………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:17………………………….
বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ট্রুডো। প্রশ্নের জবাব নেই আর দেওয়ার ইচ্ছাও নেই। এলিনা জানে না যে ট্রুডোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি তার কাছে চলে গেছে। অজ্ঞাতসারে তার কাছে ট্রুডো এখনো ভ্যাম্পায়ার। নিজের ভ্যাম্পায়ার শক্তি হারানোর কথা এলিনাকে বলল না ট্রুডো। এড়িয়ে গেল কথাটি। এলিনাও ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ঘাটাল না। ট্রুডো মাঝখান থেকে টেনে আনলো অন্য বিষয়। “এই জঙ্গলে কী কোথাও লোকালয় আছে?”
এলিনা নির্দ্বিধায় উত্তর দিলো, “না তো! এখান থেকে কিলো দুয়েক পর আছে একটা রাজ্য।”
সন্দেহের ভাজ কপালে। ভ্রু কুচকে বলল ট্রুডো, “তাহলে জঙ্গলে ঘোড়ার আওয়াজ শুনা যায় কেন?”
“বন্য ঘোড়া থাকতে পারে।” এলিনা বলল।
ট্রুডো তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “না তো! বন্য ঘোড়ার আওয়াজ পাইনি। আওয়াজ শুনে মনে হয়েছে ঘোড়ার পীঠে কেউ ছিলো। বন্য ঘোড়া হলে তো আওয়াজ করতে করতে এদিক-সেদিক ছুটতো।”
কথাটা শুনে এলিনাও একটু বিভ্রান্ত হলো। তার জানা মতে এই জঙ্গলে সেই রাজ্য থেকে সিপাহি ছাড়া আর তো কেউ ঘোড়া নিয়ে এদিকে আসে না। আর আসলেও বিশেষ কোনো প্রয়োজনে আসে। ব্যাপারটা ভাবালো এলিনাকে।
ভাবতে লাগলো এলিনা। তার গোত্রের কেউ নয় তো? কিন্তু তাদের তো ঘোড়াই নেই। থাকার মধ্যে আছে কয়েকটা বন্য কুকুর। আর সেই চুপাকাবরার দল। ট্রুডো নারিকেল ফাটাতে লাগলো। এলিনাকে বললো,”চাকুটা দিয়ে ডাবের মুখটা কেটে ফেলো ঝটপট।”
ভাবনার মোহ কাটিয়ে চাকু দিয়ে ডাবের মুখটা কাটতে শুরু করলো এলিনা। নারিকেল আর ডাবের পানি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করল দুজন। এলিনার মনে পড়ে গেল ট্রুডোর বন্ধু-বান্ধবীদের কথা। “তোমার বন্ধুকে চুপাকাবরার হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি বলে দুঃখিত। চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেই পাষাণ গোত্রপ্রধান আমাকে বন্দি করে ফেলে।” বলল এলিনা।
“আমরা তো বাঁচিয়েছি। তাছাড়া তুমি যেটুকু সাহায্য করেছো সেটুকুই অনেক।” ট্রুডো বিনয়ের সাথে বলল।
দুজনে কথাচ্ছলে বুঝতেও পারলো না যে তাদের মাঝে আপনিটা তুমি হয়ে গেছে। ভাব হয়েছে আরো গভীর। মিষ্টতা এসেছে বন্ধুত্বে।
“তোমার বাকীসব বন্ধুরা কোথায়? তারা কি চলে গেছে?” এলিনা প্রশ্ন করল।
মাথা নিচু হয়ে গেল ট্রুডোর। কথা নেই। এলিনা তাকিয়ে আছে তার দিকে উত্তরের আশায়। মাথা আস্তে করে উঁচু করে ঘাড় নেড়ে বলল,”হুম, তবে আমি তাদের সাথে বন্ধুত্বটা শেষ করে দিয়েছি। ”
“কেন? এতে বন্ধুত্ব শেষ করার কি হলো? সবকিছু তো ঠিকঠাক হয়েই গিয়েছিলো।” এলিনা বলল।
“তারা আমাকে ছাড়া যেতে চাইছিল না। আবার আমি চলে গেলে তোমার বিপদ হতো। তাই তোমার সাথেই রয়ে গেলাম। তাছাড়া আনাহীর ভালোবাসার হাত থেকে বাঁচার জন্যও এই চেষ্টা বলতে পারো।” ট্রুডো নিচুস্বরে উত্তর দিলো।
এলিনা আন্দাজ করতে পারল যে ট্রুডো তাকে পছন্দ করে। হঠাৎ জড়িয়ে ধরল ট্রুডোকে। কথা না বাড়িয়ে ট্রুডোও জড়িয়ে ধরল এলিনাকে। এমন একটা মুহূর্তে কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করতে করতে উড়ে এসে গাছের ডালে বসল কাইরোর সেই দাঁড়কাকটা। ছেড়ে দিলো দুজন দুজনকে। এলিনা উপড়ে তাকাতেই উড়ে এসে তার হাতের উপর বসল কাকটি। চিৎকার করতে শুরু করল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো এলিনা। ট্রুডো একটু রেগে অন্যমুখ হয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগল, “এখানেও চলে এসেছে। সব তো নেওয়া হয়ে গেছে আবার কি চায় সে?”
কাইরো এলো না। কাকটা কিছুক্ষণ পর আবার উড়ে চলে গেলো। সম্ভবত তাদের খোঁজ নিতে এসেছিলো। দেখতে এসেছিলো কোথায় এসেছে তারা।
এদিকে সবাই যে যার মতো আনাহীকে খুঁজছে। সন্ধ্যার আলো তখনো গাঢ় হয়নি। আবছা আলো। ভিরেক্স ভালোবাসার টানে খাওয়া দাওয়া প্রায় ভুলেই গেছে। হন্যহারা হয়ে খুঁজছে আনাহীকে। আনাহীর বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। একটা বাড়িতে একাই থাকে সে আত্মীয় স্বজনহীনভাবে। শুধু আছে একটা আয়া। মাঝবয়সী। তবে খুব কর্মঠ, সচেতন। উনাকে আনাহীর মায়ের মতোই মনে হয়। মায়ের সম্মানেই বাড়িতে থাকেন তিনি। আনাহীর খোঁজ-খবর সবকিছু তিনিই রাখেন।খুব যত্নে রাখেন আনাহীকে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কেউ উনাকে এখন পর্যন্ত খবরটা দেয়নি। চেচামেচি করবেন খুব। শেষে আনাহীর বাড়িতে হাজির হলো ভিরেক্স। দরজা খোলার পরই ভিরেক্স বলল, “ভালো আছেন আন্টি? আনাহী কোথায়? ”
“ভালো আছি। তোমরা তো বেড়াতে গিয়েছিলে। তারপর থেকে তো আনাহী আর ফেরেনি। তোমরা চলে এসেছো সে কোথায়? ” বললেন মহিলাটি।
ভিরেক্স চালাকি করে বলল, “কি বলছেন? আমাকে তো আনাহী আসতে বলেছিলো তাই এলাম।”
ভদ্রমহিলা বললেন, “তাহলে বোধয় সে আসার সময় আমি কাজ করছিলাম তাই টের পায়নি। এসো এসো ভেতরে এসো।”
ভেতরে গিয়েই সরাসরি আনাহীর ঘরে চলে গেল ভিরেক্স। ভদ্রমহিলা আনাহী আর ভিরেক্স এর জন্য চা-কফি তৈরি করতে চলে গেল।
..
..
..
..
..
..
..
..(চলবে…………..)