#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ৬
#আদওয়া_ইবশার
অত্যধিক বিস্ময়ে হেঁচকি ওঠে যায় দৃষ্টির। চোখ দুটো গোলগোল মার্বেলের মতো আকৃতি করে ফোনের দিকে তাকিয়ে সমান তালে হেঁচকি দিয়ে যাচ্ছে। রক্তিম শিকদার তার ম্যাসেজের এমন একটা রিপ্লাই দিবে এটা কি আদও সম্ভব! এতোদিন যে শুনে এলো রক্তিম শিকদার প্রথম স্ত্রী হারিয়ে সর্বদা নারী জাতির থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলে। তবে কি সে কথা মিথ্যে? ভাবনার আকুল সাগরে ডুবে থাকা দৃষ্টির ধ্যান ভঙ্গ হয় ছোট ভাই দিহানের কথায়। বোনের রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল দিহান। তখনই দেখতে পায় হেঁচকির তোড়ে বোনের বেহাল দশা। ঝটপট রুমে প্রবেশ করে জানতে চায় দিহান,
“কি ব্যাপার আপু! তুমি না কি শিবলীদের ছাদ থেকে আচার চুরি করে খেয়েছো? আম্মু কি তোমাকে আচার বানিয়ে খাওয়ায় না? না খাওয়ালে আমাকে বলতে আমি বাজার থেকে কিনে এনে খাওয়াতাম। শুধু শুধু কেন চুরি করে মানসম্মান ডুবাতে গেলে?”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় দৃষ্টি। থম ধরে বসে থেকে মনে করার চেষ্টা করে সে কখন শিবলীদের ছাদে গেল আর কখন আচার চুরি করে খেল? তার জানা মতে সে তো আজ সারাদিন ঘর থেকেই বের হয়নি। তবে আচার কখন চুরি করল!,
“আমি কখন আচার চুরি করে খেলাম? এই কথা কে বলেছে তোকে? ঐ বুড়ি সফুরা খানম?”
প্রশ্নটুকু করে একটু থামে। কিছু একটা ভেবে বিরক্তি প্রকাশ করে আবারও বলে,
“আমি বুঝিনা ঐ বুড়ির কিসের এতো দন্দ আমার সাথে! এক পা কবরে চলে গেছে এখনো কূটনামি কমায়নি। হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ের সাথে লেগে থাকে সবসময়।”
সে কথার কোনো জবাব দেয়না দিহান। জানতে চায়,
“হেঁচকি কমে গেছে?”
হেঁচকির কথা মনে হতেই সাথে মনে পরে ভাইয়ের আগমনে রক্তিম শিকদারের ঘটনা পুরোটাই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো কিছুক্ষণের জন্য। আশ্চর্য হয় দৃষ্টি। বিস্মিত চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবে ওমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা কিভাবে তার মাথা থেকে সরে গেল। তাও এক লহমায়,
“হ্যাঁ কমে গেছে। কিন্তু কিভাবে?”
বুক ফুলিয়ে হাসে দিহান। শার্টের কলার ঝাকিয়ে বলে,
“দেখেছো তোমার ভাই কত বড় ম্যাজিসিয়ান! এক চুটকিতে তোমার হেঁচকি হাওয়া করে দিয়েছি।”
কথা শেষ করে প্রফুল্ল চিত্তে হেলতে দুলতে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তাজ্জব বনে তখনো ঠাই বসে থাকে দৃষ্টি। কিছু সময় পর নিজেকে ধাতস্থ করে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবে। পরপর ঝটপট হাতে একটা বার্তা পাঠিয়ে দেয় রক্তিমের নাম্বারে,
“কে আপনি?”
আবারও দৃষ্টিকে অবাক করে দিয়ে ঐপাশ থেকে ফিরতি জবাব আসে,
“যার জন্য তুমি পাগল হয়ে আছো আমি সেই পুরুষ সুন্দরী।”
না। এটা কিছুতেই সম্ভব না। এ রক্তিম হতে পারেনা। বার কয়েক মাথা ঝাকায় দৃষ্টি। ভাবে হয়তো ঐদিন রক্তিম তাকে অন্য কারো নাম্বার দিয়ে বোকা বানিয়েছে। না হয় রক্তিমের ফোন অন্য কারো হাতে। রক্তিম শিকদার কখনো তার ব্যক্তিত্বের বাইরে গিয়ে এমন রিপ্লাই দিতে পারেনা। প্রশ্নই আসেনা।
****
অগোছালো ছোট্ট একটা রুম। আসবাব বলতে আছে কেবলমাত্র একটা ছোট্ট খাট একটা টেবিল আর একটা আলনা। বিছানা এলোমেলো। আলনায় পুরুষ মানুষের কয়েকটা শার্ট, প্যান্ট। সেগুলোও ভাজহীন অগোছালো করে রাখা। টেবিলের উপর একটা প্লেট, একটা গ্লাস, একটা জগ। সাথে একটা খাবারের বক্স। এই ছোট্ট কবুতরের খোপের মতো এক রুমের বাসাটাই রক্তিমের শিকদারের দিন শেষে মাথা গুজার স্থান। গত দুটো বছর যাবৎ এখানেই কাটছে তার প্রতিটা নির্ঘুম রাত। হাতে গুণা কয়েকটা জিনিস আর চারপাশের দেয়াল গুলো জানে রক্তিমের এক একটা দীর্ঘশ্বাসের গল্প।
এলোমেলো বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রক্তিম। চোখ দুটো বন্ধ। পাশেই উদাস চিত্তে এক হাটু মুড়িয়ে আধশোয়া হয়ে আছে মেহেদী। নিচে মেঝেতে রাকিব, জাবির,শান্ত একেকজন একেক ভঙ্গিমায় শুয়ে, বসে। কতক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে তাদের চাপা স্বরের গুঞ্জন। আচমকা রক্তিমের বন্ধ চোখের পল্লব আলগা হয়। অলস ভঙ্গিমায় ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় মেহেদীর দিকে। ভরাট কন্ঠে বিরক্তির মিশেলে বলে,
“তোর গালে কি মাম্প হয়েছে?”
কিছু একটা ভাবনায় মগ্ন ছিল মেহেদী। হুট করে এমন একটা প্রশ্নে একটু চমকায়। পরোক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
“না। হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করলি কেন?”
“মেয়েদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেন তবে?”
প্রলম্বিত এক নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে মেহেদীর বুক চিরে। মনে মনে বলে,
“সেই কারণ যদি জানতি, তবে এতোক্ষণে হয়তো তোর সাথে আমার সম্পর্কের সমীকরণটা এমন থাকতনা। হয় আমাদের বন্ধন আরও মজবুত হতো না হয় একেবারে ছিন্ন হতো।”
ভাবনায় এটা থাকলেও মুখে উত্তর দেয় অন্য কথা,
“তেমন কিছুনা। এমনিতেই ভালো লাগছেনা। আব্বা আজকেও চিল্লাপাল্লা করেছে কতক্ষণ, কেন কোনো চাকরি করিনা, দোকানেও বসিনা। ভালো লাগেনা এসব।”
জবাবে মৌনতাকে বেছে নেয় রক্তিম। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বন্ধুর বিষন্ন মুখের দিকে। দুনিয়ায় যদি কোনো ব্যক্তি থেকে থাকে যে রক্তিম শিকদারকে একটু হলেও বুঝে। চেষ্টা করে তার ভিতরে থাকা কষ্ট গুলোকে কিন্চিৎ হলেও কমাতে। তবে সে ব্যক্তি হলো এই মেহেদী নামের ছেলেটা। যেখানে নিজের মা’ও রক্তিমকে দূরে ঠেলে দিয়েছে সবার মতো। সেখানে এই বোকা ছেলেটা বন্ধুত্বের দায়ে থেকে গেছে তার সাথে। ঢাল হয়ে পাশে থাকে প্রতিটা দিন। বাবা-মায়ের হাজার নিষেধ বারণ সত্বেও গুন্ডা বন্ধুর সঙ্গ ছাড়েনি। বরং সে নিজেও তার সাথে থেকে সাধারণ মানুষের কাছে হয়েছে গুন্ডা।
“খারাপ কি বলে? করছিস না কেন কিছু? বাপের একমাত্র ছেলে হয়ে চাকরি না কর। অন্তত বাপের ব্যবসায় হাত লাগা। অযথা আমার মতো এক খুনি, মাস্তানের পিছনে ঘুরে নিজের জীবন নষ্ট করিস না।”
মুহূর্তি শান্ত মেজাজটা খিঁচিয়ে ওঠে মেহেদীর। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“আমি আমার বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। সেজন্য আমাকে হয় চাকরি করতে হবে নাহয় বাপের ব্যবসা সামলাতে হবে। আর তোর বাপের তো গোয়াল ভর্তি ছানা তাইনা? এজন্য তোর এসবে কোনো টেনশন নাই। তোর বাপ-মায়েরও নাই। তোর বাপের সব কিছু দেখভাল করার জন্য তো গোয়ালভর্তি ছানা আছেই। তোর গুন্ডামি করে বেড়ালেও চলবে।”
বাবা-মায়ের কথা স্বরণ হতেই একটু অন্যমনস্ক হয় রক্তিম। ধূর্ত চোখের কুচকুচে কালো মনি দুটো একদম স্থির। কন্ঠ অত্যন্ত শীতল রেখে উত্তর দেয়,
“ছিল তো। গোয়াল ভরা না থাকলেও একটা ছিল। যাকে নিজের হাতে মেরে খুনি হয়েছি আমি। খুনিরা কখনো কোনো মানুষের দায়িত্ব নিতে পারেনা। কিন্তু তুই তো আর খুনি না। তোর এভাবে আমার সাথে থাকা মানায় না।”
চোখ-মুখ খিঁচিয়ে নেয় মেহেদী। এই ভাই-বোন দুটো পেয়েছে টা কি তাকে? একজন দুপুরে এক নাটক করে মাথা ব্যথা বানিয়ে দিয়েছে। সেই ব্যথা সাড়াতে এসেছে একটু নিরিবিলি নিজের মতো থাকতে সেটাও হতে দিলনা তার ভাই। মেজাজ খিঁচিয়ে চওড়া গলায় খ্যাঁকিয়ে ওঠে মেহেদী,
“বা’লে’র কথা কইয়োনা আমারে। তোমার এই কথা শুনতে শুনতে কানের পোকা সব মরে গেছে আমার। নিজে যেটা পারবেনা সেটা নিয়ে অন্য মানুষরে জ্ঞান দিতে আসবে। যত্তসব ভন্ডামি।”
মেহেদীকে রাগে ফুসতে দেখে শুকনো হাসে রক্তিম। শোয়া থেকে ওঠে বসে। বালিশের নিচ থেকে সিগারেট বের করে একটা বাড়িয়ে দেয় মেহেদীর দিকে। অন্য দিকে ফিরে থমথমে মুখে হাতে বাড়িয়ে সিগারেট নেয় মেহেদী। পুড়ো ঠোঁটের ভাজে সিগারেট রেখে লাইটার দিয়ে আগুন ধরায় রক্তিম। কাজটা করার ফাকে এক পলক দেখে নেয় নিচে বসে থাকা তিনজনকে। এক টান দিয়ে নাক মুখ দিয়ে ধোয়া উড়াতে উড়াতে গমগমে স্বরে জানতে চায়,
“তিন মাথা একসাথে করে কি রাজকার্য করছিস?”
প্রশ্নটা কানে যেতেই হুড়মুড়িয়ে তিন মাথা আলাদা করে ছিটকে বসে তিনজন। রাকিব বোকা হেসে মাথা চুলকে বলে,
“কিছুটা ভাই।”
রাকিবকে অস্বীকার যেতে দেখে পাশ থেকে ফট করে জাবির বলে দেয়,
“আমাদের রাকিব ভায়া আবার নতুন প্রেমিকার সন্ধান পাইছে ভাই। তাও আবার পাখি নিজে থেকে এসে ধরা দিছে। আহ! কি সেই মাখো মাখো প্রেমকথন!”
একটু থমকায় রক্তিম। আচমকা শক্ত হয়ে ওঠে চোখ-মুখ। চোয়াল শক্ত করে শানিত কন্ঠে বলে,
“কতবার বলেছি ঐসব ছলনাময়ীর পাল্লায় পরবিনা কেউ। এরা কাল সাপের থেকেও ভয়ংকর হয়। একেবারে বরবাদ করে দেয় পুরুষের জীবন।”
পাশ থেকে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয় মেহেদী,
“সব মেয়ে এক হয়না। যদি এক রকম হতোই তবে তোর আর আমার মা এখনো নিজের কথা না ভেবে স্বামীর সংসারে পরে থাকতনা হাজার ঝড়-ঝাপটা সহ্য করে।”
খাটের হেডবোর্ডে হেলান নিয়ে আবারও চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় রক্তিম। দম ছাড়ে বুক ফুলিয়ে। জলন্ত সিগারেট আঙুলের ভাজে নিয়ে সেই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়েই কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলে,
“কাচ যেমন ভাঙলে জোড়া লাগেনা। তেমন বিশ্বাস ও একবার একবার ভেঙ্গে গেলে আর কারো প্রতি তৈরী হয়না। নারী জাতির কাছে একবার যে ঠকে সে জানে এরা কতটা ভয়ংকর।”
“তোর বিশ্বাস ভেঙেছে কিন্তু আমাদের তো ভাঙ্গেনি। তবে আমরা কেন নারী বিদ্ব্যেশি হব?”
লম্বা দুটো দিয়ে সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশটুকু ফিল্টারে ফেলে মেহেদীর দিকে তাকায় রক্তিম। গম্ভীর চোখ দুটো অপলক রেখে শান্ত অথচ অত্যন্ত ধারালো স্বরে জানতে চায়,
“তোর সত্যিই বিশ্বাস আছে নারী জাতির উপর? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবি কখনো ঠকবিনা?”
কিছু একটা হয়তো ছিল রক্তিমের কন্ঠে। যার দরুন অল্প ঘাবড়ায় মেহেদী। জ্বিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে স্থিমিত স্বরে জানায়,
“এই মনে যে নারীর প্রতিচ্ছবি আঁকা আছে আমার বিশ্বাস, সে নারী কখনো আমার বিশ্বাস ভাঙবেনা।”
রক্তিমের ঠোঁট দুটো অল্প বিস্তর ফাঁক হয়। গম্ভীর মুখে তবে কি অধরা হাসির দেখা মিলল! নিচে বসেই গভীর নয়নে রক্তিমের মুখ পর্যবেক্ষণ করে হাসি খোজার প্রয়াস চালায় রাকিব, জাবির, শান্ত। তবে না! কিছুই পাওয়া যায়না। হতাশ হয় তিনজনই। দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকায় একে অপরের মুখের দিকে। ঠিক তখনই শুনতে পায় রক্তিমের কন্ঠ নিঃশৃত বাক্য,
“যদি তোর মনে সত্যিই এতোটা বিশ্বাস থেকে থাকে। তবে কথা দিলাম আমি। তোর মনে যে নারীর প্রতিচ্ছবি সে নারী তোর।”
এমন একটা জবাব একটুও আশা করেনি মেহেদী। সেই আশাহীন জবাব পেয়ে বুক কাঁপে মেহেদীর। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়। দৃষ্টি হয় চঞ্চল। ঘনঘন ঢোক গিলে শুকিয়ে আসা গলাটা ভিজানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। মনে মনে ভাবে,
“যদি জানতি সেই নারী তোর আদরের ছোট বোন তবে কখনো এমন কথা দিতে পারতিনা।” মুখে জবাব দেয় অসাঢ় কন্ঠে,
“যে কথা কখনো রাখতে পারবিনা এমন কথা কখনো দিস না।”
কপালে গুটি দুয়েক ভাজ পরে রক্তিমের। শ্লান ভরাট স্বরে জানতে চায়,
“আমার জানা মতে আমি কাওকে কখনো এমন কোনো কথা দেইনি যে কথা রাখতে পারিনি। তবে তোর কেন মনে হচ্ছে তোকে দেওয়া কথা রাখতে পারবনা?”
“এমনি।” ছোট্ট স্বরে জবাব দিয়ে আর কিছু বলার সুযোগ দেয়না মেহেদী। চুপচাপ বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকে রক্তিম। কিয়ৎ সময় পের হতেই এবার সত্যি সত্যিই রক্তিমের ঠোঁটের কোণে দুর্বোধ্য সেই হাসির রেখে দেখা দেয়। যা দেখে অবাকের চরম পর্যায় গিয়ে কিছু বলতে ভুলে যায় নিচে বসা তিনজন। শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে দেখে মহামূল্যবান সেই হাসি।
চলবে…..
#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ৭( প্রথম অংশ)
#আদওয়া_ইবশার
দিন যায়, রাত আসে। সেই রাত শেষে আবারও এক নতুন দিনের সূচনা হয়। এভাবেই কেটে যায় মাসের পর মাস। সুখ-দুঃখ দুটোকেই সারথী করে সময় এগিয়ে যায় নিজের মতো করে আপন নিয়মে। দৃষ্টি, তুসী দুজনের পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে অনেক দিন আগেই। দুজনেই সর্বোচ্চ জিপিএ নিয়ে উত্তির্ণ হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সময়টাও অতি নিকটে। সেদিন রক্তিমের নাম্বার থেকে এমন রিপ্লাই পেয়ে আর যোগাযোগ করার সাহস পায়না সে। তবে সময় যত গড়াচ্ছে ততই মনে হচ্ছে রক্তিম নামক মানুষটা তার সর্বত্র জুড়ে বিরাজ করছে। দিন কে দিন গাঢ় হচ্ছে অনুভূতি। প্রগাঢ় হচ্ছে হৃদয়ের তোলপাড়। তনুমন উতলা সিক্ত হচ্ছে নব্য প্রেমের ছোঁয়ায়। মনে হয় মনটা আর তার মাঝে নেই। পরে আছে সাভারে গুন্ডা রক্তিম শিকদারের কাছে। এই এতো এতো অনুভূতির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ দৃষ্টি। ইচ্ছে করে এক ছুটে ময়মনসিংহ ছেড়ে পালিয়ে যেতে রক্তিমের কাছে। চোখে চোখ রেখে প্রগাঢ় স্বরে বলতে,
“আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই। নিঃস্ব হয়ে গেছি আপনার প্রেমে। আমাকে প্লিজ আপনার শক্ত বুকে ঠাই দিয়ে একটু নিশ্চিন্তে শ্বাস নিতে দিন গুন্ডা মশাই!”
কিন্তু পারছেনা। এই এতো এতো অসহ্য বেহায়া অনুভূতিদের নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখে চুপটি করে দিন পার করতে হচ্ছে। অনুভূতিদের জাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে নব্য প্রেমে সিক্ত হওয়া হৃদয়।
জানালার কার্নিশ ঘেষে উদাস চিত্তে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে দৃষ্টি। মেঘলা আকাশ। টুকরো টুকরো মেঘ গুলো উড়ে যাচ্ছে নিজের মতো করে। মাঝে মাঝে দুই-একটা পাখি ডানা মেলে মনের সুখে উড়ছে মেঘেদের সাথে পাল্লা দিয়ে। পিছন থেকে কেউ হঠাৎ কাধে হাত রাখায় আকাশ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পেছন ঘুরে তাকায় দৃষ্টি। দিলশান আরা দাঁড়িয়ে আছে। চঞ্চল মেয়েটা এভাবে চুপটি করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে ভাবে হয়তো কিছু একটা নিয়ে মন খারাপ মেয়ের। জিজ্ঞেস করে,
“কি ব্যাপার? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু নিয়ে মন খারাপ?”
ধাতস্থ হয় দৃষ্টি। নিজেকে স্বাভাবিক করে ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলে,
“কিছুই হয়নি আম্মু। একটানা পড়তে ভালো লাগছিলো না তাই এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। তুমি স্কুল থেকে কখন এসেছো?”
মেয়ের কথা বিশ্বাস হয়না দিলশান আরা’র। তবুও কোনো প্রশ্ন না করে উত্তর দেয়,
“মাত্রই এলাম। একটানা পড়তে কে বলেছে তোমাকে? মাঝে মাঝে দিহানের সাথে বাইরে থেকে একটু ঘুরে এসো। মাইন্ড ফ্রেশ হবে।”
দ্বিমত করেনা দৃষ্টি। মাথা ঝাকিয়ে সায় জানিয়ে বলে,
“আচ্ছা যাব। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। দুপুরে খাইনি আমি। তোমার সাথে খাব।”
কোনো রা ছাড়াই বেরিয়ে যায় দিলশান আরা। একটা সরকারি কলেজে বাংলা প্রভাষক হিসেবে গত সাত বছর যাবৎ যুক্ত দিলশান আরা। কর্ম জীবনের ব্যস্ততার কারণে চাইলেও সবসময় ছেলে-মেয়ে দুটোকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারেনা। ছুটির দিন ছাড়া দুপুরে একসাথে খাওয়ার সুযোগটাও হয়ে ওঠেনা। দৃষ্টির বাবা সাদেক সাহেবের ময়মনসিংহ শহরেই নিজস্ব ছোটখাট একটা গার্মেন্টস ফেক্টরি। বাবা ব্যস্ত ব্যবসায়ীক কাজে আর মা ব্যস্ত শিক্ষকতাই। দৃষ্টি, দিহান দুই ভাই-বোনের দিন কাটে একা একাই। বাসায় সারাদিন তারা দুজন ভাই-বোন আর একজন কাজের লোক ছাড়া কেউ থাকেনা। দৃষ্টি সাদেক সাহেব, দিলশান আরা দুজন কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের মেয়ে হিসেবে হয়েছে একদম বিপরীত ধাচের। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল এই মেয়ের চঞ্চলতা নিয়ে মাঝে মাঝে বাবা-মা দুজনের মাঝে চলে বাক বিতন্ডতা। দোষারোপ করে একে অপরকে। তাদের ব্যস্ততার কারণে মেয়েটা শাসন বারণ না পেয়ে এমন চঞ্চল হয়েছে। তবে কিছুই করার থাকেনা। দুই সন্তানের সুন্দর একটা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সাদেক সাহেব টাকার পিছনে না ছুটে পারেনা ছেলে-মেয়ে দুটোকে সময় দিতে। আর না পারে দিলশান আরা নিজের যোগ্যতা, মেধা লুকিয়ে রেখে শুধু স্বামী-সংসার সন্তান নিয়ে দিন কাটাতে। দিলশান আরার মতে প্রতিটা মেয়ের প্রয়োজন আলাদা ভাবে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলা। মাথা উচু করে সমাজে চলতে গেলে শুধু চার দেয়ালের মাঝে বন্দি থেকে সংসার সামলালেই হয়না। তার জন্য প্রয়োজন হয় নিজেকে যোগ্য হিসেবে সমাজের সামনে উপস্থাপন করা। দিলশান আরার এই ভাবনাতেই অসন্তুষ্ট সাদেক সাহেব। স্ত্রীকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করে, সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারেনা। জবাবে দিলশান আরাও জানিয়ে দেয়, তার ছেলে মেয়ে সঠিক শিক্ষা আদর্শ নিয়েই বড় হচ্ছে। যেটুকু চঞ্চলতা আছে মেয়ের মাঝে পুরোটাই বয়সের দোষ। ঠিক এভাবেই দুজন দুজনের জায়গা থেকে বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করিয়ে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে ছিটকে আসে এসব আলোচনা থেকে। তবে সময় তো আর থেমে থাকেনা। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতেই কাটে দুই ভাই-বোনের দিন। তবুও কখনো তারা বাবা-মায়ের প্রতি কোনো অভিযোগ রাখেনি। চঞ্চল দৃষ্টির স্বভাবে থাকলেও ভালো করেই বুঝতে পারে বাবা-মায়ের দিকটা। সে জানে বাবা এবং মা দুজন দুজনের জায়গা থেকে ঠিক। এবং তারা যা করছেন তা শুধুমাত্র তাদের দুই ভাই-বোনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই করছেন।
অনেক দিন পর একটু সময় পেয়ে ছেলে-মেয়ে দুটোকে নিয়ে দিলশান আরা দুপুরের খাবার খেয়ে গল্প আড্ডায় পার করে সন্ধ্যার আগ পযর্ন্ত পুরোটা সময়। মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে দৃষ্টিও কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায় রক্তিমের কথা। ছোট বাচ্চাদের মতোই ভাই-বোন দুজন মায়ের দুই পাশে বসে উগলে দেয় মনে জমে থাকা সমস্ত কথা। সন্ধ্যার কিছুটা পর পর সাদেক সাহেব বাড়িতে এসে স্ত্রী সন্তানদের একসাথে হাসি খুশি বসে আনন্দ করতে দেখে প্রশান্ত হৃদয়ে নিজেও যোগ দেয় তাদের সাথে। বহুদিন পর বাবা-মা দুজনকে একসাথে পেয়ে বিগলিত হয় ভাই-বোন দুজন। রাজ্যের যত আবদার, অভিযোগ, অভিমান জমে থাকা কথা সব প্রকাশ করে বাবা-মায়ের কাছে। সন্তানের পড়াশোনা, নিজেদের কর্ম জীবনের ব্যস্ততা সমস্ত চিন্তা চেতনা এক পাশে রেখে কেটে যায় সুন্দর কিছু সময়।প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হয় স্বরণীয় এক মুহূর্ত। জমজমাট আড্ডা শেষ হয় একেবারে রাতের খাবারের সময়। সকলে মিলে একসাথে খাওয়া শেষে যে যার রুমে যায় ঘুমানোর উদ্দেশ্যে। সুন্দর একটা সময় কাটানো শেষে রুমে এসে ফুরফুরে মনে ঘুমাতে যায় দৃষ্টি। ঠিক তখনই বেজে ওঠে তার ফোন। বিছানার কাছ থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে দেখতে পায় কলটা এসেছে তুসীর নাম্বার থেকে। মুখ ভেংচায় দৃষ্টি। বিরবির করে বলে,
“আমি কল দিলে ধরতে চায়না। ধরলেও এমন ভাবে কথা বলে যেন অচেনা কেউ বিরক্ত করছি তাকে। এখন কেন আমাকে কল দিচ্ছিস। ধরবনা আমিও। দেখ কেমন লাগে।”
ফোনটা সাইলেন্ট মোডে রেখে ঘুমিয়ে যায় নিশ্চিন্তে।
সকালে ঘুম ভাঙ্গে মায়ের ডাকে। কাক ডাকা ভোরে দু-চোখ থেকে ঘুম সরেনা দৃষ্টির। দিলশান আরা কতক্ষণ ঠেলেঠুলে মেয়েকে উঠিয়ে ফোন ধরিয়ে দেয় হাতে। বলে যায় জরুরি কল। কথা বলে যেন। কোনোমতে ফোন কানে ঠেকিয়ে ঘুমে জড়িয়ে আসা কন্ঠে সাড়া দেয় দৃষ্টি,
“হ্যালো কে?”
তৎক্ষণাৎ ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে আসে তুসীর ব্যগ্র কন্ঠ,
“এখনো আপনার ঘুম কাটেনি শেহজাদী! ঘুমান। শান্তির ঘুম ঘুমান আপনি। এদিকে আপনার রাজ কুমার বুলেটের আঘাতে বুক ঝাঝরা করে হাসপাতালে মৃ’ত্যু’র সাথে পাঙ্গা লড়োক।”
সকাল সকাল এমন একটা সংবাদে কিংকর্তব্য বিমূঢ় দৃষ্টি। হতবম্ভ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করে তুসীর কথাটুকু। ফাঁকা মস্তিষ্ক ঘটনার সারসংক্ষেপ ধরতে পারেনা এখনো। নিজেকে একটু ধাতস্থ করে প্রশ্ন ছুড়ে,
“কি বলছিস? কার কি হয়েছে?”
এবারও শোনা যায় তুসীর রাগি কন্ঠের ব্যাঙ্গাত্বক জবাব,
“আপনার পেয়ারের হিরো রক্তিম শিকদারের উপর গত রাতের আগের রাতে কারা যেন হামলা করেছিল। গুলি লেগেছে বুকে। শরীরের আরও বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। ঘটনা এতোক্ষন শোনা না গেলেও অবস্থার অবনতি হওয়াই পুরো এলাকায় রটনা হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো আবার বলছে বাঁচার না কি কোনো সম্ভাবনা নেই।”
চলবে…..
#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ৭ (শেষ অংশ)
#আদওয়া_ইবশার
আচমকা এমন একটা সংবাদে স্তম্ভিত দৃষ্টি। অনুভূতিহীন কেটে যায় কিছু সময়। পরপরই মনে হয় বুকের ভিতর একটু একটু করে সৃষ্টি হচ্ছে বেসামাল যন্ত্রণা। সকালের ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও ঘামছে সে। অন্তর্দাহে পুড়ছে মন জমিন। কিভাবে কি হলো কিছুই জানেনা। শুধু জানে সে যন্ত্রণা নামক এক অথৈ সাগরে ডুবে যাচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে গভীর অতলে। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে,
“আমি যাব।”
ফোনের অপর প্রান্তে থাকা তুসী এমন একটা জবাবে কপাল কুঁচকায়। জানতে চায়,
“কোথায় যাবি?”
দৃষ্টির হৃদয়ে সৃষ্ট যন্ত্রণাটুকু কান্না হয়ে ফুলে ফেঁপে দু-চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরতে চাইছে। চোখ দুটো কেমন জ্বালাপুড়া শুরু করেছে এখনই। কিছু বলতে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করে তার কন্ঠ দিয়েও কোনো শব্দ বের হচ্ছেনা। শরীর জুড়ে কাঁপুনি অনুভূত হচ্ছে। কোনোমতে নিজেকে সামলায় সে। ধরা গলায় অস্ফুটে বলে,
“সাভার যাব আমি। রক্তিম শিকদারের কাছে।”
মেজাজ খিঁচিয়ে আসে তুসীর। পাগল মেয়ে বলে কি ?কোথাকার কোন গুন্ডা মাস্তানের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সে না কি ময়মনসিংহ ছেড়ে ঢাকায় আসবে! অত্যন্ত রূঢ় স্বরে জবাব দেয়,
“মাথার স্ক্র কি সব গুলো ঢিলা হয়ে গেছে তোর? আমি তোকে ফোন করে খবরটা দিয়েছি যাতে তুই অন্তত একটু হলেও উপলব্ধি করতে পারিস রক্তিম শিকদার সাধারণ কোনো মানুষ না। এই লোকের মতো গুন্ডা, মাস্তানের মৃত্যু সর্বক্ষণ কাধে চড়ে নাচে। শুধু এদের না এদের সাথে যারা নিজেকে একবার জড়িয়ে নেয় তাদের জীবনও অনিশ্চিত। বাচ্চা না তুই দৃষ্টি। সব বুঝিস। এক পলকের দেখায় কখনো প্রেম হয়না। তাছাড়া তুই নিজেও হয়তো জানিস না রক্তিম শিকদার কি হয় তোর? আর রক্তিম শিকদার! সে তো তোকে চিনেই না। তবে কেন এতো অস্থিরতা তোর?”
সত্যিই তো! এক পলক চোখের দেখায় আসলেই কি কাওকে ভালোবাসা যায়? কি হয় রক্তিম শিকদার তার? এই নামহীন একটা সম্পর্কের জন্য কিসের এতো ছটফটানি তার? দৃষ্টি না হয় দিয়ে দিল তার অনুভূতি গুলোর নাম ভালোবাসা। কিন্তু রক্তিম শিকদার! সে কি কখনো দৃষ্টির হৃদয়ের কথা জানতে পারবে? দৃষ্টির মতো তার মনেও কি কখনো এমন বেসামাল অনুভূতির সৃষ্টি হবে দৃষ্টির জন্য! আর কিছুই ভাবতে পারেনা দৃষ্টি। ভাবতেও চায়না কিছু। দু-চোখ উপচে গড়িয়ে পরে বিন্দু বিন্দু অশ্রু কণা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মনে হয় কোনো এক বিষ পোকা কামড়ে ধরেছে বুকের বা পাশে। ছটফট করে দৃষ্টি এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু পারেনা। বরং আরও গাঢ় হয়ে ওঠে যন্ত্রণা। নিম্নোষ্ঠ কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায় দৃষ্টি। নাক টেনে করুন সুরে বলে,
“তুই বুঝবিনা আমার হৃদয়ে এই মুহুর্তে কি চলছে। রক্তিম শিকদার কে বা কেমন লোক কিছুই জানিনা আমি। আর জানতে চাই ও না। আমি শুধু জানি আমার বুকের ভিতর ভিষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার। রক্তিম শিকদার!এই নামটাতেই বড্ড দূর্বল হয়ে গেছি আমি। নিজের অনুভূতিদের নিজেই সামলে রাখতে পারছিনা। কত শাসিয়েছি মনকে কিন্তু মন আমার কথা শুনেনা। তুই বিশ্বাস কর তুসী,যখনই মনে পরে তার কথা ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুড়ে ছুটে চলে যায় তার কাছে। সেই মানুষটার এমন একটা সংবাদ শুনে আমার ভিতরে কি চলছে একবার বোঝার চেষ্টা কর। ভাব আমি কি পরিস্থিতিতে আছি। ভালোবাসা কখনো ধর্ম, কর্ম মেনে হয়না তুসী। নির্দিষ্ট একজনের প্রতি ভালোবাসা নামক অনুভূতিটা এমনিতেই চলে আসে। আমার বেলাতেও তাই হয়েছে। আমি জানি আমার মন জানে রক্তিম শিকদার কি আমার কাছে। তুই আর কখনো আমার অনুভূতি গুলো নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে কষ্ট দিস না প্লিজ।”
থমকে যায় তুসী। মন থেকে উপলব্ধি করে দৃষ্টির প্রতিটা কথা। বুঝতে পারে মেয়েটার মনে সৃষ্টি হওয়া অনুভূতির প্রগাঢ়তা। সহসা চোখ দুটো বন্ধ করে প্রলম্বিত শ্বাস টানে। বলে,
“যে পথে পা বাড়িয়েছিস সেই পথ পুরোটা কাঁটায় ভরা বুঝতে পারছিস তুই? মানলাম তোর অনুভূতি মিথ্যে নই। রক্তিম শিকদার ও মেনে নিল তোকে। কিন্তু খালামনি আর খালুজান? তুই তাদের একমাত্র মেয়ে। তারা কখনো চাইবে একটা গুন্ডার সাথে নিজেদের আদরের মেয়ের বিয়ে দিতে? ওরা যদি মেনে না নেয় তখন সইতে পারবি তো বিচ্ছেদের যন্ত্রণা?”
ক্লেষ্ঠ হাসে দৃষ্টি। শুকনো খড়খড়ে ঠোঁট দুটো জ্বিভের ডগায় ভিজিয়ে বলে,
“আম্মু-আব্বুর কাছে যদি সব কিছুর উর্দ্ধে তাদের মেয়ের সুখ থাকে তবে মেনে নিবে। আর না হলে তো নাই। সব কিছু জেনে নিজ থেকেই যখন আগুনে ঝাপ দিয়েছি তখন না হয় সহ্য করলাম পুড়ে ছাই হবার যন্ত্রণা।”
****
সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১০৩ নাম্বার কেবিনের সামনে রক্তিম শিকদারের কিছু কাছের মানুষের ভীড় জমেছে। কিছুক্ষণ আগেই তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। আগের থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে কিছুনা। গত রবিবার আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে রক্তিমের উপর হামলা হয়। জরুরি একটা কাজ সেড়ে দলের ছেলেদের বিদায় দিয়ে একাই বাইক চালিয়ে নিজের ঠিকানায় ফিরছিল রক্তিম। ঠিক সেই মুহুর্তে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোথা থেকে যেন বুলেটের আঘাত এসে ঝাঝড়া করে দেয় রক্তিমের বুক। তৎক্ষণাৎ বাইক থেকে ছিটকে পরে রক্তিম। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই মুখোশধারি কয়েকজন ঝাপিয়ে পরে তার উপর। নির্মম ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বেহুশ রক্তিমকে ফেলে যায় রাস্তার পাশে। রাতের শেষ প্রহরে এক দল তরুণ যুবক এই রাস্তা ধরেই নিজেদের বাড়ি ফিরছিল। তখনই দেখতে পায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক লোক পরে আছে। ছেলে গুলো প্রথমে ভয়ে কাছে না আসলেও কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে অনেক ভেবে মনে সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে যায়। উল্টো হয়ে পরে থাকা দেহটা ঠেলে সোজা করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রক্তিম শিকদারের রক্তাক্ত মুখ। বুকের পাশ থেকে তখনও অবিরাম ধারায় তাজা রক্ত গড়িয়ে পরছিল। বেদনায় ক্লিষ্ট রক্তিমের চোখের পাতা একটু একটু করে কেঁপে উঠছিলো।যুবক দল নিজ উদ্যোগে রক্তিমের পকেট হাতরে ফোন বের করে জানিয়ে দেয় দলের ছেলেদের কাছে এই খবর। খবরটা একজনের কানে পৌঁছনোর কয়েক মিনিটের মাথায় ঝড়ের গতিতে ছুটে আসে প্রত্যেকে। নিয়ে যাওয়া হয় রক্তিমকে হাসপাতালে। আজীজ শিকদার ছেলের এমন করুন অবস্থার কথা জানতে পেরে কাওকে কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারেই ছুটে আসে হাসপাতালে। কিন্তু ছেলেকে দেখতে পারেনা এক নজর। ওনার আসার আগেই রক্তিমকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রপচার করে বুক থেকে বুলেট বের করতে পারলেও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনা ডাক্তার। টানা চব্বিশ ঘন্টা আইসিইউ এ অচেতন থাকার পর আজ জ্ঞান ফিরে তার। তবে বুকের আঘাতের কারণে এখনো ঠিকমতো কথা বলতে পারছেনা।
ফিনাইলের তীব্র গন্ধে কপাল কুঁচকে চোখ বন্ধ করে পরে আছে রক্তিম। তার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবথেকে বাজে গন্ধ যদি কোথাও থেকে থাকে তবে সেটা এই হাসপাতাল নামক জায়গায় মেডিসিন আর ফিনাইল এর তীব্র গন্ধ। অসহ্যকর এই গন্ধ কয়েক মিনিটের ভিতর মাথা ব্যাথা ধরিয়ে দেয় রক্তিমের। সুস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থাতেই সে কখনো হাসপাতালে পাঁচ মিনিটের বেশি টিকতে পারেনা। সেখানে এমন অসুস্থ অবস্থায় কিভাবে থাকবে? একেতো শরীরের কাটাছেড়ার যন্ত্রণা। তার উপর এসব উটকো গন্ধে মাথা ব্যাথার সাথে পেট গুলিয়ে মুখ ভরে বমি আসতে চাইছে। দাঁতে দাঁত খিঁচে সহ্য করে চুপচাপ পরে আছে রক্তিম। নিরব কেবিনে হঠাৎ কারো পদচারনায় ভাবে হয়তো কোনো নার্স বা ডাক্তার এসেছে। চোখ বন্ধ অবস্থায় ভারি স্বরে জানতে চায়,
“আমাকে এখানে আর কতদিন স থাকতে হবে?”
“যতদিন পযর্ন্ত পুরোপুরি শরীর সুস্থ্য না হচ্ছে ততদিন। এর থেকে বেশিদিন থাকার ইচ্ছে থাকলে আবার কারো গুলির সামনে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে যান। বুক ঝাঝড়া করে আবার না হয় আসবেন হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে আরাম করার জন্য।”
কোনো নার্স বা ডাক্তারের গলার আওয়াজের পরিবর্তনে চিরচেনা বাবার গম্ভীর স্বরের জবাব পেয়ে একটু চমকায় রক্তিম। ভারি হয়ে আসা চোখের পল্লব ঝাপটে খুলে ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকায় আজীজ শিকদারের দিকে। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও চোখ বুজে নেয়। জ্ঞান ফেরার পর থেকে শত চেষ্টায় টেনেটুনেও বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছেনা রক্তিম। মনে হয় চার পাশের সমস্ত কিছু ঘুরছে। রাজ্যের ঘুম জমে আছে চোখের পাতায়।
“কেমন লাগছে এখন?”
আজীজ শিকদারের কন্ঠ এবার যথেষ্ট নরম শোনায়। শারীরিক বেদনা ভুলে বুকের ভিতর এক টুকরো প্রশান্তি উপলব্ধি করে রক্তিম। বাঃহিক দিক থেকে সবার কাছে পরিচিত পাষাণ হৃদয়ের রক্তিম শিকদারের মনটা যে প্রতিনিয়ত জন্মসূত্রে পাওয়া আপন মানুষ গুলোর একটু ভালোবাসার জন্য সর্বক্ষণ কাঙ্গাল হয়ে থাকে এই খবর একমাত্র রক্তিম শিকদার ছাড়া কেউ জানেনা। মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে সে ঠিক জানে এখনো সে এতোটা পাষাণ হয়ে উঠতে পারেনি যতটা পাষাণ হলে বাবা-মায়ের জন্য মন ছটফট করেনা।
“ভালো।” অস্ফুট স্বরে জবাব দেয় রক্তিম। ছেলের দিকে তাকিয়ে হতাশাভরে নিঃশ্বাস ছাড়ে আজীজ শিকদার। মন্থর গতিতে এগিয়ে এসে রক্তিমের মাথার কাছে একটা টুল টেনে বসে। নিচের দিকে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কন্ঠে অসহায়ত্ব ঢেলে বলতে থাকে,
“আমি নিজে রাজনীতিতে পা বাড়ালেও কখনো চাইনি আমার ছেলেরা রাজনীতিতে আসুক। অথচ আমার কানের কাছে রাজনীতি নামটা উচ্চারিত হলেই শরীরের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে এখনো। চোখে ভাসে শহস্র স্বপ্ন। যে আমার হাতে শত শত তরুণ রাজনীতিবিদের জন্ম সেই আমি শুধুমাত্র উপজেলাল মেয়র হয়ে থামিয়ে দিয়েছি পথচলা। পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে আর সামনে আগানোর সাহস পায়নি। এটুকুও ছেড়ে দিতাম যদি রক্তের সাথে রাজনীতি নামটা মিশে না যেতো। তোমাকে সামরিক বাহিনীতে দিয়ে এলাকা থেকে বের করলাম। ইচ্ছে ছিল সংগ্রামকে পিএইচডির জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিব। মেয়ে দুটোকে যত দ্রুত সম্ভব পাত্রস্থ করব। কারণ এক আমি রাজধানীর সাথে জড়িয়ে মনে হতো পুরো পরিবারের ধ্বংস ডেকে নিয়ে এসেছি। সর্বক্ষণ ভয় হতো তোমাদের নিয়ে। যদি কখনো কেউ কোনো ক্ষতি করে দেয়! আমার সুন্দর পরিবারটায় যদি ধ্বস নেমে আসে! ভাগ্যের পরিহাসে সেই ধ্বংস নেমে আসলোই আমার সুখের পরিবারে। এর জন্য আমি কখনো তোমাকে দায়ী করিনি আর করবও না। তবে তুমি ঐ ধ্বংস লিলার পরও থামোনি। সেই আমার ভয় সত্যি করে পা বাড়িয়েছো বি-পথে। এলাকার মানুষের ভালো করতে গিয়ে মারামারি কাটাকাটি করে সবার কাছে গুন্ডা নামে পরিচিত হয়েছ। তোমাকে দমাতে না পেরে রাগে দুঃখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললাম। তুমিও আমার মুখের কথা শুনে তাই করলে। একটাবার আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে আমার ভিতরের কষ্ট গুলো দেখলেনা। লিয়াকত বিল্লা কতটা ভয়ংকর সেটা আমি জানতাম। যখন শুনলাম লিয়াকত বিল্লার ছেলের গায়ে হাত তোলার অপরাধে তুমি জেলা তখন আর বাবা হয়ে স্থির থাকতে পারিনি। ছুটে গিয়েছিলাম তার কাছে মাথা নত করেও যদি কোনোমতে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এই দন্দ মিটাতে পারি! একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছিলাম। পরদিন আবার যেতাম আমি। সন্তানের জীবনের থেকে বাবা-মায়ের কাছে সম্মান কখনো বড় হতে পারেনা। তবে তার আগেই তোমার প্রিয় জনগণ আন্দোলন করে ছুটিয়ে আনল তোমাকে। ঘুমন্ত বাঘকে জাগিয়ে উস্কানি দিয়ে লেলিয়ে দিল তোমার উপর। আমি শতভাগ নিশ্চিত তোমার উপর এই আক্রমণ লিয়াকত বিল্লা করিয়েছে।”
“সেটা আমিও জানি।”
বাবার এতো গুলো কথার পর জবাব দেয় রক্তিম। কথার মাঝে বাধা পরায় ছেলের প্রতি রুষ্ট হয় আজীজ শিকদার। নিচু স্বর কিছুটা উচু করে বলে,
“কথা শেষ করতে দাও আমাকে। এরপর তোমার যা ইচ্ছা বলো।”
চুপ থেকে সম্মতি দেয় রক্তিম। আজীজ শিকদার কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলতে থাকে,
“আজ ভাগ্যের জুড়ে বেঁচে গেলেও লিয়াকত বিল্লা কখনো সুস্থ্য ভাবে বাঁচতে দিবেনা। এক সন্তান হারিয়ে আমার ঘরটাতে যে শূণ্যতা এখনো বিরাজ করছে সেই একই শূন্যতা আমি আর চাইনা। গত দুটো বছর তো কত আবদার করলাম তোমার কাছে। কোনোটাই রাখলেনা। আজকে শেষ একটা আবদার করব। বলতে পারো বাবা হয়ে সন্তানের কাছে অনুরোধ রাখব। আমার অনুরোধটা রাখবে?”
“কি?” একই ভাবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে জানতে চায় রক্তিম। আজীজ শিকদারের দৃষ্টি চঞ্চল হয়। কথাটা বলতে একটু দ্বিধা কাজ করে। তবুও সেই দ্বিধাটুকু কাটিয়ে বলে ওঠে,
“লিয়াকত বিল্লার কাছে মাফ চেয়ে ঝামেলা চুকিয়ে নাও। এটা তোমার কাছে এক অসহায় বাবার অনুরোধ। আমার কথা না ভাবলেও নিজের বোনটার কথা একটু ভাবো। সে তোমার ক্ষতি করতে না পেরে যদি তোমার বোনের কোনো ক্ষতি করে দেয়?”
কথাটা কানে পৌঁছাতেই তড়িৎ দু-চোখের পাপড়ি আলগা হয়ে যায় রক্তিমের। দৃষ্টিতে অবাক বিস্ময় নিয়ে তাকায় বাবার দিকে। শুভ্র রাঙা পাঞ্জাবী পরিহিত ভদ্রলোককে আজীবন জেনে এসেছে দিলখোলা মানুষ হিসেবে। রাজনীতিতে জড়ালেও কখনো অন্য কোনো দলের সাথে কোনো প্রকার ঝামেলা করেনি নিজে থেকে। সর্বক্ষণ নিজেকে জনগণের সেবায় উৎসর্গ করেছে। সেই লোক কিভাবে নিজের সন্তানকে অন্যায়ের প্রতি মাথা নত করতে বলে? ভেবে পায়না রক্তিম। কিছু পল চুপচাপ বাবাকে দেখে নিয়ে গলা উচু করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দলের ছেলেদের ডাকে। সাথে সাথেই ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে। একটু বিচলিত হয় আজীজ শিকদার। সেদিকে পাত্তা দেয়না রক্তিম। চোখ-মুখ খিঁচিয়ে ব্যাথা হজম করে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢোকা রাকিবের উদ্দেশ্যে বলে,
“মেহেদীকে ডাক।”
তৎক্ষণাৎ দরজা থেকেই বেরিয়ে যায় রাকিব। এর কিছুক্ষণ পরই হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকে মেহেদী। তাকে দেখেই রক্তিম আদেশ ছুড়ে,
“ঐদিনের ভিডিও স্ক্রিপ্টটা তোর কাছে আছে না?”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় মেহেদী। আবারও আদেশ ছুড়ে রক্তিম,
“মেয়র সাহেবকে দেখা ওটা।”
একবার রক্তিমের মুখের দিকে আর একবার আজীজ শিকদারের মুখের দিকে তাকায় মেহেদী। পরপর দ্রুত ফোন হাতে এগিয়ে যায় আজীজ শিকদারের দিকে। চোখে-মুখে অসন্তুষ্টির লেশ আজীজ শিকদারের। মনে মনে হতাশ হয় অনেক। এতোক্ষন নিজের উনুভূতি ব্যক্ত করার পরও ছেলের মুখে বাবা ডাকের বদল মেয়ের সাহেব শুনে মনটা বিষিয়ে ওঠে। হতাশ মুখেই তাকায় মেহেদীর ধরে রাখা ফোনের স্ক্রিনে। ফোনে চলা ভিডিওটা দেখে থমকে যায় তৎক্ষণাৎ। বাবার থমথমে মুখ বিবর দেখে তাচ্ছিল্য হাসে রক্তিম। শ্লেষাত্বক স্বরে বলে,
“এখনো বলবেন ঐ জানোয়ারের কাছে মাফ চেয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে?”
এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়না আজীজ শিকদার। উল্টো জানতে চায়,
“এসব পুলিশের কাছে দিচ্ছো না কেন?”
“কোন পুলিশের কাছে? যে পুলিশ লিয়াকত বিল্লা নিজের পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?”
সহাস্যে জানতে চায় রক্তিম। মেহেদী এতোক্ষনে বাবা-ছেলের মাঝ থেকে মিহি স্বরে বলে,
“পুলিশ সব জানে কাকু। পুলিশের সহযোগীতা নিয়েই লিয়াকত বিল্লা এতো বড় কাজ গুলো অনায়াসে করতে পারছে।”
“এখন কি করবে তুমি?”
আজীজ শিকদারের চোখে এবার একটু তেজ দেখতে পায় রক্তিম মেহেদী দুজনেই। বুঝতে পারে রক্তিম আদর্শবান মেয়র আজীজ শিকদার এতো বড় একটা অপকাজের প্রমাণ নিজ চোখে দেখে ফুসে ওঠছে লিয়াকত বিল্লার প্রতি। আঘাতে জর্জরিত ফোলা ঠোঁট দুটো অল্প ছড়িয়ে হাসে রক্তিম। জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠে শিয়ালের মতো ধূর্ত চোখ দুটো। ভাবলেশহীন স্বরে জবাব দেয়,
“বিষধর সাপের বিষদাঁত একেবারে গুড়ি থেকে উপরে ফেলতে হবে। এর জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে আপনাকে এমপি পদে লিয়াকত বিল্লার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আশা করি এতে আপনার কোনো আপত্তি থাকবেনা।”
চলবে…..