#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (৩+৪)
এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হবে? অন্ত্রীশা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আপুকে টেনে বাইরে বের করে দরজা আটকিয়ে নিলো।
“” আটকিয়েছি বলুন!””
“” একটু লাইনে থাকো তো…””
যেখানে পালকের কন্ঠস্বর শুনার জন্য অন্ত্রীশা আকুল সেখানে ইম্পর্ট্যান্ট কথা মানে তো মহাআকুলতা। ফোনটা কানে নিয়েই বেশ মনোযোগী ভঙ্গিমায় বসে রয়েছে অন্ত্রীশা। এদিকে এক,দুই,তিন,পাঁচ,দশ,বিশ,চল্লিশ মিনিট পার হতে চলেছে কিন্তু ওপাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর আর ভেসে আসছেনা। অন্ত্রীশা খুবি সুক্ষমনো সংযোগ করে বুঝার চেষ্টা করছে ফোনের ওপাশে আদৌ কেউ আছে নাকি নেই। কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল যার জন্য তাকে খালি রুমে দরজা আটকে নিতে হলো অথচ যে বলবে সে লাইনে দাড় করিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেছে।
লাইনে থাকতে থাকতে অন্ত্রীশার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। বার বার ফোন চেক করে যাচ্ছে ওপাশ থেকে লাইনটাও কাটা হয়নি, এক এক করে সেকেন্ড বেড়ে গিয়ে মিনিটও বেড়ে যাচ্ছে। অন্ত্রীশা কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতেই বলে উঠলো,
“” আমি কি কলটা কেটে দিবো?””
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি দেখে অন্ত্রীশা এবার বেশ হতাশ হলো। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার জীবনে যেন এমন লাইনে থাকা ইম্পর্ট্যান্ট মুহুর্ত আর কখনো না আসে!
অন্ত্রীশা কল কাটবে কি কাটবেনা ভেবেই পাচ্ছেনা। ফোনটা কানে নিয়ে বসা থেকে শুয়ে পড়লো। এক সময়ে তার চোখদুটো বন্ধও হয়ে আসলো।
“” তোমাকে বলেছিলাম লাইনে থাকতে,আমার জন্য তুমি সামান্য লাইনেও থাকতে পারোনা? কেমন মেয়ে তুমি? আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য ধেই ধেই করে নাচছো? তোমাকে বিয়ে তো দুরে থাক তোমার সাথে কথা বলতেও আমার গা গুলাচ্ছে। ইডিয়েট কোথাকার! খবরদার কারো কাছ থেকে যদি আমার নাম্বার নিয়েছো আর আমাকে কল দিয়েছো! তাহলে ফোনের ভেতর থেকেই তোমাকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো! যত্তসব!””
অন্ত্রীশা লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে পড়লো। শরীর ঘেমে গেছে। ওড়না দিয়ে গলা মুছতে মুছতে ভাবলো,এ আমি কেমন স্বপ্ন দেখলাম??
অন্ত্রীশার পাশেই পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিতেই দরজায় অনর্গল নক করার শব্দ পেলো। দৌড়ে দরজা খুলতেই অনিকশা ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
“”দু ঘন্টা যাবত কি এতো কথা বলছিস শুনি? যার জন্য আমাকে রুম থেকে বের করে দিলি??””
“” আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম আপু,কথাতো হয়নি!””
“” কথা হয়নি মানে? তুই তো কানে ফোন লাগিয়েই আমাকে বের করে দিলি!””
অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওর হাত থেকে নিজের ফোনটা ছিনিয়ে নিলো অনিকশা! ফোনের লাইটটা অন করেই দেখতো পেলো পালক এখনো কলে কানেক্ট আছে। নামের নিচটাতেই কল টাইমে ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড উঠে আছে। যদিও বা সেকেন্ডটা এখনো চলছে!
অনিকশা বেশ করুন নয়নেই অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“” বিয়ে হওয়ার আগেই আপুকে মিথ্যে বলা শিখে গেলি?””
“” কি মিথ্যে বললাম?””
অন্ত্রীশার কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলোনা অনিকশা। পালকের কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললো৷ নিজের রুমে এসে ফোনটা ঢিল মেরে ফেলে দিতেই অরিদ বলে উঠলো,
“” আমার রাগ ফোনের উপর ঝাড়ছো কেন, অনি? তুমি চাইলে আমাকে বকতে পারো! এখন তো তোমার বকা না খেলে আমার পেটের ভাত হজমই হয়না। দেখো আজকের নাস্তাটা এখনো হজম হয়নি,পেটটা কেমন ফুলে আছে!””
“”সুঁই দিয়ে ফুটো করে ফেলো দেখবে পেটটা তরতর করে কমে যাচ্ছে,যত্তসব হেয়ালিপনা করার আর সময় পায়না।””
অরিদ নিজের ল্যাপটপটা ফেলে উঠে অনিকশার কাছে এগিয়ে আসে।
“” তোমার রাগের ক্ষেতের সবজি বুনা কবে শেষ করবে বলোতো? এতো সবজি বুনছো অথচ মাটির উর্বরতা কমার নামই নাই। কোন মাটি দিয়ে ক্ষেত বানিয়েছো বলোতো!””
অনিকশা রক্তরাঙা চোখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অরিদ ওর হাতটা আকড়ে ধরে।
“” আজকের এই দিনটাই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম অনি,বুকের ভেতরে প্রথম মোচড়টাও আজকেই দিয়েছিলো। আজকের দিনটা কি আমাকে দিবে? একটু তোমাকে মন ভরে দেখার জন্য? লাস্ট কবে তুমি আমার চোখে চোখ রেখে হাসি দিয়েছিলে তোমার কি মনে পড়ে?””
অরিদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকলেও এখন আর ইচ্ছে করছেনা। অরিদ তাকে কতটা ভালোবাসে সেটা হয়তো সে অরিদের থেকেও ভালো করে জানে। যে ছেলে শুধু একপলক দেখার জন্য রোজ ভার্সিটির গেটে দাড়িয়ে থেকে তিনটা বছর পাড়ি দিয়ে দিয়েছে সে ছেলের হৃদয়ের অনিকশা কতটা জায়গা জুরে ছিলো তাও অনিকশার অজানা না। আর সেই জানা থেকেই হয়তো এতটুকু বুঝতে পেরেছিলো অরিদ তাকে ফিরাবেনা। আর সেই বিশ্বাসেই সে হুট করেই অরিদকে বিয়ের কথা বলে ফেলে। বিয়েটাও হয়ে যায়,কোনো সাজসজ্জা ছাড়াই!
অরিদ চাইলেই সেদিন অন্ত্রীশাকে ফিরিয়ে দিতে পারতো। যেখানে আজকালকার ছেলেরা চার/পাঁচ বছরের রিলেশনে গিয়েও বিয়ের কথায় পিছিয়ে যায় সেখানে তো অরিদের সাথে ভালোবাসার কোনো আদান-প্রদানও হয়নি,তবুও মানুষটা একটা টু শব্দ করেনি,একটাবার নিজের ফ্যামিলির কথা,ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি। অনিকশার জাস্ট এক কথায় বিয়ে করে ফেললো। কতটা ভালোবাসলে এমন কাজ করতে পারে ভাবলেই অনিকশার বুকটা কেঁপে উঠে। অরিদের ভালোবাসার বিনিময়ে এই চারটা বছরে সে অরিদকে কি দিয়েছে? শুধু অবহেলা আর অবহেলা! কিন্তু কেন? কেন সে অরিদের বুক ভরা ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে পারেনা?? অনিকশার লালচে চোখটা আরো লাল হয়ে আসলো তবে রাগে নয়,না পারার ব্যর্থতায়!
“”আমি মনে করতেও চাইনা। আজ অন্ত্রীশার গায়ে হলুদ,একটু পরেই মেহমানে বাড়িভর্তি হয়ে যাবে। আর এমন পরিস্থিতিতে তোমার এসব মাথায় আসে কি করে অরিদ?””
“” বেশি সময় নিবোনা,অনি। এক ঘন্টা দিলেও চলবে! তোমার তাতেও সমস্যা হলে ৩০ মিনিট দিও? তোমার সাথে এক রিকশায় ঘুরতে ইচ্ছে করছে খুব,প্লিজ অনি!””
অরিদের এই আবেগ মেশানো কথাগুলো অনিকশার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিধে। এতো আবেগ মেশানো কথা এই মানুষটা কোথা থেকে পাই? শুনলেই চোখটা ভিজে আসে। আর নিজের প্রতি ঘৃনা আসে। কিন্তু কোনো মানুষি চায়না সে নিজেকে ঘৃনা করুক অনিকশাও তাই! তাইতো সে যতটা পারে অরিদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে থাকে। আর সামনাসামনি হলেই কোনো ইস্যু দেখিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয় তবুও যেন মানুষটা তার আবেগ থেকে কিছুটাও নিজেকে সরাতে পারেনা। এতো কেন ভালোবাসে সে আমাকে? আমি কি আসলেই এগুলো পাওয়ার যোগ্য??
অনিকশা জোর করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তির্যক কন্ঠে বললো,
“” আমি আমার একটা মিনিটও তোমার এইসব ফালতু কাজে ব্যবহার করতে চাইনা!””
অনিকশা দ্রুত পদে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। পেছনে ফিরে তাকানোর সাহস নেই। সে জানে তার এই কথাটাই কতটা কষ্ট পেয়েছে অরিদ। কষ্টে মুখটা মলিন হয়ে এসেছে যা সে দেখতে পারবেনা।
বাড়িভর্তি মেহমানের কদরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনিকশা। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অরিদ ওর পিছু পিছু ঘুরঘুর করেছে কিন্তু সেদিক থেকে নিজেকে আড়াল করাটাই শ্রেয় মনে করলো অনিকশা। মানুষটাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলবে জানলে সে কখনোই বিয়ে করতে চাইতোনা। সেদিনের সেই ছোট্ট ভুল আজ এত বড় ইস্যু হয়ে দাড়াবে কখনোই ভাবতে পারেনি সে।
অন্ত্রীশাকে হলুদ শাড়ীতে বেশ লাগছে। শুনেছে এই সবি নাকি পালক নিজে কিনেছে। সাথে ফুলের গয়নাগুলোও সে নিজের হাতে বানিয়েছে ভাবতেই মনের ভেতর আনন্দরা দোল খেয়ে যাচ্ছে অন্ত্রীশার! বার বার ফুলগুলোকে ছুয়ে দেখছে মাঝে মাঝেতো নাকে নিয়ে গন্ধও শুকছে। অন্ত্রীশার মনে হচ্ছে ফুলের মধ্যে সে পালকের গন্ধ পাচ্ছে,কি আবেগী সেই সুবাস।
অন্ত্রীশার এমন কান্ডে বেশ বিরক্ত হচ্ছে পার্লার থেকে আগত মেয়েগুলো। ঠিকমতো সাজাতেও পারছেনা। এতো নাড়াচাড়া করলেকি সাজানো যায়? কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেনা!
“” উফ! আল কতক্ষন তোমাল সাজুগুজু দেখবো খালামনি? তুমি এমন কললে সাজানো কিভাবে শেষ হবে? বাল বাল ফুলগুলো খুলে নিয়ে নাকে শুকছো কেন? ফুলগুলোও তো নষ্ট কলে দিচ্ছো! আমি কখন সাজবো?””
অরিদ্রার কথায় হেসে ফেলে অন্ত্রীশা।
“” কি করবো মামনি? এইগুলোর গন্ধটা এতো বেশিই ভালো যে আমার তো নাক থেকে সরাতেই ইচ্ছে করছেনা। কি করি বলো তো?””
অন্ত্রীশার কথায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে অরিদ্রা তা বুঝতে পারলো অন্ত্রীশা। অরিদ্রার গাল টিপে দিয়ে বললো,
“” আচ্ছা আর দুষ্টুমী করবোনা। এই যে চুপটি করে বসছি। তুমি উনাদের বলো আমাকে ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে দিতে। এই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।””
অনিকশা শাড়ীর কুচি ঠিক করায় ব্যস্ত! কিছুতেই কুচিটা মনের মতো হচ্ছেনা। বিয়ের এতো বছর পরও শাড়ী পড়া শিখতে না পারায় সেদিন আম্মু হালকা করে ঝেড়ে দিয়েছিলো। আর আজকেও একি ঝাড়ি খাওয়ার সাহস পেলোনা অনিকশা। তাই নিজে নিজেই শাড়ী পড়ার চেষ্টা করছে। যদিও বা কুচিগুলো তার হাতের অবাধ্য হচ্ছে। কিছুতেই সমান মাপে কুচি নিতে পারছেনা। হঠাৎই অরিদ এসে অনিকশার হাত থেকে কুচিগুলো কেড়ে নিয়ে বললো,
“” আমাকে ডাকলেও পারতে। তোমার কাছাকাছি থাকার একটা বাহানা তো পেতাম!””
অরিদ নিজের হাত দিয়ে ছোট ছোট করে কুচি আংগুলে গেথে নিচ্ছে। কুচি থেকে নজরটা অরিদের দিকে পড়তেই সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেললো অনিকশা। মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। একদিনেই এতো শুকিয়ে গেছে? সারাদিন কি কিছু খাইনি? নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে গিয়ে তো ওর খাবারের দিকে খেয়াল রাখাও হয়নি।
অরিদ কুচি গুছিয়ে অনিকশার কোমড়ে গুজে দিয়ে বললো,
“” তোমার চুলটা একটু বেনি করে দিবো?””
“” না,আমি খোপা করবো।””
“” অহ!””
অরিদের মলিন মুখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অনিকশা বলে উঠলো,
“” খোপা করলেতো ফুলও লাগাতে হবে। আমি তো ফুল কিনতেই ভুলে গেছি। বেনিই করে ফেলি,কি বলো অরিদ?””
অরিদ উৎসাহী কন্ঠে বললো,
“” আমি করে দেই?””
“” পারবে তো?””
“” আগেও তো করে দিয়েছিলাম,অনি!””
বেনি করা শেষে অনিকশাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে অরিদ বললো,
“” তোমার এই বেনুনিটাই যথেষ্ট আমাকে ঘায়েল করার জন্য!””
অনিকশা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নিজের ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিতেই বুঝতে পারে পালক কল করেছে।
“” হ্যালো?””
“” আপু,অন্ত্রীশার সাজ কি শেষ হয়েছে? সবার আগে ওকে আমি দেখতে চাই। আপনি কি ওর রুমে গিয়ে একটু ভিডিও কল দিবেন? আমি অপেক্ষায় আছি।””
পালকের মুখে আপু শব্দটা এতো বেনান লাগছে কেন?
“” আপু,কিছু বলছেন না যে?””
“” দিচ্ছি!””
“” ও যেন জানতে না পারে আমি ভিডিও কলে আছি। একটু খেয়াল রাখবেন!””
অনিকশা অন্ত্রীশার রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো। গায়ে হলুদ একজনের হলেও কনে দুজনকে দেখতে পাচ্ছে। হালকা মুচকি হেসে নিজের মেয়ের কাছে গিয়ে বললো,
“” আজকে কি আমার মা’টারও গায়ে হলুদ নাকি? খালামনির মতো সেজেছো যে?””
“” খালামনিল সাজটা আমাল খুব পছন্দ হলে আমাল কি দোষ?””
অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
“” না,আপনার তো দোষের কিছু নাই। সব দোষ আপনার খালামনির।””
অরিদ্রার গালে দুটো চুমু খেয়ে অন্ত্রীশাকে বললো,
“” দেখি এদিকে ঘুরে বস তো!””
অন্ত্রীশা ঘুরে বসতেই পালককে ভিডিও কল দিলো অনিকশা!
“” ওয়াও,ভাবীকে কি সুন্দর লাগছে রে,ভাইয়া। কিন্তু তুই ভাবীকে না দেখে জানালা দিয়ে কি দেখছিস?””
হঠাৎ পাপড়ির ডাকে জানালা থেকে সরে এসে পালক বললো,
“” কিছুনা। তুই এখানে কি করছিস?””
“” তুই তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করতে দিলিনা। একটু হলুদ ও লাগাবিনা বলে দিয়েছিস। হলুদ ছাড়া বিয়েটা কেমন পানসে পানসে লাগছেনা? তাই তোর গালে একটু হলুদ লাগাতে আসলাম।””
বলেই পালকের গালে হলুদ লেপে দিলো পাপড়ি।
“” আরে কি করছিস? বলেছিনা হলুদে আমার এলার্জি?””
“” বিয়ের হলুদে এলার্জি হয়না ভাইয়া। হলেও কি সমস্যা? ভাবী এসে ভালো করে দিবে।””
পালকের গালে হলুদ লাগিয়ে পাপড়ি আবার ল্যাপটপে তাকিয়ে বললো,
“” ইশ! ভাবীরা কি মজা করছে। আর তুই? তোর গায়ে হলুদ নিয়ে আমার কত প্লেন ছিলো জানিস? তুই সব ভেস্তে দিলি। তুই না আসলেই একটা তুই।””
পালক টিস্যু দিয়ে গালটা মুছতে মুছতে বললো,
“” তোরটা তো পড়েই আছে। তোর বিয়েতে পুরো বাড়ি হলুদ দিয়ে সাজিয়ে নিবো। তখন তুই খুশিতে হাত-পা ছড়িয়ে নাচিস!””
“” ধ্যাত,নিজেরটাতে কি মজা করা যায় নাকি?””
গায়েহলুদের পালা শেষ করতে করতে মাঝরাত্রি হয়ে এসেছে প্রায়। অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে ওর রুমের দিকেই এগুচ্ছে অনিকশা। এতক্ষনে বাড়িটা মনে হয় একটু শান্ত হলো। অন্ত্রীশাকে রুমে দিয়ে এসে নিজেও আরেকবার শাওয়ার নিবে ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললো অনিকশা। রুমটা অন্ধকার দেখে একটু বিরক্তই হলো সে। এতো ব্যস্ততাই রুমের লাইটটাও দেওয়া হয়নি। সে দেইনি বলে কি অন্য কেউ দিতে পারলোনা? এই রুমে কি সন্ধ্যের আলোটাও জ্বালানো হয়নি? মা তো এমন ভুল করবেনা। যদি ভুল না করেই থাকে তাহলে লাইটটা বন্ধ করলো কে?
অনিকশা ভাবনায় ডুবে লাইট জ্বালাতেই ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
“” এতো লেট করলে কেন অন্ত্রীশা? তোমার অপেক্ষা করতে করতে তো আমি শুকিয়ে গেছি।””
ছেলে কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা আর অনিকশা দুজনেই অবাক। সামনে তাকাতেই দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো। পালক বসে আছে সামনে,মেঝেতে পাগুলো ভাজ করে। আর পালকের সামনে তিন চারটে বোতল দেখা যাচ্ছে। দেখে তো মনে হচ্ছে মদের বোতল!
পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“” নেশা করেছো কখনো??””
চলবে
#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (৪)
পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“” নেশা করেছো কখনো??””
পালকের এমন আচরনে অন্ত্রীশা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এভাবে হুট করে এতোটা কাছে টেনে নিবে সে তো ভাবতেও পারেনি। ভাববেই বা কিভাবে? এই মাঝরাতে তার রুমে পালকের উপস্থিতি পাবে সেটা তো কল্পনাও করেনি। পালকের নিশ্বাসের শব্দে অন্ত্রীশার জান যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে নেশার কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনি টুপ করে জানটা বিদায় জানাবে! নেশায় তো সে কবেই ডুব দিয়েছে যার কাছে এই মদের নেশা অতি নগন্য!
পালকের ছোয়াতে অন্ত্রীশা ভালো লাগা খুজে পেলেও তা তো সে নিজের বোন তাও বড় বোনের সামনেই মাখাতে পারেনা। কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই পালকের কোল থেক উঠে যেতে চাইলো। হালকা নড়ে উঠতেই পালক ওকে এবার দুহাতে ঝাপটে ধরে বললো,
“” এতো ছটফট করছো কেন? এখনো তো কিছুই করলাম না,ছটফটি! বললেনা তো নেশা করেছো নাকি?””
অন্ত্রীশার উত্তর শুনার অপেক্ষা বা করেই অনিকশার দিকে তাকালো পালক,
“” হবু বউয়ের সাথে ব্যাচলর পার্টি করার মনের মনি কোঠায় একটা ইচ্ছে জেগেছিলো। অনেক আগে থেকেই। তাই ভাবলাম ইচ্ছেটাকে মাটি চাপা না দিয়ে বরং পুরন করে নেই। আপু,আপনিও কি আমাদের সাথে জয়েন করবেন? যদিও বা আপনি বিবাহিত। আমার তরফ থেকে কোনো সমস্যা নাই। আপনি চাইলে জয়েন করতে পারেন!””
পালকের মুখে আপু ডাকটি সম্মানের নাকি তাচ্ছিল্যের বুঝে উঠতে পারছেনা অনিকশা। পালকের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাড়ায় সে। নিজের ছোটবোনের ঘনিষ্ঠ সময়ে সেখানে থাকাটা খুবই খারাপ দেখাচ্ছে। কেউ দেখাতে চাইলেই যে তাকেও দেখতে হবে এমন তো কথা নাই!
অনিকশা চলে যেতেই পালক মদের বোতলটায় হাত দেয়। গ্লাসে ঢেলে নিয়ে মুখের সামনে ধরতেই অন্ত্রীশা নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,
“” যেটাতে আপনি অভ্যস্ত নয় সেটা কেন করতে চাচ্ছেন? এই মাঝরাতে বমি করে আমার রুমটা নোংরা করতে চাচ্ছেন? আপনার দেওয়া শাড়িটা জড়িয়ে রাখতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে তার উপর রুম পরিষ্কার করা আমার জন্য খুবই কষ্টের হবে!””
অন্ত্রীশার এমন কথায় ওর দিকে চোখ পড়ে পালকের। খুবই বিস্ময়ের চাহনি। মিসেস তানিয়া বেগম এ পর্যন্ত ডজন খানেক মেয়ের ছবি দেখিয়েছিলো পালককে। গুনে গুনে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাদের বাড়িতেও পালককে নিয়ে হাজির হয়েছিলো। কিন্তু প্রত্যেকবাড়িই পাত্রীদের সামনেই দাড়িয়ে উঠে সবার সামনে বলেছিলো পাত্রী তার পছন্দ হয়নি। আর যেখানে তার বিয়ে করার ইচ্ছেই ছিলোনা সেখানে মেয়ের ছবি দেখে কি লাভ আর মেয়েকে দেখেই কি লাভ? তাই অন্য সব মেয়েদের মতো অন্ত্রীশার ছবিটাও হয়তো তার রুমের কোনো এক কোনে পড়ে রয়েছে। অন্যদের মতো এবারও সে একি কাজ করবে ভেবেই অন্ত্রীশাদের বাড়িতে আসা হয়েছিলো। পাত্রী কে, কোন পাশে বসে ছিলো,কি পড়েছিলো কিছুই সে দেখেনি। কখনো দেখার প্রয়োজনও মনে করেনি!
অন্ত্রীশার নজর ড্রিংকস ভর্তি গ্লাসে থাকলেও পালকের নজর তার দিকে। লাইটের দিকে মুখ করে থাকায় অন্ত্রীশার মুখটা খুব ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে। ছোট ছোট চোখের উপরে জোড়া ব্রু,দেখে মনে হচ্ছে দুটো কালো রংধনু একসাথে সুখ দুখের কথা বলছে। তার মাঝখান দিয়েই চিকন,সরু নাক। অতটা খারা না হলেও বোচাও বলা যাবেনা। নাকের সামনের দিকে বিন্দু বিন্দু ঘামের সমাবেশ। তার নিচেই গোলাপী আভার চিকন ঠোট,ঠোটের উপরের হালকা পশমও জন্মগ্রহন করে আছে,বয়স বোধহয় খুবই ছোট হবে যার কারনে তেমনভাবে ভেসে উঠেনি,এমনটা খুব কম মেয়েরই থাকে। অন্যদের দেখতে কেমন দেখায় পালক জানেনা কিন্তু তার হবু বউটাকে বেশ মানিয়েছে মনে হচ্ছে,নাকের মধ্যে ঘামের সমাবেশের কিছু সদস্য ঠোটের উপরে বসে আছে,মনে হয় নাকের জায়গায় তারা ঠাঁই পাইনি। গালগুলোর চোখের নিচ দিয়ে একটু ফোলা হলেও ঠোটের দিকে এসে মিশতে মিশতে চেপে এসেছে। ঠোটের নিচের থুতনিটা ধার বেয়ে এসে কিছুটা ভেতরে ঢুকে গর্ত সৃষ্টি করেছে,যার ফলে থুতনিটা অনেকটা লাভের উপরের শেপটার মতো দেখাচ্ছে! কপালের কাছটাতে বেবি হেয়ারগুলো কপালের সাথে ল্যাপ্টে আছে,হয়তো সবেই গোসল করে এসেছে তাই। সব মিলিয়ে অন্ত্রীশাকে সুন্দরী কন্যাদের কাতারেই ফেলা যায়। তবে এত সুন্দর মুখটার কোথাও তিলের দেখা না পেয়ে একটু মন খারাপ হলো পালকের। একটা তিল থাকলে হয়তো আরো বেশি ভালো লাগতো। পালক চোখটা বন্ধ করে অন্ত্রীশার মুখে কোনো এক জায়গায় তিল বসিয়ে নিলো। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ খুলে বিড়বিড় করে বললো,
“” না,বেমানান দেখাচ্ছে!””
“” কিহ?””
অন্ত্রীশার মুখে কি শুনে পালক হুশে এলো। ওকে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে দাড়ালো। যে পথ দিয়ে এসেছিলো সেই পথে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“” গ্রিলছাড়া বেলকনি আমার একদম পছন্দ না। তোমার আব্বুকে বলে দিও।””
পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অন্ত্রীশা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
“” আমার তো এবার নেশায় গোসল হয়ে গেছে, চুমুবাবু!”
অনিকশা রুমে ঢুকেই দেখলো অরিদ্রার পাশেই অরিদ শুয়ে আথে,সোজা হয়ে শুয়ে হাতের কব্জীর অংশটা দিয়ে চোখটা ঢেকে আছে। লাইটের আলোতে ঘুমুতে পারেনা অরিদ! খুব করেই জানে অনিকশা। তবুও এমনভাবে শুয়ে আছে যেন সে গভীর ঘুমে মুগ্ন।
অনিকশা অরিদ্রার অন্যপাশে শুয়ে পরলো। উল্টো দিকে কাত হয়ে শুলেও পরক্ষনে ইচ্ছে করেই সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। তার কপালে চুমু না খাওয়া পর্যন্তও যে অরিদ ঘুমুবেনা এটা অজানা নয় অনিকশার। যতই সে ঘুমের বাহানা করুক। তার সাথে বাহানার দিক দিয়ে তো অনিকশা অনেকটাই এগিয়ে!
কয়েক মিনিট যেতেই অরিদের ঠোঁটের ছোয়া পেলো অনিকশা। চোখ বন্ধ করেই অনিকশা বললো,
“” সেদিন যদি আমি তোমার কাছে না যেতাম,তুমি কি আসতে আমার কাছে?””
“” তুমি এখনো ঘুমোওনি,অনি? কতরাত হয়েছে জানো? একটু পরেই তো ফজরের…””
“” আমি একটা প্রশ্ন করছি অরিদ!””
“” কি?””
“” সেদিন আমি তোমাকে বিয়ের কথা না বললে কি তুমি আমাকে বিয়ের কথা বলতে.””
“” এগুলো এখন কেন টেনে আনছো অনি?””
অনিকশা শুয়া থেকে উঠে বসে অরিদের মুখোমুখি হয়ে বললো,
“” আমি যা জানতে চাইলাম তার উত্তর দাও।””
অরিদ ঠোটদুটো প্রসস্থ করে অনির গালটা হাত দিয়ে ছুয়ে বললো,
“” আমি তোমাকে আমার সারাজীবনের সংগী হিসেবেই চেয়েছিলাম,অনি!””
অনিকশা রাগে অরিদের হাতটা সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো,
“” না,তুমি মিথ্যে বলছো,যে তিন বছর পার করেও ভালোবাসি বলতে পারেনি সে বিয়ের কথা কিভাবে বলতো?””
“” অনি, অরিদ্রা উঠে যাবে,শান্তু হও প্লিজ! আমার লক্ষী বউ!””
অনিকশা বসা থেকে উঠে পড়ে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,
“” খবরদার,তুমি আমাকে বউ বলে ডাকবেনা। যে ছেলেটা আদৌ বিয়ের কথা বলতেই পারতোনা সে ছেলেটার বউ বলে ডাকার কোনো অধিকার নেই!””
অরিদ ও বিছানা থেকে নেমে অনিকশার সামনে এসে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,
“” ছুবেনা, তুমি আমাকে। যেখানে তুমি বিয়ের কথা বলতেই পারতেনা সেখানে আমার এক কথাই তুমি কেন বিয়ে করলে আমায়? সেই দিনের সেই ছোট্ট আবদার রাখতে গিয়ে আজ আমরা এখানে এসে থমকে গিয়েছি। তুমি কেন সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দাওনি? বলো কেন দাওনি? সেদিন যদি আমাকে ফিরিয়ে দিতে তাহলে আজ হয়তো আমার জায়গায় তোমার জীবনে অন্য কেউ থাকতো,তোমার জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারতো,আর অরিদ্রা! অরিদ্রার আম্মুও হয়তো অন্য…””
অনিকশাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো অরিদ। খুব যত্ন সহকারে আগলে ধরে বললো,
“” আমার খুব লোভ হয়েছিলো সেদিন। তোমাকে পাওয়ার লোভ,নিজের করে পাওয়ার! হয়তো সেদিন তোমাকে বিয়ে করার কোনো চিন্তাভাবনা আমার ছিলোনা,কিন্তু এতটুকু জোর দিয়ে বলতে পারবো,তোমার জায়গায় তুমি না থাকলে এ জায়গাটা শুন্যই পরে থাকতো। এখানে অন্য কারোর অস্তিত্বের আগমন কখনোই ঘটতোনা””
“” আমি বিশ্বাস করিনা,তুমি আমাকে ভুলানোর জন্য এসব মিথ্যে বলছো,অরিদ!””
অরিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিদ্রা বলে উঠলো,,
“” পাপাই,মামনি,তোমলা আমাকে লেখেই আদল আদল খেলছো? আমি ঘুমিয়ে পললেই তোমাদেল আদল আদল খেলতে হয়? তোমলা এত দুষ্তু কেন? আমাকে কখনোই আদল আদল খেলায় নেওনা। তোমাদেল সাথে আলি!””
অরিদ্রার কন্ঠ পেয়ে অনিকশা নিজেকে সরিয়ে নিলো অরিদের বুক থেকে। অরিদ্রার দিকে তাকিয়ে বুঝলো,তাদের ঝগড়ার কারনেই হয়তো ওর ঘুম ভেংগে গেছে,উঠে বসে আছে,গালদুটো ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে আছে। অনিকশা আর অরিদের চোখাচোখি হতেই দুজনে একসাথে হেঁসে উঠলো!
অন্ত্রীশার বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় যেতে ইচ্ছে হলোনা পালকের। তাই পথ ঘুরে বাল্যকালের বন্ধু আতিশের বাসার দিকে রওনা দিলো। ছোটবেলা থেকেই একসাথে হেসেখেলে বড় হয়ে উঠা। স্কুল,কলেজ ভার্সিটিও একসাথে। অন্ত্রীশার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ওর সাথে দেখা হয়নি পালকের। কালকে একটা নতুন সূচনার আগে আতিশের সাথে দেখা করারটা খুবই দরকার। এ কইদিনে মনের ভেতরে জমে থাকা হাজারও কথা সেগুলো তো ওর উপর ঢেলেই হজম করতে হবে। সেতো তার কথা হজম করার বন্ধু!
ফজরের আজানের সাথে সাথেই আতিশের বাসায় হাজির হলো পালক।
“” এতো ভোরে আমার বাসায়। কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক তো?””
আতিশের বিছানায় শরীরটা মেলে দিয়ে হাসিমুখেই পালক বললো,
“” অনেকদিন দেখা হয়না,তাই ভাবলাম একটু দেখে যায়। তোর চাকরির কি হলো?””
পালকের পাশে আতিশও শুয়ে পড়লো,
“” নতুন কোনো খবর নেই। আজকেও একটা ইন্টারভিও আছে। চাকরীর বাজারের যে অবস্থা!””
দুজনে বেশ কিছুক্ষন সুখদুখের গল্প করার পর পকেটে হাত দিলো পালক। একটা সাদা খাম বের করে আতিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“” নে,এটা ধর!””
আতিশ খামটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পালকের হাত পিছিয়ে দিয়ে বললো,
“” আমি আর তোর বোনকে পড়াতে পারবোনা,পালক!””
পালক মুচকি হেসে আতিশের বালিশের নিচে খামটা রাখতে রাখতে বললো,
“” তোর সাথে কথা বলে আমি যেমন আমার মনের জ্বালায় মিটাই। তার বিনিময়ে তোর পেটের কিছুটা জ্বালা কমানো আমার জন্য ফরয। আর তাছাড়া এটাতো এমনি এমনি নিচ্ছিসনা,পাপড়িকে পড়ানোর জন্য তোর যে সময়টা ব্যয় হয় তার জন্য!””
আতিশ মনে মনে বললো,ছাই পড়াই। পাপড়ি পড়লেতো পড়াবো। সারাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে কোন ভাবনায় হারায় আল্লাহই জানে!
“” কিছু বললি?””
“” না। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবি?””
“” কি?””
“” যে কুপিটা নিভে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে তাতে কেরোসিন কেন ঢালছিস? এতে যে তোর সাথে অন্যরাও জড়িয়ে পুরে যেতে পারে তা তুই বুঝতে পারছিস না?””
আতিশের কথার পিঠে পালক বড় করে একটা হামি দিয়ে আরাম করে শুয়ে বললো,
“” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,দোস্ত! আমাকে দু ঘন্টা পর জাগিয়ে দিস তো। নাহলে বিয়ে ভেংগে গেলে তোর পুরে যাওয়া পুরানী কন্যারা বিয়ের আগেই জ্বলে যাবে!””
পালকের দিকে তাকিয়ে আতিশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।
অন্ত্রীশা বিয়ের শাড়ী দেখে বেশ আশ্চর্যিত! মিস্টি কালার শাড়ীর মধ্যে সাদা মুক্তো পাথরের ভারী কাজ। এমন মিস্টি বেনারশী পড়ে বিয়ের কনে হয়তো সেই প্রথম সাজবে। কেমন লাগবে তাকে? মিস্টি কনের মতো মিস্টি লাগবে তো?
অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,
“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিসনা,অনতি!””
চলবে