দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৩
Writer-Afnan Lara
.
এই যা!!চাচা চাচি দুজনেই একসাথে??রিমঝিম লুকাও জলদি
.
স্পর্শর কথামতন রিম পাশে থাকা গাছটার পিছনে লুকিয়ে পড়লো,,চাচা হেঁটে এসে বললেন”মনে হলো তোর সাথে কাউকে দেখলাম”
.
কই???
.
তোর হাতে এটা কিসের ব্যাগ?
.
স্পর্শ ঢোক গিলে গলাটা হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বললো”ঠিক করাতে গিয়েছিলাম,চেইন নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো”
.
চাচা স্পর্শর কাঁধে হাত রেখে ওকে নিয়ে নিজের বাসার দিকে চললেন,হাঁটতে হাঁটতে বললেন”আজ তোর চাচি বড় রুই মাছের ঝোল করেছে,এত মজা হয়েছে রে,চল তুই আর আমি ডিনার করবো একসাথে,,,সেই স্বাদ টেস্ট করানোর সুযোগ তোকেও করে দেবো ”
.
এদিকে স্পর্শ পিছন ফিরে রিমের দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে ও যাতে একা একা চলে যায়
রিম ও ভালো মানুষের মতন হেঁটে স্পর্শর বাসায় চলে আসলো,,,
চাচা স্পর্শকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসলেন ওর পাশে
এদিকে স্পর্শ টেনসনে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে রিম ঠিকমত বাড়িতে পৌঁছেছে কিনা সেটা ভেবে
.
রিমঝিম বাসায় ঢুকে দরজাটা লাগালো তারপর নিজের রুমের দিকে যাওয়ার আগে স্পর্শর রুমে আসলো একবার
রুমটা বেশ আগোছালো হয়ে আছে,রিমঝিমের মনে হলো রুমটা পরিষ্কার করা উচিত,আর তাই সে বোরকাটা খুলে সোফার উপর রেখে দিয়ে কাজে লেগে পড়ে গেছে
কাজ করতে করতে তার চোখ গেলো বিছানার উপর থাকা ল্যাপটপটার দিকে,কাছে এসে অন করলো সে
ল্যাপটপটার স্ক্রিনে রিমের সেই ছবিটা যেটার পোস্টারটাকে আজ সে কুচি কুচি করে ছিঁড়েছে,তার মানে স্পর্শ আবারও পোস্টার লাগানোর কথা ভাবছে??
যাই হোক,এই লোকটার হাতে এত সময় আছে,আমার তো নাই
আমি উনার এই মাছবাজারকে সুন্দর করে সাজাই তার পর নিজের রুমে ফেরত চলে যাব,খুব ঘুম পাচ্ছে আজ
.
রিমঝিম স্পর্শের পুরো রুম গুছিয়ে রুমের এক কোণায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,রাত তো অনেক হয়েছে,ঘুম আসারই কথা
এদিকে স্পর্শ চাচার পাল্লায় পড়ে এগারোটা বাজিয়ে ফেলেছে
আসার সময় চাচিকে বলে বারতি খাবার ও নিয়ে এসেছে
সে বলেছে তার রাত তিনটার দিকে খিধে পায়,চাচি যেন ভাত দিয়ে দেয়
আসলে কিন্তু সে এগুলো রিমের জন্য নিচ্ছে
চাচার বাসা থেকে বেরিয়ে জলদি করে সে নিজের বাসার দিকে ছুটলো,ছুটতে ছুটতে পাঁচ মিনিটের পথ সে দুই মিনিটে এসে গেলো,চাবি দিয়ে দরজার লক খুলতেই সব রুম অন্ধকার পেলো শুধু তার রুমটা ছাড়া,তার মানে রিম আমার রুমে??
ভাবতে ভাবতে স্পর্শ নিজের রুমে পা রাখলো,ওমা রিম এত শীতের ভিতরে রুমের এক কোণায় শুয়ে পড়েছে,আর আমার রুমটাকে গুছিয়েও ফেলেছে,যাক কেমনে যেন আমার প্রতি তার মায়া দরদ কাজ করলো
.
স্পর্শ রিমের কাছাকাছি এসে ফ্লোরের উপর গোল হয়ে বসলো,তারপর গালে হাত দিয়ে বেশ অনেকক্ষন ধরে রিমের ঐ মুখটার দিকে চেয়ে থাকলো,,,মেয়েটি সাদা চামড়ার নয়,আবার কালো চামড়ার ও না
এ এক অন্যরকম রঙ,যা আমার মন কেড়েছে,,এই রঙে এক মায়া লেপটে থাকে,যে কাউকে পাগল করার ক্ষমতা থাকে তাতে
স্পর্শ তার মুখটা এগিয়ে এনে রিমের কপালে চুমু দিলো আলতো করে তারপর সাথে সাথে দূরে সরে গেলো কারণ ঠিক এই মূহুর্তে রিম জেগে যাবে
আর তাই হলো রিম চোখ খুলে ফেলেছে
তারপর চোখ ডলতে ডলতে বললো”এসেছেন তাহলে?!
.
সরি,,চাচা আমাকে নিয়ে ডিনার করে বসে বসে আবার ম্যাচ ও দেখেছে,তাই এত দেরি হলো,আর নাও এটা,তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি,খেয়ে গিয়ে ঘুমাও
.
একটা কথা বলবো?
.
কি?
.
ঐ রুমটাতে আমার ভয় করে,ভোর হওয়ার আগে উর থেকে কেমন একটা আওয়াজ আসে,মনে হয় কেউ টাইলসে কিছু একটা ঘষছে
.
স্পর্শ মুচকি হেসে নিচের বিছানায় বসে গিয়ে বললো”উপরের তলার আন্টিদের বুয়া মশলা বাটে,সেটারই আওয়াজ পাও তুমি”
.
না সেটা না,কিরকম গায়ে কাঁটা দেওয়া শব্দ
.
তাহলে আমার রুমে ঘুমাও,আমি তোমার রুমে শুবো
.
সত্যি?
.
হুম,সমস্যা নেই তো,,
.
রিম কথাটা শুনে স্পর্শর বিছানায় গোল হয়ে বসে গেলো হাতে খাবারের প্লেটটা নিয়ে,যেটা স্পর্শ ঢেকে এনেছিল সবেমাত্র
.
স্পর্শ উঠে চলে গেছে রিমের রুমের দিকে,রিমঝিম খাবার খেতে খেতে ভাবলো স্পর্শর রুমের সব কাগজপত্র তো এই রুমে,আর মেইন সোফাটাও,আমি তাহলে হুদাই এত ভেজাল কেন করবো?
.
আরে শুনুন শুনুন
.
স্পর্শ থেমে গিয়ে পিছন ফিরে বললো”কি?”
.
না লাগবে না,আপনার রুমে আপনিই থাকেন,আমি যাই,দরকার নাই আমার
.
এই মেয়েটার কখন কি হয় তা সে শুধু নিজেই জানে,অন্য কারোর আর জানার সাধ্য নাই
.
এবার আসলো স্পর্শের ফোনে কল,তাও কার,স্পর্শর কলিগ আরাফের
তো আরাফের কথা হলো তারা নতুন ভাবীকে দেখতে চায়
স্পর্শ ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলো তো এখন তার কি করা উচিত,মানে ওরা সবাই কি চাচ্ছে
আরাফ সাথে সাথে উত্তর দিলো”তারা সব কলিগরা মিলে কাল স্পর্শর বাসায় আসতে চায়”
.
স্পর্শ মুখের উপর না ও করতে পারলো না,ফোন রাখতেই দেখলো রিম কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,মনে হয় কিছু আন্দাজ করে ফেলেছে
স্পর্শ মাথার চুলগুলো টেনে দিয়ে বললো”কি করবো??”
.
নাচেন!আরও বলেন মিথ্যা,এবার কি হবে??
.
টেনসন নিও না,আমি কালকের সব খাবার কিনে আনবো,ওরা তো ডিনার টাইমে আসবে
.
এত খাবার কিনে আনবেন?দরকার নেই,আমি তো রান্না পারি,আপনি বরং প্লেট গ্লাস কিনে আনবেন,আর কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার,উনাদের তো আর ফ্লোরে বসাতে পারি না
.
আচ্ছা তা নাহয় করবো,কিন্তু ওরা যদি বুঝে ফেলে?
.
কি বুঝবে?আমাকে আর টেনসনে ফেলবেন না,কে বলেছিল এত বড় মিথ্যা বলতে?
.
শাড়ী আছে তোমার?
.
আছে
.
সেটা পরে নিও,,ভাব নিবা যেন সত্যি তুমি আমার ওয়াইফ,আমার কলিগদের ওয়াইফরাও আসবে মেবি
.
রিমঝিম হাতে কিসব গুনতে গুনতে স্পর্শর রুমের দিকে চললো আবার,তারপর কাগজ কলম নিয়ে কিসব লিখে স্পর্শর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো সকালে যেন এসব বাজার করে দেয় সে
.
স্পর্শ ও মাথা নাড়ালো,এবার যে যার রুমে ঘুমাতে চলে এসেছে
♣
দুজন দুই রুমে শুয়ে আছে,রাত তখন বারোটা তিন বাজে
দুজনেরই চোখ উপরের ছাদের দিকে
রিম ভাবছে সেই শব্দর কথা,আবার কখন শুরু হয়ে যায়,ভয় করছে অনেক
.
এদিকে স্পর্শ ভাবছে কাল কেমন করে সবাইকে সামলাবে সে
রাত করে আসবে,না জানি কখন কে এসে পড়ে,যদি সেসময়ে চাচা বা চাচি এসে যায়??আমি তখন কি করে ম্যানেজ করবো??
.
ভোর চারটা বাজে,,রিমঝিম বালিশ হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে প্রাণপণে
ঐ শব্দটা আবারও হচ্ছে তাই
দৌড়ে সে স্পর্শর রুমের দরজা খুলে দরজাটা লাগিয়ে চুপ করে নিচে বসে পড়েছে,স্পর্শ বেঘোর ঘুমে
রিম বালিশটা ফ্লোরে পেতে সেখানে মাথা দিয়ে চুপ করে স্পর্শর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
তারপর আবার প্রচণ্ড শীতে লাফ দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো সে
লাল কম্বলের ভেতরে মুড়ি দিয়ে স্পর্শ শুয়ে আছে,খালি ফর্সা কপাল আর নাক দেখা যায়,ঠোঁটজোড়া কম্বলের ভেতর
রিম ভাবতে লাগলো”আজ সে যদি আমার স্বামী হতো এতক্ষণে আমি তার পাশে থাকতাম,ভয় ও করত না
আবার ভাবলো-ধুর এসব কি ভাবছি!
.
আজানের আওয়াজ কানে আসতেই স্পর্শ উঠে বসলো নামাজ পরার জন্য
তখনই দেখলো দরজার কাছে সোফায় পা উঠিয়ে রিম শুয়ে আছে
স্বপ্ন দেখছি না তো?
স্পর্শ উঠে এসে চোখ ডলে রিমের হাতে এক চিমটি বসিয়ে দিলো সন্দেহ কাটাতে
রিম ঘুমের ঘোরে থেকে বললো”আউচচচ!পিঁপড়া”
.
স্পর্শর এবার বিশ্বাস হলো এটা রিম,,তারপর ভাবলো রিম এখানে কেন?
পরে মনে পড়লো ঐ শব্দের কথা,যেটা রিম তাকে বলেছিল
এরপর মনে মনে হেসে সে বাথরুমে চলে গেলো
রিম জেগে গিয়ে খালি বিছানা পেয়ে ঘুরে ফিরে স্পর্শ কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ওর বিছানাতেই
স্পর্শ অযু করে এসে দেখলো রিম ওর বিছানায় আরামছে ঘুমাচ্ছে
তারপর নামাজের কথা মাথায় আসতেই স্পর্শ এগিয়ে গেলো রিমকে জাগানোর জন্য
রিমকে ধরে কয়েকবার ঝাঁকুনি দিতেই রিম কম্বল থেকে মাথা তুলে বললো”কি?”
.
নামাজ পরবা উঠো
.
উহু!আপনাকে তো বললাম আমি সুস্থ থাকলে নামাজ পরি নিজ থেকেই,ডেকে তুলতে হয়না,মেয়েলি ব্যাপার সেপার!!!!
.
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে জায়নামাজ হাতে নিয়ে ফ্লোরে বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়েছে
.
তারপর নামাজ শেষ করে সে সোফায় এসে বসে রিমের দিকে তাকিয়ে ভাবলো এই মেয়েটা আমাকে এতটা কাছের বানাচ্ছে কেন??পরে যখন আমি কাছে আসতে চাইবো তখন তো দূরে ঠেলে দিবে
কি চায় ও??
আমাকে এত আপন কেন করছে?
.
স্পর্শ রাগ হলো খুব,সে এগিয়ে এসে রিমের হাত ধরে টেনে তুললো,রিম বিরক্তি নিয়ে বললো”কি হয়েছে আবার?”
.
তুমি ঠিক কি চাও খোলসা করে বলো
.
আমি ঘুমোতে চাই মিঃস্পর্শ
.
রিম আই এম সিরিয়াস,সো আমার সাথে সিরিয়াস হয়ে কথা বলো,এভাবে আমার রুমে এসে আমার বিছানায় ঘুমানোর মানেটা কি রিম???আমাকে তো ভালোবাসো না,পছন্দ ও করো না,তাহলে এসব কি??
.
রিমঝিম আবারও শুতে নিতেই স্পর্শ ওর খোলা চুল গুলোর ভিতর হাত ঢুকিয়ে মুঠো করে ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এনে বললো”উত্তর দাও”
.
রিম ব্রু কুঁচকে বললো”কাল চাইলে ফেরত চলে যেতে পারতাম,কিন্তু যাইনি,কেন জানেন?”
.
কেন?
.
থাক জানতে হবে না জানলে এখন এ সময়ে আমার চুলের মুঠি ধরে টানতেন না,বরং ভালোবাসতেন
.
স্পর্শ চুলটা আরও শক্ত করে ধরে মুচকি হেসে বললো”বিয়ের আগেই?”
.
রিমঝিম চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললো”চড় কিন্তু এখনও বাকি আছে মশাই”
.
তো দিয়ে দাও
.
তা হচ্ছে না,তিনবছর কম মনে হয় আমার কাছে,আরেকটু ঘুরাই
.
তাই নাকি?রিমঝিম আমাকে বাধ্য করো না ঐ চারটা চড় আজই হাসিল করে নিতে
.
রিমঝিম চুলে ছাড়া পেতেই কম্বলটা আবারও টেনে শুয়ে পড়লো
.
এই মেয়ে,এটা আমার বিছানা,উঠো বলছি
.
না উঠবো না,আপনি গিয়ে আমার রুমে ঘুমান,আমি এখানে ঘুমাবো
.
স্পর্শ আর কি করবে,বালিশ হাতে নিয়ে রিমের রুমের দিকে চললো
রিমঝিম আরও কিছু সময় ঘুমিয়ে তারপর নাস্তা বানাতে এসেছে রান্নাঘরের দিকে,স্পর্শ এখনও ঘুমাচ্ছে
♣
আজ স্পর্শ অফিসে যাওয়ার সময় বলে গেছে সে কলিগদের নিয়ে একসাথে বাসায় আসবে,,বিকালের পর হবে সময়টা
রিমঝিম মাথা নাড়ালো,অফিসে যাওয়ার আগে সে লিস্টের সব বাজার করে দিয়ে গেছে
রিমঝিম ওড়না কোমড়ে বেঁধে কাজে লেগে পড়ে গেছে
আজ কত কাজ তার!!কত আইটেম বানাতে হবে
.
ঠিক বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে কলিংবেল বেজে উঠেছে
রিমঝিম আন্দাজে কোনোরকম সেজেছে, একটা আয়না নেই যে একটু নিজেকে দেখবে
ব্যাগ খুঁজে একটা খয়েরী রঙের সুতির শাড়ী পেয়েছে সে
তার উপর সাদা সুতোর কাজ করা,দেখতে বেশ ভদ্র মনে হয়
শাড়ীটা তার খালা তাকে দিয়েছিলো,,বাড়ি থেকে চলে আসার সময় এমন খুঁটিনাটি অনেক কিছুই এনেছে রিম
কলিংবেল বাজার আওয়াজ পেয়ে তড়িগড়ি করে দরজার দিকে ছুটলো সে
দরজা খুলতেই এক করিডোর ভর্তি লোকজন দেকে মাথা ঘুরার মতন অবস্থা হলো রিমের
নিজেকে সামলিয়ে বড় করে সালাম দিলো সে তারপর মুচকি হেসে বললো”ভেতরে আসুন”
সবার মুখে একটাই শব্দ”ভাবী ভাবী ভাবী”
অথচ যার জন্য এদের সবার ভাবী হলাম তারই খবর নেই
এক এক করে ৭/৮জন ঢুকেছে বাসায়
সবগুলো কাপল আর কাপল,,কেউ কেউ বাচ্চা নিয়েও এসেছে
পুরো বাসা ফার্নিচার শূন্য দেখে তারা সবাই মুখে হাত দিয়ে ফেলেছে
এদিকে দূরে থেকে কে যেন সাইড প্লিস বলতে বলতে আসছে
গলা শুনে মনে হলো এটা স্পর্শ
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৪
Writer-Afnan Lara
.
কতগুলো চেয়ার দারোয়ানের সাহায্যে নিয়ে আসছে স্পর্শ,,আবার আরেক হাতে ডিনারসেট ও আনছে,প্যাকেট দেখেই বুঝেছে রিম
রিমকে পেরিয়ে চেয়ারগুলো ভিতরে ঢুকাচ্ছে সে
রিমকে এখনও খেয়াল করেনি স্পর্শ
চেয়ার রাখতে রাখতে বললো”সরি রে,নতুন সংসার তো তাই এখনও তেমন কিছুই কেনা হয় নি,তবে তোদের উপলক্ষে চেয়ারগুলো নিয়ে আসলাম,তোদের তো আর নিচে বসাতে পারি না”
.
আরাফ হেসে স্পর্শর কাঁধে হাত রেখে বললো”বাসায় যখন তোষক আছে তখন আর চেয়ারের কি প্রয়োজন,বা ফ্লোরেও বসা যায়,এটা তো আর মাটি না যে একেবারেই বসা যাবে না”
.
আরাফ একদম ঠিক বলেছে ভাইয়া,আপনি এত কষ্ট করতে গেলেন কেন আবার?
.
স্পর্শ মুচকি হেসে চেয়ারগুলো সারি সারি করে রেখে দিয়ে রিমকে ডেকে রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে
রিম ও পিছু পিছু আসলো
স্পর্শ খাবার সব চেক করে পিছন ফিরে এবার রিমের দিকে তাকালো
ওমা তাকাতেই সে তার দুনিয়ার খবর ভুলে গেছে
ইয়া বড় হা করে সে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে এখন
.
পাশে কি আমার সদ্য বিয়ে করা বউ দাঁড়িয়ে আছে?
আহহহহহ বুকে ব্যাথা লাগলো!!!
.
স্পর্শ বুকে হাত দিয়ে রিমের দিকে চেয়ে আছে
রিম ভ্রু কুঁচকে চা বসাতে বসাতে বললো”ঢং,আসার পর থেকে একটিবারও আমার দিকে তাকায় নাই,আমি নিজেও জানি না আজ আমাকে কেমন দেখাচ্ছে,বাসায় একটা আয়না যদি থাকতো!!”
.
সেটাও এনে দেবো
.
আপনি এখনও বেতন পাননি,এত টাকা কোথা থেকে আসে?
.
রোকসানা বেগমের ব্যাংক একাউন্ট থেকে,বাই দ্যা ওয়ে আজ তোমাকে খুব খুব সুন্দর লাগছে
.
যান এখান থেকে,আমি চা নাস্তা নিয়ে আসবো,গিয়ে উনাদের সাথে আড্ডা দেন
.
স্পর্শ সোজা হেঁটে চলতেই রিম সামনে হাত রেখে আটকালো আবার
.
কি ম্যাডাম?
.
কিরকম অবস্থা করে রেখেছেন নিজের,শার্ট চেঞ্জ করে বিছানার উপর থাকা সাদা পাঞ্জাবিটা পরে নিন
.
সাদা পাঞ্জাবি?আমার তো সাদা পাঞ্জাবি নেই,তাহলে?
.
আপনাকে এত কথা বলতে কে বলছে?যান বলছি
.
স্পর্শ কৌতুহল নিয়ে নিজের রুমে এসে দেখলো বিছানার উপর সাদা একটা পাঞ্জাবি
“দেখে তো নতুন মনে হচ্ছে,কিন্তু রিম এটা পেলো কোথায়?”
.
এই স্পর্শ,তোর ফ্রেশ হতে কতক্ষণ লাগবে রে?
.
আসছি!!
.
স্পর্শ জলদি করে পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে পরে আসলো,,,বাথরুম থেকে বেরিয়ে পাঞ্জাবির হাতা গুলো ফোল্ড করতে করতে ড্রয়িং রুমে নিচে বিছানো তোষকের উপর বসলো সে
রিম আর আরাফের ওয়াইফ মিফতু মিলে নাস্তা এনে এনে ফ্লোরে রাখছে
বাঁধাকপির পাকোড়া,চা আর বিসকিট,সাথে আছে নুডুলস ও
রিমঝিম নিচে ট্রে রেখে এক নজর স্পর্শর দিকে তাকালো
.
“মানুষটাকে পাঞ্জাবিতে খুব ভালো লাগে,মন চায় চিবিয়ে খেয়ে ফেলি”
রিমঝিম মুচকি হেসে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে
পাঞ্জাবিটা দুপুরে বাসা থেকে বেরিয়ে আশেপাশের একটা মার্কেট থেকে কিনে এনেছে সে,তার কাছে কিছু টাকা ছিল
পাঞ্জাবিটা ওতোটাও দামি না তবে আবার কম দামিও না
সাদা চামড়ার মানুষদের সাদা রঙের জামাতে জাস্ট চোখ ধাঁধালো সুন্দর লাগে,সেটা মাথায় রেখেই রিমঝিম সাদা পাঞ্জাবি কিনে এনেছে
সিয়ামের ওয়াইফ হিয়া আর মিফতু মিলে রান্নাঘরের তাকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে,,,মিফতু চা খেতে খেতে বললো”তা রিমঝিম হানিমুনে যাওনি কেন,,?হিয়া ভাবী বললো আমায়”
.
রিমঝিম দাঁত কেলিয়ে তাকের উপর বসে পা দুলাতে দুলাতে বললো”অফিস থেকে তো ছুটি দেয় না,দিলে এক কথা ছিল”
.
ছুটি নেওয়া তো কঠিন কিছু না,মোটকথা তোমার হাসবেন্ডেরই যাওয়ার ইচ্ছা নাই,থাকলে এতদিনে বালি টুর দিয়া আসতা”
.
“এই আমি যাই,আমার বাচ্চা কাঁদছে”
কথাটা বলে হিয়া চলে গেলো
মিফতু চা শেষ করে তার বরের পাশে গিয়ে বসেছে,,আরাফ আর সিয়ামের সাথে অনিক ও এসেছে,অনিকের ওয়াইফ হলো রিতু,রিতু বরই গম্ভীর প্রকৃতির
সে আসার পর থেকেই এক জায়গায় বসে আছে,চুপচাপ খাচ্ছে আর সবার সাথে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছে
স্পর্শ রিমঝিমের এমন ব্যস্ততা দেখে খুশি হলো আবার ভাবলো মেয়েটা এত কষ্ট করছে
অথচ সে আমার ওয়াইফই নাহহহ
.
এই এই!!
.
পাশ থেকে ফিসফিস আওয়াজ পেয়ে স্পর্শ রিম থেকে চোখ নামিয়ে পাশে তাকালো,আরাফ,অনিক আর সিয়াম মিলে চোর চোর লুক নিয়ে ওর দিকেই চেয়ে আছে
.
কি হলো?তোরা এমন চোরের মতন লুক দিচ্ছিস কি জন্যে?
.
আড্ডাতে গলা না ভিজলে সেটা আবার কিসের আড্ডা?
.
চা খা,আরও আনতে বলতাম?
.
আরে ধুরো,চা তো বাচ্চারা খায়,আমরা তো আলট্রা লিজেন্ড,আমরা তো বিয়ার খাব বিয়ার!!
.
হোয়াট!!
.
আস্তে আস্তে,,বউ পার্টিরা শুনতে ফেললে গরদান যাবে,,
.
এই সময়ে বিয়ার পাবি কই?
.
তুই শুধু রাজি হ,বিয়ার সাথেই আছে
.
ওরে বাপরে,সাথেও এনেছিস?
.
হুমমম,কিন্তু তোর ভাবগতি তো ঠিক লাগছে না,তুই মনে হয় বিয়ার খাওয়ার পুরান মাঝি?
.
স্পর্শ নড়ে চড়ে বসে বললো”নেশা জাতীয় সবকিছু খাওয়া হয়ে গেছে,বিয়ার তো হাতের মোয়া!!”
.
সব?
সিয়াম আর অনিক হাসতে হাসতে লুটো পুটি খাচ্ছে
.
স্পর্শ হালকা কেশে বললো”না মানে নেশা জাতীয় যেমন বিয়ার,সিগারেট,ইত্যাদি”
.
হইসে আর বুঝাতে হবে না,আমরা সব বুঝি,তুই শুধু সব বউ পার্টিদের এক রুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর তারপর তোর রুমে গিয়ে আমরা আরামসে আড্ডা দেবো আর গলা ভিজাবো
.
স্পর্শ জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকালো তারপর আবার বললো”রিমঝিম অনেক রান্না করেছে ওগুলো খেয়ে নে,তারপর রাত তো বাকি,তোরা বরং আমার এখানেই থেকে যস,রুমের তো অভাব নাই”
.
স্পর্শর উক্তিতে ওরা তিনজন বেশ বুঝে গেছে,রাজিও হয়েছে,কিন্তু অনিক রাজি হলো না,সে বিয়ার পার্টি শেষে বউকে নিয়ে চলে যাবে নাহলে তার মা বাবা আবার বিষয়টা অন্যভাবে দেখবে,তারা খুব স্ট্রিক্ট!
।
রিমঝিম তো পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম আর সেটার কারন হলো হিয়া,মিফতু আর রিতু
এত এত প্রশ্ন করছে,বিবাহিত জীবনের অনেক কথাই তারা বলছে যার আগা মাথা অনেক কিছুই রিম জানে না
যাই হোক নয়টা বাজতেই ছেলেরা সবাই হুট করে ডিনার করবো ডিনার করবো বলা শুরু করে দিয়েছে
রিমের কেমন জানি সন্দেহ হলো,কারণ স্পর্শ তো এত তাড়াতাড়ি ডিনার করে না
যাই হোক সবার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে রিমঝিম ডিনারের বন্দবস্ত করে নিলো,,সবাই কথা বলছে আর খাচ্ছে,রিমঝিম রান্নাঘরে এসে সব গুছিয়ে নিচ্ছে,খিধে নেই,সবার পরে খাবে সে
স্পর্শ হাতে প্লেট নিয়ে এসে বললো”কি হলো রিম তুমি খাবে না??”
.
হুম,পরে,খিধে নেই
.
অনিক আর রিতু বাদে বাকিরা যাবে না আজ
.
রিম চোখ বড় করে স্পর্শর দিকে চেয়ে বললো”যাবে না মানে??কোথায় থাকবে?”
.
আমাদের বাসায়,রুম তো অনেকগুলো
.
আমি কোথায় শুবো?সবাই তো কাপল কাপল
.
মিফতু আর আরাফ এগিয়ে এসেছে,,মিফতু হেসে হেসে বললো”ওমা,তোমরাও তো কাপল,তোমরা তোমাদের রুমে শুবে,হাহাহা,রিমঝিম কেমন বাচ্চাদের মত কথা বলছে”
.
রিম ঢোক গিলে স্পর্শর দিকে তাকালো,,স্পর্শ ও ঢোক গিলে তাকালো ওদের দিকে,,রিমঝিম কি আর বলবে উনাদের পাতে মাংস দিয়ে চুপচাপ সরে গেলো সেখান থেকে
খাওয়া দাওয়া শেষ করে স্পর্শ,আারাফ,সিয়াম আর অনিক গেছে স্পর্শ রুমে,তারপর দরজাও লাগিয়ে ফেলেছে
কড়া করে বলেছে তারা আড্ডা দেবে ১২টা অবদি এর আগে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে
সিয়ামের ওয়াইফ হিয়া তার বাবুকে নিয়ে রিমঝিমের রুমে এসে শুয়েছে
পাশের বাসা থেকে তোষক এনে গেস্ট রুমেও বিছানা পাতা হয়েছে,সেখানে মিফতু আর রিতু শুয়েছে
বারোটার দিকে অনিক আর রিতু চলে যাবে বলে আর বারতি ঝামেলা হয়নি
রিতু আর মিফতু মিলে দারুন গল্প শুরু করেছে,এদিকে হিয়া তার বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছে
বাকি রইলো রিম
রিমঝিমের খুব করে ঘুম পাচ্ছে,সে একপাশে বসে ঝিমোচ্ছে শুধু,আজ সারাদিন যে কাজ হয়েছে,বিরাট বড় একটা ঘুম দিতে হবে তাহলেই সব ক্লান্তি দূরে হয়ে যাবে
♣
রাত বারোটা বাজে এক মিনিট,,,সিয়াম অনিক আর আরাফ ঢলে মলে পড়তেছে
তাও অনেক কষ্টে স্পর্শর রুম ছেড়ে বেরিয়েছে তারা
সিয়াম তার বউ বাচ্চার কাছে গেলো,মানে রিম য়ে রুমে থাকতো সেই রুমে,তারপর দরজা লাগিয়ে দুম করে বাবুর পাশে শুয়ে পড়লো সে
ওদিকে অনিক তার বউকে দুবার ডাকতেই তার বউ এসে হাজির,সে আর মিফতু ঘুমায়নি,ঘুমিয়ে পরেছে রিম
মিফতু রিমের মাথায় হাত রেখে ওকে জাগালো তারপর বললো”অনিক ভাইয়া রিতু আপুকে নিয়ে চলে গেছে,,তুমি গিয়ে ভাইয়ার রুমে শোও,অনেক ক্লান্ত লাগছে তোমাকে”
.
রিম মাথা নাড়িয়ে স্পর্শর রুমে দিকে যেতে যেতে ভাবলো আজ সে সোফায় ঘুমাবে,স্পর্শকে বলবে বিছানায় ঘুমাতে
.
অনিক রিতুকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর রিম দরজা লাগালো তারপর গেলো স্পর্শর রুমে
আরাফ ও রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়েছে
রিমঝিম স্পর্শর রুমে এসে লাইট জ্বালালো কারণ পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে,তারপর এদিকমওদিকে স্পর্শকে দেখতে না পেয়ে সে বারান্দার দিকে গেলো,ওমা স্পর্শ লম্বা হয়ে নিচে শুয়ে আছে সেখানে
রিমঝিম কিছু বুঝে উঠার আগেই পায়ের কাছে মদের খালি বোতল কতগুলো দেখতে পেলো
তার মানে দরজা বন্ধ করে উনারা এসব উল্টা পাল্টা জিনিস খেয়েছে??
কি অসভ্য!এই যে উঠুন!!এভাবে ঠাণ্ডা ফ্লোরে শুয়ে আছেন কি জন্যে??পরে জ্বর আসলে তখন??
রিম যখন বুঝলো স্পর্শ তার মনের রাজ্যে আছে,বর্তমান দুনিয়ায় নেই তখন সে নিচে বসে স্পর্শর হাত ধরে টানতে টানতে বললো”উঠুন!”
.
স্পর্শ রিমের ছোঁয়া পেয়ে সাথে সাথে উঠে বসলো,চোখ ডলে দাঁত কেলিয়ে দুহাত এগিয়ে রিমের মুখ ধরলো সে তারপর হেসে হেসে বললো”সাদা পাঞ্জাবিটার জন্য অনননেকক অন্নেককককক থ্যাংকস”
.
ওয়েলকাম,এবার উঠে এসে বিছানায় বসুন,আমি আপনার জন্য লেবুর শরবত আনছি
.
কথাটা বলে রিম উঠতেই স্পর্শ ওর শাড়ীর কুচি ধরে ফেললো
রিম কিছুটা না বরং পুরোটাই ভয় পেয়ে গেলো,সাথে চমকালো ও
তারপর ইতস্তত হয়ে নিজের শাড়ীর কুচি মুঠো করে ধরে বললো”এসব কি করছেন আপনি,কুচি ধরলেন কেন?”
.
স্পর্শ আদো আদো স্বরে বললো”তোমাকে ধরতে চেয়েছিলাম,তোমার জায়গায় হাতের কাছে তোমার শাড়ীর কুচি পেলাম তাই সেটা ধরলাম”
.
ছাড়ুন!!
.
কথাটা বলে রিমঝিম কুচি ছাড়িয়ে ঠিক করে পরে আবার চলে গেছে
স্পর্শ মুখটা ফ্যাকাসে করে উঠে দাঁড়ালো,শরীর সামলাতে পারছে না সে
বারবার পড়ে যাচ্ছে,অনেক গ্লাস খাওয়া হয়ে গেছে আজ
চোখের সামনে শতে শতে রিমকে দেখতে পাচ্ছে সে
এলোমেলো হয়ে হেঁটে সে কোনোমতে রিমের কাছে রান্নাঘরে চলে আসলো
রিমঝিম ছুরি দিয়ে লেবু কাটছে শরবত বানাবে বলে
স্পর্শ রিমের কাছে দাঁড়িয়ে ওর খোঁপাটা খুলে ফেললো
রিমঝিম জানে স্পর্শ হুসের মধ্যে করছে না এসব,তাও সে এখন কি করে পরিস্থিতি সামলাবে সেটাই ভাবছে এই মূহুর্তে
এদিকে স্পর্শ রিমের খোলা চুলের ভেতর মুখটা ডুবিয়ে রিমকে ঝাপটে ধরে রেখেছে
রিম লেবুটাও কাটতে পারছে না এরকম অবস্থাতে
তার উপর হাত পিছলিয়ে আঙ্গুল ও কাটা গেছে রিমের
জলদি করে সে স্পর্শ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেসিনের কাছে গেলো আঙ্গুলে পানি দিতে তার আগেই স্পর্শ ওর হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৫
Writer-Afnan Lara
.
রিম ভয় পাচ্ছো??
.
রিম কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”না,,,তবে!”
.
তবে কি রিম??এতদিনে যেটা করিনি সেটা আজ করবো??দেখি বলো তো তোমার কি মনে হয়,হ্যাঁ নাকি না?
.
রিমঝিম নিজেকে শক্ত করে জবাবে বললো”নাহহহ”
.
হুমম,আমার প্রতি বিশ্বাস আছে তা বোঝা যাচ্ছে
.
কথাটা বলে স্পর্শ রিমকে আরেকটু কাছে টেনে ধরলো তারপর মুচকি হেসে বললো”যদি সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে দিই??”
.
হাত ছেড়ে দিন,তারপর শরবতটা খান,ঠিক লাগবে আপনার কাছে
.
না ছাড়লে?
.
দেখুন স্পর্শ এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না,,আজ সারাদিন ধরে অনেক কাজ করেছি আমি,আমার খুব ঘুম আসছে,দয়া করে হাত ছেড়ে দিন আমার,খেতে হবে না লেবুর শরবত,তাও আমাকে অন্তত ছাড়ুন
.
স্পর্শ নিচু হয়ে রিমকে কোলে তুলে নিয়ে বললো”আচ্ছা চলো তাহলে ঘুমাবো”
.
আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন যে আমাদের বিয়ে হয়নি?
.
একদমই না,আমার বেশ মনে আছে যে আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি,,আর কখনও হবেও না
.
তাহলে এসব কি??আপনি থামবেন??স্টুপিড একটা!
.
কোনো কথার উত্তর না দিয়ে স্পর্শ রিমকে এনে বিছানার উপর রাখতেই রিম একদম কোণায় চলে গিয়ে বললো”আর একটু এগোলে গালের চামড়া উঠায় দেবো থাপড়াইতে থাপড়াইতে”
.
স্পর্শ পাঞ্জাবিটা খোলার চেষ্টা করছে তাও পারছে না দেখে এগিয়ে গেলো রিমের দিকে
রিম দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে
স্পর্শ রিমের কপালের উপরে থাকা চুলগুলোতে মুখ ডুবিয়ে হাসলো তারপর রিমের মুখ থেকে ওর হাত সরিয়ে বললো”লজ্জা নাকি ভয়?”
কথা শেষ করার আগেই গালে চড় খেয়ে বসে পড়েছে স্পর্শ
চড় মারা শেষে রিমঝিম সরতে নিতেই স্পর্শ হাত রেখে আটকে ফেললো ওকে
রিমঝিম শেষে কেঁদেই ফেলেছে ছুটতে না পেরে
স্পর্শ মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”খালি এটাই পারো,আর কিছু পারো না?”
.
রিমঝিম চোখ মুছতে মুছতে বললো”সরুন আমার কাছ থেকে,আমাকে একদম ছুঁবেন না”
.
স্পর্শ কিছু না বলেই রিমকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো
রিমের কাঁধে মুখটা ঢুবিয়ে রাখলো কিছুক্ষণ,তারপর ফিসফিস করে বললো”খুব ভালো লাগা কাজ করছে,প্লিস ভালো লাগাটা অনুভব করতে দাও আমায়”
.
রিম চোখ বন্ধ করে রেখেছে,স্পর্শর প্রতি যে ঘৃনাটা আছে সেটা যেন আজ আবার জাগ্রত নাহয়,আমি চাই না লোকটাকে ঘৃনা করতে
কিন্তু উনি কেন এমন করছেন আমার সাথে,আমি যে তাকে আটকানোর কোনো শক্তি পাচ্ছি না
.
স্পর্শ আবারও ফিসফিস করে বললো”এই পারফিউমটা দিতেই হবে??নিজের গায়ের যে একটা প্রকৃত ঘ্রান আছে তা তোমরা মেয়েরা জানো না
জানলে এত দাম দিয়ে কৃত্রিম গন্ধ লাগাতে না গায়ে
তোমার গায়ের সেই ন্যাচারাল গন্ধটাই আমাকে পাগল করে তোলে আর তুমি কিনা সবসময় পারফিউম ইউস করে সেই ঘ্রানটাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখো,কেন রিম??কেন??”
.
রিম একটু নড়েচড়ে স্পর্শকে দূরে ঠেলার চেষ্টা করলো তাও পারলো না,কি একটা ঝামেলায় পড়েছে সে
স্পর্শ যে সজ্ঞানে নেই তা খুব ভালো করে বোঝা হয়ে গেছে
এখন যা হচ্ছে পরে এর ব্যাপারে চেঁচিয়েও তো লাভ হবে না
উনি তো কোনো রেপিস্ট ও না যে ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে মাথায় বাড়ি মেরে আহত করে দিব
নিজের লোক উনি,উনাকে আঘাত করলে উল্টে আমার কষ্ট হবে,আবার আঘাত না করলে আজ আমার অবস্থা খারাপ করে ফেলবে
ভাবতে ভাবতে রিম টের পেলো স্পর্শ ওর কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
রিমঝিম মলিন মুখে ওর চোখে চোখ রেখে বললো”এসব কি বলুন তো,,আপনি…”
.
স্পর্শ রিমের মুখে হাত রেখে বললো’একটা জিনিস দেখবে?”
.
রিম কিছু বলার আগেই স্পর্শ উঠে গিয়ে আবারও রিমকে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দার দিকে চললো,বারান্দার গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে
রিম এখনও ওর কোলে
তারপর মুচকি হেসে বললো”এবার আকাশের দিকে তাকাও”
.
রিমঝিম স্পর্শর বুক থেকে হাত সরিয়ে পাশে ফিরে আকাশের দিকে তাকালো,চাঁদ টা যেন আজ তাদের সাথে দেখা করতে এসেছে,এত বড় চাঁদ
কাল থেকে মনে হয় আর উঠবে না,শেষ সময়টায় চাঁদ এত বড় হয়
রিমঝিম বেশ অবাক চোখে চাঁদটা দেখছে
আশেপাশের দালান গুলোর লাইট সব অফ,যে আলো আসছে তা শুধু চাঁদেরই
স্পর্শ রিমকে দেখছে আর রিম চাঁদকে
বেশ কিছুক্ষণ পর রিমের মনে পড়লো সে স্পর্শর কোলে,অথচ স্পর্শ বিন্দু মাত্র ও নড়ছে না
বিষয়টা টের পেয়ে রিম বোকার মতন চেয়ে আছে ওর মুখের দিকে,স্পর্শ এক ঝাঁকুনি দিয়ে বললো”কি দেখছো ওমন করে?”
.
চাঁদ দেখা হয়ে গেছে,এবার আমাকে নামান নয়ত চড় মেরে গাল ফাটিয়ে দেবো আপনার
.
স্পর্শ রিমকে ঝাপটে ধরে একটা গানের দুলাইন গাইলো
“♥ও বউ!!কেন আমার কাছে আসো না,কেন আমায় ভালোবাসো না,অবউ!!”♥
.
রিমঝিম বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে,স্পর্শ রিমকে নিয়ে আবারও রুমে ফেরত চলে আসলে পরে
রিমঝিম বালিশ একটা কোলে নিয়ে দূরে সরে গেছে
রাত ১টা বিশ বাজে তখন
স্পর্শ ঘুম ঘুম চোখে এগিয়ে দুম করে রিমের কাছে চলে এসে ওর কোলে থাকা বালিশে মাথা রাখলো,দু মিনিটেই গভীর ঘুমে চলে গেলো সে
রিমঝিম অবাক হয়ে স্পর্শর এমন হাবভাব দেখছে,একটা মানুষ নেশা করে এত টা ভালোবাসতে পারে?অন্য কেউ হলে হয়ত এতক্ষণে!!!
রিমঝিম স্পর্শর চুলগুলোতে হাত বুলাচ্ছে,,লাইট অফ করা হয়নি,উঠতে গেলো স্পর্শ জেগে যাবে,যেভাবে ঘুমিয়েছেন উনি
মন চায় সারাটা সময় এমন করে চেয়ে থাকি,কি সুন্দর লাগছে আজ উনাকে
আমাকে মোহতে ফেলেছেন উনি দিনদিন,এই মোহ কাটাবো কি করে আমি??পরিবার তো মেনে নিবে না কোনোদিন
পরিবারকে ছেড়ে ভালো থাকা যায় না,তাহলে উনি প্রতিদিন আমাকে এত এত ভালোলাগায় প্রবেশ করান কি জন্যে?
.
রিমের ও এবার ঘুম আসছে চোখ জুড়ে কিন্তু লাইটের আলোর কারণে সে ঘুমাতে পারছে না,অনেক কষ্টে স্পর্শকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সে উঠে গিয়ে লাইট অফ করলো,তারপর সোফায় শুতে নিতেই কারোর হাত এসে ওর পিঠের নিচে দিয়ে গিয়ে সোফায় পড়েছে
রিম চমকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো
স্পর্শ কিছু না বলেই রিমকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে বললো”ঘুমালে আমার সাথে ঘুমাবে,অন্য কোথাও নয়”
.
রিমের বুকের ভেতর ভয় কাজ করছে,সে ভেবেছিল স্পর্শ ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু নাহ,সে তো ঘুমায়নি,এমনকি নেশাও কাটেনি তার
রিমঝিমকে বিছানায় এনে নামিয়ে দিয়ে স্পর্শ বললো”ঘুমাও”
এটা বলে সে একপাশে শুয়ে পড়লো,অবশ্য এক হাত দিয়ে রিমের হাত ধরে রেখেছে সে
রিম আর কি করবে,কোনো উপায় না পেয়ে পাশেই শুয়ে পড়লো
ক্লান্তির সাথে যুদ্ধ করে আর পারা গেলো না
হাত ছাড়ানোও মুশকিল বলে সে ও ঘুমিয়ে পড়েছে আর কোনোদিক না ভেবেই
♣
পরেরদিন ঠিক ভোরে স্পর্শর ঘুম ভাঙ্গলো সবার আগে
মাথা ধরে উঠে বসলো সে,,চোখের সামনে সব ঝাপসা থেকে এবার ঠিক হয়েছে,নিজের হাতের মুঠোর ভেতর চুড়ি ভর্তি একটা হাত ধরে থাকতে দেখে স্পর্শ বেশ চমকালো তারপর হাত ছেড়ে দিতেই চুড়ি ভর্তি হাতটা কম্বলের ভেতরে চলে গেলো
স্পর্শ চোখ ডলে ভালো করে তাকালো,পাশেই রিম আরেকদিকে ফিরে শুয়ে আছে,,তার পিঠটা একটু একটু দেখা যায় কম্বলের উপর দিয়ে
স্পর্শ চোখ বড় করে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে,কাল রাতে কি হয়েছে তা মনে করতে গিয়ে তার চোখ গেলো গায়ের সাদা পাঞ্জাবিটার দিকে
এদিক ওদিকে রক্তের দাগ!!!কিসের দাগ এটা
.
স্পর্শ ঘেমে গেছে ভাবতে গিয়ে,জলদি করে দরজা খুলে রান্নাঘরে গিয়ে পানি খেলো সে
তারপর আবারও রুমে ফেরত এসে রিমকে টেনে তুললো,কারণ এভাবে আর নিজে নিজেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া তার কাছে কঠিন মনে হচ্ছিলো
রিম ঘুম ঘুম চোখে বললো”আবার কি হয়েছে?”
.
তুমি ঠিক আছো?
.
হুম,ঘুমাতে দিন,এমনিতেও আপনার জন্য কাল রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছি,আমার ঘুম পুরো হয়নি
.
মানে?দেরি করে ঘুমিয়েছো মানে?আমি কি করেছি?
.
কি করেছেন?কি করেন নাই সেটা বলেন,স্টুপিড!
.
রিমঝিম ঝাড়ি দিয়ে কম্বল টেনে আবারও শুয়ে পড়লো
.
স্পর্শ ঢোক গিলে কপালের ঘাম মুছলো তারপর মনে করার চেষ্টা করলো যে সে ঠিক কি করেছিলো
ধুর ছাই এবারও মনে আসছে না
উপায় না পেয়ে রিমকে আবারও টেনে তুললো সে
রিমঝিম এবার খুব রেগে গেছে,, স্পর্শর মাথার চুলগুলো মনমত টেনে স্পর্শর গালে ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বললো”কাল রাতের চড়ে হয়নি?এতদিনের চড়ে হয়নি?খালি বেয়াদবি করতে হবে??আমাকে এত জ্বালান কেন বলুন তো,কি দোষ করেছি,কাল রাতে কি না করলেন আপনি,আর একটু হলে তো!!”
.
ওহ আচ্ছা তাহলে তেমন কিছু করিনি
.
রিমঝিম স্পর্শকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে বললো”যান এখান থেকে,অসভ্য লোক কোথাকার!”
.
রিম মুখ বাঁকিয়ে মাথা ধরে আবারও শুয়ে পড়লো
.
স্পর্শ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবারও পাঞ্জাবির রক্তগুলোর দিকে চেয়ে টেনসন শুরু করলো
রক্ত কিসের আবার!!আমার তো গায়ে চোট নেই
রিমঝিমের কিছু হয়নি তো??
স্পর্শ এগিয়ে এসে রিমের হাতটা টেনেটুনে বাম হাতে আঘাতের দাগ পেলো,ইস কি কি করেছিলাম আমি কে জানে!!!মেয়েটাকে কত কষ্ট দিয়েছি তা তো মনেই করতে পারছি না
♣
রিমঝিম যখন উঠলো তখন বাসার সবাই চলে গেছে,,বিছানা ছেড়ে স্পর্শর রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বারাতেই উপর থেকে ঝলমলে কিছু কাগজের টুকরো রিমের গায়ে এসে পড়লো,চুল ঝেড়ে সে এদিক ওদিক তাকালো,বাসায় কেউ নেই,এমনবকি স্পর্শ ও না
দরজার সামনে সুতো বাঁধা ছিল,পায়ে লাগতেই উপরে রাখা কৌটার ঢাকনা খুলে কাগজগুলো নিচে পড়েছে
.
রিমঝিম নিজের রুমে গেলো ব্যাগ থেকে জামা নিয়ে পরবে বলে
বিছানার মাঝখানে একটি কুশন রাখা,লাল রঙের
তাতে লিখা”Sorry”
রিমঝিম কুশনটা ওলটপালট করে রেখে দিয়ে জামা হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেছে
এদিকে স্পর্শ সিয়াম আর আরাফকে ঝাড়ি দিচ্ছে কারণ তারা জোর করে ওকে বেশি মদ খাইয়েছিল
.
আরাফ হেসে বললো”তোর বউই তো,,অন্য কেউ তো না,তাহলে এত রাগ হস কেন”
.
স্পর্শ মনে মনে ভাবলো বউ হলেই হতো,তাহলে আর এত ইতস্তত হতে হতো না আমায়,বউ না বলেই তার প্রতি এখন আমার গিলটি ফিল হচ্ছে,কে জানে কি করেছি
রিম তো সোজাসুজি কিছুই বললো না
.
কিরে কি ভাবিস এতো?
.
নাহ কিছু না
♣
রিমঝিম ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো বাহিরের থেকে আনা পরোটা আর ভাজি,তার পাশে চিরকুট রাখা
সেটাতে লিখা আছে-রিম আই এম সরি,,,না জানি আমি কাল তোমার সাথে কি করেছি,নিশ্চয় ভাল কিছু করিনি,মাফ করে দিও আমাকে,আমার আসলে কিছুই মনে নেই আমি তমার সাথে কি করেছিলাম,সরি এগেইন”
.
রিমঝিম ফিক করে হেসে দিলো,কারণ স্পর্শ তো তেমন কিছুই করেনি,যে হারে সরি বলছে বাপরে বাপ!!এর একটু মজা তো নেবোই,হিহি!!
আসুক মশাই,আমাকে কাল অনেক জ্বালিয়েছো,তোমাকে এবার আমি জ্বালাবো
ইস রে আমি তো ভুলেই গেছি,হাত চালাতে চালাতে কাল একটা আজ একটা চড় মেরে দিলাম
আর তো মনে হয় দুটো আছো,ধুর ধুর,রাগ কে কন্ট্রোলই করতে পারি না আমি
চড়ের কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম,,এবার চড়ের কথা উনার মনে না থাকলেই হয়
চলবে♥