#ধূসর শ্রাবণ
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-২৪+২৫
________________
হা হয়ে তাকিয়ে আছে নির্মল হিয়ার দিকে। সে ভাবে নি এই মুহূর্তে বা এই সময়ে হিয়া আসবে তাঁর কাছে। নির্মল বেশ খানিকটা অবাক হয়েই বললো,
‘ তুমি এখানে?’
প্রতি উওরে তেমন কিছু না ভেবেই ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে সাথে মুচকি হেঁসে বলে উঠল হিয়া,
‘ হুম আমি কেন আসতে পারি না বুঝি।”
‘ না তা হবে কেন?’
‘ তাহলে বলছেন কেন?’
প্রতি উওরে কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না নির্মল। অন্যদিকে হিয়া ভিতরে ঢুকে দরজা আঁটকে চলে যায় নির্মলের সামনে। তারপর ব্যাগ থেকে টিফিনবক্সটা বের করে রাখে টেবিলের উপর। টিফিনবক্সের পাশাপাশি প্লেট আর চামচও এনেছে হিয়া। যার দরুন সেগুলো বের করেও রাখে হিয়া টেবিলের উপর। হিয়ার কান্ডে অবাক নির্মল। হিয়া কি করছে সব যেন তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে হিয়া বলে উঠল,
‘ লান্স করেছেন আপনি?’
হিয়ার কাজ দেখতে মগ্ন ছিল নির্মল তাই হিয়ার কথাটা ঠিক ভাবে শুনতে না পেয়ে বলে উঠল,
‘ কি?’
নির্মলের কথা শুনে তাকায় হিয়া নির্মলের দিকে তারপর বলে,
‘ বলেছি লান্স করেছেন আপনি?’
‘ ওহ,না এখনো করা হয় নি।’
নির্মলের কথা শুনে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো হিয়ার খুশি হয়েই বললো সে,
‘ খুব ভালো হয়েছে আমি আপনার জন্য নিজ হাতে রান্না করে এনেছি। এই দেখুন,
বলেই বিরিয়ানি আর মুরগীর রোস্টটা দেখালো হিয়া। হিয়ার কান্ডে এবার সত্যি সত্যি যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে নির্মল। তার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছে হিয়া। কথাটা ভাবতেই এক বুক ভালো লাগা এসে গ্রাস করলো নির্মলকে। নির্মল প্রচন্ড খুশি হয়ে বলে উঠল,
‘ তুমি আমার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছো হিয়া?’
নির্মলের কথা শুনে প্লেটে খাবার বারতে বারতেই বলে উঠল হিয়া,
‘ হুম।’
নির্মল খুশি হলো। প্রচন্ড বেগে খুশি হলো। তাঁর সাথে এটাও বুঝে গেল হিয়া তাঁকে প্রচন্ড বেগে ভালোবেসে ফেলেছে। নির্মল ভাবলো কিছু, শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে কিছু বলতে মুখ খুলবে ঠিক সেই মুহূর্তেই হিয়া বলে উঠল,
‘ আপনার অদ্ভুত শিহরণ মেশানো কথা পড়ে শুনবো আগে খেয়ে নিন।’
নির্মল শুনলো হিয়ার কথা। সাথে অবাকও হলো ভীষণ। তবে বেশি ভাবলো না। হিয়া নির্মলের সামনে খাবার প্লেটটা রেখে বললো,
‘ খেয়ে দেখুন না কেমন হয়েছে ফাস্ট টাইম ট্রাই করলাম, খুব একটা ভালো হয় নি হয়তো?’
নির্মল হিয়ার কথা শুনে নিজের হাতের দিকে তাকালো কলম দিয়ে লেখার ফলে কালো দাগ পড়ে গেছে। নির্মল উঠতে চাইলো হাতটা ধুতে হবে তাঁকে। নির্মলকে নিজের হাতের দিকে তাকাতে দেখে কিছু একটা ভেবে মুচকি হেঁসে বলে উঠল হিয়া,
‘ আপনাকে নিজ হাত খেতে হবে না আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি দাঁড়ান?’
হিয়ার কান্ডে এবার যেন সত্যি ভীষণ শকট নির্মল। হিয়া বেশি কিছু না ভেবেই চামচ দিয়ে এক চামচ বিরিয়ানি উঠিয়ে মুখের সামনে ধরলো নির্মলের। নির্মল অবাক হিয়ার কান্ডে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম তাঁর। এটা সত্যি সত্যি হিয়া কি না এতে যেন বেশ সন্দেহ হচ্ছে নির্মলের। নির্মলকে ড্যাব ড্যাব করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল হিয়া,
‘ কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
হিয়ার কথা শুনে ওর দিকে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল নির্মল,
‘ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোমায় কি ভূতে ধরেছে হিয়া?’
নির্মলের কথায় বিস্মিত হলো হিয়া। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
‘ ভূতে না পেত্নীতে ধরেছে এবার খান,
এই বলে নির্মলের মুখে বিরিয়ানি সমেত চামচটা ঢুকিয়ে দিলো হিয়া। নির্মল খেলো, চিবুতে লাগলো সাথে অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো হিয়ার দিকে। এরই মাঝে হিয়া খানিকটা চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠল,
‘ কেমন হয়েছে? ভালো হয়নি বোধহয়? ইউটিউব দেখে করেছি বুঝলেন? লবনটা ঠিক ঠাক হয়েছে কি, চালটা সিদ্ধ হয়েছে তো? আর মাংসটা নরম হয়েছে কি নির্মল?’
প্রতি উওরে কোনো কিছু বললো না নির্মল। শুধু ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো হিয়ার মুখের দিকে। যেন হিয়ার কর্মকান্ড সবই তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে?’
________
বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট থেকে সবেমাত্র বের হলো শুভ্র। কয়েক মুহূর্ত আগেই লন্ডন থেকে তাঁর প্লেন ল্যান্ড করলো বাংলাদেশের বুকে। শুভ্র তক্ষৎনাত বেরিয়ে আসে এয়ারপোর্ট থেকে। বর্তমানে গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে সে। উতলা হয়ে আছে শুভ্র কখন বর্ষার সাথে তার দেখা হবে আর সকল মান অভিমানের সমাপ্তি ঘটিয়ে মনের কথা প্রকাশ করবে সে। শুভ্র মাত্র দু’দিনেই বুঝতে পেরেছে বর্ষাকে ছাড়া তাঁর চলবে না। তাঁর বোকারানির বোকাবোকা কাজ কর্মতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। ঠিক এক’দিন আগের ঘটনা। প্রায় মনমরা হয়েই অফিস থেকে বাড়ি আসে শুভ্র, সোফা পর্যন্ত যেতেই হুট করেই সামনে মগ আর বালতি দেখে মনে পড়ে তাঁর সেদিনের কথা যেদিন পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল সে। আর তাঁর সেই পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে বর্ষাও দৌড়ে এসে পড়ে তাঁর ওপর। সেদিন সেই বিষয়টার জন্য রাগ হলেও আজ ভীষণ মিস করছিল শুভ্র। গোসল সেরে বের হয়ে আলমারি খুলতেই মনে পড়ে তাঁর বোকারানি বউয়ের এক বস্তুা জামাকাপড় এলেমেলো ভাবে রাখার ফলে তার ওপর এসে পড়ার ঘটনা। বর্ষা যেমন তাঁকে আঘাত দিয়েছিল বারে বারে পাশাপাশি সেবাও করেছিল। খেয়াল রেখেছিল তাঁর সবসময়। আর সেগুলোকেই ভীষণ ভাবে মিস করছিল শুভ্র। বর্ষার শূন্যতা যেন পদে পদে মনে করিয়ে দিচ্ছিল তাঁকে,
‘ তুমি ভালোবেসে ফেলেছো শুভ্র তোমার বোকারানিকে’।
শুভ্র বুঝতে পেরেছে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সে বর্ষাকে। বিয়ে হলো এমন একটা জিনিস যেটা দুটো মানুষের মধ্যে ভালোবাসা শব্দটা জড়িয়ে দিতে বাধ্য। তবে সব মানুষের ক্ষেত্রে নয়, মায়া আর ভালোবাসা এক নয়। কিছু মানুষ মায়ায় পড়ে আঁটকে থাকে একসাথে আর কিছু মানুষ ভালোবেসে আঁটকে থাকে সারাজীবন।’
এই রকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলছিল শুভ্র। মনটা তাঁর ব্যাকুলতার শীর্ষে।’
অতঃপর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শুভ্র গাড়ি নিয়ে চলে আসে বাড়িতে। গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে তক্ষৎনাত চলে যায় সে বাড়ির ভিতরে। উত্তেজিত হয়ে থাকার কারনে বাড়ির গাড়ি যাবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই টেক্সি গাড়ি করেই বাড়ি চলে আসে শুভ্র। নিজের ব্যাগপত্র কোনো রকম নিয়েই বাড়ি দরজার সামনে দাঁড়ালো শুভ্র। কলিং বেল বাজালো উচ্চস্বরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই শুভ্রের মা এসে দরজা খুলে দিল। শুভ্রকে দেখেই খুশি হয়ে বলে উঠলেন উনি,
‘ শুভ্র তুই এসেছিস? কেমন আছিস বাবা?’
প্রতি উওরে শুধু ‘ভালো’ বলে তক্ষৎনাত জিজ্ঞেস করলো সে,
‘ মা বর্ষা কোথায়?’
বলেই বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লো শুভ্র। এদিক ওদিক তাকালো তক্ষৎনাত। ছেলের কথা আর কাজ দেখে কিছুটা হতভম্ব হলেন শুভ্রের মা কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন উনি,
‘ কেন কিছু কি হয়েছে?’
মায়ের কথা শুনে হাল্কা বিরক্ত প্রকাশ করলো শুভ্র। বললো,
‘ কি হবে মা আমি শুধু জানতে চাইছি বর্ষা কোথায়?’
‘ বর্ষা তো বাড়িতে নেই শুভ্র।’
মায়ের কথায় অবাক সাথে হতাশ হলো শুভ্র। খানিকটা বিষন্ন মাখা কষ্ট নিয়ে বললো,
‘ নেই মানে কোথায় গেছে ও এ বাড়ি আসে নি।’
‘ আসছে কিন্তু শুভ্রতার সাথে বেরিয়েছে একটু চলে আসবে তুই চিন্তা করিস না।’
মায়ের কথা শুনে ভীষনভাবে হতাশ হলো শুভ্র। নিজের উত্তেজনা ভাবটাকে কমাতে লাগলো নিমিষেই। শুভ্রকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো প্রশ্ন করে বসলো শুভ্রের মা,
‘ কিছু কি হয়েছে তোর সাথে বর্ষার।’
প্রতি উওরে নিরাশা ভরা দৃষ্টি রেখে বলে উঠল শুভ্র,
‘ কি হবে মা আমি রুমে গেলাম ভালো লাগছে না।”
বলেই নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল শুভ্র। আর শুভ্রের মা কিছুক্ষন হতাশ চোখে ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলেন।’
____
শুভ্রতার সাথে শপিং করতে এসেছে বর্ষা। যদিও তাঁর আসার কোনো ইচ্ছে ছিল না শুভ্রতার জোরাজোরিতে আসতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছে সে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায় কিন্তু এখনো শুভ্রতার শপিং করা হয় নি। কি কিনতে এসেছে সেটাই জানে না বর্ষা। হঠাৎই শুভ্রতা বলে উঠল,
‘ ভাবি তোমার ফোনে ব্যালেন্স আছে আসলে আমারটা মাত্র শেষ হলো একজনের আসার কথা ছিল, ওই তোমায় বলেছিলাম না। কতদূর আসলো সেটাই জানার ছিল?’
প্রতি উওরে নিজের ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো বর্ষা তারপর বললো,
‘ নেই বোধহয়। লন্ডন থেকে ফিরে এখন পর্যন্ত মোবাইলটা খোলাই হয় নি আমার।’
এতটুকু বলে মোবাইলটা অন করতে লাগলো বর্ষা। বর্ষার কথা শুনে শুভ্রতা খানিকটা নিরাশ হয়ে বললো,
‘ ওহ, আচ্ছা ভাবি তুমি এখানে দু’মিনিট দাঁড়াও আমি এক্ষুনি মোবাইলটায় রিচার্জ করে আসি।’
শুভ্রতার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো বর্ষা,
‘ ঠিক আছে।’
‘ থ্যাংক ইউ ভাবি তুমি এখানেই দাঁড়িও কোথাও যেও না আবার।’
‘ ঠিক আছে।’
উওরে শুভ্রতাও আর কিছু না ভেবে চলে যায় বাহিরে। বর্ষা তাঁর মোবাইলটা অন করলো ঠিকই তবে কিছু দেখার আগেই সেটাকে আবার ব্যাগে ভরে নিলো।’
মাঝপথে কেটে যায় আধ ঘন্টা। বর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শপিং মলের একটা দোকানের সামনে। এবার বিরক্ত লাগছে তাঁর, কোথায় গেল শুভ্রতা এখনো আসছে না কেন? বর্ষা তাঁর মোবাইলটা বের করলো আবার মোবাইলটা অন করতেই অনেকগুলো মেসেজ দেখতে পেলো বর্ষা। এর বেশির ভাগই অফিস থেকে করা। আর এদের নিচেই ছিল শুভ্রের মেসেজ যেটা বর্ষা বর্তমানে খেয়াল করে নি। বর্ষা মেসেজগুলো দেখতে নিলো শেষ অবদি যাবে এরই মাঝে পাশ থেকে বলে উঠল কেউ,
‘ এক্সকিউজ মিস, আপনি কিছু মনে না করলে আমায় একটু হেল্প করবেন?’
আচমকা পাশ থেকে কোনো পুরুষালির কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো বর্ষা। তক্ষৎনাত পাশ ফিরে তাকাতেই একটা উঁচা লম্বা চুরা ছেলেকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ জ্বী কি বললেন?’
খানিকটা হতাশ হলো ছেলেটি। কপালের ডান দিকটা দুইবার চুলকে বললো,
‘ বলেছি আমায় একটু হেল্প করবেন?’
ছেলেটির কথা শুনে মোবাইলটা বন্ধ করে আবারো ব্যাগে রাখলো বর্ষা তারপর বললো,
‘ জ্বী বলুন কি হেল্প লাগবে আপনার?’
বর্ষার কথা শুনে বেশ আগ্রহ নিয়ে বললো,
‘ আসলে কাল আমার গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে ভাবছি বার্থডে উপলক্ষে তাঁকে শাড়ি গিফট করবো কিন্তু কি শাড়ি দিলে ও খুশি হবে এটা বুঝতে পারছি না। আসলে ফাস্ট টাইম কিনছি তো তাই বুঝতে পারছি না। আপনি শাড়ি পড়ে আছেন তাই মনে হলো এই বিষয়ে আপনি হয়তো আমায় হেল্প করতে পারবেন।’
ছেলেটির কথা শুনে খানিকটা অবাক হলো বর্ষা। পরক্ষণেই মুচকি হেঁসে বললো সে,
‘ ওহ! এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে চলুন আমি আপনায় সাহায্য করছি।’
খুশি হলো ছেলেটি বললো,
‘ ধন্যবাদ।’
‘ ইট’স ওঁকে।
এতটুকু বলে চললো বর্ষা ছেলেটির সাথে। একটা সুন্দর শাড়ির দোকানের সামনে বসে আছে বর্ষা আর ছেলেটি। হঠাৎই বর্ষা বলে উঠল আপনার গার্লফ্রেন্ডের প্রিয় রং কি বলতে পারবেন?’
বর্ষার কথা শুনে দু’সেকেন্ড টাইম নিয়ে বলে উঠল ছেলেটি,
‘ জ্বী গোলাপি।’
‘ ওহ ঠিক আছে,
এই বলে দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে বললো বর্ষা,
‘ আমাকে কিছু গোলাপির কম্বিনেশনে জামদানি বা কাতানের ভিতর শাড়ি দেখান?’
দোকানদারও শুনলো বর্ষার কথা। বের করলো নানা রকমের শাড়ি। বর্ষাও উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো শাড়ি। হঠাৎই বর্ষার চোখ আঁটকে যায় গোলাপি আর সাদার কম্বিনেশনে জামদানী শাড়ির দিকে। বেশ সুন্দর শাড়িটা। বর্ষা সেটাকেই হাতে নিয়ে বললো,
‘ এটা দিতে পারেন এটা খুব সুন্দর।’
ছেলেটিও শুনলো বর্ষার কথা। বর্ষার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে বললো,
‘ সত্যি শাড়িটা খুব সুন্দর। আপনার চয়েস আছে।’
উওরে হাসলো বর্ষা। হঠাৎই ছেলেটি বলে উঠল,
‘ আপনিও একটা দেখুন আমাকে হেল্প করলেন তাঁর বিনিময়ে একটা শাড়ি আপনাকে গিফট করাই যায়।’
ছেলেটির কথা শুনে বিস্মিত হলো বর্ষা। চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
‘ না না তাঁর দরকার নেই কি বলছেন আপনি সামান্য একটা শাড়ি চুজ করে দেওয়ার জন্য শাড়ি নিবো মাথা গেছে আপনার।’
‘ এভাবে বলছেন কেন?’ সামান্য শাড়িই তো।’
‘ না না তাঁর দরকার নেই। আমায় এখন যেতে হবে।’
এই বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। আচমকাই শাড়ি প্যাঁচিয়ে পড়ে যেতে নিলো সে সাথে সাথে সামনের ছেলেটি ধরে বসলো বর্ষাকে তারপর বললো,
‘ আপনি ঠিক আছেন তো?’
এদিকে,
ঠিক সেই মুহূর্তেই সেই দোকানের ভেতর ঢুকলো শুভ্র। নিজের অস্থিরতাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে শুভ্রতাকে ফোন করে তাঁরা কোন শপিং মলে আছে এটা জেনে এখানে আসে শুভ্র। কিন্তু বর্ষাকে অন্য আরেকটি ছেলের সঙ্গে দেখে মুহূর্তেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো তাঁর। এমনিতেই বর্ষার অভিমান কি করে ভাঙাবে এটা ভেবে ডিপ্রেসড সে। বর্ষার শূন্যতায় মাথা খারাপ তাঁর। তারওপর অন্য আরেকটা ছেলে স্পর্শ করেছে বর্ষাকে। মুহূর্তের মধ্যে মাথায় যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো শুভ্রের। রাগান্বিত কন্ঠ নিয়েই চেঁচিয়ে বলে উঠল সে,
‘ বর্ষা?’
সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের লোকজনসহ বর্ষা আর ওই ছেলেটিও তাকালো শুভ্রের দিকে। বর্ষার তো চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। সে ভাবে নি এমন একটা মুহূর্তে শুভ্র আসবে তাঁর সামনে।’
#চলবে…..
#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-২৫
________________
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বর্ষা শুভ্রের দিকে। তাঁর কল্পনারও বাহিরে ছিল এই মুহূর্তে সে শপিং মলে শুভ্রকে দেখবে। তক্ষৎনাত নিজের হাতটাকে ওই ছেলের হাত থেকে সরিয়ে নিতে চাইলো বর্ষা কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সে।’
এদিকে,
বর্ষাকে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগ যেন আরো বেড়ে গেল শুভ্রের। তক্ষৎনাত হন হন করে এগিয়ে গেল সে বর্ষার কাছে। তারপর কাট কাট গলায় একপলক সামনের ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ এখানে কি হচ্ছে?’
ততক্ষণে সামনের ছেলেটি বর্ষার ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিয়েছে। কিছুটা হতভম্ব হয়েই বললো সে,
‘ আপনি কে?’
রাগ হলো শুভ্রের। অচেনা এই ছেলে তাঁকে জিজ্ঞেস করছে আপনি কে? চোখ মুখ শক্ত করে বললো শুভ্র,
‘ আমি কে সেটা আপনার না জানলেও চলবে, চলো বর্ষা?
এই বলে বর্ষার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে আসলো শুভ্র। আর পাশের ছেলেটা নির্বিকার হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো শুভ্র বর্ষার যাওয়ার পানে। যেন কি হলো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল।’
রাগে হন হন করে বর্ষার হাত ধরে শপিং মল থেকে বের হতে লাগলো শুভ্র। রাগের চোটে কিছু বলছে না শুভ্র, শুধু শক্ত করে বর্ষার হাত ধরে এগিয়ে চলছে সে। শুভ্রের রাগ দেখে বর্ষাও কিছু বলতে পারছে না। তবে সে বুঝতে পারছে না শুভ্র এত রেগে আছে কেন? হঠাৎই কিছু একটা ভেবে বর্ষা দাঁড়িয়ে পড়লো, বর্ষাকে দাঁড়াতে দেখে শুভ্রও দাঁড়িয়ে পড়লো তারপর বললো,
‘ কি হলো?’
‘ আমি যাবো না।’
‘ যাবে না মানে?’
‘ যাবো না মানে যাবো না।’
রাগ হলো শুভ্রের। প্রচন্ড রাগ নিয়েই ক্ষীপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো সে,
‘ দেখো একদম রাগাবে না এমনিতেও রাগ হচ্ছে আমার। তারপর উল্টো পাল্টা কিছু করে বসবো সামলাতে পারবে না।’
শুভ্রের কথা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম বর্ষার। থমথমে গলায় চোখ বড় বড় করে বললো সে,
‘ উল্টো পাল্টা করবেন মানে, কি করেছি আমি?’
শুভ্র যথাসম্ভব তাঁর রাগটাকে কন্ট্রোলে এনে চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠল,
‘ কি করেছো তুমি সেটা আবার জিজ্ঞেস করছো। আমায় না বলে লন্ডন থেকে এসেছো কেন?’
চুপসে গেল বর্ষা। কি বলবে বুঝতে পারছে না। বুকের ভিতর আচমকাই মোচড় দিয়ে উঠলো তাঁর। চোখের সামনে ভেসে আসলো শুভ্র আর সেই মেয়েটার জড়িয়ে ধরার দৃশ্য চোখ ভেসে আসলো বর্ষার। বর্ষাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল শুভ্র,
‘ কি হলো এখন কথা বলছো না কেন?’
বর্ষা ছলছল চোখে তাকালো শুভ্রের দিকে। তারপর নীরব কন্ঠে বললো,
‘ আপনি সত্যি জানেন না আমি কেন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছি। আর এত অভিনয় করার কি আছে আমি তো আপনায় বলেছি খুব শীঘ্রই আমি আপনায় মুক্তি দিবো, তাহলে অকারণে রাগ দেখাচ্ছেন কেন?’
‘ লন্ডনের হাওয়া খেয়ে বাংলাদেশে এসে সাহস খুব বেড়ে গেছে তাই না।’
‘ সাহস,
শুঁকানো হাসলো বর্ষা তারপর বললো,
‘ জানেন তো শুভ্র, মানুষ তাহার থেকে কাউকে নরম পেলে বড্ড আঘাত করে। বারে বারে মনে করিয়ে দেয় তুমি ভীতু, তুমি পারবে না আমার সাথে।’
নির্বিকার শুভ্র। মুহূর্তের মধ্যেই নিজের রাগটা যেন কোথায় হারিয়ে গেল তাঁর। অপরাধী কন্ঠ নিয়েই বলে উঠল শুভ্র,
‘ আমার কথার অর্থ এমনটা ছিল না বর্ষা। তুমি আবার আমায় ভুল বুঝছো।’
‘ ভুল! হাসালেন আমায় যাইহোক এমনিতেও অনেক লেট হয়ে গেছে শুভ্রতা কোথায় গেছে হয়তো আমায় না দেখে দুশ্চিন্তা করছে।’
শুভ্র পারলো না নিজেকে সামলাতে। আচমকাই বর্ষার হাত ধরে দিল টান। মুখোমুখি করলো নিজের। হুট করে এমনটা হওয়াতে বর্ষা থতমত খেয়ে যায় ওখানেই। হতভম্ব গলায় শুভ্রের চোখে দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ কি করছেন কি শুভ্র এটা শপিং মল সবাই দেখছে আমাদের।’
বর্ষার কথাটাকে টোটালি ইগনোর করে বর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বললো শুভ্র,
‘ তুমি এমন কেন বোকারানি, সবসময় উল্টোপাল্টা ভাবো। চোখের দেখা সবসময় সত্যি হয় না। ভুল বুঝছো ঠিক আছে, আমার আচরণে কষ্ট পেয়ে অভিমান করেছো তাও ঠিক আছে, আমি সময় নিয়েছি এটা হয়তো ঠিক নেই কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমি সময় নিতে বাধ্য ছিলাম। আমি তো গিয়েছিলাম তোমার কাছে তোমায় সবটা বলতে, ভুলটা ভাঙাতে তুমি শুনতে চাও নি, আবার শুনতে যখন চেয়েছো তখন সময় হয় নি। এবার তো বলার সুযোগ দেও সবটা। আমি বলতে চাই তোমায় অনেক কিছু। তুমি জানো না তোমার শূন্যতায় আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি, ভেঙে ফেলছে আমায় ভিতর থেকে, এবার তো বাঁচিয়ে নেও প্লিজ।’
শুভ্র শেষের কথাটা এমন ভাবে বললো যে বর্ষা শুনে থমকালো, ভড়কালো সাথে অবাক হলো খুব। নির্বিকার কন্ঠে বললো,
‘ মানে?’
শুভ্র কিছু বলবে ঠিক সেই মুহূর্তে এক প্রকার হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের সামনে হাজির হলো শুভ্রতা। থমকানো গলায় বললো,
‘ ভাইয়া ভাবি তোমরা এখানে আর আমি তোমাদের পুরো শপিং মল তন্নতন্ন করে খুঁজছি।’
শুভ্রতার কন্ঠ কানে আসতেই শুভ্র ছেড়ে দিলো বর্ষাকে। কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ালো দুজন। আজ আবারো যেন সময়টা তাঁদের সাথে বেইমানি করলো।’
গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে শুভ্রতা, বর্ষা আর শুভ্র। শুভ্র ড্রাইভ করছে আর পিছন ছিঁটে বসে বকবক করছে শুভ্রতা আর বর্ষা। এক প্রকার বিরক্ত লাগছে শুভ্রের। সে বুঝে না প্রত্যেকবার তাঁর সাথেই এমন কেন হয় যতবারই বলতে যায় ততবারই কোনো না কোনো কারন এসে তাঁকে চুপ করিয়ে দেয়। অদ্ভুত!’ ভালোবাসা কি প্রকাশ করা হবে না তাঁর। বর্ষাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে কি পারবে না সে,
‘ ভালোবাসি বোকারানি। তোমার বোকাসোকা কাজ কর্মের প্রেমে পড়েছি আমি।’
উওর মেলে না শুভ্রের। রাতের আকাশের পানে একপলক তাকায় শুভ্র। অভিযোগ করে খানিকক্ষণ তারপর আবারো নজর দেয় শহরের ব্যস্ত হয়ে চলা রাস্তার পানে। তাদের সাথে চলছে অগনিত নানান পদের সব গাড়ি, টেক্সি, সাইকেল, মোটরগাড়ি, রিকশাসহ শতশত সব যানবাহন। তাঁর সাথে চলছে নানা বর্নের মানুষজন। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো শুভ্র। বারে বারে মনটা তাঁর ভেঙে যাচ্ছে কারনে অকারণে অজান্তেই।’
_____
জোৎসা ভরা রাত। আকাশে ভেসে চলেছে হাজারো তাঁরার মেলা, চাঁদ মামাও আছে তাঁদের মাঝে। চারপাশ বেয়ে আসছে প্রকৃতির মুগ্ধ করা মৃদুু বাতাস। শহর থেকে খানিকটা দূরে, খোলা জমিনের মাঝে একটা বড়সড় গাছের নিচে থামিয়ে রাখা কালো রঙের গাড়ির ওপর বসে আছে নির্মল আর হিয়া। মুলত মাঝরাতে হুট করেই হিয়াকে নিয়ে এখানে আসে নির্মল। তারপর বসে পড়ে দুজন গাড়ির ওপর। একদম জনশূন্য জায়গাটা যার দরুন হাল্কা ভয় ভয়ও লাগছে হিয়ার। একদম নিরিবিলি আর ছমছমে পরিবেশ। হিয়া আশেপাশে তাকিয়ে হাল্কা নিশ্চুপ স্বরে বললো,
‘ আমরা এখানে কেন এসেছি নির্মল?’
প্রতি উওরে গাড়ির ওপর সোজা হয়ে শুয়ে বললো নির্মল,
‘ এমনি।’
‘ এমনি এমনি কেউ এই ছমছমে পরিবেশে আসে নাকি।’
‘ তা আসে না।’
‘ তাহলে?’
এবার নির্মল বেশ সিরিয়াস কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তোমায় খুন করতে?’
কথাটা নির্মল সিরিয়াস ভাবে বললেও হিয়া সিরিয়াস ভাবে নিলো না। স্বাভাবিক গলায় বললো,
‘ মেরে দিন না আমায়। তাহলে হয়তো আমি আপনি দুজনেই বেঁচে যাই।’
থমকে গেল নির্মল। এমন কথা আশা করি নি সে। নির্মল স্বাভাবিক গলায় বললো,
‘ তোমার ভয় করছে না।’
‘ ভয় করবে কেন?’
‘ এই যে আমি তোমায় মেরে ফেলার হুমকি দিলাম।’
হেঁসে ফেললো হিয়া। তারপর বললো,
‘ অন্যকেউ হলে হয়তো ভয় হতো নির্মল কিন্তু আপনি বলে পাচ্ছি না। কারনটা কি জানেন?’
হিয়ার কথা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসলো নির্মল। জিজ্ঞাসাসূচক চোখে তাকালো সে হিয়ার দিকে যার অর্থ ‘না আমি জানি না বলো তুমি’। হিয়াও নির্মলের চোখের ভাষার অর্থ বুঝতে পেরে শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,
‘ আমি আপনায় ভালোবাসি নির্মল আর ভালোবাসার মানুষের কাছে খুন হওয়াও একপ্রকার সুখ।’
হিয়ার কথা শুনে বাকরুদ্ধ যেন নির্মল। এই মেয়ে দিনে দিনে বড্ড বিপাকে ফেলছে তাকে। ভালোবাসা মগ্ন হওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত পাগলামি করা যে বড়ই দুশ্চিন্তার বিষয়। নির্মল নিশ্চুপ রইলো কিছুক্ষন তারপর নিশ্চুপ গলায় নীরব কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ এত ভালোবেসো না প্রিয়দর্শিনী পরে কিন্তু সামলানো দায় হয়ে যাবে।’
হিয়া শুনলো মুচকি হাসলো নীরবে। তারপর আপন ইচ্ছেতেই নিজের মাথাটাকে এলিয়ে দিলো নির্মলের বুকে। তারপর বললো,
‘ আমি সত্যি আপনায় খুব ভালোবেসে ফেলেছি নির্মল, প্লিজ কখনো ছেড়ে যাবেন না। আমি তবে সত্যি সত্যি শেষ হয়ে যাবো।’
প্রতি উওরে নির্মল নিজেও জড়িয়ে ধরলো হিয়াকে তারপর হিয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ যাবো না কোথায়ও তোমায় কথা দিলাম প্রিয়দর্শিনী।’
হিয়া খুশি হলো, ভীষণ খুশি হলো। তবে বললো না কিছু।’
সময় কাটলো কিছুক্ষন। হঠাৎই নির্মল তাঁর হাতে থাকা ঘড়িটা দেখলো। বারোটা বাজতে আর মাত্র দু’মিনিট বাকি। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো নির্মল, হিয়াকে সরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো তক্ষৎনাত। আচমকাই নির্মলের কান্ডে অবাক হলো হিয়া বললো,
‘ কি হলো নির্মল?’
প্রতি উওরে কোনো জবাব দিলো না নির্মল। গাড়ির দরজা খুলে সাথে করে আনা একটা ব্যাগ বের করলো তক্ষৎনাত। রাখলো হিয়ার সামনে। হিয়া অবাক হলো এটাকে সে খেয়াল করে নি। হিয়া অবাক হয়ে বললো,
‘ এটার ভিতর কি আছে নির্মল?’
হিয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাড়াতাড়ি ব্যাগটা খুলে বাক্সটা বের করলো নির্মল। এবার আর কিছু বললো না হিয়া নীরবে শুধু তাকিয়ে রইলো নির্মলের পানে। নির্মল বাক্স খুলে বের করলো একটা লাভ আকৃতির চকলেট কেক। কেক দেখে যেন আরো অবাক হলো হিয়া প্রশ্ন করলো,
‘ কেক কেন নির্মল আজ তো আমার বার্থডে নয়।’
প্রতি উওরে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো নির্মল। ঘড়ির কাঁটায় আর দশ সেকেন্ড পরই পুরোপুরি বারোটা বেজে যাবে।’
অতঃপর সময় শেষ হলো। ঘড়ির কাটাও পুরোপুরি বারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। নির্মল চাকুটা হাতে নিলো তারপর হিয়ার হাত ধরে কেকটা কাটতে কাটতে বললো,
‘ আজ তোমার বার্থডে নয় এটা ঠিক। আজ হলো আমাদের প্রথম দেখার এনিভারসারি। আজ তোমার আমার দেখা হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো। গতবছর এই দিনের অর্থাৎ এখন কার সময়ের এই রাত পেরিয়ে সকালেই তোমার সাথে আমার ভার্সিটি বসে দেখা হয়েছিল।’
হিয়া অবাক হলো খুব সে তো ভুলেই গিয়েছিল প্রায়। নির্মল কেকটা কেটে খাইয়ে দিলো হিয়াকে। হিয়াও খেলো। তারপর নির্মলকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,
‘ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।’
হাসলো নির্মল। বললো,
‘ কোনো ব্যাপার না কিছু ভুলের ক্ষমা আছে।’
____
আজ শুভ্রতার জন্মদিন। পুরো বাড়ি জুড়েই মোটামুটি একটা সড়গড় পড়ে গেছে তার জন্য।সকাল থেকেই পুরো ব্যস্ত বর্ষা। আজ শুভ্রতার বন্ধুবান্ধবরা সহ আরো অনেক আত্মীয় স্বজনেরা আসবে। আর তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থার করার জন্যই মুলত ব্যস্ত বর্ষা। কখনো এদিক তো কখনো ওদিক দৌড়ে চলেছে সে।’
অন্যদিকে,
সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে বর্ষার কান্ড কারখানা দেখছে শুভ্র। সাথে রাগে ফুঁসছে। ব্যস্ততার চক্করে শুভ্রের সাথেও ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না বর্ষা। কাল রাতে বাড়ি ফিরে শুভ্রের রুমে যায় নি বর্ষা। শুভ্রতার রুমেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। এজন্য অবশ্য শুভ্র ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে। একবার সুযোগ পেলেই সেই রাগটাকে পুরোপুরি দেখিয়ে ছাড়বে সে।’
‘ তাঁর বোকারানি বউটার বড্ড বেশি সাহস বেড়ে গেছে, এবার হয়তো সত্যি সত্যি ঔপন্যাসিকার কথা মতো তাঁকে অধিকার খাটাতেই হবে। না হলে তার এই বোকারানী বউ কখনোই তাকে বুঝবে না।’
ভাবলো শুভ্র।’
#চলবে….