বলে নাদিয়ার রুমে যেয়ে দেখি নাদিয়া কাঁদছিলো।
-” কিরে মোবাইল তো তোকে দিয়েই দিলাম। এখনও কাঁদছিস কেনো?”
-” ভাবি আসাদকে সেই দুপুর থেকে কল করছি ও বারবাার ফোন কেটে দিচ্ছে, একটু আগে মেসেজ দিয়েছে আমি যেনো ওকে আর ফোন না দেই”
-” কি বলিস এসব? ও এখন এমন করছে কেনো?”
-” আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ভাবি”
-” আচ্ছা তুই এখন কান্না বন্ধ কর। কাল সকালে ওর সাথে দেখা করে জেনে নিস কি হয়েছে। এখন শান্ত হ। খেতে যাবি চল। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বি। কালকে একদম খুব সকালেই ওর সাথে দেখা করিস….
(চলবে)
লেখা-মিম

#ননদ
পর্ব-১৪
পরদিন সকালেই নাদিয়া আসাদের সাথে দেখা করতে গেলো। আমি অপেক্ষা করছিলাম কখন নাদিয়া আসবে। ও দুপুর বারোটার পর ফেরত আসলো। ও খুব কাঁদছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম-
” কি ব্যাপার তুই কাঁদছিস কেনো? আসাদ কি বলেছে তোকে?”
-” ও বলেছে আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখবেনা।”
-” কেনো”?
-” ও নাকি নতুন গার্লফ্রেন্ড পেয়েছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। এরপর ও ওর গার্লফ্রেন্ডকে আমার সামনে এনেছে। ঐ মেয়ে অনেক অপমান করেছে আমাকে। বলেছে আমি নাকি আসাদকে বিরক্ত করছি, ওদের রিলেশনে আমি ঝামেলা তৈরি করছি”।
-“তুই এসব চিন্তা করিস না। তুই এতদিন ওর সাথে যোগাযোগ করিসনি তাই ও বোধহয় তোর সাথে রাগ করে এমন করেছে। আমি বিকালে ওর বাসায় যেয়ে ওর সাথে কথা বলবো। ওকে বোঝাবো আমি।”
আমার কথা শুনে ও কিছুটা শান্ত হলো। বিকালে আমি আর নাদিয়া আসাদের বাসায় গেলাম। ওর বাসায় যেয়ে দেখলাম মেইন ডোরটা একটু খোলা। আমরা ভেতরে ঢুকে কাউকে খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ কর্ণারের একটা রুম থেকে মেয়ের হাসির আওয়াজ পেলাম। আমরা দুজনই রুমের দিকে গেলাম। দরজার পর্দা সরিয়ে দেখি আসাদ একটা মেয়ের সাথে খুবই অপ্রীতিকর অবস্থায় আছে। নাদিয়া ওদের দেখে সাথেসাথেই বসে পড়লো। আসাদের দিকে ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। আমি খুব বুঝতে পারছিলাম মেয়ের ভেতরটা ভেঙে চুরে যাচ্ছে। আমি ওকে ধরে উঠালাম। বললাম-” চল এখান থেকে। ওর কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি ভালো কিছু আশাও করা যায়না। আমি শুধু তোর মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছিলাম”।
ও বললো, ” তুমি যাও ভাবি। আমার ওর সাথে কিছু কথা আছে। আমি একটু পর আসবো”।
আমি ঘর থেকে বের হলাম কিন্তু ঘরের বাইরে দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিলাম আমি দেখতে চাচ্ছিলাম নাদিয়া কি করে। ও আসাদের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বলে উঠলো,” আমি যে প্রেগনেন্ট তা কি ভুলে গেছো? তুমি যদি এখন আমাকে ফিরিয়ে দাও তাহলে বাচ্চাটার পরিচয় কি হবে”?
আমি আমার নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি রুমে ঢুকে ওকে জিজ্ঞাস করলাম, ” যা বলছিস তা কি সত্যি?”
” হ্যা ভাবি”
আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। আমি সাথে সাথেই ওকে চড় মারলাম। আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। প্রায় দশ মিনিটের মত চুপচাপ বসে ছিলাম। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না……..
(চলবে)
লেখা-মিম

#ননদ
শেষ পর্ব
সেখান থেকে উঠে আমি নাদিয়াকে নিয়ে চলে আসলাম। আম্মাকে বাসায় ফোন করে নিয়ে আসলাম। বাসায় আসার পর সব ঘটনা বললাম। আম্মা বললো,
” এই বাচ্চা তো এবোরশন করাতে হবে। আর খুব জলদি করতে হবে। লোকে জানলে মান-সম্মান তো কিছুই থাকবে না। যা করার আজকের মধ্যে কর”। নাদিয়া খুব করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-” ভাবী, বাচ্চাটাকে আমাদের মেরে ফেলতে হবে। ওকে আমি খুন করবো কিভাবে”?
আমি যে কত বড় দ্বিধায় পড়ে আছে কাউকে বুঝাতে পারছি না। আমি আমার রুমে যেয়ে গেট লাগিয়ে দিলাম। আমাকে একাই এর সমাধান বের করতে হবে। নাদিয়া আর আম্মা এক এক সময় এক এক কথা বলে আমাকে কনফিউজড করে ফেলছিল তাই ওখান থেকে এসে পড়েছি। একদিকে আমাদের মান-সম্মান অন্যদিকে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা। আমার দুটা জিনিসই মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ১০ মিনিট এর মধ্যে যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নিয়ে নিলাম। বড় আপাকে ফোন দিয়ে বললাম,
-“আপা তোর খুলনার বাড়িটাতে আমাকে ৮-৯ মাসের মত থাকতে দিতে পারবি”
-” হ্যা পারব। কিন্তু এতদিন তুই সেখানে কেনো থাকবি?”
-” আম্মার কাছ থেকে জেনে নিস”।
আপার সাথে কথা শেষ করে নাদিয়ার রুমে যেয়ে ওকে বললাম, আমাদের যত আত্মীয়-স্বজন আছে সবাইকে তুই এখন ফোন দিবি। দিয়ে বলবি” ভাবী প্রেগনেন্ট। আমি দ্বিতীয়বারের মত ফুপু হতে যাচ্ছি”। আর অবশ্যই তোর কথায় ঠিক ঐ excitement টা প্রকাশ করবি যেমনটা তুই নিহালের সময় করেছিলি।”
আম্মা নাদিয়া দুজনই বলে উঠলো, ” মানে কি এসবের?”
আমি বললাম-” আমি চাই বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসুক। ওর মা বাবার ভুলের শাস্তি ও কেনো পাবে”।
-” তুই বুঝতে পারছিস মানুষ জানলে কি হবে”?
-” মানুষ জানতে পারলে তো কিছু করবে। মানুষ যাতে না বুঝে এজন্যই সবাইকে জানাতে বলছি আমি প্রেগনেন্ট।
-” তোর কি ধারনা নাদিয়াকে দেখে কেউ বুঝবে না”
-” নাদিয়াকে কেউ দেখবেই না। আমি ওকে নিয়ে আজই খুলনা চলে যাবো। একেবারে ডেলিভারীর পর আসবো”
-” তোর কি ধারনা এগুলো করা খুব সহজ হবে”
-” আমি জানি সহজ হবেনা। কিন্তু একটা বাচ্চাকে খুন করার চেয়ে এটা আমার কাছে অনেক বেশি সহজ মনে হচ্ছে। কোন টেনশন করো না আম্মা। আমি আমার মেয়ের দিকটাও দেখবো আর আমাদের সম্মানও। যেভাবেই হোক সামলে নিবো। আর নাদিয়া তুই সবাইকে ফোনে এখনই জানিয়ে দে। আমি ততক্ষনে যা গোছগাছ করার দরকার করি”।
এতক্ষন মেয়েটা আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো আর বললো-” প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমার কোন মূল্যই দেইনি অথচ তুমি আমার বাচ্চাটাকে বাচিয়ে রাখার জন্য এতকিছু করছ। এতকিছুর পরও তুমি এখনো আমাকে আগলে রেখেছো।। তুমি মাফ করে দাও প্লিজ”….
ওদিকে আম্মা আমার মাথায় বুলাচ্ছেন। উনার চোখে আমি পানি ছলছল করছিলো ঠিকই কিন্তু চোখ দুটোতে আমি খুশি দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি ব্যাগ গোছাচ্ছি এমন সময় নাহিদ এলো। ওকে সব বুঝিয়ে বললাম। ও কোনমতেই রাজি হচ্ছিলো না। বহু কষ্টে আমি ওকে রাজি করালাম। ও আমার হাত ধরে কেঁদেই দিলো। বললো-” আম্মু বুঝে শুনেই তোমার হাতে ওকে দিয়ে গিয়েছে। আমার হাতে দিলে হয়তোবা আমি ওকে ঘর থেকে বের করে দিতাম বা ওর এবোরশন করাতাম। কিন্তু তুমি এর কিছুই করোনি। ও এতকিছু করার পরও তুমি ওর আর ওর বাচ্চার কথাই ভাবছো। আম্মুও বোধহয় ওর জন্য এতকিছু করত না। আমি তোমার কাছে সারাজীবন ঋনী থাকবো”
-” নাহিদ ওকে আমার মেয়ের মত বড় করেছি তাই ওর জন্য এতকিছু করি। যদি শুধু ননদ ভাবতাম তাহলে কখনোই এত কিছু করতাম না। আসলে ওর সাথে আমার সম্পর্কটা কি তা তুমি বুঝতেই পারোনি। যদি বুঝতে তাহলে আর ঋণী থাকার কথা বলতে না”
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আমি নিহাল আর নাদিয়াকে নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওয়ানা হলাম। আসার আগে নাহিদ আর আম্মা দুজনই আমাকে বললো-” তুমি চিন্তা করোনা। এখানে যদি কেউ তোমাদের কথা কেউ জিজ্ঞেস করে তাহলে আমরা সামলে নিবো”।
রাত সাড়ে বারোটা বাজে। নাদিয়া আমার ডান কাধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে আর নিহাল বাম পাশে কোলে বসে ঘুমুচ্ছে। ভাবছি নাদিয়ার সাথে আমার করা নাটকটির কথা। হ্যা আমি ওর সাথে নাটক করেছি। সেদিন যে মেয়েটার সাথে আসাদকে আমরা দেখেছিলাম সে মেয়েটাকে আমিই টাকা দিয়ে আসাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম। আসাদের সাথে ঐ মেয়ের প্রেম, নাদিয়াকে অপমান, দরজা খোলা রাখা, ওদের অপ্রিতীকর অবস্থায় দেখা সবই আমার প্ল্যান ছিলো। আমি চাচ্ছিলামনাদিয়া ওর আসল চেহারা দেখুক। তাই সেদিন ঐ মেয়ের মেসেজটা পাওয়ার পর ওর হাতে আমি ফোনটা আমি ফেরত দিয়েছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতেই আমার মোবাইলে ফোন এলো। রিসিভ করে শুনলাম-” আপা কাম শ্যাষ। এক্কেরে কোমর থেইকা নিচ পর্যন্ত গুঁড়া কইরা দিসি।”
আমি ফোনটারেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। হ্যা আমি আসাদকে চিরতরে পঙগু বানিয়ে দিয়েছে। অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে ও। ওর জন্য অনেক বাচ্চা দুনিয়ার মুখ দেখার আগেই খুন হয়েছে। এটা ওর প্রাপ্য ছিলো। এখন আর কারো সর্বনাশ থাক দূরের কথা উঠে বসতেই পকরবে না। নাদিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো ” কে ফোন দিয়েছে ভাবী”
-” মায়ের সব কথা জানতে নেই। তুই ঘুমা”
আসলেই মা দের অনেক জানতে নেই। সন্তানরা মা দের অনেক কিছু জানেও না। মায়েরা সন্তানের মঙ্গলের জন্য দুনিয়ার সবার সাথে মিথ্যা নাটকও করে আবার সন্তানের অমঙ্গলকারিদের উপযুক্ত শাস্তিও দিতে জানে। মায়েরা সবকিছুতেই সন্তানের স্বার্থ খুঁজে। আমিও তাই করেছি। কারন আমিও আমার ননদের মা। ওর মা আমাকে ওর মা হওয়ার অধিকার দিয়ে গেছে। আমি ওর স্বার্থের জন্য সব করতে পারি। সব…..
গাড়ি খুব দ্রুত এগোচ্ছে। আর আমিও প্রস্তুতি নিচ্ছি পৃথিবীর সবার সামনে অন্য আরেক নতুন নাটক করার। তবে এই নাটকটা আমার তৃতীয় সন্তানের জন্য। আমার নাদিয়ার সন্তানের জন্য…..
সমাপ্ত
লেখা-মিম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে