ধূসর শ্রাবণ পর্ব-১৮+১৯

0
1121

#ধূসর শ্রাবণ
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১৮+১৯
________________

লন্ডনের বিখ্যাত এক স্কেটিং ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র আর বর্ষা। বর্ষার হাত পা কাঁপছে, সে ভাবে নি শুভ্র তাঁকে সত্যি সত্যি স্কেটিং করাতে নিয়ে আসবে। বর্ষা ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আপনি আমায় সত্যি সত্যি স্কেটিং করাবেন?’

প্রতি উওরে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো শুভ্র,

‘ তা নয় তো কি।’

‘ আমার ভয় লাগছে আমি এগুলো কোনোদিন করি নি।’

‘ ভয়ের কি আছে? আর কোনোদিন করো নি তো কি হয়েছে আজ করবে দেখবে ভালো লাগবে।’

‘ কিন্তু?’

‘ কোনো কিন্তু নয় চলো আমার সাথে,

এই বলে বর্ষার হাত ধরে ক্লাবের ভিতরে নিয়ে গেল শুভ্র। বিশাল এক জায়গায় জুড়ে একদম সমতল আর গোল সরুর মতো রাস্তা জুড়ে তৈরি হয়েছে এই স্কেটিং ক্লাব। ক্লাবের ভিতর দিয়ে খানিকটা হাঁটলেই গোল রেলিং ভেদ করেই স্কেটিং করার মাঠের মতো একটা জায়গাটা দেখা যায়। অনেকেই সেখানে স্কেটিং সু পড়ে ঘুরে চলছে চারদিকে। জিনিসটা দেখতে যতটা না সুন্দর তাঁর থেকেও বেশি কঠিন মনে হচ্ছে ওই সু পড়ে স্কেটিং করাটা। বর্ষার জিনিসটা দেখেই ভয়ে হাত পা কাঁপছে। হুট করেই বর্ষা শুভ্রের হাত চেপে ধরলো। তারপর ভয়ার্ত গলায় বললো,

‘ ওগুলো কি করতেই হবে, না করলে চলবে না?’

বর্ষার কাজে খানিকটা চমকালেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো শুভ্র,

‘ এত ভয় পাবার কিছু নেই দেখবে তোমার ভালো লাগবে।’

‘ যদি পড়ে যাই?’

‘ পড়বে না আমি আছি তো।’

শুভ্রের কথা শুনে বর্ষা তাকালো শুভ্রের মুখের দিকে। একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করলো তাঁকে। সত্যি তো শুভ্র থাকলে আর কি চাই তাঁর!’

.

রেলিং এর ভিতরের একদম কর্নারে দিকে ছোট্ট একটা বেঞ্চে বসে আছে বর্ষা। তার পাশেই শুভ্র বসে স্কেটিং সু পড়ছে। বর্ষা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। হুট করেই শুভ্র বলে উঠল,

‘ কি হলো তুমি সু’টা পড়ছো না কেন?’

হকচকিয়ে উঠল বর্ষা শুভ্রের কথা শুনে। আমতা আমতা করে বললো,

‘ হুম পড়ছি।’

এতটুকু বলে চটজলদি নিজের পায়ে স্কেটিং সু টা পড়তে লাগলো। কিন্তু ওটা কিভাবে পড়ে বর্ষা তো সেটাই জানে না। বর্ষা বেশ হতাশ হয়ে বললো,

‘ আমি কিভাবে পড়বো এটা?’

প্রতি উওরে শুভ্র শ্বাস ফেলে নিজের সু’টা সুন্দর মতো করে পড়ে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ আমার কাছে দেও?

বর্ষাও দিলো। শুভ্র সযত্নে পড়িয়ে দিল বর্ষাকে স্কেটিং সু। পুরোটা সময় বর্ষা শুধু দেখেই গেছে শুভ্রকে। শুভ্রের পড়ানো শেষ হতেই সে ছুট দিলো একটা। সাথে সাথে বর্ষা তাকালো শুভ্রের যাওয়ার পানে। কি সুন্দর এক মিনিটেই কাজটা করে ফেললো। কিন্তু সে কি করে স্কেটিং করবে। শুভ্র পুরো মাঠটায় একটা রাউন্ড মেরে চলে আসলো বর্ষার কাছে তারপর বললো,

‘ দেখলে কতটা সহজ এখন তুমি আসো দেখবে পারবে।’

কিন্তু বর্ষার সাহসে কুলাচ্ছে না। বর্ষা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বললো,

‘ আমি পারবো না আমার ভয় লাগছে।’

‘ আগে উঠে তো দাঁড়াও।’

শুভ্রের কথা শুনলো বর্ষা আস্তে আস্তে সামনের বেঞ্চটাকে ধরে উঠে দাঁড়াতে লাগলো সে। কিন্তু ব্যর্থ বর্ষা ভয়ের চোটে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছে না। বর্ষার কাজ দেখে শুভ্র এগিয়ে গেল বর্ষা কাছে তারপর হাত ধরে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড় করালো সে। বর্ষাও দাঁড়ালো কিন্তু তাঁর স্কেটিং সু জোড়া সায় দিলো না তাঁর সিলিপ কেটে পড়ে যেতে নিলো সে। সাথে সাথে শুভ্র বর্ষাকে নিজের দিকে টেনেনঝাপটে জড়িয়ে ধরলো বুকে। কাছাকাছি এলো দুজনেই বর্ষা তাকালো শুভ্রের দিকে তারপর বললো,

‘ আমি বলেছিলাম আমি পারবো না।’

প্রতি উওরে শুভ্রও বলে উঠল,

‘ আমিও তো বলেছিলাম আমি আছি।’

‘ আমার কোমড়টা ভেঙে যাবে শুভ্র?’

বর্ষার কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে বললো শুভ্র,

‘ কিচ্ছু হবে না, জাস্ট ট্রাই ইট।’

শুভ্রের কথা শুনে ভীষণ ভালো লাগা কাজ করলো বর্ষার ভিতর। এক বুক সাহস নিয়ে বললো সে,

‘ ঠিক আছে।’

উওরে হাসে শুভ্র তারপর আস্তে আস্তে বর্ষাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে সোজা করে দাঁড় করায়। বর্ষাও দাঁড়ায়। পড়ে যেতে নিলেই শুভ্রকে ঝাপটে ধরে সে। শুভ্রও ধরে এইরকম পর পর দু’বার হওয়ার পর তিনবারের বার সক্ষম হয় বর্ষা। বর্ষা দাঁড়াতেই বর্ষার হাত ধরে এগিয়ে যেতে নেয় শুভ্র। গোলকাকার বৃত্তের মতো এই সরু জায়গায় গোল হয়ে ঘুরতে থাকে শুভ্র বর্ষা। বেশ লাগছে বর্ষার শুভ্রের হাত ধরে স্কেটিং করতে। মাঝে দু’একবার পরেও যেতে নেয় সে কিন্তু শুভ্র সামলে নেয়।’

অতঃপর হাসাহাসি, লাফালাফি, আর ঘুরাঘুরি করতে করতে স্কেটিং ক্লাবে কাটলো তাদের পুরো একঘন্টা। পুরো একটা ঘন্টা যেন বর্ষার স্বপ্নের মতো কাটলো।’

রেলিং এর ভিতরের একদম কর্নারের সেই বেঞ্চটাতে চুপচাপ বসে আছে বর্ষা। ঠোঁটে রয়েছে তাঁর মিষ্টি হাসি, ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর ভিতর। এমন সময় হাতে দু’কাপ কফি নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো শুভ্র। শুভ্রকে দেখেই মুচকি হাসলো বর্ষা। শুভ্র বর্ষার পাশে বসে এককাপ কফি এগিয়ে দিল বর্ষাকে। বর্ষাও নিলো কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে বললো সে,

‘ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শুভ্র, আমায় এত সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য সাথে এত সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর জন্য।’

প্রতি উওরে তেমন কিছু বলে না শুভ্র শুধু মুচকি হাসে।’

শুভ্র বর্ষা দুপুরের লান্স সারে একটা বড়সড় ফাইভস্টার হোটেলে। বর্তমানে গাড়ি করে আবারো কোথাও একটা যাচ্ছে তাঁরা। ধীরে ধীরে ঠান্ডার প্রখরতা আরো বাড়ছে, রাস্তার কর্নার কর্নার জুড়ে ভেসে আসছে সাদা রঙের কিছু আবরন। বর্ষা তাকিয়ে রইলো সেই রাস্তার দিকে। হাতে মুজো, পায়ে মুজো, গলায় মাফলার পড়ে নিয়েছে মাত্রই। মাথায় একটা টুপিও পড়েছে সে। ছোট বেলা থেকেই ঠান্ডা জিনিসটা খুব একটা সহ্য করতে পারে না বর্ষা। যদিও হাতে পায়ে মুজো পড়ার পর এখন ঠান্ডাটা কম লাগছে। আর গাড়ির জানালা অফ থাকার কারণেও ঠান্ডাটা সেইভাবে গ্রাস করতে পারছে না তাঁকে। হঠাৎই প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলো বর্ষা,

‘ আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?’

খুব মনোযোগ দিয়েই গাড়ি ড্রাইভ করছিল শুভ্র। হুট করে বর্ষার এমন কথা শুনে বেশি না ভেবেই বলে উঠল সে,

‘ আরোহীদের বাড়ি।’

সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে যায় বর্ষার। অত্যাধিকহারে খুশি হয়ে বলে সে,

‘ সত্যি?’

উওরে মাথা নাড়িয়ে বলে শুভ্র,

‘ হুম।’

শুভ্রের কথা শুনে ফট করেই শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বর্ষা সাথে গালে চুমু একে বলে সে,

‘ আপনাকে এত্তো গুলা ধন্যবাদ জামাই।’

হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না শুভ্র। ঘটনাচক্রে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাঁর। এদিকে বর্ষা হুট করে কি করে ফেললো ভাবতেই এখন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তাঁর। অত্যাধিকহারে এক্সাইটিং হয়ে গালে কিস করে বসলো ভাবতেই ঠোঁটে কামড় দিলো সে। কোনো কিছু না ভেবেই জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে মিনমিন কন্ঠে বললো সে,

‘ এ বাবা এটা আমি কি করলাম?’

আর শুভ্র সেও পুরো শকট হয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো তাকালো না কোথাও না ডানে, না বামে স্থির রইলো তাঁর চোখ সামনের ওই সোজা রাস্তার দিকে।’

_____

বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই আরোহী এসে দরজা খুললো সামনেই তাঁর প্রান প্রিয় বেস্টু বর্ষাকে দেখে খুশি হয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে। বর্ষাও ধরলো। আরোহী জানতো আজ বর্ষারা আসবে কারন শুভ্রের সাথে তাঁর সকালেই কথা হয়েছিল। অতঃপর আরোহী বলে উঠল,

‘ কেমন আছিস তুই?’

‘ খুব ভালো তুই?’

‘ হুম ভালো এখন তোমরা চলে এসেছো আরো ভালো থাকবো।’ ( শুভ্রের দিকে তাকিয়ে)

এতটুকু বলে শুভ্র বর্ষাকে ভিতরে ঢুকালো আরোহী। ওঁরাও ঢুকলো এরই মাঝে ওদের দিকে দৌড়ে আসলো আরোহীর দু’বছরের ছেলে রুশো। বর্ষা খুশি হয়ে কোলে তুলে নিলো তাঁকে তারপর বললো,

‘ কেমন আছো তুমি?’

রুশো সেইভাবে এখনো কথা বলা শেখে নি তারপরও দু ওয়ার্ডে বললো,

‘ বানো।’

হাসলো বর্ষা। এরই মাঝে শুভ্র হাতে করে আনা একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিলো বর্ষার কাছে। তারপর হাল্কা নিচু স্বরে বললো,

‘ এটা দেও ওকে বার্থডে গিফট?

বর্ষা অবাক হলো পরক্ষণেই শুভ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো সে,

‘ থ্যাংক ইউ!’

হাসলো শুভ্র। বর্ষা শুভ্রের কাছ থেকে গিফট বক্সটা নিয়ে এগিয়ে দিল রুশোর হাতে তারপর বললো,

‘ এটা তোমার জন্য বার্থডে গিফট বার্থডের দিন তো আসতে পারি নি তাই আজ দিলাম।’

বর্ষার কান্ডে আরোহী বলে উঠল,

‘ এসবের কি দরকার ছিল?’

‘ অবশ্যই ছিল।’

রুশো নেমে পড়লো কোল থেকে গিফটটা নিলো গিয়ে দিলো মায়ের কাছে। আরোহী গিফটটা সাইডে রেখে বললো,

‘ তোরা বোস আমি এক্ষুনি আসছি।’

শুভ্র বর্ষাও বসলো সোফায়। পুরো রুমটায় চোখ বুলালো দুজনেই। বেশ সুন্দর আর পরিপাটি।’

সময় যাচ্ছিল। হাসাহাসি, হাল্কা খাওয়া দাওয়া আর গল্পস্বল্প করে কেটে গেল অনেকটা সময়। বিকেল পেরিয়ে প্রায় সন্ধ্যা হওয়ার কাছাকাছি। এখন শুভ্র বর্ষা বাড়ি ফিরবে। আরোহীর জামাই রাত করে বাড়ি আসায় আজ আর দেখা হলো না তার সাথে। আরোহী বলেছিল আজ রাতটা তাদের এইখানে কাটাতে কিন্তু কাল শুভ্রের অফিস আছে তাই আর থাকলো না। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র বর্ষা আরোহী আর আরোহীর কোলে তাঁর ছেলে রুশো। আরোহী কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বললো,

‘ এটলিস্ট ডিনারটা করে যান, দুলাভাই?’

উওরে শুকনো হাসলো শুভ্র আর বর্ষা বলে উঠল,

‘ অন্য আরেকদিন আর সামনের সপ্তাহে ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসা চাই কিন্তু?’

বর্ষার কথা শুনে আরোহীও খুশি মনে বললো,

‘ নিশ্চয়ই।’

অতঃপর আরোহীকে বিদায় জানিয়ে আবারো বেরিয়ে পড়লো শুভ্র বর্ষা। গাড়ি করে আবারো যাচ্ছে শুভ্র বর্ষা তবে এবার আর অন্য কোথাও নয় সোজা বাড়ি যাবে তাঁরা। আকাশ পথ বেয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি পড়ছে তুষার। চারপাশটা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে সাদা তুষারে। আজকের দিনটা খুব সুন্দর কাটলো বর্ষার সাথে শুভ্রেরও।’

পাক্কা এক ঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে অবশেষে বাড়ির সামনে আসলো শুভ্র বর্ষা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই। গাড়ি থেকে নামতেই নিজের বাড়িটা দেখেই খুশিতে গদগদ হলো বর্ষা। কারন তাদের বাড়ির পুরো জায়গাটা বরফে ঢেকে গেছে। মুগ্ধ হলো বর্ষা প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য দেখে। শুভ্র এগিয়ে আসলো বর্ষার কাছে তারপর বললো,

‘ চলো?’

‘ হুম চলুন।’

বর্ষার কথা শুনে শুভ্রও এগিয়ে গেল আগে। হঠাৎই গায়ে কিছুর আঘাত লাগতেই পিছন ঘুরে তাকালো শুভ্র। সাথে সাথে বর্ষা আবারো বরফের গোলা তৈরি করে মারলো শুভ্রের গায়ে। অবাক হলো শুভ্র সাথে প্রচন্ড রেগে বললো,

‘ হোয়াট দা হেল এটা কি করলে তুমি?’

সাথে সাথে ঘাবড়ে গেল বর্ষা। ভেবেছিল শুভ্রও হয়তো তার মতো বরফ নিয়ে মেতে উঠবে কিন্তু না। বর্ষা মাথা নিচু করে বললো,

‘ সরি?’

‘ সরি হোয়াট সরি তোমাকে তো আমি?’

বলেই নিচ থেকে বরফ উঠিয়ে সেও মারলো বর্ষার গায়ে সাথে সাথে চমকে উঠলো বর্ষা। শুভ্রের দিকে তাকালেই শুভ্র হাসলো। শুভ্রের কান্ডে বর্ষা খুশি হয়ে বললো,

‘ আপনাকে তো আমি?’

বলেই বরফ নিয়ে এগিয়ে গেল বর্ষা শুভ্রের দিকে। বর্ষার কাজ দেখে শুভ্র ছুট লাগালো। তারপর শুধু হলো শুভ্র বর্ষার ছোটাছুটি। পুরো বাড়ি জুুড়ে বরফ নিয়ে লাফালাফি করতে লাগলো দুজন। যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা।’

হঠাৎই পায়ে সিলিপ কেটে শুভ্রের গায়ের ওপর পড়ে যায় বর্ষা। আচমকা এমনটা হওয়াতে শুভ্রও তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় নিচের বরফের বুকে। দুজনেই তাকিয়ে রয় দুজনের দিকে। দুজনের চোখই কিছু একটা বলছে,

‘ তবে কি এবার ভালোবাসা হবে শুভ্র বর্ষার মাঝে?’ ঘটবে কি নতুনত্ব কিছু?’ নাকি আবারো আসবে কোনো ধোঁয়াশায় ঘেরা ধূসরত্ব।’

_____

রাতের জোৎসা ভরা আলোতে জানালার দু’দিকে থাকা সাদা পর্দাদুটো উড়ছে বারংবার। জানালা দিয়ে রাতের ওই জোৎসা ভরা আকাশের বুকে থাকা চাঁদমামাটাকে দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট, তাঁরাও জ্বলছে তাঁর চারদিক দিয়ে। বাতাসের তীব্রতায় টেবিল জুড়ে থাকা কিছু শুঁকনো পৃষ্ঠারা উড়ছে কিছুক্ষন পর পর। বাহিরে থাকা আলোকিত ল্যামপোস্টটাও নির্ঘুম কাটাচ্ছে খুব, গাছের পাতারাও নড়েচড়ে উঠছে হঠাৎ আনমনে,নিরালায়। প্রকৃতির এই মুগ্ধতা বর্তমানে প্রকৃতির মাঝেই রয়েছে অটুট। কেউ দেখছে না। কারন সবাই যে এখন গভীর ঘুমে। সবার সাথে সাথে আর একজন মগ্ন তখন ঘুমে। আর সে হলো হিয়া।’

নিজের রুমে খাটের পাশ দিয়ে থাকা টেবিলটার কাছে ডাইরির বুকে মাথা দিয়ে চোখ বুুঝে ঘুমিয়ে আছে হিয়া নীরবে। গভীর স্বপ্ন দেখছে সে। এমনই এক স্বপ্ন যে স্বপ্ন পূরণ করা প্রায় দায় তাঁর জন্য। এমন সময় মোবাইলের মেসেজ অপশনটা বেজে উঠলো কেউ লিখলো,

‘ বেশি ভেবো না প্রিয়দর্শনী তুমি আর তোমার স্বপ্ন দুটোকেই আমি আমার করে নিবো।’

#চলবে……

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১৯
________________

সরু চোখে হিমশীতল এই ঠান্ডার মৌসুমের মাঝে তাকিয়ে আছে বর্ষা শুভ্রের চোখের দিকে। শুভ্রও তাকিয়ে আছে। হঠাৎই নিজের হুস আসতেই শুভ্রের থেকে চোখ সরিয়ে ফলে বর্ষা। তারপর আস্তে আস্তে শুভ্রের উপর থেকে উঠে পড়লো সে। আনমনেই মুচকি হেঁসে বললো,

‘ সরি।’

এতটুকু বলে তক্ষৎনাত দৌড়ে বাড়ির ভিতর চলে যায় বর্ষা। লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে গেছে সে। বর্ষার কান্ডে হাসলো শুভ্র। শুয়ে পড়লো সে বরফের মাঝে তারপর চোখ বন্ধ করে আকাশ পানে তাকিয়ে কাউকে উদ্দেশ্য করে বললো শুভ্র,

‘ থ্যাংক ইউ ঔপন্যাসিকা, হয়তো তুমি ঠিকই বলে ছিলে ভালো আমি এই বোকারানির সাথেই থাকবো। আর ভালোবাসাটা?’

ভেবেই চোখ বন্ধ করে ফেললো শুভ্র। দু’হাত জড়িয়ে ধরলো বুকে। নিমিষেই বর্ষার হাসি মাখা মুখটা ভেসে আসলো তাঁর সামনে। চোখ খুললো আবারো জোরে নিশ্বাস ফেললো আনমনে।’

‘ আজ দিনটা যেন বেশ ভালো কাটলো তাঁর।’

_____

নিজের রুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো বর্ষা। নিজের গালদুটোকে দু হাতে আলতোভাবে চেপে ধরলো সে। পুরো গরম হয়ে গেছে। লজ্জা পুরো লাল হয়ে যাওয়ার অবস্থা তাঁর। বর্ষা আয়নার দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ এতটা লজ্জা পাওয়ারও বা কি আছে?’

হাসলো আনমনে।’

মাঝপথে কেটে যায় দু’দিন।

ঘড়ির কাঁটারা টিক টিক শব্দ করে চলছে বেশ। রাত চলছে মাঝামাঝি সময়ে।’

কাল শুভ্রের জন্মদিন। তাই এই রাতের বেলাতেই পুরো বাড়িটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে বর্ষা। শুভ্রকে সারপ্রাইজ দিতে চায় সে। শুভ্রের পছন্দ মতো সব খাবারি বানিয়েছে সাথে। আজ মনটা খুবই ভালো বর্ষার। বাড়ির জুড়ে গুনগুন করে গান গাইছে সাথে নিজেকে তৈরি করছে সে। আজ মন মতো সাজবে। গায়ে বাহারি রঙের শাড়ি পড়েছে সে। চুল দিয়েছে খুলে, কানে ঝুমকো, এক হাতে বাহারি রঙের চুড়ি, আর অন্য হাতে ঘড়ি, চোখে কাজল, আইলাইনার, মাশকারা সাথে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়ে খুব সুন্দর করে নিজেকে সাজিয়েছে সে। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় রাত এগারোটা ছাড়িয়ে গেছে। আর এক ঘন্টার পরেই কালকের নতুন সময় শুরু হবে। বর্ষা মনে মনে প্রার্থনা করছে আজ অন্তত শুভ্র টাইম মতো বাড়ি আসুক। যেন ঠিক রাত বারোটার সময়তেই শুভ্রকে সারপ্রাইজটা দিতে পারে বর্ষা।’

বর্ষার ভাবনাগুলোর মাঝেই বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠল উচ্চস্বরে। সাথে সাথে হাল্কা চমকে উঠলো বর্ষা। আজ বেশি এক্সাইটিং না হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো বর্ষা তারপর আয়নায় একপলক দেখে শাড়ির কুঁচি ধরে মনে মনে ‘দরজা খুলে যেন শুভ্রকেই দেখে এমন চিন্তা ভাবনা নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চললো বর্ষা।”

দরজা পর্যন্ত আসতেই আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো। বর্ষা চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো,

‘ প্লিজ দরজার ওপাশে থাকা ব্যক্তিটি যেন শুভ্রই হয়। মনে মনে এমন প্রার্থনা করে জোরে শ্বাস ফেলে চোখ খুলে আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো দরজা। দরজা খুলে সত্যি সত্যি শুভ্রকে দেখে প্রচন্ড লেভেলের খুশি হয় সে। আর শুভ্র এত রাতে বর্ষার এমন সাজসজ্জার চেহারা দেখে বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ এত রাতে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো আর দরজা খুলতে এত টাইম নিচ্ছিলে কেন?’

প্রতি উওরে বর্ষা বেশি কিছু না ভেবেই বললো,

‘ এমনি!’

‘ এমনি এমনি দরজা খুলতে দেরি হচ্ছিল?’

শুভ্রের কথা শুনে হাল্কা খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো বর্ষা,

‘ ওই আর কি আমায় ভালো লাগছে দেখতে?’

বর্ষার কথা শুনে আবারো পিছন ঘুরে তাকিয়ে বর্ষার দিকে তাকালো শুভ্র। আজ বেশ অন্যরকমই লাগছে বর্ষাকে। শুভ্র নিজের পায়ের জুতোটা খুলতে খুলতে বললো,

‘ হুম সুন্দর লাগছে কিন্তু এতরাতে সেজেছো কেন?’

শুভ্রের কথা শুনে খুশি হয় বর্ষা তারপর বলে,

‘ এমনি।’

‘ এটাও এমনি?’

‘ হুম।’

ততক্ষণে শুভ্র জুতো খুলে তাকায় বাড়ির ভিতর বেশ পরিপাটি আর সাচ্ছন্দ্য লাগছে বাড়িটাকে। শুভ্র বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,

‘ আজ কি স্পেশাল কিছু আছে বর্ষা?’

‘ হুম আছে তো,

বর্ষার কথা শুনে বেশ অবাক চোখেই তাকায় শুভ্র বর্ষার দিকে তারপর বলে,

‘ কি সেটা?’

উওরে এক্সাইটিং হয়ে বলল বর্ষা,

‘ আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে শুভ্র তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন হাতে বেশি সময় নেই।’

‘ কি সারপ্রাইজ?’

শুভ্রের কথা শুনে দেয়াল জুড়ে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে বর্ষা,

‘ এত কিছু বলার সময় নেই আগে গিয়ে ফ্রেশ হন তারপর বলবো।’

বলেই শুভ্রকে ঠেলেঠুলে রুমে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয় বর্ষা। বর্ষার কাজে হতাশ শুভ্র, কিছু যে বলবে তারও সুযোগ দেয় নি বর্ষা। শুভ্র ওয়াশরুমে ঢুকে বলে,

‘ আগে আমায় বলবে তো আজ কি?’

উওরে ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে বলে বর্ষা,

‘ বলবো বলছি তো আগে আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর।’

‘ কিন্তু বর্ষা?’

‘ প্লিজ শুভ্র আর প্রশ্ন করবেন না।’

হতাশ শুভ্র। আর কিছু বললো না বিনিময়ে সে। ওয়াশরুমের দরজা আঁটকালো নিমিষেই।’

ঘড়ির কাঁটায় এগারোটা চল্লিশ। রুমে মধ্যে পায়চারি করছে বর্ষা। সময় মতো সবটা করতে পারবে কি না ভেবেই টেনশন হচ্ছে তাঁর। এরই মধ্যে টাওয়াল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় শুভ্র। দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই পিছন ঘুরে তাকায় বর্ষা। শুভ্রের দিকে একপলক তাকিয়েই চটজলদি চোখ সরিয়ে ফেলে বর্ষা। তারপর বলে,

‘ বিছানার ওপর আপনার জামাকাপড় রেখেছি আমি ওগুলো পড়ে তাড়াতাড়ি চলে আসুন নিচে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি শুভ্র, প্লিজ দেরি করবেন না।’

এতটুকু বলে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায় বর্ষা। বর্ষার কাজে আরো নিরাশ শুভ্র। সে বুঝতে পারছে না বর্ষা একজেকলি করতে কি চাইছে। অতঃপর বেশি ভাবলো না শুভ্র চটজলদি বর্ষার রাখা কালো শার্ট প্যান্ট পড়ে নিয়ে চুল মুছতে মুছতে দরজা খুলে বের হলো শুভ্র।’

ঘড়ির কাঁটায় এগারোটা পঞ্চান্ন। এবার বেশ টেনশন হচ্ছে বর্ষার। শুভ্র এখনো কেন আসছে না। টাইম মতো না হলে কি করে হবে সব। এরই মাঝে শুভ্র নিচে নেমে এলো শুভ্রকে দেখেই খুশি হয় বর্ষা চটজলদি এগিয়ে যায় সে শুভ্রের কাছে। তারপর ওর হাত ধরে বললো বর্ষা,

‘ আপনি চলে এসেছেন আর একটু আগে আসতে পারলেন না যাই হোক চলুন আমার সাথে।’

এই বলে শুভ্রের হাত ধরেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে বর্ষা। বর্ষার কাজে শুভ্র বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বর্ষা? আমি কিন্তু তোমার কাজ কর্ম কিছু বুঝতে পারছি না।’

‘ আপনাকে কিছু বুঝতে হবে না আপনি শুধু চলুন আমার সাথে।’

বলেই নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যায় বর্ষা ছাঁদের উদ্দেশ্যে। হাতে আর মাত্র চার মিনিট আছে।’

বর্ষার এমন উত্তেজিত হওয়ার ভাব দেখে বেশ বিস্মিত হয় শুভ্র তবে কিছু বলে না। কারন সে বুঝতে পেরেছে এখন কিছু বললেও বর্ষা কিছু বলবে না তাঁকে।’

বর্ষা চটজলদি শুভ্রকে নিয়ে এসে দাঁড় করায় ছাঁদে। খুব বেশি উঁচুতে নয় ছাঁদটা অল্প কিছু সিড়ি পার হয়েই ছাঁদ। শুভ্রও বেশ বিস্মিত হয়ে তাকায় ছাঁদে পুরো ছাঁদটাই অন্ধকারে টুইটুম্বর। যা দেখে বলে শুভ্র,

‘ তুমি আমায় এখানে কেন নিয়ে আসলে বর্ষা?’

প্রতি উওরে শুভ্রের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে উঠল,

‘ হুস?’

সঙ্গে সঙ্গে থমকে যায় শুভ্র। সে ভাবে নি বর্ষা এমন কিছু করবে। শুভ্রের চোখের দিকে তাকিয়েই পিছন ঘুরে আসে বর্ষা শুভ্রের থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়ায় সে। শুভ্র শুধু নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রয় বর্ষার পানে। অল্প কিছুক্ষন পর বর্ষা আবারো তাকায় ঘড়ির দিকে তারপর জোরে নিশ্বাস ফেলে শুভ্রের দিকে তাকাতে তাকাতে আর পিছন যেতে বলে,

‘ 5, 4, 3

বর্ষার কাজে আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় শুভ্র বর্ষার পানে। এরই মাঝে বর্ষা মুখে হাসি নিয়ে পিছন যেতে যেতে দু’হাত অপসারিত করে জোরপ চেঁচিয়ে বলে উঠল,

‘ 2, 1, 0 হ্যাপি বার্থডে শুভ্র।’

সঙ্গে সঙ্গে পুরো ছাঁদ আলোতে ভরে যায়। আকাশ পথ বেয়ে জ্বলে উঠে আলোরা। আতসবাজিরা জ্বলে ওঠে তক্ষৎনাত। সাথে আকাশ পথে বড় বড় ইংরেজি অক্ষরে লেখা ওঠে হ্যাপি বার্থডে শুভ্র।’

পুরো ছাঁদটাই লাইটিং করা সাথে লাভের বেলুন দিয়ে সাজানো। মাঝখানে একটা টেবিল, তারওপর ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো। তাঁর মাঝেই মুখে একগাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা।’

শুভ্র জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে থাকে পুরো জায়গাটার দিকে। সে তো ভুলেই গিয়েছিল আজ তাঁর জন্মদিন। শুভ্র জাস্ট নির্বিকার চোখে তাকিয়ে রয় বর্ষার মুখের দিকে। সে ভাবে নি বর্ষা তাকে এমন কোনো সারপ্রাইজ দিবে। শুভ্র একটু একটু করে এগিয়ে যায় বর্ষার পানে বর্ষাও মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে রয় শুভ্রের দিকে। পরিশেষে টাইম টু টাইম সবটা করতে পেরেছে সে। বর্ষা শুভ্রের দিকে এগিয়ে এসে বলে,

‘ হেপি বার্থডে জামাই শুভ জন্মদিন।’

শুভ্র খুশি হয়, ভীষণ খুশি হয়। হুট করেই জড়িয়ে ধরে সে বর্ষাকে তারপর বলে,

‘ থ্যাংক ইউ।’

শুভ্রের কাজে প্রথমে চমকে উঠলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় বর্ষা। কিছু বলে না শুধু মুচকি হাসে।’

আলোকিত ছাঁদ, লাইটিং করা দেয়াল, বেলুনে ভর্তি আশপাশ সাথে রঙিন করে সাজানো এই টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র বর্ষা। তাদের সামনেই রয়েছে বিশাল বড় একটা কেক। যেটা নিজ হাতে তৈরি করেছে বর্ষা। হঠাৎই টেবিলের নিচ থেকে একটা গিফট বক্স বের করে মুচকি হেঁসে এগিয়ে দিল বর্ষা শুভ্রের দিকে তারপর বললো,

‘ এটা আপনার জন্য, অনেক খুঁজে বের করেছি। দেখে নিবেন পরে, স্পেশাল কিছু আছে আপনার জন্য।’

শুভ্রও নেয় বক্সটা। খুলতে নিলেই বলে বর্ষা,

‘ এখন খোলা লাগবে না আপনি পরে দেখে নিয়েন।’

অবাক হয় শুভ্র। তবে বেশি না ভেবে বলে,

‘ ঠিক আছে।’

অতঃপর কেক কাটে দু’জনে। সাথে খুব সুন্দর ভাবে সেলিব্রেট করে শুভ্রের জন্মদিন। হাল্কা শীত শীত ভাব চারপাশে। আকাশটা জ্বল জ্বল করছে খুব, সাথে সাথে জ্বল জ্বল করছে শুভ্র বর্ষার মুখ।

‘ এবার তবে ভালোবাসাটা হয়েই যাবে।’

আচমকাই শুভ্রের গালে কেক লাগিয়ে দেয় বর্ষা। বর্ষার এমন কাজে চমকে যায় শুভ্র। পরক্ষণেই খুশি হয়ে সেও লাগিয়ে দিতে নেয় বর্ষাকে। শুভ্রের কাজে ছুট লাগায় বর্ষা। তারপর শুরু হয় দুজনের মাঝে ছুটাছুটি।’

____

‘ খুশিরা আজ উড়ছে আকাশ বেয়ে,
ছুটছে হিমশীতল মেশানো পাহাড়ের মাঝ দিয়ে
ভালোবাসারা ছড়িয়ে আছে আজ ধূসর রঙের মাঠ জুড়ে।’

‘ ছুটছে জোড়া দুই পাখি নিজেদের অজান্তেই ভালোবাসার রঙিন পাখনা দিয়ে।’
তবে কি ধূসরেরা নিভবে আজ
শ্রাবণের পথ দিয়ে?’

অজানা আনমনেই কথাগুলো লিখলো হিয়া ডাইরির পৃষ্ঠা জুড়ে। খোলা জমিনের মাঝে উঁচু এক গাছের নিচে বসে আছে হিয়া। চারপাশ দিয়ে ধেই ধেই করে আসছে বাতাস। বাতাসে হিয়ার চুল উড়ছে হঠাৎ হঠাৎ আনমনে অনায়াসে। মাথার উপর দিয়ে আচমকাই উড়ে গেল বিশাল এক প্লেন। হিয়া তাকালো সেদিকে। আনমনেই হাসলো নিজের অজান্তে। মাথার ওপর থাকা গাছের পাতারা ছিঁড়ে এসে পড়লো তার গায়ে। হিয়া তাকালো সেই গা ঘেসে পড়ে যাওয়া শুঁকনো পাতাটার দিকে। তারপর আনমনেই গালে হাত দিয়ে বললো,

‘ ভালোবাসা সত্যি খুব সুন্দর তাই না, মিষ্টি পাতা।’

মুচকি হাসলো নীরবে। গালে হাত দিয়েই তাকালো হিয়া আকাশের পানে। গোধূলি বিকেল তখন, আকাশটা বেশ সুন্দর আজ। বিশাল সবুজে ঘেরা মাঠের মাঝখানে একটা সুন্দর সবুজে ঘেরা গাছের নিচে বসে ছিল হিয়া। আজ হুট করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এখানে এসে বসে সে। কিন্তু এখন তাঁকে যেতে হবে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। হিয়া দাঁড়ালো তক্ষৎনাত হাতে থাকা ডাইরিটা সাথে ব্যাগটা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সে। হঠাৎই ডাইরির ভিতর থেকে নিচে পড়লো একটা ছেড়া পৃষ্ঠা যেখানে লেখা ছিল,

‘ ধূসর শ্রাবণ!’

বাতাসের তীব্র ছোঁয়ায় হুট করেই কোথাও একটা উড়ে গেল সেটা। কেউ দেখলো না,হয়তো কেউ দেখবেও না। মিলিয়ে যাবে আজ সবুজের মাঝে, ঘাসেদের বুক চিঁড়ে অজানা কোনো পথে অবহেলায় অবলিত আকাঙ্খা নিয়ে,

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে