ধোয়ার-নেশা পর্ব (১১ + ১২)

0
1963

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১১ + ১২)

পালক অন্ত্রীশার কথার উত্তর না দিয়েই নিজের ডান হাতটা ওর শাড়ীর কুচিটা খামচে ধরলো। অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখেই শাড়ীর কুচি টেনে খুলে ফেললো!

পালকের এমন আকস্মিক কান্ডে অন্ত্রীশা ভুত দেখার মতো চমকে গিয়েছে,চোখদুটো বড়বড় করে পালকের দিকে তাকিয়ে আছে,

পালক ছোট্ট হাসি নিয়ে বললো,

“” আমার কি আরো কিছু করতে হবে,অন্ত্রীশা?””
“” নাহ! আমাকে করতে হবে।””

পালক একটা ব্রু উচু করে গম্ভীর গলায় বললো,

“” তোমাকে করতে হবে মানে?””

অন্ত্রীশা নিজের শরীরের সবটুকু জোর দিয়ে পালককে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। অন্ত্রীশার ধাক্কার জন্য পালক মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। বিছানায় হাল্কা গড়িয়ে গিয়ে কাত হয়ে পড়েছে। অন্ত্রীশা নিজের খোলা শাড়ীকে পেঁচিয়ে নিয়ে পালকের উপর উঠে,ঠিক ওর পেটের উপর বসে পড়লো।

“” অন্ত্রীশা কি করছো?””
“” আপনি কিছু করে দেখালেন তো আমারও কিছু করে দেখানো উচিত। নাহলে তো আপনাকে অপমান করা হবে,তাইনা?””

অন্ত্রীশা নিজের কথাটা শেষ করতেই পালককে একটা চোখ মেরে দিলো। তাতে পালক হা করে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বেশিক্ষন হা করে থাকতে পারেনি। তার আগেই নিজের উপর অন্ত্রীশার হামলা এসে পড়েছে।

অন্ত্রীশা নিজের দুটো হাত দিয়ে পালকের শার্ট টেনে ছিড়ে ফেলতে শুরু করেছে। আমাকে আপনার কথা শুনাতে হবে তাইনা? আমাকে শাড়ী পড়তে দিবেননা? আমার উপর জোর দেখানো হচ্ছে? সামান্য একটা সম্পর্ক তৈরী করতে চেয়েছিলাম তার বিপরীতে ডিরেক্ট না করে দিয়েছেন! এতো ভাব আসে কোথা থেকে? সব কিছুতে নিজের কর্তৃত্ব ফুটানো? নিজে যা বলবেন তাই করতে হবে?

পালক অন্ত্রীশার পাগলামীকে আটকাতে চাচ্ছে। ওর দুটো হাত চেপে ধরে থাকলেও অন্ত্রীশাকে দমাতে পারছেনা। হঠাৎ করে এতো শক্তি ওর মধ্যে এলো কি করে?

অন্ত্রীশা এতক্ষন চোখ মেলে থাকলেও এবার চোখ বন্ধ করে নিলো। তার মনে হচ্ছে,চোখ মেলে থাকাই শক্তির ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেনা। চোখ বন্ধ করলে আরেকটু বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে। চোখ বন্ধ করেই পালকের শরীরে খামচিয়ে শার্টের অবস্থা বেহাল করে দিচ্ছে। বোতামগুলোও আলগা হয়ে এসে,খুলে যাচ্ছে।

“” আরে কি করতে চাচ্ছো কি তুমি? আমার শার্ট ছিড়ছো কেন?””

অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলো,

“” আপনাকে ধর্ষন করবো তাই!””
“” হেয়াট,কি উডভুক কথা বলছো? থামো বলছি,নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে,অন্ত্রীশা!””
“” আমি তো চাই ই খারাপ হোক। দেখি আপনি কত খারাপ হতে পারেন।””

অন্ত্রীশার পাগলামী আর সহ্য হচ্ছেনা পালকের। বিরক্ত হচ্ছে,একি সাথে রাগও হচ্ছে। মেয়েটা কি হঠাৎ করে পাগল হয়ে গেলো? সত্যি সত্যিই ধর্ষনের মতো বাজে কাজটা ওকে দিয়ে সম্ভব? তার কি এটাও দেখা বাকি ছিলো? বউয়ের হাতে স্বামী ধর্ষন! আচ্ছা যদি সত্যি সত্যিই এমন হয় তাহলে কি হবে?

পালক আর কিছু ভাবতে পারছেনা। একটা মেয়ের কাছে সে কিছুতেই ধর্ষন হতে চায়না! পালক অন্ত্রীশার হাত ধরে ওকে সরানোর চেষ্টা করছে। দুজনের ছুটাছুটি,হাতাহাতিতে দুজনেই গড়িয়ে ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো। তবুও দস্তাদস্তি থামেনি!

“”আম্মু,দেখো খালামনিলা মালামালি খেলছে। খালামনি তো পালছেনা,তুমি একতু হেলেপ কলো! নাহলে আংকেলটা জিতে যাবে!!””

অরিদ্রার কথায় অনিকশা, বিছানার অপর পাশে গিয়ে দাড়াতেই চোখ,মুখ কুচকে ফেললো!

দস্তাদস্তিতে পড়ে গিয়ে পালক অন্ত্রীশার উপরেই ছিলো। ওর হাতদুটো চেপে ধরে ওকে আটকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি অরিদ্রার আগমন ঘটে। সাথে সাথে অনিকশার!

পালক দ্রুত অন্ত্রীশাকে ছেড়ে দাড়িয়ে পড়লো। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। এই প্রথম সে অনিকশার সামনে লজ্জা পাচ্ছে। খুব বেশি বিব্রতিকর সিচুয়েশনে পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন? আমি তো সবসময় চেয়েই ছিলাম ওর সামনে অন্ত্রীশাকে নিয়ে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে। তাহলে আজ কেন এমন লাগছে? তবে কি এবারের ঘটনাটা কৃত্রিমভাবে তৈরী ছিলোনা তাই? ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়াতেই পালক হেসে উঠে,অন্ত্রীশা আমাকে ধর্ষন করতে সফল না হলেও আমার শার্টকে ঠিক ধর্ষন করে ফেলেছে!

অন্ত্রীশাও বেশ লজ্জিতভাবে নিজের শাড়ী গুটিয়ে ঠিক করার বাহানায় নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ছি! ছি!!ছি!!! আমার সব লজ্জিত ঘটনাগুলো এমন বাজেভাবে শেষ হয় কেন? সবসময় আপুর সামনেই পড়তে হয় কেন?

অনিকশা,অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর শাড়ী নিজের হাতে নিয়ে বললো,

“” হয়েছে,আর লজ্জা পেতে হবেনা!””

এবার যেন অন্ত্রীশার চোখ,মুখ সব লাল হয়ে আসলো। তার আপুটা তাকে লজ্জা পেতে ও দেখে ফেলেছে।

“” এভাবে শুয়ে থাকলে তোর ইন্টারভিউ কে দিবে? আমি দিয়ে দিবো?””

আতিশ চোখ মেলেই পালককে হাতভর্তি ফলফলাদিসহ দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।

আতিশের পাশে ওগুলো রেখে ওর পাশে নিজেও শুয়ে বললো,

“” জ্বর বাধালি কিভাবে?””
“” আমি গরমে হাপিয়ে উঠছি,পালক। আমাকে ছাড়!””
“” সামান্য জ্বরের জন্য তুই আমাকে দুরে ঠেলে দিচ্ছিস? এই তোর বন্ধুত্ব? ছি! আতিশ,তুই তো দেখি…””
“” হ্যা,আমি বন্ধু নামের কলংক। রাগে আমার গরম দ্বিগুন হারে বেড়ে যাচ্ছে। আজকে আমার কত ইম্পর্ট্যান্ট ইন্টারভিউ ছিলো জানিস? এই চাকরীটা আমার নিশ্চিত হতো! এই জ্বরের জন্য আমার চাকরীটা গেলো!””

পালক আতিশের পায়ের উপর নিজের বা পাটা উঠিয়ে কিছুটা আয়েশ করে শুয়েছে। জ্বরটা যে খুব জোরালোভাবেই ওকে চেপে ধরেছে তা ওর শরীরের তাপমাত্রায় বুঝা যাচ্ছে।

“” ডক্টর দেখিয়েছিস?””
“” না।””
“” কেন?””
“” এমনি!””

পালক আতিশের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,

“” আমার অফিসে জয়েন করছিস না কেন? আর কতগুলো জয়েনিং লেটার পাঠাতে হবে? তোর কি মনে হয় তোকে লেটার পাঠানোই আমার প্রধান কাজ? আমি বসে বসে শুধু তোর লেটারই লেখে যাবো?””
“” তুই জানিস আমি কেন জয়েন হচ্ছিনা। তবুও কেন ঐ কথা বলছিস?””
“”বন্ধু হয়ে বন্ধুর অফিসে কাজ করলেই কি ছোট হয়ে যায়?””
“” অন্যদেরটা জানিনা,কিন্তু আমার কাছে হয়ে যায়।””
“” আরে বাবা,আমি তো তোকে এমনি এমনি চাকরী দিচ্ছিনা। তোর যথেষ্ট যোগ্যতা আছে,তোর মতো লোকের আমাদের অফিসে প্রয়োজন!””
“” আমার যোগ্যতা শুধু তোর চোখেই ধরা পড়লো? অন্যদের চোখে পড়ছেনা কেন? যদি তেমনি হতো তাহলে এখনো আমি বেকার পড়ে থাকতাম না!””
“” আতিশ,তুই কিন্তু…””
“” তুই যদি এটা বলার জন্যই এসে থাকিস,তাহলে এখন যেতে পারিস। আমি এ ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা।””

আতিশ রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পালক ওকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তোর মতো বন্ধু সবার ভাগ্যে জোটেনা। আমি কত লাকিরে,আতিশ!””
“” আমি কি তোর বউ? এভাবে ঝাপটে ধরে আছিস কেন? নাকি বউয়ের ঘোর এখনো কাটেনি? দেখি ছাড় আমাকে!””
“” না,ছাড়বোনা। তোকে জড়িয়ে ধরলে আমি যে প্রশান্তি পাই তা বউকে জড়িয়ে ধরলেও পাবোনা।””
“” তুই যদি আমার সব প্রশান্তি নিয়ে নিস,আমার বউয়ের কি হবে? পরে তো আমার বউ প্রশান্তির অভাবে দুদিনেই ভেগে যাবে,পালক!””
“” তোর বিয়ে করা লাগবেনা। তোর এতো বিয়ের শখ থাকলে আমাকে করে নিতে পারিস!””

আতিশ,পালকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” পাগল নাকি? তোর নাহয় বউয়ের আদর লাগবেনা। কিন্তু আমার তো লাগবে। চাকরীটা পেলেই বউ নিয়ে চলে আসবো!””

পালক শুয়া থেকে উঠে বসে পড়ে। গলার কাছটাতে থাকা বোতামটা খুলে নিতে নিতে বললো,

“” এমনভাবে বলছিস যেন মেয়েরা তোকে বিয়ে করার জন্য এক পা নয় দুপা তুলে দাড়িয়ে আছে!””
“” হুম!””
“” হুম কি? তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছিস?””

পালকের উত্তরে আতিশ ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তার আবার প্রেম!

অন্ত্রীশাকে পালকদের বাসায় রেখেই পালক বেড়িয়ে পড়েছিলো। বেশ কিছুক্ষন শ্বাশুড়ির সাথে গল্প চালিয়েও যেন মনটা ভালো করতে পারছেনা অন্ত্রীশা! একেই তো নিজের বাড়ির সব ভালোবাসার মানুষগুলোকে ছেড়ে এসেছে। তার উপর নিজের বরটার ও বাসায় আসার নাম নেই। ও জানে বাসায় থাকলেও হয়তো নিজেদের মধ্যে তেমন কোনো কথা,তেমন কোনো স্পেশাল মুহুর্ত,কোনো দুষ্টুমী খেলায় তারা মেতে উঠতোনা। তবুও মানুষটা চোখের সামনে থাকলেও ভেতরে ভেতরে ভালো লাগা কাজ করে। আচ্ছা উনিকি এমনি থাকবেন? আমার সাথে এমন অবহেলাই করে যাবেন? নাকি অন্য কিছু হওয়ার সম্বাবনা আছে?? উনার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে কি হতো? সে কি আমাকে কোনো ভালেবাসার রাজ্যে নিয়ে যেতো? নাকি আমি এখনকার মতো অন্য পুরুষের ভালোবাসার রাজ্যে যেতেও এমন ছটফট করতাম???

অন্ত্রীশা পালকের রুমের বারান্দায় দাড়িয়েই ভাবনায় ডুবে আছে। তবে এই বারান্দাটা তার রুমের বারান্দার মতো খোলা নয়। কালো গ্রিল দিয়ে আটকানো। নিচে দু চারটা টপে ফুলের গাছ আছে,ফুলও ফুটে আছে। সবগুলোই গোলাপফুল। কিন্তু প্রত্যেকটা গাছে ভিন্ন ভিন্ন কালারের ফুল ফুটে আছে। অন্ত্রীশার ইচ্ছে হলো সব কয়টা গাছ থেকে একটা করে ফুল ছিড়ে নিজেকে সাজাতে। ফুলে হাত দিয়েও ছিড়লোনা। সে কেন সাজবে? আর কার জন্যই বা সাজবে? তার সাজ দেখার জন্যতো উনার সময়,ইচ্ছে,রুচি কিছুই নেই।

“” তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে কেন?””

পালকের কন্ঠে অন্ত্রীশা পেছনে ঘুরে তাকালো। সাদা হাফ হাতার টি-শার্ট পড়ে আছে। চাঁদের আলোতে সাদা টি-শার্টটা আরো বেশি আলো দিচ্ছে। এমন একটা ভাব যেন চাঁদ তার সব জোসনা উনার টি-শার্টেই ঢেলে দিয়েছেন।

পালক তার পড়নের ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়েই অন্ত্রীশার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,

“” সেদিন তোমার সাথে যা ঘটেছিলো তা অন্য মেয়ের সাথে ঘটলে কখনোই বিয়েতে রাজি হতোনা। তুমি কেন রাজী হলে? তোমাদের ফ্যামিলি যথেষ্ট কনজার্টিভ,শিক্ষিত এবং মর্যাদাপুর্ন,আর সেই ফ্যামিলির মেয়ে হয়ে এমন ডিসিশন কিভাবে নিলে তাও এতো সহজ ও দ্রুততার সাথে?””
“” হঠাৎ এই প্রশ্ন?””
“” হঠাৎ নয়,বিষয়টা আমার মাথায় শুরু থেকেই ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে উঠেনি…””
“” আজ বুঝি সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে? তা কিভাবে হলো? আর আপনার সেই পরিবেশটা কেমন শুনি?””
“” তুমি কথা ঘুরাচ্ছো কেন? আমি আমার কৌতুহল থেকে প্রশ্নটা করেছি,ইচ্ছে হলে উত্তর দিবে নাহলে নাই!””

অন্ত্রীশা এতক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বললেও এবার পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” আপনি দেখতে আমার প্রেমিকের মতো তো তাই ভাবলাম আপনাকে বিয়ে করে প্রেমিকের শোক কাটাবো!””

অন্ত্রীশা তার উত্তর দিয়ে সেখান থেকে পদত্যাগ করছে। পালক তখনো অন্ত্রীশাকে দেখেই যাচ্ছে। অন্ত্রীশার থেকে চোখ সরিয়ে সেও ভাবনায় ডুব দিলো। নিয়তি আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছে,একজন প্রেমিকের শোক ভোলার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে,আর আমি? আমি কেন ওকে বিয়ে করেছি? অনিকশাকে ভুলার জন্য নাকি ওর সামনে নিজের কষ্টটাকে দেখানোর জন্য নাকি ওকে হিংসে জ্বলতে দেখার জন্য??

পালকের ভাবনার ঘোর কাটলো,রুমের ভেতর থেকে আসা চিকন ক্যাচক্যাচ শব্দে! মনে হচ্ছে কেউ কোনো ভারী জিনিস হ্যাচড়িয়ে সরানোর চেষ্টা করছে। শব্দটা নিজের রুম থেকে আসছে বুঝতে পেরেই পালক রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।

ভেতরে ঢুকেই সে অন্ত্রীশাকে দেখতে পেলো। সে লম্বা সোফাটা বাইরে থেকে ভেতরে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সোফার একটা কোনা দরজায় আটকে থাকায় সে কিছুতেই ভেতরে ঢুকাতে পারছেনা। ভেতরে ঢুকাবে কি নাড়াতেও পারছেনা।

গলার ওড়নাটা গলা থেকে খুলে কাঁধের দিক থেকে বাকা করে নিয়ে কোমড়ে বেধেছে,অন্ত্রীশা! সামনে থেকে দেখতে না পেলেও তার মনে হলো এটা কোনো বিবাহিত মেয়ে না,সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবতী নারী।

পালক অন্ত্রীশার কাছে এগিয়ে বললো,

“” কি করছেন? ব্যথা পাবেন তো। এতো ভারী জিনিস টানাটানি করছেন কেন?””

অন্ত্রীশা বিরক্ত নিয়ে পালকের মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো। জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চোখের সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে বললো,

“” আপনাকে টানাটানি করতে পারছিনা তাই!””
“” মানে?””
“” এতো প্রশ্ন করছেন কেন? আপনাকে উত্তর দিতে গিয়ে আমার সব শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে।””
“” উত্তর দিলে শক্তি শেষ হয়ে যায়?””
“” উফ! আবার প্রশ্ন করছেন কেন? আমাকে একটু হেল্প তো করতে পারেন।””
“” কিন্তু এটা দিয়ে কি করবে?””
“” কাবাডী খেলবো।””
“” কাবাডী!””
“” জ্বী,আমার কি কাবাডী খেলাও নিধেষ?””

অন্ত্রীশার দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে সোফাতে হাত দিলো পালক। ওর নির্দেশানুযায়ী রুমের এক সাইডে রাখা হয়েছে সোফাটা।

অন্ত্রীশা বিছানা থেকে একটা বালিশ সোফাতে রাখতেই পালক বললো,

“” তুমি কি সোফাই ঘুমাবে?””
“” না,আপনি ঘুমাবেন। আমারতো আপনার বিছানাটাই বেশ পছন্দ হয়েছে।””
“” কিন্তু তুমিতো বলেছিলে কাবাডী খেলবে!””
“” খেলবোই তো সময় হলে ঠিক খেলবো। আপাতত আপনাকে ঘুমানোর জন্য ধার দিলাম!””

পালক সোফা থেকে বালিশটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে বললো,

“” আমি ধার করা জিনিস পছন্দ করিনা। তোমার জিনিস তুমিই রাখো।””
“” আমার জিনিস কেউ ফেরত দিক এটাও আমার পছন্দ না।””
“” তুমি আবার ঝগড়া করতে চাচ্ছো?””
“” আপনি যদি চান আমি ঝগড়া করি তাহলে করতে পারি। আমি তো আপনার ক্রীতদাসী। আপনার হুকুম পালন করা আমার জন্য ফরজ!””

অন্ত্রীশাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো পালক। চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ে।

আতিশের অসুস্থতার জন্য আজকে পড়াতে আসেনি পাপড়িকে। একেতো তাকে দেখতে পাইনি তার উপর অসুস্থ শুনে পাপড়ির ঘুম আসছেনা। ভেতরটা কেমন কেমন জানি তেতো হয়ে আসছে। যতক্ষননা আতিশের দেখা পাবে ততক্ষন কি তার ভেতরের তেতো ভাবটা যাবে? কখন দেখবে সে তার আতিশ ভাইকে? কাল যদি সুস্থ না হয় তাহলেতো কালও দেখা হবেনা। তাহলে কি কাল আমি উনাকে গিয়ে দেখে আসবো? কিন্তু উনি যদি রেগে যান? আমাকে দেখলেই তো উনার রাগ কড়কড় করে। পাপড়ি ছটফট করতে করতে বিছানা নষ্ট করে ফেলছে,তবুও চোখে ঘুম আসছেনা।

আতিশকে কল দেওয়ার চিন্তায় ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ২ টা বেজে ৪২। এতো রাতে কল দেওয়া ঠিক হবেনা ভেবে ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো। আর ঠিক তখনি দরজায় নক পড়লো। এতো রাতে আবার কে? পুনরায় নক পড়তেই পাপড়ি উঠে দরজার কাছে এগুচ্ছে।

“” ভাবী তুমি? এতো রাতে? কোনো সমস্যা?””
“” তোমার কাছে কেচি হবে?””
“” কেচি?””
“” আরে সিজার। হবে?””
“” এতো রাতে সিজার দিয়ে কি করবে?””
“” থাকলে বলো নাহলে চলে যাই””

পাপড়ির কাছ থেকে কেচি নিয়েই অন্ত্রীশা নিজের রুমে ফেরত এসেছে। দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে পালকের উপর উঠে বসলো। পালক উপুত হয়ে শুয়ে থাকায় বেশ সুবিধাই হলো অন্ত্রীশার। বাম হাত দিয়ে আলতোভাবে টি-শার্টের কিনার ধরে ঠিক মাঝ বরাবর কেচি দিয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছে!

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১২)

পাপড়ির কাছ থেকে কেচি নিয়েই অন্ত্রীশা নিজের রুমে ফেরত এসেছে। দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে পালকের উপর উঠে বসলো। পালক উপুত হয়ে শুয়ে থাকায় বেশ সুবিধাই হলো অন্ত্রীশার। বাম হাত দিয়ে আলতোভাবে টি-শার্টের কিনার ধরে ঠিক মাঝ বরাবর কেচি দিয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছে!

কাটার পর্ব কিছুদুর এগুতেই পালক হালকা নড়ে উঠে। তাতে যেন অন্ত্রীশা বেশ মজাই পাচ্ছে। পালক আবার চুপ করে গেলে অন্ত্রীশাও তার কাজ চালিয়ে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই পালকের সাদা টি-শার্টটাকে দু টুকরো করে ফেলেছে অন্ত্রীশা। দুটো পার্টকে দুপাশে ঠেলে দিয়ে পালকের পিঠটাকে নগ্ন করে নিয়েছে। পিঠের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অন্ত্রীশা ছোট্ট করে হাসি দিলো। যে হাসির মধ্যে রয়েছে প্রাপ্তির ছায়া!

পালকের পিঠে আলতো করে দুটো চুমু খেয়ে নিয়েছে অন্ত্রীশা। তারপর নিজের দুহাত পালকের পিঠে দুপাশে মেলে দিয়ে নিজেও উপুত হয়ে শুয়ে পড়লো। আমাকে দুরে ঠেলে দিয়ে যে কষ্টগুলো দিচ্ছেননা? সবকিছুর শোধ আমি তুলবো কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় নয় জাগ্রত অবস্থায়। আপনাকে আমার ভালোবাসার কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে ফাসির রায় শুনাবো। যেখানে আমি নিজেই জজ,উকিল এমন কি আমি নিজেই মক্কেল। আপনাকে সেখান থেকে কেউ ছাড়িয়ে আনতে পারবেনা৷ কারো ছায়া সেখানে পড়তে দিবোনা,হুহ!

কারো গরম নিশ্বাসের শব্দ পালকের ঘুমটাকে হালকা করলেও কিছুটা মাতালতা জাগিয়ে দিচ্ছে। এক ভালোলাগা সুড়সুড়ির সাথে তার অবচেতন মনকেও জাগ্রত করে দিচ্ছে। সেই অবচেতনতার মধ্য দিয়েই পালক নড়ে উঠেছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের একটা হাত দিয়ে অন্ত্রীশার বা হাত,যেটা পালকের বুক স্পর্শ করে জড়িয়ে ছিলো,সেটা টেনে নিচ্ছে। ঠোটের কাছটাতে নিয়ে ভোরের ঘুমজড়িত বাসি ঠোটে চুমু খেয়ে বললো,

“” পত্রীকন্যা,এভাবে আমার কাছে আসতে এতো সময় কেন নিলে? জানো আমার কতটা কষ্ট হয়েছে তোমাকে ছাড়া প্রতিটা সেকেন্ড,মিনিট,ঘন্টা কাটাতে? আমি কতরাত ছটফট করেছি তোমাকে ছোয়ার জন্য? তোমার শরীরের উষ্ণ ছোয়া নিয়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য?””

পালক অন্ত্রীশার হাতটা নিজের চেখগুলোতে ছুয়িয়ে বললো,

“” জানো এই চোখগুলো কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে?””

পালকের ঠোটের ছোয়া পেতেই অন্ত্রীশার ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছে। চুপ করে পালকের পিঠের উপর শুয়ে থেকে পালকের কথা শুনছিলো!

“” নাহ!””

পালক অভিমানের সুরে বললো,

“” তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি তাইনা? ভালোবাসলে এভাবে আমাকে কষ্ট দিতেনা। এভাবে আমাকে একা ছেড়ে যেতে পারতেনা।””

অন্ত্রীশা এবার পালককে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়েছে। ফিসফিস করে বললো,

“” আপনার পত্রীকন্যা চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে আমিতো আছি? আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা,এই আপনার চোখ ছুয়ে প্রমিস করলাম! আপনি তাড়িয়ে দিলেও না।””

অন্ত্রীশার এমন কথায় পালকের হুশ ফিরলো। সাথে সাথে চোখ মেলে বললো,

“” অন্ত্রীশা তুমি? তুমি আমার উপরে কি করছো? সর বলছি। এখনি সরবে!””
“” কাবাডি খেলাতো এখনো শুরুই হয়নি!””

পালক অন্ত্রীশাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারছেনা। সোফার স্পেসটা এতো বড়ও নয় যে অন্ত্রীশাকে পাশে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে পড়বে। এখন পাশে সরানো মানে ওকে উপুত করে মেঝেতে ফেলে দেওয়া।

“” অন্ত্রীশা আমি কিন্তু সরতে বলেছি,আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমি চাচ্ছিনা তুমি ব্যথা পাও।””
“” আমিতো চাচ্ছি ব্যথা পেতে! নাহলে হাডুডু জমবে কিভাবে?””

পালক রেগে যাচ্ছে,খুব খারাপভাবেই রেগে যাচ্ছে,কিন্তু সে রাগ দেখাতে পারছেনা। কেন পারছেনা বুঝতে পারছেনা। এমন তো তার অনিকশার সাথে ঘটতো। রিলেশনে থাকার সময় প্রায় অনিকশার কান্ডে পালক রেগে যেতো কিন্তু কখনোই সে অনিকশাকে রাগ দেখাতে পারেনি। এতে অনিকশা যেন হতাশই বেশি হতো। ও তো মাঝে মাঝে বায়নাও ধরতো তার রাগ দেখার জন্য। কিন্তু সে কখনোই তার এই বায়নাটি পুরন করতে পারেনি। পারবে কিভাবে? ভালোবাসার মানুষটা তার ছেট কথাতে সামান্য কষ্ট পাক,এটাও সে কখনো ভাবেনি। কিন্তু অনিকশাতো তার ভালোবাসার মানুষ ছিলো তাই রাগ দেখাতে পারেনি,অন্ত্রীশাতো তার ভালোবাসার মানুষনা,আর কখনো হবেও না। তাহলে সে কেন রাগ দেখাতে পারছেনা? তাকে দেখাতেই হবে,অবশ্যই দেখাতে হবে।

পালক ভাবনায় ভাসতে ভাসতেই একপাশে কাত হয়েছে। সাথে সাথে অন্ত্রীশাও ডুপ করে নিচে পড়ে গিয়েছে।

পালক সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে তীক্ষকন্ঠে বললো

“” ইউ আর মাই ওয়াইফ,বাট নট মাই লাভ,ওকে?””
“” তাহলে আমাকে বিয়ে করেছিলেন কেন?””
“” আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করিনি,অন্ত্রীশা! তুমি নিজে থেকেই বিয়েতে রাজী হয়েছো।””

অন্ত্রীশা শ্বশুড়বাড়িতে চলে আসার পর অনিকশারাও চলে আসে নিজেদের বাড়িতে। অরিদের কোনো ভাইবোন না থাকার সুবাদে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি নিজের মেয়ের মতোই আদর করে অনিকশাকে। অনিকশাও উনাদের ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে মেয়ের মতোই উনাদের সবকিছুতেই আগলে রাখে। অরিদের বউ হয়ে না উঠলেও শ্বাশুড়ির কাছে বেশ অল্পদিনেই অতি আদুরী বউমায়ের পদবীটা গ্রহন করে নিয়েছে। এতে অরিদের ভালোবাসা আরো দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দেয় অনিকশার প্রতি।

শ্বাশুড়ির মাথায় তেল দিয়ে রুমে ঢুকতেই অরিদকে বিছানার ঠিক মাঝখাটাতে বসে থাকতে দেখলো। দুগালে দুহাত দিয়ে বসে আছে। ঠোটদুটোও বাইরে বের করে বাচ্চাদের মতো বসে আছে৷ মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দিবে!

“” এভাবে বিছানার মাঝখানে বসে আছো কেন? আমি কি মেঝেতে ঘুমাবো?””

অনিকশার কন্ঠ শুনার অপেক্ষায় যেন বসে ছিলো অরিদ। বসা থেকে উঠে এসে অনিকশাকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে।

অরিদের এমন কান্ডে অনিকশা বিরক্ত হলেও সাথে সাথে ভয়ের আশঙ্কাও পাচ্ছে। চার বছরের সংসার জীবনে অরিদকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি। কখনো কাঁদেনি তা নয়৷ কিন্তু সেটা আড়ালেই ছিলো। তবে আজ এমন করছে কেন? কোনো খারাপ সংবাদ নয় তো?

অনিকশা অরিদকে শান্তনার বাহানায় ভীতু কন্ঠে বললো,

“” কি হয়েছে,অরিদ? কোনো খারাপ নিউজ?””
“” হুম! পৃথিবীর সবথেকে খারাপ নিউজ,অনি। আমি কিছুতেই এটা মানতে পারছিনা!””

অরিদের কথায় অনিকশার ভয়ের আশঙ্কা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তবে কি কারো মৃত্যু সংবাদ পেতে যাচ্ছে সে? মৃত্যুর সংবাদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কি ভয়ংকর খারাপ নিউজ হতে পারে?

“” অরিদ,এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদা বন্ধ করে বলবে কি হয়েছে?””

অরিদ অনিকে আরো জোরে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“”কাল থেকে আগামী সাতদিন আমি মৃত থাকবো,অনি!””
“” মানে?””
“” আমার অফহসের কাজের একটা প্রজেক্টের বাহানায় সাতদিনের জন্য পঞ্চগড় যেতে হবে,অনি।””
“” অহ! তাই বলো,আমি তো ভেবেছিলাম কিনা কি!””

অরিদ অনিকশাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বললো,

“” তোমার কাছে এটা অহ মনে হলো? এতো ভয়ংকর একটা নিউজ দিলাম কোথায় তুমি কেঁদে কেটে গোসল করে ফেলবে,তারপর আমি তোমাকে শান্ত্বনা দিবো তানা তুমি অহ! বলে সব শেষ করে দিচ্ছো?””

অনিকশা অরিদের কাছ থেকে সরে এসে বালিশ ঠিক করতে করতে বললো,

“” এটা মোটেও ভয়ংকর সংবাদ নয়,অরিদ!””
“” ভয়ংকর নয়তো কি? যেখানে আমি এতো বছরে তোমাকে ছাড়া একটা রাত কাটাইনি সেখানে সাতদিন,সাতরাত আমি কিভাবে কাটাবো? কাটাতে হলে তো আমাকে মৃত হয়েই কাটাতে হবে তাইনা,অনি?””
“” উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করে লাইট অফ করে শোও। আমার ঘুম পাচ্ছে!””

অরিদ্রাকে শুয়া থেকে উঠিয়ে কোলে নিতে নিতে অরিদ বললো,

“” আজ কোনো ঘুম হবেনা অনি,আজ আমরা শোকরাত পালন করবো। নাহলে আমি কাল চাকরী ছেড়ে তোমার কাছে বসে থাকবো!””
“” তুমি অরিদ্রাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?””
“” আম্মুর রুমে,তোমার মেয়ে যে দুষ্টু হয়েছে,দেখা যাবে আমাদের শোক রাতের মাঝখানে উঠে গিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিবে।””

পরপর তিনদিন আতিশের দেখা না পেয়ে পাপড়িও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে শারীরিক নয় মানসিক। মানসিক যন্ত্রনায় সে ছটফট করছে। তার উপর পাপড়ির কলও রিসিভ করছেনা আতিশ! এতে যেন পাপড়ির মানসিক যন্ত্রনা তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে তিনটা দিন উনি কিভাবে থেকেছেন? উনার কি একটুও আমার কথা মনে পড়েনা? উনি নাহয় আমাকে ভালোবাসেননা আমি তো বাসি? আর আমি এটা খুব ভালো করে জানি,আপনিও জানেন আমার ভালোবাসার পরিধির কতটা

আতিশের বাসায় পাপড়ির কখনো আসা যাওয়া হয়নি। তবে মাঝে মাঝেই ওকে কলেজে নিয়ে যাবার সময় পালক এই বাসাটা থেকেই আতিশকেও নিয়ে যেতো। সে সুত্রেই আজ পাপড়ি আতিশের বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছে। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। প্রচুর ভয় পাচ্ছে। যতটুকু জানে এ বাসায় আতিশ একাই থাকে। পড়ালেখা করতেই এখানে এসে থাকা। মা বাবা গ্রামে থাকেন।

ধীরে ধীরে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলেও দরজায় টুকা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেনা পাপড়ি। বুকের ভেতরে ধকধক ঘন্টি বেজে যাচ্ছে তার। একে তো কলেজ ফাকি দিয়ে এসেছে তার উপর আতিশের অনুমোতি ছাড়া তার বাসায় চলে এসেছে,উনি কি আমাকে ধমকাবেন? যদি মাইর দেন? খুব জোরে মারবেন কি? ভাবতেই পাপড়ি ঘেমে নেয়ে ফেলছে। পড়নের এস কালারের সাথে সাদা কম্বিনেশনের কলেজ ড্রেসটাও অধিকাংশই ঘেমে একাকার!

পাপড়ির ইচ্ছে হলো দৌড়ে বাসায় চলে যেতে। কিন্তু এতোদুর এসেও যদি তার আতিশ ভাইকে না দেখা হয় তাহলে যে তার এতো সাহসের সব বিফলে যাবে! পাপড়ি চোখ বন্ধ করে নিজের পড়নের ড্রেসটা হাত দিয়ে আকড়ে ধরে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে দরজায় হাত দিতেই তা নড়ে উঠলো। দরজাটা খুলা পেয়েই পায়ে পায়ে ভেতরে এগুতেই আতিশের দেখা পেলো পাপড়ি।

মাথায় কারো হাতের আদুরী স্পর্শ পেয়ে আতিশের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে,

“” পাপড়ি,তুমি? থুক্কু তুই? তুই এখানে কি করছিস?””

আতিশের কন্ঠে পাপড়ি ভড়কে গেলো। আতিশের মাথার কাছটাতেই বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো আতিশের মাথায়।

আতিশ শুয়া থেকে উঠে ধমকের কন্ঠে বললো,

“” কলেজে যাসনি তুই? আর এখানে কিভাবে এলি? তাও আবার আমার রুমে? এতো সাহস তুই কই পেলি?””
“” আপনাকে দেখতে!””
“” আমাকে দেখতে মানে? আমার কি দুটে পা গজিয়েছে নাকি দুটো নাক উঠেছে যে তোকে দেখতে আসতে হবে? আজ তোকে পিটিয়ে সোজা করে দিবো। ক্লাস ফাকি দিয়ে এগুলো করা?””

পাপড়ি যতটা না ভয় পাচ্ছে তার থেকে বেশি অভিমান নিয়ে বললো,

“” আপনি আমাকে তুই করে বলবেননা,প্লিজ! খুব বাজে লাগে।””
“” তোকে তুই বলবোনা তো কি বলবো? আপনি করে বলতে হবে? তুই কি রানী ভিক্টোরিয়া?””
“”এতকিছু জানিনা,আপনি তুই করে বলবেননা মানে বলবেননা ব্যস!””
“” মুখে মুখে তর্ক করছিস? তাও আবার রুমে এসে,আমার সামনে দাড়িয়ে? তুই জানিস আমি তোর থেকে কত বড়?””
“” না।””
“” ৮ বছরের বড়। এখন তুই ই বল ৮ বছরের ছোট মেয়েকে তুই ছাড়া অন্য কিছু বলা যায়?””

পাপড়ি আতিশকে হুট করেই জড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো,

“”যায়। আমাকে আপনি তুমি করে বলবেন। আপনার তুমি বলাটাতে আমি ভালোবাসা খুজে পাই। নিজেকে আপনার বউ বলে মনে হয়!””

পাপড়ির এমন হুট করা কাজে স্তব্ধ হয়ে যায় আাতিশ। পাপড়ি তাকে কতটা ভালোবাসে তা অনেকআগেই সে বুঝে গিয়েছিলো। কিন্তু তার প্রকট যে এতো বেশি হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি সে।

সেদিনের পালকের কথায় বেশ অভিমান হয়েছিলো অন্ত্রীশার। পালকের সাথে দুদিন ধরে কথা হয়নি তার। তার যে কথা বলতে ইচ্ছে করেনি তা না। কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠেনি। হয়তো ভেতরে ভেতরে সংকোচবোধটা বেশি করে জেগে উঠেছে। আবার এমনও হতে পারে তার মনটা চাইছে পালক নিজে থেকে এসে তার সাথে কথা বলুক। কিন্তু পালক তার সাথে কথা বলবে কি তেমন দেখাও হয়না। অফিসের কাজে সকালে বের হয়ে, আসে মাঝরাতে। ইচ্ছে করেই দেরি করে আসে? নাকি সত্যি কাজের ব্যস্ততা। তা বুঝা হয়ে উঠেনি অন্ত্রীশার।

আজ হঠাৎ দুপুরের দিকে পালককে বাসায় চলে আসতে দেখে বেশ অবাকই হলো অন্ত্রীশা। খুশিও হয়েছে। আজ সে তার চুমুবাবুর রাগ ভাংগাবে।নিশ্চয় ভাংগাবে।

অন্ত্রীশা ওয়াড্রভ থেকে একটা শাড়ী বের করলো। গুনগুন করতে করতে গোসল ছেড়ে বের হতেই নাকে সিগরেটের উদ্গট গন্ধ এসে বারি খাচ্ছে। গন্ধের পথ ধরে বারান্দার যেতেই দেখলো পালক একহাত দিয়ে বেলকনির গ্রিলটা চেপে ধরে আছে। অন্যহাতে সিগরেট! এতোদিন পর পালকের হাতে সিগরেট দেখে অন্ত্রীশা বিস্মিত। পালকের কাছে গিয়ে বললো,

“” আপনার সিগরেট খাওয়ার কারনটা জানতে পারি?””

পালক মাথাঘুরে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই অন্ত্রীশা ভয় পেয়ে গেলো এক কদম পিছিয়ে গিয়েছে। পালকের চোখদুটে লাল টকটক হয়ে আগুন ধরছে।

অন্ত্রীশা পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য ঠোট নাড়াতেই পালক ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিয়েছে। নিজের ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার তাড়নায় থাকলেও আজ সে ব্যর্থ হলো। অন্ত্রীশা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে পালককে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওর ডান গালে!

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে