দৃষ্টির আলাপন পর্ব-২+৩

0
528

#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ২
#আদওয়া_ইবশার

ফুরফুরে এক সকাল। মৃদুমন্দ বাতাসের তোড়জোড়ে রোদের তেজ একদম নেই। তূর্ণার স্বামী সাইফুল তার দুই শালীকা দৃষ্টি, তুসীকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। তিনজনই বিভিন্ন কথার তালে তালে এগিয়ে যাচ্ছে রাস্তার কিণার ঘেষে। কিছুদূর যেতেই দৃষ্টির চঞ্চল দৃষ্টিজোড়া থমকে যায় এক জায়গায়। তাদের থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরেই রক্তিম শিকদার তার দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার জ্বলন্ত সিগারেট। বাইকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ধূসর রাঙা ঠোঁট দুটোর ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট রেখে ধোয়া উড়িয়ে বিষাক্ত করছে নির্মল বাতাসটুকু। এই দৃষ্টিকটু দৃশ্যটুকুও মুগ্ধতা নিয়ে দেখে যাচ্ছে দৃষ্টি। তার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে যত সুন্দর দৃশ্য আছে তার মধ্যে অন্যতম একটা হলো রক্তিম শিকদারের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য। কত সুন্দর দক্ষতার সাথে সিগারেটে এক একটা টান দিচ্ছে! ধোয়া গুলোও কি সুন্দর নিপুণ শিল্পের মতো কুন্ডুলি পাকিয়ে উড়ে যাচ্ছে! কারো সিগারেট খাওয়ার স্টাইল বুঝি এতো সুন্দর হতে পারে? জানা নেই দৃষ্টির। সে শুধু জানে, সবার কাছে গুন্ডা হিসেবে পরিচিত এই রক্তিম শিকদারের প্রতিটা জঘণ্য থেকেও জঘণ্যতম কাজ গুলো তার কাছে নিপুণতার সাথে ধরা দিচ্ছে।

দৃষ্টিকে হঠাৎ হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে কিছুটা অবাক হয় সাইফুল, তুসী দুজনেই। জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে সাইফুল জানতে চায়,

“কি ব্যাপার শালিকা! দাঁড়িয়ে গেলে যে!”

ধ্যান ভাঙ্গে দৃষ্টির। ঘাড় ঘুরিয়ে আবারও এক পলক রক্তিমের দিকে তাকায়।দৃষ্টির তাকানো অনুসরণ করে তুসী সেদিকে তাকাতেই দেখতে পায় দলবল সহ রক্তিম শিকদারকে। যা বোঝার বুঝে যায়। বিরবির করে বলে ওঠে,

“কাম সাড়ছে! সিন্নিও বাড়া মোল্লাও খাড়া।”

ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির ঝিলিক নিয়ে দৃষ্টি রক্তিমের থেকে নজর সরিয়ে সাইফুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“একটা গান শুনবেন ভাইয়া?”

সাথে সাথেই নারাজ কন্ঠে বলে ওঠে তুসী,

“তোর কর্কশ কন্ঠের গান শুনে এখন কান পঁচানোর কোনো শখ নাই। দ্রুত হাটা দে। বাসায় যাব।”

ফুসে ওঠে দৃষ্টি। নাক-মুখ কুঁচকে বলে,

“তোর কথা শুনতে যাব কেন আমি? তোকে জিজ্ঞেস করেছি? ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছি। ভাইয়া যা বলবে তাই শুনব আমি। তুই একদম চুপ থাক।”

পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পারে সাইফুল। তার একমাত্র খালা শাশুড়ির একমাত্র মেয়েটা যে একটু পাগলাটে আর খ্যাপাটে স্বভাবের এটাও জানে। এই রাস্তায় দুজনের মাঝে কোনো ঝামেলা যাতে না হয় এজন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে সায় জানায় দৃষ্টির কথায়,

“তুমি গান জানো এটা আগে বলবেনা! দ্রুত একটা গান গেয়ে ফেলো তো। এই সুন্দর ওয়েদারে একটা গান হলে মন্দ হয় না।”

সম্মতি পেয়ে সন্তুষ্টচিত্তে দু-পা এগিয়ে আসে দৃষ্টি। তুসীর দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে আবারও দৃষ্টি ফেলে রক্তিমের দিকে। ঠোঁটের কোণে সেই দুষ্টু হাসির রেখা ধরে রেখেই গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠে,

প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে, ও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দু’টি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও তোমাকে

নিরব পরিবেশ চাপিয়ে হঠাৎ বেসুরা মেয়ে কন্ঠের গান শুনে দলের ছেলেগুলো সব মাথা তুলে তাকায় রাস্তার অপর পাশে। দেখতে পায় এক সপ্তদশী কন্যা তার চিকন গোলাপী ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে সুর ছাড়াই গানের চরণ গুলো আওড়াচ্ছে। বিরক্ত হয় সকলেই। রক্তিমের একদম কাছ ঘেষে দাড়ানো সিয়াম বিরক্তি ভঙ্গিতেই বলে,

“এ ভাই! এই টয়লেট সিঙ্গার কই থেকে আমদানি হলো? কাকের কন্ঠে কোকিলের কুহু কুহু গান গেয়ে পরিবেশ নষ্ট করার জন্য রাস্তায় নেমেছে।”

পাশ থেকে রাকিব হালকা রাগের সাথে বলে ওঠে,

“তুই শুধু কাকের কন্ঠই শুনলি! বড় ভাইদের সামনে কেমন বেয়াদবের মতো গান গায়ছে এইটা দেখছিস না? আমাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু সয়ং রক্তিম শিকদার উপস্থিত যেখানে, সেখানে এই মেয়ে এমন আবালের মতো গলা ছেড়ে গান গাওয়ার সাহস পায় কিভাবে? ভাবতে পারছিস দেড় ইঞ্চি মেয়ের কলিজা কত বড়?”

হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে উচ্ছিষ্ট অংশ টুকু পায়ের কাছে ফেলে পিষে দেয় রক্তিম। কাজটা সম্পূর্ণ করে নাক মুখ দিয়ে ধোয়া উড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলে,

“এসব ফালতু বিষয়ে মাথা ঘামানোর জন্য রেখেছি তোদের? এই মেয়ের কলিজা কত বড় আমার সেটা দেখার থেকেও জরুরী মাসুম বিল্লার কলিজা কত বড় সেটা দেখা। যে কাজ দিয়েছি মন দিয়ে সেটা কর।”

মুহূর্তেই তৎপর হয়ে ওঠে দলের সকলেই। মেহেদী রাগত স্বরে দাপটের সাথে বলে ওঠে,

“নিশ্চিন্তে থাকেন ভাই। পাতালের নিচ থেকে হলেও খোঁজে এনে ঐ শা’লা’রে আপনার পায়ের কাছে হাজির করব। সাহস আসলেই বেড়ে গেছে মা***।”

চোয়ালদ্বয় শক্ত রক্তিমের। পিচঢালা রাস্তায় দৃষ্টি স্থির রেখে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

“দুদিন হলো বাপ ক্ষমতায় এসেছে। এখনই এলাকায় রাজ করা শুরু করে দিয়েছে!দুপুরের আগে আমার সামনে এনে হাজির করবি ঐ জা’নো’য়া’র’কে। যে হাত দিয়ে চাদাবাজি করে বেড়ায়, মেয়েদের ওড়না নিয়ে টানাটানি করে। সেই হাত চিরতরে পঙ্গু না করা পযর্ন্ত আমার শান্তি হবেনা।”

****

বিকেলের শেষ প্রহরে ড্রয়িং রুমে লুডু খেলার আয়োজন করেছে তূর্ণা। দুই দলে খেলা হবে। এক দলে তূর্ণা আর তার হাসবেন্ড সাইফুল। আরেক দলে দৃষ্টি, তুসী। কিন্তু বেঁকে বসে তুসী। সে কিছুতেই দৃষ্টির সাথে দল মিলিয়ে খেলবেনা। সকালের সেই ঘটনার জেড় ধরে সারাদিন দৃষ্টির থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে তুসী। মনে মনে পণ করেছে যে পযর্ন্ত এই মেয়ের মাথা থেকে রক্তিম নামক ভূত না নামবে সে পযর্ন্ত কোনো কথা বলবেনা তার সাথে। অনেকবার চেষ্টা করেছে দৃষ্টি তুসীর রাগ ভাঙানোর। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় তুসী। হেরে গিয়ে একসময় বেঁকে বসে দৃষ্টি নিজেও। সেও আর আগ বাড়িয়ে তুসীর সাথে কথা বলতে যায় নি। দুজনের এই মনোমালিন্য চলাকালিন একসাথে জোড়া বেঁধে খেলার কোনো প্রশ্নই আসেনা। দুটোকে মানাতে গিয়ে হাঁপিয়ে যায় তূর্ণা নিজেই। এক পর্যায় হতাশ ভঙ্গিতে বলে ওঠে,

“তোরা দুটো কি আজীবন এমন সতীনের মতো ঝগড়ায় করে যাবি? কখনো কি একটুও মিল-মিশাদ হবেনা তোদের মাঝে? বড় হচ্ছিস না দিন দিন ছোট হচ্ছিস দুটো!”

বোনের এতো গুলো কথা শুনে গাল ফুলায় তুসী। আড় নজরে তাকিয়ে ভার কন্ঠে বলে ওঠে,

“আমরা না হয় অবুঝ। কিন্তু তুমি তো খুব বুঝদার! তাহলে তুমি এমন করছো কেন? তোমাদের দুজনের দল ভেঙ্গে ভাইয়া আর তোমার সাথে আমাদের ভাগ করে নিলেই তো হয়। একটু তো খেলবোই। তোমার জামাইকে তো আর একেবারে তোমার থেকে নিয়ে যাচ্ছিনা।”

এমন কথায় কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে সাইফুল। স্বামীর দিকে চোখ গরম করে তাকায় তূর্ণা। বোনের রাগটা ঝেড়ে দেয় স্বামীর উপর। বাঁজখায় কন্ঠে খ্যাঁকিয়ে ওঠে,

“এমন বিটলারি হাসি হাসবেনা আর কত বলতে হবে তোমাকে? তোমার এই কুৎসিত হাসির থেকে শয়তানের হাসিও বেশি সুন্দর।”

সাথে সাথে চুপসে যায় সাইফুল। মুখ কাচুমাচু করে বসে থাকে এক কোণায়। বউয়ের প্রতি অভিমান জন্মায় অল্প পরিমাণে। দুই শালীর এভাবে না বললেও হতো। বউ নামক দিল্লীকা লাড্ডু দেড় বছরেই তার জীবনটা একেবারে তুলাধুনা করে ফেলেছে। কেন যে মানুষ সুখ ধ্বংস করে দুঃখের সাগরে ডোবার জন্য বিয়ে করতে লাফায়! তার যদি সাধ্যি থাকত তবে বিয়ের পরপরই বউয়ের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে ব্যাচেলার লাইফে ফিরে যেতো। সেই সাথে বাংলাদেশের সংবিধানে নতুন এক আইন প্রণয়ণ করতো। সকল বাঙ্গালী অবিবাহিত ছেলেদের সন্নাসী হয়ে জীবন কাটানোর আইন। কিন্তু বেচারা বউয়ের ঝাঝালো কথার ফাঁকে ফাঁকে দুই-একটা মিষ্টি কথার জালে ফেঁসে গেছে। বউকে ভালোবেসে এতোটাই মাথায় তুলে ফেলেছে এখন না পারে এসব অত্যাচার সহ্য করতে। আর না পারে কিছু বলতে।

খেলতে গিয়ে এমন ছোটখাট ঝামেলার মাঝ দিয়েই কেটে যায় সময়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। চারিদিকের মসজিদ থেকে একে একে ভেসে আসে আজানের মিষ্টি সুর। সন্ধ্যার পর খেলা বাদ দিয়ে ঠিক করা হয় কমেডি মুভি দেখবে। মুভি প্রায় শেষের দিকে। ঠিক তখনই বাসায় আসে তূর্ণার বাবা নিয়াজ উদ্দিন। শশুর আসার আভাস পেয়ে তৎক্ষণাৎ সাইফুল টিভি বন্ধ করে ভদ্র জামাইয়ের মতো বসে থাকে চুপচাপ।শিউলী বেগম স্বামীর নিকট এগিয়ে এসে জানতে চায়,

“আজ আসতে এতো দেরী হলো যে! রাস্তায় জ্যাম ছিল না কি?”

“আর বলো না! মেয়রের ছেলেটা দিন দিন যা অশান্তির সৃষ্টি করছে। রাস্তা-ঘাটে বেড়োনোও এখন রিস্ক হয়ে পরছে। দুপুরে না কি এমপির ছেলে মাসুম বিল্লাকে মারতে মারতে আধমরা বানিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এমপির ছেলেকে মেরে সে পাড় পেয়ে যাবে না কি? লেগেছে এখন দুই দলে হাঙ্গামা। যে হাড়ে ছুরি, লাঠি নিয়ে ছেলেপেরা রাস্তায় নেমেছে। আজ একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘটবেই দেখে নিয়ো।”

কথাটা শোনা মাত্রই দৃষ্টির বুকের ভিতর অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এক দিনের চোখের দেখা যুবকের প্রেমে পরে মন দিশেহারা হয় তার চিন্তায়। চোখাচোখি হয় তুসীর সাথে। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়েই জানিয়ে দেয় তুসী,

“বলেছিলাম এই ছেলে ডেন্জারাস। আগুনের দিকে নজর দিস না। এখন বুঝেছিস তো কতটা ভয়াবহ! এসব শুনেও ঐ গুন্ডা ছেলের প্রতি আগ্রহ থাকবে তোর?”

নজর সরিয়ে নেয় দৃষ্টি। নিজেকে কেমন অসহায় লাগছে তার। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা একদিনের পরিচয়ে একটা মানুষের বিপদের অশঙ্কায় তার মন এতোটা উতলা কেন হচ্ছে। তবে কি ভালো লাগাটা অচিরেই ভালোবাসায় পরিণত হয়ে গেল!

চলবে……

#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ৩
#আদওয়া_ইবশার

সাভার থানার সামনে জনসাধারণের উপচে পড়া ভীড়। দাবি তাদের একটাই ‘রক্তিম শিকদারের মুক্তি”। রাস্তাঘাটে ইতিমধ্যে মানুষের জটলায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পুলিশ কিছুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা। সাধারণ জনতা একবার ক্ষেপে রাজপথে নামলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তিও হার মেনে যায় তাদের কাছে। গতকাল দুপুরের দিকে এমপি লিয়াকত বিল্লার ছোট ছেলে মাসুম বিল্লাকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আধমরা অবস্থায় নিজ দায়িত্বে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন রক্তিম শিকদার। ছেলের গায়ে হাত তোলায় হিংস্র হয়ে ওঠে লিয়াকত বিল্লা। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের অবস্থান ভুলে গিয়ে পার্টির ছেলেদের লেলিয়ে দেয় রক্তিম শিকদারকে মারতে। দুই দলের পাল্টা আক্রমনে আহত হয় অনেকেই। হাঙ্গামার এক পর্যায়ে পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যায় রক্তিম শিকদারকে। এটেম টু মার্ডার এর অভিযোগ দায়ের করা হয় তার নামে।

সাভার উপজেলার বর্তমান সাংসদ লিয়াকত বিল্লা গত চার বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। লিয়াকত বিল্লা কেমন মানুষ, বা তার ছেলের দিকে নজর দেবার বিন্দু মাত্র আগ্রহ রক্তিমের ছিলনা। রাজনৈতিক বিষয় থেকে সবসময় রক্তিম নিজেকে দূরে রেখেছে। নিজের বাবা আজীজ শিকদার মেয়র হবার পরও কখনো কোনো প্রয়োজনেও পার্টির সাথে তার সখ্যতা হয় নি। সে শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে যেখানে অন্যায় দেখেছে সেখানেই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। তার এই প্রতিবাদী মনোভাবের কারণেই একটা সময় জনগণ তার প্রতি আস্থা রেখে নানা বিষয়ে সাহায্যের জন্য ছুটে আসে। লিয়াকত বিল্লার ছোট ছেলে দেড় মাস হয়েছে জাপানে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিজ এলাকায় এসেছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষিত হলেও মনুষ্যত্ব বোধের ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই তার মাঝে। দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকে নিজের বাবার নাম ভাঙ্গিয়ে চাদাবাজি থেকে শুরু করে, ইভটিজিং, মারামারি সহ বিভিন্ন নেশা দ্রব্যের চালান শুরু করে। শান্তিপূর্ণ সাভারে অরাজকতার ছায়া নামে। সর্বক্ষণ প্রতিটা মা-বাবা আতঙ্কে থাকে নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে। নেশার পথে ধাবিত করে তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে এই মাসুম বিল্লা। রক্তিম শিকদারের কাছে একের পর এক এমন অভিযোগ আসায় প্রথম প্রথম শান্তভাবে এসব বন্ধ করার জন্য বোঝায় মাসুম বিল্লাকে। কিন্তু নিজের বাবার দাপট আর টগবগে রক্তের গরমে রক্তিমের কথার তোয়াক্কা করেনা সে। দিনকে দিন তার অরাজকতা বাড়তেই থাকে। শেষ পযর্ন্ত ধৈর্য্যচ্যুৎ হয়ে রক্তিম এই পথ বেছে নেই। পুরো ঘটনা জনগণের খুব ভালো করেই জানা। রক্তিমকে গ্রেফতার করার পর থেকে এজন্যই জনগণ মরিয়া হয়ে তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এই মুহূর্তে জনগণকে ক্ষেপিয়ে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই সম্ভব না বুঝতে পারে লিয়াকত বিল্লা। রক্তিমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেটা তোলার আগ পযর্ন্ত জনগণ শান্ত হবেনা। অশান্তি আরও বাড়বে। ভোটার হারাবে সব। এই মুহুর্তে নিজের আহত ছেলের প্রতিই প্রচুর রাগ হচ্ছে তার। ছেলেকে বারবার বুঝিয়েছেন যায় করুক সাবধানতা অবলম্বন করে যেন করে। এতোবার সাবধান করার পরও আজ ছেলের কুকীর্তির জন্য তার এতো বছরের সাধনা, সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবার উপক্রম। সাধারণ একটা মেয়রের ছেলের কাছে মাথা নত করতে হবে। জনগণকে শান্ত রাখার এর থেকে ভালো উপায় এই মুহূর্তে আর কিছুই নেই। ছেলেকে হাসপাতালে রেখেই থানায় ছুটে আসে লিয়াকত বিল্লা। অভিযোগ তুলে নেয় রক্তিমের বিরুদ্ধে। উচ্ছাসে ফেঁটে পরে জনগণ। লকআপ থেকে বের হয়ে রক্তিম মুখোমুখি হয় লিয়াকত বিল্লার। শ্লেষাত্বক হেসে ঠাট্টার স্বরে বলে,

“আমাকে বারো ঘন্টাও জেলে আটকে রাখার মুরোদ নেই। বুঝতে পারছেন তো কেমন অযোগ্য এমপি আপনি! সাধারণ জনগণের কাছে এক ক্ষমতাধারী এমপির পরাজয়। বিষয়টা খুবই হাস্যকর।”

লিয়াকত বিল্লার ধরেবেঁধে আটকে রাখা তিরিক্ষি মেজাজটা রক্তিমের ঠেসমারা কথায় লাগামছাড়া হতে চাইছে বারবার। দাঁতে দাঁত পিষে ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে রক্তিমের কাধে হাত রেখে বলে,

“সিংহের গুহায় ডুকে ঘুমন্ত সিংহকে জাগিয়ে তুলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনো না বাবা। আজ পর্যন্ত তোমার বাপ’ও আমার সাথে টেক্কা দেবার সাহস পায়নি। সেখানে একটা বাচ্চা হয়ে আমার সাথে পাল্লা দিতে আসাটা তোমার নেহাত বোকামি ছাড়া কিছুই না।”

নিচের ঠোঁট কামড়ে অল্প হাসে রক্তিম। নিজের কাধ থেকে লিয়াকত বিল্লার হাতটা সরিয়ে নিচু হয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“ছোট সাপের বিষ বেশি এটা বুঝি ভুলে গেছেন? আপনার বা আপনার ছেলের সাথে লাগতে যাবার কোনো রুচিই আমার ছিলনা। কিন্তু বাপ-ছেলে মিলে যে কান্ড শুরু করেছেনএতে মনে হয় খুব বেশিদিন নিজের রুচি ধরে রাখতে পারবনা।”

কথার মাঝে একটু থামে রক্তিম। সোজা হয়ে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে তেজস্ক্রিয় চোখে তাকায় লিয়াকত বিল্লার দিকে। চোয়াল শক্ত করে বলে,

“একবার যদি আমার রুচির দূর্বিক্ষ দেখা দেয় তবে তোদের বাপ-ছেলের ধ্বংস নিশ্চিত। সো বি কেয়ার ফুল। আমাকে ঘাটতে আসবিনা। তোর ছেলেকেও বলে দিবি বেশি বাড় যেন না বাড়ে। সুস্থ্য হবার পর চব্বিশ ঘন্টার ভিতর যেন এলাকা ছাড়ে। এবার হয়তো জানে বেঁচে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার আমার চোখে তোর ছেলের কুকীর্তি ধরা পরলে একেবারে বাপ-ছেলে দুটোকেই সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে পুতে ফেলব। কথাটা ভালো ভাবে মাথায় ডুকিয়ে নিস।”

হিমশীতল স্বরে ভয়ংকর হুমকিটা ছুড়ে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায়না রক্তিম। দাপটের সাথে হেঁটে বেরিয়ে যায় থানা থেকে। আগুন চোখে রক্তিমের যাবার দিকে তাকিয়ে ফুসতে থাকে লিয়াকত বিল্লা। রাগ সংবরণ করতে না পেরে সামনে থাকা চেয়ারে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে লাথি বসায়। দাঁত কিড়মিড় করে নিজ মনেই বলে ওঠে,

“এই লিয়াকত বিল্লার সাথে পাঙ্গা নিতে এসে বড় বড় রাঘব বোয়াল’ও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আর তুই দুইদিনের ছেলে হয়ে ভেবেছিস বেঁচে যাবি!”

থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার লিয়াকত বিল্লার কথা শুনে ফিচেল হেসে বলে ওঠে,

“রক্তিম শিকদার কি জিনিস সেটা হয়তো আপনিও জানেন না স্যার। একে যত সহজ ভাবে নিবেন ততই আপনার পরাজয় নিশ্চিত হবে। ছোট সাপের বিষ বেশি, কথাটা কিন্তু ভুল বলেনি।”

কথাটা শোনা মাত্রই লিয়াকত বিল্লা হায়েনার মতো হিংস্র চোখ মেলে তাকায় অফিসারের দিকে। ঐ নজরের তোপে চুপসে যায় অফিসার। লিয়াকত বিল্লা এক ধ্যানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কোণে কূটিল হাসি ফুটিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় থানা থেকে।

সুস্থ্য শরীরে রক্তিমকে থানা থেকে বের হতে থেকে ক্ষিপ্ত জনগণ শান্ত হয়। রক্তিমের দলবল দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় তার দিকে। পায়ে পা মিলিয়ে হাটতে হাটতেই রাকিব বলতে থাকে,

“ভাই! আপনার খবর পেয়ে আপনার বাবা ঐ লিয়াকত বিল্লার কাছে গিয়েছিল অনুরোধ করতে যাতে, আপনার নামে কেইস উঠিয়ে নেয়। শা’লা’র বাচ্চা হাসপাতালে সবার সামনে আপনার বাবার কলার চেপে ধরে যা নয় তাই বলে অপমান করেছে। এর একটা বিহিত আপনাকে করতেই হবে।”

কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না রক্তিমের মাঝে। শান্ত স্বরে জানতে চায়,

“আমার বাইক কোথায়?”

“ঐযে মেহেদী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

হাত উচিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দেয় জাবির। সেদিকে এগিয়ে যায় রক্তিম। বাইকের কাছে গিয়ে একপলক জনগণের দিকে তাকিয়ে উঠে বসে মেহেদীর পিছনে। রাকিবের উদ্দেশ্যে বলে,

“সবাইকে এবার যে যার কাজে যেতে বল। আর ঐ হা’রা’ম’জা’দাটা হাসপাতালে মরে না বাঁচে প্রতি ঘন্টার আপডেট দিবি আমাকে।”

“কোথায় যাবি এখন?”

রক্তিমের কথা শেষ হতেই জানতে চায় মেহেদী।জবাবে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জানায়,

“শিকদার মঞ্জিলে চল।”

এতোদিন পর তার মুখে শিকদার মঞ্জিলের নাম শুনে অবাক হয় সকল ছেলেরা। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে থাকে রক্তিমের দিকে। সবার মুখেই কিছুটা আতঙ্ক, কিছুটা খুশি। দুরকম অনুভূতি সকলের। প্রত্যেককে বিস্ময়ের সাগরে ডুবিয়ে রেখেই বাইক ছুটে যায় শিকদার মঞ্জিলের দিকে।

***

প্রায় এক বছর পর নিজের চিরচেনা সেই বাড়িতে পা রাখে রক্তিম। যে বাড়িতে তার জন্ম। যেখানে সে ছোট থেকে শৈশব, কৈশোর পুরোটা সময় পার করেছে হেসে-খেলে। যে বাড়ির প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে মিশে আছে তার হাজারটা স্মৃতি। এই বাড়িটাতেই জন্ম হয়েছিল মেয়র আজীজ শিকদারের সু-পুত্র আর্মি ক্যাপ্টেন রক্তিম শিকদারের। ঠিক এই বাড়িতেই নিজের শরীর থেকে আইনের পোশাক ফেলে গায়ে লাগিয়েছিল খুনির তকমা। হয়ে উঠেছিল একজন দেশ প্রেমী আদর্শ আর্মি অফিসার থেকে গুন্ডা রক্তিম শিকদার। বিভীষিকাময় সেই দিন সেই রাতের স্মৃতি এখনো রক্তিমকে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে দেয়না। নিকোটিনের ধোয়ায় বুকের ভিতরটা পুড়িয়ে নির্ঘুম রাত পার করে নিঃস্বঙ্গতাকে সঙ্গী করে।

সদর দরজা দিয়ে এতোদিন পর ছেলেকে বাড়িতে ডুকতে দেখে হল রুমে উপস্থিত প্রতিটা সদস্য দৃষ্টিতে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। রক্তিমের মা রেহানা বেগমের মনটা ছটফটিয়ে ওঠে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে বুকের ভিতর টেনে নিতে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পা দুটো আগায়না রেহানা বেগম। ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে নিস্পলক চোখে অবলোকন করে ছেলেকে। শুনেছিল ছেলেটাকে আবার পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবার এখানে ! তবে কি ছাড়া পেয়ে গেল! রেহানা বেগমের পাশে দাঁড়ানো রক্তিমের ছোট বোন ইতি ভাইকে দেখে ছুটে যায়। খুশিতে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ভাইয়া বলে। প্রথমে একটু চমকায় রক্তিম। পরোক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বোনের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে জানতে চায়,

“কেমন আছে আমার ইতি মনি?”

“একটুও ভালো নেই ইতি মনি। তার ভাইয়াকে খুব মনে পরে তার। কিন্তু ভাইয়া একদম মনে করেনা তাকে। ভালোও বাসেনা।”

বোনের অভিযোগে ঠোঁট এলিয়ে হাসে রক্তিম। আদুরে কন্ঠে বলে,

“কে বলেছে ভাইয়ার তার ইতি মনিকে মনে পরেনা? ভাইয়া সবসময় মিস করে তার ছোট্ট পুতুল বোনটাকে।”

সাথে সাথে ভাইয়ের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে মুখ ভার করে জবাব দেয় ইতি,

“এতোই যদি মিস করো তবে কেন থাকোনা বাড়িতে? মাসের পর মাস চলে যায় একবার তো এসে দেখেও যাওনা। সেই আমাকে রাস্তা-ঘাটে গিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে হয়।”

এই কথার কোনো জবাব নেই রক্তিমের কাছে। শান্ত চোখে বোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কথা পাল্টে জিজ্ঞেস করে,

“মেয়র সাহেব বাড়িতে আছে?”

আজীজ শিকদার বাড়িতেই ছিল। স্টাডি রুমের জানালা দিয়ে দেখেছে রক্তিমকে বাড়িতে আসার সময়। ছেলের সাথে সাক্ষাৎ করতেই নিচে নামছিল। ঠিক তখনই শুনতে পায় রক্তিমের এমন সম্বোধন। হতাশায় ছেয়ে যায় আজীজ শিকদারের মন। রক্তিমের এমন অধঃপতন মানতে না পেরে একদিন শাসন করতে গিয়ে বলেছিল, “এমন গুন্ডামি, মাস্তানি করলে তুমি আমাকে কখনও বাবা বলে ডাকবেনা। আমি কোনো গুন্ডা, মাস্তানের বাবা হতে চাইনা।”

জবাবে খুবই স্বাভাবিক চিত্তে নির্লিপ্ত স্বরে রক্তিম জবাব দিয়েছিল, “ঠিক আছে। ডাকবনা বাবা।”

সেদিনের পর থেকে ছেলের মুখে আর কখনো বাবা ডাক শুনতে পায়নি আজীজ শিকদার। সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নামতে নামতেই জানতে চায় আজীজ শিকদার,

“হঠাৎ এই অতি সাধারণ মেয়রের কথা মনে পরল কেন এলাকার গট ফাদার রক্তিম শিকদারের!”

রাশভারী গম্ভীর কন্ঠ কর্নে পৌঁছাতেই চোখ তুলে বাবার মুখের দিকে তাকায় রক্তিম। বাবার মতোই গম্ভীর স্বরে জানতে চায়,

“আমি তো খারাপ ছেলে। রাস্তা-ঘাটে গুন্ডামি করে বেড়ায়। আমার মতো এমন একটা গুন্ডা, মাস্তানের জন্য লিয়াকত বিল্লার কাছে মাথা নত করতে গিয়েছিলেন কেন?”

ছেলে তাহলে জেলে থেকেও এই খবর পেয়ে গেছে! বাবা-মা সন্তানের সুখের জন্য শুধু মাথা নত কেন? নিজের জীবনটাও হাসি মুখে দিয়ে দিতে পারে। এটা কি আর সন্তান বুঝবে? সন্তান যদি বি-পথে চলে যায় তবে বাবা-মা শাসন করতে গিয়ে তো মুখে কত কথায় বলে। তাই বলে কি সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের টান শেষ হয়ে যায়!

“পাপ করেছিলাম যে সন্তান জন্ম দিয়ে। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়েছিলাম।”

একজন বাবা ঠিক কতটা কষ্ট মনে নিয়ে এই কথাটা উচ্চারণ করতে পারে! বাবার বেদনাটা হয়তো একটু হলেও আচ করতে পেরেছে রক্তিম। তাই আর গলা উচিয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি। কন্ঠস্বর স্বাভাবিক করে ছোট্ট করে বলে,

“আর কখনো যাবেন না ঐ জা’নো’য়া’রে’র ধারেকাছে। আমি ম’র’লেও না।”

আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায়না রক্তিম। মায়ের দিকে একপলক শান্ত চোখে তাকিয়ে দ্রুত কদমে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।

****

সাদেক সাহেব মেয়েকে নিতে এসেছে। যখন থেকে দৃষ্টি শুনেছে বাবা তাকে নিতে আসবে তখন থেকেই মনটা বিষন্ন হয়ে আছে। এমনিতেই গতকাল থেকে ঐ রক্তিমের চিন্তায় অন্তঃকরণ বিষয়ে ছিল। এখন আবার এই শহর থেকে বিদায় নিতে হবে বলে মনটা আরও বিষিয়ে আছে। তার এখনই মনে হচ্ছে ঐ গুন্ডাটাকে একদিন না দেখলেই রাতে ঘুম আসবেনা। গতকাল সকালে একবার দেখার পর এখন পযর্ন্ত আর দেখা না পেয়ে এখনই মন উতলা হচ্ছে গুন্ডাটাকে একনজর দেখার জন্য। সেখানে প্রতিদিন না দেখে থাকবে সে। তাছাড়া এখন পযর্ন্ত তার মনের কথা মানুষটাকে বলায় হয়নি। তার অনুপস্থিতিতে যদি অন্য কোনো মেয়ে এসে তার হিরোর মন জয় করে নেয়! তখন কি হবে দৃষ্টির! এমন হলে ভালোবাসা পাওয়ার আগেই যে হেরে যাবে সে।কথাটা স্বরণ হতেই দৃষ্টির হাসফাস লাগতে শুরু করে। অস্থির চিত্তে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার যাওয়া দেখে তুসীও ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায় পিছু পিছু। ড্রয়িং রুমে শিউলী বেগমের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত সাদেক সাহেব। দৃষ্টি এক দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে তাড়াহুড়ো নিয়ে বলে,

“আব্বু! তুমি একটু বসো। আমার জরুরী একটা কাজ আছে। কাজটা শেষ করেই এসে রেডি হয়ে যাব।”

মেয়ের কথায় একটু অবাক হয় সাদেক সাহেব। ভেবে পায়না এই অচেনা শহরে তার মেয়ের কি এমন জরুরী কাজ থাকতে পারে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চায়,

“কি কাজ মামুনি! আমাকে বলো। যাবার সময় আমি করে দিয়ে যাব।”

“তুমি পারবেনা আব্বু। আমি যাব আর আসব।”

আর একটুও সময় নষ্ট করেনা দৃষ্টি। এক দৌড়ে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। পিছন পিছন তুসীও কিছু না বুঝেই দৌড় লাগায় দৃষ্টির দেখাদেখি।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে