দু মুঠো বিকেল পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
2310

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪২
Writer-Afnan Lara
.
কিরে নিহা??মুখটা ওমন করে রেখেছিস কি জন্যে??আর স্পর্শ কোথায়?
.
উনি উনার রুমে!!
.
কথাটা বলে নিহা হনহনিয়ে একটা রুমে চলে গেলো,মা বুঝতে পারলেন স্পর্শ বুঝি নিহাকে বকেছে
তিনি গিয়ে স্পর্শর রুমের দরজা ধাক্কানো শুরু করে দিলেন
স্পর্শ দরজা খুলে মাকে দেখে বললো”মা??এসে গেছো,আসো ভিতরে ”
.
মা ভিতরে ঢুকে পিছন ফিরে আঁখির দিকে চেয়ে বললেন”তুই যা নিহার সাথে গল্প কর,আর পারলে নাস্তা বানা,সবাই মিলে খাব”
.
আচ্ছা
.
আঁখি চলে যেতেই মা স্পর্শর দিকে গম্ভীর ভাবে তাকালেন তারপর বললেন”নিহার সাথে খারাপ আচরণ না করলেই নয়??
.
মা ও বেশি বেশি করে,তুমি তো জানো আমি ওরে ভালোবাসি না,ভালোবাসা দূরে থাক পছন্দ ও করি না,তাহলে কেন বারবার আমার পিছে লেগে থাকে
.
কারণ ওর খালা ওকে কথা দিয়েছে স্পর্শই ওর বর হবে
.
তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছো?এই কথা দেওয়ার আগে?
.
জিজ্ঞেস করার কি আছে?আমার পছন্দই তোর পছন্দ,রিমঝিমকে তো ভুলেই গেছিস,তাহলে আর কি
.
না ভুলিনি,আর কখনও ভুলতেও পারবো না আমি
.
ঐ মেয়ে বাসা থেকে পালিয়ে না জানি কোথায় গিয়ে নষ্টামি করছে আর তুই তাকে ভুলবি না?আলবাত ভুলবি
.
মা ব্যাস!!!!এসব কি বলছো তুমি??
.
তা নয়ত কি?একটা মেয়ে এতদিন বাসার বাহিরে কি আর করবে??যাই হোক ওরকম চরিত্রের মেয়ে আমার বাড়ির বউ হবে না,এটাই আমার শেষ কথা
.
রোকসানা বেগম চলে গেলেন,আর কিছু বললেন না,স্পর্শকেও বলতে দিলেন না
.
স্পর্শ বারান্দার কাছে এসে গ্রিলে একটা ঘুষি মারলো
.
রিম তুমি চলে গিয়ে মোটেও ঠিক করোনি!!আমার তোমাকে চাই,আই নিড ইউ!!এই সময়টায় আমাকে একা ফেলে যাওয়া তোমার একেবারেই ঠিক হয়নি!!আমি যে একা হয়ে গেলাম,প্লিস ফিরে আসো রিম

রিমঝিম জানালার পর্দা সরিয়ে স্পর্শর রুমটার দিকে চেয়ে আছে,,রিহাবের চেঁচামেচি শুনে সে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে ছুটে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো
রিহাব মায়ের সাথে কথা কাটাকাটা করছেন,মূল বিষয় রিম যেটা বুঝলো সেটা হলো রিমের বিয়ে নিয়ে
বিয়ের কথা শুনেই রিমঝিম আঁতকে উঠেছে,নিজের ফোন খুঁজে কল করলো স্পর্শকে,,স্পর্শ বারান্দায় মাথা গ্রিলের সাথে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে
ওর ফোন বিছানার উপরে
ভাইব্রেশন দেওয়া বলে সাউন্ড তার কান পর্যন্ত আসেনি
রোকসানা বেগম নিহাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবারও স্পর্শর রুমের দিকে পাঠিয়েছেন, নিহা রুমে ঢুকতেই ওর চোখ গেলো বিছানার উপর থাকা ফোনের দিকে
কল আসছে দেখে সে ফোন হাতে নিয়ে স্পর্শকে দিতে যাবে সেই মূহুর্তে স্ক্রিনে রিমঝিমের ছবি দেখে থেমে গেলো সে
নিকনেম”শ্বাসপ্রশ্বাস “সেভ করা
নিহা খুব রেগে আছে,,ফোন কেটে সে নাম্বার খুঁজে ব্লক করে দিলো,,তারপর ব্লক করার পরেও যদি কেউ কল করে তার একটা নোটিফিকেশন আসে,নিহা সেটাও অফ করে দিয়ে ফোন আগের জায়গায় রেখে দিলো
এরপর সোজা স্পর্শর কাছে এসে ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জড়িয়ে ধরলো সে
স্পর্শ চমকে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো নিহা,রেগে সে এক ধমক দিলো নিহাকে তারপর বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে একেবারে
এখানে যতক্ষন থাকবো ততক্ষণ এই মেয়েটা জ্বালিয়ে খাবে আমাকে

কি ব্যাপার উনি আমার ফোন ধরছেন না কেন??কলিং না হতেই নাম্বার ব্যস্ত আছে বলছেই বা কেন,এমন তো নাম্বার ব্লক করলে আসে,তাহলে কি উনি আমার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছেন??কিন্তু কেন??
.
রিম মুখটা ফ্যাকাসে করে ফোন রেখে দিলো,বেশ কয়েকবার কল করার পরেও স্পর্শ রিসিভ করছে না দেখে হতাশ হলো সে
এই বিপদে স্পর্শই পারবে আমাকে বাঁচাতে আর এ সময়ে উনার অনুপস্থিতি আমার মনে আরও ভয়ের সৃষ্টি করছে ক্রমাগত
.
রিহাব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে তার আগেই রিমঝিমের বিয়ে দিয়ে দেবে,বাবাও একমত তার সাথে,বাবাও প্রচণ্ড রকম ভাবে রিমের উপর রেগে আছেন
রিমঝিম নিজেকে এই প্রথম অসহায় মনে করছে,যে মানুষটাকে এখন দরকার সেই এখন পাশে নেই,একা কতক্ষণ ধরে লড়বো আমি?
.
রাত ১২টা বাজে,মা স্পর্শর জন্য চিন্তা করছেন কারন স্পর্শ এখনও বাড়ি ফিরছে না,নিহার সাথে রাগ করে সেই কখন বেরিয়েছে অথচ এখনও আসার নাম নাই
বারোটা বাজার কিছুক্ষণ পরেই স্পর্শ ফিরলো,আঁখি দরজা খুলেছে,স্পর্শ এদিক ওদিক না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে সোজা,,গিয়েই কম্বলের ভেতর ঢুকে গেলো সে
আজব লাগলো তার কাছে কারণ রিম ওকে একবারও কল করলো না,পরে ভাবলো কোনো সমস্যায় পড়েনি তো?উঠে বসে স্পর্শ ফোন হাতে নিলো ওকে কল দেওয়ার জন্য তখনই মা এসে বললেন”আমি তোর কিছুই না?”
.
এমন করে বলছো কেন?
.
এতদিন পর আসলাম তোর সাথে দেখা করতে আর তুই বাইরে বাইরে থাকোস
.
যে আপদ সাথে করে নিয়ে এসেছো তার জ্বালাতনে থাকতে পারা যায়??ওরে চলে যেতে বলো তাহলে সারাদিন তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে কাটাবো
.
নিহাকে আমি পছন্দ করি,আর ও আমার পুত্রবধূ হবে,তুই যতই না না করিস,যদি নিহা তোর বউ না হয় আর কেউ হবে না,ঐ রিম তো জীবনেও না
.
স্পর্শ ফোন রেখে দিয়ে আরেক দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো,
রিম ও গেলো!!!সাথে করে আমার লাইফের হ্যাপিনেস ও নিয়ে গেলো,সব কিছু বিষাদময় লাগছে,আর কতদিন এমন করে কাটাতে হবে কে জানে,আর ভাল্লাগছে না আমার
রিমকে দেখলে মন ভালো হয়ে যেতো,এখন না আছে তার পোস্টার না আছে সে নিজে!
.
রিম মন খারাপ করে হাতে ফোনটা নিয়ে ওলটপালট করতে করতে বাসার সামনের রোডটার দিকে তাকিয়ে আছে,স্পর্শ একবারও কলব্যাক করেনি,সে কি আমার কল দেখলো না?
নাকি যেটা ভাবছি সেটাই,সত্যি সত্যি ব্লক করে রেখেছে,আমি কি করবো তাহলে.?যদি ভাইয়া আজই কোনো ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসে??আবার যে পালাবো সেই উপায় ও নাই,ভাইয়া আমার রুমের দরজা লক করে রেখেছে
পানি ও খাইনি আসার পর থেকে,কি একটা জুলুমি করা শুরু করে দিয়েছে,এরকম ভাই ও হয় বুঝি!

ভোর হতে না হতেই স্পর্শ জেগে গেলো,ফোন হাতে নিয়ে দেখলো কোনো নোটিফিকেশন আসলো কিনা
না কিছুই নাই
রিম আমাকে একবারও কল করছে না কেন,মেসেজ ও করছে না,কি হলো মেয়েটার!এত এত টেনসনে ফেলে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে,কি দরকার ছিল যাওয়ার??আমার এখন একটা সেকেন্ড কাটাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে
বাকি দুটো চড় মারার পর যখন সেঞ্চুরি কমপ্লিট হবে তখন ওরে বুঝিয়ে দেবো আমার রাগ,আমার ক্ষোভ,আমার এতদিনের ইচ্ছা,আমার কষ্টের ফলাফল,হারে হারে বুঝাবো ওরে,আর এখন তো লিগালি ওয়াইফ আমার,হেহে!!
.
রিম নামাজ পড়া শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে স্পর্শকে আবারও কল করতে থাকলো,কারণ সে জানে ও এসময়ে নামাজ পড়তে ওঠে,কিন্তু আফসোস স্পর্শ নাম্বার ব্লক করে রেখেছে
রিমের কান্না পাচ্ছে খুব,,কি দোষ করেছিল সে!!বিয়েটা নাহলেই হতো,এই বিয়েটা হয়ে যত ঝামেলা পাকিয়েছে,একদম ভাইয়ার পছন্দে বিয়ে করে নিতাম কিন্তু আমি তো অলরেডি বিবাহিত তাহলে আবার বিয়ে করা অন্যায় হবে,আমার এখন স্পর্শকে দরকার আর ঠিক সেসময়ে উনি উধাও,আমাকে বিপদে ফেলে ঐ নিহাকে নিয়ে ঘুরাফিরা করছে নিশ্চয়

হ্যালো স্পর্শর বাবা??এত সকাল সকাল ফোন করলেন যে,সব ঠিক আছে তো??
.
কি আর ঠিক থাকবে,আমাকে একা রেখে তোমরা মা মেয়ে ছেলের কাছে চলে গেলে,আমার কাছে বাসাটা এখন ভূতের বাড়ি মনে হচ্ছে
.
সেকি,গোটা একদিনও পূর্ন হয়নি আমরা এখানে এসেছি আর এত জলদি ভূতের বাড়ি হয়ে গেলো?
.
মজা করো না,চলে আসো,আমার ভালো লাগছে না,তোমার হাতের চা খাব,আঁখির হাতের নাস্তা খাব,তা কিছুই হচ্ছে না,শরীর খারাপ লাগছে
.
হ্যাঁ আমিও ভাবলাম আজ ফিরে যাব কারণ স্পর্শর ফ্ল্যাটটা পুরো ফাঁকা,বসার জন্য চেয়ার কয়েকটা,বিছানাও নাই,নিচে তোষক বিছিয়ে শুতে হয়,সব কেমন খালি খালি
আমরা আজ বিকালেই ফিরে আসব
.
আচ্ছা আসো আসো,সেটা ভালো হবে
.
ঠিক আছে,রাখছি
.
রোকসানা বেগম ফোন রেখে জায়নামাজ গুছিয়ে ব্যাগে পুরে স্পর্শর রুমের দিকে গেলেন,স্পর্শ ফোনে রিমঝিমের ছবি দেখছে
রিম চেয়ারে বসে তার একটা বান্ধুবীর সাথে হাসছে,এটা একটা ক্যান্ডিড ছবি যেটা স্পর্শ তার ফোনে তুলেছিলো
সম্ভবত ১বছর আগের ছবি এটা,,রিমঝিম তার বান্ধুবীর জন্মদিনে গিয়েছিল ওর বাসায়,আর স্পর্শ ও গেছিলো কারণ রিমের বান্ধুবীর বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড ছিল স্পর্শ
,
মায়ের গলা শুনে স্পর্শ ফোন লুকিয়ে উঠে বসলো,মা এগিয়ে এসে বললেন”তোর বাবা জোর দিয়ে বললো ফিরে যেতে,আর আমার ও এখানে ভালো লাগছে না,তাই আমরা আজ বিকালে চলে যাব”
.
স্পর্শর মনে হলো সে সবচাইতে খুশির খবর শুনেছে,দাঁত কেলাতে গিয়েও কেলালো না,মুখটা গম্ভীর করে বললো”তোমার ইচ্ছা”
.
এসময়ে লুঙ্গি ধরে নাচতে মন চাচ্ছে,কিন্তু নাহ,সবাই চলে গেলে তারপর নাচবো,এখন নাচবো না,হিহি,এত এত আনন্দ কই রাখি আমি
.
ঐদিকে রিমঝিম নাস্তা করতে বসে যেই না মুখে রুটি তুললো ঠিক সেসময়ে রিহাব এসে বললো”আজ একটা ছেলে রিমকে দেখতে আসবে,রিম যেন সেজেগুজে থাকে,ছেলেটা সন্ধ্যায় আসবে অফিসের কাজ সেরে
রিমের মনে হয় রুটি গলায় আটকে গেছে,অনেক কষ্টে পানি খেয়ে সে নিজের রুমে চলে আসলো
স্পর্শর কথা মাথায় আসতেই আবারও কল করলো,কিন্তু আফসোস এবারও বিজি বলতেছে
রিমঝিমের রাগ হলো খুব,রাগের বসে নিজের রুমের দুটো টব ছিলো কাঁচের সেগুলো ভেঙ্গে ফেল্লো সে,চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে তার,অনেক অনেক কষ্ট হচ্ছে
.
এদিকে স্পর্শ মাকে বলে অফিস তো এসেছে,তবে তার মাথায় ঘুরছে কি করে রিমকে আবার বাসায় আনবে সে,আনলেও তাকে সারপ্রাইজ দিয়ে বরণ করবো,আমার বউ পুনরায় আমার বাসায় ফিরবে
কিন্তু যদি রিম না ফিরে??তখন??
.
স্পর্শ মনে মনে প্ল্যান করছে কি করলে ঠিক হবে আর কি করলে ভুল হবে,তারপর ভাবলো রিমকে কল করে খুশির খবর জানিয়ে দিই,কাল থেকে কথাও হয়নি
ফোন হাতে নিতেই রিপনের কল দেখে সে অবাক হলো কিছুটা
আবার কোনো বিপদে পড়লো না তো রিপন???

সন্ধ্যা হতে আর এক ঘণ্টা বাকি,রিম কাঁদতে কাঁদতে শেষ,,আজ আর তার কান্না ছাড়া উপায় নেই,,নিজেকে এত একা মনে হচ্ছে
ফুলের টব একটা অর্ধেক ভেঙ্গেছে শুধু,রিমঝিম বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেই ভাঙ্গা অংশটার দিকে নজর রাখছিলো
রাগ আরও বাড়তেই এগিয়ে এসে সে এই টুকরোটাও ভাঙ্গতে গেলো
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এবার তার হাত খারাপ ভাবে কেটে গেলো ঐ অংশটা ছুঁতেই,মাঝ বরাবর ধারালো কাঁচের কোণা খাড়া হয়ে ছিলো,অন্ধকারের মাঝে রিম খেয়ালই করেনি
তার মাথায় তো সব রাগ এসে জমেছিল,খেয়াল করবেই বা কি করে
মা জোর করে কমলা রঙের একটা সুতির শাড়ী পরিয়ে দিয়েছেন,ভাইয়াকে নাকি তিনি অনেক বুঝিয়েছেন এতে করে বাবা মাকে বকেছেন কেন মা রিমের পক্ষ নিচ্ছেন তাই,যার কারণে মা এক প্রকার বাধ্য হয়েই রিমকে তৈরি করে দিলেন
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৩
Writer-Afnan Lara
.
রিম হাতের দিকে চেয়ে বসে আছে,স্পর্শদের বাসা থেকে হইচই শুনা যাচ্ছে
রিম সাথে সাথে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,জলদি করে জানালার পর্দা একটানে সরিয়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে স্পর্শর রুমটার দিকে
মিনিট দুয়েক পর সে নিহাকে দেখতে পেলো,নিহা হাসি মুখ নিয়ে স্পর্শর রুম গুছিয়ে দিচ্ছে
.
এটাই দেখাই বাকি ছিল আমার??আমাকে এত কষ্টে ফেলে সবার সাথে হাসিমজা করছেন উনি,এ নিহা হাসার মানে তো নিশ্চয় স্পর্শ উনার সাথে ভাল কিছু বলেছেন নয়ত করেছেন,আজ কপাল সব দিক দিয়েইই খারাপ আমার,ধুর ছাই!!
রিম কাঁদতে কাঁদতে পিছিয়ে যেতে যেতে ভাঙ্গা কাঁচে পা রেখে এক প্রকার চেঁচিয়ে নিচে বসে গেলো হুড়মুড়িয়ে
.
সত্যিই আমার কপাল অনেক অনেক খারাপ,একইদিনে সব ঘটে যাচ্ছে
হাত পা কেটে বসে থাকো এবার তুমি রিম,তোমার কপালে এটাই লিখা ছিলো
.
নাকের পানি চোখের পানি সব এক হয়ে যাচ্ছে,শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছতে গিয়ে রিম কারোর পা দেখতে পেয়ে আটকে গেলো
মুখ থেকে আঁচল সরিয়ে পা জোড়ার দিকে চেয়ে রইলো সে
জিন্সের প্যান্ট পরা লোকটা,মুখ তুলে সে তাকাতেই স্পর্শকে দেখলো
পার্পল কালারের একটা ফুল শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সে
ওকে দেখে রিমঝিম মোটেও মন খারাপ করেনি,অনেক বেশি খুশি হয়েছে সে,তবে মনের ভেতরের চাপা কষ্টের আঘাতে আপাতত সে খুশি ভুলে রেগে আছে ওর উপর
রাগে উঠে দাঁড়াতে গিয়েও পারলো না,নিচে বসে থেকেই এক দৃষ্টিতে স্পর্শর দিকে তাকিয়ে থাকলো সে
এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব?? স্পর্শ কি সত্যি এসেছে?
আমার রুমে ঢুকেছে কি করে,ভাইয়া তো দরজায় তালা মেরে রেখেছেন,তাহলে কি বারান্দা দিয়ে??
.
স্পর্শ পায়ে থাকা শু দিয়ে সামনের কাঁচের টুকরো গুলো সরিয়ে নিচে বসলো রিমের সামনে
তারপর দুহাত দিয়ে রিমের মুখটা ধরার আগেই,ওকে ছোঁয়ার আগেই রিম তার রক্তমাখা হাতে সবসময় যেটা করে সেটাই করে ফেলেছে এখন
চড় মেরে দিয়েছে,গুনে গুনে দুটো
অবশেষে ১০০এর ঘড়া পূর্ন হলো,তবে এটা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করার মতো মুডে এবং পরিস্থিতি দুটোর একটাতেও স্পর্শ নেই,রিমঝিম তো একদমই না
স্পর্শর মনের ভেতর কষ্টের ফুলকি দিচ্ছে
আর রিমঝিমের মনের ভেতরটায় ক্রোধ
রিম চড় মেরে নিজেই ব্যাথা পেয়েছে কাটা হাতে,স্পর্শর থেকে চেখটা নামিয়ে সে ছলছল চোখে নিজের হাতটা দেখলো তারপর আবারও তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”খুব ভালো লাগছে আপনার??আমাকে এমন অবস্থায় দেখে??নিহাকে পেয়ে সব তো ভুলে গেলেন,ইভেন আমাকেও!!আমাকে একা এমন পরিস্থিতিতে লড়তে ছেড়ে দিলেন আপনি,আপনি মানুষটা খুব খারাপ,কতবার ফোন করেছি আপনাকে,একবারও কি চেক করেননি?করবেনই বা কেন,নাম্বার তো ব্লক করে রেখে দিয়েছিলেন,আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল বুঝি??তাহলে এতটা বছর ধরে নাটক কেন করলেন?
যে সময়টায় আমার আপনাকে সব চাইতে বেশি দরকার ছিল সেই সময়টায় আপনি উধাও,অন্তত কল ধরে বলতেন আপনি আপনার মায়ের অমতে গিয়ে আর আমার কোনো হেল্প করবেন না,বিয়েটা আপনি এবার নিজেই অস্বীকার করতে প্রস্তুত!!!
কিছু বলছেন না কেন?এই আপনার ভালবাসা???এখন আর এসেছেন কি জন্যে??
.
রিমঝিম??তৈরি হয়ে নে,তোর ভাইয়া ছেলেটাকে নিয়ে এসে গেছে,চুল ঠিক করিসনি আমি দেখেছিলাম,চুল ঠিক করে আয়,আমি নাস্তা বানাচ্ছি
.
রিম মায়ের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে কাঁপতে থাকলো,হুট করে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে তার,এতটাই অসুস্থ সে,কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো এক সময়ে

কি হলো মা??রিমকে তৈরি করে রাখোনি আগের থেকে??এত দেরি করছে কেন?
.
রিহাবের কেমন একটা সন্দেহ হতেই দরজার দিকে তাকালো সে,দরজা তো লক করা,পালানোর কোনে চান্স নাই ওর,,সমস্যা হলো এত দেরি করছে কেন সে,এত কিসের সাজগোছ,অবশ্য নির্ঘাত ঘাড়ত্যাড়ামি করে বসে আছে হুদাই
যা বুঝলাম ওকে টেনে হিঁচড়েই আনতে হবে আজ,নিশাদ যদি ওকে পছন্দ করে তাহলে আজই আংটি বদল করিয়ে নেবো,নিশাদ বলেছে ওর পছন্দই ওর পরিবারের পছন্দ,তাহলে আর দেরি করবো না
.
রিহাব চিন্তা করিস না,আমি নাস্তা বানিয়ে ফেলেছি,এখন যাচ্ছি রিমকে আনতে,আর তোর বাবা কখন আসবে জানিস?
.
বাবা তো বলেছিল সাতটার আগেই আসবে,এখন সাতটা বাজতে চললো অথচ বাবার আসার নাম নাই
.
মা রিহাবের থেকে দরজা খোলার চাবি নিয়ে দরজা খুললেন,পুরো রুম অন্ধকার,কালো ঘুটঘুটে হয়ে আছে
মা চমকে লাইট জ্বালালেন,ওমা রুমে রিমঝিম নেই
মায়ের পেটে মোচড় দিতেই দৌড়ে বাথরুমে চেক করতে গেলেন তিনি,সেখানেও রিম নেই,নিচে ফ্লোরে কাঁচ ভেঙ্গে চুরে পড়ে আছে,আশ্চর্য ব্যাপার রিমঝিম কোথায়??
.
রিহাব রিশাদকে বসিয়ে এগিয়ে আসলো বিষয়টা দেখার জন্য,মায়ের মুখ দেখে আর পুরো রুম ফাঁকা দেখেই সে বুঝে গেলো রিম পালিয়েছে আবার,রেগে মেগে সে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে
মা আঁচল মুখে দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন,রুম থেকে কি করে উধাও হতে পারে সে??
.
কিরে স্পর্শ??তুই না আমাদের সাথে বাসায় এলি,এখন কোথায় গেলি আবার??ফিরছিস না কেন
.
মা সরি,আমার অফিসের বস আমার ছুটি ক্যানচেল করে দিয়েছে যার কারণে আমি উত্তরায় ফেরত যাচ্ছি আবার
.
ওমা সেকি!!একবার বলে যেতি,আমি তোর জন্য রান্নাবান্না শুরু করে দিয়েছিলাম
.
মা কথার ছলে সামনে নিহাকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে কথা থামিয়ে চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করলেন নিহাকে যে ও কেন কাঁদছে
.
নিহা কেঁদে কেঁদে বললো”ভাইয়া আমাকে চড় মেরেছে
তোমার এই নারী নির্যাতন কারী ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না,কত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলে,উনাকে ভাল ভেবেছিলাম আমি,উনি যে এত খারাপ আগে জানতাম না,সামান্য একটা নাম্বার ব্লক করেছিলাম বলে আমাকে চড় মারলো,একটা কথা কি জানো?ঐ পাশের বাসার রিমঝিমের জন্যই উনার জন্ম হইছে,ঐ মেয়ের কপালেই তোমার এমন জুলুমি ছেলের নাম লিখা আছে
.
কথাগুলো সব শুনে স্পর্শ দাঁত কেলালো,আসলেই নিহা কিন্তু ঠিক বলেছে,আমি রিমঝিমের জন্যই
রিম আমার হাতের চড় খেয়েও টু শব্দ করে নাই আর দুই দিনের নিহা কিনা এত বিষম খেলো,হাহা!!
যাক চড়টা খাওয়ায় এক ঢিলে দুই পাখি মারা গেলো
এবার ফিলিং হ্যাপি মনে হচ্ছে,,রাগের বশে মানুষ সত্যি কথা বলে,নিহাও তাই বলছে,এবার যদি মা একটু বুঝতো যে আসলেই রিম আর আমি একপ অপরের জন্য
.
রোকসানা বেগম তো রেগে ফুলেফেঁপে শেষ ,,,স্পর্শ নিহাকে চড় মেরেছে সেটা নিয়ে নয় বরং নিহা যে স্পর্শর চড় নিয়ে এত হাইপার হয়ে গেছে সেটা নিয়ে তার রাগ হচ্ছে,তার ছেলে চড় তো এমনি এমনি দেয়নি,এর পিছনে কারণ ছিল হয়ত,আর একটাই তো চড় মেরেছে এতে এরকম ড্রামা করার কি আছে
না জানি এই মেয়ে বিয়ের পর কি কি করে পুরো বাসা চিড়িয়াখানা বানিয়ে রাখত এর আগেই আল্লাহ আমাকে সঠিক পথটা দেখিয়ে দিলেন
হয়ত এর কারণেই মা বলতো— সব আপন আপন হয় না,কেউ কেউ পরের চাইতেও নিকৃষ্ট হয়
নিহা তারই প্রমাণ
আঁখি!!!!
.
আঁখি লিপস্টিক লাগাচ্ছিল নিজের রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে,মায়ের ডাক শুনে এক দৌড়ে চলে আসলে সে,ঠোঁট নিচেরটায় সবে লাগিয়ে ছিল লিপস্টিক
উপরেরটা এখনও খালি,পরে লাগাবে,আগে মায়ের কথা শুনা জরুরি
.
কি হয়েছে মা?
.
তোর খালারে ফোন করে বল নিহাকে এসে নিয়ে যাইতে,ওর মনে হয় আমাদের বাসায় থাকতে আর ভালো লাগে না
.
সেকি নিহাপু,,,ভালো লাগে না কেন??আমার সাথে রাতে কত গল্পগুজব করো তার পরেও তোমার ভালো লাগে না?
.
না লাগে না,তোমার ভাইয়া নারী নির্যাতন করে তা জানা ছিল না, জানো কি করছে সে?
.
কি করছে?
.
চড় মেরেছে আমাকে,কতবড় বেয়াদব হলে এমন করতে পারে,বিয়ের আগেই আমার গায়ে হাত তুললো,এত বড় সাহস!!!
.
আইছে আমার নারীবাদী, বের হ আমার বাড়ি থেকে,ভাগ্য ভালো এখনও বিয়ের কথা দিই নাই,আমার স্পর্শ মেয়ে চিনে,আর তোকে ঠিক চিনে ফেলেছে,নিজের দোষ দেখিস না?তুই কিছু না করলে ও এমনি এমনি চড় মেরেছে তোকে??
.
তোমার ছেলে সারাদিন রিমরিমরিম করে,ওরে ঠিক করার খাতিরে কারসাজি করেছিলাম,তার রিয়েকশান এটা হলো
.
মা হয়েও ওরে আমি এতবছর ধরে ঠিক করতে পারিনি,ভেবেছিলাম তোকে দিয়ে রিমের ভূত নামাবো ওর মাথা থেকে কিন্তু তা আর হলো কই,তুই তো প্রথম ধাপেই দুধভাত হয়ে গেলি
.
তোমার ছেলে আস্ত একটা পাগল,যাকে বলে উন্মাদ, আমি এমন ছেলেকে বিয়ে করবো না,খুব বাঁচা বেঁচে গেছি
.
রোকসানা বেগম ব্রু কুঁচকে বললেন”আঁখি!হাঁসের মাংস ফ্রিজ থেকে নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিলাম নিহার জন্য রান্না করবো বলে,ওটা আবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখ”

রাত আটটা বাজে,,কম্বলের ভেতরের উষ্ণতা খুব করে কাবু করে রেখেছে আমায়,তবে মাঝে মাঝে হাতে আর পায়ে চিনচিন ব্যাথা করে উঠছে,মনে হচ্ছে কেউ বুঝি সুঁই গেঁথে দিচ্ছে
আবার মাথার কাছ থেকে তাজা গোলাপের ঘ্রান নাকে আসছে বারবার,দূর থেকে চা পাতা ফুটুন্ত পানিতে দেওয়ার পর যে স্মেল আসে সেটাও আসছে এদিকে
আচ্ছা! আমি কোথায়?
চোখ খুললো রিম,,মাথার উপরে ক্রিম কালারের ছাদ,কিন্তু আমার বাসার ছাদ তো পেস্ট কালারের,তাহলে এটা কার বাসা
মাথা ধরে রিম উঠে বসলো,গা থেকে লাল রঙের কম্বলটা সরিয়ে পা ধরে দেখতে গেলো সে,,পায়ে ব্যান্ডেজ আর হাতেও,চোখ ডলে এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমটা চিনতে পারলো রিম
আমি তো মনে হয় স্পর্শর রুমে,কিন্তু আমি তো আমার বাসায় ছিলাম,তখন স্পর্শ আসলেন,তারপর??
তারপর কি হলো,আমি উনাকে বকেছিলাম,মা বললো রেডি হতে রিহাব ভাইয়া ঐ ছেলেটাকে নিয়ে এসে গেছে তারপরে কি হলো??
.
তারপরে আপনি জ্ঞান হারালেন,আর আপনাকে আনতে আমার একটু বেশিই কষ্ট হলো
.
আপনি!আমাকে এখানে এনেছেন কি করে?
.
সে বিরাট বড় কাহিনী,আপাতত নাও চা খেয়ে শরীর চাঙ্গা করো
.
রিম চায়ের কাপের দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো”চাঙ্গা হয়ে কি হবে?”
.
স্পর্শ নিজের চায়ের কাপ নিয়ে তোষকের উপর বসে গিয়ে বললো”সেটাও পরে বলবো,আগে চা খাও”
.
গোলাপের ঘ্রান আবারও আসতে দেখে রিম পিছন ফিরে তাকালো,একটা ইয়া বড় তোড়া,সম্পূর্ণ গোলাপের,মিডিয়াম সাইজের
রিম হাত বাড়িয়ে গোলাপের তোড়াটা ছুঁলো তারপর আবার স্পর্শর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই স্পর্শ ওর হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললো”নিন,খেয়ে নিন,তারপর সব কথা হবে”
.
মা?? আর রিহাব ভাইয়া আপনাকে কিছু বলেনি?
.
চা না শেষ করলে আমি সে ব্যাপারে কিছুই বলবো না তোমায় হুহ!
.
রিম এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে চা শেষ করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে
চা খেতে খেতে দারুন এক অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো সে আজ
খোলা চুল ছিলো,উষ্কখুষ্ক,পিঠ জুরে ছিল সেই চুল,সামনে বসে থাকা লোকটি চায়ে চুমুক না দিয়ে সেই চুলগুলো আমার সরিয়ে ঠিক কানের নিচটায় চুমুক দিলো,এ কেমন শিহরণ সারা শরীরে???
কিছু বলতে পারলাম না,লোকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও নিজের চা খাওয়াতে মন দিয়েছে
পাঁচটা সেকেন্ডে কি থেকে কি করে ফেললো,না আগাম জানতাম না ভেবেছিলাম এমন সিচুয়েশনে লোকটা এমন করতে পারে
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৪
Writer-Afnan Lara
.
রিম কিসের একটা ঘোর থেকে বেরিয়ে হালকা রেগে বললো” আপনি এমন করলেন কেন?”
.
কি করলাম?
.
আপনি আমাকে টাচ করলেন মাত্র, আবার জিজ্ঞেস করছেন যে কি করেছেন?
.
রিম আমার মনে হয় সেন্সলেস হয়ে যাওয়ায় তোমার স্মৃতি শক্তি কমে গেছে,একটু শান্ত হও,,রেস্ট নাও দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে
.
আপনি আমাকে মিথ্যুক প্রমাণ করাতে চাচ্ছেন?
.
একদমই না,,তুমি অলওয়েজ ঠিক বরং আমি বেঠিক,খুশি?
এবার চা খেয়ে শুয়ে থাকো,আমি দেখি আলুর ভর্তা আর ডাল,ভাত রাঁধবো,রেঁধে তারপর আমরা একসাথে ডিনার করবো
.
কথাটা বলে স্পর্শ নিজের চায়ের কাপ নিয়ে উঠে চলে গেলো
রিম ও উঠে দাঁড়িয়ে ওর পিছু পিছু যেতে যেতে বললো”তখন নিহা এরকম হেসে হেসে আপনার রুম গুছাচ্ছিলো কেন?”
.
কখন?
.
আপনি আসার একটু আগে আমি জানালা দিয়ে দেখলাম
.
ওহ আর হেসে লাভ নাই,ভালোই টাইট দেওয়া হয়ে গেছে ওরে
ও আমার ফোন থেকে তোমার নাম্বার ব্লক করে রেখেছিল যার কারনে আমি তোমার কল পাইনি,রিপন ফোন দিয়ে না জানালে হয়তবা জানতামও না
রিপন আমাকে অফিস টাইমে ফোন করে বললো তোমার যে বিয়ের কথা চলছে,ছেলে দেখতে আসবে
.
রিপন জানলো কি করে?
.
তামিম নাকি রিনতির সাথে এ বিষয়ে কথা বলছিলো রিপন সেটা শুনেছে
.
বাহহ,তামিম ভালো কাজেই আসলো তাহলে,,আগে আমাকে এটা বলুন আপনি আমাকে নিয়ে এখানে আসলেন কি করে?
.
তোমাকে তুলে নিয়ে এসেছি,তোমার বারান্দা দিয়ে,,সন্ধ্যাবেলা ছিল,মাগরিবের সময়,পথঘাট ফাঁকা ছিল,মসজিদ ভর্তি ছিল মানুষ
এই সুযোগে আমি তোমাকে নিয়ে চলে এলাম,অবশ্য রিপন দেখেছে,ও হেল্প ও করেছিলো বৈকি
.
ওহ তাহলে এই ব্যাপার
.
আর তুমি তো আমাকে যা তা বললা,,অবশ্য এর পিছনে তোমার দোষ নাই,নিহার এরকম কুকাজের কারণেই মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং টা হলো,এখন সব আগের মতন ঠিক হয়ে গেছে,আই এম ফিলিং বেটার
.
রিম চুপ করে ফ্লোরের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,স্পর্শ চুলার নিচের তাক থেকে আলু পাতিলে নিতে নিতে বললো”তোমার ও দোষ আছে কিছুটা,কারণ তুমি জেদ ধরে বাসায় ফিরে না গেলে এত কিছুই হতো না,আমি জানতাম রিহাব তোমাকে আবারও বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে,আর সেটাই হলো,তুমি যাওয়ার পরেরদিনই বিয়ে দেওয়ার জন্য একটা ছেলেকে নিয়ে হাজির হলো সে
অনেক বোনের ভাই দেখেছি তবে রিহাবের মতন দেখি নাই
তোমার ভালো চায় না খারাপ চায় সেটাও জানি না
তবে কি চায় সেটা জানি,আর সেটা হলো আমাকে হারাতে চায়
আমি তোমাকে না পেলে সে জিতে যাবে তাই অন্য ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে সবসময়
.
ভাইয়া এরকম হয়ে গেলো কেন বুঝি না আমি
আলুতে পানি এত কম দিয়েছেন কেন,আলু তো পুড়ে যাবে,দেখি সরুন,আমি বানাচ্ছি আপনি যান
.
নাহ তুমি সিক,আমি বানাবো,বরং তুমি চেয়ার নিয়ে বসে বলে বলে দাও তাহলেই হবে
.
রিম একটা চেয়ার টেনে এনে বসলো,স্পর্শ কাজের ফাঁকে ফাঁকে বার বার তাকাচ্ছে রিমের দিকে
খোলা চুল আর সুতির শাড়ীটাতে ওকে খুব ভালো লাগছে,তার উপর মুখটা মলিন করে রেখেছে,মন তো চাচ্ছে ভালবেসে মুখটাতে হাসি ফোটাতে
তবে না,এত জলদির কিছুই নেই
.
কি ভাবছেন এত?
.
না কিছু না,,তোমার মা কেমন আছে এখন?
.
মাকে যতটা অসুস্থ ভেবেছিলা ততটা অসুস্থ ছিলেন না,,আমাকে যেভাবে কল করে বলেছিলেন আমি তো ভয় পেয়েই চলে গিয়েছিলাম বাসায়
.
গিয়েও আবার একটা ভালে কাজ করেছো,এতে করে তুমি বুঝেছো তোমার ভাই তোমাকে পেলে আবারও বিয়ে দিয়ে দিতে পিছু পা হবে না কিছুতেই
.
হুম বুঝলাম,আচ্ছা,,একটা কথা বলবো?
.
স্পর্শ পেঁয়াজ কাটতে কাটতে কান্না করছিলো,চোখ মুছে রিমের দিকে তাকিয়ে বললো”বলো শুনি”
.
আপনাকে প্রচুর মিস করছিলাম সেসময়টায়
.
আমিও
.
আপনি এরকম কাঁদছেন কেন?
.
পেঁয়াজ একটু বেশি তাজা আর অথেনটিক,, যার কারণে চোখ দিয়ে ঝর্নার পানি বের হচ্ছে
.
ইস রে!কাটার আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ঝাঁঝ কমে যেতো,,যাই হোক সরুন,আমি কাটবো
.
না,তুমি চেয়ার থেকে উঠবা না,যা করার আমি করবো
.
একটা কথা বলুন,এতগুলো গোলাপের তোড়া আনলেন কেন?
.
আমার বউয়ের গোলাপ অনেক পছন্দ তাই
.
সেটা তো যেকোনো দিনই আনতে পারতেন,আজই কেন?
.
তোমাকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে প্রাণভরে দেখবো,দুদিন না দেখার কষ্টে মলম লাগাবো তাই
.
রিম পা ভাঁজ করে গোল হয়ে বসে বললো”ঐ নিহাকে কি করে টাইট দিলেন একটু শুনি”
.
চড় মারি দিসি,,ও নাকি আমাকে বিয়ে করতে না করে দিয়েছে,আর আঁখি জানালো মা ও নাকি ওরে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে,আজ সকালে কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম আমি,একের পর এক ভালো কিছু ঘটছে
.
হাহা,মজার ব্যাপার তো,ইস আর আমি এতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম?সব মিস করলাম!
.
পানির ছিঁটা দিলেই জ্ঞান ফিরতো তোমার,তবে সেই সময়টা পাইনি আমি,আমি তো শুধু আমার কাজই করে গেছি পরপর
পরে ফ্রি হয়ে চা বসিয়েছি,ফুল এনেছি,তোমার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করেছি
.
খুব ভালোবাসেন আমাকে?
.
সন্দেহ আছে?
.
একটুও না
.
তাহলে??এবার অন্তত নিজ থেকে বাসো,বেসে উদ্ধার করো আমাকে,অনেক ঘুরিয়েছো,১০০টা চড় ও শেষ
.
১০০টা চড়ের কথা শুনে রিম মুখে হাত দিয়ে ফেললো,তখন রাগের বসে সে বাকি দুটো চড়ও মেরে দিয়েছিলো নাকি?এই রে কি ভুল করলাম আমি,এখন কি হবে আমার?
.
কি??ভয় করে তোমার?
.
রিম ঢোক গিলে বললো”নাহহ তো”

রাত দশটা তিন বাজে,রিম হাতে প্লেট নিয়ে স্পর্শর মুখের দিকে চেয়ে আছে
স্পর্শ কিরকম পাগলের মতন খেয়ে যাচ্ছে,ওকে দেখে মনে হয় এক বছর ধরে ভাত খায় নাই
একা একা সব রেঁধে এখন পাগলের মতন খাচ্ছে,রিমের গলা দিয়ে খাবার যাচ্ছে না স্পর্শর খাওয়া দেখে,সে পানির গ্লাস এগিয়ে ধরে বললো”পানি খান একটু”
.
স্পর্শ খাওয়া থামিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি আমার, তাই খিধে পেয়েছিল অনেক”
.
হুম বুঝেছি,খান তবে আস্তে আস্তে,এত তাড়াহুড়ো করে খেলে গলায় আটকে যাবে
.
স্পর্শ মুচকি হেসে খাবারটা শেষ করে চলে গেলো নিজের রুমে
রিমঝিম প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে বাহিরে পা রাখতেই কারেন্ট গেলো চলে
রিম চেঁচালো না,ফিল্মের নায়িকাদের মতন ন্যাকামি তার মাঝে নেই
সে চুপচাপ অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে স্পর্শর রুমের দিকে যাচ্ছে,যাওয়ার মুখেই ধাক্কা খেলো স্পর্শর সাথে
স্পর্শ কিছু বললো না,রিমের হাত ধরে ওকে অন্ধকারের মাঝেই বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসালো
রিম বললো”মোমবাতি নেই?”
.
আছে,তবে দরকার দেখছি না,আমার বউকে আমি না দেখেই সাজাতে পারি
.
আচ্ছা সাজান তো
.
স্পর্শ গোলাপ ফুলের তোড়াটা খুলে পকেট থকে সুঁই সুতা বের করলো,আগেই সুতা লাগিয়ে রেডি করে পকেটে রেখেছিলো সে
অন্ধকারে বসে বসে একটা ছোট্ট মালা বানিয়ে নিলো স্পর্শ
গোলাপ আর গোলাপ তাতে
অতোটা অন্ধকার না,,দূরের কিসের যেন আলো আসছে এদিকে,দোকানপাট কিংবা অন্য বাসার
.
স্পর্শ মালাটা বানিয়ে গিট্টু দিয়ে দাঁত দিয়ে সুতা কাটলো,তারপর রিমের গলায় পরিয়ে দিলো
রিম হালকা হেসে বললো”ব্যস এই টুকুই?”
.
স্পর্শ রিমের কথার জবাব না দিয়ে ফুল একটার ডাটা ছিঁড়ে ফুলটা রিমের কানে গুজে দিলো
.
এরকম সাজিয়ে কি লাভ যদি আমাকেই না দেখেন এই অন্ধকারে
.
সেটার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে,তুমি সোজা হয়ে বসে থাকো
.
আর কতক্ষণ?
.
কেন ঘুম আসছে?
.
নাহ তবে রোবটের মতন বসে থাকতে কার ভাল্লাগে বলেন?
.
কথাটা বলে রিম চোখ বন্ধ করে বসে রইলো,স্পর্শ তার মনমত সাজাচ্ছে ওকে,,হাতের ব্রেসলেট, গলার মালা,কানে ফুল
কিছুই বাদ রাখেনি সে,তবে একটা টিকলি বানালে বিষয়টা পারফেক্ট হতো কিন্তু কথা হলো গিয়ে টিকলির যে সরু বাঁধুনি থাকবে সেটাতে অন্য ফুল দিতে হবে,আমি অন্য ফুল পাবো কই?ও হ্যাঁ রিমের সাজানো বারান্দাটাতে তো অনেক ফুল গাছ আছে,নয়নতারা ও তো আছে,নয়নতারা দিয়েই বরং প্রশস্ত দিকটা বানিয়ে নেবো
রিম একটু বসো,আমি আসছি”!
.
রিম গালে হাত দিয়ে বসে থাকলো,গায়ে ফুলের গহনা থাকায় তার মন্দ লাগছে না একটুও
আর সেটা যদি হয় প্রিয় ফুলের গহনা তাহলে তো কথাই নেই
মিনিট পাঁচেক পর স্পর্শ হাতে এক মুঠো নয়নতারা আর আরেক হাতে জলন্ত মোমবাতি নিয়ে হাজির হলো
মোমবাতিটা ফ্লোরের উপর রাখতে গিয়েই থমকে গেলো সে রিমকে দেখে
রিম বোকার মতন স্পর্শর মুখের দিকে চেয়ে আছে,মোমের আলোয় রিমকে দেখে স্পর্শ টাসকি খেয়ে বসে আছে
কারেন্ট যে এখন গেলো কারেন্টের অফিসে গিয়ে থ্যাংক ইউ দিয়ে আসতে হবে,এরকম সৌন্দর্যের সাথে আমাকে পরিচয় করালো আজ
.
কি হলো?ওমন করে চেয়ে আছেন কি জন্যে??রাত্রি বেলার ভূতে ধরলো নাকি আপনাকে?
.
ভূতে ধরেনি তবে পরী ধরেছে,যাই হোক,সোজা হয়ে বসো,এরকম নড়াচড়া করছো কেন??আমি যে গিট্টু দিছি হাত লাগালেই কুটুস করে ছিঁড়ে যাবে,জাস্ট ৫মিনিট ধরে দেখবো বলে মডেল করছি
.
আচ্ছা বুঝলাম,নড়বো না,কিন্তু জলদি করে কাজ শেষ করেন
.
হু
.
স্পর্শ টিকলি একটা বানিয়ে নিলো,প্রথমো একটা গোলাপ তারপরে এক এক করে নয়নতারা সব,কথা হলো টিকলিটা আটকাবো কি করে,আচ্ছা রিম আমি যদি টিকলির সুতার সাথে তোমার দুটো চুলে গিট্টু দিই কোনো প্রব্লেম হবে?
.
না হবে না,তবে সেভাবে গিট্টু দিবেন যেন টান দিলেই ছুটে আসে
.
হুম,চুপ করে বসে থাকো এখন

স্পর্শ অবশেষে টিকলিটাও লাগিয়ে ফেললো,ব্যস সাজ কমপ্লিট
এবার আমি শুধু রিমকে দেখবো
.
রিম ও স্পর্শর দিকে চেয়ে আছে আর স্পর্শ তো শুরু থেকেই ওকে দেখছে
.
আমার বিয়ে করা বউ!!!
আমার হাতে বানানো গয়না পরে আমারই সামনে বসে আছে,আমার কি করা উচিত??কিস??যদি একশো একটা চড় মেরে দেয়??মানে এতদিন তো ১০০টা দিয়েছিলো এবার আরেকটাও মারে যদি?
অবশ্য আমি তো বলেছিলাম একশো পূর্ন হলে আমি এতদিনের যে ইচ্ছা সেটা করবো,তবে সেটার সঠিক সময় আজ নয়,আজ রিম অসুস্থ অনেক,চোখে মুখে দূর্বল ভাব ওর,হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ
.
পাক্কা পাঁচ মিনিট শেষ হতেই স্পর্শ রিমকে বললো সে এবার যেন এগুলো খুলে ফেলে,তার দেখা শেষ
.
রিমঝিম ও বাধ্য মেয়ের মতন এক এক করে ফুলগুলো গায়ের থেকে সরাচ্ছে
স্পর্শ মুগ্ধ হয়ে রিমের গয়না খোলা দেখছে,আজ ওকে খুব করে ভালেবাসতে ইচ্ছে করছে আমার কিন্তু কেন চেয়েও পারছি না??
.
রিম গয়না খুলে ফেলে কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো,স্পর্শ ফু দিয়ে মোমটা নিভিয়ে সেও এসে শুয়েছে
কারেন্ট আসার নাম নাই এখনও

ঘুমিয়ে পড়েছেন?
.
উহু
.
আমার মনে হয় সর্দি লেগেছে,নাকে স্মেল পাচ্ছি না, মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছে,কিন্তু কথা হলো সর্দি যে লেগেছে তা সিউর হতে পারছি না
.
কয়েল জ্বালিয়েছি,সেটার গন্ধে এমন মনে হচ্ছে তোমার,আমার ও সেম হাল
.
ওহহ!!!
.
এরকম এপাশ ওপাশ করছো কেন?ঘুম আসছে না নাকি?
.
আসছে তবে আসছে না
.
তুমি একটা পাগলি মেয়ে,তোমার প্রতিটা কথার মানে পজিটিভ নেগেটিভ দুটোই হয়
.
আর আপনি উন্মাদ!!আপনার সব কাজকর্ম ৯০ডিগ্রি কোণ অনুযায়ি উলটপালট থাকে
আমার বুঝতে অনেক দিন লেগে যায়
.
হুমমম,তা ঠিক,প্রায়ই তিনবছর,তাই না??
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে