#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১৫(সারপ্রাইজ পর্ব)
#লেখিকা_Esrat_Ety
সন্ধ্যার দিকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে একবার। এখন আবহাওয়া থমথমে হয়ে আছে। রাস্তার কাঁদা পানি ছিটকে শাড়িতে লেগে যাচ্ছে। মেঘলা শাড়ির কুচি ধরে শাড়ি সামান্য উপরে তুলে হাঁটছে। রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। দুয়েকটা চায়ের দোকান বাদে সবগুলোই বন্ধ। দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে সে। বেশ ভয় ভয় করছে তার। রোদেলার মতো রাত বিরাতে বাইরে চলাচল করার অভ্যাস তার নেই। মনে হয় এই বুঝি কোনো ছিনতাইকারী তার পিছু নেবে। ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটছে সে। আজ গিয়েছিলো চাকরির একটা ইন্টারভিউ দিতে। সেখান থেকে এক বান্ধবীর বাসায়। আর সেই বান্ধবীর বাসা থেকে বের হতে হতেই এতো রাত হয়ে গেলো। রোদেলা ফোন দিচ্ছে বারবার,খুব চিন্তা করছে সে।
হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকান অতিক্রম করতে নিলে চোখ যায় সালমান সাদাফের দিকে। চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে ছেলে পুলেদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, ভদ্রলোক সব সময় কিছু সৈন্য সামন্ত নিয়ে হাঁটে। যারা সকাল বিকাল জপ করতে থাকে,”আমার ভাই, তোমার ভাই। সাদাফ ভাই,সাদাফ ভাই!
এই লোকটা কি সবসময়ই পাঞ্জাবির উপরে মুজিব কোট পরে থাকে!
সাদাফ একপলক তাকিয়ে মেঘলাকে দেখে তারপর আবারো কথা বলতে শুরু করে । মেঘলা চোখ সরিয়ে হাঁটতে থাকে। কয়েক গজ দূরে যেতেই একটা কমবয়সী ছেলেদের দল দেখতে পায়। মেঘলার দিকে কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই। নারী মানেই তো কৌতুহলের বিষয়। মেঘলার কাছে ছেলে গুলোর চাহনি ভালো লাগে না,দ্রুত তাদের অতিক্রম করতে নিলে সেই দলের মধ্যে থেকে আওয়াজ আসে,”আবহাওয়া টা বেশ ঠান্ডা ছিলো,এভাবে গরম করে দেওয়ার কি দরকার ছিলো !”
মেঘলা দাঁড়িয়ে পরে। কুঁচি থেকে হাত সরিয়ে আঁচল টেনে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে নেয়। বড় বোনের বয়সী একটা মেয়েকে দেখেও এদের অসভ্যতামি করতে ইচ্ছে করে! কি নোংরা মানসিকতার এরা ! বয়স কত হবে ! কলেজ পড়ুয়া সম্ভবত সবাই। মেঘলার সাহস নেই ওদের গিয়ে চড় মারার। সে রোদেলার মতো সাহসী না। তাই সামনে পা বাড়ায়। ছেলে গুলো চাপা হাসিতে ফেটে পরে।
হঠাৎ করে পেছন থেকে চড়ের বিকট শব্দে মেঘলা দাঁড়িয়ে পরে।
মাথা ঘুরিয়ে দেখে সালমান সাদাফ নামের লোকটা একটা ছেলের কলার ধরে রেখেছে। সম্ভবত সেই ছেলেটিই মেঘলাকে বাজে মন্তব্য করেছে।
মেঘলা দাঁড়িয়ে ওদের দেখে। সাদাফ তার এক শিষ্যের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”এই বান্দির বাচ্চা গুলোকে আর এই তল্লাটে দেখলে সোজা ঠ্যাং-এর উপর মারবি শাওন।”
শাওন নামের ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে,”জ্বি ভাই।”
সাদাফের কয়েকটা ছেলে ওদের ঘার ধাক্কা দিয়ে পথ দেখিয়ে দেয়। ছেলে গুলো লেজ গুটিয়ে এক প্রকার পালিয়ে যায়।
মেঘলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদাফ এগিয়ে আসে। গম্ভীর কন্ঠে বলে,”চলুন আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”
মেঘলা কয়েক মুহূর্ত আগের ঘটনায় কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছে। দেখতে এতো সভ্য শান্ত লোকটা গালি দিতেও জানে! অদ্ভুত!
সাদাফ তার বলিষ্ঠ শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে মেঘলার সামনে হাটছে। মেঘলা তার পেছনে। নীরবতা ভেঙে সাদাফ বলে,”এতো রাতে যেসব মেয়েদের বাইরে চলাফেরা করতে হয় তাদের আরেকটু শক্ত ধাঁচের হতে হয়। আপনার বোনকে দেখি,খুব সাহসী মেয়ে। সেদিন দেখলাম একটা ছেলেকে শিস বাজানোর অপরাধে চড় মেরে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিয়েছে । হাঁটাচলাও সিংহীর মতো। তা আপনি এরকম ভ্যাবলা কেনো?”
মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাকে এভাবে সরাসরি ভ্যাবলা বলে দিলো লোকটা। প্রতিবাদ করতে না জানলে বুঝি তাকে ভ্যাবলা বলে!
***
“আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।”
একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র কিছু এম্প্লয়ি তাশরিফকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।
তাশরিফ মাথা নেড়ে সালামের উত্তর দেয়। রোদেলা উঠে দাঁড়িয়ে অন্যসবার মতো বলে,”আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।”
তাশরিফ দাঁড়িয়ে পরে। সবার দিকে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের থেকে মাত্র দুই ধাপ উপরের পদে আছি আমি। বেতন আপনাদের থেকে মাত্র তের হাজার টাকা বেশি। এভাবে উঠতে বসতে দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়ার কিছু নেই। এটা কোনো ক্লাসরুম না। আমিও আপনাদের টিচার নই। আমরা সবাই সবার কলিগ।”
কথাটি বলে তাশরিফ চলে যায় এবং একটা ফাকা টেবিল দেখে বসে পরে। আজ অনেকদিন পর সে ক্যান্টিনে খেতে এসেছে। কেবিনে একা একা খেতে একটুও ভালো লাগে না তার।
মেঘলার কানের কাছে মুখ নিয়ে মেহেরিন বলে,”তুমি স্যার স্যার বলছো কেনো? তুমি বলবে আসসালামুয়ালাইকুম বেয়াই সাব।”
তাদের টেবিলে চাপা হাসির রোল পরে যায়। রোদেলা চোখ মুখ শক্ত করে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপা আপনার থেকে কোনো ফাজলামি কথা আমি আশা করিনি।”
মেহরিন হাসি থামিয়ে বলে,”সরি রোদেলা। তবে তুমি রাগ হও আর যাই হও। তুমি ঠিক করছো না কিন্তু। সেদিন রিসিপশন অনুষ্ঠানের দাওয়াত খেতে গিয়ে দেখলাম তোমার বোনকে। কি সুন্দর মানিয়েছে দুটিকে। মাশাআল্লাহ। আর দুজনেই ব্রিলিয়ান্ট। দেখবে ওরা ঠিকই একটা ব্রাইট ফিউচার গড় তুলবে ওদের। আর মুখ ফিরিয়ে না থেকে মেনে নাও ওদের। মেয়েটা খুব কষ্ট পাচ্ছে।”
_তাশরিফ হাসান কি আপনাকে উকিল ধরেছে নাকি আমাকে এসব বলার জন্য?
রোদেলা গম্ভীর কন্ঠে মেহরিনকে বলে। মেহরিন বলে,”না। একদমই না। আমি নিজে থেকে বলছি। আর জানো তোমার বোন খুব লাকি। সে তাশরিফের মতো কাউকে ভাসুর হিসেবে পেয়েছে। সেদিন তো গিয়ে দেখলাম সব, ছোটো বোনের মতো কেয়ার করে তাশরিফ তোমার বোনের। ”
কথাটি শুনে রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকায়। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে মনে মনে তাশরিফকে বলে,”ধন্যবাদ আমার বোনের কেয়ার করার জন্য তাশরিফ হাসান স্যার।”
খাওয়া রেখে রোদেলার দিকে হঠাৎ তাকায় তাশরিফ। তার হঠাৎ করে মনে হলো রোদেলা তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু রোদেলা আর তার দিকে তাকিয়ে নেই। সে খুব লজ্জা পেয়ে যায়,মনে মনে বলে,”ধুরর তাশরিফ হাসান। পেঁচা মুখী কোন দুঃখে তোমার দিকে তাকাবে। তার বয়েই গিয়েছে তাকাতে।”
***
“কি হয়েছে বৃষ্টি কোনো সমস্যা?”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। আদিল বৃষ্টির কাছে এগিয়ে যায়। মৃদু স্বরে বলে,”কি হয়েছে? বলো আমাকে!”
বৃষ্টি অনেকটা সংকোচ নিয়ে নিচু স্বরে বলে,”স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রয়োজন আমার। পিরিয়ড হয়েছে।”
আদিল বৃষ্টির দিকে তাকায়। লজ্জায় মুখটা একটুখানি হয়ে আছে। নিজের স্বামীর কাছে বলতেও এতো লজ্জা!
“এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। ”
বিছানা থেকে নেমে গায়ে শার্ট চাপিয়ে নেয় আদিল। ড্রয়ার থেকে ওয়ালেট বের করে বলে,”এই যা। একটা কড়িও নেই। ওয়ালেট পুরো ফাকা। দাঁড়াও ভাইয়া এসেছে কিনা দেখি।”
বৃষ্টি আদিলের হাত টেনে ধরে।
_ভাইয়াকে কি বলবে?
আদিল হেসে ফেলে,বলে,”তুমি এভাবে হাত টেনে ধরলে কেনো আমার? ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি কি ভাইয়াকে গিয়ে এটা বলবো যে ভাইয়া আমার বৌয়ের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে হবে,টাকা দাও। পাগল কোথাকার!”
আদিল হাসতে থাকে। বৃষ্টি নিস্তেজ কন্ঠে বলে,”বৌয়ের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে হবে তাও ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিতে হচ্ছে তোমার। আমার খুব খারাপ লাগছে আদিল।”
আদিল বৃষ্টির শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে তার খুব আত্মসম্মানে লাগে কথাটা। সে বৃষ্টিকে বলে,”বিয়ের আগে ভাবা উচিৎ ছিলো না আমি বেকার? আমি একজন স্টুডেন্ট। আমার উপার্জন নেই,আমি অন্যের উপর নির্ভরশীল! ”
বৃষ্টি আহত চোখে আদিলের দিকে তাকায়। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,”তুমি রাগ করলে আদিল। আমি তো তোমায় দোষ দেইনি। আমি শুধু আমার খারাপ লাগার কথাটা তোমাকে বললাম….”
আদিল বৃষ্টির কথা গায়ে না লাগিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বৃষ্টি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বেয়ে দুফোঁটা তরল গড়িয়ে পরে তার।
আধাঘণ্টা পরে রুমে ফিরে এসে আদিল বৃষ্টির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে গায়ের শার্ট খুলে টি শার্ট পরে নেয়। তারপর গিয়ে বিছানায় ওপাশ ফিরে শুয়ে পরে।
কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি গিয়ে বিছানায় শুয়ে মৃদু স্বরে ডাকে,”আদিল।”
আদিল কোনো সাড়া দেয়না। বৃষ্টির খুব কান্না পাচ্ছে। সে পেছন থেকে আদিলকে জরিয়ে ধরে,”সরি আদিল সরি। আমি তোমাকে অপমান করার জন্য কথাটা বলিনি তুমি বিশ্বাস করো।”
আদিল নিজের গা থেকে বৃষ্টির হাত সরিয়ে দেয়।
***
রুবায়েত ফরাজীর নাম্বার দেখে একবার ভাবলো ফোনটা ধরবে না। তারপর আবার কি মনে করে ফোনটা রিসিভ করে রোদেলা। ওপাশ থেকে নাজমুন্নেছা মলির কন্ঠ ভেসে আসে।
“রোদেলা বৃষ্টি কোথায়। ওর ফোনের কি হয়েছে?”
রোদেলা একবার ভাবলো ফোনটা রেখে দেবে কিন্তু সে বলে,”বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ও ওর শশুর বাড়ী। ফোনটা ও এ বাড়িতে ফেলে রেখে গিয়েছে।”
_বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানে! এসব কি বলছো?
_হু, দশদিন হয়ে গিয়েছে প্রায়। আপনি আজ জানলেন।
_কিন্তু কিভাবে সম্ভব এটা। আমি কিছু বুঝতে পারছি না রোদেলা একটু পরিষ্কার করে বলো।
_বৃষ্টি আজ থেকে দশদিন আগে পালিয়ে গিয়ে ওর প্রেমিককে বিয়ে করে নিয়েছে। ও এখন ওর শশুর বাড়ীতে অবস্থান করছে।ওর শশুর বাড়ী কোথায় আমরা জানি না। ওর নতুন নাম্বার আমাদের কাছে নেই। আরো পরিষ্কার করে বলবো?
নাজমুন্নেছা মলি চুপ হয়ে থাকে। রোদেলা বলে,”প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বোধ হয় আপনার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলো বৃষ্টি। তাও বৃষ্টি আপনার থেকে ঢের ভালো, আপনার মতো সংসার,বাচ্চা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়নি। আপনার তো বুড়ি বয়সে ভীমরতি হয়েছিলো। বুড়ি বয়সে ভীমরতি হওয়ার থেকে কচি বয়সে ভীমরতি হওয়া অনেক ভালো।”
রোদেলা ফোন কেটে দেয় কথাটি বলে। সে না চাইতেও কিভাবে যেন প্রত্যেকবার খারাপ ব্যবহার করে ফেলে মলির সাথে।
ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায় সে , মেঘলাকে খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে গিয়ে দেখতে পায় মেঘলাকে। পেছন থেকে ডেকে বলে,”কি করছো?”
মেঘলা একটা বাটিতে শাহী টুকরা পরিবেশন করে বলে,”খানিকটা তিনতলায় বাচ্চা দুটোকে দিয়ে আসি গিয়ে, বাচ্চা দুটোকে দেখলেই খারাপ লাগে খুব। বৃষ্টির ছোটোবেলার কথা মনে পরে যায়,মা ছাড়া কত কষ্টে বড় হয়েছিলো।”
রোদেলা কিছু বলে না চুপচাপ বোনকে দেখে। একবার ভাবলো বাঁধা দেবে, খামোখা কেনো অন্যের বাচ্চাকে অযাচিত ভালোবাসা দেখাবে। তারপর ভাবে,এসব করে যদি নিজের যন্ত্রনা ভুলে থাকতে পারে তাহলে ক্ষতি তো কিছু নেই।
মেঘলা আঁচল টেনে শরীরটা ভালোকরে ঢেকে চলে যায় নিচে।
কলিং বেলের আওয়াজ হতেই সাদাফ গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মেঘলা বিব্রত হয়ে পরে। সে সাদাফকে আশা করেনি। সাদাফ মেঘলাকে এক পলক দেখে তার মাকে ডাকতে থাকে,”মা পাঁচ তলা থেকে কেউ এসেছে তোমার কাছে।”
সাদাফ দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। এখন তার পরনে পাঞ্জাবি আর মুজিব কোট নেই, তার পরনে একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট। টিশার্ট টার খুবই নাজেহাল অবস্থা। মনে হচ্ছে বাচ্চা দুটো এতক্ষণ টানাটানি করে এই হাল করেছে। ভেতরের ঘর থেকে বাচ্চা দুটোর চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। মেঘলা ভেতরে ঢোকে। সাদাফের মা জাহানারা এসে দাঁড়ায়। মেঘলা তাকে দেখে বলে,”আন্টি শাহী টুকরা বানিয়েছিলাম,সিরাত আর সুহার জন্য নিয়ে এসেছি।”
ভদ্রমহিলা খুবই খুশি হয়। তারপর বলে,”ওরাও খুব পছন্দ করে। তুমি দাঁড়াও। আমি ওদের ডেকে দিচ্ছি। দেখো কিরকম খুশি হয়ে যায় দুজন।”
ওদের ডাকার আগেই সুহার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে সে। সিরাত তার পিছু পিছু আসে তাকে মারবে বলে। সাদাফ সুহাকে আগলে নিয়ে সিরাতকে ধমকায়। সিরাত বাবার কথা না শুনে সুহাকে মারতে থাকে। মেঘলা গিয়ে সিরাতকে ধরে। সিরাত মেঘলার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রানপন চেষ্টা করে,”ছাড়ো আমাকে,ছাড়ো আমাকে।”
চেঁচাতে থাকে মেঘলার উপর। মেঘলা হাসে,বলে,”আগে বলো বোনকে আর মারবে না। বোন কাঁদছে দেখো।”
সিরাত জেদ করে মেঘলার হাতে কামড় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। টি-টেবিলের উপর ম্যাগাজিনের পেপার গুলো একটা ছোট্ট পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা ছিলো। দৌড়ে গিয়ে সিরাত সেটি উঠিয়ে মেঘলার দিকে ছুড়ে মারে। ঘটনার আকস্মিকতায় সাদাফ হতভম্ব হয়ে যায়, সুহা ও এতক্ষনে কান্না থামিয়ে তাকিয়ে থাকে। মেঘলা কপালে হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কপালের ডানপাশটায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আঙ্গুলের ফাক দিয়ে তিরতির করে রক্ত বের হচ্ছে। সিরাত দৌড়ে বাবার ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয় ভেতর থেকে।
সাদাফ মেঘলার দিকে উৎকণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে আসে। মেঘলা হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আমি ঠিক আছি।”
“এ কিরে আপু! ভালো মানুষ নিচে গিয়েছিলি,কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ফিরলি কেনো?”
রোদেলা একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে মেঘলাকে ধরে। মেঘলা অস্ফুট স্বরে বলে,”একটা পেইন কিলার দে আমাকে। খুব যন্ত্রনা করছে।”
আয়েশা সিদ্দিকা রান্নাঘর থেকে ওদের দেখছিলো। তিনি একটা পেইন কিলার আর এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে মেঘলার হাতে দেয়।
রোদেলা বলে,”কিভাবে হলো এসব?”
_সিরাত পেপার ওয়েট ছুড়ে মেরেছে।
_পেপার ওয়েট ছুড়ে মেরেছে মানে! পেপার ওয়েট ছুড়ে মারতে যাবে কেনো? আর ওর বাড়ির লোক কি করছিলো? তারা মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিলো?
_আরে চেঁচাচ্ছিস কেনো। ছোটো মানুষ,জেদী কিছুটা। জেদ করে বাচ্চারা তো কত কিছুই করে।
রোদেলা শীতল দৃষ্টি দিয়ে বোনের দিকে তাকায়। তারপর ধমকের সুরে বলে,”তুই কখনো শুধরাবি না তাই না? তোকে তো কেউ খুন করে দিলেও বলবি,বাদ দে রোদেলা বেচারার কত ইচ্ছে ছিলো আমাকে খুন করার। করতে দে না।
যত্তসব।”
মেঘলা চুপ করে থাকে। রোদেলা ধমকে ওঠে,”আর যদি আমি দেখেছি ওই বাঁদর দুটোর আশেপাশে গিয়েছিস তোর একদিন কি আমার একদিন।”
***
আদিল এই মাত্র বাসায় ফিরেছে। বৃষ্টি শুনেছে তার গলা,সে তার যায়গা থেকে একটুও নড়ছে না। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে। সে যাবে না আদিলের সামনে। সারাদিন বাইরে থেকে কাটিয়ে এসেছে, একটাবার বৃষ্টিকে ফোন দেয়নি। বৃষ্টিও রাগ করে দেয়নি। কাল রাতে ইচ্ছা করে তো আদিলকে কথা শোনায়নি সে। একটা সামান্য কারনে রাগ করে সারা রাত বৃষ্টির দিকে ফিরেও তাকায় নি আদিল, কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো বৃষ্টি। প্রতিদিন সকালে আদিল খোজ নেয় বৃষ্টি খেয়েছে কি না। আজ কিছু না বলেই বেরিয়ে গিয়েছে। অভিমানী বৃষ্টি সারাদিন কিচ্ছু না খেয়েই থেকেছে। সবাইকে ফেলে যে মানুষটার হাত ধরে চলে এসেছে সে যদি এভাবে কষ্ট দেয় তাহলে বৃষ্টি কোথায় যাবে!
“সারাদিনে কিছু খায়নি তোর বৌ।”
আদিল তাহমিনার কথায় ঘুরে তার দিকে চায়। অবাক হয়ে বলে,”খায়নি মানে?”
_খায়নি মানে কিছুই খায়নি। মন খারাপ দেখলাম। তুই আবার ভাবিস না আমি কিছু বলেছি তোর বৌকে। আমি কিন্তু কিছুই বলিনি।
_মা তুমি থামবে?
বিরক্ত হয়ে আদিল রুমের দিকে যায়। বৃষ্টি সারাদিন না খেয়ে ছিলো। কি সাংঘাতিক কথা!
বৃষ্টি টের পায় তার পেছনে এসে আদিল দাঁড়িয়েছে। আদিলের গায়ের পারফিউমের গন্ধে ছেয়ে গেছে আশপাশ। বৃষ্টি মাথা ঘোরায় না। যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। আদিল দুমিনিট দাঁড়িয়ে থেকে এসে বৃষ্টির হাত ধরে টানতে টানতে রুমের মধ্যে নিয়ে যায়। রুমের মধ্যে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়, তারপর সেও পাশে বসে। বৃষ্টি মাথা একেবারে নিচু করে রেখেছে। আদিলের দিকে তাকায় না। আদিল ধমকে বলে,”সমস্যা কোথায়?”
বৃষ্টি চুপচাপ। আদিলের মেজাজ বিগড়ে যায়। বৃষ্টির থুতনি ধরে জোর করে উপরে তুলে তার চোখে চোখ রাখে। বৃষ্টির চোখ দুটো ছলছল করছে। সে ঝরঝর করে কেঁদে দিয়ে আদিলকে জরিয়ে ধরে, কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি আর কখনো, কোনোদিন এমন কথা বলবো না যাতে তুমি কষ্ট পাও। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।”
আদিল বৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে থাকে। মৃদু স্বরে বলে,”হয়েছে। কাল সারারাত কেদেছো। এখন থামো।”
বৃষ্টি থামে না। আদিল বলে,”আরে কান্না থামাও না প্লিজ। স্বামী বাড়িতে এলে তার সেবা যত্ন করতে হয়। এতটুকু জানো না? যাও গিয়ে ভাত বাড়ো। কিছু খাইনি সারাদিন।”
বৃষ্টি চোখের পানি মুছে অস্ফুট স্বরে বলে,”কোথায় ছিলে সারাদিন?”
_সত্যি কথা বলবো?
_হু
_আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছিলাম।
_এবার মিথ্যা কথা টা বলো।
_মিথ্যা কথাটা হচ্ছে সারাদিন এক বন্ধুর সাথে ছিলাম,সন্ধ্যায় দুটো স্টুডেন্ট পড়িয়ে বাড়িতে আসলাম।
বৃষ্টি অবাক হয়ে তাকায়।
_স্টুডেন্ট মানে?
_টিউশনি করাবো এখন থেকে। বৌয়ের স্যানিটারি ন্যাপকিন নিজের টাকায় কিনবো।
কথাটি বলে আদিল দাঁত বের করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
বৃষ্টি অপলক দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে।
চলমান….
#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১৬
#লেখিকা_Esrat_Ety
“শোনো মেয়ে।”
সালমান সাদাফের রাশভারী গলার আওয়াজে সিঁড়ি তে দাঁড়িয়ে পরে রোদেলা। মাথা ঘুরিয়ে তাকায় সে। সাদাফ তার দিকে এগিয়ে আসে।
“অফিসে গিয়েছিলে?”
“জ্বি।”
রোদেলা এক শব্দে জবাব দেয়। তারপর বলে,”কিছু বলবেন?”
_হ্যা। তোমার আপুর খবর জানতে চাচ্ছিলাম। কপালের ব্যাথা সেরেছে?
_না, উল্টো জ্বর এসেছে।
সাদাফের মুখটা মলিন হয়ে যায় শুনে। অপরাধী গলায় বলে,”কি যে একটা অবস্থা হয়ে গেলো।”
রোদেলা স্বাভাবিক গলায় বলে,”সমস্যা নেই। আপুর এসবের অভ্যাস আছে।”
বলেই রোদেলা হাঁটতে শুরু করে। সালমান সাদাফ তার দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্যাস আছে মানে? কি বোঝাতে চেয়েছে এই মেয়ে।
রোদেলাকে পেছন থেকে ডাকতে গিয়েও ডাকে না সে। মনে মনে ভাবে তার কি একবার যাওয়া উচিত মেঘলাকে দেখতে ?
মেঘলা বিছানায় শুয়ে আছে। রোদেলা টেবিলের ওপর ব্যাগটা রাখতেই মেঘলা ঘুরে তাকায়। রোদেলা হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”উঠিস না। তুই শুয়ে থাক।”
গায়ে প্রচন্ড জ্বর মেঘলার। গলা কাঁপছে, মৃদু স্বরে বলে,”আজ রেজাল্ট পাবলিশড হয়েছে। কোনো খবর তো পেলাম না রে রোদেলা। বাবা বারবার এসে জিজ্ঞেস করছে,চিন্তা হচ্ছে খুব।”
_তোর আর বাবার তো কাজ নেই তাই চিন্তা করবি। চিন্তার কিছু নেই। ও নিজেই ওর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে না। তোদেরও চিন্তা করার কিছু নেই। গোল্লায় যাক।
ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে থাকে রোদেলা। ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে হঠাৎ। ফোনটা তুলে হাতে নিতেই দেখে স্ক্রিনে একটা অচেনা নাম্বার। নাম্বার টা কিছুটা চেনা চেনা লাগে, কিন্তু মনে করতে পারছে না সে। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,”আপু।”
কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। রোদেলা একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা কেটে দিতে যাবে অমনি বৃষ্টি বলে ওঠে,”দোহাই তোমার আপু ফোনটা কেটো না।”
রোদেলা চুপ করে আছে। বৃষ্টি বলে,”আপু তোমার বোনকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডেকেছে। ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি।”
রোদেলা চুপচাপ শোনে। বৃষ্টি একটু থেমে বলে,”আপু আদিল ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ চান্স পেয়েছে।”
রোদেলার থেকে কোনো কথা না শুনতে পেয়ে বৃষ্টি বলে,”আপু তুমি খুশি হওনি? ঢাকা ইউনিভার্সিটি তো তোমার স্বপ্ন ছিলো, তোমার বোন তোমার স্বপ্ন পূরণ করেছে,তুমি খুশি হওনি?”
_ওটা এখন আর আমার স্বপ্ন নেই। আমার স্বপ্ন তুই অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছিস। ফোন রাখ। আমি বাবাকে জানিয়ে দেবো।
কথাটি বলে রোদেলা নিজেই ফোনটা কেটে দেয়।
বৃষ্টি মাথা নিচু করে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে তাশরিফের দিকে এগিয়ে দেয়। তার ঠোঁট কাঁপছে, এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে সে। তারপর এক দৌড়ে আদিলের রুমে চলে যায়।
আদিল বিড়বিড় করে বলে,”দিলো আবার আমার বৌটাকে কাঁদিয়ে। সিমেন্ট মানবী কোথাকার। আল্লাহ জানে কোন পাপীর সাথে বিয়ে হবে এর। তার জীবনটা সিমেন্ট দিয়ে ভরিয়ে দেবে এই সিমেন্ট মানবী রোদেলা।”
তাশরিফ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
***
বেশ কয়েকবার কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে কাউকে দেখতে না পেয়ে মেঘলা কিছুটা অবাক হয়। কে হতে পারে? বারবার ফাজলামি করছে এভাবে!
দূরের মাইক থেকে সালমান সাদাফ নামের লোকটার গুরুগম্ভীর ভাষণ শোনা যাচ্ছে। খুব কাছেই ঈদগাহ মাঠে আজ জনসমাবেশ ডেকেছে সে। সামনে নাকি ইলেকশনে লড়বে। মেঘলার খুব হাসি পাচ্ছে তার ভাষণ শুনে। নেতা শ্রেনীর লোকেরা নির্বাচনের আগে যে যে চাপা মেরে সাধারণ জনগণের মন জিতে নেয় তার একটিও বাদ রাখেনি এই লোক। আবার বলছে প্রত্যেকটা স্কুল পড়ুয়া বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সে কিভাবে নিশ্চিত করবে? তাদের স্কুলে দিয়ে আসবে আর স্কুল থেকে নিয়ে আসবে,এভাবে?
আয়েশা সিদ্দিকা বেলের শরবত বানিয়ে টি-টেবিলের উপর রেখে গিয়েছে। মেঘলা হাত বাড়িয়ে শরবতের গ্লাসটা উঠিয়ে লক্ষী মেয়ের মতো শরবত খেয়ে নেয়। আজকাল আয়েশার সাথে খুব একটা বাজে ব্যবহার সে করে না।
কপালের ক্ষতটা এখনো বেশ ভোগাচ্ছে মেঘলাকে। সালমান সাদাফের মা এসে দেখে গিয়েছেন আজ সকালে। নাতীর হয়ে বারবার ক্ষমা চেয়েছেন।
আবারো কলিং বেলের আওয়াজ হয়। মেঘলা বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। কে এমন ফাজলামি করছে তাকে দেখতে হবে। দরজা খুলে আবারো কাউকে দেখতে পায়না। কিন্তু নিচ থেকে বাচ্চাদের হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মেঘলা বুঝে ফেলে এটা কাদের কাজ। সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে একটু মজা করবার জন্য। এবার যদি ওরা আবারো আসে তাহলে মেঘলাকে দেখে চমকে যাবে।
তিন মিনিট অতিবাহিত হয়। সুহা আর সিরাত পা টিপে টিপে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে থাকে। মেঘলা ভেতরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘলাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যেই না সিরাত কলিং বেল টিপতে যাবে অমনি মেঘলা দরজা খুলে দেয়।
সুহা আর সিরাত চমকে ওঠে। মেঘলাকে দেখে ভয় পেয়ে সিরাত সিঁড়ির দিকে দৌড় লাগায়। সুহা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়েই থাকে।
আচমকা ধপ করে কারো পরে যাওয়ার একটা বিকট আওয়াজ হয়। মেঘলা হতভম্ব হয়ে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে যায়। গিয়ে দেখে ছোট্টো সিরাত মুখ থুবড়ে মেঝেতে পরে আছে। সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে গড়াতে পরে গিয়েছে সে। শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় ছোটো শরীরটা। মেঘলা দিকবিদিক শূন্য হয়ে ধপ করে বসে পরে,সিরাত উল্টো হয়ে পরে আছে। মেঘলা সিরাতের মাথাটা নিজের কোলে নেয় , তখন টের পায় তার হাত দুটো রক্তে ভরে গিয়েছে। কলিজাটা যেন কেঁপে ওঠে মেঘলার। কয়েক মূহুর্ত পরে একটা বিকট চিৎকার দেয় সে।
***
রোদেলার ডেস্কের উপর একটা মিষ্টির প্যাকেট। প্যাকেট টা হাতে নিয়ে এদিকে ওদিকে তাকায় সে। অফিসে সবাই যে যার কাজ করছে। রোদেলা মেহেরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপা! এটা কিসের জন্য?”
_ওহ ওটা,ওটা তো তোমার জন্য রোদেলা।
_কে দিয়েছে?
_তাশরিফ হাসান।
রোদেলা চোখ মুখ শক্ত করে মিষ্টির প্যাকেট হাতে তাশরিফের কেবিনের দিকে যায়। দরজার নব ঘোরানোর সাথে সাথে তাশরিফ বলে ওঠে,”আসুন রোদেলা আমিন।”
যেন সে আগে থেকেই জানতো এখন রোদেলা আসবে। রোদেলা কেবিনে ঢুকে তাশরিফের ডেস্কের উপর মিষ্টির প্যাকেট টা রাখতে রাখতে বলে,”স্যার এটা আমার টেবিলে রেখে এসেছিলেন।”
_হুম,আপনার টেবিলে রেখে এসেছিলাম আর আপনার জন্যই রেখে এসেছিলাম।
_কেন স্যার?
_আমার ভাই আর ভাইয়ের বৌ দুজনেই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। অসম্ভব খুশির একটা খবর। আমি আনন্দিত। অফিসের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছি। আপনার জন্যও রেখেছি।
রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকায়।
_স্যার। এটা আমাদের কাজের যায়গা। এভাবে প্রতিদিন পার্সোনাল ইস্যু নিয়ে নিমন্ত্রণ পত্র বিতরণ, মিষ্টি বিতরণ করা আমাদের কাজ নয়, এগুলোর জন্য আমাদেরকে বেতন দেওয়া হয় না।
তাশরিফ কয়েক মুহূর্ত রোদেলার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। হাত দিয়ে এক ঝটকায় মিষ্টির প্যাকেটটা টেবিলের ওপর থেকে ফেলে দেয়। রোদেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তার দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ। তাশরিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে,”গেট লস্ট।”
রোদেলার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। তাশরিফ দরজার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,”হৃদয়হীনা।”
***
ছোট্টো একটা হাত মেঘলার শাড়ির আঁচলের একটা অংশ খামচে ধরে রেখেছে । মনে হচ্ছে মেঘলাকে সে প্রচন্ড ভরসা করে। এতো এতো অপরিচিত মুখের মধ্যে একমাত্র মেঘলার মুখটাই তার কাছে পরিচিত। মেঘলা সিরাতের গালে হাত দেয়। সিরাত পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। মাথায় আঘাত লেগে পেছনের দিকটা কেটে গিয়েছে। বেশি কিছু ক্ষতি হয়নি যদিও তবে সেলাই লেগেছে চারটা যা অতটুকু শরীরের জন্য যথেষ্ট বেশি। মেঘলা একটা হাত সিরাতের বুকের ওপর রাখে। আদুরে কন্ঠে বলে,”ভয় হচ্ছে বাবু? তোমার বাবা এক্ষুনি এসে যাবে।”
সিরাত মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ঘুরিয়ে মেঘলার কপালের দিকে তাকায়। মেঘলা মুচকি হেসে বলে,”আমার ব্যাথা সেরে গিয়েছে। তোমার ব্যাথাও সেরে যাবে।”
সিরাত খুবই ক্ষীণ কন্ঠে বলে,”পঁচা কাজ করলে আল্লাহ শাস্তি দেয় আন্টি?”
মেঘলা অবাক হয়ে সিরাতের দিকে তাকায়। সিরাত বলতে থাকে,”তোমাকে ব্যাথা দিয়েছিলাম তখন দাদী বলেছে পঁচা কাজ
করলে আল্লাহ শাস্তি দেয়। আমাকেও দেবে। তোমাকে ব্যাথা দিয়েছি বলে আল্লাহ আমাকে ব্যাথা দিয়েছে আন্টি?”
মেঘলা সিরাতকে আগলে নেয়। সিরাত বলতে থাকে,”আমার খুব ব্যাথা করছে আন্টি,আমি আর কখনো পঁচা কাজ করবো না।”
মেঘলা সিরাতের মাথাটা আলতো করে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। এই ছোট্ট জীবটার জন্য হঠাৎ করে তার মনে অদ্ভুত টান অনুভব করে সে যার ব্যখ্যা সে খুজে পায় না।
পেছন থেকে সালমান সাদাফ ডেকে ওঠে,”বাবা।”
মেঘলা মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। সাদাফ দৌড়ে এসে সিরাতকে আগলে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। কাতর কন্ঠে বলতে থাকে,”আমার বাবা। তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমার বাবা?”
মেঘলা সাদাফের অস্থিরতা দেখে। সাদাফের সন্তানের জন্য অস্থিরতা তাকে তার বাবার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। বাবাও ঠিক এতোটাই অস্থির হয়ে ওঠে তাদের কিছু হলে। মেঘলা স্বাভাবিক গলায় বলে,”ঘাবড়াবেন না। কেটে গিয়েছে শুধু। ডাক্তার সেলাই করে দিয়েছে। ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।”
সাদাফ সিরাতকে শুইয়ে দিয়ে মেঘলার দিকে তাকায়। তারপর বলে,”ধন্যবাদ আমার ছেলেটির খেয়াল রাখার জন্য।”
মেঘলা ম্লান হাসে।
***
অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে। তাশরিফের বের হতে একটু দেড়ি হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়া করে লিফটে ঢুকেই দেখে রোদেলা একা দাঁড়িয়ে আছে। তাশরিফ অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এখন এই পাষণ্ডীকে দেখার কোনো ইচ্ছা নেই তার। নূন্যতম ভদ্রতা জ্ঞান নেই এর। বৃষ্টির মতো মিষ্টি একটা মেয়ে এর বোন হয় কি করে। মনে দয়া মায়া বলতে কিচ্ছু নেই এই পাষণ্ডীর। খুব রাগ হচ্ছে তাশরিফের তার পেঁচা মুখীর উপরে। মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় সে, বিয়ের পরে এক মাসের মধ্যে এর তেজ মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে তাশরিফ। আঙ্গুলের ইশারায় নাচাবে এই হৃদয়হীনাকে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একবার আড়চোখে রোদেলার দিকে চায় সে। রোদেলা ফোন টিপছে। হঠাৎ করে পুরো লিফট অন্ধকার হয়ে যায়। রোদেলা চমকে ওঠে। লিফট থেমে গিয়েছে।
“ইলেকট্রিসিটি জনিত সমস্যা সম্ভবত, ঘাবড়ানোর কিছু নেই।”
তাশরিফ রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
রোদেলা ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে।
“আমি ঘাবড়ে গিয়েছি আপনাকে কে বললো স্যার?”
তাশরিফ চুপ থাকে। এই মেয়েটা ভাঙবে তবু মচকাবে না। একে ভালো কথা বললেও যে এর সমস্যা হয়ে যায় তা তো বহু আগেই প্রমান পেয়েছে তাশরিফ।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। তাশরিফ ফোন বের করে কর্তৃপক্ষের নাম্বার ডায়াল করে ফোন লাগায়। কিন্তু ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় আর ফোন দেয়া সম্ভব হয় না।
কয়েক মিনিট যেতেই রোদেলার ভয় হতে শুরু করে। এভাবে কতক্ষন আটকে থাকতে হবে! কেউ টের পায়নি নাকি! কেউ কিছু করছে না কেনো!
তাশরিফ ফোন উঁচুতে তুলে নেটওয়ার্ক ধরার চেষ্টা করছে। কোনো লাভ হচ্ছে না। রোদেলা মুখে “চ” কারন্ত শব্দ করে। বিড়বিড় করে বলে,”ধুররর!”
তাশরিফ ম্লান হেসে বলে,”এটা হচ্ছে আপনার শাস্তি। বৃষ্টির মতো একটা লক্ষী মেয়েকে কাদানোর শাস্তি। কাল সারাটা দিন কেঁদেছে মেয়েটা এতো ভালো একটা সুখবর পেয়েও।”
_তা আপনি কিসের শাস্তি পাচ্ছেন?
নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে তাশরিফকে।
তাশরিফ কিছু বলে না উত্তরে , কিন্তু মনে মনে বলে,”আপনার মতো হৃদয়হীনাকে ভালোবাসার শাস্তি। প্রতিদিন পাচ্ছি।”
রোদেলা কয়েক মূহুর্ত পরে বলে ওঠে,”আপনার মনে হয় না স্যার একজন বসের যেরকম আচরণ করা উচিৎ আপনি তা করেন না? কোনো ওয়ার্ক পলিসি মেইনটেইন করেন না। মনে হয় না আপনার?
তাশরিফ রোদেলার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,”একজন বস হিসেবে আমার থেকে কি ধরনের আচরণ আপনি আশা করেন? কার মতো আচরণ করলে আমার ওয়ার্ক পলিসি মেইনটেইন করা হবে? রাশেদুজ্জামানের মতো? বলুন ?
রোদেলা হতভম্ব হয়ে তাশরিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাশরিফ বলে,”আপনি চাইলে আমি রাশেদুজ্জামানের মতো আচরণ করতে পারি।”
“দিস ইজ ঠু মাচ!”
রোদেলা বিরক্ত নিয়ে কথাটি বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাশরিফ আরো একবার ফোনের নেটওয়ার্ক চেক করে মেঝেতে বসে পরে।
তারপর রোদেলাকে বলে,”এভাবে আমার মতো বসতে পারেন মেঝেতে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে যাবে। লিফটের কি হয়েছে জানি না,আজ ঠিক হবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না। অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে। হতে পারে সিকিউরিটি গার্ড অফিস তালাবদ্ধ করে দিয়ে চলে গিয়েছে। কাল সকালের আগে সম্ভবত তাদের চোখে পরবে না।”
রোদেলা খানিকটা ভীত চোখে তাকায় তাশরিফের দিকে। তাশরিফ বেশ মজা পায়,রোদেলাকে আরেকটু ভয় পাইয়ে দিতে বলে,”এরকম আগেও একবার হয়েছিলো জানেন। একজন ভদ্রমহিলা এভাবে লিফটে আটকা পরে ছিলো। সেদিন অফিসে সাত দিনের জন্য ঈদের ছুটি দিয়ে দিয়েছিলো। ভদ্রমহিলাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গিয়েছিলো তার স্বামী। সাতদিন পরে যখন সবাই অফিসে আসলো তখন লিফট বন্ধ হয়ে আছে দেখে মেরামত করে যেই না লিফটের দরজা খোলা হলো তখন পঁচা দুর্গন্ধে সবার বমি আসার উপক্রম। ভদ্রমহিলার গলিত পঁচা লাশ পরেছিলো লিফটের মেঝেতে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা গিয়েছে মহিলা পাঁচ দিন আগেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছিলেন লিফটে।”
রোদেলা অনেকটা ভয় পেয়ে যায় তাশরিফের কথা শুনে। একটা ঢোক গিলে ফেলে সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
তাশরিফ কন্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে বলে,”আমাদের এতো ভয়ের কিছু নেই। কাল সকালেই তো সবাই অফিসে আসবে। মাত্র পনেরো ঘন্টার ব্যাপার। খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা না। হ্যা,তবে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিতে পারে। খুব বেশি কিছু হলে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন শুধু। আমার কিছু হবে না,আমি পুরুষ মানুষ।”
রোদেলা দৃঢ় কন্ঠে বলে,”স্যার আপনি কি আমাকে ঘাবড়ে দিতে চাইছেন এসব বলে?”
_নাতো। আপনি ঘাবড়ে গিয়েছেন নাকি!
রোদেলা কিছু বলে না। চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। তার পায়ে খুব ব্যথা করছে। একটু বসতে পারলে ভালো হতো। সে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে কয়েকটা কাগজ বের করে মেঝেতে বিছিয়ে নিয়ে বসে পরে।
কয়েক মুহূর্ত দু’জনেই চুপচাপ। তাশরিফ হঠাৎ করে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে,
“এখানে,দুজনে, নিরজনে,সাজাবো প্রেমেরো পৃথিবী।”
রোদেলা হতভম্ব হয়ে তাশরিফের দিকে তাকায়। চোখ মুখ শক্ত করে চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে,”আপনি গান গাইছেন কেনো স্যার?”
_এই ভুতুড়ে পরিবেশটাকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। এই সময়ে আমাদের নার্ভ ঠান্ডা রাখা জরুরি। আপনিও একটা গান গেয়ে দেখুন। ভাল্লাগবে।
রোদেলা অন্যদিকে ফিরে বিরক্ত হয়ে বসে থাকে। তাশরিফ রোদেলাকে আড় চোখে দেখে। মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে রোদেলার উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মুখটা চীনা মাটির পুতুলের মতো লাগছে। এই মোহনীয় সৌন্দর্য দেখতে পেলে যে কেউ নজর লাগিয়ে দেবে। গালের ওই কালো তিলটা যেন সেই নজর আটকে দেওয়ার জন্যই ওখানে স্থান নিয়ে বসে আছে যেন।
তাশরিফ চোখ সরিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,”বৃষ্টি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। এরকম একটা মেয়ের উপরে কেউ রাগ করে থাকতে পারে? সত্যিই অবাক হচ্ছি।”
রোদেলা কোনো কথা বলে না। তাশরিফ বলে,”আমার ভাইটা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তার বৌয়ের কাছে তার উপযুক্ত স্বামী হয়ে ওঠার জন্য। সবসময় বাবার টাকা,ভাইয়ের টাকা ওড়ানো ছেলেটা কিনা স্টুডেন্টদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করিয়ে আসে। কারন তার বৌয়ের খরচ সে তার টাকায় মেটাবে।”
রোদেলা অস্ফুট স্বরে বলে,”ভালো কথা!”
তাশরিফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,”আসলে ভাইটা কার দেখতে হবে তো!”
রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকায়। কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,”তা আপনি এখনো বসে আছেন কেনো? আপনিও বিয়ে করে নিন। শুনেছি মাসের মধ্যে তিনবার পাত্রী দেখে বেড়ান। পছন্দ হয় না নাকি?”
তাশরিফ কিছুটা অপমানিত বোধ করে। শুকনো হাসি হেসে বলে,”আসলে মায়ের পছন্দ আর আমার পছন্দের সংঘর্ষে সব কিছু ভেস্তে যায়। মা সবসময় অল্পবয়সী স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। আমার পছন্দ ভিন্ন।”
রোদেলা কথা বাড়ায় না। তাশরিফের পছন্দ কেমন তা জানতে সে আগ্রহী না । হঠাৎ করে লিফটের বাতি জ্বলে ওঠে। রোদেলা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তাশরিফ খুশি হয় না। কি সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটাচ্ছিলো পেঁচা মুখীর সাথে। মনে মনে কর্তৃপক্ষের প্রতি বিরক্ত হয় এতো তাড়াতাড়ি লিফট ঠিক করার জন্য।
লিফট আবারো চলতে শুরু করে। রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। তাশরিফও উঠে পরে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে লিফটের দরজা খুলে যেতেই দেখে সিকিউরিটি গার্ড এবং কয়েকজন লোক উদ্বিগ্ন হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদেলা আগে লিফটের বাইরে পা রাখে। একজন লোক এগিয়ে এসে বলে,”সরি ম্যাম। একটু দেড়ি হয়ে গেলো। এক্সট্রিমলি সরি।”
রোদেলা লোকটাকে ঝারি মেরে চলে যায়। লোকটা তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”সরি স্যার। আর হবে না। আপনি প্লিজ কর্তৃপক্ষের কাছে কম্প্লেইন করবেন না।”
তাশরিফ লোকটার পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,”থ্যাংকস।”
লোকগুলো অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে তারপর তাশরিফকে বলে,”থ্যাংকস কেনো স্যার?”
তাশরিফ কিছু বলে না। একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে যায়।
চলমান………