দু মুঠো বিকেল পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
2215

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩০
Writer-Afnan Lara
.
রিম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,স্পর্শর মুখের দিকে তাকাচ্ছে না একবারও
তাকালেই আরও বেশি কষ্ট পাবে
স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে রিমের দিকে এক নজর তাকালো তারপর সোজা নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললো
এরপরে আর দুজনের কোনো কথা হয়নি
.
এসময়টা ডিনারের সময়
রিমঝিম এগারোটা পর্যন্ত নিজের রুমে চুপচাপ বসে ছিলো ট্রলি ব্যাগটার দিকে চেয়ে
ভাবলো-আজ কি বেশি হয়ে গেলো??আমি লোকটাকে কষ্ট দিয়ে পরে নিজেই কষ্ট পাই কেন?তাহলে কেন কষ্ট দিই??
উনারও দোষ আছে,আমাকে ছুঁতে চায় কোন অধিকারে,না আমি তার প্রেমিকা না বউ,না বউ হতে চলেছি,তাহলে কেন আমাকে ছোঁয়
উনার মা যে গর্ব করে বড় মুখ করে বলেছেন নিহার সাথে উনার বিয়ে দিবেন এটা মাথায় আসলেই আমার মন চায় উনার থেকে একশো হাত দূরে থাকি,,আমি জেনেশুনে নিজেকে এবং উনাকে দূর্বল করতে পারি না
উনার মা জীবনেও রাজি হবেন না,রইলো কথা উনার মায়ের,আমার নিজের ভাই তো এক পায়ে খাড়া এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে,তাহলে আমাদের কোনো ভবিষ্যত যখন নেই তখন আমি উনাকে কি করে আমার কাছে আসতে দিই??এটা হয় না,আমার উচিত উনার থেকে দূরুত্ব বজায় রাখা,,
ভাগ্যের পরিহাসে আজ আমি তার বাসায়,,কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলেই আমি এখানে আছি আপাতত,নাহলে থাকতাম না, কখনওই না
তবে এটা নিশ্চিত আমি উনার মায়ের কথার অমত করবো না,, উনার মায়ের তার ছেলের প্রতি যথাযথ অধিকার আছে
এখন যখন আমি জানি রোকসানা বেগম কি চান তখন আমি বাড়া ভাতে ছাই কেনোই বা দিতে যাব
আমি আজ হ্যাঁ বলে দিলে স্পর্শ আজই আমাকে ঘরে বউ করে তুলে আনবে
আর সেটা আমি হতে দিতে পারি না,রিহাব ভাইয়া আর রোকসানা বেগম আমার গলা কেটে রেখে দিবে
.
প্রচুর ভেবেচিন্তে রিমঝিম উঠে এসে রান্নাঘরে গেলো খাবার বাড়তে,,প্লেটে খাবার নিয়ে স্পর্শর রুম পর্যন্ত এসে দরজায় দুবার টোকা দিয়ে বললো”রাত অনেক হয়েছে,খাবার খাবেন না?”
.
ওপাশ থেকে কোনো সাড়া আসেনি
রিমঝিম আবারও ডাকলো,তাও কোনো আওয়াজ না পেয়ে সে চলে গেলো,খাবারগুলো আগের জায়গায় রেখে নিজে ফিরে গেলো নিজের রুমে
সে নিজেও কিছুই খেলো না,এমন একটা সিচুয়েশনে কিছুই খেতে মন চাইবে না নিশ্চয়

ভোর হতেই রিমঝিম দৌড়ে রুম থেকে বের হলো নাস্তা বানাতে,,আজব ব্যাপার হলো স্পর্শর রুমের দরজা এখনও বন্ধ
রিমঝিম ভাজি চুলায় বসিয়ে রুটি বেলছে,,,বারবার চিন্তা হচ্ছে,লোকটা এখনও বের হয় না কেন?
আমার সাথে রাগ করে?নাকি আমি যে বললাম দূরে থাকতে
রিম রুটি গুলো ছেঁকে কাজ শেষ করে স্পর্শর রুমের দরজার কাছে এসে দুই তিনবার নক করলো,,সাড়া শব্দ আসছে না দেখে জোরে জোরে নক করা শুরু করলো সে
মিনিট পাঁচেক পর দরজা খুললো স্পর্শ,,দরজা খুলে রিমের দিকে না তাকিয়েই সে আবার বিছানায় ফিরে কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো
রিমঝিম ভিতরে ঢুকে বললো”অফিস যাবেন না?নাস্তা রেডি,উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আসেন”
.
স্পর্শ মৃদু গলায় বললো”খাব না”
.
কাল ডিনারও করেননি,আসুন বলছি,আচ্ছা সরি আর বকবো না
.
আমার খিধে নেই
.
তাহলে আমিও খাব না,আর আরেকদিকে ফিরে আছেন কেন??আমার দিকে তাকাতে কি সমস্যা আপনার?
.
রিম আরেকটু এগিয়ে যেতেই পায়ের তলায় গুটিগুটি কি যেন লাগলো,সে নিচে তাকিয়ে দেখলো অনেকগুলো সিগারেটের শেষ অংশ পড়ে আছে,উনিশ বিশটার মতন হবে
এতগুলা???কাল খেয়েছে নাকি??
.
স্পর্শ হালকা কেশে বললো”যাও,আমি খাব না”
.
আপনি এতগুলো সিগারেট খেয়েছেন??
.
তোমার কি?যাও,মেজাজ খারাপ করবা না,মেজাজ খারাপ করলে পরে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেললে সেটার জন্য আমি দায়ী থাকবো না
.
কি করবেন?মারবেন??মারেন,রিহাব ভাইয়ার হাতে মার খেয়েছি,এবার নাহয় আপনার হাতে মার খাব
তাও বলছি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন,আমি নাস্তা দিচ্ছি
.
স্পর্শ উঠে বসে এক ধমক দিয়ে বললো”কথা কানে যায় না তোমার?”
.
রিম ভয় পেয়ে চুপ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
স্পর্শর চোখ দুটো যেন চেরি ফলের মতন লাল হয়ে আছে,এতই লাল যে মানুষ দেখলে বলবে গাঞ্জা খেয়েছে,আসলে কিন্তু এতগুলো সিগারেট খাওয়ার ফল এটা
কিন্তু এত সিগারেট খেলে তো চোখ লাল হওয়ার কথা না,তাহলে?
.
কি হলো যাও বলছি
.
স্পর্শ বিছছানা ছেড়ে উঠে রিমের হাত ধরে টানতে টানতে রুমের বাহিরে বের করে দিয়ে দরজা লাগাতে যেতেই রিম হাত দিয়ে ফেললো আটকানোর জন্য,তখনই ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়েও উঠলো সে
স্পর্শ দরজা খুলে রিমের হাত ধরে বললো”এটা কেন করলে?আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?”
.
খালি আপনার দেমাগ আছে,আমার নাই??
.
হাত দিছো কেন?উফ তোমাকে নিয়ে আর পারবো না আমি
.
স্পর্শ রিমের হাত ধরে ভেসিনের কাছে এনে পানি ঢালতে ঢালতে বললো”দরজা লাগাচ্ছিলাম তখনই তোমাকে কে বললো এমন বেকুবি কাজ করতে?দেখো হাত দেবে গেছে
.
আপনি আমাকে বের করে দিয়ে দরজা লাগাতে গেছেন কেন?
.
আমি চাই তুমি আমার থেকে দূরে থাকো
.
সেসব বাদ,আপনার চোখ ওমন লাল কেন? আগে সেটা বলুন
.
এমনি
.
বিশটা সিগারেট খাওয়ার ফলে লাল হয় আগে জানতাম না
.
যাও এখন
.
নাস্তা করবেন না?
.
স্পর্শ মুখের উপর দরজা লাগিয়ে ফেললো
রিমঝিম মুখটা ফ্যাকাসে করে নিজের রুমে চলে আসলো,,
ডিনার তিনি করেননি,আমিও করিনি,এখন নাস্তাও তিনি করবেন না,আমিও করতাম না?
আরে আমার তো খুধা লেগেছে,নিজে না খেয়ে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে,,

রিমঝিমের প্রতি মায়া হলো কিছুটা,কিন্তু তাও সে ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে,কাছে থাকলেই যত সমস্যা হয়,দূরে দূরে থাকলে আর সমস্যা হবে না
.
এদিকে আটটা বেজে গেছে,রিম আর খিধায় থাকতে না পেরে খাবারের প্লেট নিয়ে আবারও স্পর্শর রুমের কাছে এসে দরজায় নকের উপর নক শুরু করে দিয়েছে
.
স্পর্শ কম্বলের ভেতর থেকে মাথা তুলে বললো”খাব না,”
.
অফিস ও যাবেন না নাকি?আজব তো,আজ এমন করছেন কেন?আমার ঘাঁট হয়েছে আপনাকে কাছে আসতে মানা করে,আসুন, এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকুন,তাও অফিস আর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করবেন না
আপনার ধারনা আছছে আমি কাল রাত থেকে কিছু খাইনি?
.
তুমি খেয়ে নাও,কিন্তু আমি খাব না
.
রিমঝিম রেগে মেগে বললো”ফাইন,আমিও খাব না,খালি পেটে চা খাব বরং,তারপর কি হবে জানেন তো?না জানলে বলে দিচ্ছি,বমির উপর বমি,বমির উপর বমি
কথাটা বলতে বলতে রিমঝিম রান্নাঘরে গিয়ে ঠাসঠুস করে চা ও বসিয়ে দিয়েছে
.
স্পর্শ ততক্ষণে উঠে পড়েছে,রিমঝিম চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে”পানিতে বাবল আসছে,মাঝখানে বাবল আসলে চা পাতাও দিয়ে দেবো,তারপর চা ঢেলে গপাগপ খেয়েও নেবো,তারপর বমির উপর বমি,বমির উপর বমি”
.
স্পর্শ দরজা খুলে সোজা রান্নাঘরের দিকে গিয়ে দেখলো রিম চা পাতার বোয়াম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
তোমাকে এত সব শেখায় কে?আমার মন মেজাজ ভালো না এটা বুঝতে চাও না কেন তুমি??কি সমস্যা?
.
আপনার কি সমস্যা? খাওয়া দাওয়া কি দোষ করেছে?
.
স্পর্শ একটু এগিয়ে এসে বললো”আমার বাসা,আমার কেনা চাল, ডাল,আটা,আমার ইচ্ছা আমি কখন খাবো,আর কখন খাবো না,তুমি কে হও আমাকে জোর করার??”
.
তাহলে আমি যখন বললাম আমিও খাব না তখন আপনি কে হোন আমাকে মানা করার??জোর করবেন আমায়?
.
স্পর্শ রিমের দিকে এক নজর তাকালো অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তারপর প্লেটে থাকা রুটি ছিঁড়ে সেটার ভেতর ডিম নিয়ে রিমকে দেয়ালের সাথ চেপে ধরে ওর মুখে ঢুকাতে ঢুকাতে বললো”দরকার হলে তাই করবো”
.
রিম কিছু বলতেও পারছে না,শেষে চিবাতে চিবাতে বললো”আপনাকেও খেতে হবে”
.
আমি তোমাকে জোর করার শক্তি,ক্ষমতা দুটোই রাখি কিন্তু তুমি রাখো না
.
রিম প্লেট থেকে রুটি এক টুকরা নিতে যেতেই স্পর্শ নিজের রুমে চলে গেলো আবার
রিম ও পিছু পিছু এসে ওর সাথে ওর রুমে ঢুকে গিয়ে বললো”হা করুন”
.
না করবো না
.
করুন বলছি
.
না
.
রিম স্পর্শর দুপায়ে ভর করে উঠে দাঁড়ালো,তারপর স্পর্শর গায়ের টিশার্টটা খাঁমছে ধরে পা উঁচু করলো সে
স্পর্শ রীতিমত শকড্!!!
রিম শার্টটা চেপে ধরে এক টান দিয়ে বললো”নিচু হোন,আমি তো তাও নাগাল পাচ্ছি না”
.
স্পর্শ ব্রু কুঁচকে রিমকে ঘুরিয়ে বিছানায় ফেললো তারপর বললো”বাচ্চামো করবা না,যাও,আমার খিধে নেই”
.
যাব না,এই আমি বসলাম
.
এরকম ঘাউরামি কেন করতেছো??আমার থেকে বকা খেতে ভালো লাগবে তোমার?
.
হ্যাঁ লাগবে,,চুপচাপ খেয়ে নিন,নাহলে আমি দুপুরে খাব না,আপনি দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেও না
.
স্পর্শ মাথার চুলগুলো টেনে নিজেকে কন্ট্রোল করে রিমের হাত থেকে রুটির টুকরাটা নিয়ে মুখে পুরে বললো”হ্যাপি?”
.
পুরোটা খেতে আসুন,তাহলে হ্যাপি হবো
.
স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো
সেটা দেখে খুশিতে রান্নাঘরে যাওয়ার জন্য রিম হাঁটতে গিয়ে নিজেই নিজের পায়ে পাড়া দিয়ে দুম করে নিচে পড়ে গিয়ে বললো”এত ভারী আমি??আর আমি কিনা এই লোকটার পায়ে ভর দিয়ে ৩২সেকেন্ড ছিলাম??কিছুই বললো না তাও??ইস রে,বেচারার পা মনে হয় ইস্ত্রি করা হয়ে গেছে,ধুর ধুর!!
.
রিমঝিম রান্নাঘরে এসে চায়ের পাতিলে চা পাতা দিয়ে প্লেট হাতে নিয়ে আবার স্পর্শর রুমে এসে হাজির
স্পর্শ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রিম ভাজি থেকে আলু বেছে বেছে খাচ্ছে আর পা দুলাচ্ছে সোফায় বসে
.
কি?
.
কি??বললেন না পুরোটা খাবেন
.
কখন বললাম?
.
ঢং করতে হবে না,বসুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি,গায়ে তো জ্বর এনেছেন,আমি তো মাত্র বুঝলাম,নাহলে তো বোঝাই যেতো না আপনার গায়ে এত জ্বর,তাই তো বলি চোখ এমন চেরি ফলের মতন হয়ে ছিল কেন
.
আমার জ্বরকে আমি পাত্তা দিই না,এমনি এমনি চলে যাবে
.
সেটা আমি দেখে নেবো, আপনি এখন আমার পাশে বসুন,প্রতি মিনিটে একবার করে হা করবেন,আমি খাইয়ে দেবো,,পুরো দুটো রুটি শেষ করবেন,তারপর প্যারাসিটামল খেয়ে চা খাবেন তারপর ঘুমাবেন
.
আমি তোমার কথা কেন শুনবো?দূরে থাকো আমার থেকে,
তুমি কাছে থাকলে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি না
.
আমার দিকে না তাকালেই হয়,এত কথা কেন বলেন আপনি??আজব!!
.
স্পর্শ রিমের থেকে প্লেট কেড়ে নিয়ে বললো”যাও এখান থেকে আমি খেয়ে নিব”
.
আমি নিজের চোখে দেখবো আপনি খাচ্ছেন কিনা
.
স্পর্শ রিমের হাত ধরে রুম থেকে বের করে দিয়ে বললো”বাহিরে দাঁড়িয়ে দেখো,তাও আমার কাছাকাছি আসবা না”
.
রিম ব্রু কুঁচকে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো রাগ করে
স্পর্শ পকেট থেকে ফোন বের করে তার বসকে কল করে জানালো তার আজ শরীর খারাপ সে আসতে পারবে না
তারপর রুটি একটার অর্ধেক খেয়ে বালিশের তলা থেকে প্যারাসিটামলের পাতাটা খুঁজতে লাগলো,কিন্তু পেলো না
.
রিম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললো”আমার কাছে ওটা,,
সেটা না সেখলে হয়ত জানতামই না আপনার যে অসুখ”
.
জেনেও কোনো গুষ্টি উদ্ধার হবে না,দাও পাতা
.
নিন
.
যাও এখন
.
না গেলে কি করবেন?ধাক্কা মেরে বের করবেন??
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩১
Writer-Afnan Lara
.
দরকার হলে সেটাই করবো
.
রিমঝিম মুখ গোমড়া করে চলে গেলো,,,স্পর্শর খারাপ লাগছে এই ভেবে যে রিমের কথা রাখতে সে এখন রিমের সাথেই মিসবিহেভ করছে

মা আমি বের হচ্ছি
.
কিরে রিহাব,এ সময়ে কই যাস??অফিস ও তো গেলি না,,এখন তাহলে কই যাচ্ছিস
.
রিহাব মানিব্যাগে টাকা কত আছে সেটা চেক করতে করতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো”স্পর্শর বাসায়,,গিয়ে দেখবো রিম ওখানে ঠিক কি করছে”
.
তুই এত সিউর কি করে যে রিম ওখানেই আছে?
.
হই বা না হই,দেখে আসতে তো আর সমস্যা নাই
.
তামিম পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে,,তাহলে কি আজ রিম আপু ফিরে আসবে??তাহলে খুব ভালো হবে
.
তামিম নাচতে নাচতে চলে গেলো রিনতিকে খবরটা দিতে
.
রিহাব প্রায়ই দুই ঘন্টার ভেতরে স্পর্শর বাসার সামনে এসে হাজির
বাসাটা দেখে বেশ হাইফাই মনে হচ্ছে,,রিহাব তাই শার্টটা টেনে টুনে লিফটে উঠেছে,হাতের কব্জি ঠিক করছে স্পর্শকে মারার জন্য,আজ হাঁড় গোড় ভাঙ্গবে ওর
স্পর্শর সম্পূর্ন ঠিকানা রিহাব আঁখির থেকে নিয়েছে,,, আর আঁখিকে কড়া করে বলে দিয়েছে যেন স্পর্শর কানে খবর না যায়,কারণ সে কথা দিয়েছে সে চুপচাপ রিমকে নিয়ে চলে আসবে,স্পর্শকে একটা টোকাও দিবে না,আঁখি তাই রাজি হয়ে গেল
.
রিহাব আপাতত এখন স্পর্শর দরজার এপারে,,বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে গালটা ফুলিয়ে কলিংবেলে চাপ দিলো সে,,বিকাল চারটা বাজে তখন
মিনিট দুয়েক পর স্পর্শ এসে দরজা খুললো,রিহাবকে দেখে তার তো চোখ কপালে
রিহাব স্পর্শর দিকে না তাকিয়ে বাসার ভেতর দেখায় ব্যস্ত
তারপর স্পর্শর কোনো কথা না বলা দেখে সে হনহনিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো
.
রিহাব?তুমি?আমার এখানে কি জন্য?
.
আমার বোনকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছো?
.
কে??তোমার বোন?ও আচ্ছা রিমঝিম,ও কে আমি লুকাবো কেন,, প্রেম করলাম এতদিন,শেষে লুকিয়ে রাখব কেন?
.
রিহান সোজা স্পর্শর রুমে এসে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেয়ালে রিমঝিমের ছবিটা দেখে থামলো তারপর আবারও বারান্দায় গিয়ে দেখে এসে ডাইনিং রুমে এসে রান্নাঘরের দিকে এক নজর তাকালো,এরপর গেলো রিম যে রুমে থাকত সে রুমে
রুমটাও ফাঁকা তবে বিছানো তোষক কম্বল দেখে রিহাব স্পর্শর দিকে তাকিয়ে বললো”এখানে কে থাকে?”
.
আমার কলিগ সিয়াম,,কল করবো?কথা বলবে?
.
রিহাব এবার রুমটার বারান্দায় এসে ফুলের টবগুলোর দিকে অনেক্ষন চেয়ে রইলো তারপর স্পর্শর দিকে তাকাতেই স্পর্শ বললো”সিয়ামের ওয়াইফ ও থাকে,ওদের আমি থাকতে দিয়েছি,মাসে মাসে ৫হাজার দেবে বলেছে,পালিয়ে বিয়ে করেছে তো,কম রেট রেখেছি
তুমি আর আঁখি আসলে কোনো টাকা নেবো না
আর হ্যাঁ ওরা এখন মার্কেটে গেছে তুমি চাইলে ভিডিও কল দিয়ে কথা বলিয়ে দিতে পারি”
.
রিহাব গাল ফুলিয়ে বের হয়ে চলে গেলো,তার আগে সবগুলো বাথরুম ও চেক করলো সে
তারপর দরজা পর্যন্ত এসে পিছন ফিরে বললো”রিমঝিম তোমার কাছে নেই দেখে খুশি হলাম,তা নাহলে তোমার শরীর বেয়ে আজ রক্ত ঝরতো”
.
স্পর্শ পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে এসে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে ফেললো,তারপর দাঁত কেলিয়ে হাসলো রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে
এরপর সোজা হেঁটে রান্নাঘর পেরিয়ে একটা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো সে
রান্নাঘরের সাথে একটা ছোট্ট বারান্দা আছে,রিহাব বুঝতে পারেনি কারণ সে দূর থেকে রান্নাঘর দেখেছে,,রান্নাঘরের সেই বারান্দায় স্পর্শ রিমঝিমের হাত আর মুখ বেঁধে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো
সে একদমই জানত না আজ এই মূহুর্তে রিহাব আসবে,সে কোনো খবরই পায়নি,মূলত রিমকে এমন করে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ হলো অন্যটা
আর সেটা হলো ঠিক এক ঘন্টা আগে রিম আবারও স্পর্শকে বিরক্ত করতে ওর দরজার কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছিল,স্পর্শ তাই বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে রিমের হাত ধরে টেনে রান্নাঘরের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে ওর মুখ বাঁধলো সবার আগে,তারপর ওর হাত বাঁধলো গ্রিলের সাথে
রিম চুপ,স্পর্শ যেন স্বস্তি পেলো অনেকটা,তারপর সে পুনরায় নিজের রুমে ফেরত চলে আসলো,রিমকে শাস্তি দিয়ে
পরে আবার ওর জন্য মায়া হতেই যখন সে রিমকে ছাড়তে যাচ্ছিলো তখনই রিহাব এসে হাজির হয়েছে
রিমঝিমের মুখ খুলে দিতেই রিম ইচ্ছামত গালি দিলো স্পর্শকে
তারপর হাত ছাড়া পেতেই স্পর্শর বুকে কিলঘুষি আনলিমিটেড দেওয়া শুরু করে দিলো সে
স্পর্শ বাধ্য হয়ে রিমের দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে কাছে টেনে এনে বললো”শান্ত হও,তোমার ভাইয়া এসেছিলো”
.
রিহাবের কথা শুনে মূহুর্তেই রিমঝিম থেমে গেলো,বড়বড় করে শ্বাস নিচ্ছে সে,কারণ গায়ের জোর দিয়েই এতক্ষণ সে স্পর্শকে মারছিলো,স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে দিয়ে পানি এক গ্লাস এনে বাড়িয়ে ধরলো রিমের দিকে
রিম ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো তারপর মুখটা মুছে বললো”টের পেয়েছে?”
.
পেলে কি এখন তুমি আমার সামনে থাকতা?
.
এই যা!আমার ট্রলি ব্যাগ দেখেনি তো?
.
ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলাম,কাল রাতে তুমি চলে যাওয়ার জন্য যে হারে বেগে ছুটছিলে,আমি রাত দুটোর সময় চুপিচুপি এসে তোমার ব্যাগটা রান্নাঘরের উপরের তাকে উঠিয়ে রেখে দিয়েছিলাম যার কারণে রিহাব তোমার রুমে বিছানো তোষক ছাড়া আর কিছু পায়নি
আর তোমারও গুন আছে,তুমি যেখানে সেখানে নিজের ওড়না জামা ফেলে রাখো না,একটা ইউজ করো আর আরেকটা ব্যাগে পুরে রাখো,আর তাই বেঁচে গেলাম
.
রিম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দাঁত কেলালো তারপর আবারও মুখটা ফুলিয়ে বললো”আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে এখানে এমন হালে রাখার?”
.
স্পর্শ এমন ভাব করলো যেন সে রিমের কথা শুনেই নাই,চুপচাপ সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে
রিম সেসব বাদ দিয়ে নিজের রুমে এসে ভালো করে দেখলো,যাক সব ঠিকঠাকই ছিলো,আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম
ভাইয়া হুট করে এমন আসবে,,জানতাম না
ভাইয়া যে এত চালাকি করে,,আজ কি করে বেঁচে গেলাম এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমার
.
স্পর্শ নিজের রুমে এসে বসতেই মায়ের ফোন আসলো,,মা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন রিহাব কোথায়,আঁখি বললো সে নাকি এখানে এসেছিল
তার ছেলের প্রতি তার বিশ্বাস আছে,আবার এই ধারনাও আছে সে রিমের প্রেমে এতটাই অন্ধ যে সে রিমকে নিজের কাছে রাখলেও রাখতে পারে
.
হুম মা এসেছিল,রিমকে পায়নি,পাবে কি করে,ও তো এখানে নেই
.
রিমঝিম দরজার কাছে এসে কান পেতে শুনছে স্পর্শর কথা
.
মা তোমার পাশে কে??কার কথা শুনা যাচ্ছে??
কে?নিহা?আমার সাথে কথা বলবে?আচ্ছা দাও
.
হাই স্পর্শ
.
হ্যালো,,ভিডিও কল দিলে ক্যান আবার
.
একটু দেখবো তোমায়
.
দেখো
.
রিম উঁকি দিয়ে দেখছে,নিহা এমন সাজ দিয়ে ভিডিও কল দিয়েছে যেন আজ তার বিয়ে
তা দেখে রিম মুখে হাত দিয়ে হাসছে
নিহা চুলগুলো হাত দিয়ে কার্ল করতে করতে বললো”কবে আসবা??আঁখি আপুর তো এক মাস বাদেই বিয়ে শুনলাম,তোমাকে কবে পাচ্ছি?”
.
বিয়ের দিন আসবো,এখন সময় নেই,নতুন নতুন জবে ফাঁকি দেওয়া যাবে না
.
আপুর পরে কিন্তু আমার আর তোমার,,আর এবার তো তুমি জব ও পেয়ে গেছো,আর কোনো চিন্তাই নেই
.
স্পর্শ পিছন ফিরে তাকালো,কারণ রিমঝিমের হাতের চুড়ির ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছিল
স্পর্শ রিমের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো তারপর কি সব ভেবে নিহার দিকে তাকিয়ে বললো”হুমম,জলদি সেরে ফেলবো”
.
নিহা তো খএশিতে এক লাফ দিলো,ফোনটাই হাত থেকে পড়ে ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে
.
রিমের মনে হলো তার বুকের ভেতরটায় সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে,তার কষ্ট হলো স্পর্শের কথা শুনে
স্পর্শ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”অভিনন্দন জানাবা না আমাকে?”
.
রিম মুচকি হেসে বললো”Congratulations ”
.
থ্যাংক ইউ সো মাচ,তুমি কিন্তু আমার বিয়েতে আসবা,আসতে তোমাকে হবেই
.
রিম মাথাটা নাড়িয়ে চলে গেলো নিজের রুমে,,ওখানে দাঁড়িয়ে থাকাটাও বিষাদময় মনে হচ্ছিল
.
স্পর্শর বুকটা ফেটে যাচ্ছে রিমকে কষ্ট দিয়ে
.
রিম আমাকেই ভালোবাসে,জানি আমি,,সে স্বীকার করতে চায় না বলেই আজ এমনটা করলাম আমি
যদি কখনও স্বীকার না করে তাহলে সেটা ওর ব্যাপার,তার জন্য জোর করতে পারি না আমি
আর সে রাজি হবেই বা কি করে,যার এমন হিটলার মার্কা ভাই আছে সে তো বিয়ের কথা ভুলেও চিন্তা করবে না
আমি তো জানতামই,আমাদের সম্পর্কের কোনো ফিউচার নেই,বিয়ে নিয়েও ভাবি না
.
রিম চোখের পানি মুছতে মুছতে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে,এই মূহুর্তে সে কেন কাঁদছে তা সে জানে না,তবে খুব কান্না পাচ্ছে,,
নিহার সাথে বিয়ে হবে উনার??
ভালে তো,খুব ভালো,তাহলে আমার খারাপ লাগছে কেন??
আমার তো খুশি লাগার কথা

কিরে রিহাব?মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেন??রিমকে পাসনি?
.
নাহ,ও স্পর্শর কাছে নেই
.
তামিম মুখটা ফ্যাকাসে করে হাতে থাকা চকলেটের বাক্সো টা সোফার উপর রেখেই চলে গেলো,সে রিমের প্রিয় চকলেট এনেছিল রিমকে দেবে বলে কিন্তু রিম তো আসলোই না
.
এদিকে রিম নাক টানছে বসে বসে,স্পর্শ বিষয়টা খেয়াল করে দরজার কাছাকাছি এসে বললো”চা বানাচ্ছি,কেউ কি খাবে??”
.
রিম জলদি করে মুখটা মুছে বললো”না,,ভালো লাগছে না”
.
স্পর্শ রান্নাঘরে যেতে যেতে বললো”আচ্ছা আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার জন্য ও আমি নিজ দায়িত্বে ছেলে খুঁজে দেবো”
.
রিমের খুব রাগ হলো কথাটায়,সে বারান্দা থেকে এসে সোজা স্পর্শর রুমের দিকে গেলো হনহনিয়ে
.
স্পর্শ বুঝলো না ব্যাপারটা,তারপর মনে সন্দেহ জাগতেই সেও পিছু পিছু গেলো
ততক্ষণে রিম দেয়ালে টাঙানো তার বিশাল ছবিটা ছিঁড়ে ফেলেছে
.
স্পর্শর চোখে যেন আগুন জ্বলছে,রিম যত পারছে কুচি করছে ছবিটাকে,রাগ সব এর উপর দিয়ে ঝাড়ছে
.
স্পর্শ রিমকে নিচ থেকে উঠিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে বললো”তোমার সাহস হলো কি করে এটা ছিঁড়ার?
.
রিম হাসলো তারপর চুল ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে বললো”আমার ছবি,আমার ইচ্ছা”
.
স্পর্শ ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আবারও রিমের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো,রিমকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে সে বললো”আমি তোমাকে ভালোবাসলে সেটা আমার দোষ,আমি তোমার থেকে দূরে চলে গেলে সেটাও আমার দোষ,আমি তোমাকে কাছে টেনে নিলে সেটাও আমার দোষ,,,আমার আসলে কি করা উচিত তুমি সাফ সাফ বলে দাও প্লিস,,আমাকে তুমি জাস্ট খেলনার মতন ইউস করতেছো,দরকার হলে খুব করে মায়া দেখিয়ে আমাকে বিভোর করে ফেলবে তারপর যখন আমি কাছে আসতে চাইব তখন তোমার সব লজিক উঠে আসে আমার বিরোধিতা করার জন্য
এতটা বছর ধরে ভালোবেসে এসেছি আমি
আর তুমি আমাকে বারবার দূরে ঠেলে দিয়েছো,এখন যখন আমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করার কথা বললাম তখন তোমার এত রাগ এত ক্ষোভ আসলো কই থেকে??
আমার থেকে মুক্তি পেতে সেদিন আমার পায়ের কাছে বসে কেঁদেছিলা,আমি মেনে নিয়ে সেই রাতেই বাসা থেকে চলে এসেছিলাম,তোমার থেকে দূরে এখানে
তারপরেও তুমি নিজে হেঁটে এসেছো আমার কাছে,তাই আমি কাছে টেনে নিয়েছি,রোজ আমার সামনে,আমার কাছাকাছি থাকছো,একই ছাদের নিচে এরপরেও তোমার কাছে আমি যেতে নিলে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও
আবার আমি অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হতে চাইলে তোমার মুখ অমাবস্যা হয়ে যায়
.
স্পর্শ রিমকে ঝাঁকিয়ে বললো”কি হলো বলো??এমনটা কেন করো তুমি??কি চাও?”
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩২
Writer-Afnan Lara
.
রিম চুপ করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে,স্পর্শ রিমের এমন নিরবতা দেখে ওকে আবারও ঝাঁকিয়ে বললো”উত্তর দাও রিম!!”
.
রিম নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু করছে,হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সে বারবার,স্পর্শর কথার দিকে তার মন নাই বললেই চলে
তার এমন অনীহা দেখে স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সোজা কল করলো নিহাকে
তারপর রিমকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো”হ্যালো নিহা,,আমি তোমাকে ফোন করেছি একটা কারণে আর সেটা হলো আমি তোমাকে আঁখির বিয়ের আগেই বিয়ে করতে চাই,,মানে আমরা ওর বিয়ের আগেই আমাদের বিয়েটা সেরে ফেলবো,তুমি কি রাজি??কাজী অফিস রেডি করার দায়িত্ব আমার,জাস্ট তোমাকে কল করলে তুমি রেডি হয়ে চলে আসবে
.
নিহা তো খুশিতে লাফাবে না নাচবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না,সবকিছুর উত্তরে সে চব্বিশ বার “ওকে” বলে দিয়েছে
রিম মুখটা ছোট করে চলে গেলো নিজের রুমে
স্পর্শ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রিমের পিছু পিছু এসে বললো”চিন্তা করো না রিম,তোমার জন্য ও ছেলে খুঁজে দিব আমি”
.
রিমের তো রাগে মেজাজ বিগড়ে গেছে,,সে ব্যাগ গুছানো শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে
স্পর্শ চুপিসারে এসে দরজা লক করে নিজের রুমে গিয়ে অফিসের কিছু ফাইল নিয়ে বসলো
প্রচুর কাজ,সেসব সারি,রিম ও আর পালাতে পারবে না
.
রিম চোখ মুছে বোরকাটা পরে নিলো,তারপর ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে স্পর্শর রুমের দিক এক নজর তাকালো সে
তারপর দরজায় হাত লাগাতেই বুঝলো স্পর্শ আগে থেকেই লক করে রেখেছে
কিন্তু স্পর্শ কি জানে না যে আমার কাছ আরেকটা চাবি আছে??
হুম সে জানতো না,তার মাথায় একদমই ছিল না যে সে রিমকে আরেকটা চাবি দিয়েছিল কিছুদিন আগে
রিম চাবিটা এনে দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
যেতে যেতে ভাবলো লোকটা বিয়ে করতে পারবে তো আমিও পারবো
আর আমি জানি আমি বাসায় ফিরে গেলে ভাইয়া সেই মূহুর্তে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেবে আমাকে
!!!দিলে দিক,এখন আমার যাওয়ার কেনো জায়গা নেই আমি নিজের বাসাতেই ফিরে যাব বরং,,উনি বিয়ে করতে পারলে আমিও পারবো হুহ!!!

স্পর্শ কাজ সেরে দরজার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিলো রিমঝিমের রুমের দিকে,লাইট জ্বলছে,তাও কেমন কেমন যেন লাগলো স্পর্শর
স্পর্শ হাত থেকে কাজের ফাইলটা সোফার উপর রেখে রিমঝিমের রুমে এসে দেখলো রিমঝিম নেই,রুম ফাঁকা
তা দেখে পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছে ওর
স্পর্শ দেরি না করে রান্নাঘরের তাকের কাছে এসে দেখলো ট্রলি ব্যাগটাও নেই
তার মানে রিম আমাকে না বলে বেরিয়ে গেছে?তাও এসময়ে???এত রাতে!!!
এই মেয়েটা এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন,এরে এখন আমি কোথায় পাবো!
.
স্পর্শ দরজা লক করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছে রিমকে খোঁজার জন্য
রিম আবারও পথ হারিয়ে ফেলেছে,আসার সময় যে বাসস্টপে সে নেমেছিল সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না সে
এর উপর মনটা ভীষণ রকম খারাপ,হাঁটার ইচ্ছা নেই তাও নিজের রাগের বশে হেঁটে চলেছে সে
রাগ তাও স্পর্শর উপর
রাত হয়ে এসেছে,ভাগ্য খারাপ আজ হবে যা বুঝলাম,কারণ এতসবের ভেতরে কুশন বাঁধতে ভুলে গেছি,এবার আর কেউ মুরব্বি ভাববে না
রাত করে একটা কিশোরী মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে এটাই ভাববে
এখন যদি কোনো বিপদ হয়???
.
রিম এখন এমন একটা গলিতে ঢুকে পড়েছে যেটার ডানে বামে সব অন্ধকার,দূরে দূরে একটা করে আলো জ্বলে
কথায় আছে না,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়
আমারও হয়েছে তাই,রাগ করে বেছে বেছে রাতের বেলাই বাসা থেকে বের হতে হয় আমাকে
রিম নিজের কপালে নিজে বাড়ি দিয়ে সামনে তাকিয়ে এবার দেখতে পেলো চার পাঁচটা ছেলের আড্ডাবৈঠক
তাও ভদ্র ঘরের একদমই মনে হচ্ছে না
মনে হয় বস্তির
রিমের কলিজা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে
সে কিছুটা বিচলিত হয়ে হাঁটা থামিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে,ছেলেগুলোর মধ্যে দু একজন রিমকে খেয়াল করেছে ততক্ষণে
রিমের ঘাড়ের উপর কারও হাত পড়তেই রিম এক চিৎকার করে নাকে ঘুষি মেরে দিলো পিছন ফিরে
.
আউ!!!নাক গেছে আমার
.
রিম চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে,নাক থেকে হাত সরাতেই চিনতে পারলো লোকটাকে,এটা তো স্পর্শ!
.
রিমঝিমের মনে হলো সে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে,কোনোদিক না ভেবে সে স্পর্শর হাত শক্ত করে ধরে ফেললো
স্পর্শ নাক ডলতে ডলতে ওর দিকে তাকিয়ে বললো”তুমি বাসা থেকে না বলে চলে এসেছো,মারবো আমি তোমাকে
উল্টে তুমি আমাকে মারলে??আবার এখন সরি বলার জায়গায় হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছো?”
কথা শেষ করে স্পর্শ সামনে তাকিয়ে ছেলেগুলোকে দেখতে পেলো
তারপর রিমকে টেনে উল্টো পথে নিয়ে গেলো
.
কি??কিছু বলছো না কেন??ততোমার বাসায় যাবে?তাহলে চলো ইউ টার্ন দিই
.
রিম চুপ করে ছিল এতক্ষণ, স্পর্শের খোঁচা মারা কথায় ভ্যাত করে কেঁদে দিয়েছে সে এখন
.
স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে ওর বোরকাটা শক্ত করে ধরে টেনে ঘুরিয়ে সামনে দাঁড় করালো রিমকে
তারপর এক ধমক দিয়ে বললো চুপ করতে
.
রিম ধমক শুনে মুখে হাত দিয়ে অল্প সাউন্ডে কেঁদে যাচ্ছে তাও
.
আমি নিহাকে বিয়ে করবো বলেছি তোমার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য,তার মানে এই না যে তুমি সব কিছু থেকে গা ঢেকে এভাবে রাত করে বেরিয়ে আসবে
তুমি যে মেয়ে,তোমার যে রাত বিরাতে বিপদ হতে পারে সেটার ধারণা আছে?
সেদিন একবার এসে হাজির হয়েছিলো রাতের বেলায়
আজ আবারও??
আমার মনে হয় যেদিন আমার বাচ্চা কথা বলা শিখবে সেদিনও তোমার আমাকে ভালোবাসো কথাটা বলতে ইগোতে বাঁধবে
.
রিম মুখ ফুলিয়ে চোখের পানি মুছে বললো”পানি খাব”
.
না খাবে না,আমার কথা শেষ হোক,অনেক বাচ্চামো করেছো তুমি,সিউর করে একটা কথাও বলো না,এখন থেকে সোজাসুজি কথা বলবে তা নাহলে গালের চামড়া উঠা পর্যন্ত থাপ্পড় মেরে যাব,আমাকে চড় মারার সেঞ্চুরি করতে চলেছো তাই না?তাও তিন বছরে
আর আমি তোমাকে একদিনে একশোটা চড় মারবো এসব বেয়াদবির জন্য,তারপর থেকে যা বলবা সোজা সোজা বলবা
.
রিম ঢোক গিলছে আর কাঁদছে
.
স্পর্শ ট্রলি ব্যাগ এক হাতে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে রিমকে ধরে টানতে টানতে সামনের একটা কনফেকশনারি দোকানে নিয়ে এসে টুল টেনে ওকে বসালো তারপর একটা পানির বোতল কিনে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো”নাও পানি খাও”
.
রিম পানির বোতলটা নিয়ে চোরের মতন তাকিয়ে আছে স্পর্শর দিকে
.
স্পর্শ হাত মুঠো করতেই রিম ভয় পেয়ে পানি খাওয়া শুরু করে দিলো,,স্পর্শ ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা ধরলো আবার
রিম ও পিছু পিছু আসছে
.
বাসায় গেলে তোমার ঐ ভাই তো সাথে সাথে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেবে,ওরে যতদূর চিনি আমি
তার মানে তুমি বিয়ে করবে বলে ঠিক করে নিয়েছো?
.
আপনিও তো বিয়ে করবেন বললেন,তাহলে আমি বিয়ে করলে কি সমস্যা?
.
কি সমস্যা??আমি বিয়ে করবো বলার পর তুমিও রাজি হয়ে গেলে?তার মানে নিশ্চয় এর ভেতরে রহস্য আছে
সময় এখনও আছে ফটাফট বলে দাও,তোমারই লাভ
.
আপনাকে অন্তত বিয়ে করবো না আমি
.
তোমাকে বোঝানো আমার দ্বারা অসম্ভব ব্যাপার,আচ্ছা এক কাজ করো কয়েকটা চড় মেরে দাও,তাহলেই আজকেই তোমাকে সব সুন্দরমতন বুঝিয়ে দেবো,,,কয়েকটা বলতে আর মাত্র ৪টা
তারপরেই!!!!
.
রিম হাঁটতে হাঁটতে থপেমে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো”কককককি করবেন আপনি??”
.
সেটা দেখার জন্য তোমাকে একটা কাজ করতে হবে
.
রিম একটু এগিয়ে এসে বললো”কি করতে হবে?”
.
চারটা চড় মেরে দিতে হবে
.
রিমের খুব রাগ উঠলো,স্পর্শর পিঠে ধুমধাম কয়েকটা কিল ঘুষি বসিয়ে দিলো সে
স্পর্শ খিল খিল করে হাসছে,হঠাৎ সে রিমকে একটা গাছের সাথে চেপে ধরলো
এতে রিমঝিম ভয় পায়নি,অবাক ও হয়নি,আপাতত স্পর্শর হাসিমাখা মুখটা দেখায় ব্যস্ত সে
স্পর্শ সেদিকে খেয়াল না করে বললো”ঐ চড় ও তুমি আজকালের মধ্যেই মেরে দিবা,জানা আছে আমার”
.
রিম চোখ নামিয়ে নিলো,স্পর্শ ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”এই ছেলের সাথে একসাথে একই বাসায় থাকলে কিন্তু এগুলো বারবার ফেস করতে হবে খুকি”
.
রিম তাও কিছু বললো না,পথে পড়ে থাকা হলুদ রঙের মাইক ফুলগুলো দেখছে সে
আশেপাশের কেউ হয়ত শখ করেই গাছটা এমন জায়গায় লাগিয়েছে,পথটা খুব সুন্দর লাগছে
স্পর্শ রিমকে নাড়া দিয়ে বললো”কি গো??ভয় করবে না তোমার?আমি কিন্তু আগের চেয়েও বেশি জ্বালাবো,সময় আছে বলো,বাসস্টপ পর্যন্ত দিয়ে আসব তোমাকে”
.
রিম কথার উত্তর না দিয়ে গোল হয়ে পথের কিনারায় বসে গেলো,ফুলগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে বললো”আপনাকে সামলানোর অভ্যাস আছে আমার,তিনবছর ধরে সামলাচ্ছি”
.
এরপরে কিন্তু এই বখাটে ছেলে তোমাকে একটু বেশিই জ্বালাবে
.
শুনলাম তো,এতবার রিপিট করতে হবে না,আমি কোথাও যাচ্ছি না,একেবারে আপনার বিয়েই দেখে যাব
.
উঠো বলছি!!!
.
ধমকাচ্ছেন কি জন্য?আর একটা কথা আপনি সবসময় আমি কোথাও হারিয়ে গেলো আপনি ঠিক আমাকে ফিরে পান কি করে?একদম ঠিক টাইমে হাজির হয়ে যান আপনি
.
স্পর্শ এবার রিমের পাশে গোল হয়ে বসলো,তারপর গালে হাত দিয়ে বললো”একটা কথা কি জানো রিম?”
.
না বললে জানবো কি করে?
.
তুমি আমার জন্যই এসেছো,,,তুমি হলে আমারই হবে,,কোনো বাধা আমাকে তোমার থেকে দূরে রাখতে পারবে না,আর তাই দেখো না এত বার হারিয়ে যেয়েও আমরা আবার এক হয়ে যাই
আমি কখনও প্রেম করিনি,,প্রেম জিনিসটা অদ্ভুত মনে হতো,আমি এর কেমিস্ট্রি বুঝতে পারতাম না
তুমি আমার জীবনে আসার পর বুঝলাম এর কেমিস্ট্রি, এখন আরও বেশি অদ্ভুত মনে হচ্ছে তবে একটু অন্যরকম লাগে
তোমাকে দেখলে,তোমাকে ছুঁলে আসল ভালোবাসা কি সেটা আমি টের পাই
তখনকার ভালোলাগাটা তোমাকে আমি বলে বুুঝাতে পারবো না,কারণ তুমি কখনও নিজ থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরোনি,দুবার ধরেছিলে তবে প্রথমবার তুমি জানতে না আমাকে জড়িয়ে ধরেছো
আর পরেরবার বিপদে পড়েছিলা আর আমি পাশে ছিলাম বলে ধরেছো
কখনও ভালোবেসে ধরোনি তুমি,সো তোমার থেকে এই অনূভূতির সংজ্ঞা আমি পাব না জানি,শুনতেও চাই না
জাস্ট একটা কথা বলবো -স্পর্শর চোখ সেই তিনবছর আগে থেকে একটা মেয়ের উপরেই আটকে আছে
.
এই কথা সেই কবে থেকে শুনে আসছি
.
মাথায় তো আর নিচ্ছো না,,যাই হোক অনেক রাত হয়েছে এবার চলেন ম্যাডাম
.
স্পর্শ রিমের হাত ধরে নিচ থেকে টেনে তুললো তারপর দুজন মিলে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে পড়লো আরেক বিপদে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে