#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
#part_9+10
অনু লজ্জায় লাল হয়ে আছে। মেঘ পলকহীন তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। মেঘ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে কারণ আজ অনু তাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে নীল কালারের শাড়ি পরে এসেছে। অপূর্ব লাগছে কিছুতেই চোখ সরানো যাচ্ছে না।
মেঘ হাত উঠিয়ে অনুর খোলা চুল গুলো মুখের উপর থেকে কানে গুজে দিল।
– আজ কি আমাকে পাগল করতে এভাবে এসেছো।
– কিহ?
– তুমি তো বলেছিলে তোমার শাড়ি পছন্দ না। কখনো পরতে ও না তাহলে আজ পরলে যে!
– আমার পছন্দ না কিন্তু তোমার তো পছন্দ।
– হুম
– তোমার জন্য আমি ও পছন্দ পাল্টে ফেললাম;
– সত্যি !
– না মিথ্যা সব;
– ধুর।
মেঘ রাগ করে অন্য দিকে তাকাল। অনু বুঝেছে রাগ করেছে কি করে রাগ কমাবে ভাবছে। হঠাৎ করে অনু মেঘ কে জরিয়ে ধরলো। মেঘ তো অনুর জরিয়ে ধরায় শক হয়ে আছে।
– কি হলো এতো শক হওয়ার কি আছে তোমাকে কি জরিয়ে ও ধরতে পারবো না নাকি।
– তোমাকে আজ একটু বেশি রোমান্টিক লাগছে।
– তাই আর আমার কাছে তোমাকে হাবাগুবা মনে হচ্ছে?
– কি দাড়াও দেখাচ্ছি?
বলেই মেঘ অনুকে ধরবে কিন্তু তা কি আর সম্ভব অনু তো উঠে দাড়িয়ে দৌড়। মেঘ ও উঠে অনুর পেছনে দৌড়াতে লাগল ধরার জন্য।
সারাদিন অনু মেঘের সাথে সময় কাটায় । তিনটার দিকে বাড়ি ফিরে আসে।
দেখতে দেখতে ছয়মাস চলে গেল মেঘ আর অনুর রিলেশনের।
রাতে
মেঘ অনুর সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ বাড়ি থেকে কল আসে। ওয়েটিং কল চালু থাকায় বুঝতে পারে রাত তখন বারোটার কাছাকাছি এতোরাতে বাড়িতে থেকে ফোন দেখে মেঘ প্রচণ্ড অবাক সাথেভয় ও পায়।
– অনু ফোন রাখ তো?
– কেন কি হয়েছে। তোমার কি আবার ঘুম পাচ্ছে ঘুম পেলেও আমি ফোন রাখবো না প্রতি দিন তুমি রাতে দশটা পযর্ন্ত কথা বলেই রেখে দাও আজ সারারাত কথা বলতে হবে।
– অনু বাড়ি থেকে কল আসছে। এতো রাতে হঠাৎ বাড়ি থেকে কেন কল এলো চিন্তা হচ্ছে।
– ওহ সরি আচ্ছা তুমি বাড়িতে কথা বলে দেখো আর আমাকে কিন্তু জানিয়ও। আমি ঘুম আসবো না তোমার ফোন না আসা পযর্ন্ত।
– আচ্ছা রাখি!
বাড়িতে
ফোন রিসিভ করেই অপর পাশে থেকে কান্না আওয়াজ শুনা গেল। মেঘনা কাদছে কান্না শুনে তো আর ও ভয় পেয়ে গেলাম।
– মেঘনা কি হয়েছে কাদছিস কেন বল আমাকে;
– ভাইয়া আববু
– কি হয়েছে আববুর বল?
হঠাৎ মায়ের কণ্ঠ পেলাম। মেঘনাকে বকছে
– হ্যালো মা কি হয়েছে;
– কিছু হয়নি বাবা তুই ফোন রাখ কাল কথা বলবো নি। আমরা ঘুম আসবো।
বলেই ফোন কেটে দিল মা কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না কিছু তো অবশ্যই হয়েছে নয়লে মেঘলা এতো রাতে ফোন দিত না। আর কান্না বা করলো কেন আম্মু এখন ও জেগে আছে কেন। চিন্তায় আর অনু কল করার কথা মনেই ছিলো ফোনের রিংটনে বাস্তবে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি অনু কল করেছে।
– হ্যালো
– তোমাকে না বললাম আমি জেগে থাকবো কলের জন্য তুমি কল করলে না কেন।
– মনে ছিলো না!
– বাড়ির খি খবর কেন ফোন করেছিল জানো?
– না কিছু বলল না কিন্তু আমার বিশ্বাস কালো কিছু হয়েছে।
– এখন কি করতে চাও।
– কাল বাড়ি যাব।
– তোমার তো ক্লাস আছে?
– তবুও মিস দিয়েই যেতে হবে বাড়ির জন্য চিন্তা হচ্ছে। না গিয়ে জানা পযর্ন্ত আমি শান্তি পাবো না।
– আচ্ছা যা ভালো বুঝ করো আর এখন এতো চিন্তা করো না। ঘুমিয়ে পরো।
– আচ্ছা।
পরদিন
মেঘ বাড়ি এলো আর জানতে পারলো আববু হার্টএ্যাটাক হয়েছে। সবাইকে বকলো না জানানোর জন্য দুইদিন হয়েছে অথচ তাকে জানানো হয়নি । এখন একটু সুস্থ আছে একদন থেকে আবার চলে এলো মেঘ আর এও বলে এলো নেক্মট যেন কিছু না বলে করে।
ভালোই কাটছিল সবকিছু কিন্তু ভালোটা বেশি দিন গেল না।
একদিন
– মেঘ তোমাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবে।
– মানে তুমি যাবে?
– হুম
– বউ করে একবারে নিয়ে যাবো চিন্তা করো না।
– না আমার এখনই যেতে ইচ্ছে হচ্ছে নিয়ে চলো না প্লিজ। তুমি কি আমাকে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছো।
– কি বলছো ভয় পাবো কেন
– তাহলে নিয়ে যেতে চাইছো না কেন?
– তোমার জন্য !
– আমার জন্য ( অবাক হয়ে)
– হুম আমাদের বাড়িতে যেতে হলে তোমাকে থাকতে হবে কিন্তু তুমি তোমার বাড়িতে কি বলে যাবে।
– সেটা আমি ভেবেই রেখেছি তুমি নিয়ে যাবে নাকি তাই বলো।
– আটষাট বেধেঁই নেমেছো আচ্ছা কিন্তু আমার এক্মমের পর।
– আচ্ছা।
আজ মেঘের সাথে যাবে অনু সকাল থেকে গুছগাছ করছে। মেঘ ঢাকা থেকে নিতে আসবে ও এক সপ্তাহ আগে গিয়েছে বাড়ি আমার তখন বাড়িতে মানাতে পারি নি। আজ অনেক কষ্ট করে সামিয়াদের বাড়ির যাবে বলে রাজি করিয়েছি।
চারটা থেকে বসে আছে অনু অথচ এখন পযর্ন্ত মেঘ এসে পৌঁছায় নি। ওর ৪:৩০ এখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো এখন পাচঁটা বাজে।
মেঘকে ফোন দিলাম।
– হ্যালো কই তুমি কখন থেকে বসে আছি তোমার জন্য।এখন এসে পৌঁছালে না কোথায় আছো?
– সরি আসলে রাস্তায় অনেক জাম গো তাই লেট হচ্ছে।
– যাও এখন ঝগড়া করবো না তারাতারি আসো তারপর।
চলবে,,,
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
#part_10
সৃতির পাতায় থেকে বাস্তবে ফিরলো আযানের শব্দে মেঘ। যতবার অতীত মনে করেছে সময় কখন চলে গেছে টেরই পায় নি। মেঘ চোখ মুছে উঠে গোসল করে নিলো তারপর নামাজ পরলো। আবার ভাবতে বসলো সেদিন তো আমি যেতে পারি নি অনুর কাছে কি ঘটেছিলো যে ও সুসাইড করলো।
এদিকে
মেঘনা রান্না করতেছে সকালে উঠে এখন রান্না টা ভালোই করে। ওতো ভালো হয়না খেতে কিন্তু খারাপ হয়না। হঠাৎ আদি আওয়াজ কানে এলো এই শুরু হয়েছে চিল্লাচিল্লি।
আদি এসে খাবার টেবিলে বসেছে আমার রান্না শেষই। খাবার নিয়ে ওর সামনে রাখলাম সব সময় যেমন মুখটা খারাপ করে আজ ও তাই করলো। বিশ্বের সব চেয়ে খারাপ রাধি আমি এটাই বুঝায়।
এতো যেহেতু খারাপ রাধি আসিস কেন খেতে বাইরে খেতে পারিস না। সব সময় এই খারাপ খাবারের জন্য চিল্লাচিল্লি করতেই থাকে। ( রেগে বিরবির করছি)
– যতই বিরবির করে বকো না কেন তোমাকে রান্না করতেই হবে। খারাপ হলেও তোমার রান্না অন্য সব কাজ করতে হবে? ( খেতে খেতে )
– করব না কি করবি? ( রাগের মাথায় কথাটা বলে ফেলেছি কিন্তু আদির দিকে তাকিয়ে আমি ভয়ে শেষ আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়েছে মনে হচ্ছে চুখ দিয়েই গিলে ফেলবে)
– কি বললে? ( রেগে)
– কই কিছু বলিনি তো ! আমি তো বললাম সব সময় রান্না করতেই থাকবো একদম রান্না ঘর থেকে বেরই হবো না( ভয়ে ভয়ে)
– তোমাকে আমি সারাদিনে রান্না করতে বলি নি। সব কাজই করতে হবে বাড়ির। মনে থাকে যেন।
আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে র রইলাম। আদি খাবার খেয়ে চলে গেল আমাকে একবারের জন্য ও খেতে বললো না। শুধু আজ নয় কখনোই এই খুজ নেয় না আমি খেয়েছি কিনা। এতো টাই অবহেলা করে। অনেক সময় অভিমান করে না খেয়ে থাকি কিন্তু এতে লাভ নেয়।
যার সাথে অভিমান করি সেই তো বুঝে না বুঝার চেষ্টা ও করে না। আদির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেললাম এই জল আদির চোখে পরে না আর কখনো পরবে কিনা তাও জানি না। অভিমান বাদ দিয়ে খেয়ে নিলাম। সারাদিন এটা ওটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। রাত নয়টা বাজে আগে আটটার দিকেই চলে আসতো আদি ইদানিং অনেক দেরি করে আসে আমি প্রতিদিন ই ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি সোফায় বসে মাঝে ঘুমিয়ে ও পরি কলিং বেলের শব্দে ধরফরিয়ে উঠি।
আজ ও এখন পযর্ন্ত আসে নি সারাটা দিন আমি বাড়িতে কি করি কি ভাবে, আছি জানার প্রয়োজন বোধ করে না। না ফোন আছে একটা ফোনের কথা বলেছিলাম বলে যেদিন বাড়িতে থেকে চলে যাবে সেদিন দেবো আমি আর কিছু বলি নি যত অত্যাচার করোক আমি যাবো না।
এগারো টার দিকে বাড়ি আসলো আদি দরজা খুলার সাথে সাথে রুমে চলে গেল। আমি পেছনে পেছনে আসলাম। খাবে নাকি জানার জন্য সে বলল খাবে না খেয়ে এসেছে। আমি যে প্রতিদিন না খেয়ে অপেক্ষা করি সেটা বুঝল ও না খেয়ে আসছে শুনে আর খেলাম না আমি ও খাবার ফিরিজে রেখে আমি শুয়ে পরলাম। আদি আর আমি আলাদা শুয়।
সারারাত চোখের জল ফেলে কাটিয়ে দিলাম। সকালে উঠে রান্না করে নিলাম। আদি খেয়ে অফিস যাবে তখন বললাম,
– আদি আমার একটু শপিং এ যাওয়ার লাগতো?
– কেন
– কিছু কেনার ছিলো। তুমি কি আজ একটু আগে আসতে পারবে!
– তোমার যাওয়া সাথে আমার আগে আসার কি সম্পর্ক;
– আমি আর তুমি যাবো তো আগে না আসলে যাবে কি ভাবে।
– আমি কোথায় যেতে পারবো না তোমার দরকার তুমি যাও।
বলেই কয়েক কদম এগিয়ে আবার ফিরে এসে টাকা দিয়ে চলে গেল।
চলবে……