………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:20………………………….
গোত্রের প্রায় অর্ধেকটা মানুষই মৃত। রক্তে ভিজে গেছে জঙ্গলের পাতাঝরা ঘ্রাণের তপ্ত মাটি। তৃষ্ণার্ত মাটি রক্ত দিয়ে পিপাসা মিটিয়েছে। এবার বেরোনোর পালা নতুন গোত্রপ্রধানের। নতুন গোত্রপ্রধান এসেছে এখনো এলিনা আর ট্রুডোর কাছে অজানা। অপেক্ষিত প্রতিশোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজন গোত্রপ্রধানের বন্ধ ঘরের দিকে। টের পেয়ে গেলো নতুন গোত্রপ্রধান হিপোস যে তার গোত্রের সবাই হেরে গেছে। তার যাবার পালা এখন। জাদুবিদ্যা শেখা হয়নি। যতোটুকু হয়েছে তাতে একটা প্রাণীর একটা পশমও উঠাতে সক্ষম নয়। দরজার দিকে এগোতে লাগলো সে। হঠাৎ মায়া আয়না থেকে বাধা দিলো আগের গোত্রপ্রধান। থেমে গেলো হিপোস। আয়নার দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলো, “মায়াবী পাথর তোর সন্নিকটে কিন্তু এখন বাইরে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু।” কথা শেষ হতেই আয়নায় অদৃশ্য হয়ে গেলো গোত্রপ্রধান। চিন্তা শুরু হলো হিপোসের। তার প্রাণরক্ষক মায়াবী পাথর তার এতো সন্নিকটে থাকার পরও নিতে পারছে না সে। শেষে ঘরের এক ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো মায়াবী পাথর কার কাছে। ট্রুডোর দিকে চোখ পড়তেই তার গলায় দেখতে পেলো সেই মায়াবী পাথর। সবুজ আলো ঝকঝক করছে। সাথে একটা চাবি। তার শার্টের এক কোণায় আটকে আছে সেই আলপিনটি যেটা দিয়ে গোত্রপ্রধানকে আঘাত করা হয়েছিলো। আলপিনের আগাটা চকচক করে উঠলো। হিপোস বুঝতে পারলো যে আলপিনটা যতক্ষণ তার কাছে আছে ততক্ষণ তার কাছে যাওয়াটা ঠিক হবে না। এদিকে ট্রুডোর আলপিনের দিকে কোনো নজরই নেই। চারদিকে ছটফট করে তাকাচ্ছে সে কোথাও আবার কোনো বিপদ আসছে কি না। এলিনার হাত ধরে আবার বন্দিঘরে গেলো। খুঁজাখুঁজি করার পর এলিনা তার বাবা-মাকে খুঁজে না পেয়ে মনে মনে ভেঙ্গে পড়লো সে। বসে পড়লো মাটিতে। চোখের চোখ টুপটাপ করে মাটিতে পড়ছে। এলিনাকে শান্তনা দিতে গিয়ে তার সামনে দেখতে পেলো একটা ভ্যাক্সিনের কৌটা। সন্দেহের মোহে হাতে নিলো কৌটাটি। ভালোভাবে দেখে বুঝল এটা সেই কৌটা যাতে ভ্যাম্পায়ার শক্তি নষ্ট করার জন্য আনাহী তৈরি করেছিলো। ট্রুডো এলিনাকে ডাকতেই দাঁড়িয়ে কৌটাটি দেখতে লাগল উল্টে-পাল্টে। কৌটা খুলতেই দেখতে পেলো কৌটার ভেতরে রক্ত লেগে আছে। রক্ত দেখে কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল, “তার মানে তোমার রক্ত খাওয়ার নেশাটা নষ্ট করার পেছনে আনাহীর হাত ছিলো। কিন্তু সে কিভাবে জানতে পেলো তোমার কথা? আর তুমি যে ভ্যাম্পায়ার সেটাই সে জানলো কিভাবে?”
আনমনা দৃষ্টিতে চোখের কোণে একফোঁটা জল নিয়ে এলিনা বলল, “কাইরো। কাইরোর কাজ এটা। আমি যখন তাকে প্রশ্ন করেছিলাম তখন সে রেগে গিয়েছিলো।”
ট্রুডো ভ্রু কুচকে এলিনার দিকে তাকিয়ে বলল, “কাইরো! তার রেগে যাওয়ার সাথে এটার কি সম্পর্ক?”
“কাইরো যখন কোনো খারাপ কাজ করে আর সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করি তখন সে রেগে যায়। আমি তখন বুঝতে পারিনি যে কাইরোই আনাহীকে দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে।” আনাহী রাগি রণ্ঠে বলল।
ট্রুডো এ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো কিন্তু কৌটাটি এই বন্দিঘরে কিভাবে এলো সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। অবশেষে বলল, “তোমার বাবা মা কেও আনাহী নিয়ে গেছে।”
এলিনা আশ্চর্য হয়ে গেলো। ট্রুডোর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি কি বলছো জানো? এখান থেকে কোনো মানুষ বেঁচে ফিরতে পারে না। আর আনাহী তো অনেক দূর। সে কি না আমার বাবা-মাকে নিয়ে যাবে? না, এটা নিতে পারছি না। ”
ট্রুডো শান্তকণ্ঠে এলিনাকে বুঝিয়ে বলল, “আমি নিশ্চিত যে আনাহীই এই কাজ করেছে কারণ তোমাকে খাওয়ানোর জন্য কৌটাটি খুলতে সে নিশ্চয় এখানে আসেনি। আর সে যখন একটা কিছু তৈরি করে তখন তার একটা নমুনা তার কাছে রেখে দেয়। জঙ্গলের ভেতরে সে এই ভ্যাক্সিন বানিয়েছিলো। তাই এর নমুনা হিসেবে এইটুকুই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো কিন্তু তোমার বাবা-মাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ভুল করে এটা ফেলেই চলে যায়।”
এলিনা সন্দেহের দৃষ্টিতে বলল, “আনাহী কেন আমার বাবা-মাকে নিয়ে যাবে? তাদেরকে দিয়ে ওর কাজ কি? তাছাড়া এতো বাধা বিপত্তির মাঝে সে কেন বাঁচাবে আমার বাবা-মাকে?”
ট্রুডোর মাথায় এখনো আনাহীর কাজকর্মগুলোর স্মৃতি ঘোরাঘুরি করছে৷ মাথার ভেতরে শুধু আনাহীর বিরুদ্ধে বিরক্তি আর ঘৃণ্যতা। একটু রাগি গলায় বলল, “তা জানি না, তবে আনাহীর কাজ এটা। তাড়াতাড়ি আনাহীর কাছে যেতে হবে নাহলে খুব বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে৷”
কথাটা বলেই ক্রিডির দিকে এগিয়ে গেলো ট্রুডো। এলিনা কথাগুলো কেমন জানি মেনে নিতে পারছে না৷ তবুও ট্রুডোর বিশ্বাস-নির্ভর কথা শুনে রাজি হলো আনাহীর কাছে যেতে। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে ক্রিডির পায়ের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে। রক্ত মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে ট্রুডো। দ্রুতবেগে জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা গাছের পাতা এনে পিষিয়ে ক্রিডির পায়ে লাগিয়ে দিলো সে। ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বলল,”ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ক্রিডিকে এখন বিশ্রাম নিতে হবে।”
এদিকে বেশিক্ষণ সেখানে থাকাটাও বিপজ্জনক। কখন আবার গোত্রপ্রধান চলে আসে। ঘরের ভেতরে হিপোস রাগে হিসফিস করছে। চোখদুটো রাগে অগ্নিশিখার মতো লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেটে গেলো হিপোসের মাথায়। ভাবতে ভাবতে নিজে নিজে বলল, “গোত্রপ্রধান মারা গিয়েছে সেটা তো এলিনা আর ঐ ছেলেটা জানে না। তার মানে আমি নতুন গোত্রপ্রধান এটাও জানে না। এই সুযোগে অসহায়ত্বের ভান করে মায়াবী পাথরটা হাতিয়ে নেওয়া যাবে।”
পুরোনো গোত্রপ্রধানের কথা অমান্য করে দরজা খুলে বাইরে বেরলো সে। চাকু হাতে এলিনা তৈরি হয়ে গেলো ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। লাঠি হাতে ট্রুডোও প্রস্তুত। অসহায়ত্বের ভান করে হিপোস কাঁদোগলায় বলতে লাগলো, “আমাকে মেরো না। আমাকে বাঁচাও। গোত্রপ্রধান আমাকে মেরে ফেলতে চায়। আমাকে বাঁচাও।”
বলতে বলতে সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো সে। এলিনা মনকে শক্ত করে চাকু হাতে দাঁড়িয়েই রইলো। লাঠি নামালো ট্রুডো। শান্তকণ্ঠে হিপোসকে বলল, “কেন? তোমাকে মারতে চাইছে কেন? কোথায় গোত্রপ্রধান।”
হিপোস বলল, “আমি এলিনার বাবা-মাকে পালাতে সাহায্য করেছিলাম বলে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে। আর বলছে তোমার কাছে যে লকেটটা আছে সেটা যদি ফেরৎ দাও তবে নাকি সে এলিনার বাবা-মাকে ছেড়ে দেবে।”
হিপোস এর বানোয়াট কথা শুনে বিগড়ে গেলো ট্রুডোর মাথা। তার ধারণা অনুযায়ী যা হওয়ার কথা ছিলো সেগুলো মিথ্যা মনে হতে শুরু করলো। এলিনা ট্রুডোকে সাবধান করে বলল, “একদম ওর কথায় সায় দিবে না। সব মিথ্যা। এখন আমাদের হাত থেকে বাঁচতে ও এমন অভিনয় করছে। ওকে আমি ভালো করেই চিনি। এর আগেও বহুবার জঙ্গলের ভেতর থেকে মানুষকে ছলনার জালে ফেলে বন্দি করে এনেছিলো।”
এলিনা আর হিপোস এর কথা শুনে ট্রুডো তার গলায় সেই গোত্রপ্রধানের লকেটের দিকে তাকালো। সেই একটা চাবি আর একটা পাথর ঝুলানো আছে লকেটটায়। ট্রুডো মনে মনে ভাবলো, “এটার তেমন কাজ নেই আমার। এটা দিয়ে দেওয়াটাই বরং ভালো হবে তাতে অন্তত দুজন বেঁচে যাবে? কিন্তু আমার সন্দেহ অনুযায়ী এলিনার বাবা মা তো আনাহীর কাছে থাকার কথা তবে কি এই লোকটি মিথ্যা কথা বলছে?”
ট্রুডোর ভাবনামুখর মুখটা দেখে হিপোস একটু খুশি হলো। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো গোত্রের সব লোক আধমরা হয়ে চারদিকে নেতিয়ে পড়ে আছে। তাদের মধ্যে থেকে একজনের জ্ঞান ফিরে হিপোসকে দেখতেই কষ্ট করে উঠে এসে হিপোসের পায়ের কাছে সেজদারত হয়ে বলল, “আমাদেরকে বাঁচান গোত্রপ্রধান। এরা আমাদের এই হাল করেছে। ”
ফেসে গেল হিপোস। বুঝে গেলো এলিনা যে এই হিপোসই নতুন গোত্রপ্রধান হয়েছে। চাকু হাতে হিপোসের দিকে তেড়ে আসতে লাগলো সে। হিপোস ঘটনার প্রবাহমানতা লক্ষ করে ট্রুডোর গলা থেকে লকেটটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই ট্রুডো তার শার্টের একপ্রান্তে আটকে থাকা সেই আলপিনটা দিয়ে হিপোসের বুকে বসিয়ে দিলো এক ঘা। থকথক কালচে রক্ত বের হতে শুরু করলো। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ধপাস করে পড়ে গেল হিপোস। এলিনা তার চাকুটা দিয়ে গোত্রের সেই লোকটাকে ক্ষত বিক্ষত করে হাত পা চারদিকে ছিঁড়ে ফেলে দিলো।
অনেক দেরি হয়ে গেছে। না জানি আনাহী এলিনার বাবা-মার সাথে কি করছে। ট্রুডো ক্রিডির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ফিরে যা ক্রিডি, আমি ফিরে আসবো। আবার দেখা হবে।”
ট্রুডোর কথায় ক্রিডি জঙ্গলের ভেতরের দিকে ফিরে যেতে লাগলো আর বারবার পেছনে ফিরে তাকাতে লাগলো। অবশেষে জঙ্গলের ঘন জাছপালার ভেতরে বিলিন হয়ে গেলো ক্রিডি। এলিনার সাথে ট্রুডো রওনা হলো আনাহীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। কয়েকমিনিটের তফাতে দুজনে পৌঁছে গেলো আনাহীর বাড়িতে। বাড়ির ছাদে নামার পর এলিনা মানুষ রুপে এলো। ট্রুডো বলল, “বাড়ির দরজা দিয়ে প্রবেশ করা ঠিক হবেনা। এতে সে সতর্ক হয়ে যেতে পারে। আনাহীর রুমের জানালা দিয়ে ঢুকতে হবে।”
ট্রুডোর কথামতো আবারও ভ্যাম্পায়ার হয়ে ট্রুডোকে নিয়ে আনাহীর রুমের জানালার কাছে যেতেই খোলা জানালা পাওয়া মাত্রই দুজনে ঢুকে পড়লো। ভেতরে ঢুকে ট্রুডো কাউকে না পেয়ে দরজার দিকে গেলো বন্ধ করার জন্য যাতে কেউ ভেতরে আসতে না পারে। দরজাটা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে তা বাইরে থেকে বন্ধ করা। বেশি কিছু না ভেবে নিরাপত্তার জন্য ভেতর থেকেও বন্ধ করে দিলো সে। ভিরেক্স এর মতো শুরু হলো ট্রুডো আর এলিনার খুঁজাখুঁজি। হঠাৎ একজনের আর্তচিৎকার ভেসে আসলো খাটের নিচ থেকে। তাড়াতাড়ি খাটের নিচে গেলো ট্রুডো। এলিনা কয়েকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখার জন্য সেও খাটের নিচে যেতেই সুড়ঙ্গ দিয়ে চলে গেল আনাহীর গুপ্তঘরে। খুব পুরোনো একটা ঘর। মনে হচ্ছে প্রস্তর যুগে চলে এসেছে দুজন। তবে জায়গাটা মোটামুটি একটা বড় প্রাসাদের মতো লাগছে। কিন্তু জিনিসপত্রের জন্য তা একেবারে প্রাসাদ তো দূরে থাক চিড়িয়াখানাও মনে হবে না। হাজারো খাঁচা। বিভিন্ন খাঁচায় বিভিন্ন ধরণের প্রাণী বন্দি করে রাখা। চোখ ধাধানো সব জিনিসপত্রে ভরপুর। অবাক দৃষ্টিতে সামনে এগোতে এগোতেই ধাক্কা খেয়ে আহ্ করে উঠলো এলিনা। ট্রুডো ফিক করে একটু হেসে তাকে টেনে তুলল। সামনে হাত বাড়াতেই দেখে একটা কাঁচের দেওয়াল। এমনিতে একদমই মনে হচ্ছিলো না যে সামনে একটা কাঁচের দেওয়াল আছে। দেওয়ালের ওপাশে একটা চুল পাকা চামড়া কুচকানো বৃদ্ধা মহিলা। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। চুলগুলো দিয়ে মুখটা ঢাকা পড়ে গেছে। আস্তে আস্তে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখতে লাগলো দুজন। হাত অবধি দৃষ্টি আসতেই তা রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো। বৃদ্ধা মহিলার হাতে মাংস কাটার ছুড়ি। গুপ্তরুমের আবছা আলায় ছুড়ির ফলাটা চকচক করছে। আস্তে আস্তে অন্যদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে কাঁচের দেওয়ালটা থাকায় পিছু নিতে পারলো না দুজন। চারদিকে চোখ বুলোতেই দেখে কাঁচের দেওয়াল ঘেঁষে একটা রাস্তা ভেতরে চলে গেছে। রাস্তা ধরে হাটতে লাগল দুজন। একটু জোর পায়েই হাটতে লাগলো। যদি ভেতরে যাওয়ার কোনো দরজা থাকে সেজন্য। মনে ভয়। এমনিতে আনাহীর ঘরে গুপ্তকক্ষ। তার উপর গুপ্তকক্ষে বিচরণ করছে বৃদ্ধা মহিলা। সন্দেহের বোঝা মাথাতে আছে ট্রুডোর কিন্তু এখন তা ঘাটাবার সময় নয়।
এলিনার হাত ধরে সামনে এগোতেই দেখতে পেলো একটা ছোট্ট দরজা। আপাত দৃষ্টিতে কেউ বুঝতেই পারবে না যে সেখানে দরজা আছে। ট্রুডোর গলার সেই পাওয়ার স্টোন জ্বলজ্বল করে উঠার কারণে দরজাটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কিন্তু সে এখনো বুঝতে পারছে না তার কাছে কতো শক্তিশালী একটা পাথর আছে। উল্টোভাবে নিজেকে বিচক্ষণ ভেবে এলিনাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। পিছু নিলো বৃদ্ধা মহিলাটির। দুজনের পায়ের শব্দে পেতেই বৃদ্ধ মহিলা পেছনে তাকানোর আগেই দুজনে লুকিয়ে পড়ল। আবার এগোতে লাগলো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বৃদ্ধা মহিলাটি চেয়ারে বসে থাকা একজন লোকের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। হাতের ছুড়িটা উপরের দিকে উঠালো আঘাত করার জন্য। থামানোর জন্য এলিনা আর ট্রুডো কাছে যেতে না যেতেই এক আঘাতে মাথার শক্ত করোটিকা আলাদা করে ফেলল মহিলাটি। ভয়ঙ্কর এক চিৎকার দিয়ে মারা গেলো লোকটি। সাথে সাথে রক্ত ছিটকে মুখ ভরে গেলো এলিনা আর ট্রুডোর। হাতের ছুরিটা ফেলে লোকটার কাটা মাথা থেকে মস্তিষ্কটা টেনে বের করে অন্য একটা টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার থেকে একটা ছোট্ট ধারালো চাকু বের করে ছোট ছোট করে কেটে রেখে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলল, “স্বাগতম ট্রুডো। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। এই নাও এটা খাও।”
কথাটা বলে ট্রুডোর সামনে এক টুকরো মস্তিষ্ক এগিয়ে দিলো মহিলাটি। বিষ্ফোরিত চোখে মুকটা দেখার চেষ্টা করতে লাগলো সে। এলিনা ভ্যাম্পায়ার হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু হতে পারলো না। হঠাৎ মৃত লোকটির চেয়ার পড়ে গেলো। লাশটা গড়িয়ে এলিনার পায়ের কাছে এসে পড়তেই চিৎকার করে বলে উঠল, “বাবা!!”
ট্রুডোর নিথর স্থির দৃষ্টি গেলো এলিনার মৃত বাবার লাশের দিকে। ব্যর্থ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে লাগলো। কোনো প্রতিক্রিয়াই যেন হচ্ছে না তার মস্তিষ্কে। এলিনার আর্তচিৎকার শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো বৃদ্ধা মহিলাটি। সাদা চুলগুলো সরিয়ে চামড়া কুচকানো মুখটি বের করা মাত্র ট্রুডো দেখে মৃদুস্বরে বলল, “আনাহী!!”
মুখ থেকে রক্ত ঝরছে আনাহীর। হাত দিয়ে রক্ত মুছে বৃদ্ধাস্বরে বলল, “হ্যাঁ আনাহী, তুমি এসেছে বলে খুব খুশি হলাম। চলো আমরা ভিরেক্স এর সাথে দেখা করি। পরে এই মেয়েটার (এলিনা) ব্যবস্থা করবো।”
এলিনা তার বাবার লাশটা ধরে বসে বসে কাঁদছে। চোখের জল আর তার বাবার রক্ত মিশে একাকার। আনাহীর এই রুপ, কাজ, গুপ্তকক্ষ এসব কিছুই বুঝতে পারছে না ট্রুডো। শুধু জ্ঞানহীন পাথরের স্তম্ভের মতো দেখে যাচ্ছে। অনেকটা সম্মোহিত করার মতো। ট্রুডো আনাহীর মতের বিরুদ্ধে না গিয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে লাগলো। এলিনাকে রেখে আনাহীর সাথে সাথে চলল। আশেপাশে বিচিত্র রকমের প্রাণীর উদ্ভট শব্দে একরকম ভয় হচ্ছে। গুপ্তকক্ষের এক কোণে একটা পরিষ্কার টেবিল আর চেয়ার বসানো। সেখানে বসতে বলল ট্রুডোকে। চুপচাপ বসে পড়লো ট্রুডো। তার সামনে এক গ্লাস তাজা রক্ত আর কয়েক টুকরো কলিজা দিয়ে নিজেও একটা চেয়ারে বসে বলল, “খাও, খুব ভালো লাগবে। ”
ট্রুডো নম্রকণ্ঠে বলল, “আমি এসব খাই না তা তো তুমি জানো।”
আনাহী একটা বাকা হাসি দিয়ে একটা লাশের শরীরের এক অংশ থেকে একটুকরো মাংস কেটে এনে কলিজার টুকরোগুলোর উপর চিপে কালচে থকথকে রক্ত দিলো। ফেলে দিলো মাংসের টুকরোটা। ধীরে সুস্থে শান্তকণ্ঠে বলল, “এবার নিশ্চয় ভালো লাগবে। এবার খেয়ে নাও। এটাও যদি ভালো না লাগে তাহলে ভিরেক্স এর কলিজা খাওয়াবো। একদম টাটকা। খুব ভালো লাগবে। ”
আনাহীর কথা আর কাজগুলো এবার সত্যিই সীমার বাইরে চলে গিয়েছে। রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রুডো আনাহীকে বলল, “কি হয়েছে তোর? এসব করছিস কেন? চেহারা এমন হলো কিভাবে? এসব কি করছিস খেয়াল আছে তোর?”
ভালোবাসার মানুষটা রাগ করলেও আনাহী একটুকুও রাগ করলো না বরং ড্রয়ার খুলে একটা লম্বা চাকু বের করে ট্রুডোর মুখ দিয়ে ঘেঁষে নিতে নিতে বলল, “একজন ভ্যাম্পায়ারকে ভালোবাসার জন্য যা করার দরকার আমি তাই করছি। এসব দেখছিস না! এসব শুধু তোর জন্য। হ্যাঁ, অনেক অনেক রক্ত জমিয়েছি তোর জন্য। শুধু তোকে পাবো বলে। এখন তো আমাকে ছাড়বি না বল। ”
ট্রুডোর আর বুঝতে বাকী রইলো না যে আনাহীর মাথাটা বিগড়ে গেছে। আনাহীর মাথা ধরে ঝাকিয়ে মুখের সামনে এনে মৃদুস্বরে ট্রুডো বলল, “আমরা বন্ধু ওকে?? ভালোবাসার আগে আমরা বন্ধু। আর তুই তো ভ্যাম্পায়ার শক্তি নষ্টই করে দিয়েছিস তাহলে এসব কি? কিসের জন্য তুই এসব করছিস? একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে এমন কাজ আশা করিনি তোর থেকে। এখন বল ভিরেক্স কোথায়? আর এলিনার মা কোথায়? ”
এলিনার কথা শুনেই মাথাটা আরো বিগড়ে গেলো আনাহীর। হন হন করে হেঁটে চাকু হাতে এগিয়ে গেলো এলিনার দিকে। এলিনাকে মারার জন্য চাকু হাতে উদ্বত হতেই পেছন থেকে ধরলো ট্রুডো। কষিয়ে একটা থাপ্পড় দেওয়ার পর চাকুটা কেড়ে নিলো। রেগে বলল, “এসব বন্ধ না করলে আমি তোকে মেরে ফেলবো? চাস তো ভালোবাসার মানুষটার হাতে মরতে?”
মাটিতে পড়ে ঘাড় উঠিয়ে খিলখিল করে হেসে আনাহী বলল, “পারবি না। আমাকে মারতে পারবি না তুই। কারণ ভিরেক্স আমার হাতে বন্দি। তাকে বাঁচাবি না??”
এলিনা উঠে দাঁড়ালো। ট্রুডো আর আনাহী কথা বলছে। এই সুযোগে পুরো রুমটা খুঁজতে গেলো তার মাকে বাঁচানোর জন্য। হন্যহারা হয়ে খুঁজতে শুরু করলো সে। অদ্ভুত একটা শব্দের উৎসের দিকে এগোতে লাগলো। আনাহী উঠে ট্রুডোর নাকের কাছে স্প্রে করতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে রইলো ট্রুডো। এলিনাকে ধরার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো আনাহী। যাওয়ার সময় টেবিলের উপর থেকে ছোট্ট ধারালো কুড়োল হাতে রেগেমেগে ছুটতে লাগলো সে। শব্দের উৎস অনুধাবন করে এলিনা পৌঁছে গেলো তার মায়ের কাছে কিন্তু তার মাকে দেখার পর মাথা ঘুরে গেল। ভয়ঙ্কর চেহারা হয়েছে। চোখদুটো চোখের জায়গায় নেই। চোখের কোটর থেকে রক্ত নিগড়ে নিগড়ে পড়ছে। হাতদুটো পূয়ের জায়গায় আর পা-দুটো পীঠের সাথে সংযুক্ত। কপালে মুখ। মুখ থেকে রক্তাভ জিহ্বা বেরিয়ে নাক বরাবর চলে এসেছে। শব্দ হচ্ছে ভয়ঙ্করভাবে। বুকে হৃৎপিন্ডটা ঝুলছে আর কালচে রক্ত পড়ছে টুপটাপ করে। গড় গড় আওয়াজ করছে। এলিনা তার মাকে দেখেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এদিকে পেছন থেকে কুড়োল দিয়ে এলিনাকে মারার জন্য আঘাত করতেই সামনে এসে দাঁড়ালো ভিরেক্স। মাথা বরারবর দুটো ভাগ করে ছটফট করতে করতে মারা গেলো। ভিরেক্স এর রক্তে ভিজে পেলো এলিনার পীঠ।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পেছনে তাকিয়ে দেখে রক্তাক্ত আনাহী। হাতে রক্তমাখা কুড়ুল। আনাহী আবার উদ্বত হলো এলিনাকে মারার জন্য। কুড়োল দিয়ে আরেকবার আঘাত করতেই এলিনা সরে গেলো আর আঘাত লাগলো এলিনার মায়ের শরীরে। দুখণ্ড হয়ে গেলো এলিনার মায়ের শরীরটা। সাথে সাথে এলিনা ভ্যাম্পায়ার হয়ে বিশাল পাখাদুটি দিয়ে আনাহীকে আচড়ে মেরে উড়ে গিয়ে ঘারটা মটকে নিজের বড় বড় দাঁতদুটি ঘাড়ে বসিয়ে দিলো রক্ত চুষে বিকট এক হাসি দিলো। প্রতিশোধের হাসিতে ফেটে পড়লো গুপ্তকক্ষ। হাসির সাথে সাথে চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো এলিনার। মারা গেলো আনাহী। তার বৃদ্ধা হওয়ার কারণ, এসব আজব কাজগুলো, গুপ্তকক্ষ এসব অজানাই থেকে গেলো। হয়ে গেলো একদফা প্রতিশোধ। ট্রুডোর জ্ঞান ফেরা মাতৃর দৌঁড়ে এসে দেখে আনাহীর মৃত শরীরের পাশে ভ্যাম্পায়ার রুপে বসে আছো এলিনা। তার কাছে যেতেই ট্রুডোর গলার পাওয়ার স্টোনটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। লকেটের সংস্পর্শে এসে মানুষ রুপ পেলো এলিনা। সমাপ্তির দৃষ্টিতে তাকালো ট্রুডোর দিকে। ট্রুডোও আর কিছু বলল না। এলিনাকে সাথে নিয়ে গুপ্তকক্ষ থেকে বের হয়ে গেলো। আনাহীর বাড়ির পেছনের বাগানটায় যেতেই ট্রুডো দেখলো তার জন্য ক্রিডি অপেক্ষা করছে। নিচে নেমে ক্রিডির উপর সওয়ান হলো ট্রুডো। হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগলো জঙ্গলের উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণ পর………..
সন্ধ্যার আলো আধারীতে রুপ নিয়েছে। আকাশে ভেসে উঠেছে রুপোর থালার মতো চাঁদ। চারদিকে মিষ্টি আলো ছড়িয়েছে। জঙ্গলে এসে পৌঁছানোর পর সেই বড় গাছটার নিচে নামলো দুজন। মানুষ রুপে এলো এলিনা। ক্রিডির গলায় দেখতে পেলো একটা চিঠি বাঁধা। গলা থেকে চিঠিটা খুলে ট্রুডো পড়ে দেখলো তার বাবা তাকে তার পরিবারে ফেরৎ যেতে বলেছেন। জঙ্গলের সেই উঁচু জায়গাটা থেকে যে রাজ্য দেখা যায় সেই রাজ্যের রাজকুমার হচ্ছে ট্রুডো। ভ্যাম্পায়ার হওয়ার কারণে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিলো তাকে কিন্তু এখন মানুষ হওয়ায় আগামী রাজ্যশাসনের ভার ট্রুডোর উপর। চিঠিটা পড়ে শেষ করে এলিনার দিকে এক বিচ্ছেদের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ট্রুডো বলল, “আমি যাচ্ছি। আমি মাঝে মধ্যে আসবো দেখা করার জন্য। তুমিই হবে আমার রানী।”
কথাটা বলার পর দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। ক্রিডি সামনের পা-দুটো উঁচু করে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। ক্রিডির পীঠে সওয়ান হলো ট্রুডো। এলিনাকে রেখে চলে যেতে লাগলো ট্রুডো। ক্রিডির পায়ের খুড়ের শব্দ আস্তে আস্তে মলিন হতে হতে বিলিন হয়ে গেলো ঘন জঙ্গলের গাছপালার মাঝে। এলিনা একা গাছের নিচে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্যনিঃশ্বাস ছাড়লো।
★
★
★
★
★
★
★≠≠≠≠≠≠≠≠≠≠[…..সমাপ্ত…..]≠≠≠≠≠≠≠≠≠≠
..
..
..
..
গল্পের একটা রিভিও চাচ্ছি। আগামীতে নতুন একটা থ্রিলার নিয়ে আসছি। পাশে থাকুন ধন্যবাদ। ❤❤❤
আপনার গল্পের অরিজিন কি??