দু মুঠো বিকেল পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
2040

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৯
Writer-Afnan Lara
.
কি ভাবছো??ঐদিন ঠিকই নেশাতে ছিলাম,কিছুই মনে নেই আমার,বাট পরেরদিন ভোরবেলা তোমাকে ডেকে তুলাতে তুমি রাগের বশে নিজ থেকেই বলে দিয়েছিলে আমাকে কয়টা চড় মেরেছো,থ্যাংকস টু ইউ
.
রিম নিজের কপাল নিজে চাপড়ালো
.
আহা আহা, নিজেকে নিজে মারছো কি জন্যে,,বরং আমাকে মারো
.
আপনি চুপ করুন তো,আচ্ছা একটা কথা জানার ছিলো
.
রিম গোল হয়ে বিছানায় বসে গালে হাত দিয়ে বললো”দুটো চড় কমপ্লিট হলে কি করবেন তখন?একটু শুনি”
.
স্পর্শ চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে পাশে শুয়ে পড়লো রিমের
তারপর হালকা হেসে বললো”সেটা জানলে আর ঐ চড় মারবা না আমাকে তা জানা আছে”
.
রিম তো ভয়ে শেষ,তাও ঢোক গিলে বললো”বলুন না,শুনি একটু”
.
আমাকে কথা দিতে হবে
.
কি?
.
তুমি আমার থেকে কথাটা শুনার পর আমাকে একটা চড় দিবে
.
জীবনেও না
.
তাহলে শুনতেও হবে না
.
কথাটা বলে স্পর্শ ঘুমের ভান ধরে থাকলো,চোখ বন্ধ করে
.
রিমঝিম গালে হাত দিয়ে টেনসনে পড়ে গেলো এই ভেবে যে স্পর্শ ঠিক কি করবে সেদিন
অবশ্য সেদিন কখনই আসবে না আমি জানি
.
স্পর্শ দাঁত কেলাচ্ছে চোখ বন্ধ রেখে
রিমঝিম ওকে ঠেলতে ঠেলতে বললো”প্লিস বলুন না,আমি জানতে চাই”
.
স্পর্শ উঠে বসে রিমের চোখে চোখ রেখে বললো”এর বদলে কি দিবে?”
.
কি চান?
.
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে হবে
.
রিম কথাটা শুনে কিছুক্ষন ভেবেসেবে নিলো তারপর হ্যাঁ বলে দিলো
.
স্পর্শ মুচকি হেসে বললো”সেদিন স্পর্শ সেটা করবে যেটা এই তিনটা বছরে সে করেনি,যেটার সাথে তুমি পরিচিত না,তোমার সেদিন ভালো লাগবে হয়তবা খারাপ লাগবে,বাট আই ডোন্ট কেয়ার,১০০টা চড় মুখের কথা না
কোনো ছেলেই এমন চড় খায়না,পুরো পৃথিবীতে আমি একটাই আছি,সো এর শোধ তো তুলবোই তুলবো
.
আপনি!!
.
রিম স্পর্শর মাথার চুল টেনে দিলো রেগে রেগে,,তারপর মারামারি করা শুরু করে দিল সে
স্পর্শ চুপ করে বসে মাইর খাচ্ছে,রিম হাঁপিয়ে গিয়ে বললো”পাল্টা মারছেন না কেন?”
.
রাতে চড় মেরেছিলাম,সো আজকের জন্য এনাফ
.
আমি তো এত কিছু ভাবি না,এমন ও হয়েছে দিনে আপনাকে দুটো চড় মেরেছিলাম
.
আমার সাথে নিজেকে মেলাও কেন,তুমি কখনও স্পর্শ হতে পারবে না,স্পর্শর মতন করে ভালোবাসা শিখতে তোমার ১যুগ লেগে যাবে
স্পর্শর ভালোবাসাটা বেশ অন্যরকম
.
জানি জানি,আর সংজ্ঞা দেওয়ার দরকার নাই,সরুন আমি ঘুমাব এখন
এটা বলে রিম কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো,স্পর্শ ও শুতে যাওয়ার আগে ওর ফোনে একটা আননউন নাম্বার থেকে কল আসলো,,স্পর্শ সাথে সাথে রিসিভ করলো,ওপাশ থেকে রিপনের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে
স্পর্শ কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠে বারান্দার কাছে চলে আসলো
রিপন কেঁদে কেঁদে বলছে ওকে যেন স্পর্শ বাঁচায়
.
হ্যালো রিপন???কি হয়েছে তোর?? কাঁদছিস কেন,আর কি বাঁচাবো,কি হয়েছে?
.
ভাই ওরা আমাকে ধরে এনে আটকে রেখেছে,দুইদিন ধরে শুধু মুখে পানি মারছে,কিছু খেতে দেয় নাই,আশিক ভাইয়াকে…..
.
লাইন কাটা গেছে
স্পর্শ চিন্তায় কলব্যাক করলো আবার কিন্তু এখন নাম্বার অফ বলছে
এটা নিশ্চয় জাকিরের দলবলের কাজ,আর আশিকেরই বা কি হয়েছে
ওর তো আজ এক মাস ধরে ফোন অফ
নাহ আমাকেই কিছু করতে হবে
.
স্পর্শ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বারান্দা থেকে রুমে আসলো,রিমঝিম ঘুমিয়ে আছে
ওর দিকে এক নজর তাকিয়ে সে ছুটলো রিপনকে বাঁচাতে,আসার সময় দরজা লক করে এসেছে সে,রিমকে কিছুই জানানো উচিত হবে না
একা একা অনেক টেনসন করবে,এমন ও হতে পারে আমাকে যেতে দেবে না
.
ভাবতে ভাবতে স্পর্শ এবার কল করেছে বাদলকে,সকাল ছয়টা বাজে তখন,,বাদল ফোন ধরতে দেরি করছে,অবশ্য দেরি করারই কথা,এসময়ে হয়তবা সে ঘুমাচ্ছে
বাদল ও স্পর্শর মতনই ভালো ফাইটার,কথা হলো গিয়ে বাদলের সাহস ঠিক ততটাই,রিপনের চেয়ে বেশি,তাই স্পর্শ এখন তার হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে বাদলকে ডাকবে,আর আরেকটা কারন আছে সেটা হলো বাদল এরকম দলবলের আস্তানা ভালো মতন চেনে
অবশেষে ১০বার কল দেওয়ার পর কল রিসিভ করে বাদল জানালো বনানীর একটা গলিতে জাকির চাচার কিছু দলবল আছে সে খবর সে পেয়েছিল ঠিক কদিন আগে,জাকির চাচা আবার আস্তানা পাল্টায় কম,ধানমন্ডি,বনানী, মহাখালিতে তার আস্তানা আছে,,এই তিনটের মাঝে ওরা এখন বনানীতে হতে পারে বলে বাদল সন্দেহ করছে
তো এখন স্পর্শ বাসে উঠে গেছে বনানী যাবে বলে
.
আজ আর অফিস যাওয়া হবে না,আমার কাছে এখন ইম্পরট্যান্ট হলো রিপনকে বাঁচানো,,,সকাল সাড়ে সাতটার সময় স্পর্শ বনানীতে পা রাখলো,বাদল বাইক নিয়ে এসে হাজির হয়েছে বাসস্টপে,স্পর্শ ওর বাইকে উঠে বললো”জলদি করে সেইখানে চল,রিপনকে বাঁচাতে হবে,আশিকের কিছু খবর জানিস?”
.
নাহ,,তুই আগে এটা বল জাকিরের সাথে লাগতে গেছিস কি জন্য?
.
আমি কি জানি ও এত ডেঞ্জারাস,আশিককে পেতে এখন রিপনকেই উঠিয়ে নিয়ে গেছে
.
স্পর্শ আমার মনে হয় না ওরা আশিককে চায়
.
কি বলতে চাচ্ছিস?
.
যদি আশিককেই চাইতো তাহলে ওরা আশিককে কল করে জানাতো তারা রিপনকে নিয়েছে,বাট থিংক!!ওরা তোকে জানিয়েছে,তার মানে তোকে চায়,বাট হোয়াই?
.
আমিও বুঝলাম না,সে যাই হোক,ওদের সাথে বিষয়টা আমি চুকিয়ে নেবো, কাকে চায় সেটাও বুঝবো,আগে সেখানে যেতে হবে,আমি ওদের সামলাবো তুই রিপনকে সরাবি সে সময়ে
.
হুম,এবার সেখানে ওদের পেলেই হয়
.
কোন জায়গায় বনানীর জানিস?সিউর তো?
.
রোড নং ১৮,,মেরিনো হোটেলের পিছনের রোড দিয়ে গলিতে ঢুকতে হবে
.
প্রায়ই ৩০মিনিট পর তারা জাকিরের আস্তানার সামনে এসে হাজির,,স্পর্শ হুডিটা গায়ের থেকে খুলে পাশে থাকা একটা বাঁশের উপর ঝুলিয়ে রাখলো,পরনে এখন টি-শার্ট শুধু,
সে হাতের কব্জি কচলিয়ে ভেতরে গেলো সোজা,বাদল ও আসছে পিছু পিছু
পুরো আস্তানা ফাঁকা,স্পর্শ বাদলের দিকে তাকাচ্ছে আর বাদল স্পর্শর দিকে
পাক্কা দুমিনিট পর স্পর্শর ফোনে আবারও কল আসলো
সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জাকির চাচার কথা শোনা গেলো
তিনি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছেন,,,তারপর বললেন”আরেহহহ টেনসন নিওনা,তোমার জানে জিগার দোস্ত রিপনরে আমি কিছু করবো না,ও তো আমার হাতিয়ার,ওরে মারলে চলে???ওরে ছাড়ি দিসি কিছুক্ষন আগে”
.
কোথায় সে এখন??
.
তোমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছো তার পাশের টিনের ঘরটায়
.
কথাটা শুনে বাদল দৌড়ে গেলো ঘরটার দিকে,,ঘরের ভেতর রিপন সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে মাটিতে
বাদল ওকে ধরে চেঁচিয়ে বললো”স্পর্শ রিপনকে পেয়ে গেছি”
.
স্পর্শর বুকের ভেতরটা কাঁপছে,কারণ এত সহজে রিপনকে পাওয়া সন্দেহজনক ব্যাপার হয়ে গেলো,জাকির চাচা এত জলদি রিপনকে ছেড়ে দিল?কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে
.
কি ভাবছো স্পর্শ??কেন এত জলদি তোমার জানে জিগাররে ছাইড়া দিলাম??তোমার যে আরেকটা কলিজার টুকরা আছে,আর সেটা উত্তরা মহিলা কলেজ রোডের ৮তলা বিল্ডিংটার থার্ড ফ্লোরের বি ইউনিটে এখন আছে সে খবর ও আমরা রাখি রে
তো ভাবলাম সেই কলিজার টুকরাটারেই নিয়া গেমস খেলবো তোমার সাথে
.
স্পর্শ লাইন কেটে রিমকে কল করলো,রিম তখন বেঘোর ঘুমে,তার ফোন তো সারাদিন অফ থাকে,রিহাবের ভয়ে অফ করে রেখেছে,স্পর্শর আর সেটা মনে নেই
.
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে দৌড়ে বাইকে উঠে বসলো,বাদল ছুটে এসে বললো”রিপনকে কি করবো?ওর তো জ্ঞান ফিরছে না”
.
স্পর্শ বাইক থেকে নেমে চাবিটা বাদলকে ধরিয়ে দিয়ে বললো”ওকে নিয়ে হসপিটাল যা,আমি জরুরি একটা কাজে যাচ্ছি”
.
স্পর্শ ছুটছে,,রিমের কোনো মতেই কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না,ওর কোনো দোষ নেই,এভাবে ওর ক্ষতি ওরা করতে পারে না,কিছুতেই না,,বাসা তো লক করে এসেছিলাম,আবার রিম যদি ভুলে খুলে ফেলে তখন??ও তো এসব কিছুই জানে না
কি হচ্ছে ওখানে,আমি কি করে জলদি বাসায় পৌঁছাবো!!
.
স্পর্শ দৌড়ে রোডে চলাকালীন একটা উত্তরার বাসে উঠে পড়লো,পরে ভাবলো বাসে করে গেলে প্রচুর লেট হবে,এর চেয়ো বরং সিএনজি ধরি
তাই সে বাস থেকে নেমে সিএনজিতে উঠে পড়লো
রিমকে ওরা চিনে ফেলেছে,এটাও জেনে গেছে রিম আমার কাছেই আছে,এবার ওরা ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে,আশিককে বাঁচাতে গিয়ে রিমকে বিপদে ঠেলে দিলাম আমি
আমি কি বোকা!!!!আমার দোষে না জানি রিমের কিছু হয়ে যায়,নিজেকে কখনও মাফ করতে পারবো না আমি তাহলে
অনেক ভাবনাচিন্তার পরে,অনেক প্রতিক্ষার পর,প্রায়ই ৩০/৪০মিনিটে স্পর্শ উত্তরায় পৌঁছে গেলো
ছুটতে ছুটতে সে বাসার দরজার কাছে পৌঁছে কয়েকবার নক করলো তারপর দরজা খুলছে না দেখে পকেট থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো সে
হন্তদন্ত করে নিজের রুমে ছুটে গিয়ে দেখলো রিম এখনও কম্বলের ভেতরে
বিরাট বড় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে স্পর্শ রিমের কাছ গিয়ে বসলো,,,ওর ফোন বাজছে আবারও,জাকির চাচার কল
রিসিভ করার সাথে সাথে জাকির উল্লাসী হয়ে বললো”কি??ভয় পেয়ে গেলা??আরে ঐ মেয়ের সরি সরি তোমার প্রেমিকার ক্ষতি কি আমি তোমায় জানিয়ে করবো???তবে একটা জিনিস জানা হয়ে গেছে আর সেটা হলো এই মেয়ের গুরুত্ব তোমার কাছে অনেক বেশি,নাহলে যেভাবে ছুটে আসলা!!!যাই হোক,তোমার প্রানভোমড়ার খবর ভালোমতন পেয়ে গেছি,এবার এরে কি করে রক্ষা করবা সেটা ভাবো,টাটা!!”
.
রিম উঠে পড়লো,উঠেই দেখলো স্পর্শর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে
এই প্রথম সে স্পর্শকে কাঁদতে দেখলো,চমকে গিয়ে সে স্পর্শ হাত একটা ধরে বললো”কি হয়েছে আপনার?কাঁদছেন কেন?
.
স্পর্শ ফোনটা রেখে দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো”নাহ কিছু না,,চোখে কি যেন পড়েছিলো,,”
.
আমি দেখলাম আপনি কাঁদছেন
.
আমি বললাম না আমি কাঁদছি না,কাঁদলেও তোমার কি??আমার কান্নায় তোমার কিছু যায় আসে?তাহলে এত দরদ দেখাতে হবে না,আর ফোন অফ রাখো কি জন্যে??মানুষ ফোন ইউজ করে কেন???কতবার কল করেছি তোমায়?
.
রিম স্পর্শর হুট করে এমন রেগে যাওয়া দেখে বললো”এমন করছেন কেন,আপনি তো জানেন আমি কেন ফোন অফ করেছি,রিহাব ভাইয়া যাতে কল না করে,আর আপনি আমায় কল করছিলেন কেন?”
.
স্পর্শ উঠে চলে গিয়ে বারান্দাতে দাঁড়ালো,বাদলকে কল করলো রিপনের কি খবর তা জানতে
রিম পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে রোবটের মতন,স্পর্শ ভীষণ রেগে আছে তা বোঝা যাচ্ছে,কিন্তু কেন?
আমি আবার কি করলাম,উনার কথামতন তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নামাজ পরে,তাও উনারই রুমে,তাহলে এত রাগ কিসের,আর কল করেছিলেন কি জন্যে,উনি কি কোথাও গিয়েছিলেন?
.
হ্যালে বাদল!!রিপনের কি অবস্থা এখন?জ্ঞান ফিরেছে?
.
হুম,,তোকে দেখতে চাচ্ছে বারবার
.
আমি রিমকে একা রেখে যেতে পারবো না আপাতত
.
রিম??ও তোর কাছে?
.
হুম,,কাউকে বলবি না,রিপনকেও না
.
আচ্ছা,বলবো না,কিন্তু রিমকে তোর কাছে রেখেছিস কি জন্যে?জাকির চাচা একবার জানলে বিপদ আছে
.
সেটাই তো সমস্যা, জেনে গেছে অলরেডি ,আর এখন রিমকে নিয়ে কি করবো আমি তাই ভেবে পাচ্ছি না
.
তুই এক কাজ কর,ওরে ওর বাসায় দিয়ে আয়,ওখানে সেফ থাকবে
.
না সেটা পসিবল না
.
স্পর্শ আর কিছু বলতে পারলো না,রিমের হাতের চুড়ির আওয়াজ পেয়েই কল কেটে দিল সে,তারপর অগ্নি দৃষ্টিতে রিমের দিকে তাকালো,তাকিয়ে কিছু বলার আগেই রিম ভয় পেয়ে এক ছুটে রুম থেকে চলে গেছে,,স্পর্শ মনে হয় আজ অনেক রেগে আছে,আমি কি করলাম,আমার উপর দিয়ে রাগ ঝারছেই বা কেন
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪০
Writer-Afnan Lara
.
রিমঝিম নিজের ফোনটা খুঁজে বের করে অন করে রেখেছে,,তামিমের সাথে কথা বলবে,কিন্তু ফোনে তো টাকা নেই
হয়ত তামিম নিজেই করতে পারে এই ভেবে রিম অন রেখে নিজের কাছে ফিরে গেলো
স্পর্শ তৈরি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য,দরজা খুলে তাড়াহুড়োর মাঝে সে রিমকে শুনিয়ে বললো”আজ অফিসেই খেয়ে নেবো,আমি যাচ্ছি,অলরেডি লেট হলাম”
.
রিম আর কিছ বললো না,চুপচাপ নিজের জন্য সে রুটি দুটো বানাচ্ছে,,,রুটি আর ডিম একটা ভেজে যেই না সে খেতে বসবে তখনই তার ফোন বাজা শুরু হয়ে গেলো
রিম কিছুটা ভয় পেলো,কারণ এরকম একা ঘরে ফোনের রিংটোন হুট করে শুনলে ভয় পাবারই কথা
যাই হোক রিম দৌড়ে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখলো মায়ের কল
বুকটা কেঁপে উঠেছে তার,এতটাদিন ধরে মায়ের সাথে তার কথা হয়নি,খুব ইচ্ছে করছে কথা বলার জন্য,রিম তাই করলো,কলটা শেষমেষ রিসিভই করে ফেললো
ওপাশ থেকে মায়ের আওয়াজ ভেসে আসলো,মৃদু স্বরে
মনে হচ্ছে মা অসুস্থ
রিমঝিম চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো”মা কেমন আছো?”
.
রিমরে আমাকে দেখতে আসবি না?আমি আজ কয়েকদিন ধরে জ্বরে মরছি,তোর কি আমাকে একটুও মনে পড়ে না?তোকে পেটে ধরেছি কি এসব দেখার জন্য???এত কষ্ট করে তোকে বড় করেছিলাম এসব দেখতে?
.
মা!
.
তুই ফিরে আয়,কেউ তোকে একটু ও আঘাত করবে না,আমি কথা দিচ্ছি,তুই শুধু আমার কোলে ফিরে আয়,আমি একা একা বাসায় থাকতে পারছি না যে
.
রিমঝিম কল কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললো,মায়ের জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার
মা,বাবা তামিমকে দেখতে মন চাচ্ছে,আমার কি ফিরে যাওয়া উচিত??
কিন্তু রিহাব ভাইয়া??

স্পর্শ কম্পিউটারের সামনে বসে আছে,বস কতগুলো কাজ দিয়েছে সেটা কি করে শেষ করবে তা ভাবছে এরই মাঝে ফোন আসলো রিমের
কি ব্যাপার ওর তো ফোন অফ থাকার কথা,হঠাৎ আমাকে কল করলো কেন?আর ও আমার নাম্বারই বা কি করে পেলো
হ্যালো?
.
ও তাহলে যা ভেবেছিলাম তাই,আমাকে যে আননউন নাম্বার থেকে একটা বোবা কল করত সেটা তাহলে আপনি
.
ও তাহলে বুঝছো,তা কিসের জন্য কল করলে?
.
আসবেন কখন?
.
বিকাল সাড়ে পাঁচটায়
.
দুপুরে আসলে হয় না?
.
কেন?
.
ভালো কিছু রান্না করতেছি,ভাবলাম একসাথে খাব,যদি আসতেন
.
আচ্ছা চেষ্টা করবো,বাই
.
রিমঝিম মুখটা ফ্যাকাসে করে ফোন এক পাশে রেখে কাজে মন দিলো,এতদিন স্পর্শর সাথে একসাথে থাকতে থাকতে আলাদা একটা মায়া কাজ করছে,,সে কি আমাকে যেতে দেবে??
আচ্ছা আমি যে যাওয়ার ডিসিশান নিলাম ভাইয়া যদি আমাকে আবারও জোর করে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা মাথায় আনে তখন কি করবো আমি,মাকেও তো দেখতে ইচ্ছে করছে খুব,দোটানায় পড়ে গেছি আমি
.
স্পর্শ ফোন হাত থেকে রাখতেই এবার কল আসলে মায়ের
আজ আর কাজে মন দেওয়াই হচ্ছে না,একবার একজনে কল করে যাচ্ছে
হ্যালো??
.
স্পর্শ??
.
নিহা?তুমি?মায়ের ফোন থেকে কল করলে কেন?
.
আমি,আঁখি,আর আন্টি মিলে আপনার ফ্ল্যাটে আসতেছি
.
কিহহহহ!
.
দেখলে আন্টি,স্পর্শ ভাইয়া সারপ্রাইজড হয়ে গেছে,হিহি,,আমরা বিকালের পরে আসবো,,আন্টি চেয়েছিলেন আপনার ফ্ল্যাটটা একটু ঘুরে দেখবেন,আমার ও খুব শখ,তাই আমরা সবাই আসছি,কি খাওয়াবেন রেডি করেন
.
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে কল কেটে দিলো

দুপুর দুটো বাজতে তিন মিনিট বাকি,তখনই কলিংবেল বেজে উঠেছে,রিমঝিম রান্নাঘরে রান্না করছিল তখন,হাতটা ওড়নায় মুছে সে গিয়ে দরজা খুললো,স্পর্শকে এসময়ে দেখে বেশ খুশি হলো রিম,কিন্তু স্পর্শর মুখে হাসি নেই দেখে সে জিজ্ঞেস করলো যে কি হয়েছে
.
স্পর্শ টাইটা ঢিল করে চেয়ার টেনে বসে বড় করে একটা নিশ্বাস ফেললো তারপর বললো”মা,নিহা আর আঁখি আসতেছে এখানে,বেড়াতে”
.
রিম মুচকি হাসলো তারপর এক গ্লাস পানি এনে এগিয়ে ধরে বললো”খান,খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করুন”
.
তুমি এত নরমাল বিহেভ করছো কেন?মা এখানে আসলে তোমার কি হবে তাই ভেবে কূল পাচ্ছি না আমি
.
আমি আপনাকে একটা কথা বলতাম তাই আপনাকে জলদি আসতে বলেছিলাম
.
স্পর্শ শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে মাথাটা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আড় চোখে তাকালো রিমের দিকে,মানে সে শুনতে চায় রিমকে কি বলতে চাইছে
.
আসলে আমার মা অনেক অসুস্থ,সকালেই তার সাথে কথা হলো,সবার কথা খুব মনে পড়ছে আমার,আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই
.
ওহ!আর তোমার ঐ ভাইয়া?সে যদি ধরে কোনো গাধার সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দেয় তখন কি করবা তুমি?
.
দিবে না,মা বলেছে আমার সাথে ভালো আচরন করবে সবাই
.
তাহলে ভালো,তুমি যখন নিজেই যেতে চাচ্ছো আমি আর তোমাকে কি করে আটকাই
.
রিম রান্নাঘরে ছুটে গিয়ে পাতিলের তরকারি নাড়তে নাড়তে বললো”তা না হয়েও তো উপায় নাই,আপনার মা,নিহা,আঁখি আপু আমাকে এখানে দেখলে কি জবাব দিবেন তাদের?”
.
কথাটা শেষ করতেই কানের কাছে কারও শ্বাসনিশ্বাস টের পেয়ে রিম পাশে তাকালো,স্পর্শ ওর খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে,চুলার কাছে থাকা সালাদের প্লেট থেকে সালাদ নিয়ে মুখে দিয়ে সে বললো”তারা তোমাকে দেখলে তারপর বিষয়টা ম্যানেজ করার ক্ষমতা আমার আছে
“.
রিম একটু সরে দাঁড়িয়ে বললো”কেন?কি করবেন?”
.
বলবো আই এম ম্যারিড!
.
যে বিয়েটা আমি আপনি দুজনেই মানি না সেটার কথা বলে নতুন আরেকটা ঝামেলা বাঁধানোর কোনো কারণ দেখছি না আমি
.
ফাইন!!
.
স্পর্শ নিজের রুমে চলে গেছে রেগে মেগে
রিমঝিম মুখটা ছোট করে রান্নায় মন দিলো
স্পর্শ শাওয়ারের নিচে গিয়ে বসেছে,এই মূহুর্তে মাথাটা ঠাণ্ডা করা জরুরি অনেক
অফিসের শার্টটা ভিজে গেছে,সেদিকে তার খবর নেই,ঠাণ্ডা পানির নিচে সে অথচ তার গা দিয়ে আগুন ঝরছে,ওপাশ থেকে রিমের আওয়াজ ভেসে আসছে,রিম খেতে ডাকছে ওকে
স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে শাওয়ার অফ করে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো,চুপচাপ একটা টি-শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে চেঞ্জ করে সে খেতে আসলো,রিমের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তার ও মন খারাপ
স্পর্শ প্লেট হাতে নিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে,রিম এক লোকমা মুখে দিতে গিয়ে থামলো তারপর স্পর্শর দিকে চেয়ে বললো”আমাকে মিস করবেন?”
.
স্পর্শ পানি একটু খেয়ে শক্ত চোখে রিমের দিকে তাকালো তারপর বললো”তোমাকে আমি ভালোবাসি রিম,তোমাকে পাওয়ার জন্য কি না করি নাই আমি,আর সেই তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো মিস করবো কিনা??আলবাত করবো!বরং কষ্ট হবে আমারও তোমাকে ছেড়ে থাকতে,যেখানে বিছানায় আমার পাশে ঘুমাতে তুমি সেখানে আমি একা শুবো,মিস করবো মানে,মিস আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স মিস করবো,বাট তুমি বুঝবে না সেটা
তুমি মাঝে মাঝে এমন বিহেভ করো যেন তুমি জানোই না আমি তোমাকে ভালোবাসি
.
না সেটা নয়,জানি তো
.
না জানো না তুমি,জানলে বারবার এসব উদ্ভট প্রশ্ন করতে না তুমি
.
ঠিক আছে মানলাম আপনি আমায় মিস করবেন,একটা এডভাইস করবো আপনাকে,আর সেটা হলো নিহা আসতেছে,আমাকে ভোলার সব চেষ্টা করুন
.
স্পর্শ খাওয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো”ব্যাগ গোছাও,বাসায় যাবে না?”
.
এখনই?
.
হ্যাঁ,যত জলদি যাবে ততই ভালো হবে
.
কথাটা বলে স্পর্শ নিজের রুমে চলে গেল সোজা,,
রিমের খুব খারাপ লাগলো,একদিকে স্পর্শ আর আরেকদিকে তার পরিবার,আবার আমার পরিবার ও তো আছে
সব কিছু একদিনেই হতে গেলো,আমি যদি নাও যাইতাম পরে উনার চৌদ্দ গুষ্টি এসে হাজির হলে তখন কি জবাব দিতো উনাদের??আমি চাই না বিয়ের কথা আর কেউ জানুক,উনার জীবন নষ্ট হওয়ার দরকার নাই,আমার ও না
ভাইয়া জানলে কেটে ফেলবে,আর উনার মা তো আমাদের দুজনকেই কাটবে
.
রিম মুখটা গোমড়া করে নিজের সব জামাকাপড় ব্যাগে পুরে নিলো,তারপর কালো বোরকাটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বোরকাটাও পরে নিলো সে,ব্যাগ হাতে নিয়ে পিছন ফিরতেই দেখলো স্পর্শ চাবির গুচ্ছো দুটো খুলে এক গুচ্ছ করছে
রিম ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,স্পর্শ চাবিটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”অলসেট?”
.
রিম ছলছল চোখে তাকিয়ে নিচু হয়ে স্পর্শর পা ছুঁয়ে সালাম করলো,স্পর্শ বেশ চমকে গেলো এতে
রিম এমন কেন করলো সে বুঝতেছে না
রিম ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বললো”নিজের স্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন”
.
স্পর্শ দরজা খুলে বললো”কিসের স্ত্রী?তুমি তো এই বিয়েটা মানোই না”
.
কথাটা শুনে রিমঝিমের হুস আসলো,এতক্ষণ একটা ঘোরের মাঝে ছিল সে,হালকা হেসে বললো”তাই তো!”
.
হুম,চলো তোমাকে বাসস্টপে দিয়ে এসে আমি মা আর আঁখি,নিহার ওয়েট করবো আবার
.
হুম,চলুন

দুজনেই হেঁটে চলছে কলোনির পথ দিয়ে,মাঝে দুটো মানুষের মতন দূরত্ব তাদের,স্পর্শ বুকে পাথর রেখে হাঁটছে তার খুব কষ্ট হচ্ছে,এতক্ষণ সামলে রেখেছিল নিজেকে কিন্তু রিম ওর পা ছুঁতেই ওর মনে হলো রিমকে বুঝি সে হারিয়ে ফেলছে
রিম বোকার মতন স্পর্শর দিকে তাকাচ্ছে বারবার,স্পর্শর এমন নিরবতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে”রিম যেও না,আমি থাকতে পারব না”
.
রিম থেমে গেলো,তারপর বললো”আপনার…
.
কি?
.
না কিছু না,চলুন যাই

বাসের জন্য তারা দাঁড়িয়ে আছে,১০মিনিট লাগবে বাস আসতে,রিম চমকে গলায় হাত দিয়ে বললো”চেইনটা আমি নিতে পারবো না,এটা আমার প্রাপ্য না”
কথাটা বলতে বলতে রিম চেইনটা খোলা শুরু করলো
স্পর্শ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বললো”তাহলে ওটা নিহাকে দিয়ে দেবো,বেচারিরে কিছুই গিফট করা হয়না তেমন”
.
রিমঝিম চোখ বড় করে বললো”না থাক,চাচি তো এটা আমাকেই দিয়ে দিয়েছে তাই না??থাক এটা আমি রাখি”
.
তোমার ইচ্ছা

বাস এসে গেলো,রিমের মনে হলে কেন এত জলদি আসলো বাসটা,সে মন খারাপ করে ব্যাগটা ধরে বললো”আচ্ছা যাই তাহলে ”
.
স্পর্শ আরেকদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে,রিম চুপ করে বাসে উঠে গেলো তাই,,
.
বাসটা চলে যাচ্ছে,স্পর্শ মুখটা গম্ভীর করে বাসটা চলে যাওয়া দেখছে,,রিম জানালার পাশের সিটে বসে আছে,মন তার স্পর্শর দিকে
“একবার কি দেখবো??”
.
রিম জানালা দিয়ে মাথা একটু বের করে পিছনে তাকালো,স্পর্শ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাসের দিকে,রিমকে এভাবে উঁকি দিতে দেখে সে সরে গেলো সেখান থেকে
যেতে যখন এতই খারাপ লাগছে তখন যাওয়ার মানে টা কি বুঝি না আমি
নিজে কষ্ট পাচ্ছে,আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছে

স্পর্শ হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর চলে আসলো,তারপর কল করলো রিপনকে,রিপনের অবস্থা জেনে নিলো,তারপর আশিকের কথা মনে পড়তেই জিজ্ঞেস করলো কাল ফোনে রিপন আশিককে নিয়ে কি বলতে চেয়েছিলো
রিপন জানালো আশিককে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,
স্পর্শ অবাক হলো না,কারণ বাদল জানিয়েছে আশিক পলাতক,জাকির চাচা থেকে বাঁচতে গা ঢাকা দিয়েছে সে
স্পর্শ রিপনের সাথে কথা বলা শেষ করে মাকে ফোন করলো জানার জন্য তারা কখন আসবে,কারণ তার আবার অফিসে ফিরে যেতে হবে,লাঞ্চ ব্রেকে এসেছিলো জাস্ট
চলবে ♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪১
Writer-Afnan Lara
.
মায়ের ফোন এবারও রিসিভ করেছে নিহা,সে জানালো তারা রওনা হয়েছে
স্পর্শ বাসার চাবি নিয়ে চাচাকে দিতে গেলো,কারণ এতক্ষণ ওয়েট করার সময় নাই তার কাছে,অফিসে লেট হলে আবার একশো কৈফিয়ত দিতে হবে তাকে

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে চাচা চাচিকে বললেন”এসময়ে কে আসতে পারে?”
তারা চা খাচ্ছিলো তখন,চাচি চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে গিয়ে দরজা খুললেন,স্পর্শকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটলো,মুচকি হেসে ওকে ভেতরেও আসতে বললেন
.
না চাচি,আমি অফিসে যাব,নাও চাবি রাখো,মা আঁখি আসতেছে,ওরা আসলে ওদের হাতে দিও
.
চাচা এগিয়ে এসে বললেন”রিমের কথা জানে?”
.
না জানে না আর জানবেও না,তোমরা কিছু বলো না,রিমের মা অসুস্থ বলে সে মাত্র তার বাসায় ফিরে গেছে,বাসা খালি এখন
.
ওহহ,ঠিক আছে তাহলে
.
স্পর্শ চলে গেলো তার কাজে

রিমঝিম তার বাসার দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে,,এমন সময় সে এসেছে এখন বাসায় ভাইয়াও আছে
নিজেকে শক্ত করে সে কলিংবেলে চাপ দিলো
পাঁচ মিনিট পর তামিম এসে দরজা খুললো,প্রথমে তার মুখ গোমড়া থাকলেও,হুট করে রিমকে দেখে সে উজ্জ্বল করে এক হাসি দিলো তারপর দৌড়ে এসে রিমকে জড়িয়ে ধরলো,রিম ওকে ধরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে চুপ করে আছে
এতটাদিন পর আদরের ভাইটাকে দেখে ভালো লাগারই কথা
.
কে এসেছে রে তামিম?
.
মা রান্নাঘর থেকে চায়ের ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে মেইন দরজার দিকে চেয়ে রিমকে দেখে অবাক হলেন
তাই দৌড়ে কাছে এসে ওকে ঝাপটে ধরে কেঁদেই ফেললেন
.
যাক এসেছিস তাহলে,আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবি না তুই,এতদিন কোথায় ছিলি??
.
মা আমি আসলে….
কথাটা শেষ করার আগেই রিমঝিম রিহাবকে দেখে আঁতকে উঠলো,রিহাব তার রুম থেকে বেরিয়ে ওকে দেখে চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এখন
রিম মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে বললো”কেমন আছো ভাইয়া?”
.
রিহাব একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো,রিমঝিমের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে সে
রিম তার প্রশ্নের জবাব পেতে চেয়ে আছে রিহাবের মুখের দিকে
রিহাব বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকলো রিমের দিকে
মা একটু এগিয়ে এসে বললেন”রিহাব,মাফ করে দে ওকে, আর এমন করবে না”
.
রিহাব দাঁতে দাঁত চেপে রিমের গালে চড় মেরে দিলো একটা
রিম গালে হাত দিয়ে চুপ করে আছে,মা এগিয়ে এসে রিমকে ধরলেন,তারপর বললেন”রিহাব,তোকে মানা করেছিলাম ওর গায়ে হাত দিবি না আর”
.
ওকে তো মেরে ফেলা উচিত আমাদের,,পুরো মহল্লায় নাম খারাপ করেছে আমাদের সবার,বদনামি তো আর বাদ রাখেনি কিছুই
.
রিহাব রিমঝিমের হাত মুঠো করে ধরে টেনে হিঁচড়ে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে ওকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো
তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো”ও ততক্ষণ বের হবে না যতক্ষন না আমি এই দরজা খুলবো,ওরে আর জীবনেও বাড়ির বাহিরে আমি পা রাখতে দেবো না,এমনিতেও কম নাম খারাপ করেনি,বন্ধুবান্ধব, আত্নীয়-অনাত্মীয় কারোর কাছে মুখ দেখানোর মতন কাজ করে নাই সে,,সব এক ঝটকায় শেষ করেছে,কোথায় গিয়ে নিজের জীবন নিজে নষ্ট করেছে তা খোদা জানে
.
কথা শেষ করে রিহাব হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো
.
রিমঝিম ফ্লোরে বসে আছে,ঠিক এই মূহুর্তে স্পর্শর কথা অনেক অনেক মনে আসছে,এসে কি ভুল করলাম আমি?আমার কি তাদের বলে দেওয়া উচিত যে আমার আর স্পর্শর বিয়ে হয়ে গেছে,আমরা বিবাহিত
না না এটা জানলে আমার আর স্পর্শর হাল খারাপ করবে তারা
.
এদিকে স্পর্শ মাথাটা ধরে শেষ হয়ে যাচ্ছে,,এত এত টেনসন
না জানি রিহাব কি বিহেভ করছে ওর সাথে
গায়ে হাত তুলেনি তো আবার?রিম কি আমাকে সত্যিটা বলবে?একবার ফোন দেবো??
ভাবতে ভাবতে স্পর্শ রিমকে শেষমেষ কলটা করেই ফেললো
অনেকক্ষণ কলিং হয়ে তারপর রিম রিসিভ করেছে,ওর হ্যালো শুনেই স্পর্শ পাক্কা সিউর হয়ে গেছে রিম কাঁদছিল এতক্ষণ
.
কি করছো?
.
বসে আছি
.
ফ্লোরে??
.
আপনি জানলেন কি করে?
.
কারণ আমার বউ সবসময় ফ্লোরে বসেই কাঁদে
.
রিম চমকে গেলো কথাটা শুনে,,তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললো”আপনার আম্মু,আঁখি আপু আর নিহা আপু গেছে?”
.
আসতেছে পথে এতক্ষণে মেবি চাচার বাসায়
.
আচ্ছা
.
রিহাব মারেনি তে?
.
নাহহ
.
জানি সত্যি বলবে না,নিজের খেয়াল রেখো
.
হুম
.
একটা কথা মনে রাখবে
.
কি?
.
ইসতিয়াক স্পর্শর একমাত্র বউ তুমি
.
মানতাম??
.
হুম মানবে, তুমি লিগালি আমার ওয়াইফ,ঐ রিহাব ব্যাটারে ভালোমতন বুঝিয়ে দিবা,আর নয়ত থাক,তুমি বুঝাতে গেলে ও তোমায় গায়ে হাত তুলবে আমি বিষয়টা হ্যান্ডেল করবো বরং
.
ঠিক আছে,বাই
.
বাই

স্পর্শ অফিসের কাজ সেরে বাসায় ফিরছে,মা জানালো তারা চাচার বাসায়,ও যেন উনাদের নিয়ে বাসায় ফেরে,স্পর্শ তাই এখন চাচার বাসায় যাচ্ছে
বাসায় এসেই মাকে বললো “চলো”
মা বললেন নিহাকে নিয়ে যেতে,তিনি আঁখিকে নিয়ে পরে আসবেন
মা এটা ইচ্ছা করে করেছেন যাতে নিহা আর স্পর্শ একটু আলাদা সময় কাটাতে পারে
স্পর্শ বললো মা যখন যাবে তখনই সে বাসায় ফিরবে,একা নিহাকে নিয়ে নয়
মা তাও জেদ ধরে ওকে চাচার বাসা থেকে বের করে দিলেন,সাথে নিহাকেও
তাই বাধ্য হয়ে সে এখন নিহাকে নিয়েই বাসার দিকে যাচ্ছে,,নিহা হাঁটার সময় বারবার স্পর্শর হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করছে,স্পর্শ ভীষণভাবে বিরক্ত হচ্ছে তাতে,,রিমের ছবি চোখের কাছে ভেসে যাচ্ছে এর মাঝে এই মেয়েটা এসব কি শুরু করলো
.
কি হলো?এতক্ষণ ধরে আপনার হাত ধরার চেষ্টা করছি আমি বুঝছেন না??
.
না বুঝছি না,তুমি এমন কেন করতেছো?
.
আজিব তো,আপনার আর আমার বিয়ে হবে কদিন পর আর আপনি কিনা আমাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছেন?
.
নিহা চুপ থাকো
না আমি তোমাকে কখনও লাভ করেছি না বিষয়টা এতদূর যাবে
.
অবশ্যই যাবে,রোকসানা আন্টি একমত,আর আপনি আপনার মায়ের কথা কখনওই ফেলেন না তা জানা আছে আমার

রিমঝিম নিজের জামাকাপড় ওয়ারড্রবে রেখে দিয়ে বারান্দায় এসে নিজের গোলাপ গাছটা দেখছে,এসময়টায় তো সে আর স্পর্শ মিলে চা খেতো,না জানি কি করছোন এখন,,খুব মিস করছি আমি
যে লোকটাকে সহ্য করতে পারতাম না আজ তাকে অনুভব করছি খুব করে,মনে হয় আমিও তাতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি দিনদিন
.
স্পর্শ নিজের রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে,নিহার সাথে বসে বকবক করার মনমানসিকতা নেই তার
নিহা রিমঝিম যে রুমে থাকত সেই রুমটা দেখতে গিয়ে এত ফুল ভর্তি একটা বারান্দা দেখতে পেয়ে আর লোভ সামলাতে পারলো না
নিহার আবার ফুলগাছ দেখলে ফুল ছিঁড়ে নিজের হাতে রাখতে বেশ ভাল্লাগে,আর এখন সে তাই করলো,যত ফুল ফুটেছিল এক এক করে সবগুলো ছিঁড়ে কানে মাথায় গুজে নিয়েছে সে,ভাবলো এরকম ফুলের গহনায় তাকে দেখলে স্পর্শ আরও পাগল হয়ে যাবে
নাচতে নাচতে সে স্পর্শর রুমের কাছে এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করে দিয়েছে
স্পর্শ বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই নিহাকে এমন সং সাজতে দেখে বিরক্ত আরও বেশি হলো,পরে যখন ওর মাথায় আসলো ফুল গুলো কোথা থেকে এসেছে তখন ওর মেজাজটাই বিগড়ে গেছে
এক ধমক দিয়ে সে বললো”তোমার সাহস হলো কি করে আমার বারান্দার ফুল ছিঁড়ার??হাউ ডেয়ার ইউ!”
.
ফুল হয় ছিঁড়ার জন্য,এত রাগার কি আছে?
.
ফুল ছিঁড়ার জন্য হয় না,গাছের ফুল গাছেই সুন্দর লাগে দেখতে,আমাকে না জিজ্ঞেস করে আমার জিনিসে হাত দিয়ে মোটেও ঠিক করোনি তুমি,এক প্রকার বেয়াদবি এটা
.
নিহা ছলছল চোখে তাকিয়ে হুট করে এগিয়ে এসে স্পর্শকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো”ভালোবাসি অনেক,প্লিস একসেপ্ট মি,আর পারছি না ওয়েট করতে”
.
স্পর্শ ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো” এনাফ!!
আমি রিমঝিমকে ভালোবাসি,তিনবছর ধরে আমার মনে ওরই মোহ বিরাজ করছে,আর আজীবন ও থাকবে,আমাকে ছোঁয়ার অধিকার ও শুধু ওরই”
.
নিহা ভ্রু কুঁচকে বললো”রোকসানা আন্টি ওকে দেখতে পারে না,আপনি আপনার মায়ের মতের বিরোধীতা করবেন?”
.
এমন একটা দিন আসবে যেদিন মা রিমকে মেনে নিবে,সেটা পরের ব্যাপার,তুমি শুধু এটা মাথায় ঢুকাও যে আমার মনে রিম আছে অনলি,,উড়ে এসে জুড়ে বসে মনে ঢুকতে চাইবা না,আমার এসব পছন্দ না
.
নিহা এমন ভাব করলো যেন স্পর্শর কথার কোনো মূল্যই নেই তার কাছে
স্পর্শ আবার নিজের রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললো,এই মেয়েটাকে বুঝিয়েও লাভ নেই,এক নাম্বারের নাছোড়বান্দা,ত্যাড়া
.
রিহাব রিমঝিমের রুমের দরজা খুলে দিয়ে বলেছে সে যেন বাসার বাহিরে পা না রাখে তারপর গেছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে
রিম তামিমকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে আছে,মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন”কোথায় ছিলি এতদিন?”
.
আমার এক ক্লাসমেটের বাসায়,,নাম রুম্পা
.
চিনি না,কখনও তো শুনি নাই ওর কথা তোর মুখে
.
হ্যাঁ,এমনি নরমাল ফ্রেন্ড ছিল,তবে বিপদে কাজে আসলো
.
হুম তা নাহলে এই শহরে বিপদ হতে তো সময় লাগে না,,আমি যে চিন্তা করছিলাম তোকে নিয়ে,চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম
.
তোমার জ্বর কমেছে??,দেখি,,কি করে এমন জ্বর আসলো?
.
একা হাতে সংসার সামলানো কি সহজ ব্যাপার??তুই আমাকে কত কাজে সাহায্য করতি,তুই চলে যাওয়ার পর তোর কাজগুলোও আমাকে করতে হয়েছিলো
.
এখন সব আমি করবো,সব শিখে গেছি
.
ওরা তোকে দিয়ে কাজ করিয়েছে?
.
না মানে,আমি নিজ থেকে দু একটা করতাম
.
আপু আপু
.
হুম বল
.
রিহাব ভাইয়ার বউ আঁখি আপু রোজ বিকালে তোমার গোলাপ গাছে পানি দিতো
.
জানি
.
মা চমকে বললেন” কি করে জানিস?”
.
রিম থতমত খেয়ে বললো”গাছে পানি দিতো সেটা জানতাম বাট কে দিতো সেটা এখন জানলাম আর কি”
.
ওহহ,শুনলাম আঁখির খালাতো বোন নিহার সঙ্গে নাকি স্পর্শর বিয়ে হবে
.
রিম চমকে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে বললো”ওহ”
.
হুম,রোকসানা বেগম তো পুরো মহল্লায় খবর ছড়িয়ে দিয়েছে,মেয়ের বিয়ের চেয়ে তার ছেলের বিয়ে নিয়ে উল্লাস বেশি,যেন এখনই দিয়ে দেবে,যাক ভালো হয়েছে,ঐ ছেলেটা তোকে যে পরিমান জ্বালাতো
হুট করে রিহাবের আংটিবদলের দিন থেকে সেও পাল্টে গেলো,আমি অনেক খুশি,রিহাব তো আরও খুশি
তবে স্পর্শ ছেলেটাকে কেমন যেন আপন আপন মনে হয়,,ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসতো এটাতে কোনো সন্দেহ নাই,কিন্তু ভাগ্য কখন বদলে যায় এটার সম্পর্কে কি আর আমরা আগাম বার্তা পাই??পাই না!
দেখ না ছেলেটা এবার নিহা মেয়েটাকে বিয়ে করে সংসার ও শুরু করে দেবে,তোর ও আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে যাবে,অথচ সে যেমন পাগলামি করেছিল আমি তো ভেবেছিলাম না জানি উঠিয়েই নিয়ে যায় তোকে
.
রিম চুপ করে মায়ের সব কথা শুনছে
মাকে কি বলে দিব আমার আর উনার যে বিয়ে হয়ে গেছে?
না না স্পর্শ মানা করেছিলো,আমার বলা ঠিক হবে না
যা সামলানোর উনিই সামলাবেন
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে