………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
………………………….PART:16…………………………
আস্তে আস্তে শব্দটা আরও বাড়তে লাগলো। চাকু হাতে তৈরি হয়ে গেলো ট্রুডো। হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো শব্দটা। টাসকি খেয়ে গেলো ট্রুডো। এটা কি হলো? গোলমাল পাকিয়ে গেলো আবার। ভাবতে ভাবতে সামনে এগোতে লাগলো ট্রুডো। খানিকদূর যাওয়ার পর একটা নারিকেল গাছের পাশে দাঁড়ালো ট্রুডো। জঙ্গলের সব গাছগুলোই স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি লম্বা হয়ে থাকে। নারিকেল গাছের মাথা অবধি তাকাতে প্রায় উল্টো হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ট্রুডোর। হাতে চাকু। অতো উঁচুতে উঠতে পারবে না। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেটে গেলো। এলিনাকে দিয়ে কয়েকটা নারিকেল আর কচি ডাব পাড়ানোর কথা মনে পড়লো ট্রুডোর। জঙ্গলের মাঝখান থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে ডাক দিলো এলিনাকে। এলিনা ট্রুডোর চিৎকার শুনে ভাবলো হয়তো ট্রুডো বিপদে পড়েছে তাই তাড়াতাড়ি ভ্যাম্পায়ার হয়ে উড়ে আসতে লাগলো ট্রুডোর দিকে। জঙ্গলের মাঝে ট্রুডোকে দেখে নিচে নামলো এলিনা। ট্রুডোকে বললো,”আবার কি হলো?”
ট্রুডো মুচকি একটা হাসি দিয়ে এলিনাকে বললো, “নারিকেল পারতে হবে। সাথে কয়েকটা ডাব।”
এলিনা বললো,”তো! পেরে নিন, এতে আমাকে চিৎকার দিকে ডাকার কি আছে?”
ট্রুডো বললো,”আপনাকেই নারিকেলটা পারতে হবে, আমি তো আর আপনার মতো উড়তে পারবো না। তাই প্লিজ, কাজটা করে দিন তাড়াতাড়ি। খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ”
ট্রুডোর কথামতো এলিনা উড়ে গিয়ে নারিকেলসহ কয়েকটা ডাব পেরে নিয়ে গেলো সেই গাছের নিচে। ট্রুডোও এগোতে লাগলো। ট্রুডোর পেছনে পেছনে উড়ে যেতে লাগলো সেই কাইরোর দাঁড়কাকটা। নজর রাখতে লাগলো ট্রুডোর উপর।
এদিকে আয়নার লেখার মর্মার্থ বুঝতে না পেরে নাজেহাল অবস্থা হিপোসের। ঘরের সব জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে দিতে লাগলো। হঠাৎ চোখ পড়লো একটা ছোট্ট পুঁথির উপর। খুব ছোট। হাত দিয়ে ধরাটাই মুশকিল। একটা ইঁদুরের জন্য পুঁথিটা পড়া পারফেক্ট হবে এমন ছোট। এমনিতেই একটা ঝামেলায় আটকে আছে হিপোস তার উপর এই পুঁথির চিন্তা মাথাতে ঢুকে গেলো। পুঁথিটা আঙ্গুল দিয়ে সরাতেই কাঠের বাক্সতে একটা ছিদ্র বের হলো। বেরিয়ে এলো একটা নেংটি ইঁদুর। অবাক করে দিলো হিপোসকে। ইঁদুরটা বেরিয়েই মাথা নত করে কথা বলা শুরু করলো, “স্বাগত আপনাকে। গোত্রপ্রধান আপনার কথা আমাকে বলে গেছে। বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য।”
হিপোস তো ইঁদুরের কথা শুনে চমকে চ হয়ে গেছে। আর কি কি বাকী আছে এই গোত্রপ্রধানের ঘরে সেটাই দেখার বাকী। সব আজব আজব জিনিস, ঘটনা দিয়ে ভরপুর। ঝটপট ভেবে ইঁদুরকে বললো হিপোস,”পুঁথিটা পড়ে আমাকে শুনাও।”
শুরু হলো ইঁদুরের পুঁথি পড়া। পুঁথিটাতে আয়নাতে কিভাবে গোত্রপ্রধানের সাথে দেখা করা যাবে আর মায়াশক্তি অর্জন করার জন্য কি কি করতে হবে সব ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা আছে। পুরো পুঁথি পড়ে শুনার পর হিপোস বুঝতে পারলো সবকিছু। কেউ যদি জোর করে গোত্রপ্রধান হয় তবে কোনো লাভ হবে না বরং কয়েক মাসেই তার মৃত্যু হবে আর যদি গোত্রপ্রধানের ইচ্ছানুযায়ী কেউ গোত্রপ্রধান নির্বাচিত হন তাহলে তাকে সেই মায়াবী পাথর অর্জন করতে হবে। পুঁথিপাঠ শেষ হলে ইঁদুরকে প্রশ্ন করলো হিপোস,”আমি তোমার কথা বুঝতেছি কিভাবে? আর গোত্রপ্রধান তো মারা গেছে তো কিভাবে সে তোমাকে আমার কথা বলে গেলো?”
চিকন গলায় চোঁ-চোঁ করতে করতে বলতে লাগলো ইঁদুর,”মৃত্যুর সময় আপনার মাঝে যে মায়াশক্তি তিনি ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন সেটার জন্যই আপনি আমার সাথে কথা বলতে ও বুঝতে পারছেন। আমার কাজ হচ্ছে এই গুপ্ত পুঁথিটা নতুন গোত্রপ্রধানকে পড়ে শুনানো। কারণ এর অক্ষরগুলো এতো ছোট যে কোনো মানুষের পক্ষে এটা পড়া সম্ভব নয়। আর প্রত্যেক গোত্রপ্রধান মৃত্যুর পর অশরীরী হয়ে এই আয়নার ভেতর বন্দি হয়। যিনি নতুন গোত্রপ্রধান নির্বাচিত হন তার মায়াশক্তি অর্জন করতে হয়। কিন্তু আগের গোত্রপ্রধানের সাথে যোগাযোগ না করে তা সম্ভব নয়। তাই যোগাযোগ করার উপায় হিসেবে এই ছোট্ট পুঁথি রয়েছে। আগের গোত্রপ্রধানের অশরীরীই আমাকে আপনার কথা বলেছিলেন।”
কথাটা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো হিপোস। কি জটিল একটা নিয়ম। কথা শেষ করে আবার নিজের গর্তে ঢুকে গেলো ইঁদুরটি। পুঁথিটাও তার আগের জায়গায় চলে গেলো আপনা-আপনি। গোত্রপ্রধানের সাথে কথা বলার উপায়ও জানা হয়ে গেছে। এখন শুধু প্রয়োগের অপেক্ষা। হিপোসের মায়াশক্তি অর্জন করার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না কিন্তু সে গোত্রপ্রধান নির্বাচিত হয়েছে তাই বাঁচতে হলে অবশ্যই তাকে মায়াশক্তি অর্জন করতে হবে। স্থিরতা কাটিয়ে খুঁজে খু্ঁজে একটা বই বের করলো হিপোস। বইটি নিয়ে আয়নার সামনে হাজির হলো। শুরু করলো বই পড়া।
এদিকে ট্রুডো আর এলিনা খাওয়া শেষে বসে আছে। ট্রুডো তার চাকুর কথা মনে পড়তেই এলিনাকে বললো,”আমার চাকুটা দিন।”
এলিনা তার কোমড় থেকে চাকুটা বের করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই বের হলো না। ট্রুডো বুঝে গেলো সেই চাকুটা আর পাবার নয়। ভ্যাম্পায়ার চাকু ভ্যাম্পায়ারদের কাছেই চলে গেছে। ট্রুডো বললো,”থাক্, সেটা আর লাগবে না আমার।”
এলিনা বললো,”এটা তো ভ্যাম্পায়ারদের কাছে থাকে। আর আমার কাছে যখন আছে তখন আর চিন্তা কিসের।”
কথাটা বলার পর হঠাৎ ট্রুডোর বলা সেই কথাটা মনে পড়লো। ট্রুডো নারিকেল পারার সময় বলেছিলো,”আমি তো আর আপনার মতো উড়তে পারি না।”
কথাটা শুনার পর তখন চিন্তা না করে চলে এসেছিলো এলিনা কিন্তু এখন হঠাৎ মনে পড়তেই ট্রুডোকে প্রশ্ন করলো এলিনা,”আপনি তখন বললেন আপনি উড়তে পারেন না। ভ্যাম্পায়ার হয়ে এমন একটা মিথ্যা কথা কিভাবে বলতে পারলেন?”
..
..
..
..
..
..
..
..(চলবে……….)