#ধূসর শ্রাবণ
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-০৮+০৯
________________
অফিস থেকে বাসায় ঢুকতে গিয়ে আচমকা নিচে পড়ে থাকা পানির সাথে পা পিছলে ধারাম করে নিচে ফ্লোরে পড়ে গেল শুভ্র। ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো সে। পরক্ষনেই কিছুক্ষন পর চোখ খুলে আশেপাশে তাকাতেই পুরো রুম জুড়ে পানি দেখে চোখ মুখ শক্ত করে চেঁচিয়ে বললো সে,
‘ বররররর্ষা,
সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর থেকে হাতে খুন্তি নিয়ে দৌড়ে আসতে লাগলো সে শুভ্রের সামনে। তারপর যা হওয়ার তাই হলো পা পিছলে ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে বর্ষা গিয়ে পড়লো সোজা শুভ্রের গায়ের ওপর। এবার যেন শুভ্রের রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেছে। একই তো নিচে পড়ে গিয়ে কোমড়ে অসম্ভব ব্যাথা পেয়েছে তাঁর ওপর এই বর্ষা এসে পড়াতে যেটুকু বেঁচে ছিল তাও শেষ হয়ে গেল। মিট মিট চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষা শুভ্রের দিকে। শুভ্রের থোবড়া দেখেই বুঝতে পেরেছে বর্ষা শুভ্র ভয়ংকরভাবে রেগে গেছে। বর্ষা মিটমিট চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে শুকনো হেঁসে বললো,
‘ আমায় ডেকেছিলেন শুভ্র?’
সাথে সাথে চোখ গরম করে বললো সে,
‘ এসব কি করেছো পুরো রুমে এতো পানি আসলো কোথা থেকে?’
উওরে ধীরে ধীরে শুভ্রের ওপর থেকে উঠতে উঠতে বললো,
‘ আসলে ঘরটা মুছতে নিয়েছিলাম ভেবেছিলাম আপনি আসার আগে হয়ে যাবে।’
‘ এটাকে ঘর মোছা বলে? পুরো রুমে তো শুধু পানিই দেখছি।’
উওরে শুধু দাঁত কেলানি হাসি দিলো বর্ষা। বর্ষার হাসি দেখে আরো রেগে গিয়ে বললো শুভ্র,
‘ হাসছো কেন? একদম হাসবে না। একই তো পড়ে গিয়ে আমার কোমড়ে তেরোটা বাজিয়ে দিছো।’
শুভ্রের কথা শুনে শুঁকনো হাসি থামিয়ে মিনমিনে কন্ঠ নিয়ে বললো বর্ষা,
‘ সরি আসলে আমি বু..
বর্ষা আর কিছু বলার আগেই শুভ্র থামিয়ে দিয়ে কাট কাট গলায় বললো,
‘ হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না তোমায়!’
এতটুকু বলে নিজের হাত বর্ষার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ ধরো আমায় তোমার জন্য আমার কোমড় তো শেষ।’
শুভ্রের কথা শুনে চটজলদি নিজের হাত থেকে খুন্তিটাকে সরিয়ে বললো বর্ষা,
‘ হুম।’
এতটুকু বলে তাড়াতাড়ি শুভ্রের হাত ধরে উঠালো বর্ষা। পায় আর কোমড়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে শুভ্র। বর্ষা ধীরে ধীরে শুভ্রকে ধরে বসিয়ে দিলো সোফাতে। শুভ্রের অবস্থা থেকে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো বর্ষা,
‘ আপনি এখানে বসুন আমি আপনার জন্য তেল নিয়ে আসি?’
বর্ষার কথা শুনে শুভ্র ভ্রু-কুচকে বলে উঠল,
‘ তেল দিয়ে কি হবে?’
‘ মালিশ করে দিবো দেখবেন তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।’
‘ ব্যাথা দিয়ে এখন মলম লাগানো হচ্ছে।’
শুভ্রের কথা শুনে বর্ষা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললো,
‘ আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি।’
‘ হুম ঠিক আছে ঠিক আছে যাও এখন।’
উওরে বর্ষাও পাল্টা কিছু না বলে চলে যায় রান্না ঘরের দিকে। তাঁর রান্না প্রায় শেষ। এবার সর্বপ্রথম শুভ্রের জন্য তেল গরম করে আনবে বর্ষা। এমন ভাবনা নিয়েই এগিয়ে চললো সে।’
.
সোফায় চুপচাপ বসে আছে শুভ্র। কোমড়ে খুব বেশি ব্যাথা না পেলেও পায়ে অসম্ভবভাবে ব্যাথা পেয়েছে সে। যেটা শুরুতে বুঝতে না পারলেও এখন বেশ বুঝতে পারছে। শুভ্রের রাগ হচ্ছে এই মেয়েটা তাঁকে আঘাত করতেই থাকে। প্লেনে বসে দেওয়া হাতের আঘাতটা পুরোপুরি যাওয়ার আগেই পায় আর কোমড়ে ব্যাথা পেল। শুভ্র বুঝতে পারে না এইরকম আঘাত তাঁকে আরো কতভাবে পেতে হবে। শুভ্রের মনে আছে ছোট বেলায় বর্ষা তার ঘাড়ে খুব জোড়ালোভাবে কামড় দিয়েছিল যদিও সেখানে তাঁর দোষটাই বেশি ছিল। বর্ষা ছোট বেলা থেকেই চকলেট খেতে পছন্দ করে খুব চকলেটের ভাগ কখনই দিতে রাজি নয় সে। তো একবার শুভ্র বর্ষার কাছ থেকে জোরপূর্বক তাঁর চকলেট নিয়েছিল যার শাস্তিস্বরূপ তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিয়েছিল বর্ষা। যদিও তার দাগটা এখন বেশি গভীরভাবে না থাকলেও অল্প স্বল্প আছে। সেই থেকেই এই বর্ষার নামক মেয়েটাকে অপছন্দ করে শুভ্র। যদিও এখন সে বুঝে ছোট বেলার কাহিনীতে তারই দোষ ছিল।’
হঠাৎই পায়ে টান অনুভব করাতে নিজের ভাবনা দেখে বেরিয়ে আসলো শুভ্র। তাকালো সে বর্ষার দিকে, চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ, কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ছে তার, চুলগুলো উঁচু করে খোঁপা করে কাঁকড়া ব্যান্ট দেওয়া কপালের সামনে ছোট ছোট চুলগুলো পড়ে আছে এলেমেলোভাবে। পরনের এস কালার টপস আর ব্লাক জিন্স। এলেমেলোভাবে থাকলেও কেমন বউ বউ লাগছে শুভ্রের কাছে বর্ষাকে। বর্ষা শুভ্রের পাটাকে টি-টেবিলের ওপর রেখে শুভ্রের প্যান্টটা পায়ের দিকে থেকে উঁচকিয়ে পায়ে হাত দিয়ে বললো,
‘ কোথায় ব্যাথা লাগছে আপনার?’
বর্ষার হাতের স্পর্শ পেতেই যেন কারেন্টে শকট লাগার মতো আঁতকে উঠলো শুভ্র। তক্ষৎনাত বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ হুম..
‘ কোথায় ব্যাথা লাগছে আপনার?’
বলেই শুভ্রের পায়ের উপরে অংশ হাল্কা চাপ দিতে লাগলো সে। শুধুতে কিছু অনুভব না হলেও পরক্ষণেই খুব কঠিনভাবে পায়ে ব্যাথা অনুভব হওয়াতে মুখ থেকে কিছু অস্পষ্টনীয় শব্দ বের হলো শুভ্রের সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সরি সরি।’
এতটুকু বলে চটজলদি তাঁর আনা গরম তেল হাতের তালুতে নিয়ে মালিশ করে দিতে লাগলো বর্ষা। বর্ষার কাজে বেশ অবাক হয়েই বললো শুভ্র,
‘ এটা কি করছো তুমি আমার লাগছে বর্ষা?’
‘ কিছু হবে না দেখবেন এক্ষুণি সেরে যাবে।’
প্রতিউওরে কিছু বলতে পারলো না শুভ্র। চুপচাপ ঠোঁট চেপে ব্যাথাটা হজম করতে লাগলো সে।’
অন্যদিকে বর্ষাও খুব আলতোভাবে তাঁর নরম হাত দিয়ে তেল মালিশ করে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো শুভ্রের। এই কাজটা শেষ করে চটজলদি ঘরটা পরিষ্কার করতে হবে তাঁকে। ভুলটা আসলে তারই ছিল নিজের অসাবধানতার জন্যই তখন পায়ে বেজে পানির বালতিটা পড়ে গিয়েছিল নিচে। মুছতেও নিয়ে ছিল কিন্তু রান্না চুলায় থাকায় দৌড়ে সেদিকে যায় সে৷ কিন্তু এরইমধ্যে যে শুভ্র অফিস থেকে চলে আসবে বুঝতে পারে নি বর্ষা। বর্ষাও জানে সে জেনে হোক বা না জেনে বার শুভ্রকে আঘাত করতেই থাকে। সে যতই সাবধানতার সাথে কাজ করুক না কেন তাঁরপরপ শুভ্র আঘাত পেয়েই যায়। তপ্ত নিশ্বাস ফেললো বর্ষা।’
সন্ধ্যা_৭ঃ০০টা….
বিছানায় চুপচাপ বসে আছে শুভ্র। পায়ের ব্যাথা আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে তাঁর। আইথিংক একদিন বেড রেস্ট করলেই কমে যাবে। কোমড়েও ব্যাথা আছে অল্প। এমন সময় শুভ্রের সামনে এককাপ কফি এগিয়ে দিয়ে বললো বর্ষা,
‘ আপনার কফি?’
উওরে শুভ্রও বেশি কিছু না ভেবে কফির কাপটা হাতে নিয়ে মুখে দিতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে মুখটা পুড়ে যেতে নিলো শুভ্রের। শুভ্রের কাজে বর্ষা কিছুটা আতংকিত কন্ঠে বললো,
‘ ওটা গরম অনেক আস্তে খান।’
বর্ষার কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
‘ কথাটা কি আর একটু আগে বলা যেত না অপ্রিয় বালিকা।’
____
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে অনেক আগেই মুক্ত আকাশ পানের দিকে তাকিয়ে মুক্ত মন নিয়ে এগিয়ে চলছে হিয়া। আজ মনটা খুবই ভালো তাঁর মুলত কুরিয়ার সার্ভিসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে সে। কিছু গিফট এসেছে নাকি তাঁর নামে। এরই মাঝে হঠাৎই চোখ গেল হিয়ার তাঁর থেকে কয়েক কদম দূরে কিছু বাচ্চা কাচ্চা আর একটা সুদর্শন ছেলের দিকে। ছেলেটার ফেস দেখে আরো বেশি অবাক হলো হিয়া কারন ছেলেটি আর কেউ নয় নির্মল। এই প্রথম হয়তো নির্মলের সাথে এত গুলো বাচ্চা কাচ্চা দেখছে হিয়া। কৌতুহলী এগিয়ে গেল সে সেদিকেই। একটা ছয়ছোট্ট আইসক্রিমের দোকানের সামনে ছয় সাতটা ছেলেমেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্মল। আজ প্রায় দু’দিন পর নির্মলকে দেখলো হিয়া। সেদিন রাতের পর আজই কেবল বের হয়েছে হিয়া বাসা থেকে। অকারণেই ভার্সিটি যাওয়া হয় নি তার। হিয়া তাকালো নির্মলের মুখের দিকে বেশ হাসি খুশিভাবেই বাচ্চাগুলোর সাথে কথা বলছে নির্মল। এই মুহূর্তে নির্মলকে দেখে কেউ বলবে না এই ছেলেটা মানুষ খুন করতে পারে। হুট করেই আবারো নির্মলের বলা সেই কথাটা মাথায় বেজে উঠল হিয়ার যেখানে নির্মল বলে ছিল,
‘ আমায় কি একবার ভালোবাসা যায় না প্রিয়দর্শিনী?’ আমি কি সত্যি খুব খারাপ?’
কথাটা মাথায় আসতেই আবারো তাকালো হিয়া নির্মলের মুখের দিকে। আনমনেই বললো সে,
‘ আপনি মানুষটা আসলেই খারাপ নন নির্মল কিন্তু মাঝে মাঝে একটু বেমানান হয়ে যান এই আর কি?’
হুট করেই আকাশটা পাল্টে গেল। পরিষ্কার আকাশটায় ধেয়ে আসলো একরাশ ধূসরতা, অন্ধকার নামক ধোঁয়াশারা ঘিরে ধরলো হিয়ার আশপাশের আনাচে কানাচেটা। আচমকা মাথার উপরে থাকা আকাশটার এমন আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে চোখ মুখ কুঁচকে এলো হিয়ার। এখন যদি বৃষ্টি নামে আর সেই বৃষ্টিতে সে ভেজে তাহলে নির্ঘাত জ্বর এসে অবস্থা তাঁর খারাপ করে দিবে। এখন কি করবে? বাড়ি ফিরে যাবে কিন্তু বাড়িটা তো এখান থেকে অনেক দূর। আশেপাশে কোথাও দাঁড়াবে তাঁরও সুযোগ নেই। একদম মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সে। আকাশ বেয়ে আসা হিমশীতল বাতাসেরা আসছে বহুত জোরে, তাঁর সাথে ধেয়ে আসছে অসংখ্য ধুলো। যার ছোঁয়াতে পুরো কেঁপে উঠল হিয়া, সাথে চোখও বন্ধ করে ফেললো তক্ষৎনাত। এমন সময় তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো নির্মল বেশ ভাবনাহীন ভাবেই বললো সে,
‘ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে জ্বর বাঁধার ফন্দি এঁটেছো নাকি?’
#চলবে….
#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-০৯
________________
চিরচেনা এক পুরুষের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকালো হিয়া। পাশ ফিরেই নির্মলকে দেখে বেশি কিছু না ভেবেই বলে উঠল সে,
‘ আমার জ্বর হলে আপনার কি?’
‘ আমার কি মানে আমারই তো সবকিছু যাই হোক চলো আমার সাথে?’
‘ না আপনি যান।’
হিয়ার কথা শুনে বিরক্ত হলো নির্মল। চোখ মুখ খিঁচে নিজেকে শান্ত করে বললো,
‘ আমার মুডটা ঠিক আছে প্লিজ রাগিও না, বৃষ্টি নামবে আর বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসবে যেটা আমি মটেও চাই না। তাই কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি চলো আমার সাথে ওইখানে আমার গাড়ি আছে তোমায় পৌঁছে দিবো।’
উওরে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো হিয়া। কি করবে না করবে ঠিক বুঝতে পারছে না সে। এরই মধ্যে আকাশ পথ বেয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। যা দেখে নির্মল বেশি কিছু না ভেবেই হিয়ার হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
‘ এই যে তুমি কথা বললে শুনতে চাও না এটাই আমার পছন্দ হয় না।’
‘ আর আমার আপনাকে।’
হিয়ার কথা শুনে নির্মল হেঁসেই বললো,
‘ আই নো বাট বিয়ে কিন্তু তোমায় আমাকেই করতে হবে এটা মনে রেখো।’
নির্মলের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,
‘ আপনাকে বিয়ে করতে বয়েই গেছে আমার।’
উওরে আবারো হাসলো নির্মল। কিন্তু কিছু বললো না। আর হিয়া জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নির্মলের মুখের দিকে সে বুঝে না এই লোকটা কথায় কথায় এতো হাসে কেন?’
নির্মল হিয়ার হাত ধরে নিয়ে আসলো তাঁর বড় কালো গাড়িটার কাছে। তারপর হিয়াকে বসিয়ে দিয়ে সেও ড্রাইভারের সিটে বসলো। ততক্ষণে আকাশ বেয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে পড়তে ভীষণ শব্দ করেই পড়তে শুরু করলো বৃষ্টি। বৃষ্টিতে হাল্কা ভিজেও গেছে নির্মল, চুল বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি জড়ছে তাঁর। যা দেখে হিয়া বলে উঠল,
‘ আপনি তো ভিজে গেছেন নির্মল?’
উওরে শুঁকনো হেঁসে গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো নির্মল তারপর বললো,
‘ তোমার মুখে আমার নামটা শুনতে কিন্তু বেশ লাগে হিয়া।’
নির্মলের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় হিয়া। সে কি বললো আর তাঁর প্রতিউওরে নির্মল কি বললো। এই লোকটা তো ভাড়ি বদমাশ?’
‘ এটা কিন্তু ঠিক না আমি কি এমন বলেছি যার জন্য তুমি আমায় গালি দিলে?’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে যায় হিয়ার এই লোকটা কি এখন তাঁর মনের কথাগুলো শুনতে পায় নাকি। হিয়ার রিয়েকশন দেখে আবার হেঁসে ফেললো নির্মল। ভ্রু-জোড়া কুচকে বললো,
‘ বেশি ভেবো না আগে বলো কোথায় যাবে বাড়ি নাকি কুরিয়ার সার্ভিস?’
নির্মলের কথা শুনে আবারো অবাক হলো হিয়া। চোখ বড় বড় করেই বললো সে,
‘ আপনি কি করে জানলেন যে আমি কুরিয়ার সার্ভিসে যাবো?’
উওরে বেশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো নির্মল,
‘ আমি তো তোমার সম্পর্কে এমন এমন জিনিস জানি যেটা তুমি নিজেও জানো না।’
‘ আপনি মানুষটা তো ভাড়ি অদ্ভুত?’
‘ এটা তুমি আজ জানলে।’
এখন এর প্রতিউওর হিসেবে কি বলবে হিয়া বুঝতে পারছে না। এই লোকটার সাথে কিছুতেই যেন পেরে ওঠে না হিয়া। সেই দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাঁকে কারনে অকারণে জ্বালিয়ে মারছে ছেলেটা। হিয়ার এখনো মনে আছে তাঁর সাথে নির্মলের দেখা হওয়ার প্রথম দিনটার কথা। সেদিন ছিল হিয়াদের ভার্সিটির নববর্ষের উৎসব। বাংলা সালের নতুন দিনে নতুন সাজে সেজেছিল তাঁর ভার্সিটি। লাল সাদা রঙের শাড়ি পড়ে এসেছিল অসংখ্য মেয়েরা সেও পড়েছিল। চুল দিয়েছিল খুলে, দু’ হাত ভর্তি লাল কাঁচের চুড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর হাল্কা মেকাপ দিয়ে সেজেছিল খুব। সেদিন নিজেই নিজেকে দেখে ফিদা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হিয়ার। নির্মলের সাথে হিয়ার দেখা হওয়াটা কোনো দূর্ঘটনা না আহামরি কোনো ঘটনা ছিল না জাস্ট ফুল হাতে নির্মলকে স্বাগতম জানিয়ে ছিল সে। কারন নির্মলই ছিলো সেদিন প্রধান অতিথির আসরে। সেদিন নির্মল হিয়াকে দেখে জাস্ট এতটুকুই বলে ছিল,
‘ আজ থেকে আপনার সুখের দিন শেষ দুর্দিন শুরু হলো মিস হিয়া?’
সেদিন নির্মলের কথার আগামাথা কিছু না বুঝলেও এখন হারে হারে বুঝতে পারে সে। বলতে গেলে হিয়া আর নির্মলের গল্পটার সূচনা হয় প্রথম দেখাই ভালোবাসা। হিয়াই ছিল নির্মলের জীবনের প্রথম মেয়ে যে মেয়েটাকে প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলে নির্মল। আর সেই ভালোবাসা এখনো চলছে নির্মলের মনে। কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি ভালোবাসি কথাটা কিন্তু বাসে। হয়তো নিজের থেকেও বেশি। হঠাৎই হিয়ার ভাবনার মাঝখানে বলে উঠল নির্মল,
‘ তাহলে কুরিয়ার সার্ভিসেই আগে যাই কি বলো?’
উওরে আনমনেই হাল্কা মাথা দুলালো হিয়া। হিয়ার উওর পেতেই গাড়ির স্পিড বারিয়ে এগিয়ে চললো নির্মল। বাহিরে বেশি প্রবলভাবে বৃষ্টি না পড়লেও পড়ছে অল্প স্বল্প শব্দ করে। আর সেই বৃষ্টির মাঝেই এগিয়ে চললো হিয়া নির্মল।’
_____
টিভির সামনে বসে আছে শুভ্র। আজ তার অফিস বন্ধ সেই সুবাদে সারাদিন বাসাতেই থাকা হয়েছে শুভ্রের। পায়ে কোমড়ের ব্যাথা কমে গেছে অনেকটাই। এমন সময় শুভ্রের পাশে এসে বসলো বর্ষা। কিছুটা অভিমানী কন্ঠ নিয়েই বললো সে,
‘ আপনায় একটা কথা বলবো?’
টিভির দিকে তাকিয়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতেই বলে উঠল শুভ্র,
‘ হুম বলো?’
‘ আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন এই ঘরের ভিতর আর ভালো লাগছে না।’
বর্ষার কথা শুনে টিভি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বর্ষার দিকে তাকালো শুভ্র। চুপচাপ মাথা নিচু করেই বসে আছে বর্ষা, হাত কচলাচ্ছে। শুভ্র কিছুক্ষন বর্ষার দিকে তাকিয়ে থেকে টিভিটা অফ করে বললো,
‘ ঠিক আছে।’
সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা খুশি হয়ে বললো,
‘ সত্যি।’
‘ হুম তোমায় ১০ মিনিট টাইম দিলাম চটজলদি তৈরি হয়ে আসো।’
‘ ঠিক আছে।’
এতটুকু বলে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো বর্ষা। আর শুভ্রও বেশি কিছু না ভেবে চললো উপরে তারও ভালো লাগছিল না বাড়িতে এইভাবে বসে থাকতে। যাক ভালো হয়েছে এই ভীতুরানী সাহস করে কিছু বলতে পেরেছে তাঁকে?’
আনমনেই হাসলো শুভ্র। শুভ্র বেশ আয়েশ করেই ঢুকলো তাঁর রুমে এমন সময় তাঁর মাথায় এসে পড়লো একটা শাড়ি। সাথে সাথে চমকে উঠলো শুভ্র। মাথা থেকে শাড়িটা সরাতেই নিরাশ শুভ্র কারন বর্ষা তাঁর পুরো রুমের বিছানা জুড়ে জামাকাপড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে। একটা একটা করে আলমারি থেকে বের করছে আর নিরাশ হয়ে ছুঁড়ে ফেলছে। বর্ষার কাজে শুভ্র হতাশ হয়ে বললো,
‘ এগুলো কি করেছো তুমি?’
উওরে শুভ্রের দিকে না তাকিয়েই বললো বর্ষা,
‘ দেখুন না আমি একটাও ভালো জামা খুঁজে পাচ্ছি না যেটা পড়ে এখন আপনার সাথে যাবো।’
বর্ষার কথা শুনে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বললো শুভ্র,
‘ এতগুলো জামাকে এখানে সেখানে ফেলে দিয়ে এখন বলছো তোমার ভালো জামা নেই?’
শুভ্রের কথা শুনে পিছন ঘুরে তাকালো বর্ষা। পুরো রুমের অবস্থা দেখে ঠোঁটে কামড় দিলো সে। এ বাবা এগুলো কি করেছে সে। বর্ষা শুভ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এগুলো তো সব শাড়ি আমি এখন আপনার সাথে শাড়ি পড়ে যাবো।’
হতাশ শুভ্র। শুভ্র কিছুক্ষন চুপ থেকে কাট কাট গলায় বললো,
‘ আগের ১০ মিনিটের সাথে আর পাঁচ মিনিট যোগ করে দিলাম যা আছে তাঁর মধ্যে একটা পড়ো তোমার সব জামা তো শাড়ি নয়। তাই যা আছে তাঁর ভিতর দিয়ে একটা পড়ো আর হ্যাঁ সাথে এই পুরো রুম পরিষ্কার করে চটজলদি চলে আসবে। না হলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। বলেই আলমারি থেকে নিজের একটা ড্রেস বের করে রাগে হন হন করতে করতে যেতে নেয় শুভ্র। সাথে সাথে সামনে পড়ে থাকা একটা জামার সাথে পায়ে স্লিপিট খেয়ে পড়ে যেতে নেয় সে কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে হন হন করে চোখ গরম করে একপলক বর্ষার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায় শুভ্র,
‘ এই মেয়েটা তাঁকে পাগল করেই ছাড়বে?’ এতগুলো জামা অথচ বলে কি না পড়ে যাওয়ার মতো জামা নেই, আজব মেয়ে তো?’
এদিকে শুভ্রকে পড়ে যেতে দেখে প্রথমে হাসলেও পরক্ষণেই কি থেকে কি করবে ভেবেই মাথায় হাত দিলো বর্ষা। হঠাৎই কিছু একটা মাথায় আসতেই খুশি মনে নিচে পড়ে থাকা সব জামাকাপড়গুলো গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো বর্ষা।’
____
ইয়োলো রঙের টিশার্ট সাথে ব্লাক জিন্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। অপেক্ষা করছে সে বর্ষার জন্য, বিরক্ত লাগছে শুভ্রের। সে বুঝে না এই মেয়েটা এমন কেন? একটা অগোছালোর গোডাউন যেন। শুভ্র রাগে ফুসতে ফুসতে ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানির জগটা হাতে নিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে ঢক ঢক করে পুরো পানিটা শেষ করলো। তাঁর ভালো মুডটারে একদম ভ্যাবাচেকা বানিয়ে দিলো। এমন সময় একটা ওয়াইট রঙের টিশার্ট ওয়াই লেডিস জ্যাকেট কালো জিন্স, খোলা চুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো বর্ষা। শুভ্র পানি খেতে খেতে তাকিয়ে রইলো বর্ষার মুখের দিকে। এদিকে বর্ষা খুব ভাব নিয়ে নিচে নামলেও লাস্ট সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই ধপাস করে পড়ে যেতে নিলো….
#চলবে….