||দৃষ্টিভ্রম|| ||অংশ: ১২||
“আমি ভেবে পাই না, এত সাহস আসে কোত্থেকে তোমার মাঝে? আমি চাইলেই তোমার সব অহংকার গুড়িয়ে দিতে পারি, তা কী তুমি জানো?”
শতরূপা কানের পেছনে চুল গুঁজে দিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “হাম্মাদ সাহেব, আপনি কেবল আমার উপর পুরুষত্ব খাটাতে পারবেন এছাড়া কিছুই করতে পারবেন না। আমি বেঁচে থাকলেই আপনার স্বার্থ পূরণ হবে। তাছাড়া আপনি যদি আমার উপর পুরুষত্ব দেখাতে যান, তাহলে আপনার স্ত্রীর সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবেন? ভালো তো তাকেই বাসেন, আমাকে তো আর না।”
হাম্মাদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। জবাবে বলার কিছুই নেই তার। রাগ মেটাতে হাত দিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা মেঝেতে ছুড়ে মারে। চমকে উঠে শতরূপা। দু’হাতে কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। হাম্মাদ রাগে ফোঁপাচ্ছে। ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে শতরূপা। বুকে থুথু ছিটিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। বাঘের সামনে থেকে বেঁচে ফিরেছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো কাঁচা চিবিয়ে খেত তাকে।
সকালে ঘুম ভাঙে কারো হাসির শব্দে। রুমের বাইরে পা রাখতেই শব্দটা আরো বেশি কানে লাগে। হাম্মাদের রুম থেকে ভেসে আসছে এই হাসি। মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে। দরজার বাইরে গিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। ভেতরের দৃশ্য দেখেই হাত-পা কাঁপতে লাগে তার। হাম্মাদের বুকে অপরিচিতা একজন মেয়ে শুয়ে আছে। এত নিশ্চিন্তে কোনো পর নারী শোবে না। তার স্ত্রীই হবে।
ফিরে চলে যেতে চাচ্ছিল তখনই পেছন থেকে হাম্মাদ বলল, “স্বাগত, সুস্বাগত। ভেতরে আসো, বাইরে থেকে কেন চলে যাচ্ছ?”
সিন্থিয়া উঠে বসে এলোমেলো চুল ঠিক করে। শতরূপা ধীরে ধীরে পেছন ফিরে তাকায়। তার নজর সিন্থিয়ার উপর আটকে যায়। এত সুন্দর মেয়ে সে কেবল দূর থেকেই দেখেছে। আজ কাছ থেকে দেখছে। হাম্মাদের মতো মানুষের সাথে এমন মেয়েই যায়।
হাম্মাদ তার কাছে এসে বলল, “বলেছিলাম না সারপ্রাইজ আছে? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? পছন্দ হলো? এ হচ্ছে আমার জানবউ সিন্থিয়া।”
“এন্ড শি ইজ শতরূপা। আই মিন আমার সতীন। আমি তোমাকে আগে থেকেই চিনি। তুমি আমাকে প্রথম দেখছো কিন্তু আমি তোমাকে অনেক আগেই দেখেছি।”
শতরূপা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। কেবল শুনে যাচ্ছে সিন্থিয়ার কথা। পাখির মতো মিষ্টি কণ্ঠ তার। মুক্তো ঝরানো হাসি। দুধে-আলতা গায়ের রঙ। নিজের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে। চাঁদের পাশের কলঙ্কটা যেন সে। অথবা বলা যায়, দুধ চায়ের কাছে সে রঙ চা। যার কোনো বাহ্যিক সৌন্দর্য নেই। সুন্দরী মেয়ের সামনে নিজেকে অতি সামান্য মনে হচ্ছে। সাদামাটা শাড়ি পরে, এলোমেলো চুল খোঁপা করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে সে কয়েক বছরের সংসারী মেয়ে। সমস্ত দেখ কুঁচকে একটুখানি হয়ে আসে তার। চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাতে কেউ শুনতে না পায়। আল্লাহ যাকে দেন ভরে ভরে দেন আর যাকে দেন না কিছুই দেন না। তার না আছে টাকার পাহাড় আর না আছে সৌন্দর্যের বাহার। হৃদপিণ্ডটা গলার কাছে এসে যেন দম বন্ধ করে দিচ্ছে। সারা গাল রক্তশূণ্য হয়ে গেল। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
“কাম ডিয়ার।”, বলেই শতরূপার হাত ধরে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে যায়।
হাম্মাদ পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষণকাল থেমে সিন্থিয়া আবার বলল, “তোমার নাম শতরূপা এর মানে কী তোমার শতটা রূপ? এই যেমন ধরো বাহিরে তুমি সাধাসিধে আর ভেতরে হরেক রঙা?”
অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ে। হাম্মাদ তাল মিলিয়ে হাসছে। রুমটা হাসিতে ভরে উঠেছে। তাদের কাছে যে হাসি আনন্দের শতরূপার কাছে সেই হাসি তাচ্ছিল্যের মনে হচ্ছে। তাকে নিয়ে ঠাট্টা করা হচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে দূরে কোথাও ছুটে যেতে।
চিৎকার করে বলতে, “আমি একা থাকতে চাই, একা। খুব একা।”
কিন্তু না, সে একা থাকতে পারবে না। তার জীবনে বিয়ের আগে যেমন ছিল ভেবেছিলা সেটাতে সুখ নেই। বিয়ের পর সুখ পাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বিয়ের পরের জীবনের চেয়ে আগের জীবনটাই বেশি সুখের ছিল। মানুষ এমনই, যখন ভালো থাকে ভাবে যে না, এর থেকে কত মানুষ ভালো আছে। অথচ, ভেবে দেখলে হয়তো নিজের অবস্থানে নিজেই ভালো আছে। একটু নিচের দিকে তাকালেই বোঝা যায় পৃথিবীর বুকে কত মানুষ কত ধরনের কষ্টে আছে। অন্তত শুকরিয়া করক উচিত উপরওয়ালা সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে পরিপূর্ণ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। থাক না কিছু না পাওয়া। থাকুক কিছু অভাব। তাহলেই জীবনের মর্মটা বোঝা যায়। নাহলে তো পৃথিবীর সবাইকে আপন ভেবে ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়া যায়। আর অভাব থাকলে তবেই সঠিক পাত্রে ভালোবাসা দান করা যায়৷ কারণ অভাবের ঘরে ফকিরও কড়া নাড়তে ভাবে, আরে এ তো আমার মতোই দিবে কুত্থেকে! শতরূপার মনে হচ্ছে সে ভালো থাকার আশায় প্রকৃত সুখ হারিয়ে ফেলেছে। এখন সে না আছে ভালো আর না আছে সুখে।
“কথা বলছো না যে? হাম্মাদ তো বলল তুমি অনেক চটাং চটাং কথা বলো।”, বলেই সোফায় বসে সিগারেট বের করে সিন্থিয়া।
হাম্মাদ লাইটার এনে সিগারেটের মাথায় আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকটা টান দিয়ে শূন্যে ধোঁয়া ছুঁড়ে দেয়। শতরূপার গা ঘিনঘিন করছে। মেয়ে মানুষ হয়ে কেমন সিগারেট টানছে, একদম পুরুষের মতো মনে হচ্ছে।
হাম্মাদ শতরূপার দিকে তাকিয়ে বলল, “চটাং চটাং কথা কেবল আমার সাথেই। তোমাকে দেখার সারপ্রাইজ হয়তো এখনো সামলে উঠতে পারেনি।”
শতরূপা ডান হাতের তর্জনী দিয়ে বাঁ হাতের তালুটা ঘষে যাচ্ছে একনাগাড়ে। হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে শব্দ করছে। চোখে জল টলমল করছে। গাল ছুঁইছুঁই করছে। পলক ফেললেই তা গড়িয়ে পড়ে কষ্টের এক সাহিত্য রচনা করে ফেলবে। নিজেকে আটকে রেখেছে। খালি গলায় ঢোক গিলে। শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “কখনো কখনো নীরব থাকার মাঝেও একটা আনন্দ রয়েছে৷ আমি আপনাদের কথায় আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি।”
সিন্থিয়া ও হাম্মাদ তার দিকে কুপিত দৃষ্টি হানে। এমন অবস্থাতেও কীভাবে একটা মেয়ে এত সাহসিকতার সাথে কথা বলতে পারে। শতরূপা তাদের সামনে নিজের দুর্বলতার প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। যথেষ্ট শক্ত থাকার চেষ্টা করছে। ভেতরটা তার ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
“যাও, আমার সুইটহার্টের জন্য নাশতা তৈরি করে নিয়ে আসো।”, বলেই হাম্মাদ তার হাত ধরে টেনে রুমের বাইরে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
এক দৌড়ে সে নিজের রুমে চলে যায়। ওয়াশরুমের পানির ট্যাপ ছেড়ে গলা ছেড়ে কান্না করছে। অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে। অজস্র অশ্রুরা সাক্ষী হয়ে থাকছে তার কষ্টের। কয়েক মুহূর্ত পর চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসে। রান্নাঘরে গিয়ে মনের মতো করে নাশতা বানায়। এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে বের করতে হবে। তবে তার আগে এদের উদ্দেশ্য কী তা জানতে হবে। এটার জন্য যা করতে হয় তাই করবে সে। এমনভাবে করবে যে তাদেরকে প্রতি মুহূর্তে একেকটা চমকের সামনে পড়তে হবে। তাকে যতটা সহজ ভেবে এমন কঠিন ফাঁদে ফেলেছে, সে ততটা সহজভাবেই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে যাবে।
নাশতা রুমে নিজ হাতে এনে দিয়ে যায় শতরূপা। আর কিছু লাগবে কি না সেটাও জিজ্ঞেস করে যায়। তার এসব কর্মকাণ্ডে প্রতি মুহূর্তে অবাক হচ্ছে হাম্মাদ। অন্যদিকে এসব দেখে সিন্থিয়া তাকে শাসাচ্ছে, “তুমি না বলেছিলে এই মেয়ে অনেক সহজ সরল, বোকাসোকা টাইপের। কিন্তু এর কথায় তো মনে হচ্ছে যথেষ্ট চতুর। পরবর্তীতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে এর পরিণতি খুব খারাপ হবে জেনে রেখ।”
রাগে হাম্মাদের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে শতরূপাকে কঠিন শিক্ষা দিতে। তার ব্যবস্থাই তাকে করতে হবে। শতরূপাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাম্মাদ সিন্থিয়ার শরীরের সাথে নানা ভাব-ভঙ্গিতে খেলে যাচ্ছে। তার সামনেই গভীর চুম্বনে হারাচ্ছে। উদ্দেশ্য হাসিলের কথা পাশে রেখে সে এখন অন্য খেলায় মত্ত হয়েছে। শতরূপার সাহসিকতা দেখে তার আত্মসম্মানে লেগেছে। যতক্ষণ না একটা শিক্ষা দেবে ততক্ষণ সে আত্মিক শান্তি পাবে না। তারপর যা করার করবে। অভিনয় সে ভালোই জানে। শতরূপাকে তার দ্বিতীয়বার ফাঁদে ফেলতে সময় লাগবে না।
কোনোভাবেই শতরূপাকে টলানো যাচ্ছে না দেখে হাম্মাদ নতুন ফন্দি আঁটে। যা তার চিন্তাভাবনার বাইরে ছিল। শতরূপাকে তার বাবার বাড়িতে সপ্তাহে অন্তত একদিন কথা বলতে বলে। তার কথামতো সেও কল করে কথা বলে। তবে এখানে অবস্থা সম্পর্কে জানাতে নিষেধ করে দেয়। যদি কখনো কিছু বলে তাহলে এর পরিণতি খারাপ হবে। তার সাথে সাথে গোটা পরিবারকেও ভোগ করতে হবে এর শাস্তি। হাম্মাদ হুমকি না দিলেও সে এই বিষয়ে কোনো কথা বলতো না। পরিবারকে আর টেনশন দিতে চায় না সে।
সিন্থিয়া মাঝেমধ্যেই এখানে আসে। আসলেই আগে শতরূপার সাথে দেখা করে। তারপর হাম্মাদের সাথে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহে সিন্থিয়া এখানে আসেনি। শতরূপা বুঝে উঠে না তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এমন অদ্ভুত কেন! তার ধারণা তারা লুকিয়ে বিয়ে করেছে হয়তো সেজন্যে এমন তাহলে তাকে কেন বিয়ে করল! এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হাম্মাদের রুমে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাম্মাদ যখন অফিসে যায় সে রুমে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কিন্তু আশাহত হয়ে ফিরে আসে।
এরই মধ্যে কেটে যায় আরো ক’টা দিন। শতরূপার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করে। রাতে ঘুমালে মনে হয় কারো ছায়া তার মাথার পাশে বসে আছে। কিন্তু চোখ মেললে কেউ নেই। ওয়াশরুমে গেলে মনে হয় কেউ একজন তাকিয়ে তাকিয়ে তাকে দেখছে৷ হাম্মাদকে এসব বললে সে হেসে উড়িয়ে দেয়৷
তীর্যক কণ্ঠে বলে, “এসব তোমার অলস মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা।”
জবাবে শতরূপা বলে, “তাহলে আমি গতকাল বারান্দায় কার ছায়া দেখলাম? আপনার রুম থেকে বেশ কয়েকবার আমি হাসি এবং কান্নার শব্দ পাই। সেগুলো কিসের? সেগুলোও আমার চিন্তাভাবনা?”
“চোখের দেখা সবসময় সত্যি হয় না। কিছু দেখা মিথ্যেও হয়৷ যা দেখছো সবই একটা ভ্রম, যে ভ্রমে স্বেচ্ছায় পা ফেলেছ তুমি। আর কয়টা দিন অপেক্ষা করো সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। মস্তিষ্কে এত চাপ দিও না। তবে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত তোমার হাতেই, তুমি বাঁচতে চাও নাকি মরতে চাও৷”
শতরূপা বুঝে যায় এই খেলা সত্য কিংবা মিথ্যার। আদতে আলোর এক মিছেমিছি খেলা। এই আলোর মিছেমিছি খেলা সোজা মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করে। ছুঁয়ে দিতে গেলেই মেঘ যেমন পানি হয়ে মিলিয়ে যায় কিছুটা তেমনই। ক্ষণে আছে, ক্ষণে নেই! এক ধমকা হাওয়ার মতো। ঠিক যেন কোনো দৃষ্টিভ্রম। সেই ভ্রমের মেলায় নিজেকে হারানোর ভয়। হতে পারে এটা মিথ্যা, হতে পারে সত্য। সবই অজানা ছায়া নয়, মায়াকে ঘিরে। কোথাও একটা মায়াজাল আছে যা সে ভেদ করতে পারছে না। দৃষ্টির অগোচরে রয়ে যাচ্ছে।
আজ অস্বাভাবিক একটা ঘটনা ঘটে যায় শতরূপার সাথে। রান্না করে রেখে গোসল করতে যায়। ফিরে এসে দেখে সমস্ত পাতিলগুলো শূন্য। তরকারির ছিঁটেফোঁটাও নেই। মাথাটা মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেল। সমস্ত চিন্তারা যেন হারিয়ে যায়। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রয়। তাহলে কী সে রান্নাই করেনি! নাকি কেউ খেয়ে ফেলল! কিন্তু পাতিল তো একদম ধোয়া, পরিষ্কার, শুকনো। এমনভাবে গোছানো যে মনে হচ্ছে কেউ হাতই দেয়নি। অথচ তার স্পষ্ট মনে আছে সে রান্না করে রেখে গেছে। এরই মধ্যে হাম্মাদ চলে আসে।
উপরে উঠতে উঠতে বলল, “দশ মিনিটের মধ্যে টেবিলে খাবার রেডি করো।”
চলবে…
লিখা: বর্ণালি সোহানা