ধর্ষক থেকে বর পর্ব ১ম
.
.
— আমার কাছে আসবেন না।
— দেখুন আমাকে একদম স্পর্শ
করার চেষ্টা করবেন না।
— আমাকে ছেড়ে দিন।
— প্লিজ আমাকে কিছু
করবেন না।
.
আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন না।উপরক্ত কথাগুলো কে বললো
আর কেনই বা সে এইসব কথা বললো।চলুন একটু অতীত থেকে ঘুরে আসি।
.
কলেজের সবচেয়ে মেধাবী এবং ট্যালেন্টপুল ছাত্র ছিল শাকিল।ছেলেটা
নেশা করা তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত একটা সিগারেটেও টান দিয়ে
দেখি নি সে।দিনের বেশী সময় ছেলেটা বই নিয়েই ব্যাস্থ থাকতো।কোন মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের দিকে
অন্য দৃষ্টিতে তাকায় নি সে।বাবার অনেক টাকা থাকা সত্তেও কোন
দিন কারো সাথে কখনো টাকার অহংকার করেনি।এক কথায় বলতে গেলে কলেজের সবচেয়ে শান্ত এবং ভদ্র ছেলে ছিল শাকিল।ওই যে দূরের মেয়েটাকে দেখছেন ওর নাম বৃষ্টি।কলেজের প্রায় সব ছেলেরই ক্রাশ। আজ পর্যন্ত অনেক গুলো প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে।কিন্তুু সেগুলোর একটিও একসেপ্ট করেনি সে।একদিন টিফিনের সময় সবাই যখন খেলাধূলা করছিল।শাকিল তখন ক্যাম্পাসের বটগাছটার নিচে বসে বই
পড়ছিল।এমন সময় বৃষ্টি এসে শাকিলের পাশে বসলো।শাকিল একবার
বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আবার পড়তে শুরু করলো।কিছু সময় দুজন নিরব
থাকার পর বৃষ্টি বললো:
— তুমি কলেজের সবচেয়ে
ট্যালেন্টপুল ছাত্র। তাই না।
— ট্যালেন্টপুল ছাত্র কিনা জানি
না। তবে ভাল করার চেষ্টা করি।
— আমরা কি ফেন্ড হতে পারি?
— মেয়েটার কথাশুনে ছেলেটা মেয়েটার
দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
আজ পর্যন্ত কেউ তার সাথে বন্ধত্ব করতে
চাইনি।এই মেয়েটাই প্রথম যে তার সাথে
বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছে।
— এই যে কি দেখছো।ফেন্ড?
— হ্যা..অবশ্যই।
.
তারপর থেকে শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব।প্রথমে আপনি.. আপনি থেকে
তুমি এবং তুমি থেকে তুইতে চলে আসে।দুজনে একে অপরকে ছাড়া
এক মুহুত্বও চলতেই পারে না।একে অপরের সাথে দুষ্টামী করা.একে অপরকে শাসন করা সবই ছিল তাদের বন্ধুত্বে।এমন ভাবে চলতে
চলতে কখন যে শাকিল মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলে নিজেও জানে
না।কিন্তুু কখনো নিজের মনের কথা মুখ ফুটিয়ে বলতে সাহস পায়
না।একদিন ভাবে আজ বৃষ্টিকে তার মনের কথা বলে দিবে।দুজনে
সেই বটগাছটার নিচে নিরব হয়ে বসে আছে।কিছু সময় নিস্তদ্ধ থাকার
পর শাকিল বললো:
— বৃষ্টি তোমাকে একটা কথা বললো।
— কি কথা বলো।
— আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
তোমাকে ছাড়া আমি একটা মুহুত্বেও
চলতে পারি না।যেখানেই যাই
সেখানেই শুধু তোমাকেই….
.
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শাকিলের গালে ঠাস
করে একটা থাপ্পর মারলো বৃষ্টি।শাকিল গালে হাত
দিয়ে বসে আছে আর ভাবতেছে।আমি আসলে
কাউকে ভালবাসার যগ্যোই না।আমার মতো একটা
ছেলেকে কে ভালবাসবে।এমন সময় বৃষ্টি বললো:
— এই কথাটা বলতে এতো দেরী করলে কেন?
আমিও তোমাকে ভালবাসি।সেই প্রথম যেদিন
তোমাকে দেখে ছিলাম সেদিনই তোমাকে
আমার ভাল লেগে গিয়েছিল।
— একটা কিস দাওতো।
— এই না।আমার লজ্জা করে।
.
শাকিল বৃষ্টির কপালে একটা চুমু দিয়ে বৃষ্টিকে তার বুকে জরিয়ে নিল।
এইভাবে পেরিয়ে যেতে থাকতো সময়।এগুতে থাকলো দিনের পর দিন।
শাকিল বৃষ্টিকে খুব ভাল বাসতো।কিন্তুু বৃষ্টি কখনো শাকিলকে ভালবাসতো না।ভালবাসতো তার টাকাকে।বৃষ্টি প্রতিনিয়তো শাকিলের
থেকে টাকা নিত।আর শাকিল সেগুলো বিনা প্রশ্নে বৃষ্টিকে দিয়ে দিত।
একদিন শাকিল চোখে মোটা ফ্রেমের একটা চশমা পড়ে। কাধে ব্যাগ
নিয়ে কলেজের পথে রওনা হলো।কিছুদূর যাওয়ার পর শাকিল যা দেখলো। তা দেখার মতো অবস্থায় শাকিল ছিল না।কিছুদুর যাওয়ার
পর দেখে বৃষ্টি একটা ছেলের বুকে মাথা রেখে রিক্সায় বসে কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে।শাকিলের পৃথিবীটা পুরো এলোমেলো হয়ে গেল।শাকিলের মনে হচ্ছে যেন তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
শত কষ্টের মাঝেও শাকিল কলেজে চলে আসলো।কলেজে আসতেই
বৃষ্টি তার সামনে এসে দাড়ালো:
— ছেলেটা কে?
— কোন ছেলেটা?
— ওই যে একটু আগে তোমার
সাথে রিক্সায় আসলো।
— ওইটা আমার বয়ফেন্ড।
— বয়ফেন্ড মানে।
— বয়ফেন্ড মানে প্রেমিক।
— তাহলে আমি কে?
— তুমি কি করে ভাবলে তোমার
মতো একটা ক্ষ্যাত ছেলেকে
ভালবাসবো আমি।
— তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিল।
তাই তোমাকে ব্যাবহার করেছি।আর
কখনো আমার সামনে আসবে না।
.
কথাটা বলেই বৃষ্টি সেখান থেকে চলে গেল।আর শাকিল বোকার মতে
সেখানে দাড়িয়ে রইলো।শাকিলের আর ক্লাস করতে ইচ্ছা করছিল না।
তাই শাকিল সেখান থেকে বাসায় চলে আসলো।
.
সেদিন এর পর থেকে সম্পর্ণ বদলে যায় শাকিল।যে ছেলেটা মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকাতো না আজ সেই ছেলেটাই মেয়েদের বিরক্ত করে।যে ছেলেটা একটা সিগারেটও টান দিয়ে দেখেনি আজ সেই ছেলেটাই বিভিন্ন নেশায় মগ্ন থাকে।যে ছেলেটা সন্ধার পর বাসা থেকে বের হতো না আজ সেই ছেলেটাই অনেক রাত করে বাসায় ফেরে।প্রতিদিনের মতো আজ রাতেও নেশা করে বাসায় ফিরতেছে তবে আজ নেশাটা একটু বেশীই হয়ে গিয়েছে।বাসায় আব্বু আম্মু বোন কেই নেই।সকলেই শাকিলের আব্বুর এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছে।তাই আজ একটু বেশী রাত করেই বাসায় ফিরতেছে।প্রচুর নেশার জন্য একাবেকা করে গাড়ি চালাইতেছে।এতো রাতে রাস্তায় তেমন কোন গাড়ি নেই তাই কোন সমস্যা হয়তেছে না।একটু দূরে তাকিয়ে দেখলো রাস্তার পাশে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।গাড়িটা একটু সামনে যেতেই মেয়েটা গাড়ি থামানোর জন্য হাত দিয়ে ইসারা দিল।ছেলেটা গাড়ি দাড় করালো:
— ভাইয়া আমাকে একটু লিভ দেবেন
প্লিজ।অনেক বিপদে পরেছি।রাস্তায়
একটা গাড়িও পাচ্ছি না।
— উঠুন।
— ধন্যবাদ।ভাইয়া।
.
মেয়েটা গাড়িতে উঠে বসলো।শাকিল আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
মেয়েটাকে দেখে শাকিল রাগে জ্বলে পুরে যাচ্ছে।সেদিনের পর থেকে
আর কোন মেয়েকে সয্য করতে পারে না সে।সেদিন শাকিলের নেশাটা
একটু বেশী হয়ে গিয়েছিল।তাই কি করতে কি করছে সে নিজেও জানে না।ছেলেটা হাইওয়ে পেরিয়ে একটা জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকলো।মেয়েটা
ছেলেটাকে জিঙ্গাসা করলো:
— ভাইয়া এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
আমার বাসা তো উল্ট দিকে।
— আপনি গাড়ি দাড় করান আমি
নেমে যাব।
— ছেলেটা গাড়ি থেকে পিস্তলটা বের
করে মেয়েটার দিকে ধরে বললো….
— চুপ করে বস।বেশী কথা বললে
পিস্তল দিয়ে মাথা ফুটো করে দেব।
— প্লিজ আমাকে যেতে দিন বাসায়
আমার মা বাবা আমার জন্য
অপেক্ষা করছে।
— আবার কথা বলে।(একটু ধমক দিয়ে বললাম)
.
মেয়েটা চুপ করে বসে রইলো।শাকিল গাড়িটা জঙ্গলের ভিতর একটা পোড়া বাড়িতে নিয়ে দাড় করালো।ছেলেটার এমন আচরণ দেখে ভয়ে মেয়েটার গলা শুকিয়ে গেল।ছেলেটা নেমে পিস্তলটা মেয়েটার দিকে
ধরে বললো:
— নাম গাড়ি থেকে।
— এইটা কোথায় নিয়ে আসলেন আপনি।
কেউ আছো বাচাও আমাকে বাচাও।
(মেয়েটা চেচিয়ে চেচিয়ে বললো)
— এখানে চেচিয়ে লাভ নেই এখানে কেই
তোর চিৎকার শুনতে পাবে না।
— গাড়ি থেকে নামতে বলছি নাম।
.
মেয়েটা গাড়ি থেকে নামলো।শাকিল মেয়েটাকে নিয়ে পোড়া বাড়ির ভিতরে ঢুকে মেয়েটাকে ঘরের ভিতরে ছুরে ফেলে দিল।ছেলেটা যত মেয়েটার কাছে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা তত দূরে সরে যাচ্ছে।এক সময়
মেয়েটার দেয়ালের সাথে পিট ঠেকে গেল।মেয়েটা চিৎকার করে কাদছে
কিন্তুু তার কান্না কেই শুনতে পাচ্ছে না।
.
— আমার কাছে আসবেন না।
— দেখুন আমাকে একদম স্পর্শ
করার চেষ্টা করবেন না।
— আমাকে ছেড়ে দিন।
— প্লিজ আমাকে কিছু
করবেন না।
.
ছেলেটা মেয়েটার একদম কাছে চলে আসলো।মেয়েটা জানে এখন
আর তার বাঁচার কোন পথ নেই।মেয়েটা দু চোখ বন্ধ করে নিরবে দু চোখের অশ্রু ফেলছে।ছেলেটা মেয়েটার সামনে এসে মেয়েটার ওড়না
ছুরে মাটিতে ফেলে দিল।
^
^
^
^
^
^
^
#________চলবে________